বছর দুয়েক পর পর্ব-১৩+১৪

0
1014

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_১৩
#সারিকা_হোসাইন

*******
কালচে ঘন মেঘে পুরো আকাশ ঢেকে গিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই।গুড় গুড় শব্দে আলোড়িত হচ্ছে ধরণী।ভারী দমকা হাওয়ায় গাছের পাতা ধুলো বালি, এমনকি রাস্তায় অনাদরে পরে থাকা পলিথিন এর ছেড়া অংশ ঘূর্ণায়মান হয়ে চারিধারে ভেসে বেড়াচ্ছে।মনে হচ্চে খুব করে বৃষ্টি নামবে এখনই।বাতাসের দাপটে গায়ের কাপড় পর্যন্ত ঠিক থাকছে না।একটু আগে যেই রাস্তা টা জন মানবে ভর্তি ছিলো তা এখন জন মানব হীন নির্জন।ইকবালের প্রতীক্ষায় এমন বৈরী আবহাওয়ায় নিস্তব্ধ রাস্তায় একাকী শূন্য দৃষ্টিতে রাস্তার পানে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাথৈ।শুক্রবার বিধায় অর্ক বা মৌটুসী কেউ এখানে উপস্থিত নেই।আর তাথৈ ও তাদের কিচ্ছুটি জানায় নি।ভিয়ানের গন্ধ মাখা শার্টের লোভে এসব প্রতিকূলতা সে গায়ে মাখছে না।কিন্তু ঘন্টা দুই গড়ানোর পর ও যখন ইকবাল এলো না তখন অজানা ব্যথায় তাথৈ এর ছোট হৃদপিন্ড টা মুষড়ে উঠলো।আনমনে কখন দুই চোখ গড়িয়ে উষ্ণ জল ঝরে গেলো মেয়েটা তা টেরই পেলো না।

“আপনি আবার আমাকে ফাঁকি দিলেন ইকবাল ভাই?
আফসোস আর কষ্টমিশ্রিত কন্ঠে কথাটি বলে পাশে থাকা মৃত বৃক্ষে শরীর হেলিয়ে দিলো তাথৈ।খুব করে কান্না পাচ্ছে তার।প্রথম বারের মতো নিজের মৃত্যু কামনা করে ডুকরে উঠলো তাথৈ।

“ইয়া আল্লাহ এতো মানুষ এত করে বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে তুমি কি আমাকে দেখো না?কোন ভাবেই কি আমাকে তুমি নিয়ে যেতে পারো না?আমি যে বেঁচে থেকেও নরক যন্ত্রনা ভোগ করছি।আর তো সহ্য করতে পারছি না।এবার তো একটু স্বস্তি দাও আমাকে।

অনুযোগের স্বরে কথা গুলো বলতে বলতে সেই গাছ ঘেষে বসে গেলো তাথৈ।হাঁটু ভাঁজ করে মাথা নত করে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আরো হাজারো অভিযোগ জানালো সে।

বাড়তে থাকলো বাতাসের গতি,জোরে ডেকে উঠলো মেঘ।সহসাই ধরণী কাঁপিয়ে ঝরঝর করে ঝরতে লাগলো ভারী শীতল বরষা।তাথৈএর কান্নার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে লাগলো বৃষ্টির বেগ।

“সত্যি ই আপনি একটা নিষ্ঠুর পুরুষ ভিয়ান।আমাকে কাঁদাতে আপনি খুব ভালোবাসেন।দেখা হলে খুব করে বকবো আপনাকে।

বৃষ্টির ভারী মোটা মোটা ধারা মুহূর্তেই ভিজিয়ে দিলো তাথৈ কে।কতক্ষন এভাবে বৃষ্টি গড়ালো আর কতক্ষন তাথৈ ভিজলো তার কোনো হিসেব রইলো না।বৃষ্টিও বোধ হয় আজ তাথৈ এর কাছে হার মানলো।তার কান্না থামার আগেই বৃষ্টি কে বিদায় নিতে হলো।
অধিক বৃষ্টিতে ভেজার দরুন তাথৈ এর ফর্সা শরীর খানা ফ্যাকাশে রঙ ধারণ করেছে বহু আগে।হাতের তালু আর আঙুলের ডগা গুলোও কুঁচকে সাদাটে নীল হয়ে রয়েছে।গায়ের পোশাক শরীরের সাথে শক্ত করে এঁটে রয়েছে। কিন্তু এসবে কোনো হুশ ই নেই তাথৈ তার।

