বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
1114

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩১
#Esrat_Ety

অ্যাডভোকেট শাহজাহান শিকদারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আলো। শাহজাহান শিকদার টিস্যু পেপার দিয়ে নিজের চশমার কাঁচ পরিষ্কার করতে করতে নরম গলায় বলে,”দেখো মামুনি। মিউচুয়াল ডি’ভো’র্স , এটা একটা লম্বা প্রসেস। কাগজ পত্র রেডি করতে একটু টাইম লাগবে। এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পারলে, আরেকটু না হয় করো।”

আলোর মুখ শুকিয়ে যায়। সে বলে,”এমন কথা আমি জীবনেও শুনিনি আংকেল।‌”

শাহজাহান শিকদার মৃদু হাসে। তারপর বলে,”আইন তো আর মুখের কথা না মা। যে আইন দুটো মানুষকে একে অপরের সাথে সারাজীবনের জন্য জু’রে দেয় সে আইন তো একদিনে ভাঙা সম্ভব না তাইনা? অনেক নিয়ম আছে। আমি কাগজ পত্র রেডি করছি। তারপর তোমাদের ডাকবো। তুমি নিশ্চিন্তে বাড়ি যাও।”

আলোর কাছে শাহজাহান শিকদারের জবাব পছন্দ হয়না। তার ৬ষ্ঠ ইন্দ্রীয় বলছে এই লোকটা কারো শিখিয়ে দেওয়া কথা বলছে। কিন্তু এখন আলোর করনীয় কি!

শাহজাহান শিকদারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আলো বিরসমুখে উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটছে। আজকের অর্ডারের ভেলিভারি সকাল বেলাতেই ভেলিভারি বয়কে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে। আপাতত হাতে কোনো কাজ নেই তার।

“অদ্রিতা আলো?”
পুরুষ কন্ঠ শুনে আলো চ’ম’কে ওঠে, তারপর ঘুরে তাকায়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার একজন ব্যাচমেট।
আলো মুখ হাঁসি হাঁসি করার চেষ্টা করে বলে,”রাকিব!”

_তুমি তো নিখোঁজ হয়ে গিয়েছো বিয়ে করে। সোস্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে না, ফোন নাম্বার নেই। কেমন আছো তুমি?

আলো ম্লান হাসে।
_ভালো। তুমি?

রাকিব বলে,”আমি আছি আরকি। তা তোমার স্বামী কোথায়? সমাজ সেবা করছে? আর মেয়রের বৌ এভাবে রাস্তায় রাস্তায় হাটছো কেনো? গাড়ি কোথায়?”

আলো কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। রাকিব বলে,”চলো এক যায়গায় বসে কথা বলি। বেশ লম্বা সময় পরে দেখা হলো আমাদের।”

ইহান আজ বেশ খুশি। কারন তার বড়বাবা অনেকদিন পরে তাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। গাড়ির ব্যাক সিট টা পুরোটা খেলনা দিয়ে ভর্তি করে ফেলেছে । তার চোখে মুখে খুশি চকচক করছে। সামিন ড্রাইভ করতে করতে বারবার ইহানের দিকে তাকাচ্ছে। সে নিজেও মজা পাচ্ছে ইহানের আনন্দ দেখে।

“বড় বাবা দেখো পচা আন্টি!”
গাড়ির জানালার বাইরে তাকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে ইহান। সামিন অবাক হয়ে বলে,”কোথায়?”

ইহান হাত তুলে দেখায়,”ওই যে দেখো।”

সামিন হুট করে গাড়ির ব্রেক কষে। তারপর ইহানের হাত লক্ষ্য করে সেদিকে তাকাতেই তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায় রা’গে। দূরেই আলো একটা ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে গল্প করছে, হাসাহাসি করছে। সামিনের মস্তিষ্ক থেকে সেই রা’গ পুরো শরীরে ছড়িয়ে যেতে মিনিট খানেক সময় নিলো না। পুরো শরীর জ্ব’লে যাচ্ছে রাগে। সে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। দীর্ঘদিন পরে আলোর মুখে সে হাসি দেখছে। কে ঐ ছেলেটা! আলোর প্রাক্তন নাকি! তাড়াতাড়ি সামিনকে ডিভোর্স দিয়ে ঐ প্রাক্তনকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে বুঝি!

সামিন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে,”খাওয়াচ্ছি তোমাকে আইসক্রিম আছিয়া!”

***
“স্যার এগুলো কিসের কাগজ?”
সিনথিয়া অতীশ পালের দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে তাকিয়ে আছে।
অতীশ ফাইলটার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,”জরুরি কাগজ। সামিন ইয়াসারের বৌয়ের লোনের পেপার।”

_কিন্তু স্যার। তাকে তো লোন টা দেওয়া হয়নি। তার পরিবর্তে একজন দিনমজুরের মেয়ে পেয়েছে।

_জানি। কাগজ গুলো রাখো। প্রত্যেক সপ্তাহে অদ্রিতা আলো লোন পরিশোধ করতে এলে, তার সই আর টাকাটা রেখে দেবে।

সিনথিয়া হা হয়ে থাকে।
_স্যার আমি কিন্তু কিছু বুঝতে পারছি না।

_ইয়াসার মির্জা আমাদের মাধ্যমে তার স্ত্রীকে টাকাটা দিয়েছে। এসব কথা তার স্ত্রীকে জানাতে নিষেধ করেছে। তাই তার স্ত্রী লোনের টাকা ভেবে প্রত্যেক সপ্তাহে টাকা পরিশোধ করতে এলে টাকা টা চুপচাপ রেখে দেবে। ইয়াসার মির্জা ওনার বৌয়ের নামে একটা একাউন্ট খুলেছে। সেখানে টাকা ট্রান্সফার করতে হবে।

সিনথিয়ার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। সে হতভম্ব হয়ে বলে,”স্যার হচ্ছে কি আসলে! আমাদের কাজ কি এখন মিথ্যাচার করা? এটা তো ধোঁকাবাজি একপ্রকার।”

অতীশ পাল বলে,”ধোঁকাবাজি কোথায়? স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা দেখলে না? এমন দেখেছো কোথাও? এখন যাও, নিজের মুখ বন্ধ রাখো। আমাদের এজেন্সির আইনের ঝামেলা যেভাবে সামিন ইয়াসার মির্জা সামলায় তেমনি তার এই ঝামেলা টাও একটু সামলে দাও। আর হ্যা নতুন এম্প্লয়ি দুটোকে বলে দিও। তারা যাতে গণ্ডগোল না করে বসে!

***
ছাদে সবাই চুলের তেলের কাঁচামাল গুছিয়ে নিচ্ছে। আজ শুধু এক্সপেরিমেন্ট হবে। আলো একপাশে একটা চেয়ারে বসে আছে চুপচাপ। আজও হিয়া আসেনি। অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো সেদিন। ফোনে বলেছে গায়ে জ্বর এসেছে।
শেফালী আর বিউটি হাতে হাতে সবটা গুছিয়ে নিচ্ছে। সানজিদা বড় একটা স্টোভের ওপর বৃহৎ আকারের একটা কড়াই রেখে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”মাত্র চারদিন ভেলিভারি দিয়েছি আচার। এখনি বেশ ভালো ভালো রিভিউ পাচ্ছি। আমার মতে আচার টা নিয়ে এগোনোই ঠিক হবে। তেল নিয়ে এগোতে রিস্ক আছে।‌”

_বিজনেসে রিস্ক না নিলে এগোনো যায়না সানজিদা আপু। আমাদেরকে রিস্ক টা নিতেই হবে।

সেফালী আর বিউটি আলোর কথায় সায় দেয়। এমন সময় আজান আসে। আলো আজানের দিকে তাকিয়ে মজার ছলে বলে,”যখন তখন আমাদের ফ্যাক্টরিতে ঢুকবি না, আমাদের প্রোডাক্টের সিক্রেট ইনগ্রিডিয়েন্ট সম্পর্কে আমরা কাউকে জানাতে চাইনা।”

আজান বলে,”আপু নিচে একজন ভেলিভারি বয় এসেছে।”

_ডেলিভারি বয়?

আলো অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে,”আমাদের সব অর্ডার তো হাতে পেয়েছি! আবার কি!”

_তা তো জানি না আপু। তুমি নিজে এসেই দেখো।
আলো গাঁয়ে ওড়না জড়িয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। দেখতে পায় সদর দরজার কাছে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আলো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় লোকটার দিকে,বলে,”কিসের পার্সেল? আর পার্সেল কোথায়?”

মুখ থেকে মাস্ক খুলে ফেলে লোকটা বলে,”ম্যাম গেইটের বাইরে।”

আলো কিছু বুঝতে পারছে না। লোকটা বলে,”আসুন। দেখে নিয়ে যান!”

আলো লোকটার পিছু পিছু যায়। গেইটের বাইরে বিশাল বড় একটা আইসক্রিমের ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে।

আলো হতভম্ব হয়ে যায়। লোকটা বলে,”আপনার হাজবেন্ড আপনার জন্য পাঠিয়েছেন।”

আলো এদিক ওদিক তাকায়। তার মুখে কোনো কথা আসছে না। এমন সময় আলোর ফোন বেজে ওঠে। সামিনের নাম্বার থেকে ফোন। আলো ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে সামিন বলে,”পার্সেল পেয়েছো? এখন যত ইচ্ছা ততো আইসক্রিম খাবে বাড়িতে বসে বসে। বাইরের ছেলেদের সাথে রাস্তায় বসে হা হা হিহি করা, আইসক্রিম হাতে তাদের গায়ে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছরে পরা এসব আর যেন করতে না দেখি। ওসব বে’হা’ল্লা’প’না আমার সাথে ডি’ভো’র্স হয়ে গেলে করবে। যতদিন কাগজে কলমে তুমি আমার বৌ, আমি যদি দেখি আমার বৌ ভ্র’ষ্টা’চা’রী হচ্ছে তাহলে উল্টো পাল্টা কিছু করে দিতে এই ফে’রা’উ’নে’র হাত কাঁপবে না আছিয়া।”

সামিন ফোন কেটে দেয়। আলো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। পাশ থেকে লোকটা বলে,”ম্যাম আমি আসি।”

আলো শুকনো মুখে আইসক্রিমের ভ্যানটার দিকে তাকিয়ে থাকে। পেছন থেকে শেফালী বলে,”করবে কি এখন? আইসক্রিমের ব্যাবসাও শুরু করবে তুমি?”

আলো নিস্তেজ কন্ঠে বলে,”সানজিদা আপুকে বলো তাদের বস্তিতে খবর দিতে। বাচ্চারা এসে তাদের পছন্দ মতো নিয়ে যাক। আর তোমরাও নাও। এখান থেকে নিয়ে যাও যার যা লাগে।”

আজান আমতা আমতা করে বলে,”আপু থানারোডের এতিম খানায় কিছু দিয়ে আসবো?”

_যা ইচ্ছা কর।
একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আলো বাড়ির ভেতর চলে যায়। নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পরে সে।

ফোন কেটে সামিন ফোনটাকে আ’ছা’ড় মারে। সে প্রানপন চেষ্টা করেছে আলোকে কোনো কঠিন কথা না শোনাতে, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তার উ’গ্র রা’গ’টা আবারো একবার আলোর কাছে তাকে ঘৃ’ণা’র পাত্র করে দিলো। কিন্তু সে কি করবে, সহ্য করতে পারেনি আলোর সাথে ঐ ছেলেটাকে!

