বছর দুয়েক পর পর্ব-৩৫+৩৬

0
892

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৩৫
#সারিকা_হোসাইন

_______
সিডনি শহর থেকে দেড় ঘন্টার রাস্তা ফরেস্ট পাথ।ফরেস্ট পথের মনোরম বনটি ঘেষে ছোট একটি বাংলো মতোন দূতলা বিশিষ্ট দুপেলক্স বাড়ি।ওই হলিউড স্টাইলেজ কজি হোম যাকে বলে আরকি।বাড়িটির চারপাশ জুড়ে ক্যাবেজ পাম গাছের আনাগোনা সেই সাথে নাম না জানা লিলি ফুলের সমারোহ।ঘন গাছপালায় আচ্ছাদিত থাকার কারনে এখানে শীতের প্রকোপ শহরের তুলনায় বড্ড বেশি।ভিয়ান যখন তাথৈকে নিয়ে বাড়িটির আঙিনায় এসে উপস্থিত হলো তখন বেশ ভালোই তুষার ঝড়ছিলো।ক্যাবেজ পাম গাছের ঝুপড়ি ওয়ালা বরফ যুক্ত পাতা গুলো দেখতে মনে হচ্ছিলো যেনো লম্বা লাঠি দিয়ে আকাশ থেকে সাদা মেঘের দলা পেড়ে আনা হয়েছে।আবছা ঘন কুয়াশা আর মাত্রারিক্ত হিমবাহের কারনে বেশিক্ষন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলো না তাথৈ।দ্রুত গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়ে তাথৈকে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো ভিয়ান।

ভিয়ানের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির দেখাশোনা কারী বৃদ্ধ আলবার্ট গায়ে ভারী শীত বস্ত্র জড়িয়ে ড্রয়িং রুমে এসে উপস্থিত হলো।এরপর ভিয়ানের সামনাসামনি হতেই ঘরের সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে নিজের বাড়িতে প্রস্থান নেবার জন্য পা বাড়ালো।এতোক্ষন তাথৈ নিশ্চুপ থাকলেও এবার মুখ খুললো।নিচু মিনমিনে কন্ঠে ভিয়ানকে শুধালো

“এমন বৃদ্ধ মানুষ এই রাতের বেলায় কোথায় যাচ্ছে?,উনাকে রাত টুকু এখানেই থাকতে বলো।

তাথৈ এর কথা বোধ হয় আলবার্ট শুনলো।পায়ের গতি শ্লথ করে মিষ্টি হেসে তাথৈ এর পানে তাকিয়ে শুদ্ধ বাংলায় বলে উঠলো

“বাড়ির বাইরেই আমার ট্রি হাউজ আছে।ওখানেই থাকি আমি।যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে ডাকবেন।আসছি।আর আমার স্ত্রী আপনাদের জন্য খাবার রান্না করে টেবিলে রেখে গিয়েছে।হয়তো এখনো গরম আছে।দ্রুত পরিবেশন করবেন।

আর দাঁড়ালো না বৃদ্ধ।ঘরের দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেলো নিজের গৃহের উদ্দেশ্যে।আলবার্ট চলে যেতেই বিস্ফারিত নেত্রে উত্তেজিত স্বরে তাথৈ শুধালো

“উনি এতো ভালো বাংলা কি করে বলতে পারে?

ভিয়ান মুচকি হেসে তাথৈকে একটু কাছে টেনে গায়ের ভারী জ্যাকেট খুলে দিতে দিতে বলে উঠলো

“কারন তার স্ত্রী বাঙালি মেয়ে।সাদা বিলেতি মানুষ কে নিজের ভালোবাসায় একদম বিশুদ্ধ বাঙালি করে গড়ে তুলেছে।ভালোবাসার শক্তি কত দেখেছো?

বড়বড় চোখ দুটো বার কয়েক পলক ঝাপটিয়ে তাথৈ বলে উঠলো
“তাই বলে এভাবে?

“ভালোবাসায় সব সম্ভব।আমাকে দেখে বুঝোনা?

বোকার মতো তাথৈ ফট করে জিজ্ঞেস করলো
“কি বুঝবো?

তাথৈ এর প্রশ্নে ভিয়ানের মুখের হাসির রেখা মুহূর্তেই উবে গেলো।মেয়েটিকে ভালোবেসে দিনের পর দিন কতো যন্ত্রনা সয়ে যাচ্ছে সে।জীবন বাজি রেখে কারী কারী টাকা খরচা করে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ পাড়ি দিয়েছে প্রতি মাসে দু’বার!এখানেই কি শেষ?লাস্ট বার ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সাইফ আজমী আর এরিকের চোখে ধূলো দিয়ে এই মেয়েটিকে সারা রাত বুকে জড়িয়ে জ্বর দূর করেছে সে। অথচ এই বোকা রাণী বলছে কি এসব?ঠোঁটের ডগায় এনে রাখা কথা গুলো গিলে খেয়ে তাড়া দেখিয়ে ভিয়ান বলে উঠলো

“চলো ফ্রেশ হওয়া যাক।খাবার খেয়ে ঘুমুতে হবে।আজ অনেক ধকল গিয়েছে!