‘আপা আর কাইনদেন না”
অল্প বয়সী ছোট বাচ্চা মেয়ের কন্ঠে মাথা তুলে চাইলো তাথৈ।সামনে দাঁড়ানো ছয় কি সাত বছরের কৃষ্ণবর্ণের ছোট একটি মেয়ে ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।হয়তো ফুল বিক্রি করে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে।বৃষ্টি থেমে গিয়ে মানুষ চলাচল শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।কিন্তু সে কিচ্ছুটি টের পায়নি?দুই হাতে চোখের জল মুছে ওড়না দিয়ে শীর্ন শরীর খানা ভালো করে ঢেকে নিজেকে ধাতস্থ করলো তাথৈ।বাচ্চা মেয়েটি তাথৈ এর পানে একটা বেলি ফুলের মালা এগিয়ে বলে উঠলো

“কষ্ট পাইয়েন না আপা মনি।এই মালাডা ধরেন।ফুলের পবিত্র গন্ধে সব কষ্ট দূর হইয়া যাইবো।

নিষ্প্রাণ তাথৈ মেয়েটির পানে অপলক তাকিয়ে রইলো।মেয়েটি সামান্য হেসে একটা মালা বাড়িয়ে বলে উঠলো

“ভাইজান আপনারে ফালায়া চইলা গেছে?

মেয়েটির কথায় আরো দুফোঁটা জল টুপ করে পরে গেলো তাথৈ এর গাল বেয়ে।সিক্ত চোখেই তাথৈ মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
মেয়েটি তার নরম হাতে তাথৈ এর জল মুছে বলে উঠলো

“পুরুষ মানুষ আসলেই ভালা না।আমার মায় রেও ফালায়া আমার বাপ গেছে গা অন্য বেডির কাছে।কয়েক দিন মায় খুব কানছে, এহন আর কান্দে না।

সিক্ত ফ্যাকাশে হাতে মেয়েটির হাত থেকে ফুলের মালা নিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা দিতে নিলেই মেয়েটি বলে উঠলো

“টাকা লাগতো না।দুঃখী মানুষে রে খুশি করতে আমার ভালা লাগে।মালা পাইয়া আপ্নে দুঃখ ভুলছেন এইডাই আমার বড় পাওয়া।

মেয়েটির মাথায় মমতার হাত বুলিয়ে তাথৈ বলে উঠলো

“তোর ভাইয়া আমাকে ফেলে আকাশে চলে গিয়েছে।চাইলেও আর তাকে দেখা যায়না,কথা বলা যায়না।

আর দাঁড়ালো না তাথৈ।মেয়েটির হাতে জোর করে অর্ধ ভেজা এক হাজার টাকার একটা নোট গুঁজে দিয়ে উদ্দেশ্য হীন এলোমেলো পায়ে এগিয়ে চললো সামনের দিকে।আজকের গন্তব্য সে জানেনা।

তাথৈ এর যাবার পানে তাকিয়ে বাচ্চা মেয়েটি আফসোস এর স্বরে বলে উঠলো

“এতো সুন্দর একটা মানুষের মনে আল্লাহ কত কষ্ট দিয়া রাখছে।

********
অফিসে নিজের কেবিনে বসে বসে সমানে দাঁত মুখ কামড়ে চলেছেন সাইফ আজমী।আয়াজ আমির রেইন তার বড় একটা শিপমেন্ট ক্যানসেল করেছে কোনো কারণ ছাড়াই।কোটি কোটি টাকার লস এক নিমিষেই হয়ে যাবে।ছেলেটি বাজ পাখির চাইতেও ধূর্ত।তাথৈকে তার হাতে তুলে দিলে তবেই সে শিপমেন্ট এপ্রোভ করবে।সাইফ আজমী আজো ভেবে পান না তার চাইতেও বড়ো খেলোয়াড় এর অস্তিত্ব এই দুনিয়ায় রয়েছে।কিন্তু কাউকে চাইলেই কি বিদেশ পাঠানো যায়?এটা কি মোয়া?কিনলাম আর খেলাম?ছেলেটি ভিসা প্রসেসিং পাসপোর্ট রেডি এসব কিচ্ছু মানতে চাচ্ছে না।কি ই বা আছে এই মেয়ের মাঝে সেটাই বুঝে পাচ্ছে না সাইফ আজমী।
কিছু সময় অতিবাহিত হতেই বিড়ি ফুকতে ফুকতে কেবিনে প্রবেশ করলো এরিক।সারা রাত না ঘুমানোর কারনে চোখ দুটো তার বেশ লাল।মাথাটাও খুব করে ধরে আছে।সিগারেট এর নিকোটিন মাথা ব্যথা আরো চাঙ্গা করছে।কিন্তু অভ্যাসের কারনে ফুকতে হচ্ছে।
কেবিনে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে বসে পায়ের উপর পা তুলে মাতালের ন্যয় বলে উঠলো―

“ভিসা লেগে গেছে পাপা।এক সপ্তাহের মধ্যেই তাথৈকে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো যাবে।রেইন কে জানিয়ে দিও।এই শহরে টাকা ছিটালে সব সম্ভব।

ছেলের কথায় তাচ্ছিল্য হাসলেন সাইফ আজমী।এরপর চোখ মুখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন

