#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩৪
#Esrat_Ety
নার্সটি আলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মূহুর্ত পরে বলে ওঠে,”আপনি ভি/ক/টি/মের ওয়াইফ?”
আলো চ/ম/কে ওঠে! অবচেতন মনে এইমাত্র সে সামিনকে নিজের স্বামী বললো?
তার পুরো মুখ অ/স্ব/স্তি/তে ছেয়ে যায়। পেছন থেকে হঠাৎ একজন ডাক্তার বলে ওঠে,” কী হয়েছে লিপি?”
_স্যার এ/ক্সি/ডে/ন্টের ভি/ক/টি/মের ওয়াইফ বলছে।
ডাক্তার মুখের মাস্ক খুলে বলে আলোর দিকে তাকায়। আলো কাঁ/পা কাঁ/পা গলায় বলে,”ওনার এখন কি অবস্থা?”
ডাক্তার কিছু বলতে যাবে তখন একজন ওয়ার্ডবয় এসে বললো,”স্যার সুমন বলে লোকটার ওয়াইফ এসেছে।”
ডাক্তার ওয়ার্ডবয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”সুমন কে?”
_স্যার ঝিলবাড়ি এ/ক্সি/ডে/ন্টের ভিকটিম। মানিব্যাগে আইডি কার্ড ছিলো। কিছুক্ষণ আগে যাকে আনা হলো।
ডাক্তার মাথা ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,” আপনি কে তবে?”
আলো এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা ঢোক গি/লে নিয়ে বলে,”ভুল হয়ে গিয়েছে। দুঃখিত।”
কথাটি বলে ঘুরে করিডোরের উল্টো পথে হাঁটতে থাকে আলো। ক্লা/ন্ত ভঙ্গিতে অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটছে। হুট করে এক মহিলার সাথে ধা/ক্কা খে/য়ে নিচে পরে যায় আলো। মহিলা চেঁচিয়ে ওঠে,”কানা নাকি? চোখ কোথায় নিয়ে হাটো?”
আলো কোনো জবাব না দিয়ে আবারো উঠে হাঁটতে থাকে। তার নিজের প্রতি নিজেরই বেশ অবাক লাগছে । হচ্ছেটা কি আসলে! ফোনের ভাইব্রেশনের শব্দ হতেই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে। ওপাশ থেকে ইশিতা শুকনো গলায় বলে,”ফোন দিয়েছিলে ভাবী? ভাইয়ার সাথে বাইকে ছিলাম। দেখতে পাইনি।”
_হ্যা, ওই আর কি তোমার শরীরের খোজ নিতে। কেমন আছো তুমি? রিতু কেমন আছে?
_ভালো আছি আমরা।
ইশিতার কথা শুনে আলোর বেশ খারাপ লাগে। অনেক ভেঙে পরেছে মেয়েটা। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়। ইশিতার একটা ব্যাপার আলোর বেশ ভালো লাগে। তারা যখন কথা বলে তখন ইশিতা কখনোই সামিনের প্রসঙ্গ টে/নে আনে না।
***
“মানে? নিজে পদ/ত্যাগ করলে। এখন যখন পুনঃনির্বাচন হবে এখন আবার ভোটে দাঁড়াবে? স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে? কেন? দল তোমার কি ক্ষতি করেছে সামিন? ইমতিয়াজ ভাইয়ের মৃ/ত্যু/র শো/ক কাটিয়ে উঠতে পারোনি জানি, তাই বলে এমন উ/ন্মাদের মতো কেন আচরণ করছো? ”
কবির আলমগীর ধ/ম/কের সুরে বলে কথা গুলো। সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”একজনের আবদার পূরণ করতে।”
“হোয়াট! তুমি এসব কি বলছো? তোমাকে কি পাবনা শিফট করতে হবে? রাজনীতি ছেলে খে/লা? এমনিতেই তোমার হঠাৎ পদ/ত্যাগে পার্টি গ/রম হয়ে আছে। সবাই আমাকে চা/প দিচ্ছে তোমাকে বের করে দিতে। আমি সবাইকে মানিয়ে যাচ্ছি। তুমি আর আমাকে
ভু/গিও না সামিন। পদ/ত্যাগ পত্র ফেরত নাও। এখনো সময় আছে। ”
_না আংকেল। আপনি খন্দকারকে দিয়ে দিন নমিনেশন। আমি স্বতন্ত্র লড়তে চাই।
কবির আলমগীর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”লাভ কি হবে ? দল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে কি করতে পারবে তুমি? পদ/ত্যাগ যখন করেই ফেলেছো আর ল/ড়ো না। এইবার আতাউর আলম, শমশের ভুঁইয়া, খন্দকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিপন মজুমদার। এদের সাথে টেক্কা দিয়ে গো হারা হারবে তুমি। তামাশা কেনো চাইছো? ”
_হা/রতেই চাচ্ছি আংকেল।
_কেন?
_একজনের মুখে হাসি ফোটাতে। সে অনেকদিন হয় হাসে না।
_সামিন… তোমার আন্টি তোমার জন্য টেনশন করছে।
_আসবো, আন্টিকে দেখা দিয়ে যাবো ভোটের আগে। রাখছি।
ফোন কেটে দিয়ে সামিন দীর্ঘসময় চুপ করে বসে থাকে। ইশমাম অনবরত ফোন দিয়ে যাচ্ছে। এখন একটুও ইচ্ছে করছে না তার কথা বলতে। ফোনটা দূরে সরিয়ে রেখে বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে পরে।
***
“মানে? ইয়াসার আবার কেন ভোটে লড়বে? ও তো নিজেই পদত্যাগ করেছে।”
আলো শাড়িগুলো ভাজ করে আলমারিতে তুলে রেখে আতাউর আলমের দিকে তাকায়। তারপর বলে,” যোগ্যতা প্রমাণ করতে। তুমি বাচ্চাদের মতো কিছুক্ষণ পর পর আমাকে প্রশ্ন করবে না। যাও।”
আতাউর আলম মেয়ের ঘরে ঢোকে। নরম গলায় বলে,” মা। তুই ঠিক আছিস তো? এমন কেনো করছিস? ও তো ওর ভুলটা স্বীকার করেছে। এখন এসব বাদ দে। ”
আলো বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে যায়। রেহেনা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে। বিড়বিড় করে বলে, “এই মেয়ে দেখবে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবে একদিন। মেয়ে মানুষের এতো জে/দ ভালো? যথেষ্ট কি হয়নি? রা/গ তো আমাদের ও ছিলো। ও এখন ওর বাবা মায়ের থেকেও বেশি বুঝতে শুরু করেছে। ফল ভালো হবে না,দেখো।”
আলোর নাম্বার থেকে ফোন দেখে সামিন কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে স্ক্রিনের দিকে। তারপর ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই আলো বলে ওঠে,”রুলস নাম্বার এক….”
সামিন আলোকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”রুলস নাম্বার এক, আমি কোনো ক্যাম্পেইন করিনি আলো। কারো কাছে যাইনি। কাউকে টাকা দেইনি। প্রচারনার জন্য শুধু পোস্টার লাগানো হয়েছে।”
আলো চুপ করে থাকে, সামিন বলতে থাকে,”রুলস নাম্বার দুই। আমার দলের ছেলেরা আমাকে কোন সাহায্য করছে না। এবং,
রুলস নাম্বার তিন, আমি আগামী পরশু পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হচ্ছি না।”
আলো এখনো নিশ্চুপ। সামিন বলতে থাকে,”সবকিছু মনে আছে আমার আলো। তুমি নিশ্চিন্তে তোমার কাজ করো।”
কথাটা বলে সামিন ফোন কেটে দেয়। স্ক্রিনে আলোর ছবিটার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”কি অবুঝ তুমি আছিয়া। ”
সামিনের দলের ছেলেরা সবাই কপাল কুঁ/চ/কে আছে। সামিন ম্লান হেসে বলে, ” তোদের একটা সুখবর দিই। আমি দ্বিতীয় বিবাহ করতে যাচ্ছি। তোরা আমার জন্য মেয়ে দেখবি। ”
দলের সবাই সামিনের এমন র/সিকতায় সাড়া দেয় না। রাহাত
বি/রক্ত ভঙ্গিতে বলে, ” ভাই। সবকিছুর কিন্তু একটা লিমিট থাকে!”