ভিয়ানের কথায় সায় জানিয়ে তাথৈ বলে উঠলো

“আমি কোন রুমে থাকবো?

মেয়েটির হঠাতই এমন বোকা সোকা রুপ ভিয়ান মেনে নিতে পারলো না।একবার তার মনে হলো তাথৈ ইচ্ছে করেই এমন করছে।পুনরায় আবার তার মনে হলো হয়তো ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছে না।সবেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে মেয়েটি কি তা বুঝে না?মনের ভাবনা ফেলে ভিয়ান তাথৈ এর দুই বাহু চেপে ধরে লম্বা একটা শ্বাস নিলো।এরপর চোখে চোখ রেখে অভিজ্ঞের ন্যয় বলতে লাগলো

“তুমি কি পৃথিবীতে নতুন তাথৈ?বুদ্ধির ব্রাইটনেস কি একদম জিরো হয়ে গেছে তোমার?বিবাহিত নব দম্পতি ফার্স্ট নাইটে কোথায় থাকে বলো তো?

ফার্স্ট নাইট কথাটি শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে বারি খেতেই তাথৈ এর গাল আর নাকের ডগা রক্তিম আভা ছড়ালো।লজ্জায় চক্ষু বুজে আসছে তার।মানুষটি তার স্বামী তার দখলদার এসব ভেবে লাজে মরে যেতে ইচ্ছে হলো তার।এই বুঝি মরন এসে ছুঁয়ে দিলো তাকে।ভিয়ানের থেকে দ্রুত চোখ সরিয়ে লাজুক ভাঙা ভাঙা কন্ঠে তাথৈ তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো

“খা খা খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমার খিদে পেয়েছে।

তাথৈএর মুখে খিদে পাবার কথা শুনে বাহু ছেড়ে দিয়ে ভিয়ান নিজেদের কক্ষে নিয়ে এলো তাথৈ কে।এরপর একটা কাবার্ড নির্দেশ করে বলে উঠলো

“এখানে তোমার কাপড় আছে।অভীক সব কিছু সার্ভেন্ট দিয়ে গুছিয়ে দিয়েছে।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে টেবিলে অপেক্ষা করছি।

তাথৈ ঘাড় কাত করে সায় জানাতেই একটা ট্রাউজার আর হাফ হাতার পাতলা একটা টিশার্ট নিয়ে বেরিয়ে এলো ভিয়ান।রুমে সেন্ট্রাল হিটার আর ফায়ারপ্লেসে আগুন এর উত্তাপ থাকায় সেরকম শীত অনুভূত হচ্ছে না।বাসার কমন ওয়াশরুম থেকে ঝটপট শাওয়ার নিয়ে পোশাক পাল্টে ডাইন ইন রুমে চলে গেলো ভিয়ান।প্রত্যেকটি হটপটের ঢাকনা খুলে খাবার পরিদর্শন করতেই মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটলো।বৃদ্ধা নুরজাহান সমস্ত বাঙালি রান্না দিয়ে টেবিল সাজিয়েছেন।খাবারের রঙ এবং গন্ধেই বলে দিচ্ছে স্বাদ কতোটা অমৃত।এই মানুষ দুটো ভিয়ানের বাবার খুবই কাছের লোক ছিলেন।তার মৃত্যুর পর দিনের পর দিন এই বাড়িটিকে দেখে রেখেছেন তারা।ভিয়ান বহুবার চেয়েছে এই ফার্ম হাউজ টি বিক্রি করে দিতে।কিন্তু এই মায়াবী মুখ দুটোর কথা ভেবে তা আর করা হয়নি।বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা দুজনেই এই বাড়িতে থাকেন দীর্ঘ ছত্রিশ টি বছর ধরে।তাদের ছেলে মেয়ে সিডনি শহরে বড় বড় কোম্পানি তে চাকরি করে বেশ সেটেল।প্রায়ই আলবার্ট আর নুরজাহান কে শহরে নিয়ে যেতে চান তারা।অজানা কোনো এক মায়ায় পরে মানুষ দুটো বাড়িটা ছাড়তে পারেন না।ভিয়ানের মনে হয় মায়া বড়োই অদ্ভুত জিনিস।একবার কোনো কিছুর উপর মায়া বসে গেলে তা থেকে মুখ ফেরানো দায়।

“খুব কি দেরি করে ফেললাম?

