বছর দুয়েক পর পর্ব-১০

0
1044

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_১০
#সারিকা_হোসাইন

রাতের কালচে আধার কেটে গিয়ে নতুন ভোরের হাতছানি।ফজরের আজান পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।ভোরের আলো এখনো ফুটেনি।পাখিদের ঘুম ভেঙেছে কেবলই।মৃদুমন্দ শীতল বাতাস বইছে চারিধারে।নিজের কল্পনার জগৎ থেকে সিক্ত চোখে ব্যথিত মনে ফিরে এলো তাথৈ।নরম ছোট হাতের আঙ্গুলির ডগা দিয়ে চোখের জল মুছে ভেজা কন্ঠে অভিযোগের স্বরে বলে উঠলো

“আপনি প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখলেন না।আমাকে এলোমেলো দিশাহীন অবস্থায় ফেলে রেখেই আপনি হারিয়ে গেলেন।অথচ বলেছিলেন আমাকে পুরোটাই গুছিয়ে দিবেন।আপনি চূড়ান্ত মিথ্যেবাদী ভিয়ান নাওয়াফ।

প্রত্যেকটা রাত দিন একইভাবে কেটে যাচ্ছে তার।অভিযোগ, অনুযোগ আর রোদন আহাজারিতে।দেখার কেউ নেই,দুটো শান্তনার বুলি আওড়ানোর ও কেউ নেই।মাথায় হাত দিয়ে ভরসা দেবার মানুষ টুকুও নেই।তুলতুল মেয়েটাকে আজ বড্ড মনে পড়ছে।কিন্তু পুরাতন মোবাইল হারানোর সাথে সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে সকলের সাথে।তিহানরা চাইলেও আর মেহেরিনের সাথে কথা বলতে পারে না।অযথা বাহানায় বিশ্ৰী আচরণ করেন সাইফ আজমী।এরিক টাও কম যায়না।ফোনে কিসব করে রাখে।নির্দিষ্ট কিছু ফোন কল ছাড়া আর কারো ফোন আসে না।প্রাণ খুলে শ্বাস টাও যেনো নেয়া যায়না তাদের বাপ ছেলের জন্য।কবে মিলবে এই নরক দশা থেকে মুক্তি?

মেঝে থেকে ধীর পদে উঠে দাঁড়ায় তাথৈ।আজ তার এক্সাম রয়েছে।পড়াশোনা কিচ্ছুটি হয়নি।তবুও খালি মস্তিষ্কে এটেন্ড করতে হবে।ভিয়ানের স্বপ্ন ছিলো তাথৈ ইংরেজিতে অনার্স মাস্টার্স করে বিদেশিদের মতো ফরফর করে ইংরেজি ঝাড়বে আর ভিয়ান মুগ্ধ হয়ে তা দেখবে।ভিয়ান নাওয়াফের স্ত্রী কে পুরো বিশ্ব চিনবে।কতো ইন্টারভিউ কতো লাইটস,ক্যামেরা আরো কতো কিছু।এসবের জন্যও ইংরেজি জানা আবশ্যক।তাথৈকে সব দিক থেকে পারফেক্ট করে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছিলো মানুষটা।কিন্তু আয়ুতে কুলোয় নি বোধ হয়।নিয়তির উপর কারো হাত চলে?

ছোট দেহ টা আর সায় দিতে চায়না এতো এতো যন্ত্রণায়।কিন্তু জোর করে সব মেনে নিতে হচ্ছে।যাকে মনে প্রানে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা কি চাইলেই ভেঙে ফেলা যাবে?দেহে কিঞ্চিৎ প্রানের উপস্থিতি থাকতেও ভিয়ানকে ভুলতে পারবে না সে।দরকার পড়লে ভিয়ান নাম জপতে জপতে মৃত্যুকে বরণ করবে সে।মনের নিঃসৃত সবটা দিয়ে মানুষটাকে ভালোবেসেছে সে।যেই সেই ঠুনকো ভালোবাসা নয়।একদম পবিত্র খাঁটি ভালোবাসা।এই ভালোবাসার জোর যে সব থেকে বেশি।ভোগ বিলাস আর সাময়িক আনন্দ উদযাপনের ভালোবাসা তো ছিলো না তাদের।তাদের ভালোবাসা ছিলো মৃত্যুর দিন পর্যন্ত আগলে রাখার প্রতিশ্রুতি যুক্ত।তবে ভিয়ান একাই কেনো চলে গেলো?

