বছর দুয়েক পর পর্ব-১১+১২

0
1023

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_১১
#সারিকা_হোসাইন

“আপনাদের কারো কোনো আপত্তি না থাকলে আমি তাথৈকে বিয়ে করতে চাই আন্টি।আপনার মেয়ে রাজরানী হয়ে থাকবে আমার ঘরে।বাবা আর মা ছাড়া এই ছোট দুনিয়ায় আমার আর কোনো কিছুর অভাব নেই।

মকবুল শেখের সন্ধ্যার বৈঠকে সাবলীল ভাবে মেহেরিনের পানে তাকিয়ে কথাটি বলে উত্তরের আশায় শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ভিয়ান।আগত মেহমানের মুখে তাথৈ এর বিয়ের প্রস্তাব শুনে সকলের চোখ ছানাবড়া।যেখানে মেয়েটি কেবল স্কুলের গন্ডি ই পেরোয় নি তার আবার বিয়ে কিভাবে হবে?

বৈঠকের মধ্যে তড়িঘড়ি করে তিহান বলে উঠলো

“এসব কি বলছিস মাথা ঠিক আছে তোর?ও একদম বাচ্চা মেয়ে এখনো”

তিহান কে হাতের ইশারায় থামিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো
“আমি এখনই ওকে ঘরে তুলতে চাইনি।ওর আঠারো হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতে রাজি আছি।শুধু আঠারো কেনো আঠারো দু গুণে ছত্রিশ হলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।

মকবুল শেখ আর মেহেরিন এখনো নিশ্চুপ।এদিকে ভয়ে তাথৈ এর প্রাণ যায় যায় অবস্থা।লোকটি সাংঘাতিক ঠোঁট কাটা।তাই বলে এতোটা নির্ভীক?

মেহেরিন এক দৃষ্টিতে ভিয়ানের পানে তাকিয়ে আছেন।ছেলে হিসেবে ভিয়ান দশে দশ পাবে।যোগ্যতা আর দর্শনেও মনে দাগ কাটাবার মতো।কিন্তু সাইফ আজমীর সংসারে মেহেরিন আর তাথৈ জলে ভাসা কচুরি পানার ন্যয়।এরিক আর সাইফ আজমীর রাজত্বে তাদের কোনো শক্ত শেকড় নেই।জীবনের বড় ঢেউ তাদের যেদিকে নিয়ে যায় তারা মা মেয়ে ভেসে ভেসে সেই দিকেই ভেসে চলে।মেহেরিন ভেবেছিলো মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত সাইফ আজমী নিজের হিংস্রতা দমিয়ে রাখবে।কিন্তু দিনে দিনে তা কমার পরিবর্তে আরো বেড়েই চলছে।

নিশ্চুপ মেহেরিনের পানে তাকিয়ে মকবুল শেখ গলা খাকরি দিলেন।এর পর তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন

“ছেলে হিসেবে তোমাকে অপছন্দ করার কিছুই নেই দাদুভাই।তিহানের থেকে তোমার নাম ডাক আর সততা সম্পর্কে অনেক শুনেছি।তোমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও আমাদের সকলের নখদর্পণে।কিন্তু তাথৈ এর বাবার কাছে আমাদের কারোর মূল্যায়ন নেই।যদিও বিষয়টা বলতে আমার লজ্জা করছে।তবুও বলছি ওই অমানুষ টার কারনে আমার নাতনীর কপালে ভালো ছেলে কখনোই জুটবে না।

মকবুল শেখের কথায় বেশ অবাক হলো ভিয়ান ।বৃদ্ধের চোখে মুখে হতাশা আর ক্রোধের ছাপ স্পষ্ট।যদিও মেহেরিন এর সংসার জীবনে সম্পর্কে তিহানের থেকে বেশ কিছু কথা শুনেছে সে।তাই বলে মানুষ এতোটাও খারাপ?

ভিয়ান কন্ঠে খানিক গাম্ভীর্যতা ঢেলে বলে উঠলো

“শুনেছি আংকেল অনেক বড় ব্যবসায়ী।তাই একজন ব্যবসায়ীর সাথে কিভাবে ডিল করতে হয় এটা ভিয়ান নাওয়াফ খুব ভালো করেই জানে।তাহলে আর কথা খরচ না করি।খুব শীঘ্রই উনার সাথে দেখা হচ্ছে আমার।

আর দাঁড়ালো না ভিয়ান।তিহানদের পারিবারিক বৈঠক করবার স্পেস দিয়ে লম্বা পা ফেলে গটগট পায়ে সিঁড়ি বেয়ে চলে গেলো।ভিয়ানের যাবার পানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মেহেরিন বলে উঠলো

“জামাই আমার পছন্দ হয়েছে আব্বা।এমন একজন ছেলেই তো আমি চেয়েছিলাম তাথৈ এর জীবনে আব্বা।আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন।ওই নিমক হারাম এর ছায়া থেকে খুব শীঘ্রই আমার মেয়ের মুক্তি মিলতে যাচ্ছে তবে।

“তরকারি তো পুইড়া যাইতাছে আম্মা।কি ভাবতাছেন এতো?