রিনরিনে মিহি আওয়াজে ধ্যান ছুটলো ভিয়ানের।সামনে দাঁড়ানো ভেজা চুলের স্নিগ্ধ মানবীকে দেখে কিছুটা খেই হারালো ভিয়ান।তাথৈএর ভেজা গোলাপি ঠোঁটের পানে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিললো সে।মেয়েটির পাতলা দেহে জড়ানো ফ্লোরাল প্রিন্টের জর্জেট লং ফ্রকটা মেয়েটিকে সৌন্দর্যের চরম সীমায় পৌঁছে দিয়েছে।চোখের কোল ঘেঁষে হালকা আধ উঠা কাজল এক অন্যন্য মোহিনী রূপে সাজিয়েছে তাকে।

তাথৈ এর চেয়ার টানার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলো ভিয়ান।কোনো মতে নিজের ইতস্ততা কাটিয়ে একটা প্লেট এগিয়ে কোমল গলায় বলে উঠলো

“তোমার পছন্দের চিকেন কারী, ছোট মাছের ঝোল আর আলু ভর্তা আছে।আরো সাইড ডিশ আছে,যেটা ভালো লাগে নিয়ে নিয়ে খাও।

বলেই খাবারের বাটি গুলো তাথৈ এর দিকে এগিয়ে নিজেও একটা প্লেট টেনে খাবার নিতে তৎপর হলো।খাবার খেতে খেতে নুরজাহান এর রান্নার বেশ প্রশংসা করলো তাথৈ।আরো বিভিন্ন আলাপচারিতায় আর খুনসুটিতে খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে হাতে হাতে এঁটো থালা বাসন ধুয়ে দুজনেই নিজেদের কক্ষে চলে এলো।

********
ধীরে ধীরে তুষারের মাত্রা বেড়ে চলেছে সেই সাথে বাড়লো বাতাসের শো শো আওয়াজ।কাঁচের মোটা জানালা দিয়ে বাইরের নিয়ন বাতির হলদেটে আলোয় তুষারপাতের উন্মাদনা উপভোগ করলো তাথৈ।জানালার ভারী পর্দা টেনে দিতে দিতে ভিয়ান বলে উঠলো

“আবহাওয়ার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তুষারঝড় হবে।

মুখে ভীতি ভাব ফুটিয়ে তাথৈ শুধালো

“বরফের স্তূপের নীচে কি এই বাড়ি ডুবে যাবে?

তাথৈকে টেনে নিজের কোলে বসিয়ে ভেজা চুলে বিলি কেটে ভিয়ান আদুরে গলায় বলে উঠলো

“না রে পাগল,জাস্ট দরজা জানালা আর রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাবে।রাস্তায় কোনো গাড়ি চালক থাকলে সে বিপদে পরবে।লাইফ রিস্ক ও রয়েছে।বাট ঘরে থাকলে সকলেই সেইফ।বুঝেছো?

ছোট বাচ্চার ন্যায় মাথা উপর নিচ করে তাথৈ বুঝালো এমন অদ্ভুত দেশের অদ্ভুত আবহাওয়ার ব্যপারে সব বুঝেছে সে।কিছু সময় অতিবাহিত হতেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো।কিছুক্ষণ আগের ফকফকে পরিবেশ মুহূর্তেই অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো।বাইরের বাতাসের দাপটে আর ভয়াবহ অন্ধকারে ভিয়ানের গলা জড়িয়ে বুকের সাথে লেপ্টে তাথৈ নিচু স্বরে বলে উঠলো

“ভয় করছে।
হঠাতই অন্ধকার কক্ষে তাথৈএর অধিক ঘনিষ্ঠতা ভিয়ানকে অস্থির করে তুললো।সম্পর্কে যখন কোনো পাপ বোধের অস্তিত্ব না থাকে সেই মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখা বড্ড দায় হয়ে দাঁড়ায়।মেয়েটি তার স্ত্রী।কিছুক্ষন আগেই পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে তারা।তাকে খুব করে ছুঁয়ে দেবার হক আছে তার।নিজের কামনা বাসনা পূরণের আকুতি নির্দ্বিধায় মেয়েটিকে জানাতে পারবে সে।তবে কিসের এতো সংকোচ?

কক্ষের সকল নিস্তব্ধতা ভেঙে তাথৈ পুনরায় ভীত কন্ঠে শুধালো

“ইলেক্ট্রিসিটি কখন আসবে?

মেয়েটির প্রশ্নে চিন্তায় ভাটা পরলো ভিয়ানের।এক হাতে তাথৈকে জড়িয়ে আরেক হাতে বিছানা হাতড়ে নিজের ফোন বের করে এনে প্রথমে সময় দেখে নিলো ভিয়ান।রাত প্রায় সাড়ে বারোটা,ঝড়ো বাতাসের কারনেই হয়তো বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কারন চারপাশে বড় বড় গাছের বেষ্টনী।ধেয়ে আসা শক্ত বাতাসে গাছপালা ভেঙে ইলেকট্রিক তার ছিঁড়ে গেলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে তাথৈকে বিছানায় বসিয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে মোম বের করে আনলো ভিয়ান।দিয়াশলাইয়ের কাঠি দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে বাতিদানে রেখে পুনরায় তাথৈ এর কাছে এসে বসলো।মোমের হলদেটে শিখায় বদ্ধ কামরা কোমল আলোয় আলোকিত হলো।তাথৈ এর উপর নজর পড়তেই খানিকটা বেসামাল হলো ভিয়ান।মোমের আলোয় মেয়েটিকে আরো একটু বেশিই স্নিগ্ধ লাগছে তার কাছে।মেয়েটি বার বার কঠিন ভাবে তাকে টানছে।তার নরম অধর,লাজুক চাহনি,ভেজা চুল বারবার ভিয়ানকে দুর্বল করে তুলছে।নিষিদ্ধ ইচ্ছেরা মনের মাঝে প্রজাপতি উড়িয়ে চলছে বারংবার।মেয়েটি তার স্ত্রী কথাটি ভাবতেই অসহনীয় আনন্দে হৃদয় পুলকিত হচ্ছে।শূন্য বুকের খাঁ খাঁ কমাতে তাথৈকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে ভারী শ্বাস ফেললো ভিয়ান।তাথৈ এর চুলের ভাজে মুখ ডুবিয়ে ভিয়ান ফিসফিস করে বলে উঠলো