সামিন শুকনো হাসি হেসে বলে,”তোরা তোদের ভাবীর উপর শুধু শুধু রা/গ করছিস। ও ওর যায়গায় ঠিক।”
_হ্যা। সে তার যায়গায় ঠিক, আপনিও আপনার যায়গায় ঠিক। এখন আমরাও আমাদের যায়গায় ঠিক থাকবো। জিন্দেগীতেও ওই মেয়েকে আমরা আপনার জীবনে আসতে দেবো না ভাই। ঐ মেয়ে আপনার মতো কাউকে ডিজার্ভই করে না। ওর জন্য হিট/লার বেস্ট।
আরাফ চেঁচিয়ে বলে ওঠে। সামিন তার দিকে তাকিয়ে বলে,”শান্ত হ। তো বিপি হাই হচ্ছে। ওই মেয়ে আমার জীবনে আসবেও না। আমি নির্বাচনে হারবো। তোরা চা/প নিস না।”
জামিল অসহায়ের মতো একবার সামিন, একবার দলের ছেলেদের দিকে তাকায়। সামিন জামিলের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,” তোকে কাজ দিতাম না। কিন্তু তোর ভাবীর দেওয়া রুলস মোতাবেক আমার দলের ছেলেরা আমার কোনো সাহায্য করতে পারবে না। তাই তোকে বলা, থানারোডের এ/তি/ম/খা/নায় চারটা খাসি পাঠানোর ব্যাবস্থা কর। আজ মাসুদের জন্মদিন। ওকে প্রমিজ করা, বিরিয়ানি খাওয়াবো । ”
***
“আংকেল আমি ফুয়াদ। আপনি হয়তোবা চেনেন।”
আতাউর আলম ফুয়াদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়। ফুয়াদ বলতে থাকে,” আলোর সাথে আমার একটু দরকার ছিলো। কাইন্ডলি একটু ডেকে দেবেন?”
আতাউর আলম কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অস্ফুট স্বরে বলে,”বসো তুমি। দিচ্ছি।”
পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে ঢুকে আলো অবাক হয়ে যায়। ফুয়াদ উঠিয়ে দাঁড়িয়ে বলে, “তোমার সাথে কথা বলতে এসেছি আলো।”
***
“তুই চিন্তা করিস না ছোট। কিছু হয়নি। কাল সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
ইশমাম কিছু মুহূর্ত চুপ থেকে বলে, ” তুমি অবুঝ শিশুদের মতো করছো ভাইয়া। ”
_জানি না কিসের মতো করছি তবে করা উচিত নয়কি? ও স্বস্তি পাচ্ছে।
ইশমাম ক্ষে/পে যায়। চেঁচিয়ে বলে ওঠে, “ভাইয়া তুমি ভুলে যেও না আমরাও তোমার লাইফে আছি। আমাদেরও ইম্পর্ট্যান্স দাও। তুমি ছাড়া কেউ নেই আমাদের।”
সামিন ম্লান হেসে বলে,”আগামীকালের পর থেকে সবটা নিজের হাতে শে/ষ করবো। তুই টেনশন করিস না।”
***
“আত্মগড়িমা আর আত্মসম্মান দুটোই আলাদা জিনিস আলো। তুমি গুলিয়ে ফেলছো।”
_আপনি কি এসব বলার জন্য এসেছেন ফুয়াদ ভাই? চা খাবেন না? বন্ধুর শশুরবাড়িতে এসেছেন। আগামীকালের পর থেকে তো আর সেই অধিকারে আসতে পারবেন না।
ফুয়াদ আলোর সেকথার জবাব না দিয়ে বলে,” সামিন তোমার জন্য উপযুক্ত কি না জানি না, কিন্তু তুমি সামিনের জন্য উপযুক্ত নও আলো, এইমাত্র বুঝতে পারলাম। সামিনকে প্র/তি/হিংসা পরায়ণ বলো না? আসল প্র/তি/হিংসা পরায়ণ তুমি। সামিনের চরিত্রে কিছু ত্রু/টি ছিলো, ও শুধরে নিয়েছে সেসব। কিন্তু তোমার চরিত্রে যেসব ত্রু/টি রয়েছে আলো, তুমি শোধরাতে পারবে না। কারন নিজের ত্রুটি বুজতে পারার মতো বোধশক্তি তোমাকে আল্লাহ দেয়ইনি। নিজের প্র/তি/শোধের ষোলো আনাই উশুল করে ছারলে আমার বন্ধুর থেকে। তাতেও তোমার মন ভরলো না, ওকে কথার মা/র/প্যাঁ/চে ফেলে ভো/গাচ্ছো এখন। তিনদিন হলো নিজেকে বাড়িতে ব/ন্দি করে রেখেছে শুধু তোমার ফা/ল/তু আবদার রাখতে।”
আলো চুপচাপ ফুয়াদের কথা শোনে। ফুয়াদের কথার জবাব সে দেয় না। ফুয়াদ বলতে থাকে,” এনি ওয়ে, যা যা চাইছো সব হবে। আমিও তৈরি। যেমন দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের বিয়েটা দিয়েছিলাম। তেমন দাঁড়িয়ে থেকে ডি/ভো/র্স করিয়ে দেবো। আমার বন্ধুর জন্য একটা খা/রা/প মেয়ে এনে দেবো। তোমার মতো ভালো মেয়ের প্রয়োজন নেই আমার বন্ধুর লাইফে।”
কথাটা বলে ফুয়াদ উঠে চলে যায়। আলো চুপচাপ বসেই থাকে।
***
পদ/ত্যাগ করে সামিনের পুনরায় ভোটে দাঁড়ানোর থেকেও গোটা শহরের কাছে সবথেকে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে জামাই শশুর উভয় উভয়ের প্রতিদ্বন্দ্বী। এমন ঘটনা বিরল। সবাই কৌতুহলী পুরো ব্যাপারটায়।
ভোটের দিন সকাল থেকেই শহরে টান টান উ/ত্তে/জনা বিরাজ করছে।
মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে ছয় প্রার্থীর পোস্টার লাগানো।
আতাউর আলম ভোটকেন্দ্র থেকে ফিরেই অ/সু/স্থ হয়ে পরেছে কিছুটা। অপা/রেশনের পরে এতোটা চাপ এই প্রথম নিয়ে ফেলেছে। তাই অস্থির লাগছে বেশ। আলো আতাউর আলমের সাথে গিয়ে ভোট দিয়ে এইমাত্র ফিরলো। তার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। চুপচাপ অপেক্ষা করে আছে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার, অপেক্ষা করছে ফলাফলের।
“আব্বা ইয়াসার মনে হয় আমাদের সাথে কানামাছি খেলা খেলছে। নিজে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়ে আবার নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ল/ড়/ছে। ও কি পাগল হয়ে গিয়েছে আব্বা?”