***
“কি করছো আব্বু?”

আলো ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আতাউর আলমের দিকে তাকিয়ে আছে। আতাউর আলম মাথা তুলে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”ও আলো। আয়!”
আলো ভেতরে ঢোকে। আতাউর আলম বলে,”কি আর করবো। একটা নিবন্ধ লেখার চেষ্টা করছিলাম। একটা বেসরকারি নিউজ এজেন্সি থেকে রিকোয়েস্ট পেয়েছি। টাকা দেবে।”

আলো বাবার বিছানায় বসে,”মস্তিষ্কে চাপ পরে এমন কিছু তোমাকে করতে হবে কেন? বাদ দাও তো। টুক টাক চলছে তো সব। আজান আয়াতের স্কলারশিপের টাকা, তোমার দেশের বাড়ির জমি চাষের টাকা, আমার টিউশনির টাকা। চলে যাচ্ছে তো আব্বু। ব্যাবসা টা একবার দাঁড়াতে দাও আমার।”

আতাউর আলম ম্লান হাসে। তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”কোথাও যাচ্ছিস?”

আলো উঠে দাঁড়ায়।
“হ্যা আজ লোনের টাকা পরিশোধ করতে হবে। মাসে চারটা কিস্তি। এজেন্সিতে যাচ্ছি।”

আলো উঠে চলে যায়। আতাউর আলম মেয়ের যাওয়া দেখে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। কতটুকু বয়স মেয়েটার। অথচ এই বয়সে কতটা বুঝদার। নিজের কাধে কত দায়িত্ব তুলে নিয়েছে। মুখে একটা ক্রিম পর্যন্ত মাখে না। এই সাধারণ কিন্তু অসাধারণ মেয়েটির জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে গিয়েছে! গুছিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। কেউ না।

***

আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের দিকে যায়। আজ এজেন্সি এতো ফাঁকা কেনো! আজ তো কিস্তির তারিখ। ক্যাশ কাউন্টারে একটা অচেনা মেয়ে বসে আছে। আলোকে দেখে একটা হাসি দিয়ে বলে,”হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ ম্যাম?”

_আমার লোন পরিশোধের প্রথম দিন।

_আচ্ছা, আপনি আমাকে আপনার আইডি নাম্বার দিন ম্যাম। এবং কাগজ গুলো।

আলো তার হাতের কার্ড টা মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায়। কিছুক্ষণ ডেস্কটপে তাকিয়ে থেকে মেয়েটা বলে,”ম্যাম আপনি ভুল কার্ড দিয়েছেন। এই নামে কাউকে লোন দেওয়া হয়নি।”

আলো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর বলে,”মানে? অদ্রিতা আলো আমি।”
_জ্বী ম্যাম‌। এটা তো আপনার নাম। কিন্তু আমাদের লিস্টে যে তিন জন মেয়েকে লোন দেওয়া হচ্ছে তাদের নাম, শাহিনুর ইসলাম, রুমানা মুক্তি এবং জান্নাতুল ফেরদৌস। আপনি চেক করে দেখতে পারেন।

আলো বোকার মতো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
ক্যাশ কাউন্টারের মেয়েটাকে দূর থেকে সিনথিয়া হাত নে’ড়ে ইশারা করছে কিছু না বলতে কিন্তু মেয়েটা কোনোদিকে না তাকিয়ে গড়গড় করে কথা বলেই যাচ্ছে আলোর সাথে। আলো অসহায়ের মতো একবার হাতের ফাইল, একবার টাকা, একবার ক্যাশকাউন্টারের মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে।

***
“ভাই একটা গান শুনবেন?”

সামিন তৌফের কথায় তার দিকে না তাকিয়ে বলে,”দূর হ। ব্যাস্ত আমি।”

সব ছেলেরা চুপ হয়ে যায়। সামিন কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”তোর ভাবীর কোনো খবর আছে?”

_জ্বী। আজ সকালে দেখলাম কোথাও যাওয়ার জন্য রিকশা ঠিক করছে। রিকশা ওয়ালার সাথে রিকশা ভাড়া নিয়ে দশমিনিট ঝগড়া করলো। রিকশা ওয়ালা ত্রিশ টাকা ভাড়া চাচ্ছিল কিন্তু ভাবী পঁচিশ টাকার উপরে এক টাকাও দেবে না।

সব ছেলেরা হেসে ফেলে। সামিন রাগী দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,”হাসার কি আছে? সব কটাকে চ’ড় মারবো। কতটা হিসেবী আমার বৌ দেখেছিস? এমন মেয়েই তো সংসারের উন্নতি করে। আমি আমার বৌকে নিয়ে গর্ব করি।”

সবাই চুপ হয়ে যায়। সামিন তৌফের দিকে তাকিয়ে বলে,”তারপর কি হয়েছে? ঐ রিক্সাওয়ালা জিতেছে নাকি আমার বৌ?”

_আপনার বৌ ভাই।

***

বৃদ্ধা রিকশা ওয়ালা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকায়। তারপর নরম গলায় বলে,”কাদতেছো কেনো মা?”

আলো তার জবাব দেয় না। ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।তার শরীরটা একটু পরপর কেঁপে কেঁপে উঠছে। রিকশা ওয়ালা আমতা আমতা করে বলে,”কোথায় নামায়া দিমু মা?”

আলো কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে বলে,”সামিন ইয়াসারের পার্টি অফিসে।”

সামিন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। এখন তাকে বের হতে হবে। তার দলের ছেলেরাও সামিনের দেখাদেখি উঠে দাঁড়ায়। এমন সময় সবুজের ফোন আসে। সামিন ফোনটা রিসিভ করতেই সবুজ বলে,”ভাই ভাবী উপরে যাচ্ছে। কাঁদছে সে।”

ফোনটা রাখার সাথে সাথে দরজা ঠেলে আলো ভেতরে ঢোকে। সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো প্রায় ছুটে গিয়ে সামিনের শার্টের কলার ধরে।

“আর কতবার? কতবার আপনি আমাকে অসম্মান করবেন ইয়াসার মির্জা?”

গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আলোর। সে হাঁপাচ্ছে। সামিন নরম গলায় বলে,”কি হয়েছে আলো, আমি কখন তোমাকে অসম্মান করলাম?”

আলো সামিনকে ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,”নাটক বাজ লোক। জুতো মেরে গরু দান করা হচ্ছে? খুব টাকা আপনার তাইনা? সেটাই দেখাচ্ছেন সব খানে? আমাকে ধোকার মাধ্যমে টাকা দেওয়ার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? বলুন! কে দিয়েছে?”

সামিন ঘামতে থাকে। আলো জেনে গিয়েছে সবটা,এখন এই জেদী মেয়েটাকে সে কিভাবে সামলাবে!

আলো আবারো কলার ধরে,”সাহস কি করে হয় আমাকে ছোট করার? দয়া করার!”

সামিন আলোর নরম ছোটো দুটো হাত তার কলার থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে আলোর চোখের দিকে তাকায়, নরম গলায় বলে,”সরি আলো। আমি তো সবটা ঠিক ঠাক করতে চেয়েছি তোমার লাইফের।”

আলো চেঁচিয়ে ওঠে,”কি ঠিক করতে পেরেছেন? আমার বাবা একটা পঙ্গু লোকের মতো বাড়িতে পরে আছে, পেরেছেন ঠিক করতে? লোকজন রাস্তা ঘাটে আমাকে আপনার “খে’য়ে ছে’ড়ে দেওয়া মাল” বলে, পেরেছেন ঠিক করতে?”

কান্নায় ভেঙে পরে আলো। কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পরে। সামিন কিছুক্ষণ আলোকে দেখে হাঁটু গেড়ে তার মুখোমুখি বসে পরে। আলো বলতে থাকে,”এখন আপনি সবাইকে ভালো মানুষী দেখাচ্ছেন আপনার। সবাইকে নিজের অর্থ,ক্ষমতা,নাটক দিয়ে মুগ্ধ করতে চাইছেন তাইনা?”

সামিন নরম গলায় বলে,”এভাবে আমার অনুভূতির ভুল ব্যখ্যা দিও না আলো। আমি অনুতপ্ত, যা যা করেছি সবটা নিজের অনুশোচনা থেকে।”

_অনুশোচনা? সামিন ইয়াসারের অনুশোচনা হয়েছে কখনো?

সামিন আলোর চোখে চোখ রাখে। তারপর বলে,”তুমি দেখতে পাওনি বলে হয়নি,এমন টা তো নয় আলো। আমি তো নিজে নিজেকে জানি। আমি কতটা অন্ধকার মানুষ ছিলাম তা আমি জানি আলো। তুমি আমার জীবনে আলো হয়ে এসেছিলে। মানলাম সবটা আমার অ’প’রা’ধ। আমি অ’প’রা’ধী। কিন্তু একজন অ’প’রা’ধীও যে কখনো শুধরে নিতে পারে নিজেকে সেটা কেন তুমি মানতে পারছো না?”

_শুধরেছেন? কি শুধরেছেন আপনি? যে ভয়ংকর অ’প’রা’ধ আপনি করেছেন তার শাস্তি আপনি জানেন? পেয়েছেন শাস্তি? বুক ফুলিয়ে সমাজে মহান সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অবৈধ ভাবে প্রতিপক্ষকে বসিয়ে রেখে ভোটে জিতেছেন, লজ্জা করে না এই চেয়ারে বসতে? তারপর সবকিছুর উপরে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন আপনি।সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রনে চলছে, আমাদের বিয়ে, আমাদের ডি’ভো’র্স, উকিল, আমার জীবন। সবকিছু আপনিই নিয়ন্ত্রণ করছেন। শুধরেছেন টা কি আপনি? পাক্কা নাটকবাজ আপনি।

সামিন আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলোর কান্নার বেগ বাড়ছে। সে উঠে দাঁড়ায়। সামিন নরম গলায় বলে,”ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে আলো। আমার অনূভুতি গ্রহণ করতে না পারো কিন্তু অসম্মান করো না অন্তত।”

আলো সামিনের দিকে তাকায়।
“ভালোবাসা? চাই না আপনার ভালো বাসা। চাই না আমি।”

উন্মাদের মতো ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে থাকে আলো। আলোর গায়ের ওড়না নিচে পরে যায়। সামিনের দলের ছেলেরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সামিন গিয়ে আলোকে ধরে ফেলে। ওড়না উঠিয়ে আলোর শরীর ঢেকে দিয়ে আলোর চোখের দিকে তাকায়। আলো উন্মাদের মতো বিড় বিড় করে সামিনের চোখে চোখ রেখে বলে,”আপনার শাস্তির আসা আমি করিনা। আপনি রাজ করতে দুনিয়ায় এসেছেন, মন ভরে রাজ করুন। মেয়র হন,এমপি হন, অর্থবান হন। যা ইচ্ছা হন। শুধু আমাদের ছাপোষা পরিবার টাকে ছেড়ে দিন।
একটা কথা আপনাকে বলে দেই। আজ থেকে কখনো যদি আমি দেখতে পাই আপনি আমাকে আপনার ক্ষমতা,অর্থ দিয়ে দয়া দেখিয়ে,আমার আত্মসম্মানে আঘাত করছেন তাহলে আমি সু’ই’সা’ই’ড করবো সামিন ইয়াসার মির্জা। আমি মানুষের কাছ থেকে আপনার “খেয়ে ছে’ড়ে দেওয়া মা’ল” অপবাদ মাথায় নিয়ে বাঁচতে পারবো কিন্তু আপনার থেকে দয়া নিয়ে নয়। এর থেকে ভালো আমি আ’ত্ম’হ’ত্যা করব।”