“লাভ ইউ সো মাচ বউ।নিজেকে কন্ট্রোল করা বড্ড মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।সব যেনো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।কোনো ভুল করে থাকলে সরি ওকে?

ভিয়ানের তপ্ত শ্বাস তাথৈ এর গ্রীবাদেশে আছড়ে পরে পুরো শরীরকে যেনো জ্বালিয়ে দিলো।অজানা শিহরনে আবেশে চোখ বুজে ভিয়ানের চুল খামচে ধরে তাথৈ বলে উঠলো

“লাভিউ টু ভিয়ান নাওয়াফ,তোমাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে।তোমাকে আমি কতো টা ভালোবাসি তা তুমি কখনো অনুধাবন করতে পারবে না।তোমার নাম জপে জপে হাসি মুখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সামান্য কষ্ট পর্যন্ত হবে না আমার।

তাথৈ এর ভালোবাসার স্বীকারোক্তি তে আবেশে রোমাঞ্চিত হলো ভিয়ান সেই সাথে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে তাথৈ এর গলার ভাজে মুখ ডুবিয়ে অসহায় এর ন্যয় বলে উঠলো

“নিজেকে আয়ত্তে রাখা দুষ্কর হয়ে পরেছে।মন আর আমার নিয়ন্ত্রণে নেই তাথৈ শেহতাজ।তোমাকে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দিলে তুমি কি আমাকে ভুল বুঝবে?

ভিয়ানকে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ভিয়ানের কপালে চুমু খেয়ে তাথৈ শুধালো

“আমি কি অবুঝ ছোট বাচ্চা?আমার স্বামীর হক আমি অবশ্যই আদায় করবো।আমাকে কি এতোটাই ইম্যাচিউর মনে হয় তোমার?

তাথৈ এর প্রশ্নে নিজের হাতের আজলায় তাথৈ এর মুখ ভরে ঠোঁটে গভীর চুমু আকলো ভিয়ান এরপর গভীর শ্বাস জড়ানো কন্ঠে হাপাতে হাপাতে বলে উঠলো

“আমি চাইলেই কি তুমি নিজেকে উজাড় করে আমায় দিয়ে দেবে তাথৈ?নাকি আরো সময় প্রয়োজন তোমার?

ভিয়ানের গালে আঙ্গুল স্লাইড করতে করতে তাথৈ বলে উঠল

“দুটো বছরই বেশি সময় নয় কি?আমার কি আরো অপেক্ষার কোনো প্রয়োজন আছে?

আশকারা পেয়ে তাথৈকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বাঁকা হাসলো ভিয়ান।এরপর নেশা জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো

“ওকে,লেট মি বি ক্রেজি।

#চলবে….

#বছর_দুয়েক_পর
#পর্ব_৩৬
#সারিকা_হোসাইন

ধবধবে সাদা ভারী বরফের আস্তরণ এ ঢাকা পড়েছে সবকিছু।সারা রাত কঠিন বাতাস এবং ঘন তুষার ঝরলেও তুষারঝড়ের আগমন ঘটেনি।ভোর রাতের দিকে তুষারপাতের পরিমাণ কমে এসেছে।ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই থেমে গিয়েছে হিম শীতল বাতাসের প্রকোপ এবং তুষারপাত।থাই জানালার মোটা কাচ এবং পর্দা ভেদ করে খুবই মৃদু আলো এসে তাথৈ দের কক্ষে হুটোপুটি খেলো।বুকে ভারী কিছুর অস্তিত্ব টের পেতেই পেলব অক্ষি মেললো তাথৈ।আবছা আলোয় ভিয়ানের ঘুমন্ত মুখশ্রী নজরে এলো।তাথৈ এর উন্মুক্ত বক্ষে সুখ নিদ্রায় মগ্ন সে।মানুষটির নিষ্পাপ মুখের পানে তাকিয়ে পরম শান্তিতে লম্বা শ্বাস টানলো তাথৈ।ভিয়ানের মাথার চুলে ধীর হাতে বিলি কাটতে কাটতে হঠাতই তার মনে পরলো বছর তিন আগের এক ঘটনা।