চারুলতার কন্ঠে কল্পনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলেন মেহেরিন চৌধুরী।মেয়ের সাথে সাথে আজকাল তিনিও পাগল হয়ে যাচ্ছেন।যেখানে খুব দ্রুত মেয়েটার সুখী হবার কথা ছিলো সেখানে আরো দুঃখ এসে ভর করলো মেয়েটার জীবনে।কি দুর্বিষহ জীবনই না তাদের মা মেয়েকে উপহার দিয়েছেন সৃষ্টি কর্তা।

******

ভার্সিটি থেকে এলোমেলো পায়ে বেরিয়ে মেইন রাস্তায় এসে দাড়ালো তাথৈ।আজ গাড়ির ড্রাইভার রহিম তাকে নিতে আসেনি।বয়স্ক মানুষ হয়তো অসুস্থ।তাই দুদিন ছুটিতে আছেন।অর্ক আর মৌটুসী ও এলো তার সাথে সাথে এগিয়ে দিতে।এই দুজন বন্ধু যদি তাথৈ এর জীবনে আঠার মতো লেগে না থাকতো তবে কি দুনিয়ার আলো বাতাস দেখার জন্য বেঁচে থাকতো সে?উহু মোটেও নয়।বাড়িতে তো সাক্ষাৎ জাহান্নাম।ভার্সিটিতে এসে সামান্য স্বস্তি মিলে।

“হ্যারে তাথৈ তোকে না বলেছিলাম আমরা কোথাও একটা ঘুরতে যাবো?তা কি ভাবলি?

মৌটুসীর কথা কেড়ে নিয়ে অর্ক বলে উঠলো
“খুব সুন্দর একটা ঘুরতে যাবার জায়গার সন্ধান পেয়েছি।যেখানে পাহাড় আর নদী দুই ই দেখা যায়।চল ঘুরে আসি।ভালো লাগবে।

কিন্তু তাথৈ এর দৃষ্টি যেনো অন্যদিকে।রাস্তার ওপাশে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোনে কথারত ব্যক্তির পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তাথৈ।দীর্ঘদিন বাদে লোকটিকে দেখতে পেয়ে ঝরঝর করে জল গড়িয়ে পড়লো তার চোখ থেকে।জিহবা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে চিৎকার করে ডেকে উঠলো

“ইকবাল ভাই”

তাথৈ এর ডাক শুনে মৌটুসী আর অর্ক ও সেদিকে নজর দিলো।এরপর দুজনে সমস্বরে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো

“আরে এটা তো ইকবাল ভাই ই!এতো দিন কোথায় ছিলেন উনি?

ততখনে তাথৈ দৌড়ে রাস্তা ক্রস করে গাড়িটির কাছে চলে গিয়েছে।
ইকবালের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পরে তাথৈ শুধালো

“কেমন আছেন ইকবাল ভাই?

আচানক তাথৈকে দেখে থতমত খেলো ইকবাল।কানের ফোনটি ও কাটতে ভুলে গেলো সে।কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটির।তুলার মতো শুভ্র মেয়েটি একদম মলিন হয়ে গিয়েছে।গায়ে শুধু হাড্ডি ঝুলছে যেনো।এ কোন তাথৈ কে দেখছে ইকবাল?এতো মানুষ রূপী কঙ্কাল।

“একী হাল করেছো নিজের?এই অবস্থা কেনো তোমার?

কান্নার দমকে কথাই বলতে পারছে না তাথৈ।হাতে থাকা নোটস আর প্যাড বুকে জড়িয়ে মাথা নিচু করে হুহু করে কেঁদে তাথৈ বলে উঠলো

“কতো খুঁজেছি আপনাকে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন আপনি ইকবাল ভাই?নম্বরটাও কেনো বদলে ফেলেছেন?খুব কি বিরক্ত করতাম আপনাকে?