কথাটা শুনে সামিন আলোকে ছেড়ে দেয়। আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে হাঁপাতে থাকে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তার ব্যাগ টা কাঁধে তুলে নেয়। তারপর যতখানি তেজ নিয়ে এসেছিল সামিনের সামনে ঠিক ততখানি নিস্তেজ হয়ে চলে গিয়েছে ।

সামিন দাঁড়িয়ে থেকে তার ছেলেদের মুখের দিকে তাকায়। সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে নিস্তেজ কন্ঠে বলে ওঠে,”শেষমেশ ঐ আছিয়া ফে’রা’উ’ন’কে ডু’বি’য়ে’ই ছাড়লো রে রাহাত।”

***
বেশি রাত হয়নি। গলির রাস্তায় এখনো বড় ট্রাক চলছে। রিকশার বেল বাজছে। আলো মাথা তুলে উঠে বসতে চায় কিন্তু পারে না। মাথা ভারি হয়ে আছে তার। বেলা বারোটায় বাড়ি ফিরে সেই যে ঘরে ঢুকেছে এখনো বের হয়নি। রেহেনা এসে বারবার ডেকে গিয়েছে। বলেছে একটু একা থাকবে সে। মাথা ঘুরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত আট-টা বেজে গিয়েছে। এখন না উঠলে আব্বু আম্মু বেশ চিন্তায় পরে যাবে। তাই কষ্ট হলেও উঠে বসে আলো। ওয়াশ রুমে ঢুকে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হয়। আজ কোনো অর্ডার নেয়নি সে। সেই মানসিক পরিস্থিতিতেও আলো ছিলো না।

হুট করে আলোর ঘরের দরজা ঠেলে আয়াত ভেতরে ঢোকে। আলো মাথা ঘুরিয়ে আয়াতের দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই আয়াত হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,”আপু ইয়াসার ভাইয়া!”

আলো কপাল কুঁ’চ’কে ফেলে। আয়াত বলতে থাকে,”শিগগিরই বসার ঘরে এসো।”

আলো দ্রুত পায়ে হেঁটে বসার ঘরে যায়। বসার ঘরে আতাউর আলম, রেহেনা, আজান দাঁড়িয়ে টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। আলো তাদের থেকে চোখ সরিয়ে টিভির দিকে তাকাতেই থ’ম’কে যায়। একটা লোকাল চ্যানেলে খবরের হেডলাইনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সে,

“নবনির্বাচিত তরুণ মেয়র সামিন ইয়াসার মির্জা তার পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন।”

সংবাদ পাঠিকা বলতে থাকে,”আজ সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ তিনি নিজের বাসভবনে বসে সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।”

আলো খবরটা শুনে টিভির স্ক্রিনে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। স্ক্রিনে একটু পরপর সামিন ইয়াসারের একটা শুভ্র পাঞ্জাবির উপরে মুজিব কোট পরা হাস্যোজ্জ্বল ছবি দেখানো হচ্ছে। আলো কিছু বুঝতে পারছে না বিষয়টা। সে তার আব্বু আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে।
টিভির রিমোট হাতে নিয়ে সে পরপর কয়েকটি চ্যানেল পাল্টাতে থাকে। প্রত্যেকটা লোকাল চ্যানেলে একই খবর। একটা চ্যানেলে দেখাচ্ছে জনগণের প্রতিক্রিয়া। সবাই সামিনের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ। দলের ছেলেগুলো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কিছু একটা বলছে।

আলো টিভি অফ করে দেয়। কলিং বেল বেজে ওঠে। আজান গিয়ে দরজা খুলে দিতেই ইশিতা আর রিতু ভেতরে ঢোকে। রিতু কাঁদছে। ইশিতা এসে আলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় কান্না আটকে রেখে বলে ওঠে,”ভাইয়া পুলিশ কা’স্ট’ডি’তে আলো। সে সবকিছুর জবানবন্দি দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে পুলিশের কাছে।”

আলো বোকার মতো ইশিতার দিকে তাকিয়ে আছে। রিতু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তারপর ধরা গলায় বলে ওঠে,”তুমি জিতে গেলে ভাবী।”

আলো চুপ করে রিতুর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ তার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে একটা নাম্বার দেখে সে বুঝে যায় ওটা কার নাম্বার। রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ইশমাম বলে ওঠে,”অদ্রিতা।”

চলমান……

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩২
#Esrat_Ety

থানার নতুন অফিসার সমীর দত্ত সামিনের দিকে ক/ট/ম/ট দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। কয়েক মূহুর্ত পরে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,”বাড়াবাড়ি করছিস সামিন।”

_বাড়াবাড়ি তুই করছিস সমীর। একজন দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার হয়ে নিজের দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছিস। কনস্টেবল কে বল আমাকে ল/কা/পে দিতে।

ভাইয়ের পাশে থেকে ইলহাম মির্জা চেঁচিয়ে ওঠে,”হোয়াট আর ইউ ডুয়িং ভাইয়া। পাগল হয়েছো তুমি? বাবা ওদিকে অসুস্থ হয়ে পরেছে। এসব শুনলে তো শেষ হয়ে যাবে। বাবার অবস্থা ভালো নেই ভাইয়া।”

_পাগল কেনো হবো ? অন্যায় করেছি, শাস্তি পাওয়া উচিৎ।

ইলহাম ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । সমীর দত্ত মাথা ঠান্ডা রেখে বলে,”আচ্ছা বুঝলাম। শুরু থেকে বল আবার। কি করেছিস তুই ঐ মেয়েটার সাথে।”

সামিন ক্ষে/পে গিয়ে বলে,”কতবার বলবো আমি ওকে
কি/ ড / ন্যা /প করেছি, জোরপূর্বক বিয়ে করে ওকে জি/ম্মি করে রেখেছি এবং ওর পরিবারের লোকজন কে মে/রে ফেলার হুমকি দিয়েছি। এখন আমাকে এ্যা/রে/স্ট কর।”

সমীর বলে,”হুম বুঝলাম। তো তুই এসব যার সাথে করেছিস সে কোথায়? কম/প্লেইন কোথায়? প্র/মান কোথায়? কিসের ভিত্তিতে আমি তোকে এ্যা/রে/স্ট করবো?”

_আমি কি থা/নায় এসে তোর সাথে ম/স্ক/রা করছি এতো রাতে? আমি নিজে স্বীকার করেছি সবটা সেটা কি যথেষ্ট নয়?

ওসি সমীর দত্ত সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইলহাম অসহায়ের মতো তার বড় ভাইকে দেখছে। থানার বাইরে শো/র/গো/লে/র আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সামিনের দলের ছেলেরা সবাই থা/নার বাইরে থেকে সামিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে। সামিনের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
সমীর বেল টি/পে একজন কন/স্টেবল কে ডাকে। কন/স্টেবল এসে দাড়াতেই সমীর বলে,”বাইরে কি হচ্ছে?”

_স্যার। ইয়াসার মির্জার ছেলেরা।

সামিন চুপচাপ বসে আছে। তার দৃষ্টি টেবিলের ওপর একটা পেপার ওয়েটে নি/বদ্ধ।

সমীর সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই যা করতে চাইছিস তাতে তোর পুরো লাইফ, তোর রাজনৈতিক লাইফ যাস্ট ধ্বং/স হয়ে যাবে। তুই কি বুঝতে পারছিস না?”

_পদ/ত্যাগ পত্র জমা দিয়েছি। রাজনৈতিক লাইফ বলে তো আর কিছু নেই আমার। আর লাইফের কথা যদি বলিস। ওটা এমনিতেও ন/ষ্ট।

ইলহাম আকুতির সুরে বলে ওঠে,”ভাইয়া কেনো এমন পা/গ/লা/মী করছো!”

সামিন কোনো জবাব না দিয়ে সমীরের চোখে চোখ রেখে বলে,
“এ্যা/রে/স্ট কর আমাকে।”

***
আলো ফোনটা কানে ধরে চুপ করে থাকে। ওপাশ থেকে ইশমাম বলে ওঠে,”অদ্রিতা, ভাইয়া আমাদের জন্য কতটা ইম্পরট্যান্ট তা তুমি নিশ্চই এতদিনে বুঝতে পেরেছো।”

_তো আমি কি করবো ইশমাম? আমি তো কোনো কম/প্লেইন করিনি। তোমার ভাইয়া নিজে থেকে এসব করছে।

_সেটাই অদ্রিতা। ভাইয়া নিজে থেকেই করছে।

আলো কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”তোমরা আমার সাথে এমন কেনো করছো ইশমাম? তোমাদের পরিবারের সবার মুখের দিকে তাকালে মনে হয় আসল অপ/রাধী আমি। তোমার ভাইয়া নয়। আমার অ/ন্যায় টা কি? অপ/রাধ কি আমার বলো!”

ইশমাম স্বাভাবিক গলায় বলে,”অপ/রাধ করোনি এমন টা তো নয় অদ্রিতা। ভাইয়াকে ভুল বুঝে চ/ড় মে/রে/ছো, হে/ন/স্থা করেছো একজন মানুষকে।”

আলো অবাক হয়ে ইশমামের কথা শোনে,বলে,”তার জন্য কি আমি যথেষ্ট শা/স্তি পাইনি ইশমাম? তোমার ভাইয়া নিজের হাতে আমাকে শা/স্তি দিয়েছে। আমি তার পা ধরেছি তুমি জানো? সেদিন তোমাকে বলিনি সেসব কথা। শা/স্তি যথেষ্ট পেয়েছি, উল্টো আমার বাবা যা করেইনি তার জন্য আমার জীবন টা ন/ষ্ট করে দিয়েছে তোমার ভাইয়া।”

ইশমাম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর বলে,”আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের ভালো থাকা ঐ মানুষটার সাথে জরিয়ে আছে অদ্রিতা। প্রত্যেকটা মানুষের খুশি ঐ মানুষটার ওপর নির্ভর করে। এখন তুমি কি করবে সেটা তোমার বিবেচনা। অ/ন্যা/য় আবদার বলো বা যাই বলো, মনে হলো তোমাকে বলতে পারি, তাই বললাম। আর হ্যা,আমি তোমাকে অপ/রাধী বলছি না অদ্রিতা, কোনো অবস্থাতেই না। আমার শুধু আমার ভাইয়ার জন্য কষ্ট হচ্ছে, যেমনটা তোমার জন্য হতো।”

ইশমাম ফোন কেটে দেয়। আলো ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরের দিকে যায়। রিতু সোফায় বসে আছে, শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”দয়া করো ভাবী! নিজের ভাইদের ভালোবাসা স্নেহ আমি পাইনি। ঐ মানুষটা দিয়েছে আমাকে সেসব। আমি দয়া চাইছি তোমার কাছে আমার ভাইয়ের জন্য।”

***
রাহাতের ফোন বাজছে। থা/নার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সে। ভেতরে এই মাত্র জামিল গিয়েছে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রাহাত ফোনটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে সাগর ভুঁইয়ার কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে। খিক খিক করে হাসতে হাসতে বলে,”কিরে সামিনের চা/ম/চা। তোদের ভাইয়ের হাওয়া বেড়িয়ে গিয়েছে দেখলাম। এখন কেমন লাগছে তোদের?”