সৈকত কথাটি বলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। শমশের ভুঁইয়া বলে,” বুঝতে পারছি না। তবে এইবার ওর জেতার চান্স নেই সেটা লিখে নে। মানুষ নিজের পায়ে নিজে কু/ড়া/ল বসায়। এই পা/গল তো বুল/ডোজার বসিয়ে দিলো। ”
সাগর বলে ওঠে,” সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারছি না। ওর কনফিডেন্স দেখ। দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছে।”
শমশের ভুঁইয়া অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,”চিন্তা করিস না। এইবার আমরাই জিতবো।”
বরাবরের মতো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানিয়েছে জনগণ। লোকাল সাংবাদিকেরা তার উপরে একটি ডকুমেন্টরি তৈরি করে লোকাল নিউজ চ্যানেল গুলোতে দেখাচ্ছে।
শান্তিনীড়ের নিচতলার লিভিং রুমের মেঝেতে সবাই আসন পেতে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর ফলাফল প্রকাশ হবে। সবার মধ্যে টান টান উ/ত্তে/জ/না। সামিন ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে চুপচাপ, যেন ফলাফল নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। সে আগেই জানতো ফলাফল কি হবে।
টিভিতে কিছুক্ষণ পর ফলাফলের চার্ট প্রকাশ করা হয়। নব্বই হাজার ভোট পেয়ে সামিন প্রথম বারের মতো কোনো দলীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই দ্বিতীয় বারের মতো প্রথম স্থানে রয়েছে। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থী ইউনুস খন্দকার, সে পেয়েছে পঞ্চাশ হাজার ভোট, এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে আতাউর আলম, পেয়েছে আটচল্লিশ হাজার ভোট। চতুর্থ স্থানে শমশের ভুঁইয়া ছত্রিশ হাজার এবং পঞ্চম স্থানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রিপন মজুমদার পয়ত্রিশ হাজার ভোট পেয়েছে।
লিভিং রুমে থাকা ছেলেরা কিছুক্ষণ নিজেদের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বিকট চিৎকার দিয়ে ওঠে। সামিন টিভির স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। সংবাদ পাঠকের মুখ থেকে আবারো তার জয়ের খবর শুনছে সে। নিজের জয়ে নিজেই কিছুটা অবাক সামিন। কিন্তু যেখানে তার খুশি হবার কথা সেখানে সে খুশি হতে পারছে না। কোনো এক অজানা উৎ/কণ্ঠা ভীর করেছে তার মনে। ওদিকে আলো কি করছে? মেনে নিতে পেরেছে তো এই হার? যে ভ/য়ং/কর সেন/সিটিভ একটা মেয়ে কিছু উল্টো পাল্টা করে না বসে আবার।
সবুজ সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,” যান ভাই। এখন আবার ভাবীকে তুলে আনেন। খুব বা/জি ধরেছিলো , এখন বুঝুক। ”
সামিন কিছুক্ষণ সবুজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর উঠে দাঁড়ায়। দলের ছেলেরাও সামিনের সাথে সাথে উঠে দাঁড়ায়।
সামিন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,” তোরা কোথায় যাচ্ছিস? ”
_আপনার সাথে ভাই।
_প্রয়োজন নেই। আমি একা যাবো।
***
টিভির স্ক্রিনের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে আলো। আতাউর আলম স্বাভাবিক। সবসময় ঠান্ডা মাথার লোক সে। এমন পরিস্থিতির জন্য সে মানসিকভাবে তৈরিই ছিলো যখন শুনেছে ইয়াসার আবারো ভোটে দাঁড়াবে। একজন জিতে যাওয়া লোক পুনরায় জিতবে এটাই তো স্বাভাবিক। মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে দাঁড়িয়েছিল ইলেকশনে। তাই তার কোনো ভাবান্তর হয়নি। এই পরিস্থিতিতে নিজের অসম্মান নয় বরং আলোর কথা ভাবছে সে। তার মেয়েকে সে চেনে। এতো কিছু সহজে গ্রহণ করার মেয়ে আলো নয়।
কিন্তু আলো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কিছুক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে দাঁড়ায়। আতাউর আলমের ওষুধ এনে দেয় তাকে। আতাউর আলম ওষুধ নিয়ে মৃদু স্বরে বলে,” নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে মা। আমার কোনো আক্ষেপ নেই। মাথা ঠান্ডা কর। ”
আলো বাবার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,” মাথা
গ/র/ম হয়নি আমার আব্বু। ”
তারপর ধীরপায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
কলিং বেলের শব্দ হয়। রেহেনা গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সামিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে ওঠে,”আসতে পারি?”
রেহেনা এদিক ওদিক তাকিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। দ্রুতপায়ে হেটে সামিন আলোর ঘরের দিকে যায়। আলোর ঘরের দরজার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। সামিন উচ্চশব্দে চেঁচিয়ে ওঠে,”আলো দরজা খুলে দাও।”
কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে সামিন দরজায় ধাক্কা দিতে যাবে অমনি খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়।
সামিন আলোকে কয়েক পলক দেখে ঘরে ঢুকে দরজার সিটকিনি তুলে দেয়।
আলো নি/স্তেজ কন্ঠে বলে,”অভিনন্দন!”
সামিন ঘুরে আলোর দিকে তাকায়।
আলো একটু থেমে আবারও বলে,”অভিনন্দন আপনাকে জেতার জন্য, ইলেকশন এবং বা/জি দুটোই।”
সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। আলো নিচু স্বরে বলতে থাকে,”বসার ঘরে গিয়ে বসুন। ব্যাগ গোছানো হয়ে গিয়েছে। আমি শাড়িটা পাল্টে আসছি।”
_কোথায় যাবে তুমি?