মেয়েটির আহাজারি জড়িত কান্নায় পাষাণ পুরুষ ইকবালের বুকের ছাতি বিষিয়ে উঠলো।চোখের কোনেও জমলো চিকচিকে জল।কিন্তু প্রকাশ করলো না।তাথৈ কে শান্তনার বাণী দেবার মতো কোনো বুলিও তার কাছে অবশিষ্ট নেই।শুধু নিষ্প্রাণ দর্শকের ন্যয় মায়াযুক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো তাথৈ এর পানে।

মধ্য গগনের সূর্যটা প্রখর তেজ যুক্ত রোদ বিলিয়ে দিয়েছে ধরনীতে।এই টাইমটাতে রাস্তায় মানুষের কোনো আনাগোনা নেই।তাও দুই একজন আড় চোখে তাথৈ কে দেখে চলেছে।বিষয়টা ইকবালের কাছে খারাপ লাগলো।তাথৈ এর নিচু বদনের দিকে তাকিয়ে অপরাধীর স্বরে ইকবাল বলে উঠলো

“কেঁদোনা তাথৈ।মানুষ তোমাকে দেখছে।

ইকবালের কথায় নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করলো তাথৈ।দুই হাতের করপুটে চোখের জল মুছে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“ভিয়ানের গায়ের যেই শার্ট টা আমার কাছে ছিলো ওটা থেকে না এখন আর ভিয়ান ভিয়ান গন্ধ আসে না।হয়তো সময়ের পরিক্রমায় গন্ধ টা হারিয়ে গিয়েছে।কিন্তু ওই গন্ধ ছাড়া আমার তো ঘুম আসে না ইকবাল ভাই।ঢাকায় এলে ও তো তোমার ফ্ল্যাটে থাকতো।আমাকে ওর একটা শার্ট খুঁজে দেবে ইকবাল ভাই?শার্ট টা পেলে আর কক্ষনো তোমাকে বিরক্ত করবো না প্রমিস”

তাথৈকে শান্তনা দেবার ভাষা ইকবালের নেই।মেয়েটার জীবনে কি ঘটেছে তা সে চোখের সামনে থেকে দেখেছে।অজানা শক্তি এসে ইকবালের গলাটা চেপে ধরলো যেনো।শত চেস্টা করেও ইকবাল কথা বলতে পারছে না।তবুও ইকবাল ভেঙে ভেঙে বলে উঠলো

‘আমি খুঁজে দেখবো।পেলে কাল এই সময় এসে দিয়ে যাবো কেমন?

“আপনি তো জানতেন তাথৈ এর সকল অবস্থা তার পরেও কেনো গা ঢাকা দিয়েছিলেন ইকবাল ভাই?

হঠাৎ মৌটুসীর প্রশ্ন বাণে মৌটুসীর পানে তাকালো ইকবাল।মেয়েটির প্রতি বরাবর ই তার অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করতো।কিন্তু তা আর প্রকাশ করার সময় হয়নি।আর তার মতো একজন অপরাধীকে এই মেয়েটি গ্রহণ করতে রাজি হবে নাকি?মনের ভাবনা ফেলে মাথা নিচু করে ফেললো ইকবাল।
মৌটুসীর থেকে চোখ সরিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

“নিজের প্রয়োজনে গাঁ ঢাকা দিয়েছিলাম।আমাকে দেখলেই তাথৈ ভিয়ান ভিয়ান করে পাগলামি করতো এটা আমার পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হতো না।

“তাই বলে দু বছর?
কথাটি শুধিয়ে তাথৈকে শান্ত করার প্রয়াস চালালো অর্ক।
আর কথা বাড়ালো না ইকবাল।নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে উঠলো

“তোমরা থাকো আমাকে জরুরি কাজে যেতে হবে।বাসার কাপড় ঘেঁটে ভিয়ানের ব্যবহার্য কোনো জিনিস পেলে কাল এসে দিয়ে যাবো।

ব্যস্ত ভঙ্গিতে গাড়িতে উঠে ইঞ্জিন চালু করলো ইকবাল।তাথৈ মনে মনে ভাবলো একবার ইকবালের নম্বর খানা চাইবে।পরমুহূর্তেই নিজেকে বুঝিয়ে মানিয়ে নিলো।ইকবাল চলে যেতেই পুনরায় হুহু করে কেঁদে উঠলো তাথৈ।অর্ক আর মৌটুসী তাথৈকে সামলে কোনো মতে একটা সিএনজি ডেকে তাথৈ এর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো।

*******
বুকের উপর দুই হাত ভাঁজ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভীক সামনেই তার বস একের পর এক উন্মাদের ন্যায় পাঞ্চ ব্যাগে হিট করে যাচ্ছে।চোখ দুটি অস্বাভিক লাল।ঘাড়ের, হাতের শিরা গুলো নীল হয়ে ফুলে রয়েছে।মনে হচ্ছে আর কিছুক্ষন এভাবে চলতে থাকলে হাত ফেটে র/ক্ত ঝরবে।কিন্তু পুরুষটির সে বিষয়ে কোনো খেয়াল নেই।মনের মধ্যে ভয়াবহ টাইফুন বইছে।প্রতিনিয়ত সেই ঝড়ের শক্ত ঝাপটা মনের বাঁধ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।রক্তাক্ত করছে শক্ত হৃদয় খানা।ঘুষির দাপটে চোয়াল পর্যন্ত কেঁপে উঠছে।আর সহ্য করতে পারলো না অভীক।দৌড়ে গিয়ে দুই হাত শক্ত করে চেপে ধরে জোর গলায় বলে উঠলো