সেবার পহেলা বৈশাখে মেহেরিন চৌধুরীর থেকে অনুমতি নিয়ে মৌটুসী আর অর্ককে সাথে করে বেশাখী মেলায় গিয়েছিলো তাথৈ।ভিয়ান তখন ঢাকায়।নিজ ব্যস্ততায় তাথৈ এর সাথে আসতে পারেনি সে।পুরো মেলায় মৌটুসী, তাথৈ আর অর্ক মিলে খুব ঘুরলো।যখন তারা বাড়ি ফিরবে এমন সময় ভিয়ান ফোনে জানালো সে আর ইকবাল গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।মেলায় উপচে পড়া ভিড়।মানুষের হুড়োহুড়ি তে বের হবার গেটের কাছে আসাই যাচ্ছে না।এদিকে তাথৈ এর দেরি হতে দেখে ইকবাল কে নিয়েই মেলার ভেতর প্রবেশ করলো ভিয়ান।তাথৈকে সেই ভিড়ের মধ্যে কিছুক্ষন খুঁজা খুজির পরমেলার একটি কোনায় দাঁড়ানো দেখতে পেলো। দ্রুত পদে সেখানে উপস্থিত হয়ে ক্লান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

“আরো ঘুরবে?

হাত ঘড়িতে সময় দেখে তাথৈ বিষন্ন কন্ঠে জানালো

“এরিক জানতে পারলে বাসায় ঝামেলা করবে।আম্মু বলেছে তাড়াতাড়ি বাসায় যেতে।

এরিক রগচটা টাইপের ছেলে এটা ভিয়ান জানতো।কথার চাইতে অপ্রয়োজনে তার হাত উঠে বেশি।কিছুটা বক্ষে যাওয়াই বলা চলে।তাথৈকে সামান্য চোখ গরম করে কেউ কিছু বলবে এটা ভিয়ান কিছুতেই মানতে পারবে না।বিষয়টা যদি তার জন্য হয় তবে তো আরো নয়।তাই আর বেশিকিছু না বলে তাথৈকে শেল্টার দিয়ে গেটের কাছে নিয়ে এলো বাড়ি পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যে।হঠাতই একদল উশৃঙ্খল ছেলে হুড়োহুড়ি করে বাঁশি বাজাতে বাজাতে গেট দিয়ে প্রবেশ করতে থাকে।আগত এবং বহির্গত মানুষের কোন্দল শুরু হয় মুহূর্তেই।অবস্থা এমন যে, একজন আরেকজনের গায়ে লেগে যায়।এহেন ঠাসাঠাসি ভিড়ের মধ্যে হঠাৎই একটা ছেলে তাথৈ এর বুকের দিকে হাত বাড়ায়।অবস্থা বেগতিক বুঝে ভিয়ান আগেই তাথৈকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নেয়।ছেলেটির বাড়ানো হাত তাথৈকে স্পর্শ না করে ভিয়ানের হাতে লাগে।মুহূর্তেই উত্তপ্ত ভিড়ের মাঝে সরু হয়ে উঠে ভিয়ানের ভ্রূদ্বয়।সেই ভিড়ের মধ্যেই ছেলেটির হাত খপ করে ধরে ফেলে ভিয়ান।এক হাতে তাথৈ অন্য হাতে ছেলেটির হাত খামচে ধরে ক্রোধে ফেটে পরে টেনে হিচড়ে ভিড় ঠেলে বাইরে বেরিয়ে আসে সে।ছেলেটি ভিয়ানের হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য বেশ জুরাজুড়ি করতে থাকে।কিন্তু অমন দৈত্য রূপী মানুষের সাথে পেরে উঠে কার সাধ্যি?

ভিয়ানের হাতের মুঠোয় ছেলেটিকে বন্দি দেখে অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে যায় ইকবাল মৌটুসী তাথৈ আর অর্ক।ছেলেটি তাদের তুলনায় বেশ অল্প বয়সী।বয়স কতোই হবে আর?তেইশ কিংবা চব্বিশ।ছেলেটির সারা গায়ে নজর বুলিয়ে ইকবাল সন্দিহান কন্ঠে শুধায়

“এই ছেলেকে দিয়ে তোর কি কাজ?বডি দেখেছিস?পুরো হারকিউলিস।তোর কোন কাজে খাটবে সে?

কথাগুলো বলে ছেলেটার লিকলিকে শরীরের পানে তাকিয়ে আরেকটু দুস্টু হাসি হাসলো ইকবাল।কিন্তু তাথৈ এর কাছে বিষয়টা হাসির ঠেকলো না।
ঘটনা বোঝার জন্য তাথৈ হঠাৎই ভিয়ানের চোখের দিকে তাকায়।তার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে উঠেছে।চোয়াল দ্বয় শক্ত হয়ে আছে।শ্বাসের গতিও ভারী।ছেলেটির মধ্যেও সামান্য ভীতির উপস্থিতি পাওয়া গেলো।তাথৈ ভিয়ানকে কখনো রাগতে দেখেনি।রাগ করলে মানুষটির চেহারা কেমন রূপ ধারণ করে এটাও তার অজানা।কিন্তু ভিয়ানের মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে সে চরম রেগে আছে।কিন্তু কেনো?