আলো মাথা তুলে সামিনের দিকে তাকায়। তারপর বলে,”আপনার সাথে। সংসার করতে। বা/জিতে জিতেছেন আপনি।”
সামিন ম্লান হাসে। তারপর নিচু স্বরে বলে,”কোথাও যেতে হবে না তোমাকে আলো। ”
আলো সামিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ উদাস দুটি চোখ নিয়ে তাকিয়ে থেকে তে/জী কন্ঠে বলে ওঠে,” আপনার দয়া দেখাতে হবে না। আমি ভীতু মেয়ে নই , আমি যাবো, আমি আমার কথা রাখবো। করবো আমি সংসার আপনার সাথে। ”
কথাটি বলে আলো আলমারির কাছটায় যেতে নেয়, মুহুর্তেই হাতে সামিনের হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকায়। ততক্ষণে সামিন আলোকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। আলো সামিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন ম্লান হেসে আলোর কপাল থেকে অগোছালো চুল কানে গুজে দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“অবুঝ আছিয়া। আমার ভালোবাসাকে বরাবরের মতো ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছো তুমি। দয়া আমি তোমাকে করিনি। কখনোই করিনি। এটাও দয়া না। যেটুকু আমি তোমাকে দিলাম তার নাম ভালোবাসা। ”
আলো চুপ করে সামিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে, “তোমাকে কখন ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি জানি না। কিন্তু যখন তুমি সা/পের ভ/য়ে আমাকে এসে আ/ক/রে ধরলে। তখন থেকে বুঝতে পেরেছি আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তখন থেকে প্রতিটা মূহুর্ত আমি যা তোমাকে দিয়েছি সেটা আমার ভালোবাসা। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড উলটে গেলেও ঐ অনুভূতি ভালোবাসাই থাকবে, তুমি যতই ভুল ব্যাখ্যা দাও না কেন। তোমার মতো ক্ষুদ্র আছিয়ার অপব্যাখ্যায় আমার ভালোবাসা বদলে যাবে না।”
আলো নিশ্চুপ। সামিন বলতে থাকে, ” তুমি আমার না পাওয়া একটা প্রশান্তি। তোমায় আমি আমার মনে আটকে রাখবো, কাগজে কলমে না পারি। যা যা আবদার করেছো, পূরন করেছি। বা/জিতে জিতেছি। শর্ত হিসেবে তুমি আমার কথা শুনবে। আর আমার কথা হচ্ছে, তুমি ভালো থাকো। তোমাকে ভালোবাসার উপহার স্বরূপ দু এক দিনে ডি/ভো/র্স লেটার সাইন করে পাঠিয়ে দেবো। সাইন করে বাঁধিয়ে ঐ দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রাখবে। আমি চাই তুমি আমার ভালোবাসা প্রতিদিন দেখো। ”
আলো কিছু বলতে যাবে, সামিন আলোর মুখ চেপে ধরে, তারপর বলে,”চুপ। আমি এতো এতো তোমার হৃদয় প্রশান্ত করা কথা বলে যাচ্ছি। তোমার কান কি শান্তি পাচ্ছে না? বলো? কেন এখন আমাকে য/ন্ত্র/না দিতে কথা বলতে চাইছো। কিচ্ছু শুনতে চাই না আমি তোমার থেকে, আমি পারবো না, আমার ক্ষমতা নেই। উল্টোপাল্টা কথা বলে আর আমাকে য/ন্ত্র/না দিও না আছিয়া।”
কয়েক মূহুর্ত পরে আলোর মুখ থেকে সামিন হাত সরিয়ে নিয়ে আলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর আলোর গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে তার কপালে লম্বা সময় ধরে একটা চু/মু খায়। আলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সামিন আবারো আলোর চোখে চোখ রেখে মৃদু স্বরে বলতে থাকে, ” সব কিছু অনেক বেশি সুন্দর হতে পারতো আছিয়া, অনেক বেশি রঙিন। কিন্তু তুমি ব/র্ণা/ন্ধ। রঙের গুরুত্ব তুমি বুঝতেই চাচ্ছো না। তোমার নারী স্বত্তার অনূভুতিকে সম্মান জানাতে আমি আমার জীবনের সবথেকে বড় ত্যা/গ স্বীকার করলাম। নয়তো সামিনের জিনিস সামিন ইহ/জনমে ছাড়ে না। ”
কথাটা বলে সামিন আলোকে ছেড়ে দেয়। আলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সামিনের দিকে তাকিয়ে। সামিন আলোর ঘরের দরজা খুলে চলে যায়। দীর্ঘসময় আলো নিজের স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে বিছানায় ধপ করে বসে পরে।
চলমান……
#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩৫
#Esrat_Ety
” আপনার স্ত্রীকে আপনি ডি/ভো/র্স দেবেন? ”
কাজী সামিনের দিকে তাকিয়ে আছে । সামিন একটা চেয়ার টে/নে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে, ” প্রথমত আমাকে “আপনি” করে বলবেন না। আমি আপনার ছেলের বয়সী। ”
কাজী বিনয়ী হয়ে বলে,” তুমি কেন ওকে তা/লা/ক দিতে চাচ্ছো? ”
_জরুরি তা/লা/ক দেওয়া টা। আপনি কাগজ পত্র রে/ডি করবেন। কত সময় লাগবে? বেশি দেরী হবে?
কাজীর হতভম্ব ভাব কাটছে না। সে বলে, কিছুক্ষণ আগে তুমি পুনরায় মেয়র নির্বা/চিত হলে। আর তুমি এখন এসেছো বৌকে
তা/লা/ক দিতে? কেনো? কি করেছে তোমার বৌ?
_ও কিছু করেনি। আমি করেছি।
_কি করেছো?
_ওকে বিয়ে করেছি।
কাজী সামিনকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। সেই সামিন আর এই সামিনের মধ্যে বি/স্তর ফারাক। এই সামিন ইয়াসারের চোখে সেদিন হিং/স্র/তা দেখেছিলো। আজ দেখছে উদাসীন দুটি চোখ।
সামিন বলে ওঠে, ” বেশি দেরী হবে আংকেল? ”
কাজী মাথা নাড়িয়ে বলে,”দু দিন লাগবে। ”
সামিন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর কাজীর টেবিলের ওপরে একটা ঢেকে রাখা পানির গ্লাসে চোখ যায় তার। কাজীর দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় বলে,”পানি টা কি ভালো? আমি খেতে পারি?”
কাজী মাথা নাড়িয়ে গ্লাসটা সামিনের দিকে এগিয়ে দেয়। সামিন ঢকঢক করে গ্লাসটা খালি করে উঠে দাঁড়ায়। কাজীর দিকে তাকিয়ে নিস্তেজ কন্ঠে বলে,
“কাগজ পত্র রেডি রাখবেন। চেয়েছিলাম মিউ/চুয়াল ডি/ভো/র্স দিতে। কিন্তু অত সময় অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে না। ওর কষ্ট হবে।”
কথাটা বলে সামিন ধীরপায়ে হেঁটে কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে আসে । কাজী ফ্যাল/ফ্যাল করে সামিন ইয়াসারের যাওয়া দেখে।
বসার ঘরে রিতু সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে ছিলো। সামিনকে দেখে তড়ি/ঘড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে তার কাছে আসে। সামিনের দৃষ্টি দেখে সে থ/ম/কে যায়। উৎ/কণ্ঠা নিয়ে বলে,”কি হয়েছে ভাইয়া? শরীর খা/রা/প আপনার? চোখ এমন লাগছে কেনো?”
_কেমন লাগছে?
_সারাদিনে কিচ্ছু খাননি। আমি আপনার জন্য বসে আছি। আসুন খাবেন।
সামিন ম্লান হেসে রিতুর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে সিঁড়ির দিকে যেতে যেতে বলে,”খেয়ে নাও তুমি। চুনু কাকার দোকান থেকে একটা ভেজি/টেবল রো/ল খেয়েছি আমি।”
রিতু থম/থমে মুখ নিয়ে সামিনের যাওয়া দেখে। ঐ শুভ্র পাঞ্জাবি গায়ে, ব/লি/ষ্ঠ শরীরের মানুষটার জন্য তার ভীষণ ক/ষ্ট হচ্ছে। ভীষণ।
***
উত্তপ্ত দুপুর। গরমে ঘে/মে নেয়ে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওড়না দিয়ে মুখ মুছে এদিকে ওদিকে তাকায় আলো। হিয়া বলে,”চল রিকশার জন্য দাড়িয়ে থেকে লাভ নেই। আজ বো/র্ড পরিক্ষা,সবাই হাই স্কুলের সামনে গিয়ে বসে আছে বোধহয়। মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা। চল হেঁটেই যাই।”
আলো ক্লান্ত চোখে হিয়ার দিকে তাকিয়ে নি/ষ্প্রা/ণ গলায় বলে,”চল।”
দু’জনে হাঁটতে থাকে। কিছু পথ যেতেই নীরবতা ভেঙে হিয়া বলে ওঠে,”শেষ পর্যন্ত তোর সিদ্ধান্তই থাকলো। কি বলিস।”
আলো চুপ করে থাকে। হিয়া বলে ওঠে,”মা সবসময় আমাকে বলতো, “একটু আলোর মতো হতে পারিস না?” । তখন আমিও ভাবতাম, ইশশশ আমি যদি তোর মতো হতে পারতাম। কিন্তু এখন আমি মোটেও তোর মতো হতে চাই না। ভ/য় হয় আমার তোকে দেখলে। ”
আলো এখনো নিশ্চুপ। হিয়া আলোর নীরবতা দেখে তার দিকে তাকায়। কলেজের গেইটের ডানপাশে সৈকত নৌশিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নৌশিন কোনো নড়া/চড়া করছে না কিন্তু তার চোখে মুখে ভ/য়ে/র ছা/প স্পষ্ট। আলো সেদিকে তাকিয়ে আছে। হিয়া পাশ থেকে বলে,”এই এই আলো? তুই কি এখন আবার ঝামেলা করবি? দেখ, ওরটা ও বুঝে নেবে । তখন এতো করে নি/ষে/ধ করলাম প্রেমের প্র/স্তা/ব গ্রহণ না করতে। শুনলো না। আমার আর ভালো লাগছে না তোকে ঝামেলায় পরতে দেখতে। চল গেইটের ভেতর চল।”
হিয়া আলোকে তাগাদা দেয়। সৈকতের সাথে দিঘির পাড়ের ঘটনার কথা মনে পরলেই তার পুরো শরীর এখনো অ/সা/ড় হয়ে যাচ্ছে। ঐদিন কেউ না পৌছালে তার অবস্থা খুব খা/রা/প হতে পারতো। সে ইহ/জনমে সৈকতের চোখের সামনে পরতে চায় না।
“কিরে বিয়ে ঠিক হয়েছে নাকি তোর? তা তোর হবু স্বামীকে বলে দেবো? আমি তোর কোথায় কোথায় ছু/য়ে/ছি? বলে দেবো তোর কোথায় কোথায় তিল আছে?”