“থামুন।পরিস্থিতি বেসামাল হচ্ছে।

রক্তচক্ষু নিয়ে অভীকের পানে তাকালো যুবক।উহু এই চক্ষু ক্রোধে লাল হয়নি দেখেই বোঝা যাচ্ছে কান্না চেপে রাখার কারনে এমনটা হয়েছে।এই গভীর চোখ দুটোতে কোনো হিংস্রতা নেই যা।অভীক যা দেখতে পাচ্ছে তা হচ্ছে না পাওয়ার নীল বেদনা।

শক্ত পুরুষটির এমন বিধ্বস্ত অবস্থা সহ্য হলো না অভীকের।কাতর স্বরে জানতে চাইলো

“কি হয়েছে স্যার?যদিও কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো উচিত নয়।তবুও আপনার এহেন অবস্থা জানতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে আমার”

প্রচন্ড শক্তি অপচয়ে জোরে জোরে হাপাচ্ছে যুবক।মাথা বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে তার।সারা শরীরই ভিজে জপজপে অবস্থা।পাশে থাকা তাক থেকে একটা ছোট টাওয়েল এগিয়ে অভীক বলে উঠলো

“ঘাম মুছে নিন।

যুবক হাত বাড়িয়ে টাওয়েল নিয়ে ঘাম মুছে পানির বোতল থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে শব্দ করে ছুড়ে মারলো বোতল খানা এরপর এবডোমিনাল এক্সারসাইজ বেঞ্চ এর উপর বসে মাথা নিচু করে সাদা টাইলসের পানে নজর পাতলো।
হাতের টাওয়েল খানা গলায় ঝুলিয়ে অভীকের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো

“একটা গল্প শুনবে?

“জি স্যার”
উৎসুক ভঙ্গিতে পাশের স্টিলের চেয়ার টেনে বসতে বসতে উত্তর জানালো অভীক।অভীকের উৎসুক মুখের পানে তাকিয়ে যুবক স্মিত শুকনো হাসলো এরপর বলতে শুরু করলো….

“এক বিশাল বড় রাজ্যের রাজকুমারের হঠাৎই একটা ছোট শেহজাদীর সাথে ভালোবাসা হয়ে যায়।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তাদের ভালোবাসার পরিধি।দিন গড়ানোর সাথে সাথে রাজকুমার ওই শেহজাদীকে না দেখে থাকতে না পেরে একদিন সিদ্ধান্ত নেয় যে, খুব দ্রুত তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।রাজকুমার যখন সেই রাজাকে গিয়ে বলে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই সেই রাজা রাজকুমারের রাজত্ব আর ধন দৌলত দেখে খুশিতে উন্মাদ হয়ে উঠে।পারলে ওই দিন ই বিয়ে দিয়ে দেয়।কিন্তু রাজকুমার চেয়েছিলো যেই জাঁকজমক কেউ না দেখেছে সেভাবে সে ওই শেহজাদী কে নিজের রাজ্যের রানী বানিয়ে আনবে।হলো ও সবকিছু সেভাবে।ঠিক হলো বিয়ের দিনক্ষণ।হঠাৎই একদিন সেই রাজকুমার শেহজাদীর ভাই আর রাজার কিছু নিগুড় গোপন কথা জেনে গেলো।কথা গুলো শুনে সেই রাজকুমারের পায়ের তলার মাটি সরে গেলো।রাজকুমার যাকে এতো দিন রাজা ভেবে এসেছে সে আসলে রাজা নয় সে হচ্ছে রাক্ষস।রাজকুমারীর বাবা আর মাকে সম্পত্তির লোভে নিজ হাতে হ/ত্যা করে ছোট শেহজাদী কে হরণ করেছে সেই রাক্ষস।নিজের প্রিয়তমার পিতামাতা সম্পর্কে এহেন নিষ্ঠুর সত্য জেনে চুপ থাকতে পারলো না রাজকুমার।তাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে চাইলো।কিন্তু পেরে উঠলো না সেই রাক্ষস আর তার পুত্রের সাথে।তারা পিতা পুত্র মিলে রাজকুমারকে কব্জা করলো সেই শেহজাদীর জীবন নাশের হুমকি দিয়ে।দমে গেলো রাজকুমার।তবুও যেনো সেই ভয়ানক রাক্ষস স্বস্তি পেলো না।নানান হুমকি ধামকি তে শেহজাদীর জীবন থেকে সরে যেতে বাধ্য করলো তাকে।এক পর্যায়ে তাদের মনে হলো রাজকুমার ভবিষ্যতে তাদের বিপদের কারন হয়ে দাঁড়াবে।তাই তারা এক ভয়ানক ফন্দি আটলো।বধ করতে চাইলো রাজকুমার কে।কিন্তু ভাগ্য বুঝি সহায় হলো সেই নির্দোষ রাজকুমারের।সে কোনো ভাবে বেঁচে গেলো ঠিকই কিন্তু তার বদলে প্রাণ হারালো রাজকুমারের বিশ্বস্ত সহযোগী।