রাহাত চুপ করে থাকে। সাগর বলতে থাকে,”শা/লা ভ/য় পেয়ে মাঠ ছেড়েছে নাকি? কোথায় তোর ভাই? কোথায়?”

রাহাত এদিক ওদিক তাকিয়ে গলার স্বর নিচু করে দাঁত খিচিয়ে বলে,”শোন শু/য়ো/রে/র বাচ্চা। হাতী বাঁচলেও লাখ টাকা,ম/র/লেও লাখ টাকা। তুই এতো উড়িস না।”

_আচ্ছা তাই নাকি! তাহলে……

টুট টুট শব্দ হয়। রাহাত ফোন কেটে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ফুয়াদ থানার সামনে বাইক দাঁড় করিয়ে এগিয়ে যায়। রাহাত বলে,”ভেতরে আছে। জে/দ ধরে বসে আছে। কারো কোনো কথা শুনছে না। আপনি তাড়াতাড়ি যান ভাই।”

জামিল সামিনের হাত ধরে রেখেছে। উ/ৎ/ক/ণ্ঠা নিয়ে বলে,”ভাই সাংবাদিক এসে ভীড় করেছে। আপনি চলেন এখান থেকে। দোহাই লাগে।”

_তোর বৌ অ/সু/স্থ। বাড়িতে যা জামিল।
গম্ভীর কন্ঠে বলে সামিন।

সমীর সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফুয়াদ ছুটে এসে সামিনকে ধরে‌। ঝা/কুনি দিয়ে বলে,”কি? কি শুরু করেছিস এসব?”

_শে/ষ করছি সবটা।
নিস্তেজ কন্ঠে জবাব দেয় সামিন। তারপর সমীরের দিকে তাকিয়ে বলে,”এ্যা/রে/স্ট মি।”

_বাড়াবাড়ি করছিস সামিন।‌
ফুয়াদ চেঁ/চি/য়ে ওঠে। সমীর কিছুক্ষণ সামিনের দিকে তাকিয়ে থেকে একজন কনস্টেবলকে বলে,”নিয়ে যাও ওকে।”

সামিন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কন/স্টেবল এসে নিয়ে যায় তাকে।

ইলহাম আহত চোখে তাকিয়ে থাকে। ফুয়াদ সমীরের দিকে অসহায়ের মত তাকায়। সমীর বলে,”ওকে শান্ত করার জন্য পাঠিয়েছি ল/কা/পে। ক/ম্প্লে/ইন না পেলে আমার বাপের সাধ্যি নেই ওকে আ/টকে রাখার। চিন্তা করিস না।”

***
বাড়ির জামাটা পাল্টে একটা শাড়ি পরে নেয় আলো। পার্স ব্যাগের মধ্যে ফোনটা ঢুকিয়ে নিয়ে বসার ঘরের দিকে যায়। ইশিতা উঠে দাঁড়ায়। রেহেনা কন্ঠে উ/ৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কোথায় যাচ্ছিস?”

আলো তার উত্তর না দিয়ে ইশিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”রিতুকে নিয়ে বাড়িতে যাও আপু।‌ ও এমনিতেই অসু/স্থ।”

_আর তুমি কোথায় যাচ্ছো?
ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করে ইশিতা। আলো কিছু না বলে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে।

অনেক খুজে একটা রিকশা পেয়েছে অবশেষে। থা/নার সামনে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। থা/নার বাউন্ডারির ভেতরে সামিনের ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। আলোকে দেখে তৌফ সবাইকে নিচু স্বরে বলে,”কে এসেছে দেখ।”

সবাই মাথা তুলে আলোর দিকে তাকায়। আলো ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে তাদের দৃষ্টি উপেক্ষা করে থানার দালানের ভেতর ঢোকে।

“স্যার একজন মেয়ে এসেছে আপনার সাথে কথা বলতে।”

কন/স্টে/ব/লের কথা শুনে সমীর দত্ত তার দিকে তাকিয়ে বলে,”একটু অপেক্ষা করতে বলো তাকে। অভি/যোগ থাকলে নাও। আমি ব্যাস্ত ইউসুফ।”

_স্যার, মেয়েটির নাম অদ্রিতা আলো।

সমীর ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে,”এই সে নয়তো?”
ফুয়াদ বলে,”সম্ভবত।”

সমীর দত্ত কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে বলে,”ভেতরে নিয়ে এসো।”

নীল রঙের একটা শাড়ি। জমিনে নেভি ব্লু সুতোর কাজ। আঁচল টেনে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছে। চেহারায় সাজ সজ্জা নেই কোনো। একেবারেই সাদামাটা। সমীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে খুবই ভদ্রভাবে বলে,”বসুন।”

আলো ঘরে থাকা প্রত্যেকের দিকে একবার করে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরে। তারপর সরাসরি সমীরের চোখের দিকে তাকায়। সমীর বলতে থাকে,”বলুন।”

_ইয়াসার মির্জা কোথায়?
নিস্তেজ কন্ঠে বলে ওঠে আলো।

_ল/কা/পে।

আলো চ/ম/কে ওঠে। সমীর বলে,”আমরাই কন/স্টে/বল পাঠাতে যাচ্ছিলাম আপনাদের বাড়িতে।”

আলো সমীরের দিকে তাকিয়ে আছে। সমীর বলতে থাকে,”ইয়াসার মির্জা তার জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন ,”তিনি আপনাকে জোর/পূর্বক তু/লে নিয়ে বিয়ে করেছেন, জি/ম্মি করে রেখে আপনার এবং আপনার পরিবারের প্রান/না/শের হুমকি দিয়েছেন। এসব আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই। এসব ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে ইয়াসার মির্জার সর্বোচ্চ শা/স্তির ব্যাবস্থা করবো। আপনি নির্ভয়ে বলুন।”

আলো মাথা ঘুরিয়ে ফুয়াদের দিকে তাকায়। ফুয়াদ অসহায়ের মতো তার দিকে তাকিয়ে আছে।

সমীর বলে,”বলুন। তিনি আপনাকে জোর/পূর্বক বিয়ে করেছেন? কি/ড/ন্যাপ করেছেন আপনাকে?”

আলো কিছুক্ষণ চুপ চাপ বসে থেকে অস্ফুট স্বরে বলে,”না।”

_কোনো শা/রী/রিক, মা/ন/সিক আ/ঘা/ত করেছেন কিংবা আপনার শ্লীল/তা/হানির চেষ্টা?

আলো মাথা নাড়ায়।

_উনি যা যা বলছেন সবটা মিথ্যা?

আলো মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”জ্বি।”

ওসি সমীর দত্ত আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”লিখিত ব/য়ান দিন।”

আলো একটা কাগজে ব/য়ান লিখে নিচে সই করে দেয়। তারপর কাগজটা সমীর দত্তের দিকে এগিয়ে দিয়ে নিচু স্বরে বলে,”আমি একটু ইয়াসার মির্জার সাথে দেখা করতে চাই।”

সমীর দত্ত এক জন কন/স্টেব/লের দিকে তাকায়। কন/স্টেবল আলোকে উদ্দেশ্য করে বলে,”আসুন আমার সাথে।”

***
হা/র্টে রিং পরানো। চেন্নাই গিয়ে প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর চেক আপ করতে হয়। একটু আধটু চা/প পরলেই অবস্থা খুবই খা/রা/প হয়ে যায়। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ছেলের জন্য দুশ্চিন্তা করছে ইমতিয়াজ মির্জা। কাজের মেয়ে দুটো ছাড়া বাড়িতে আর কেউ নেই। শা/রী/রিক অবস্থার ক্রমেই অব/নতি হচ্ছে। এই মুহূর্তে যদি কিছু একটা হয়ে যায় তাহলে কেউ টেরও পাবে না। হঠাৎ খুবই ভ/য় হতে থাকে ইমতিয়াজ মির্জার। তার সময় কি তাহলে শে/ষ? কিন্তু সে এভাবে ছেলে মেয়ের মুখ না দেখে ম/র/তে চায় না। কখনোই না। নীচু গলায় সিতারাকে ডাকতে থাকে। সিতারা এসে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বলে,”জ্বি খালুজান।”

_ওদিকের কোনো খবর পেলি? কেউ কিছু জানাচ্ছে না কেনো?

পোনা এসে দাঁড়ায়। ইমতিয়াজ মির্জার বিছানার কাছে দাঁড়িয়ে বলে,”খবর পাইনি ভাইজান। আপনি এতো উ/ত/লা হবেন না। সামিন বাবার কিছু হবে না।”

***
দু’জনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানে লো/হার শি/ক। সামিন আলোর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে। তারপর চোখ সরিয়ে নিয়ে চুপ করে থাকে। আলো শীতল চোখে সামিনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা শি/ক ধরে বলে ওঠে,”খুব ভালো লাগছে আপনাকে এখানে দেখতে। এটাই আপনার উপযুক্ত স্থান। ”

সামিন চুপ। আলো বলতে থাকে,
” কি ভেবেছেন আপনি? দয়া শুধু আপনিই দেখাতে পারেন? খুব সুপরিওরিটি কমপ্লেক্সে
ভো/গেন তাই না? নিজেই সর্বেসর্বা, আপনিই সবকিছুর নিয়/ন্ত্রক এটাই ভাবেন? সবার প্রতি দয়া দেখানোর ক্ষমতা রাখেন? আজ আমি আপনার প্রতি দয়া দেখালাম ইয়াসার মির্জা।‌ এই আলো নামের মেয়েটার দয়ায় এ যাত্রায় আপনি বেঁ/চে গেলেন।”

সামিন আলোর দিকে তাকায়। ঠান্ডা গলায় বলে,”কেনো দেখিয়েছো দয়া?”

_কেন দেখিয়েছি? আপনার বোনের জন্য, আপনার বাবার জন্য, আপনার ভাইদের জন্য, আপনার ভাইয়ের বৌ এবং ভাইপোর জন্য। আমারও একটা পরিবার আছে। তাই আমি আপনার পরিবারের
ভো/গা/ন্তি চাইনি। নূন্যতম হলেও তো দুই বছর জেলে প/চে
ম/র/তে/ন , আমি আপনার মতো নি/র্দয় না যে বাবা মায়ের
বু/ক থেকে সন্তান কে/ড়ে নিয়ে জি/ম্মি করে রাখে। আপনার বাবা হা/র্টের সিরি/য়াস পে/শেন্ট তাই দয়া দেখিয়েছি।

সামিন চুপ করে থাকে। আলো বলতে থাকে,”অবশ্য এসব আমি এমনি এমনি করিনি। এসবের বিনিময়ে আমি একটা জিনিস চাইবো। আর সেটা হচ্ছে আপনার থেকে মুক্তি। যা বরাবরই চাইতাম।”

সামিন আলোর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যায়।

একটু পরে সমীর দত্ত এসে ল/কা/পের সামনে দাঁড়ায়। একজন কন/স্টে/বল লকা/পের তালা খুলতে থাকে। সমীর দত্ত বলে,”ইচ্ছে করছে আইনের লোককে বি/ভ্রান্ত করার অপরাধে তোর নামে চা/র্জ লাগিয়ে দেই, কিন্তু তোর এই মাসুম চেহারাটা দেখে মায়া হচ্ছে।”

সামিন চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সমীর বলে,”ভাবী সুন্দরী। তোর পাশে মানিয়েছে।”

সামিন ল/কা/প থেকে বের হয়। সমীর দত্ত বলে,”প্র/বলেম কি? খুলে বল। পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছিস কেনো? পাগ/লামি করছিস কেনো?”