জ/রানো কিন্তু তে/জী কন্ঠে নৌশিনের হাতের ক/ব্জি চে/পে ধরে সৈকত বলতে থাকে। নৌশিনের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরা দু ফোঁ/টা তরল দেখে বোঝার উপায় নেই সে ভেতরে ভেতরে গ/লা/কা/টা মুরগির মতো ত/র/পা/চ্ছে। আবেগের বশে একটা ভুলের জন্য তার জীবনের চরম প্রতিদান দিতে হচ্ছে, হবে। তার নি/স্তার নেই এই
জা/নো/য়া/র/টা/র থেকে। নৌশিন চেচাতেও পারছে না। ঝা/প/সা চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কানের কাছে সৈকতের বলা কথাটা প্রতি/ধ্বনিত হচ্ছে, “বলে দেবো নৌশিন? বলে দেবো?”
আলো হিয়ার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে সৈকতের দিকে এগিয়ে যায়। গিয়ে সৈকতের হাত থেকে নৌশিনের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নৌশিনকে আগলে নেয়। তারপর নৌশিনকে ধম/কের সুরে বলে,”চেঁ/চা/তে পারিস না স্টু/পিড?”
নৌশিন ভ/য়ে গুটিয়ে গিয়েছে। সৈকত একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”তুই আবার এসেছিস। তোর সমস্যা কি?”
_এখান থেকে যা।
ঠান্ডা গলায় বলে আলো। সৈকত বলে ওঠে,”স্বামীর মতো বেশ সাহস না তোর? ”
_আমি এক দুই তিন গুনবো। এখান থেকে যাবি সৈকত। নয়তো আজ ভ/য়া/ব/হ কিছু হবে।
_তাই নাকি? কি হবে? দেখা?
নৌশিন খ/প করে আলোর হাত ধরে বলে,”ও নে/শা করে আছে আলো।”
আলো নৌশিনের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে সৈকতের দিকে কিছু মুহূর্ত চুপ করে তাকিয়ে থেকে পায়ের জুতা খুলে মা/র/তে শুরু করে।
মুহুর্তেই ভীড় জমে যায় কলেজের সামনের রাস্তাটায়। কিছু ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েরাও এসে আলোর সাথে সমান তালে পে/টা/তে থাকে সৈকতকে।
নৌশিন একটু সাহস পায়। তীব্র ঘৃ/ণা নিয়ে চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”পে/টা। আ/রো পেটা।”
সৈকতের কানে নৌশিনের সে চিৎ/কার পৌঁছায়। হিং/স্র হা/য়ে/না/র মতো নৌশিনের দিকে তাকিয়ে থাকে সৈকত। নৌশিনের চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পরতে থাকে।
অবস্থা বেগতিক দেখে হিয়া এসে আলোকে পেছন থেকে জা/প/টে ধরে সরিয়ে নেয়। বেশ কিছু লোক এসে পরিস্থিতি সামলাতে চেষ্টা করে,তবে উচ্চ/বাচ্য বলে না সৈকতকে। সবাই খুব ভ/য় পায় নতুন এই ত্রা/স/কে। সৈকত গা ঝাড়া দিয়ে নৌশিনের দিকে তী/ক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে এক পলক তাকিয়ে থেকে বাইক স্টার্ট করে চলে যায়।
***
“ভাইজান!”
সামিন কিছু কাগজপত্র দেখছিলো। সিতারার ডাকে তার দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”হু।”
_ঘর গোছাতে এসেছিলাম।
_অগোছালো তো কিছু নেই আমার জীবন ছাড়া।
ঠান্ডা গলায় সামিন কথাটি বলে নিজেই বেশ অবাক হয়। এসব কি ধরনের কথা বলছে সে সিতারাকে!
সিতারা মৃদু স্বরে বলে,”ঝুল ঝা/ড়/তে পাঠিয়েছে মেজো ভাবী।”
“ঝা/ড় তাহলে।”
সামিন আবারো কাগজে মন দেয়। সিতারা ঘর গোছাতে গোছাতে সামিনের ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে অনেকটা সং/কোচ নিয়ে নিচু স্বরে বলে,”এগুলো এখান থেকে সরিয়ে ফেলবো ভাইজান?”
“কোনগুলো?”