এতোক্ষন মনোযোগ সহকারে পুরো গল্প শুনে অভীক ভীত আহত কন্ঠে শুধালো
“রাজকুমারীর পরে কি হয়েছিলো স্যার?

“রাজকুমারী আজো সেই রাজকুমারের জন্য কেঁদে বুক ভাসায় কিন্তু রাজকুমারীর জীবন নাশের ভয়ে রাজকুমার তার সামনে যেতে পারে না।

“সেই রাজকুমার এখন কোথায় স্যর?

“তোমার সামনেই বসে আছে অভীক

“ভিয়ান নাওয়াফ?

“ইয়েস!

#চলবে

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_১২
#সারিকা_হোসাইন

নিগুড় নিস্তব্ধ ভয়ানক অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারপাশ।আকাশে বাঁকা চাঁদটার উপস্থিতি বিলীন।হয়তো অমাবস্যা চলছে।সুদূর আকাশে কোনো তারকারাজি ও নজরে পড়ছে না।থেকে থেকে ভারী বাতাসের দমকে নড়ে চড়ে দোলছে জানালা আর বেলকনির ফিনফিনে পাতলা পর্দা গুলো।খোলা বেলকনির পাতা কাঠের চেয়ারটায় বিষন্ন মুখে মাথা নিচু করে বসে আছে ইকবাল।কানে তার মোবাইল নামক যন্ত্র।ওপাশের ব্যাক্তির আক্ষেপ জড়ানো বেদনার্ত বিষাক্ত শ্বাস এর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে থেকে থেকে।কিন্তু নিশ্চুপ ইকবাল।
রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ওপাশ থেকে সিক্ত আহত কন্ঠে প্রশ্নবান ছুটে এলো

“আমার বৌ’টা এতো কাঁদে কেনো ইকবাল?

এই প্রশ্নের জবাব ইকবালের কাছে নেই।দুই চোখ দিয়ে দুই পাশের মানুষের বিষাদ যুক্ত নির্মম কষ্ট গুলো শুধু নীরব দর্শকের ন্যয় দেখে যাচ্ছে ইকবাল।কারো জন্যই ব্যথা উপশমের ব্যবস্থা করতে পারছে না সে।মাঝে মাঝে তার মনে হয় এসব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে।কিন্তু অজানা কোনো টানে পারে না।
কিছুক্ষন নির্বাক থেকে ধীরে কন্ঠে ইকবাল বলে উঠলো

“তোর গন্ধ মাখা একটা শার্ট চেয়েছে তাথৈ।মেয়েটার এতো কষ্ট আর চোখে দেখা যাচ্ছে না।আমি ওর চোখে চোখ রাখতে পারি না।এভাবে চলতে থাকলে মেয়েটা ম/রে যাবে।

ইকবালের কথায় ভিয়ান ঘোর প্রতিবাদ করে গর্জে উঠে বলে উঠলো

‘জাস্ট শাট ইউর মাউথ ইকবাল।এসব কথা মুখেও আনবি না।ওর বেঁচে থাকবার জন্যই তো নিজেকে মৃ/ত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছি আমি।তাথৈ কে ছাড়া প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করছি।ওর কিচ্ছু হবে না।ওকে বাঁচতে হবে।আমার তাথৈ এতোটাও দুর্বল মনের অধিকারী নয়।আমি ওর প্রতিটা না ফেলা নিঃশ্বাসের খবর পর্যন্ত জানি।

ইকবাল জানে এসব আবেগ জড়ানো কথা ভিয়ান কে বলে কাজ হবে না।তাই আর কথা না বাড়িয়ে বলে উঠলো

“আমাকে ঘুমুতে হবে।কাল তোর একটা টিশার্ট ওকে দিয়ে আসবো।এতেও যদি মেয়েটা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে তবে থাকুক না।