মানুষের কোলাহল পূর্ন পরিবেশে ছেলেটি হঠাৎই তেজ দেখিয়ে বলে উঠলো

“হেই মিয়া এমন কইরা চাইপা ধইরা আছেন ক্যান?

ছেলেটির কথা শেষ হবার সাথে সাথেই মুখে এক ঘুষি বসিয়ে গর্জে উঠা কন্ঠে ভিয়ান শুধালো

“কেনো ধরেছি তুই জানিস না?

ছেলেটি নাক চেপে ধরে ধমকে উঠে বলে
“কেন ধরছেন?আর তুই কারে কন?,আমারে চিনেন?কোন সাহসে আমার গায়ে হাত দেন?আমার এক তুড়িতে আপনার হাত কাইট্যা গলায় ঝুলায় দিতে পারমু জানেন?

ছেলেটির হাত পিছমোড়া করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে ভিয়ান বলে উঠলো

“তাই নাকিরে?দেখা দেখি কেমন তোর পাওয়ার!আর তোকে চিনেই বা আমার কি লাভ?তার চেয়ে বরং আমাকে তুই চিনে রাখ কাজে দেবে।

ভিয়ানের শক্তির সাথে কিছুতেই টিকে থাকতে পারছে না ছেলেটি।হাতের ব্যাথায় তার চোখ মুখ কুঁচকে বিচ্ছিরি অবস্থা ধারন করলো।কষ্ট চেপে রাখতে রাখতে এক সময় চিৎকার করে উঠলো ছেলেটি।

এবার নড়েচড়ে উঠলো ইকবাল।ভিয়ান অযথা কাউকে আঘাত করার ছেলে নয় এটা ইকবাল জানে।হঠাৎই সকলের অগোচরে কি এমন হলো এই অপরিচিত ছেলেটির সাথে তার যার জন্য এভাবে হিংস্র হয়ে উঠেছে সে?

ইকবাল ভিয়ান কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো

“আরে ঘটনা খুলে বলবি তো?এভাবে ছেলেটাকে কেনো মারছিস?

ইকবালের গায়ের উপর ছেলেটিকে ছুড়ে মেরে ভিয়ান ধমকে উঠলো

“ও কি করেছে জানিস?

ইকবাল মাথা নাড়িয়ে জানালো সে কিচ্ছুই জানেনা।

“দাঁড়া বলছি

ভিয়ান ইকবালের থেকে ছেলেটিকে ছো মেরে নিয়ে পুনরায় নিজের বলিষ্ঠ হাতে ছেলেটির সরু হাতটি মুচড়ে ধরে হুংকার ছাড়লো

“তোর ঐ নোংরা হাতে কোন সাহসে মেয়েটির স্পর্শকাতর জায়গায় ছুঁয়ে দেবার দুঃসাহস করেছিস?

কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই গগন বিদারী চিৎকার করে উঠলো ছেলেটি সেই সাথে কটকট করে ভে/ঙে গেলো চিকন হাতের কব্জিখানা।
ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে ছেলেটির পানে তাকিয়ে ভিভিয়ান পুনরায় হিসিসিয়ে বলে উঠলো

“জানিস ও কে হয় আমার?বউ হয় আমার বউ!হবু বউ।আজ পর্যন্ত স্নেহের নজর ছাড়া বাজে কোনো আকাঙ্খা নিয়ে আমি তাকায়নি পর্যন্ত ওর দিকে আর তুই তাকে ছুঁয়ে দেবার চেষ্টা করছিস?তাও আবার এমন জায়গায় যেখানে মাথা রেখে আমি শান্তিতে ঘুমাবো!

ছেলেটি ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে নিজের জীবন ভিক্ষা চাইলো।তার কাছে মনে হচ্ছে এই যন্ত্রণার চাইতে মৃত্যু বুঝি অনেক সহজ।সে আর এমন ভুল করবে না সেই স্বীকারোক্তি ও জানালো।কিন্তু ছেলেটির আহাজারি কানেই তুললো না ভিয়ান।এদিকে ভিয়ানের কথোপকথন এ ইকবাল সহ সকলের মুখ হা হয়ে গেলো।তাথৈ নিজেই আহাম্মক হলো।তার সাথে কখন এমন হলো সে নিজেই জানেনা।আর ভিড়ের মধ্যে কিছু মানুষের ইন্টেশন ই থাকে এমন।সে তো ভিয়ানের সাথে চিপকে চিপকে গেট পর্যন্ত এলো।তাছাড়া ভিয়ান তো তাকে দুই হাতে আকড়ে বেষ্টনী করে রেখেছিলো।তাহলে এই ঘটনা ঘটলো কখন?