সামিন না তাকিয়েই জিগ্যেস করে। সিতারা আগের থেকেও নিচু স্বরে বলে ওঠে,”বড় ভাবীর সাজার জিনিস।”
সামিন মাথা তুলে তাকায়। তার ড্রেসিং টেবিলের সামনে এখনো আছিয়ার অব্যবহৃত প্রসা/ধনী অযত্নে পরে আছে। যা কখনো ঐ মেয়েটা ছুঁ/য়ে/ও দেখেনি।
সামিন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”না। ওগুলো ওখানে থাকুক। দেখতে ভালো লাগছে।”
সিতারা আর কিছু বলে না। ঘর পরিষ্কার করে দিয়ে চলে যায়। সামিন আবারো কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকায়। অপলক তাকিয়েই থাকে সেদিকে।
***
“কু/কু/র ভাগ্য” বলে যদি কিছু থাকে তাহলে আলোর ক্ষেত্রে শব্দটা প্রযোজ্য। তার কু/কু/রে ভীষণ ভ/য়। ক্লাস ফাইভে একবার
কা/ম/ড়ে আলোকে বে/হুঁ/শ বানিয়েছিলো তখন থেকে এই প্রানীটাকে জ/মের মতো ভ/য় পায় সে। কিন্তু রাস্তাঘাটে এই প্রানীটার সাথেই আলোর হুট হাট দেখা হয়ে যায়।
আলো একটা ঢোক গি/লে এদিক ওদিক তাকায়। কিছুক্ষণ আগে হিয়া সাথে ছিলো। তখন আসতে পারলো না অ/স/ভ্য গুলো। এখন আলোর সাথে কেউ নেই। আলোর বুকটা ধর/ফরিয়ে উঠছে। দুই পায়ের কু/কু/র গুলোকে তো জুতা/পে/টা করে সামলানো যায় , চার পায়ের কুকুর গুলোকে সে কিভাবে সামলাবে? মনে হচ্ছে এক্ষুনি কা/ম/ড়ে দেবে। ঝাঁ/পি/য়ে পরে ছিন্ন/ভিন্ন করে দেবে আলোকে। এক পা সামনে এগোতেই একটা কুকুর ঘেউ/ঘেউ করে ওঠে।
আ/তং/কে আলো জমে যায়। ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আরো দুটো কু/কু/র এসে বাকি তিনটার সাথে যোগ দিয়েছে। সবকটা ঘেউ/ঘেউ করতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে এরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে কে আগে প্রথম কা/ম/ড় বসাবে। আলো এক লাফে পেছনে আগায়। আশে পাশে ত্রিসীমানায় কেউ নেই। সব লোক কোথায়! পাশের মসজিদে যোহরের আজান দিয়ে দিয়েছে। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে সে ঘুরে দৌড়াতে শুরু করে এদিক ওদিক না তাকিয়ে। কু/কু/রে/র কামড় খেয়ে ম/র/তে সে ইচ্ছুক নয়। প্রান হাতে নিয়ে দৌড়াতে গিয়ে হুট করে তার পায়ের সাথে একটা ভাঙ্গা ই/টের ধা/ক্কা লেগে যায়। ঘটনার আক/স্মিক/তায় আলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাকে তী/ব্র পি/চের গন্ধ অনুভব করে। রোদের তাপে রাস্তার পিচ গ/লে গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে। নাকের কাছে তী/ব্র য/ন্ত্র/না অনুভূত হয়। ধীরে ধীরে মাথা তুলে ওপরে তাকাতেই দেখে একটা ব/লি/ষ্ঠ হাত তার দিকে কেউ বাড়িয়ে ধরে রেখেছে। আলোর হাটুর কাছটায় য/ন্ত্র/না হচ্ছে। ছি/লে গেলে যেমন হয়। ধীরে ধীরে হাতের মালিককে দেখবে বলে সে মাথা তুলে তাকাতেই থ/ম/কে যায়।
অসহায়ের মত এদিক ওদিক তাকিয়ে কি মনে করে হু/ট করেই সামিনের হাতে হাত রাখে। সামিন গ/ম্ভী/র মুখে টেনে তোলে আলোকে। নাকে বা/রি খে/য়ে নাকের ডান পাশের ছিদ্র থেকে র/ক্ত ঝ/র/ছে। হাঁটুর কাছটা ছিলে গিয়েছে, নতুন চুড়িদার টা রক্ষা পায়নি। লজ্জায় আলো গুটিয়ে যায়। প্রকৃতি তাকে ক্ষণে ক্ষণে মুখ থু/ব/ড়ে পরার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছে।
সামিন আলোর দিকে না তাকিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কু/কু/র গুলোর দিকে এগিয়ে যায় দুকদম। কু/কু/র গুলো উল্টোপথে দৌ/ড়ে যায়। আলো ব্যা/থা/তু/র শরীরে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সামিন যেন আলোর মনের কথা বুঝে যায়।
নিচু স্বরে বলে ওঠে,” ওরা আমার স্বজাতি তো। আমাকে খুব মানে। ”
আলো মাথা তুলে সামিনের দিকে তাকায়। সামিন মাথা ঘুরিয়ে আলোর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। আলো চোখ নামিয়ে নেয়।
সামিন তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”তোমাকে ফলো করছিলাম না। আমাকে অপ/বাদ দিও না। এখানে কাজ ছিলো।”
_কাজ? মহিলা কলেজের সামনে?
হুট করে আলো নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করে বসে। সামিন ঠান্ডা গলায় বলে,”না, মহিলা কলেজের পাশে। কাজী অফিসে। ”
আলো পুনরায় মাথা তুলে তাকায়। কৌতুহলী হয়ে না চাইতেও বলে ওঠে,”কাজী অফিসে কী? বিয়ে করছেন নাকি!”
সামিন একপলক আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”আমাদের ডি/ভো/র্সের কাগজ পত্র গোছানো হয়েছে কিনা খোজ নিতে এসেছি। কাজীর নাতী হস/পি/টালে। আজ হবে না। তোমার দূ/র্ভা/গ্য।”
আলো সামিনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। সামিন আলোর দৃষ্টি উ/পে/ক্ষা করে ধীরপায়ে এগিয়ে যায়।
হঠাৎ করে আলোর ভীষণ রা/গ হতে শুরু করে। এতটা আ/ঘা/ত পেয়েছে আলো, লোকটা ভদ্রতা করেও একবার জিজ্ঞেস করলো না আলোর ব্যা/থা করছে কিনা! আগে তো আলো না চাইতেও ব্যা/থা পেলে কোলে নিয়ে দৌড়া/দৌড়ি করতো! খুব রা/গ হচ্ছে। কেনো হচ্ছে তার উত্তর আলোর জানা নেই।
***
“পে/ই/ন কি/লা/র নিয়েছিস?”
রেহেনা এসে আলোর মাথার কাছে বসে। আলো চোখ মেলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”নিয়েছি। জ্ব/র আসছে সম্ভবত।”
রেহেনা কিছুক্ষণ মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,” একটাবার ভেবে দেখবি ম/না? শেষ বারের মতো?”
রেহেনা যখন আলোর কাছে বিশেষ কোনো আবদার করতে চায় তখন ম/না বলে সম্বোধন করে।
আলো নিশ্চুপ হয়ে থাকে। রেহেনা বলতে থাকে,”তুই রে/গে যাস না মা। অশিক্ষিত বাঙালি মায়ের মন তো, তাই মানছে না।”
কথাটা বলে রেহেনা শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের পানি মো/ছে। তারপর বলে ওঠে,”কোনো মানুষ কি আবেগ,রা/গ,জে/দ, প্র/তি/হিং/সা প/রা/য়/ণ/তা, ভুলের উর্ধ্বে? তুই আমাকে দেখা এমন একটা মানুষ?”
আলো চুপ করে মায়ের কথা শুনতে থাকে। রেহেনা আলোর নি/র্জী/ব/তা দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। দরজার বাইরে আতাউর আলম দাঁড়িয়ে ছিলো। রেহেনা নিজের স্বামীকে দেখে কয়েক মুহূর্ত দাঁড়ায়। তারপর চলে যায়।
***
” আজকের ভেলিভারি দিয়ে আর কাজ নেই। আমি অ/র্ডা/র নেইনি। আমার সে/কে/ন্ড ইন/কো/র্স এ/ক্সা/ম কাল। আজ ইউ/নিভা/র্সিটি যাচ্ছি। তোমরাও চলে যাও। ”
সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আলো নি/স্তেজ কন্ঠে বলে সবাইকে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে হিয়া আলোকে ডাকতে থাকে,আলো ঘুরে তাকায়। হিয়া বলে,”আজ মশলা ভেলি/ভারি দেওয়ার ছিলো। তুই আচার দিয়েছিস কেনো? সব খেয়ে বসে আছিস?”
_তাই তো। ডেলিভারি বয় চলে গিয়েছে? দাড়া আমি চে/ঞ্জ করে দিচ্ছি।
_তুমি থাকো,আমরা যাচ্ছি। শরীর ভালো নেই তোমার।
বিউটি বলে ওঠে। সবাই কাজে ব্য/স্ত হয়ে পরে। হিয়া এগিয়ে আলোর সামনে এসে দাঁড়ায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আলোকে দেখে বলে ওঠে,”কি ব্যাপার বল তো। কি হয়েছে তোর?”
_কি হবে।
আমতা আমতা করে আলো। হিয়া বলে ওঠে,”দুদিন ধরে বেশ খেয়াল করছি অন্য/মনষ্ক থাকিস তুই। কেমন কেমন করে কথা বলিস। আংকেল হে/রে/ছে বলে?