,অসহনীয় যন্ত্রনায় ছটফট করে উঠলো তাথৈ।গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে হলো।দ্রুত হাতে কাবার্ড থেকে ভিয়ানের গন্ধ যুক্ত একটা শার্ট বের করে বুকে জড়িয়ে গুমরে উঠলো তাথৈ।বুকে জমানো হাজারো কষ্ট উগলে দিতে চাইলো।কিন্তু কষ্টের ঘনত্ব টা বুঝি খুব ভারী ই হলো।একদম বুকের মধ্যে খানে শক্ত হয়ে সেটে রইলো।

“এই শার্টের গন্ধটা দিনে দিনে ফুরিয়ে যাচ্ছে।আপনার আরো কিছু শার্ট আমাকে কেনো দিয়ে গেলেন না স্বার্থপর পুরুষ?এগুলোই যে আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়েছে এখন।

ধীরে ধীরে শরীর নিস্তেজ হয়ে এলো তাথৈ এর।ফজর ওয়াক্ত বুঝি পেরিয়েই গেলো আজ।ভীষন ঘুমে ফোলা ফোলা সিক্ত দুই চক্ষু বুজে এলো।ভিয়ানের শার্ট দিয়ে নাক মুখ ঢেকে বুকে জড়িয়ে অস্ফুট ক্লান্ত কন্ঠে বিড়বিড় করলো

“খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।আপনাকে ছাড়া এই দেহ আর শ্বাস টানতে পারছে না।বিষাক্ত অনুভূতি তে সবটাই খোকলা হয়ে গিয়েছে।শুধু ধিকিধিকি প্রাণটা চলছে।এভাবে আর কতো?

********
আজকাল অফিসে কাজের প্রচুর ব্যস্ততা বেড়েছে।দেশ বিদেশ থেকে হাজারো ক্লায়েন্ট আসছে শুধুমাত্র “হ্যামস্টার টি” নামক ব্র্যান্ড এর সাথে নিজেদের শেয়ার জুড়তে।দুই বছর ধরে গড়ে তোলা নতুন এই ক্লথিং এন্ড কসমেটিকস ব্র্যান্ড টি দেশ বিদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।কিন্তু ফক্স নামের এই কঠিন হৃদয়ের যুবক কাউকে শেয়ারে ঢুকাতে রাজি নয়।।এর কারণ কি জানতে চাইলে খুবই সুনিপুন ভাবে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।এক সময় টিভি চ্যানেলে বা সংবাদ মাধ্যমে যেই মুখটা পরিচিত ছিলো সেটা এখন একদম ক্যামেরার বাইরে।কোম্পানি বিষয়ক সকল বিষয় ক্যামেরার সামনে উপস্থাপন করেন তার এমডি এবং পার্সোনাল সেক্রেটারি।বিশেষ প্রয়োজনে এলেও ক্যাপ এবং মাস্ক এর সাহায্যে পুরোটাই ঢেকে রাখেন নিজেকে।হাজারো তরুণীর ক্রাশ হয়েও নিজেকে মেলে ধরার বিন্দু মাত্র প্রয়াস নেই তার মধ্যে।সময়ের সাথে সাথে সকলেই তার বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।তাকে যেকোন ভাবে দর্শক মেনে নিতে প্রস্তুত। তবুও কোথায় যেনো একটা কিন্তু থেকেই যায়।

হঠাৎই হাই হিলের টকটক শব্দে কান খাড়া হলো অভীকের।সামনে তাকিয়ে হাসিরত ছোট পোশাকধারী বিদেশিনী লিসা কে দেখেই ভ্রু কুঁচকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো অভীক।এই মেয়েটাকে পৃথিবীর সেরা নির্লজ্জ্ব মনে হয় তার কাছে।অভীক মনে মনে ভাবলো