“শিপমেন্ট ক্যানসেল হবার আগে টাকা ছিটাতে পারলে না?অকর্মা কোথাকার”

এরিক আর সাইফ আজমীর কথার মধ্যে হনহন করে কেবিনে প্রবেশ করলেন তাদের বিজনেস পার্টনার মইদুল।হাতে তার হলুদ খামের চিঠি।চিঠিটা সাইফ আজমীর দিকে এগিয়ে টেবিলে থাকা পানির গ্লাস থেকে ঢকঢক করে পানি খেয়ে হাপাতে লাগলেন মইদুল।মইদুল এর চালচলন সুবিধার লাগলো না সাইফ আজমীর কাছে।ছো মেরে খামটা হাতে নিয়ে চিঠি বের করতেই ভ্রু কুঁচকে এলো।সেই সাথে উত্তেজিত কন্ঠে বেরিয়ে এলো

“হুয়াট?

********
হাটতে হাটতে অবচেতন মনে সন্ধের আগ মুহূর্তে বাড়ি ফিরলো তাথৈ।কিন্তু বাড়িতে মেহেরিন চৌধুরী নেই।হয়তো কোথাও গিয়েছে একটা। ভেজা শরীর নিয়ে ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিজ কক্ষের দিকে হাটতে লাগলো তাথৈ।ইতিমধ্যে হাঁচি শুরু হয়ে গিয়েছে।এমনিতেও তার কোল্ড এলার্জি আছে।সামান্য ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগলেও হাঁচি কাশি শুরু হয়ে যায়।তাই এই হাঁচি কে গায়ে লাগালো না সে।কক্ষে প্রবেশ করে শুকনো কাপড় নিয়ে চলে গেলো ওয়াশ রুমে।একটা হট শাওয়ার নেয়া প্রয়োজন।ওয়াশ রুমে এসে শাওয়ার ছেড়ে মেঝেতে বসে সাদা টাইলসের দেয়ালে হেলান দিলো তাথৈ।মুহূর্তেই চোখে ভেসে উঠলো তিহানের গায়ে হলুদের সেই সুন্দর একটি রাত।

এটাই ছিলো তাথৈ এর দেখা গ্রামের প্রথম বিয়ে।মকবুল শেখ প্রভাবশালী আর টাকা ওয়ালা মানুষ থাকায় বেশ করে আয়োজন করে নাতির বিয়ে দিয়ে ছিলেন।তিহানের বিয়ে কে কেন্দ্র করে সকলের মধ্যে কি আনন্দ আর হাসি তামাশা!পুরো বাড়ি ভরে গিয়েছিলো নতুন নতুন সব অতিথি দিয়ে।
তিহানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো ফুল বাগানের পাশের বিশাল খালি জায়গা টায়।ড্রেস কোড হিসেবে অবিবাহিত মেয়েরা পড়লো বাসন্তী লেহেঙ্গা আর ফুলের গহনা,ছেলেরা কাঁচা হলুদ পাঞ্জাবি আর শেওলা রঙা কুর্তি।বয়স্ক রাও বাদ যায়নি।তারাও সেজেছিলো বাসন্তী রঙা শাড়ি তে।সন্ধ্যার সাথে সাথেই পুরো শেখ বাড়ি রঙিন হলো কালফুল লাইটস এর রোশনাই এ।বড় বড় বক্সে বেজে উঠলো বিয়ে সংবলিত গান।সকলে রেডি হয়ে অনুষ্ঠানে চলে গেলেও তাথৈ ঠাঁয় বসে রইলো নিজের কক্ষে।বিভিন্ন ব্যস্ততায় সেভাবে কেউ তাথৈ এর খুজ নিতে পারলো না।কিন্তু ভিয়ান তাথৈকে যেনো চোখে হারালো।পুরো অনুষ্ঠান মঞ্চ খুঁজেও যখন তাথৈ কে পেলো না তখন অনুষ্ঠান ছেড়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে তাথৈ এর রুমে এসে দাড়ালো।

“একি এখনো তৈরি হওনি ফিনিক্স বার্ড?

অবাক মেশানো আদুরে স্বরের কথাটি কে অনুসরণ করে মাথা তুলে দরজার পানে দৃষ্টি দিলো তাথৈ।সামনে দাঁড়ানো ফর্সা মোহনীয় পুরুষকে দেখে বার কয়েক হার্ট বিট মিস করলো সে।মনে হচ্ছে হলুদ রঙটা শুধু মাত্র স্পেশাল করে ভিয়ানের জন্যই বানানো হয়েছে।পুরুষ মানুষের এতো সুন্দর হতে হবে কোন দুঃখে?আজব!

ভিয়ান দুই হাতে দরজার পাল্লা ঠেলে কক্ষে প্রবেশ করে আবারো শুধালো
“কি হলো?এখনো রেডি না হয়ে বসে আছো কেনো?