আলো মাথা নাড়িয়ে বলে,”আব্বুর হার নিয়ে আমার আ/ক্ষে/প নেই। সে তো তৃতীয় হয়েছে।”
হিয়া অলস ভঙ্গিতে একটা চেয়ার দখল করে টেনে বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”তোকে একটা সি/ক্রে/ট বলি? আমি আতাউর আংকেলকে ভোট দিইনি। ইয়াসার ভাইয়াকে দিয়েছি।”
আলো হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
হিয়া বলতে থাকে,”আ’ম প্রি/টি শিওর আমাদের ক্লাসের সব মেয়ে ইয়াসার ভাইয়াকে ভোট দিয়েছে। ইন/ফ্যা/ক্ট তরুণের দল ইয়াসার ভাইয়াকেই বেছে নিয়েছে। আর বাকিরা তো সব বুড়ো লোক।”
একটু থেমে হিয়া হাই তুলতে তুলতে বলে,”আমাদের ক্লাসের অধিকাংশ মেয়ের ক্রা/শ তোর স্বামী। তারা কি বলাবলি করে জানিস, বলে ইয়াসার ভাইয়া তাদের তুলে নিয়ে বিয়ে করলে তাদের জীবন ধ/ন্য হয়ে যেত।”
কথাটা বলে হিয়া উচ্চ/শব্দে হাসতে থাকে। তারপর বলে,”ইতিহাসে তোর কে/স টাই বোধ হয় প্রথম যেখানে ভি/ক/টি/মের প্রতি বিরক্তি এবং অপ/রাধীর প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছি আমরা।”
আলো হিয়ার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচু হয়ে আচারের বৈয়ম গুলো সরিয়ে রাখে। হিয়া বকবক করতে থাকে। একটু পরে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”চুপ করে আছিস কেনো?”
_কি বলবো?
_অন্যসময় হলে তো আমাকে কাঁ/চা খে/য়ে ফেলতি, আজ ইয়াসার ভাইয়ার নামে এতো এতো কথা বলছি আর তুই চুপচাপ শুনছিস? আমাকে ঝা/ড়ি মা/র/ছি/স না কেন? । ব্যাপার কি বলতো? প্রেমে টেমে পড়লি নাকি আমার দুলাভাইয়ের? দেখ প্রেমে পরলে আমাকে কানে কানে বলে দে সময় থাকতে……
“আপু তোমার জন্য নো/টিশ এসেছে।”
আলো চ/ম/কে উঠে দাঁড়ায় আয়াতের কথা শুনে। আয়াত দাঁড়িয়ে আছে। আলোর অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। সে কাঁ/পা কাঁ/পা গলায় বলে,”কাজী অফিস থেকে?”
আয়াত অবাক হয়ে বলে,”কাজী অফিস থেকে নো/টিশ আসবে কেন? ব্যাং/ক থেকে এসেছে। তোমার ডি/পো /জি/টে/র ।”
আলো একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছা/ড়ে। হিয়া আলোর অ/স্বা/ভাবিক আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
***
“মা/স্ক পর। একটু ভুল হলে আজ গন/পি/টু/নি/তে ম/র/বি।”
ফিসফিসিয়ে রবিকে বলে সাদিক। রবি বিরক্ত ভঙ্গিতে মা/স্ক পরে নেয়। রোদের তাপে কপাল থেকে টপটপ করে ঘাম বেয়ে নামছে। মে/জা/জ যথেষ্ট খা/রা/প। মুখে চ কা/রন্ত শব্দ করে বলে ওঠে,”কি বলতো, এতো দেরী করছে কেন? আসেনি নাকি?”
_না এসেছে, ভাই নিজে ইন/ফর/মে/শন দিয়েছে।
সাদিকের কথা শেষ হলে রবি এদিক ওদিক তাকায়। কলেজের গেইটের বাইরে এতো গুলো পাখির মধ্যে তাদের টা/র্গে/ট/কে খুজে বের করা ভীষণ ক/ষ্ট সাধ্য ব্যাপার। হাতের ছোটো বো/ত/লটার দিকে একপলক তাকিয়ে বো/ত/লটা আবারো আ/ড়াল করে ফেলে সে। তারপর মোবাইলে একটা হি/ন্দি গান ছেড়ে তী/ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে গেইটের দিকে তাকিয়ে থাকে।
“এই এই। ম/র/তে চাস নাকি?”
আলোকে ধা/ক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় নৌশিন। হু/স করে পাশ দিয়ে একটা মি/নি ট্রা/ক চলে যায় আলোর। বু/কে হাত দিয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে সে। নৌশিন আলোর হাত ধরে রেখেছে। নিজেকে সামলে নিয়ে আলো নৌশিনের দিকে তাকিয়ে শু/ক/নো গলায় বলে,”থ্যাংকস।”
নৌশিন আলোর হাত ধরে বলে ,”কি হয়েছে তোর? পুরো ক্লাসে অন্য/ম/নস্ক ছিলি। একটু হলে আজ ট্রা /কে /র নিচে পরে ম/র/তি। সমস্যা কোথায়? ”
আলো মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”কিছু না।”
নৌশিন হুট করে আলোর কপালে হাত দিয়ে বলে,”গা গ/র/ম তোর। চল তোকে রিকশায় তুলে দেই মো/ড়ের মা/থা থেকে। চল!”
দু’জনে হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আলো বলে ওঠে,”সৈকত তোকে আর বি/র/ক্ত করেছিলো?”
নৌশিন বলে,” না। আমিও অবাক হচ্ছি আলো। ও এত সহজে আমার পিছু ছে/ড়ে/ছে। খুবই অবাক হচ্ছি।”
_এসব কু/কু/র/কে এভাবেই সোজা করতে হয়।
শুকনো গলায় বলে ওঠে আলো।
সাদিক আর রবি তী/ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আলো আর নৌশিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রবি অবাক হওয়ার মতো করে বলে, “আসল কোনটা? দুটোর চেহারা তো এক।”
_নে/শা করেছিলি সকালে? লাল জামায় নৌশিন, হলুদ জামায় সামিনের বৌ।
_এখন কি করবো? দু’টো আ/ঠা/র মত লে/গে আছে কেন? দু’টোকেই দেবো নাকি?
_মাথা খা/রা/প? সামিন তোকে তোর বাপ মা সহ ক/ব/রে পাঠাবে। ভাই যা বলেছে সেটা কর। চল বাইক স্টা/র্ট দে। এখানে ভী/র। মনে হচ্ছে মো/ড়ে/র মাথায় যাচ্ছে। চল ,চল।
নৌশিন এদিক ওদিক তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে থাকে। আলো পাশে অন্য/ম/ন/স্ক হয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ করে নৌশিনের পা/র্স ব্যাগ টা হাত থেকে নিচে পরে যায়। নৌশিন ব্যাগটা তোলার জন্য ঝু/কে যেতেই হু/স করে তাদের পাশ দিকে একটা মটর/সাইকেল চলে যায়।
ক্ষণবাদেই একটা বি/ক/ট চিৎকার শোনা যায়। যে চিৎকারে কেঁ/পে ওঠে মহিলা কলেজের পুরো এড়িয়া। থ/ম/কে যায় পথচারীরা।
কাঁ/প/তে থাকে আকাশ এবং পাতাল।
***
“এখান থেকে একটা ক/পি আমরা সি/টি ক/র্পো/রেশ/নের চেয়ার/ম্যা/নের কাছে পাঠাবো এবং ন/ক/ল তোমার স্ত্রীর কাছে। নব্বই দিনের আগে কার্যকর হবে না।”
কাজীর থেকে চোখ সরিয়ে সামিন তার হাতের কাগজ গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরে বলে,”আমি কি কাগজপত্র গুলো দেখতে পারি?”