” এমন কোনো প্রতিযোগিতার আয়োজন হতো যেখানে পৃথিবীর সকল নির্লজ্জ্ব মেয়েগুলো অংশগ্রহণ করবে তবে নিশ্চিত উইনার হতো এই মেয়েটি।

নিজের বিরক্তি এক সাইডে রেখে সামনে থাকা বসের দিকে নজর দিলো অভীক।তার বস বিরস মুখে সেই যে ল্যাপটপ ঘেঁটে যাচ্ছে এখনো সেটা নিয়েই পরে আছে।হাই হিলের এমন বিকট শব্দ ও যেনো তার কানে লাগছে না।অতঃপর সহ্য করতে না পেরে গলা খাকরি দিয়ে বলে উঠলো

“ওভার একটিংয়ের দোকান শ্রেষ্ঠ নির্লজ্জ্ব মেয়েটা আপনার দিকেই এগিয়ে আসছে স্যার।এখনই কিন্তু ঢলে পড়বে,কাজ রেখে একটু তো উপরে তাকিয়ে দেখুন”

অভীকের কথায় যুবকের মুখে যেনো তেঁতো রসে ভরে গেলো।চোখ মুখে অমানিশার অন্ধকার নামিয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে পায়ের উপর পা তুলে হেলান দিলো বসে থাকা সুইভেল চেয়ারটায়।মেয়েলি কড়া পারফিউম এর গন্ধে পেট গুলিয়ে উঠলো যুবকের।ভ্রু কুঁচকে শ্বাস বন্ধ করে আঙুলের খাবলিতে আঙ্গুল লাগিয়ে দুই বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ট্যাপ ট্যাপ করে শব্দের উপস্থিতি আর কতো কাছে তা বুঝার জন্য শেয়ালের মতো ওঁত পেতে রইলো।

“হেয় মিস্টার ওয়াইল্ড ! হুয়াই আর ইউ প্লেয়িং হাইড এন্ড সিক উইথ মি হুম??

কথাটি বলেই মুখে হাসির রেখা অব্যাহত রেখে ধবধবে ফর্সা লম্বা নখ যুক্ত আঙ্গুলি এগিয়ে দিলো যুবকের এলোমেলো হয়ে কপালের কাছে পরে থাকা চুলের পানে।চোখ বন্ধ রেখেই বিষাক্ত ধেয়ে আসা স্পর্শের তিতক্তা অনুভব করতে পারলো যুবক।শরীর স্পর্শ করার আগেই পা দিয়ে চেয়ার ঠেলে নিজেকে সরিয়ে বিষাক্ত সাপের মতো ফনা তুললো।অসহনীয় ক্রোধে চোখ মুখ টকটকে লাল বর্ণ ধারণ করলো।শক্ত মুঠি পাকানোর কারনে হাতের পেশী আর ঘাড়ের শিরা গুলো বেশ করে ফুলে উঠলো।এরপর আহত চিতার ন্যয় গর্জে উঠে বলে উঠলো
“হাও ডেয়ার ইউ টাচ মি?হাও ম্যনি টাইমস উইল আই স্যা আই ডোন্ট লাইক ডিজ টাচেস?হাও ম্যানি টাইমস উইল আই স্যা ওয়ান থিং?

লিসা যেনো বেশ ঘাবড়ালো এবার।এতোটা হাইপার কখনো দেখেনি সে এই সুদর্শন পুরুষ কে।তবে কি এইজন্য ই তার এহেন নামের কারন?
ভীত চোখে নিজের হাত গুটিয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো লিসা।যুবকের চিৎকার তার হৃদপিন্ড নাড়িয়ে দিয়েছে।আর চোখের ভয়ানক সেই নজর?ভয়ে মুহূর্তেই জল এসে গেলো মেয়েটির চোখে।যুবকের প্রতি তার অসীম টান আর ভালোবাসা রয়েছে।যার কারনে বারবার অপমানিত হয়েও দিনের পর দিন নির্লজ্জের পরিচয় দিয়ে গেছে।কাউকে ভালোবেসে কাছে পাবার প্রত্যাশা করা কি দোষের কিছু?