“ওর সাথে আর দেখা করিস না ইকবাল।এরিক বা সাইফ আজমী জানতে পারলে ঝামেলা করবে।কারন আমাকে ভোলানোর জন্য প্রতিনিয়ত ওর উপর অত্যাচার হচ্ছে।

কথাটি বলে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ভিয়ান।ইকবালের কাছে এসব নতুন নয় ।বছর দুয়েক ধরে প্রতি রাতে এমন অসহনীয় কান্নার সাক্ষী সে।ভিযানের চাইতে তাথৈ এর জন্য তার কষ্ট বেশি হয়।মেয়েটা সব কিছু হারিয়ে নিঃসঙ্গ একাকী হয়ে বেঁচে আছে ওই রাজ প্রাসাদ নামক নরকে।কবে ওই কয়েদ থেকে মুক্তি মিলবে এটাও অজানা।মেহেরিন চৌধুরী না থাকলে ভিয়ান এতদিন ঠিক তাথৈকে ছিনিয়ে নিয়ে যেত।কিন্তু মায়ের মতো নরম অসহায় মানুষটাকে কোনো প্রকার ক্ষতি পৌঁছাতে চায়না ভিয়ান।এই জন্যই তো মনের সাথে এতো যুদ্ধ তার।প্রতিটা মুহূর্ত কতোটা দুঃসহ যন্ত্রনায় কাটে এই খবর ভিয়ান আর ইকবাল ছাড়া আর কি কেউ জানে?

নিজেকে কিছুটা সামলে ভিয়ান পুনরায় বলে উঠলো

“ও ধীরে ধীরে নিজেকে গুছিয়ে নেবে।তুই ওর থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখ প্লিজ।ওর কষ্ট সহ্য করতে করতে আমি উন্মাদ হয় যাচ্ছি।এরিক তো ওর শরীরে আঘাত করে।কিন্তু সেই আঘাত গুলো আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে।প্রতিমুহূর্তে আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়।আমি উঃ শব্দ পর্যন্ত করতে পারিনা।আমি যে আর সহ্য করতে পারিনা ইকবাল।বুকটা ব্যথায় জর্জরিত।প্রান টা তো আমার অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে।শুধু এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমার দেহ নামক খাঁচা টা পরে আছে।

ভিয়ানকে শান্তনা দেবার ভাষা খুঁজে পেলো না ইকবাল।শুধু অস্ফুট স্বরে বললো

“ঠিক আছে রাখছি।

ফোন কাটতে নেবে এমন মুহূর্তে ভিয়ান শুধালো

“সাইফ আজমীর পালতু কুত্তা কাইয়ুম মুখ খুলেছে?

ইকবাল লম্বা শ্বাস টেনে বলে উঠলো
“হ্যা।

“ট্রাকের ড্রাইভার কে ছিলো?

“ট্রাকের ড্রাইভার কে ছিলো তা কাইয়ুম জানেনা।কিন্তু সাইফ আজমী তাকে দিয়েই ট্রাক হায়ার করিয়েছিলো।

“ও ট্রাক ড্রাইভার এর নাম জানে কিন্তু বলতে চাচ্ছে না ইকবাল ।

“তাহলে কি করবো এখন?

“ওর শ্বাস চিরতরে রোধ করে দে”

নিষ্ঠুর আগ্রাসী শক্ত ভয়ানক কন্ঠে কথাটি বলে ফোনের লাইন খট করে কেটে দিলো ভিয়ান।এতো এতো যন্ত্রনা আর সহ্য করা যাচ্ছে না।একটু রিল্যাক্স হয়ে শান্তিতে ঘুমুতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই তাথৈ এর হৃদয়বিদারক করুন কান্না কানে ভেসে আসছে।ডিভানের উপর এক পা তুলে আরেক পা ফ্লোরে ঠেস দিয়ে ছোট বালিশে চিৎ হয়ে শুয়ে গেলো ভিয়ান।এক হাত মাথার পিছনে আরেক হাতে বুকের উপর ভাঁজ করে রাখা ।মেয়েটির নিষ্পাপ মুখশ্রী মনে করে ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো ভিয়ান।সেই সাথে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা অশ্রু।সিক্ত বেদনার্ত কন্ঠে ভিয়ান বিড়বিড় করে আওড়ালো

“ভালোবাসা বড়োই যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি তাথৈ”

**********
সাইফ আজমী আর মেহেরিন চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন মুখোমুখি।একজনের চোখে ক্রোধ আর ঘৃণার তপ্ত আগুন ওপর জনের চোখে বিস্ময়।কিন্তু নিশ্চুপ দুজনেই।হঠাত সমস্ত নিস্তব্ধতা ভেঙে চিৎকার করে উঠলো মেহেরিন।

“আমার মেয়ের উপর তোমার আর তোমার ছেলের নোংরা হাত আমি আর কোনোভাবেই লাগতে দেবো না সাইফ।

মেহেরিনের শক্ত কন্ঠে এক ভ্রু উঁচিয়ে সাইফ আজমী শুধালো
“তাই নাকি?তা কি করবে তুমি শুনি?