“স্যার স্যার!”
একজন কন/স্টেবল তড়িঘড়ি করে ছুটে আসে। সামিন আর সমীর দত্ত তার দিকে তাকায়। সমীর বলে,”কি হয়েছে?”

_খবর এসেছে, স্যার ইয়াসার মির্জার বাবা হস/পিটালে।

***
দৌড়াতে দৌড়াতে হস/পিটালের ভেতরে ঢোকে সামিন। করিডোরে ইশিতা,পরী,রিতু এবং দলের কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ।

সামিন এবং ইলহাম এগিয়ে যায়। ইশিতা ভাইকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে জরিয়ে ধরে কাঁ/দ/তে থাকে। বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে এদিক ওদিক অস/হায়ের মতো তাকাতে থাকে সামিন। আরাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”কখন হয়েছে এসব?”

পরী এগিয়ে আসে। কা/তর সুরে বলে,”আমি হোস্টেল থেকে বাড়িতে গিয়ে দেখি পুরো বাড়ি ফা/কা। বাবা কটেজে এসেছিলো।দোতলায় উঠে দেখি মেঝেতে পরে আছে।”

সামিন ইশিতাকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে যায়। ইলহাম তার পিছু পিছু যায়। কেবিন থেকে ডক্টর বের হয়ে এদিকে আসে। সামিন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ডক্টর নরম গলায় বলে ওঠে,”আই এ্যাম সরি। অনেক দেরি করে ফেলেছেন আপনারা।”

সামিন ডক্টরের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এমন সময় ধপপ করে শব্দ হয়। পেছনে মাথা ঘুরিয়ে সামিন দেখে ইশিতা ফ্লোরে পরে গিয়েছে অ/চে/ত/ন হয়ে।

***
“মাম্মা, দাদুভাই ওখানে কেনো ঘুমাচ্ছে?”

ইহান প্রশ্নটি করে রিতুর দিকে তাকিয়ে আছে উত্তরের অপেক্ষায়। রিতু নিশ্চুপ চোখের পানি ফেলছিলো। সংসারের সব তি/ক্ত মিঠা অভিজ্ঞতা একপাশে রেখে লোকটা তার শশুর। তার স্বামীর বাবা। রিতুর জীবনে তার ভূমিকা ছিলো। ইলহামের হাতে যখন অ/ত্যা/চা/রি/ত হতো, ঐ খাটি/য়ায় শুয়ে থাকা লোকটা শান্তনা দিতে আসতো। লোকটা আদর্শবান কোনো লোক না, যথেষ্ট ত্রু/টি তার রয়েছে, কিন্তু রিতুর কাছে খা/রাপ কিংবা অসম্মানেরও কেউ না। লোকটার জন্য রিতুর কান্না পাচ্ছে খুব।

ছেলের কথার জবাব না দিয়ে রিতু মাথা ঘুরিয়ে লিভিং রুমের আশেপাশে তাকায়। ইশিতা আর্ত/নাদ করে কেঁ/দে যাচ্ছে। খা/টিয়ার দুইপাশে তার দুজন ছেলে বসে আছে। যেন বাবা কিছু বলছে তাদের। চুপচাপ শুনছে তারা।
ভোর চারটা প্রায়। ইমতিয়াজ মির্জার লা/শ কিছুক্ষণ আগেই হস/পিটাল থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
আত্মীয় স্বজনের ভীর জমে গিয়েছে শান্তিনীড়ে।

জামিল এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে সামিনের পাশে চুপ করে বসে পরে। সামিনের দৃষ্টি মেঝের দিকে। জামিল মৃদু স্বরে বলে,”ভাই। ইশমাম ফোন দিচ্ছে বারবার। ওকে জানাবো?”

সামিন অনূভুতি শূন্য দৃষ্টিতে জামিলের দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ কন্ঠে বলে,”আমাকে দে ফোনটা।”

“ভাইয়া।”
ইশমামের কন্ঠে উৎ/কণ্ঠা। সামিন অস্বাভাবিক ঠান্ডা গলায় বলে,”চিন্তা করিস না ছোট। থা/নায় কিছুই হয়নি। আমি বাড়িতে।”

ইশমাম একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর বলে,”বাবা ঠিক আছে? সন্ধ্যায় শুনলাম অ/সু/স্থ।”

সামিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”ঠিক আছে কি নেই তা তো জানি না ছোট।”

_মানে?
_কাল সকাল দশটায় বাবার জা/না/জা।

***
“কেমন মেয়েরে তুই? স্বামীর ঘর করবি না ঠিকাছে। তাই বলে একটা মানুষ ম/রে গিয়েছে তবুও একটু সহানুভূতি আসছে না তোর?”

আলো মাথা ঘুরিয়ে প্রফেসর শিবলীর ওয়াইফের দিকে তাকায়। প্রফেসর শিবলীর ওয়াইফ বলতে থাকে,”একটা মানুষের বাবা মা/রা গিয়েছে। তোরও তো বাবা আছে। আতাউর ভাইয়ের কিছু হলে তোর কেমন লাগে? ঐ লোকটারও তো এখন তেমন লাগছে। তবুও তোর দিল নরম হচ্ছে না?”

_খালা, ওনার মৃ/ত্যু/তে আমি খুশি হইনি। এভাবে বলো না।
_তাহলে বসে আছিস কেন? সমবেদনা জানা।

আলো আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

প্রফেসর শিবলীর ওয়াইফ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বসার ঘরের দিকে যায়। আলো উঠে আতাউর আলমের ঘরের বাইরে গিয়ে দাঁড়ায়, টুপিটা পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে আতাউর আলম আলোর দিকে তাকায়। আলো মৃদু স্বরে বলে,”যাচ্ছো তুমি?”

আতাউর আলম নিচু স্বরে বলে,”না গেলে কেমন দেখায় না মা? আমরা সামাজিক জীব।”

আলো চুপ করে থাকে । আতাউর আলম আমতা আমতা করে বলে,”আর তাছাড়া ইয়াসারের সাথে ব্যাক্তিগত শ/ত্রু/তা থাকতেই পারে। কিন্তু ও একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক। এতগুলো এতিমখানা, এজেন্সি চালায়। সাংবাদিক এসোসিয়েশনের সবাই যাচ্ছে। এটা আমাদের এসোসিয়েশনের নী/তি। আমার না যাওয়াটা দৃষ্টি/কটু।”

আলো বাবার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”জা/না/জা কয়টায়?”

_দশটায়। পারিবারিক ক/ব/র/স্থা/নে দা/ফ/ন হবে।

***
রিকশা থামিয়ে গেইটের বাইরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। রাস্তাটা মানুষে গিজগিজ করছে। অবশ্য বিশিষ্ট সমাজসেবকের বাবা মা/রা গিয়েছে , একসময় সেও এমপি ছিলো। এতো লোকজন তো থাকবেই। আলোর অস্বস্তি বারছে। সবাই কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকে দেখেছে। এখনো কোনো চেনা লোকের চোখে আলো পরেনি। এদিক ওদিক তাকিয়ে গেইটের ওপরে লেখা “শান্তিনীড়” কথাটার দিকে আলোর চোখ পরে। তারপর একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে পা বাড়ায়। যে বাড়িটাকে একবার ছেড়ে চলে গিয়েছে পুনরায় প্রকৃতি তাকে সেখানে টে/নে এনেছে।
কিন্তু কিসের জন্য? চোখের সামনে বাবা হারা ইশিতার কান্না/মাখা চেহারাটা ভেসে উঠছে সেজন্য? আতাউর আলমের অপা/রেশ/নের সময় যেভাবে আলোকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে মেয়েটা,আলোর কি একটু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ নয়? এতটাও ক/ঠি/ন মেয়ে আলো নয়।
ধীরপায়ে হেটে গেইটের ভেতরে পা রাখতেই সে দাঁড়িয়ে পরে। ইলহাম এবং দলের ছেলেরা পোর্চের ডানপাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইলহাম কাঁ/দছে। এমপি মহোদয় ইলহামের কাঁধে হাত রেখে কিছু একটা বলছে। মনে হচ্ছে শান্তনা দিচ্ছে। সবার মাথায় টুপি। সম্ভবত এক্ষুনি সবাই দা/ফন কার্য শেষ করে এসেছে।
অবচেতন মনে আলোর চোখ দুটো একজন কে খুঁজছে। হুট করে আলো চেতনা ফিরে পেতেই নিজের কাজে নিজেই প্রচন্ড অবাক হয়।
জড়তা কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই ইলহাম এবং দলের ছেলেদের সামনে পরে যায় আলো।
সবাই কয়েক মুহূর্ত আলোর দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ হেঁটে চলে যায় সেখান থেকে।
আলো শান্তিনীড়ের অন্দরমহলে প্রবেশ করে।

করিডোর পেরিয়ে লিভিং রুমের দিকে এগোতেই কেউ চেঁ/চি/য়ে বলে ওঠে,”দাঁড়াও।”

আলো দাঁড়িয়ে পরে। ইলোরা মির্জা আলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। আলো তার দিকে তাকায়।
_কেন এসেছো তুমি?

আলো কি বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যিই তো। সে কেনো এসেছে তার সঠিক কোনো ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। তবুও কথা গুছিয়ে নিয়ে বলে,”ইশিতা আপু।”

ইলোরা মির্জা আলোর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে সরে দাঁড়ায়। নিচতলার লিভিং রুম থেকে চাপা আর্ত/নাদের শব্দ শোনা যাচ্ছে। লিভিং রুম ভর্তি মানুষ। আলো ইলোরা মির্জার দৃষ্টি উপেক্ষা করে এগিয়ে যায়। ভীর ঠেলে দেখতে পায় ইশিতা মেঝেতে বসে বি/লাপ করে যাচ্ছে উ/ন্মাদের মতো। দৃশ্যটা দেখে আলোর বুকটা
মো/চ/ড় দিয়ে ওঠে। কিছু বছর পূর্বে মাকে হারিয়েছে,আর এখন বাবাকে। পুরোপুরি এতিম মেয়েটা। আলোর বুকে য/ন্ত্রনা হচ্ছে খুব। এই পরিস্থিতিতে তো সেও পরতে পারতো!

রিতু মাথা তুলে আলোর দিকে তাকাতেই থম/কে যায়। আলোকে সে আশা করেনি। পরী উঠে আলোর দিকে ছুটে এসে আলোর হাত ধরে ইশিতার কাছে নিয়ে যায়। ইশিতা হাউ/মাউ করে কেঁ/দে যাচ্ছে। আলো গিয়ে ইশিতার মুখোমুখি বসে পরে মেঝেতে।
ইশিতা কাঁদতে কাঁদতে আলোর দিকে তাকায়। আলো খুবই সংকোচের সাথে ইশিতার গালে একটা হাত রাখে। একটা মমতাময়ী হাতের স্পর্শ পেয়ে ইশিতা দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে। জরিয়ে ধরে আলোকে।‌ তারপর ফোপাতে থাকে।
রিতু পাশে বসে নিশ্চুপ কেঁ/দে যাচ্ছে। লিভিং রুমে যত মহিলা আছে সবাই শান্তনাবানী শুনিয়ে যাচ্ছে।
আলো ইশিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ইলোরা মির্জা এগিয়ে গিয়ে ইশিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,”কাকে জরিয়ে ধরে আছিস তুই? ও মজা পাচ্ছে মজা।”

আলো কপাল কুঁ/চ/কে ফেলে, ক/ঠিন গলায় বলে,”বাজে কথা বন্ধ করুন। একজনের মৃ/ত্যু/তে আমি মজা পাবো কেনো?”