মেয়েটির পানে তাকিয়ে ক্রোধ যুক্ত লম্বা শ্বাস টানলো যুবক।এরপর দ্বিগুন শব্দে গর্জে উঠলো

“গেট আউট ফ্রম হেয়ার”
যুবকের ক্রোধের তোপে এক মুহূর্ত টিকতে পারলো না লিসা।কপোল গড়িয়ে উষ্ণ জল ঝরে পড়লো ।প্রথম বারের মতো এই যুবকের দিকে তাকিয়ে তার ভয় লাগছে।হাতের ফাইল কাঁপা কাঁপা হাতে ডেস্কের উপর রেখে মাথা নিচু করে কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আবেদন ময়ী সুন্দরী লিসা ড্যাজেন।অভীক পুরো বিষয়টা খেয়াল করে বলে উঠলো

“এই মেয়ে কবে থেকে আপনার পিছু নিয়েছে স্যার?

“বছর দুয়েক আগে”

দায়সারা ভাবে জবাব দিয়ে গায়ের কোট খুলে হাতে নিয়ে হনহন করে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলো যুবক।অভীক জানে তার বস এখন কোথায় যাবে।এরকম শুধু আজ নয় বহু বার হয়েছে।বস চলে যাবার পর অফিস আওয়ার শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকি কাজ অভীক কেই গুছাতে হয়।এসবে অবশ্য সে অভ্যস্ত।তাই আর সময় অপচয় না করে ডেস্কের উপর অবহেলায় পরে থাকা ডে শিডিউল হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো।সন্ধ্যায় একটা মিটিং কনফারেন্স আছে লায়ন গ্রূপ এন্ড কোম্পানির সাথে।

“উফ টর্চার”

********
“পাপা আমার মনে হচ্ছে তাথৈকে এখানে রাখাই ঠিক হবে না।ওকে ওর মতো থাকতে দিলে কখনোই ও আমাদের কথা শুনবে না।তাছাড়া মম হাত ধুয়ে ওর পিছে পরে আছে।রেইন ছেলেটা একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে হিউজ বিজনেস লস হবে।তাথৈ এর জন্যই কিন্তু সে আমাদের এতোটা প্রায়রোটি দিচ্ছে।

কথা গুলো এক দমে বলে খানিক থামলো এরিক ।হাতে থাকা বিয়ারের ক্যানে চুমুক দিয়ে এরিক পুনরায় বলে উঠলো

“ওকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর ব্যবস্থা করো।ছলেবলে একবার রেইন এর বাড়িতে ওকে তুলে দিতে পারলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ।তারপর ওর যা খুশি হয়ে যাক।

এরিকের কথায় শান্ত চোখে ছেলের পানে চোখ তুলে তাকালেন সাইফ আজমী।ছেলে যে তার থেকেও বড় নিমোক হারাম হয়েছে এটা তার কথায় আর চাল চলনে স্পষ্ট।তাই বলে এতো বড় গাদ্দার?

ছেলের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলেন সাইফ আজমী।নিজের জন্ম দেয়া সন্তান যে তার অনুসারী হচ্ছে এটা নিয়ে কেনো জানি তার গর্ব হচ্ছে না।তবুও মুখে কিছু প্রকাশ না করে বলে উঠলেন

“তোমার মা কেনো ছাড়বে তাথৈ কে?মেয়ে হয় তার!

সাইফ আজমীর কথায় হাতে থাকা বিয়ারের ক্যান চেপে পিষে দাঁত কামড়ে ধরলো এরিক।আধ ক্যান ভর্তি বিয়ার উপচে পড়লো সাইফ আজমীর কেবিনে ।থরথর করে আটকে আটকে আসছে তার শ্বাস।
ছেলের পানে তাকিয়ে পুরোটাই অবলোকন করে সাইফ আজমী বলে উঠলো

“তোমার মা কে কব্জা করে ওকে পাঠিয়ে দাও।ঝামেলা বেশিদিন পুষে রাখতে নেই।তোমার মা দুর্বল মহিলা।কতোদিন আগলে রাখবে ওই উটকো ঝামেলা?