“মা হয়ে নিজের সন্তান কে রক্ষা করতে যা যা করতে হয় সব করবো আমি।

মেহেরিনের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলেন সাইফ আজমী।এরপর গায়ের কোট খুলে হাতের বাহুতে রেখে স্বাভাবিক স্বরে বলে উঠলেন

“তুমি কি ওকে জন্ম দিয়েছো মেহেরিন?ও কি তোমার পেটে ধরা মেয়ে?

সাইফ আজমীর এহেন নিষ্ঠুর কথায় থরথর করে কেঁপে উঠলো মেহেরিন।যেই নিগুড় সত্য এতদিন বুকে চেপে তাথৈকে আগলে রেখেছেন তিনি তবে তা কি এবার প্রকাশ হয়ে যাবে?সব কিছু হারানো তাথৈ যখন জানবে মা টাও তার নিজের নয় তখন?মেয়েটা কি এসব সহ্য করে বেঁচে থাকতে পারবে?

তাথৈএর নিষ্পাপ মুখশ্রী ভেবেই শিউরে উঠলেন মেহেরিন ।কষ্ট আর ভয় দুয়ের মিশ্রনে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো মেহেরিন চৌধুরীর দুই চোখ থেকে।মুখে বাঁকা হাসির রেখা টেনে নিজের আঙুলের সহায়তায় মেহেরিন এর চোখের জল মুছিয়ে সাইফ আজমী বলে উঠলো

“তাথৈ কে বলবো নাকি যে তুমি ওর জন্মদাত্রী মা নও?চাচী হয়ে মা সেজে নাটক করে যাচ্ছ!

স্বামীর সুদর্শন মুখের পানে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো

“পৃথিবীতে তোমার মতো নিকৃষ্ট মানুষ আমি আর দ্বিতীয় দেখিনি।তুমি হচ্ছ একটা বিষাক্ত ছায়া।সেই ছায়া যার উপর পরে তার ধ্বংস অনিবার্য।

স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে নেবার বাহানায় হাত বাড়িয়ে সাইফ আজমী বলে উঠলেন

“ঠিক বলেছো মেহেরিন।তাই নিজের বাকি জীবনটা ধ্বংস হবার আগে ভালোয় ভালোয় মেয়েকে বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য রাজি করো।না হলে মা মেয়ে দুজনকেই মাটিতে জ্যান্ত পুঁ/তে ফেলবো।

কথা খানা বলে নিজের বুক থেকে ধাক্কা দিয়ে মেহেরিন কে সরিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলেন সাইফ আজমী।মা মেয়ে মিলে বিষিয়ে তুলেছে তার জীবন।এদের যন্ত্রণায় ঘরে কোনো শান্তি ই মিলছে না।মাঝে মাঝে তার খুব ইচ্ছে করে চিরতরে এই দুটোকে শেষ করে দিতে।কিন্তু কোন এক অজানা ভয় এসে জেঁকে ধরে তাকে।কিন্তু ভয়টা কিসের আজো খুঁজে পান না তিনি।তবে কি মেহেরিন কে সত্যি ই ভালোবাসে সে?

*******
সিডনি,অস্ট্রেলিয়া

চলছে বছরের মাঝামাঝি জুন মাস।অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে শীতল তম মাস এটি।মাঝে মাঝেই তাপমাত্রা কমে গিয়ে অল্প তুষারপাত ঝড়ে।ম্যাপল গাছ গুলো সমস্ত সবুজ পাতা টকটকে কমলা রঙে রঙিন হয়ে ফুলের মতো ঝরে যাচ্ছে।চেস্ট নাট আর ইউক্যালিপটাস এর সকল পাতা ঝরে শুধু কান্ড গুলো মাথা তুলে গর্ব হীন মলিন হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আলিশান বিশাল এক সাদা রঙা বাংলোর তুলতুলে নরম সফেদ বিছানায় উদোম গায়ে উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছে সুদর্শন এক যুবক।যুবকের নাম আয়াজ আমির।ডাক নাম রেইন।বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ছেলেটির জন্ম বেড়ে উঠা দুই ই অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে প্রভাব প্রতিপত্তি কোনো কিছুরই অভাব নেই তার।এই জন্যই বোধ হয় কিছুটা উশৃঙ্খল ।