_একজনের মৃ/ত্যু/তে না। এই পরিবারের ভো/গান্তিতে মজা পাচ্ছিস তুই হত/চ্ছাড়ি।

সব মহিলারা হতভম্ব হয়ে যায় ইলোরার কথা শুনে। আলো ।
ধ/ম/কে/র সুরে বলে,”কথা বুঝে শুনে বলবেন। মুখ সামলে বলবেন।”

“দাদী”
নরম গলায় সামিন ইলোরাকে ডাকে। ইলোরা ঘুরে তাকায়। সিঁড়ির কাছটাতে দাঁড়িয়ে আছে সামিন। সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরনে তার, মাথার টুপিটা খুলে হাতে নিয়েছে। আলো ইশিতাকে রেখে উঠে দাঁড়ায়। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সামিনকে দেখে। যে লোকটা তাকে একদিন বাবা হারা করে দিতে পারতো,আজ নিজের বাবা হারিয়ে কতটা পরিবর্তন এসেছে চেহারায় সেটা দেখতে থাকে।

সামিন একবারের জন্যও আলোর দিকে তাকায় নি। সে নি/স্প্রা/ন গলায় ইলোরাকে বলে,”কেউ মৃ/ত ব্যক্তির বাড়িতে সমবেদনা জানাতে আসলে তাকে এভাবে অপ/মান করতে নেই।”

কথাটি বলে সামিন দোতলার ওঠার জন্য পা রাখে সিঁড়ির প্রথম ধাপে। পেছন থেকে আলো বলে ওঠে,”দাঁড়ান।”

সামিন দাঁড়িয়ে পরে, কিন্তু আলোর দিকে ঘুরে তাকায় না,আলো এগিয়ে এসে সামিনের পেছনে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে,”জানি এই সময়ে এসব কথা বলা উচিত না, তবুও বাধ্য হয়ে বলছি। আমার দাদুর দেয়া একটা চেইন ‌বিক্রি করে টাকা নিয়ে এসেছি আমি। টাকা গুলো নিয়ে আমাকে ঋণ মুক্ত করুন।”

_রিতুর কাছে দিয়ে যাও। টাকা গোনার পরিস্থিতিতে আমি নেই।

অস্ফুট স্বরে বলে সামিন।

আলো বলতে থাকে “জানি এই সময়ে এসব কথা আপনাকে বলা ঠিক হচ্ছে না, আচ্ছা একটা কথা বলুন তো। আপনার বাবার মৃ/ত্যু/টা কি কোনোভাবে আমার জন্য হয়েছে? আমি দায়ী?”

সামিন নিচু স্বরে কিন্তু তেজী কন্ঠে বলে,”মোটেই না। অবান্তর কথা।”

আলো বলতে থাকে,”কাল সন্ধ্যার ঘটনার পর থেকে আপনাদের বাড়ির লোকজন আমাকে অপ/রাধী সাজিয়ে আমার দিকে আঙুল তুলেছিলো, অপ/রাধী তার অ/পরাধ স্বীকার করে স্বেচ্ছায় শা/স্তি পেতে গেলো সেজন্য ভি/ক্টি/মকে দো/ষী সাব্যস্ত করা হলো কেন সে অপ/রাধীকে আটকাচ্ছে না, সেটা কি উচিত ছিলো?”

_উচিৎ হয়নি। ওদের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।

_আজ আমি এখানে ইশিতা আপুকে সমবেদনা জানাতে এসেছি সেটা কি ভুল হয়েছে?

_ভুল হয়নি। তুমি মহৎ।

_তাহলে আপনার বাড়ির লোকজন এভাবে কেনো অপ/মান করবে যেন আমি একজন অ/প/রা/ধী। যেখানে আমার কখনো কোনো দো/ষ ছিলোই না। আপনি যা করেছেন তার বিনিময়ে অতটুকু রিয়াক্ট করা কি স্বাভাবিক না আমার? ঠান্ডা মাথায় বলুন!

সামিন নিচু স্বরে বলে,”স্বাভাবিক।”

_তাহলে সবাই বরাবর আমাকে দোষা/রোপ করছে কেনো, যেন আমি সর্ব/নাশী।

সামিন ওদিকে ফিরেই স্বাভাবিক গলায় বলে,”দাদী বৃদ্ধা মানুষ তাই এমন করছে। দাদীর হয়ে আমি ক্ষ/মা চাইছি। সমবেদনা জানানো হয়ে গেলে তুমি বাড়ি চলে যাও। কোনো কিছুতে তোমার কোনো দোষ নেই। তুমি নি/র্দোষ ছিলে, আছো এবং আমার কাছে বরাবর নি/র্দোষ থাকবে।”
আলো সামিনের মাথার দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন একবারের জন্যও আলোর দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়..

চলমান….

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩৩ (বোনাস পর্ব)
#Esrat_Ety

“বাতাসে নির্বাচন নির্বাচন গন্ধ পাচ্ছি।”
চোখ বন্ধ করে একটা প্রশান্তির গভীর নিঃশ্বাস ফেলে সাগর বলে।

শমশের ভুঁইয়া ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সাগর চোখ মেলে তাকিয়ে বলে,”বিষয়টা পুরোটা মাথার উপর দিয়ে গেলো আব্বা।”

_বিষয়টা যাই হোক না কেনো। লাভ তো আমাদেরই হচ্ছে। এরকম অনাকাঙ্খিত সুযোগ হাতে চলে আসলো।

_কিন্তু হ/জম করতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার। মানে আপনি ভাবতে পারেন? সিংহ তার সাধের রাজত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছে।

শমশের ভুঁইয়ার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”সিংহ রাজত্ব ছেড়েছে শুধু, তার উপাধি না। ওকে আন্ডারস্টিমেট করিস না বাপ। অতীতে বহুবার ওকে আন্ডারস্টিমেট করে কো/প খেয়েছি।”

বাবার কথায় সাগর মাথা নাড়ে, তারপর বলে,”ঠিক বলেছো। ওর মতিগতি বোঝা মুশকিল। নজরে নজরে রাখতে হবে ওকে।”

***
“ভাইয়া ”

দরজার বাইরে রিতু দাঁড়িয়ে আছে। সামিন দোতলার বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। রিতুর কথায় মাথা ঘুরিয়ে তাকায়।

” ভাইয়া আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে খাবার দিতে চাচ্ছে। তাদের কি বলবো? ”

_এসব কেনো?

_নিয়ম নাকি! ভুলে গেলেন?

_নিয়ম?
সামিন অন্যমনষ্ক হয়ে প্রশ্ন করে। তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই রিতুকে বলে,”যা মন চায় করো।”

রিতু দাঁড়িয়ে থেকে কয়েক মূহুর্ত পরে বলে,” এ/তি/ম/খানায় খাওয়ানোর ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু আমি চাচ্ছি বাড়িতেও মিসকিন ডেকে খাইয়ে দিতে। আপনার কাছ থেকে অনুমতি চাচ্ছি। ”

_অনুমতির কি আছে রিতু। তুমি যেটা ভালো মনে করো‌। জামিলকে টাকা দিয়ে সব বুঝিয়ে দাও।

তারপর কিছুক্ষণ পরে চুপ করে থেকে বলে,”তুমি এই অবস্থায় দৌড়াদৌড়ি করো না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করো। ইহানকে খাওয়াও। ইশিতাকে খাওয়াও। তোমরা না খেয়ে থাকলে বাবা ফিরে আসবে না।”

_আর আপনি? আপনি খাবেন না? গতকাল রাত থেকে কিছু খান নি।

_খাবো। এক গ্লাস পানি পাঠিয়ে দাও কাউকে দিয়ে।

রিতু চলে যাওয়ার আগে নিচু স্বরে বলে,”ভাবী আমার কাছে কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছে। কোথায় রাখবো ভাইয়া?”

_বিছানার ওপর রেখে যাও।

***
রেহেনা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বারবার ভেতরে উঁকি দিচ্ছে। আলো খেয়াল করেছে কিন্তু কিছু বলছে না। হিয়া মাথা ঘুরিয়ে রেহেনার দিকে তাকিয়ে বলে,”আন্টি আসুন না। ভেতরে আসুন।”

রেহেনা ভেতরে ঢোকে। আলো তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”কিছু বলতে চাইলে বলতে পারো।”

রেহেনা আমতা আমতা করে বলে,” ও বাড়িতে ভাত-তরকারি দেওয়া টা উচিত নয় কি? ”

_কোন বাড়িতে?

_ম/রা বাড়িতে!

আলো মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর বলে, “কেনো? তুমি কি সত্যি সত্যি বেয়াই বাড়ি ভাবছো ও বাড়িকে?”

রেহেনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”পাড়া প্রতিবেশীরা বাঁকা কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।‌”

_কোন জন্মে পাড়া প্রতিবেশীর কথা আমি গায়ে লাগিয়েছি? এখন ভাত-তরকারি রেধে পাঠাবে। কাল ঐ সামিন ইয়াসার এসে তোমার কাছে জামাই আদর খেতে চাইবে। খাওয়াবে তুমি?

“আলো এভাবে কথা বলিস না। লোকটার বাবা মা/রা গিয়েছে। এখন অন্তত চুপ কর। শুনতে ইচ্ছা করছে না আর।”

হিয়া চেঁচিয়ে বলে ওঠে। আলো চুপ হয়ে যায়। রেহেনা বলতে থাকে,”তোর বাবাও বলছিলো। তোর মত থাকলে পাঠাবো। এক সমাজে চলতে গেলে শ/ত্রু/র বাড়িতেও তো মানুষ এসব দেয় সামাজিকতার খাতিরে।”

_হ্যা তোমরা এখন মেয়ের কি/ড/ন্যা/পা/র আর ছেলেদের গলায় চা/কু ধরা লোকের ম/র/মে ম/রি/য়া হয়ে উঠেছো। যাও পাঠিয়ে দাও। আমাকে বলছো কেনো? পাড়া প্রতিবেশীর থেকে অনুমতি নাও‌।

রেহেনা কিছুক্ষণ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায়। হিয়া আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”তোকে কি দিয়ে বানিয়েছে আল্লাহ?”