ভিয়ানের ভয়ানক তর্জন গর্জনে চিন্তা ভাবনাতেও মন দিতে পারলো না তাথৈ।এই মুহূর্তে মানুষটিকে তার বড্ড ভয় করছে।যাকে এতদিন তাথৈ কোমল হৃদয়ের মানুষ ভেবে এসেছে আজ তার এই হিংস্র রূপ যেনো তাথৈকে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে।মানুষটিকে তার একটু বেশি নির্দয় মনে হচ্ছে।এভাবে কেউ কারো হাত ভেঙে দেয়?
ছেলেটির আর্তনাদ তাথৈ এর মস্তিষ্কে শেল হয়ে বিধছে যেনো।সে আর সহ্য করতে পারছে না এসব।এদিকে মানুষে ঘেরাও করে ধরেছে তাদের।আজকাল কারো বিপদে কেউ এগিয়ে আসার চাইতে ফোন দিয়ে ভিডিও করতেই বেশি আগ্রহী।সামনের মানুষ মরে যাক।কিন্তু সামনের ঘটনা ভিডিও বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের প্রচার করা চাই ই চাই।

চারপাশের মানুষের জটলা দেখে সেখানে দুজন পুলিশ এসে ভারিক্কি গলায় জিজ্ঞেস করলো

“কি ব্যাপার?কিসের মাস্তানী চলছে এখানে?থানায় নিয়ে দু’ঘা দিলেই সকল চর্বি ছুটে যাবে।ব্যাটা গিরি হচ্ছে নাকি খুব?

পুলিশ দুটোর কাছে এসে ইকবাল তার কার্ড দেখিয়ে বলে উঠলো

“মেয়েলি কেইস।আমরাই হ্যান্ডেল করবো।আপনি প্লিজ জায়গা ক্লীন করে চলে যান।

পুলিশ দুটো ইকবাল কে স্যালুট দিয়ে বেকায়দা জনক হেসে বলে উঠলো

“কি না কি বলে ফেলেছি,ক্ষমা করবেন স্যার।আসলে মেলায় সব চোর বাটপার ঘুরে তো।

ইকবাল কথা সংক্ষেপ করে বলে উঠলো

“জায়গাটা পরিস্কার করুন প্লিজ।এখানে মানুষের ভিড় লেগে গিয়েছে।

ইকবালের কথাকে আজ্ঞা মনে করে মুহূর্তেই বাঁশি বাজিয়ে জটলা ফাঁকা করে ফেললো পুলিশ দুটো।পুরো জায়গা মানব শূন্য হতেই ভিয়ান ছেলেটির গলা টিপে ধরে বলে উঠলো

“তুই যেই অন্যায় করেছিস তার উপযুক্ত শাস্তি কী জানিস?
“মৃ/ত্যু”
মৃ/ত্যু ছাড়া তোর এই অন্যায়ের কোনো ক্ষমা নেই এই ভিয়ান নাওয়াফ এর কাছে।বল কোন সিস্টেমে মরতে চাস তুই?

ছেলেটি যেনো কাকুতি মিনতি করার সুযোগ ও পাচ্ছে না।অবস্থা হাতের নাগালে যাবার আগেই তাথৈ ভিয়ানের হাত টেনে ধরে বলে উঠলো

“আমার ভয় করছে,উনাকে ছেড়ে দাও।আমার চরম অস্বস্তি হচ্ছে।আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাও প্লিজ।ভাইয়ার বাড়ী ফেরার টাইম হয়ে যাচ্ছে।

তাথৈ এর মিহি সুর যেনো ভিয়ান শুনলোই না।এদিকে ভিয়ানের ভারী হাতের চাপে ছেলেটির চোখ গড়িয়ে জল খসে পড়লো।পরিস্থিতি নাগালে আনতে ইকবাল, অর্ক ভিয়ানকে ছাড়াতে হুমড়ি খেয়ে পড়লো।কিন্তু এই অসুর সম শক্তির কাছে কেউ টিকলো না।শেষমেশ তাথৈ চিৎকার করে কেঁদে বলে উঠলো

“তোমাকে দেখে আমার ভয় করছে ভিয়ান।এই ভিয়ান কে আমি চিনি না।আমি আর কখনো তোমার সাথে কথা বলবো না।

কথা গুলো বলে মৌটুসী কে নিয়ে হাঁটা দেয় তাথৈ।তাথৈ আর তার সাথে কথা বলবে না এটা শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে বারী খেতেই ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে তাথৈ এর পিছু পিছু চলতে শুরু করে ভিয়ান।সেই ঘটনার জের ধরে পুরো একটি সপ্তাহ কথা বলেনি সে ভিয়ানের সাথে।বিরহে পুড়ে ভিয়ান তাথৈকে প্রমিস করে ছিলো আর কখনো তাথৈ এর সামনে এমন রূপের অবতার ঘটাবে না সে।এখন পর্যন্ত মানুষটি কথা রেখেছে।এতোটাই উজাড় করে বুঝি ভালোবাসতে হয় ?