তাথৈ মাথা নিচু করে বলে উঠলো

“গালের দাগ গুলো বিশ্ৰী লাগছে।ওখানে অনেক মানুষ।আমার অস্বস্তি হচ্ছে।

ভিয়ান বুঝলো মেয়েটি ইন্ট্রোভার্ট।আর গালের দাগ গুলো খুব করে সাদা হয়ে আছে।এগুলো মিশতে অনেক সময়ের ব্যপার।তাই বলে মেয়েটি ইনজয় করবে না?

তাথৈ এর হাত টেনে ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো

“মোটেও বিশ্ৰী লাগছে না বরং প্রত্যেকটা সজ্জাযুক্ত মানুষের থেকেও তোমাকে বেশি সুন্দর লাগছে।আমার চোখে তুমি সব সময় সেরা সুন্দরী তাথৈ।

ভিয়ানের গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসলো তাথৈ।এই লোকটা এমন ভাবে ভরসা দিতে জানে যে কোনো দ্বিধা এসে আর ভর করতে পারে না।
তাথৈ এর বাহু ছেড়ে দিয়ে হাতের উপরিভাগে ভালোবাসার উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো

“এভাবেই সবসময় হাসবে ঠিক আছে?পৃথিবীর কোন দুঃখ কোনো ভয়,সংশয় তোমাকে স্পর্শ না করুন।ওগুলো সব আমার হয়ে যাক।আমি অবলীলায় সামলে নেবো।কিন্তু তোমার কিছু হলে সইতে পারবো না।

ভিয়ানের এমন ভালোবাসাময় কথায় মোমের মতো গলে গেলো তাথৈ।এই ছয় ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার বিশালদেহী পুরুষকে খুব করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো তার।কিন্তু তার মতো পাঁচ ফিট উচ্চতার লিলিপুট ওই গ্যালিবার এর নাগাল পাবে?

“কি ভাবছো ?

“আপনাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্চে করছে।
কথাটি বলেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো তাথৈ।
তাথৈ এর কথা শুনে এক ভ্রু উঁচিয়ে ভিয়ান শুধালো
“সত্যি?

“তাথৈ হাতের করপুটে মুখ লুকিয়ে মাথা নাড়িয়ে জানালো হ্যা সত্যি।

চারপাশে নজর বুলিয়ে একটা মাঝারি উচ্চতার টুল এনে তাথৈ এর পায়ের কাছে রেখে ভিয়ান বলে উঠলো

“নাও ধরো।
লজ্জায় তাথৈ এর অবস্থা মরি মরি হলো।তবুও ঠোঁট কামড়ে চোখে খুশির ঝিলিক ফুটিয়ে ভিয়ানের বড় বড় দুই হাত চেপে ধরে টুলের উপর দাঁড়ালো।এরপর দুই হাত মেলে দিয়ে ভিয়ান কে আহ্বান জানাতেই ঝড়ের গতিতে তাথৈকে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“আই লাভ ইউ তাথৈ।লাভ ইউ সো মাচ বেবি।এ জীবনে তোমাকে না পেলে নিশ্চিত ম/রে যাবো।প্রমিস।

ভিয়ানের উষ্ণ স্পর্শে তাথৈ এর ঘুম পেয়ে গেলো।আবেশে দুই চোখ বুঝে তাথৈ ভেঙে ভেঙে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো

“খুব ঘুম পাচ্ছে ভিয়ান।

তাথৈ এর মাথায় চুমু খেয়ে হাসকি নিচু কন্ঠে ভিয়ান বলে উঠলো

“তবে ঘুমাও।

*******
সহসাই চোখ মেলে তাকালো তাথৈ।শরীর টা বরফ খণ্ডে পরিণত হয়েছে সেই সাথে কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে।তাই আর দেরি না করে ঝটপট শরীর মুছে ড্রেস পাল্টে বাইরে বেরিয়ে এলো তাথৈ ।এই গ্রীষ্ম কালেও শীতে তার দাঁতের বাড়ি উঠে গেলো,আশি বছরের বৃদ্ধার ন্যয় শরীরটাও ঠক ঠক করে কাঁপছে।নিজের শরীরের বেগতিক অবস্থা টের পেয়ে ঝটপট বিছানায় উঠে একটা কাঁথা জড়িয়ে ভিয়ানের ছবিটা বুকে জড়িয়ে শুয়ে পড়লো তথ্য আর ধীরে ধীরে বলে উঠলো

“খুব ঘুম পাচ্ছে ভিয়ান”

কথাটি বলেই চোখ বন্ধ করে ফেললো সেই সাথে চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে বালিশের কভারটা ভিজিয়ে দিলো।।।