_আমার সেদিন রে/ই/প হতে পারতো হিয়া।

_হয়নি তো তাই না? তোকে বিয়ে করেছে। রোজ কত শত প/লি/টি/শি/য়া/ন/রা মেয়েদের রে/প করে বনে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে যায়। কেউ খবর রাখে না, এমন কিছু তো তোর সাথে হয়নি। তোকে বিয়ে করেছে। শেষমেশ ভুল বুঝতে পেরে তোর জন্য নিজের ক্যারিয়ারের ব/লি চড়িয়েছে।

_তোরা যে দৃষ্টিকোণ থেকেই অ/ন্যা/য়টাকে দেখবি না কেনো হিয়া ওটা অ/ন্যা/য়ই থেকে যাবে। একটা ঘোর অ/ন্যা/য়।

_হ্যা। অ/ন্যা/য় অ/ন্যা/য়ই থাকবে, কিন্তু একজন অ/প/রাধী যে সারাজীবন অ/প/রাধীই থাকবে তোকে এমন কথা মাথার দিব্যি দিয়ে কে বলেছে? জবাব দে আমাকে।

_না সে হজ্ব করে হাজী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমি তার কাছে যাবো না। কি করবি এখন আমাকে তোরা? মে/রে ফেলবি? মে/রে ফেল।

হিয়া চুপ করে আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো বলে,”তোদের কাছে সে ফে/রেস্তা সম মানুষ কিন্তু আমার কাছে সে একটা অপ/রাধীই থাকবে। অপ/রাধীকে ক্ষমা করা যায়, তার প্রতি সহমর্মিতা দেখানো যায় কিন্তু সংসার করা যায় না হিয়া। আমি কোনো সমঝোতার সংসার চাইনা হিয়া, আমি চাই একটা ভালোবাসার সংসার। ওনাকে আমি কখনো ভালোবাসতে পারবোনা রে। বুঝবি না তোরা। আমাকে কেউ বুঝবি না।”

***
“শরীর খা/রা/প?”
ফুয়াদ ঘরের ভেতর ঢুকে সামিনের বিছানায় বসে। সামিন আধশোয়া হয়ে ছিলো। মৃদু স্বরে বলে,” মাথা ব্যা/থা। মে/ডিসিন নিয়েছি। ”

_ইশিতার জন্য ডাক্তার ডাকা হয়েছে। অবস্থা খা/রা/প করে ফেলেছে নিজের।
_পরী আছে। দেখবে।

_ইশমামের সাথে কথা হয়েছে?
_হুম। বিকেলে হয়েছে। ভেঙে পরেছে খুব। ওকে সামলানোর কেউ নেই ওখানে।

_আর তোকে?
ফুয়াদ সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে। তারপর বলতে থাকে,”তোকে সামলানোর কেউ আছে? তুই নিজেকে দেখেছিস?”

_তুই আছিস। জামিল আছে। আর কাকে লাগবে আমার?
সামিন ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়।

কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ। তারপর সামিন বলতে থাকে,”বাবা সবসময় আফসোস করতেন। তার মৃ/ত্যু/শ/য্যায় ইশমাম পাশে থাকবে না। আজ দেখ ভাগ্যের কি নি/র্ম/ম পরিহাস। তার একটি সন্তানও থাকতে পারলো না। সবকিছু ঘেটে দেই আমি ফুয়াদ। তুই ঠিক বলিস, আমি বড্ড অযোগ্য। ”
ফুয়াদ তার বন্ধুর কাঁধে হাত রাখে। সামিন দ্রুত নিজেকে সামলে নেয়। ফুয়াদ প্রসঙ্গ পালটে বলে,”আতাউর আলমের বাড়ি থেকে ভাত-তরকারি পাঠানো হয়েছে। ”

সামিন চুপ করে থাকে। ফুয়াদ বলে, ” হঠাৎ কি হয়েছিলো ? কেনো এতো বড় সিদ্ধান্ত নিলি? ”

_ও আমাকে বললো ওর লাইফে আমার অস্তিত্ব টের পেলে ও সুই/সা/ইড করবে। এতো বড় একটা কথা বললো। তুই ঘৃ/ণার পরিমাণ দেখেছিস? কতটা ক্ষত দিয়েছি আমি ওকে। কিচ্ছু সারাতে তো পারবো না। ভাবলাম একটু স্বস্তি দেই ওকে। ও মনে করে আতাউর আলম ভোটে দাঁড়ালে জিতে যেতো। তাই আমি সেই ব্যাবস্থা করে দিলাম। এতো টুকু স্বস্তি তো আছিয়াকে দেওয়ার ক্ষমতা এই ফে/রা/উ/ন রাখে। ও স্বস্তি পাক।

***
ডেলিভারি বয় এসে নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আলো আর শেফালী হাতে হাতে আচারের বৈয়ম গুলো নামিয়ে নিচ্ছে। সানজিদা,বিউটি,হিয়া, শ্রাবনী মশলা প্রক্রিয়াজাত করছে।

ডেলিভারি বয়কে দোকানের লিস্টগুলো বুঝিয়ে দিয়ে আলো ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে একটা বড় নিশ্বাস নিয়ে বলে,”আজকের মতো কাজ শেষ। শেফালী আপু আর বিউটি আপু। তোমরা যাও। তোমাদের তো কাজ রয়েছে আরো। বাকি কাজ আমরা হাতে হাতে করতে পারবো। ”

_সত্যি বলছো? যাবো আলো ?

আলো হেসে বলে,” হু যাও। ”

শেফালী আর বিউটি চলে যায়। আলো বসে যায় বাকিদের সাথে মশলা প্রক্রিয়াজাত করতে। কিছুক্ষণ পরে নিচে চেঁ/চা/মে/চি/র শব্দ শোনা যায়। সবাই সবার মুখের দিকে তাকায়। আলো উঠে গায়ে ওড়না জরিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাড়ির আঙিনায় চলে আসে। আশেপাশের বাড়ির বেশকিছু লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। আলোর বাবা মাও আছে।
আলোকে দেখে ব্যাবসায়ী জালালউদ্দিন বলে ওঠে,”এই যে এসে গিয়েছে আসল লোক।”

আলো বলে,”কি হয়েছে আংকেল?”

_কি হয়েছে? তোমার জন্য তো এই পাড়ায় শান্তিপূর্ণ ভাবে কেউ থাকতে পারবে না দেখছি।

_কি করেছি আমি?

_কি করেছো? আজকাল হি/জ/ড়া/দের সাথে চলাফেরা করো। তোমার ঐসব পোষা হি/জ/ড়া রা কি করে জানো? মহল্লার দোকানে দোকানে চাঁ/দা/বা/জি করে। ভদ্রলোকদের হয়রানি করে বেড়ায়। এইতো গতকাল আর্কিটেক্ট সাহেবের তিন মাসের নাতীর মুখ দেখবে বলে বাড়িতে ঢুকেছিলো। উল্টো করে ঝু/লি/য়েছিলো শিশুটাকে। আরো কত ধরনের অ/ত্যা/চার ওরা করে তুমি জানো?

আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”শেফালী আর বিউটি আপু কি কিছু করেছে? করেনি তো তাইনা?”

_ওরা করেনি কিন্তু তোমার আশকারা পেয়েই তো ওর স্বজাতিরা মহল্লায় ঢুকে এমন করছে।

_স্বজাতি মানে? আমরা সবাই একই জাতি। সবাই মানুষ। শেফালী আর বিউটি আপু যদি কিছু করে থাকে তাহলে আমাকে বলুন। বাকিদের তো আর আমি লিড করিনি। থানায় ক/ম্প্লে/ইন করুন।

জালাল উদ্দিনের পাশ থেকে তার স্ত্রী বলে,”বাদ দাও তো। এই মেয়েকে তুমি চেনো না? কোনো মুরব্বি জ্ঞান নেই এই মেয়ের। এর সাথে কি কথা বলছো তুমি?”
তারপর আতাউর আলমের দিকে তাকিয়ে বলে,”শুনুন ভাই। আপনি সজ্জন ব্যক্তি তাই আপনাকে বলছি। একটু রয়ে সয়ে চলাফেরা করতে বলুন মেয়েকে। আর পারলে একটু ভদ্রতাও শেখাবেন!”

***
” আংকেল আমার কিছু করার নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। ”

_সামিন। দেখো। ঐদিন সন্ধ্যার পর থেকে তোমার প্রতি আমি যথেষ্ট বিরক্ত ছিলাম। এখন আমি যথেষ্ট ম/র্মা/হত। তাই তোমাকে ধমকাচ্ছি না। কিন্তু তুমি তোমার সিদ্ধান্ত বদলে নাও। বারবার বলছি।

_না আংকেল। আমি গুটিয়ে নিয়েছি সবকিছু থেকে।

_সামিন তুমি কি ভুলে গিয়েছো নমিনেশন পাওয়ার জন্য তুমি কি কি করেছিলে? ভুলে গিয়েছো তুমি? কতটা পরিশ্রম করে তুমি এই পর্যায়ে এসেছো, কোনো টাকা পয়সা ইনভেস্ট না করে, কোনো অ/বৈ/ধ উপায় অবলম্বন না করে। ভুলে গেলে সব?

_কিচ্ছু করার নেই আংকেল।

_চাইছো টা কি সামিন তুমি?

_পুনঃনির্বাচন আংকেল।

কথাটি বলে কবির আলমগীরের মুখের ওপর ফোন কেটে দেয় সামিন। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই সামিন ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে, ওপাশ থেকে রনি বলে,”ভাই মহল্লার কিছু লোকজনের সাথে ভাবী হা/ঙ্গা/মা করছে। ”

_ওকে ওর মতো ছেড়ে দে রনি। ও সামলে নিতে পারবে। বিরক্ত করিস না ওকে।

***
“আমি নির্বাচনে দাড়াবো? আবার?”

আতাউর আলম হতভম্ব হয়ে যায়। আলো বাবার দিকে তাকিয়ে তেজী কন্ঠে বলে,”হ্যা। দাঁড়াবে।”

আতাউর আলম উঠে দাঁড়ায়। আ/তং/কিত মুখ নিয়ে বলে,”অসম্ভব। আমি আবার ঐ ম/র/ন খেলায় নামতে চাইনা। একেবারেই না। তুই বাদ দে।”

_কেন বাদ দেবো? বাদ দেবো না আব্বু। আবার নির্বাচন হবে। তুমি দাড়াবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। ভোট হবে। তুমি জিতবে। আর কেউ তোমাকে দ/মিয়ে রাখতে পারবে না আব্বু।

আতাউর আলম মেয়ের মাথায় হাত রেখে নরম গলায় বলে,”এতো জে/দ বড় খারাপ জিনিস মা। এতো জেদ করিস না। আমি আগের বার ভুল করেছিলাম। আমার মতো লোকের রাজনীতি মানায় না মা। আমার মতো ছাপোষা লোক যার কোনো লোকবল নেই,অর্থ নেই, তার রাজনীতি মানায় না।

_কিন্তু তোমার দেশ সেবা করার মতো একটা উদার মন আছে আব্বু। ওটাই যথেষ্ট আব্বু। সবটা যখন অগোছালো হয়েই গিয়েছে আর একবার এই খেলাটা আমি খেলে দেখতে চাই। তুমি একটা সুযোগ পেয়েছো আব্বু। তুমি দাড়াবে। তুমি অবশ্যই নির্বাচনে দাড়াবে। এবং ঐ ইয়াসার মির্জাকে তুমি জিতে দেখিয়ে দেবে। অবশ্যই দেখিয়ে দেবে।