রেইন এর নিজস্ব দুটো বাংলো রয়েছে। একটার নাম সেনিওরিটা এবং আরেকটার নাম হ্যাভেন।নিজের আনন্দ আর ফুর্তির জন্য প্রায়ই সেনিওরিটা নামক বাংলোতে সময় কাটায় সে। আর সে আনন্দ ফুর্তি বলতে যা বুঝে তা হচ্ছে নেশায় চূড় হয়ে মেয়েলি সঙ্গ উপভোগ করা।
বাংলোটির কক্ষের চারপাশে এক পলক নজর বুলালে মনে হবে গত রাতে এখানে ঝড় বয়ে গিয়েছে।পুরোটা কক্ষ সাংঘাতিক এলোমেলো।রেইনের নগ্ন শরীরের পেট পর্যন্ত সাদা ব্ল্যাংকেটে ঢাকা।সময় গড়ানোর সাথে পাল্লা দিয়ে সূর্যের তির্যক মৃদু আলো খানা থাই জানালার সাদা কার্টেন ভেদ করে কক্ষে প্রবেশ করলো।ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলো আলোর ছটা।মুহূর্তেই ঘুম ছুটলো তার।কিছুক্ষন পিটপিট করে ঝাপসা নজরে মেঝের দিকে তাকিয়ে ধপ করে উঠে বসলো সে।মাথাটা প্রচুর ভারী হয়ে আছে।হয়তো গত রাতের ওয়াইনের নেশাটা বেশি স্ট্রং ছিলো।দুই আঙুলের সহিত কপাল স্লাইড করে পুনরায় বিছানায় নজর বুলালো।পাশে থাকা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নগ্ন ফর্সা এলোমেলো মানবী কে দেখে রাগে দপ করে জ্বলে উঠলো প্রতিটি নিউরন।ধরা মাথায় রাগের পারদ যেনো আকাশ ছুলো।দাঁত মুখ কামড়ে অগ্নি চোখে সহসাই শক্ত হাতের থাবায় টেনে ধরলো মেয়েটির চুলের মুঠি।ক্লান্ত মেয়েটির ঘুম পালিয়ে গেলো নিমিষেই সেই সাথে ব্যাথায় আর্তনাদ করে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো

“আর ইউ ম্যাড?

মেয়েটির ইংরেজি পাল্টা প্রশ্ন সহ্য হলো না তার।এক প্রকার টেনে হিচড়ে মেয়েটিকে বিছানা থেকে ছুড়ে মেঝেতে ফেলে হিসিসিয়ে বলে উঠলো
“হুয়ার ডিড ইউ গেট দ্যা কোরাজ টু স্লিপ নেক্সট টু মি এজ অ্যা প্রস্টিটিউট?রাত থাকতেই বেরিয়ে যাসনি কেনো?সকাল সকাল মোড টাই নষ্ট করে দিলি ফাকিং বিচ।

যুবকের গর্জনে কেঁপে উঠলো মেয়েটি ,সে আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু তার আগেই দ্বিতীয় দফায় ধমকে উঠলো রেইন।

“গেট আউট ফ্রম হেয়ার”
বলেই এক বান্ডেল টাকা ছুড়ে মারলো মেয়েটির মুখে।

নিজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড় গুলো মেঝে থেকে তুলে কোনো মতে গায়ে জড়িয়ে টাকা গুলো নিয়ে প্রস্থান করলো মেয়েটি।মেয়েটির যাবার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরা হেসে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো রেইন।সেই সাথে দাম্ভিকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

“ইউজড প্রডাক্টস দ্বিতীয় বার চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছে করে না।এসব সস্তা বিদেশিরা তবুও হাজার বার ইউজড হতে ভালোবাসে।এসব বিদেশি সঙ্গী আর ভালো লাগছে না।একবার দেশি ফ্রেশ ট্রাই করে দেখলে কেমন হয়?

নিজের নোংরা ভাবনা খানা ভেবে হাতে তুলে নিলো অবহেলায় পরে থাকা ফোনটা।কল লিস্ট ঘেঁটে ঘেঁটে বের করে আনলো একটি নম্বর
“এরিক চৌধুরী”

কোনো কিছু বাছবিচার না করেই ডায়াল করলো এরিকের নম্বর।একবার রিং হওয়া মাত্র বাধ্য দাসের ন্যয় ফোন তুলে খুশিতে গদগদ হলো এরিক।কিন্তু এরিকের এতো ছ্যবলামো দেখার সময় কোথায় তার?এরিকের কথার প্রতিউত্তর না করেই গম্ভীর মোটা স্বরে রেইন বলে উঠলো

“হয় তোমার বোনকে এখানে পাঠাও না হয় সকল কন্ট্রাক্ট এর দ্যা এন্ড ঘটাও।

#চলবে