#চলবে

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_১৪
#সারিকা_হোসাইন

ধরনীতে খুব করে কালচে নিশির আগমন হয়ে গিয়েছে।সন্ধ্যার রেশ কেটে গিয়েছে আরো বেশ কিছু সময় আগে।ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে মানুষের চাঞ্চল্যতা।এই চাঞ্চল্যতা ঘরে ফেরার চাঞ্চল্যতা।সারা দিনের ব্যস্ততা কাটিয়ে ঘরে ফেরার আনন্দে মানুষের মলিন মুখ গুলোতে তৃপ্তির সুন্দর হাসি।কিন্তু এসব মানুষের মধ্যে মেহেরিন সকলের চাইতে আলাদা।না আছে ঘরে ফেরার তাড়া না আছে মুখে হাসি।পার্কের ফাঁকা বেঞ্চিতে এলোমেলো শূন্য দৃষ্টিতে রাতের আধারের সাথে যেনো নিজেকে মিলেমিশে একাকার করাতে ব্যস্ত সে।

“খুব বেশি অপেক্ষা করিয়েছি নাকি?

সুন্দর সাবলীল পুরুষালি কন্ঠে নিজের ধ্যান ছেড়ে বেরিয়ে এলো মেহেরিন।গায়ের আঁচল টুকু টেনে স্মিত হেসে বলে উঠলো

“অপেক্ষা যেখানে সারাটা জনমের সেখানে দুই এক ঘন্টায় কি আসে যায়?

মানুষটি এবারও প্রশস্ত হেসে মেহেরিনের সামনে পাতা চেয়ারে বসলো।এরপর বলে উঠলো
“কেনো ডেকেছো?

মেহেরিন মাথা তুলে সামনে বসা হাস্যজল ব্যক্তির পানে গভীর দৃষ্টি মেলে শক্ত কন্ঠে শুধালো

“মিছে ভালো থাকার অভিনয় করে কি লাভ সাজিদ?তোমার এই প্রাণহীন হাসি আমাকে পীড়া দেয় কেনো বুঝো না?

এবার সাজিদ নামক লোকটি খুব করে থতমত খেলো।সেই সাথে মিছে কাশির ভান ধরে বলে উঠলো

“তুমিও না !

মেহেরিন আর কথা না বাড়িয়ে নিজের মনের কথাটা ফট করে অবলীলায় বলে উঠলো

“শুনেছি অনেক বড় ল ইয়ার হয়েছো তুমি।তাই একটা সাহায্যের জন্য ডেকেছি তোমাকে।

মেহেরিনের মুখে সাহায্যের কথা শুনে বেশ অবাক হলো সাজিদ মাহমুদ।সেই সাথে বিস্ময় ভরা কন্ঠে শুধালো

“কি সাহায্য মেহু?

মেহু নামটা শুনে মেহেরিনের হৃদয় টা ধক করে উঠলো।তবুও নিজেকে সামলে কোনো প্রকার ভনিতা না করে ক্রোধিত কন্ঠে বলে উঠলো

“সাইফ আজমিকে ডিভোর্স দিতে চাই আমি।

সাজিদের কাছে কথাটা যেনো বজ্রপাতের ন্যয় ঠেকলো।সামনের টেবিলে থাকা পানির বোতল থেকে এক ছিপি পানি গলাধঃকরণ করে কন্ঠ খাদে ফেলে শুধালো

“এই বয়সে!

“সিদ্ধান্ত টা আরো বছর পঁচিশ আগেই নেয়া উচিত ছিলো সাজিদ।বড্ড দেরি হয়ে গেলো যে!যদিও বয়স হয়েছে কিন্তু আর নিতে পারছি না এসব অমানবিক অত্যাচার।মানুষটা কখনোই শুধরালো না।আমি তো নিজেকে ধ্বংস হবার জন্য সপেই দিয়েছিলাম।কিন্তু তাথৈ কেও ছাড়ছে না ও।

কথা গুলো বলতে বলতে মেহেরিনের গলা ধরে এলো।বোবা কান্নায় গলার স্বর চেপে এলো।অসহনীয় ব্যথায় গলাটা টনটনে ব্যথায় ছেয়ে গেলো।

“তোমার দু দুটো সন্তান রয়েছে মেহু”

কাতর আর দরদ মিশ্রিত কন্ঠে কথাটি বলে চোখে থাকা পাওয়ার ওয়ালা চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলেন সাজিদ মাহমুদ।

সাজিদের কথায় টুপ করে দুফোঁটা জল খসে পড়লো মেহেরিনের শুভ্র গাল বেয়ে।সেই জল দ্রুত হাতে মুছে মেহেরিন বলে উঠলো