***

ত্রিশ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। যে কোচিং সেন্টারে‌ আলো পড়ায় সেখানের হেড ম্যাম এখনো এসে পৌঁছায়নি। চাবি তার কাছে। কোচিং সেন্টার টা গলির মেইন রোডের ধারে। আলো পোর্চের নিচে কপাল কুঁ’চ’কে দাঁড়িয়ে আছে। আজ পি/রি/য়/ড হয়েছে তাই মেজাজ টা একটু বেশিই বি/গ/ড়ে গিয়েছে। মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই আলোর চোখ মুখ ভ/য়ে শুকনো হয়ে যায়। কিছু ক্ষ্যা/পা কুকুর এদিকে ছুটে আসছে। আলো ডানপাশে একটা বাইক রাখা ছিলো, সে ভয় পেয়ে বাইকের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আলোর দুর্ভাগ্য, কুকুর গুলো তার সামনে এসেই দাঁড়িয়ে আছে। আলোকে দেখছে সবকটা। এমনিতেই এই মাসে সব কুকুর ক্ষ্যা/পা হয়ে যায়। তার উপর এইগুলো কেমন ভ/য়ং/কর মুর্তি ধারন করেছে। জিভ বের করে আছে। আজ আলোর বারোটা বেজে গেলেও যেতে পারে। সে ঢোক গিলে এদিক ওদিক অসহায়ের মতো তাকাচ্ছে।

মেইনরোডের অপজিটে চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আলোকে দীর্ঘসময় ধরে লক্ষ্য করছিলো সামিন। সামিনের চোখে মুখে সং/কোচ। সে জানতো না আলো এখানে পরায়। তাহলে সে আসতো না কখনোই। তার ফোনের রিংটোন বেজে যাচ্ছে। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ইশিতা উদাসী গলায় বলে,”ভাইয়া। তাড়াতাড়ি এসে নিয়ে যাও আমাকে। ”

_আসছি।
শুকনো গলায় বলে সামিন ফোন কেটে দেয়। কোনো উপায় না দেখে আলোর দিকে এগিয়ে যায় সামিন।

কুকুরের ভ/য়ে দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো আলোর। ছুটতেও পারছিলো না সে। অসহায়ের মতো ডান দিকে তাকাতেই সে থ/মকে যায়। নেভি ব্লু রঙের শার্ট গায়ে, অগোছালো চেহারায়, ক্লান্ত ভঙ্গিতে সামিন তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আলো দাঁড়িয়ে থাকে সামিনের দিকে তাকিয়ে। লোকটাকে দেখে মনে হচ্ছে বাবার মৃ/ত্যু/র পরে আর শেভ করেনি। ফরসা মুখে খোচা খোচা দাড়ি। বাহুবলীর মতো শরীরটাকে রো/গা লাগছে বেশ।
সামিন আলোর একেবারে কাছে গিয়ে নিচু স্বরে বলে,”আমার বাইক।”

আলো অবাক হয়ে বাইক টার দিকে তাকায়। সে এতক্ষন সামিনের বাইকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। মুখ ভর্তি সং/কোচ নিয়ে সে সরে দাঁড়ায়। সামিন বাইকে উঠতে যাবে তখন আলো নিচু স্বরে বলে ওঠে,”কুকুর গুলোকে তাড়িয়ে দিয়ে যান।”

সামিন দাঁড়িয়ে পরে। আলোর নিচু করে রাখা মুখটার দিকে একপলক তাকিয়ে নিচু হয়ে একটা ইটের টুকরো তুলে নিয়ে দূরে ছু/ড়ে মারে। কুকুর গুলো দৌড়ে সেদিকে যায়।

সামিন বলতে না চেয়েও বলে ওঠে,”আমার কাছে হেল্প চাইতে তোমার আত্মসম্মান অসম্মানিত হলো না?”

_আপনার যায়গায় একজন পথচারী হলেও আমি হেল্প চাইতাম।

নিচু গলায় বলে আলো। সামিন কিছু না বলে আবারও বাইকে উঠতে যাবে। তখন আলো বলে ওঠে,”আমার বাবা আবারও নির্বাচনে দাড়াবে।”

_ভালো।
একশব্দে জবাব দেয় সামিন। আলো বলতে থাকে,”এই বার সে জিতে দেখাবে নির্বাচনে। ”

_আচ্ছা ঠিকাছে।

সামিনের ঠান্ডা জবাব কোনো এক অদ্ভুত কারনে আলো মেনে নিতে পারছে না। সে সামিনকে উ/ত্তে/জিত করতে বলে ওঠে,”‌আপনার দয়া ছাড়াও মাথা উঁচু করে বাচা যায়। সেটা এবার আমি দেখিয়ে দেবো।”

সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে ওঠে,” আমি পদত্যাগ করেছি। তার জন্য আবার নির্বাচন হবে। এটাও কিন্তু একপ্রকার দয়া আলো। দয়াটুকু নিতে তোমার আত্মসম্মানে বাঁ/ধলো না!”

আলো শীতল চোখে সামিনের দিকে তাকায়। তারপর ক্ষে/পে গিয়ে বলে,”না। কারন আপনি গতবার অ/বৈধ ভাবে ভোটে জিতেছেন। আপনার পদত্যাগ করা উচিত। এটা দয়া নয়।”

সামিন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। সে হাসি আলোকে পী/ড়া দেয়। সে দাঁত খি/চিয়ে বলে,”খুব আত্মবিশ্বাস আপনার নিজের প্রতি তাই না? খুব আত্মবিশ্বাস? তাহলে একটা বা/জি ধরবেন আমার সাথে?”

_কি বা/জি?

_আপনি আবার ভোটে দাঁড়াবেন।

সামিন আলোর দিকে সরু চোখে তাকায়। তারপর বলে,”আমার যদি ভোটে দাঁড়ানোর থাকতো তাহলে আমি পদত্যাগ করলাম কেন? ”

আলোর মাথায় জে/দ চেপে গিয়েছে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আপনার অহংকার আমি ভাঙতে চাই। আপনি পদত্যাগ করেছেন। এবং পুনরায় আপনি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন। তবে এইবার কোনো দল থেকে টিকিট নিয়ে নয়। আমার বাবার মতো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। বলুন রাজী? আছে দম? অনেক তো দলের নাম ভা/ঙিয়ে খেলেন। এখন নিজের ক্ষমতা দেখান পারলে।

সামিন আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,”বাচ্চামো করো না। ”

কথাটি বলে সামিন আবারো বাইকে উঠতে যাবে অমনি আলো বলে ওঠে,” ঠিক জানতাম। আপনার ক্ষ/মতা আসলে ঐ দল। নিজের কিছু নেই। ভয় পাচ্ছে ইয়াসার মির্জা। ”

সামিন দাঁড়িয়ে পরে। আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,” আচ্ছা ধরলাম বা/জি। তো মনে করো যদি তোমার বাবা জিতে যায় তাহলে কি হবে? ”

_তাহলে আপনি আমার আব্বুর পায়ে নাক খ/ত দেবেন।

সামিন চুপ করে আলোকে দেখে। তারপর বলে,”তাই? আর যদি আমি জিতি? আমি যেটা বলবো সেটা শুনতে পারবে? ”

আলো চুপ করে থাকে। সামিন বলে,” দম তো তোমার নিজের নেই আলো। তাই আমার দম নিয়ে প্রশ্ন করো না। বাড়িতে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ঘুমাও। তোমার বাবার জন্য অগ্রীম শুভকামনা।”

আলো দাঁতে দাঁত চে/পে বলে ওঠে,”আমি রাজি।”

সামিন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে, তারপর বলে, “তাই? ভেবে দেখো আলো। বেশি কনফিডেন্স ভালো না।”

_আমি রাজি। কি চান আপনি? আমাকেই তো চাইবেন তাই না? ঠিকাছে। আমি রাজি আপনার শর্তে। কারন আমি জানি আপনি জিততে পারবেনই না।

সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। আলো দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”এই আলো ভ/য় পাওয়ার মেয়ে না সামিন ইয়াসার। আমি রাজি। বাবা জিতলে আপনি আমাদের কথা শুনবেন আর আপনি জিতলে আমি আপনার কথা শুনবো। চ্যা/লে/ঞ্জ এ্যাক্সেপ্টেড।

সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,” নিজের কথায় নিজে জরিয়ে যাবে আলো, পরে আমাকে দো/ষ দিও না।”

আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সামিন বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট করে চলে যায়।

আলো হাত মুষ্টি/বদ্ধ করে রেখেছে। গা এখনো জে/দে কাঁ/পছে। যা হয় হোক। ঐ লোকটাকে ওর ক্ষমতা দেখিয়ে ছাড়বে আলো। ওর দলের জন্য লোকজন ওকে ভোট দেয় এটা হা/ড়ে হা/ড়ে টের পাবে এইবার নির্বাচনে হেরে ঐ সামিন ইয়াসার মির্জা।

***
কোচিং সেন্টারের হেডম্যাম রিকশা থামিয়ে আলোর সামনে দাঁড়ায়। অ/প/রাধী গলায় বলে,”সরি এক ঘন্টা দাড় করিয়ে রাখলাম তোমায়। সরি আলো।”

আলো ম্যামের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় বলে,” আপনার কি হয়েছে? আপনি এভাবে কাঁপ/ছেন কেন?”

_আর বলো না, গলির ওই মাথায় মেইনরোডে এক ভয়াবহ এ/ক্সি/ডে/ন্ট হয়েছে। একটা নীল রঙের আর ওয়ান ফাইভ কে একটা বালুভর্তি ট্রাক রাস্তায় পি/ষে দিয়ে গিয়েছে। লোকটার মাথা থেঁতলে গিয়েছে। আমি দূর থেকে দেখেছি লোকের ভীর। র/ক্তের ব/ন্যা বয়ে গিয়েছে। সদর হস/পিটালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লোকটা মনে হয় না বাঁ/চবে আলো।

একনাগাড়ে বলে ওঠে হেড ম্যাম। আলো কেঁ/পে ওঠে। নীল রঙের আর ওয়ান ফাইভে তো সামিন গিয়েছে এই মাত্র। আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে বড় বড় নি/শ্বাস নিতে থাকে। হেড ম্যাম বলে ওঠে,”তোমার কি হয়েছে আবার আলো? ”

আলো একটা ঢোক গিলে নিয়ে বলে,”ম্যাম আজকে আমাকে ছুটি দিন। সরি।”

আলো কথাটি বলে মেইন রোডে নামে। একটা রিকশা থামিয়ে উঠে পরে বলে,”সদর হস/পিটাল চলুন।”

আলো বুঝতে পারছে না তার এতো অ/স্থির লাগছে কেনো। ফোনে বারবার ইশিতাকে ফোন দিচ্ছে আলো। ইশিতা ফোনটা ধরছে না ‌।

আলোর অ/স্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। হসপিটালের সামনে রিকশা থামিয়ে কোনোমতে ভাড়া মিটিয়ে সোজা ইমা/র্জেন্সি ইউনিটে চলে যায় আলো। প্রচুর লোকজন সেখানে। সরাসরি ইউনিটে ঢুকতেই একজন নার্স এসে তাকে থামায়,”আরে আরে। কোথায় যাচ্ছেন?”

আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁ/পাতে হাঁ/পাতে বলে,”এই মাত্র ঝিলবাড়ির এ/ক্সি/ডেন্ট স্পট থেকে একজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। ”

_আর ওয়ান ফাইভের আরোহী? অবস্থা খুবই খা/রাপ তার।

আলো আ/তংকিত মুখ নিয়ে তাকিয়ে থাকে নার্সের দিকে। নার্স বলে,”বাঁ/চবে কি না বলা যাচ্ছে না। ”

আলো কেঁ/পে ওঠে। নার্স আলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে বলে,”তার পরিবার থেকে এখনো কেউ আসেনি। আপনি কে? ভি/ক্টিম কি হয় আপনার?”

আলো বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে নার্সের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”স্বামী।”

চলমান…..