হঠাৎই বিকট স্বরে বেজে উঠলো সাইফ আজমীর ফোন খানা।স্ক্রিনে পরিচিত নম্বর দেখে চারপাশে নজর বুলিয়ে ফোন কানে তুললো

“হ্যা মইদুল বলো।

ওপাশ থেকে কি উত্তর এলো বোঝা গেলো না কিন্তু সাইফ আজমীর মুখের ভাব পরিবর্তন দেখে বোঝা গেলো বড় কিছু ঘটেছে।

“পুরো শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখো কোথায় আছে!ছোট মানুষ নয় সে যে রাস্তা ভুলে অন্য কোথাও হারিয়ে গিয়েছে।আর যে নিজেই একজন কিডন্যাপার তাকে কেউ কিভাবে কিডন্যাপ করবে?

গর্জে উঠে কথাটা বলে ফোন ছুড়ে মারলো সাইফ আজমী।ভ্রু কুঁচকে এরিক শুধালো

“কি হয়েছে?কে কিডন্যাপ হয়েছে?

“চার দিন ধরে আমার বিশ্বস্ত লোক কাইয়ুম কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সাইফ আজমীর কাছে কাইয়ুমের নিখোঁজ হবার কথা শুনে বেশ অবাক হলো এরিক।এর আগেও তাদের বিশ্বস্ত দুজন ব্যক্তি হারিয়ে গিয়েছে।থানা পুলিশ করেও কোত্থাও তাদের হদিস মিলেনি।এতো বড় বড় খতর নাক মানুষ কোথায় গিয়ে হারায় তবে?নাকি অন্য কোনো সত্যি আছে এর পিছনে যা তারা জানেনা?

আর দাড়ালেন না সাইফ আজমী।ধরফড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন ত্যাগ করতে করতে বলে উঠলেন

“তাথৈ এর পাসপোর্ট আর ভিসা লাগানোর কাজ শুরু করে দাও।পথে তোমার মম বাধা হলে তাকেও সরিয়ে দাও।মানসিক প্রেম ভালোবাসা, স্নেহের থেকে টাকা নামক কাগজ কে বেশি ভালবাসি আমি।আশা করি কি বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছো”

*******
নিজের বিশাল বাংলোর অন্ধকার কক্ষে টেবিল ল্যাম্প এর সুইচ অন অফ করছে বিশাল দেহি বিক্ষিপ্ত যুবক।জীবনে সব কিছুই আছে তার কিন্তু প্রাণ টাই নেই।প্রাণ ছাড়া এভাবে কতদিন বাঁচা যায়?যেই তুলতুলে বিড়াল ছানা টা প্রশস্ত বুকের উপর সারাদিন হুটোপুটি খেলতো তাকে ছাড়াই বেশ করে কেটে যাচ্ছে শত শত দিন রাত।

ফুঁপিয়ে উঠা লম্বা শ্বাস টা লুকিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারি ঘেঁটে বের করে আনলো নিজেদের রঙিন সময়ের এক খানা স্থির চিত্র।যেখানে ছোট অক্টোপাস এর ন্যয় গভীর মমতায় একটি ছোট তুলতুলে মেয়ে তার গলা জড়িয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে।তাকে চমকে দিতে পেরে মেয়েটির আনন্দের যেনো শেষ নেই।মেয়েটির মসৃন নরম শুভ্র সফেদ গালের সাথে নিজের খোঁচাখোঁচা দাঁড়িযুক্ত গাল পরম মমতায় ছোয়ানো।ক্যান্ডিট শটে যে ছবিটি তুলেছিলো সে আজ আর এই পৃথিবীতে নেই।নিয়তি বড়োই অদ্ভুত।কার জন্য কাকে কেড়ে নেয় আবার কার জীবনের বিনিময়ে কাকে বাঁচিয়ে রাখে কিচ্ছুটি বুঝা যায় না।সৃষ্টিকর্তার খেলা বুঝবে কার সাধ্যি?

“তোমাকে ছেড়ে আমি ভালো নেই,ভালো থাকতে পরিনা।তুমি বিহনে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে খোয়াচ্ছি আমি।তবুও আমার একটাই প্রার্থনা তুমি ভালো থাকো বেঁচে থাকো।আমি তোমার জীবনে হেমলকের চাইতেও অধিক বিষাক্ত আমার প্রাণের ছোট তিলোত্তমা”

#চলবে