“আমার নিজ গর্ভের কোনো সন্তান নেই সাজিদ।বিধাতা এদিক থেকেও আমাকে নিঃস্ব করেছেন।

“তবে এরিক আর তাথৈ?
খানিক উত্তেজিত অবাক কন্ঠে শুধালেন সাজিদ মাহমুদ।

“এরিক সাইফ আজমীর অবৈধ সন্তান যাকে আমি না চাইতেও নিজের সব টুকু ঢেলে নিজের গর্ভের সন্তান পরিচয়ে বড় করেছি আর তাথৈ সাঈদ আর তনিমার সন্তান”

আর কথা বলতে পারলো না মেহেরিন।অসহ্য ব্যথায় বুকের ভেতর খুব কষ্ট হলো।দুই চোখ উপচে ঘন বরষা ঝড়লো।সাজিদ মেহেরিন কে শান্তনা দেবার কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।মেহেরিন তার ভালোবাসার মানুষ।এই ভালোবাসা দুই এক দিনের নয়।বরং ত্রিশ টি বছর ধরে মেহেরিনের ভালোবাসা বুকে চেপে আজো সে চির কুমার হয়ে জীবন যাপন করছে।সাইফ আজমী জোর করে মেহেরিন কে বিয়ে না করলে হয়তো তাদের খুব সুখের একটা দুস্টু মিষ্টি সংসার হতো।কারন মেহেরিন আর সাজিদের ভালোবাসায় কোনো কমতি ছিলো না।যেই মেহেরিন কে কখনো কাঁদতে দেবে না বলে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছিলো সাজিদ মাহমুদ আজ তার সামনেই সেই মেহেরিন কেঁদে বুক ভাষাচ্ছে।অথচ সেই চোখের জল পর্যন্ত মুছে দেবার অধিকার তার নেই।

মেহেরিনের কান্নায় সাজিদের চোখের মণি চকচক করে উঠলো।সংগোপনে টিস্যু দিয়ে সেই জল মুছে কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলেন

“আরো সময় নাও মেহেরিন।আজ আজছি।ফের দেখা হবে।

আর দাড়ালেন না সাজিদ।মেহেরিনের কান্না তার বুকে শেল হয়ে বিধছে।মেহেরিন ভালো আছে এটা ভেবে এতোগুলো বছর মিছে ভালো থাকার অভিনয় করে গিয়েছে সে।আজ এই অমোঘ কথা গুলো জানার পর কষ্ট গুলো যেনো শক্ত আসন গেড়ে বুকের মাঝখান টায় বসেছে।মেহেরিনকে ভেবে জীবনের দুই যুগের রঙিন বসন্ত চলে গিয়েছে বিষাদে।তবুও মেহেরিন কে কিচ্ছুটি বুঝতে দেয়নি সে।তবে আজ কেনো মেহেরিনের জীবনে এতো দুর্দশা?

*********
রাতের গভীরতা নামার সাথে সাথে তাথৈ এর পুরো শরীর কব্জা করলো শক্ত বুখারে।তাপের প্রভাবে বিছানায় আগুন ধরে যাবার উপক্রম।গোলাপি ফিনফিনে ঠোঁট দুটো শুষ্ক হয়ে উঠছে বারংবার।কঠিন পিপাসায় গলাটাও ফেটে চৌচির।কিন্তু চোখ মেলে দুনিয়া দেখার সাধ্য নেই তার।মরার মতো বেঘোরে বিছানায় পরে কাতরাতে লাগলো শুধু।হঠাতই চোখের পাতায় ভর করলো সুন্দর এক স্বপ্ন।

তিহানের বিয়ের পর পরই তাথৈ মেহেরিন আর ভিয়ান ফিরে এসেছিলো ঢাকায়।ভিয়ান আর অস্ট্রেলিয়া ফিরে যায়নি সেবার।কেনো থেকে গিয়েছিলো এটা মেহেরিন বা তাথৈ কেউ জানতোনা।

ধীরে ধীরে বেড়েছিলো ভিয়ান আর তাথৈ এর ভালোবাসার পরিধি।মেহেরিন ওদের পরিনয়ের ব্যপারে সব জানতেন।এজন্য চাইলেই ভিয়ান যখন তখন বিনা বাধায় সাইফ আজমীর বাড়িতে আসতে পারতো তাথৈকে দেখতে।আর ততদিনে ভিয়ানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বুঝে গিয়েছিলেন মেহেরিন চৌধুরী।ছেলেটিকে চোখ বুঝে বিশ্বাস করে ছিলেন মেহেরিন।মেহেরিনের ধারণা ছিলো সাইফ আজমী আর এরিকের থেকেও এই ভিয়ানের কাছে সেফ থাকবে তাথৈ।

গ্রাম থেকে ফেরার পরপরই তাথৈ প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হলো।সেসময় সাইফ আজমী বিজনেস ট্রিপে জাপান গিয়েছিলেন দিন পনেরোর জন্য।আর এরিক ড্রাগস এডিক্টেড থাকার কারনে সব সময় ই নিজেকে ঘরে আবদ্ধ রাখতো।আবদ্ধ রাখতো বললে ভুল হবে।সে নেশার ঘোরে বিছানায় পরে থাকতো।