পুরোনো ভাবনা ভেবে লাজুক হেসে ভিয়ানের উন্মুক্ত পিঠে শক্ত হাতে জড়িয়ে চোখ বুজে প্রাপ্তির শ্বাস টানে তাথৈ।চোখ বন্ধ করতেই মুহূর্তে
গত রাতের ভালোবাসা ময় ক্ষনের কথা মস্তিষ্কে হানা দিলো।তুষারঝড়া হিম শীতল রাতের উষ্ণ উন্মাদনা মনে পড়তেই লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে ভারী কম্বলের তলায় মুখ লুকালো সে।পৃথিবীর সমস্ত সুখ এই মানুষটি তাথৈ কাছে এনে সোপর্দ করেছে।হৃদয়ের গহীনে যেই দগদগে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল দুটো বছরে সেগুলো এক রাতের ব্যবধানেই বেশ করে সারিয়ে তুলেছে সে।তাথৈ এর মনে হলো এই মানুষটি ছাড়া সে সত্যিই অসম্পূর্ণ।মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এই মানুষটিকে তার পাশে চাই।নইলে রূহ টাও বুঝি হাপিত্তেশ এ ওপারে পাড়ি দিতে চাইবে না।

সময় গড়ানোর সাথে সাথেই নড়ে উঠলো ভিয়ান।এরপর পিটপিট করে তাকিয়ে স্মিত হাসলো।নিজের শক্ত বাহুর আলিঙ্গনে তাথৈকে বেঁধে ঘুম জড়ানো ভিয়ান বলে উঠলো

“শুভ সকাল ওয়াইফি।লাইফের বেস্ট মর্নিং এটা আমার।আমি সব সময় একটা জিনিস চাইতাম কি সেটা জানো?

একটু উমের আশায় ভিয়ানের বুকে গুটিয়ে থেকে তাথৈ নিচু স্বরে বললো

“কি চাইতে?

তাথৈএর গালে নাক ঘষতে ঘষতে ভিয়ান বললো

“ঘুম ভেঙেই যেনো তোমাকে দেখতে পাই এবং আমার বাকি জীবনের প্রত্যেকটি সকাল যেনো তোমার মিষ্টি মুখটা দেখে শুরু হয়।কি যে শান্তি পাচ্ছি এই খা খা করা অন্তরে তোমাকে বোঝাতে পারবো না তাথৈ।সৃষ্টি কর্তার দেওয়া বেস্ট গিফট তুমি আমার কাছে।

ভিয়ানের লোম হীন বুকে আঁকিবুকি করতে করতে তাথৈ বলে উঠলো

“আমাদের কি ছোট একটা ঘর হবে ভিয়ান?যেখানে সকল দুঃখ কষ্টকে উড়িয়ে সুখে দিন কাটাবো তুমি আমি?

তাথৈ এর কপালে চুমু একে ভিয়ান বলে উঠলো

“আমাদের অনেক বড় একটা ঘর হবে তাথৈ।সেখানে স্বর্গের সুখ এসে হুটোপুটি করবে সারা বেলা।ওই ঘরের ত্রিসীমানায় কোনো দুঃখ ঘেঁষতে দেবো না আমি।ওই ঘরের রানী হবে তুমি আর আমি হবো বাধ্যগত গোলাম।তুমি হুকুম করতে দেরি সেই হুকুম তালিম করবো আমি আলাদিনের দৈত্যের চাইতেও দ্রুত গতিতে।বিয়েতে সেভাবে কিছুই দিতে পারিনি তোমাকে।এটা আমাকে কতটা যন্ত্রনা দিয়েছে তা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।একবার নিউইয়র্ক যাই।ভিয়ান নাওয়াফ তার স্ত্রী কে হীরে জহরতের বৃষ্টিতে ভেজাবে।জাস্ট কয়েকটা দিন সময় দাও লক্ষীটি।

তাথৈ ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল
“আমার কিছুই লাগবে না।শুধু তুমি হলেই চলবে।

“তাহলে যে এতো এতো টাকা কামালাম ওগুলোর কি করবো?খরচ না করলে টাকায় ছাতা পড়বে তো।আর তাছাড়া মেয়ে মানুষ সোনা দানা দামি শাড়ি,কসমেটিকস এর পাগল থাকে।তুমি আবার কোন কিসিমের পাগল?টাকা খরচ করার জন্য কি আরেকটা বিয়ে করা লাগবে নাকি আমার?

ভিয়ানের গলা টিপে ধরে তাথৈ চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো

“একদম মেরে দেবো কোনো মেয়ের নাম মুখে আনলে।

তাথৈ এর মুখের দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে ভিয়ান বলে উঠলো

“প্লিজ মেরে দাও।আমার আবার মরতে ইচ্ছে করছে।আমি বার বার তোমার হাতে মরতে চাই।এই মরনের সুখ যে অমৃত!

#চলবে…..