প্রথমে মেহেরিন ভেবেছিলো ওয়েদার চেঞ্জ এর জন্য হয়তো তাথৈ এর সিজনাল ফ্লু হয়েছে।কিন্তু তাথৈ এর জ্বরের মাত্রা যখন থার্মোমিটার এর তুঙ্গে তখন বেশ ভীত হলেন মেহেরিন।নিজেদের ফ্যামিলি ডক্টর এসে মেডিসিন দিয়ে আশ্বাস দিলো এক রাতের ব্যবধানেই ভালো হয়ে উঠবে সে।কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলেও জ্বরের কমার কোনো লক্ষণ দেখা গেলো না।
এদিকে তাথৈ এর এহেন অবস্থা ভিয়ানের হৃদয় কে জ্বালিয়ে মারলো।তাথৈ এর এহেন শোচনীয় অবস্থায় ভিয়ানের খুব করে ইচ্ছে হলো তাথৈ কে বুকে জড়িয়ে শক্ত করে ধরে রাখতে।কিন্তু মেহেরিনের সামনে চোখের দেখা এবং হাতের উল্টো পিঠে জ্বর পরিমাপ করা ছাড়া আর কিচ্ছুটি করতে পারতো না সে।
শেষমেশ একদিন নিরুপায় হয়ে হৃদয়ের কঠিন যন্ত্রণার তাড়নায় রাতের আধারে চুপি চুপি দেয়াল টপকে পাইপ বেয়ে উঠে গেলো তাথৈ এর খোলা বেলকনিতে।অবশ্য ইকবাল বেশ করে সাহায্য করেছিলো সেদিন তাকে।ভিয়ান বেলকনিতে এসে পড়ে গেলো বিশাল বিড়ম্বনায়।বেলকনির দরজা ভেতর থেকে আটকানো।এবার কি হবে?

শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে তাথৈকে ছোট একটা মেসেজ পাঠালো ভিয়ান।

“তোমাকে বুকে জড়ানোর জন্য হৃদয় টা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে তাথৈ।প্লিজ কষ্ট করে একটু বেলকনির দরজা টা খুলে দাও ।শক্ত করে একটু বুকে জড়িয়ে ফিরে যাবো।প্রমিস।

মেসেজটি দেখা মাত্র অসুস্থ তাথৈ কোনো মতে বিছানা ছেড়ে উঠে বেলকনির দরজা খুলতেই ভিয়ান ছো মেরে তাথৈকে কোলে তুলে তাথৈ এর গলার ভাজে দীর্ঘ লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো

“জান টা জাস্ট বের হয়ে যাচ্ছিলো লাভ, ট্রাস্ট মি”

কিন্তু নেতিয়ে পরা তাথৈ দুর্বল হাতে ভিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারলো না।।এক দিকে বেঘোর জ্বর অন্য দিকে কিচ্ছু খেতে না পারার দরুন প্রচন্ড দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো সে।
ভিয়ানের প্রশস্ত বুকে তাথৈ কে ছোট একটা বাচ্চা মনে হলো সেদিন।
তাথৈ ভিয়ানের গলা জড়িয়ে দুই পা দিয়ে কোমর জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ রেখেই অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো

“আরাম লাগছে।

তাথৈ এর মাথায় চুমু খেয়ে তাথৈকে ঐভাবেই কোলে নিয়ে কতো সময় ভিয়ান দাঁড়িয়ে রইলো তার হিসেব রইলো না।কিন্তু তাথৈ এর শরীরের উত্তাপে মনে হচ্ছিলো ভিয়ানের পুরো শরীর যেনো পুড়ে যাচ্ছে।ভারী শিতেও ঘেমে নেয়ে একাকার হলো ভিয়ান সেই তাপে।এভাবেই দীর্ঘ সময় গড়াতেই চলে যাবার জন্য ভিয়ান তাথৈকে ডাকলো

“আমাকে যেতে হবে বাবু।আন্টি দেখলে আমাকে খারাপ ভাববে।

কিন্তু তাথৈ এর কাছ থেকে কোনো শব্দ এলো না।পিঠে হালকা হাত বুলিয়ে ভিয়ান পুনরায় ডেকে উঠলো

“বাবু?

তাথৈএর গভীর নিঃশ্বাসের শব্দে বোঝা গেলো মেয়েটি ঘুমিয়ে গিয়েছে।তাথৈ এর চুলে পুনরায় চুমু খেয়ে পরম যত্নে বিছানায় শুইয়ে দিতে নিলেই তাথৈ ধীর নিভু নিভু কণ্ঠে আবদারে স্বরে বলে উঠলো

“আমাকে আরেকটু আপনার বুকে ঘুমুতে দিন প্লিজ।অনেক শান্তি লাগছে।শারীরিক কষ্ট গুলোও কমতে শুরু করেছে।আর কিছুটা সময় আমার কাছে থাকুন ।

তাথৈএর আবদার ফেরাতে পারলো না ভিয়ান।সারাটা রাত ওই একই ভাবে নিজের কোলে বসিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো তাথৈ কে।
ভোর রাতের দিকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলো তাথৈ এর।গায়ে একদম জ্বর নেই।ফজরের আজান হতেই ঘুম ভাঙলো তার।চোখ মেলে নিজেকে ভিয়ানের কোলে দেখে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।সেই সাথে শক্ত আলিঙ্গনে ভিয়ান কে বেঁধে ভিয়ানের বুকে মুখ লুকালো।

তাথৈ কে জাগতে দেখে প্রশস্ত হাসলো ভিয়ান।এরপর আদুরে কন্ঠে শুধালো

“ভালো ঘুম হলো?

তাথৈ মুচকি হেসে ভিয়ানের চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো

“আপনি আমার ভালো থাকার মেডিসিন ভিয়ান নাওয়াফ”

তাথৈ এর কপালে উষ্ণ পরশ একে ভিয়ান সিরিয়াস কন্ঠে বলে উঠলো

“যদি জানতাম জড়িয়ে ধরলেই তোমার জ্বর পালাবে তাহলে প্রথম দিনই এই মেডিসিন দিয়ে দিতাম।এতোগুলো দিন মোটেও কষ্ট পেতে দিতাম না।

তাথৈ ভিয়ানের কথায় লাজে রাঙা হয়ে বলে উঠলো

“আপনি সত্যি একটা অসভ্য পুরুষ।মুখে কিচ্ছুটি আটকায় না।

তাথৈ এর গাল চেপে ধরে ভিয়ান চোখ ছোট ছোট করে বলে উঠলো
“সুস্থ হবার পর সব রোগীর কাছেই ডাক্তার কে খারাপ মনে হয়।বিশ্বাস না হলে মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখো।

ভিয়ানের নাক টিপে ধরে তাথৈ নিচু স্বরে বলে উঠলো
“আপনি একটু বেশি ই খারাপ।

“তাহলে খারাপ মানুষের কোলে বসে আছো কেনো?ভয় লাগছে না?যদি কামড়ে দেই?

তাথৈ ভিয়ানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাথৈ আবেশ মেশানো বলে উঠলো
“উহু মোটেও ভয় লাগছে না।জানি কামড়ে দেবেন না।

এদিকে বাসার নীচে ঝোপের মধ্যে সারা রাত বসে থেকে মশার কামড়ে ইকবালের নাজেহাল অবস্থা।দিনের আলো ও ফুটলো বলে।আর একটু দেরি হলেই চোরের দন্ড মাথায় নিয়ে দারোয়ান এর কেলানি খেতে হবে।উপায়ন্তর না পেয়ে ছোট করে মিসড কল দিলো ভিয়ানের নম্বর।

“এতো সকালে কোন মেয়ে মিস করছে আপনাকে?

কথাটি বলে উত্তরের প্রতীক্ষায় ঠোঁট টিপে বসে রইল তাথৈ।

“কোনো মেয়ে না গো।ইকবাল বসে আছে বাসার নীচে ঝোপের আড়ালে।যেতে হবে আমাকে।

“কিহ আপনি প্রেম করার জন্য সাথে আরেক জনকে নিয়ে এসেছেন?

“একা একা মার খাবো নাকি?

“সাধে কি আপনাকে অসভ্য বলি?

“আচ্ছা অসভ্য মানুষ চলে যাচ্ছি।
ভিয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে তাথৈ শুধালো

‘আবার কবে আপনাকে এভাবে পাবো?

তাথৈ এর নাকে নাক ঘষে ভিয়ান বলে উঠলো

‘আবার যখন জ্বর বাধাবে।

“প্রমিস?

“প্রমিস।

“তাহলে প্রতিদিন খুব করে জ্বর হোক আমার।

“প্রতিদিন জ্বর হলে কামড়ে দেবো।

“আমি কামড় খেয়েও আপনাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।

“প্রতিদিন দেখা হলে যদি ভুল কিছু হয়ে যায়?

“আপনাকে বিশ্বাস করি আমি।

“যদি ভেঙে দেই?

“ভাঙবেন না।খুব ভালো করে চিনি।

তাথৈ কে আরেকটু বুকে জড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে কম্বল টেনে মাথায় হাত বুলিয়ে ভিয়ান হাসকি কন্ঠে বলে উঠলো

“যত বার তুমি অসুস্থ হবে ততোবার আমি ডাক্তার হয়ে তোমার রোগ সারাবো।

“তখন যদি বিদেশে থাকেন?

“উড়ে উড়ে চলে আসব প্রমিস।

#চলবে