_জ্বী অবশ্যই।
কাজী কাগজ গুলো এগিয়ে দেয়। সামিন কাঁ/পা কাঁ/পা হাতে কাগজ গুলো নিয়ে দেখতে থাকে উল্টে পাল্টে। একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”কোথায় সা/ইন করতে হবে?”
ফুয়াদ পাশের চেয়ারে বসে সামিনের দিকে এক/দৃষ্টে তাকিয়ে আছে। কাজী একটা কলম এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই যে নিচের দিকে।”
সামিন কাজীর থেকে কলমটা নিয়ে ফুয়াদের দিকে তাকায়। তারপর ম্লান হেসে কাগজে সা/ইন করতে যায়। পর/ক্ষনেই কাজীর দিকে তাকিয়ে বলে,”আংকেল আরেকটা কলম দিন। এটাতে সম্ভবত
কা/লি নেই।”
কাজী মাথা নাড়িয়ে ড্রয়ার খোলে। ফুয়াদ সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর ফোন বাজছে।”
_পরে কথা বলবো।
_আরে রিসিভ কর। ইম্প/র/ট্যান্ট কিছু হবে।
সামিন ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফোন বের করে। রনি ফোন দিচ্ছে। সামিন ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রনি কাঁ/পা কাঁ/পা গলায় বলে ওঠে,” ভাই ভাবী!”
_রনি। আমি তোদের বলেছি ওকে ওর মতো ছে/ড়ে দে। কেনো বিরক্ত করছিস।
রনি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বি/ক/ট চিৎ/কা/র দিয়ে বলে,”ভাই ভাবীর গায়ে কেউ
এ/সি/ড ছু/ড়ে/ছে।”
চলমান…….
#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৩৬
#Esrat_Ety
” ম্যাম পে/শে/ন্টে/র কষ্ট হচ্ছে ওনার হাতের বাঁ/ধ/ন খুলে দেই!? ”
ডাক্তার রুবি হে/ড নার্স শিলার দিকে তাকিয়ে বল,”হোক । তুমি পা ধরে রাখো। ও/য়া/শ করাটা জরুরি। এ্যা/ফে/ক্টে/ড এরিয়া গুলো ইমে/ডি/য়েট/লি ক্লি/ন করতে হবে। ওর জামা কা/টো, কাঁচি কোথায়? ধরে রাখো ওকে।”
দুজন এ্যা/সি/স্ট্যা/ন্ট নার্স পা ধরে। তারা দুজনেই সদ্য জয়েন করেছে চাকুরীতে। বাচ্চা বয়সী। এটাই তাদের জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। দৃশ্য টা তাদের ভেতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে। নিশ্চুপ চোখ দিয়ে পানি ঝরাচ্ছে তারা।
ইমা/র/জে/ন্সি ইউনিটের লোহার দরজা ভেদ করে গগন/বিদারী চিৎ/কারে পুরো হসপিটালে থাকা প্রত্যেকটা স্তন্য/পায়ীকে কাঁ/পি/য়ে দিচ্ছে।
সামিন ধীরপায়ে এক কদম এগিয়ে যায়। পেছন থেকে ফুয়াদ শক্ত করে জা/প/টে ধরে রাখে তাকে।
” সামিন যাস না।”
সামিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যায়। দলের ছেলেরা জাপটে ধরে ,”ভাই দোহাই লাগে যাবেন না।”
কিছুক্ষণ ওদের সাথে ধস্তা/ধস্তি করে সামিন নি/স্তেজ হয়ে ফুয়াদের গায়ে এলিয়ে পরতে চায়। শক্ত করে ফুয়াদ সামিনকে আঁ/কড়ে ধরে রেখেছে।
কান্নার তীব্রতা ক্ষণে ক্ষণে বেড়ে যাচ্ছে। দীর্ঘসময় পরে একেবারে নিস্তব্ধ হয় যায় পুরো ইমা/র্জেন্সি ইউনিট। সামিন অনুভূতি শূন্য হয়ে পরে থাকে করিডোরের মেঝেতে। তার থেকে দূরেই লা/শের মতো পরে আছে আতাউর আলম। এবারও তারা দুজন দুজনের প্রতি/দন্দ্বী। কে কতটা ক্ষ/ত/বি/ক্ষ/ত হতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে যেন।
ডাক্তার রুবি দ্রুতপায়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। ফুয়াদ এগিয়ে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই রুবি বলে ওঠে,”হাই ডো/জের
ইন/জে/ক/শ/ন দেওয়া হয়েছে। জ্ঞা/ন নেই। ট্রি/ট/মেন্ট শুরু করবো এখন।”
কথাটা শেষ করে রুবি রনির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”তুমি কি অশিক্ষিত? জানো না এ/সি/ড এ্যা/ফে/করে/ড এরিয়ায় পানি ঢালতে হয় তৎক্ষণাৎ ? নাকি বুঝতে পারোনি? অবুঝ নাকি?”
রনি উৎ/কণ্ঠা নিয়ে বলে,”ম্যাম পানি ঢেলেছি। মুখে পানি ঢালতে ঢালতে আনা হয়েছে।”
_হোয়াট নন/সে/ন্স! এ/সি/ড গায়ে লেগেছে আর তুমি মুখে পানি ঢেলেছো? গায়ে পর্যাপ্ত পানি ঢালা উচিত ছিলো।
রনি মিইয়ে যায়। দূরে বসে মিহি সুরে কেঁ/দে যাচ্ছে নৌশিন।
সামিন ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায়। রুবির দিকে তাকিয়ে নি/ষ্প্রাণ গলায় বলে,”ওকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন আন্টি। কথা বলুন। বো/র্ড বসান। এক্ষুনি। এই মুহূর্তে।”
রুবি সামিনের দিকে তাকিয়ে ধীরে সুস্থে বলে,”শান্ত হও। আই ক্যান ফিল ইউ। ট্রিট/মে/ন্ট বিদেশে যেটা হবে, এখানেও ওকে সেটাই দেয়া হবে। এটা একটা লম্বা সময়ের ব্যাপার। ট্রিট/মে/ন্টের শেষে বুঝতে পারবো সা/র্জা/রি লাগবে কি না। শান্ত হও তুমি। শরীরের বেশ কিছু স্থান এ্যা/ফে/ক্টে/ড হয়েছে। তার ওপর বোকামি করে কেউ পর্যাপ্ত পানি ঢালেনি গাঁয়ে। পিঠ, পেটের ডানপাশ, ডান হাতের কনুই …”
“শুনতে চাচ্ছি না আন্টি।”
নি/স্তেজ কন্ঠে বলে সামিন। রুবি হাতের গ্লাভস খুলে বলে,”যাস্ট প্রে ফর হার সামিন। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
রুবি চলে যেতেই সামিন উঠে দাঁড়ায়। এদিক ওদিক অসহায়ের মতো তাকিয়ে দেয়ালে হাত দিয়ে অনবরত ঘু/ষি মারতে থাকে। ফুয়াদ গিয়ে ধরে ফেলে তাকে। সামিন ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে বলতে থাকে,”আমার জন্য। যা যা হয়েছে সব আমার জন্য, ওর লাইফে আমি একটা অ/ভি/শা/প ফুয়াদ।”
_এসব কি বলছিস? তোর জন্য কেনো হবে?
চেঁ/চিয়ে ওঠে ফুয়াদ।
_এসব আমার শ/ত্রু/রা করেছে। আমি দায়ী ফুয়াদ। কতটা ক/ষ্ট হচ্ছে ওর। আচ্ছা রাস্তায় ও কেমন করছিলো? নিশ্চয়ই গ/লা/কা/টা মুরগির মতো ছটফট করছিলো।
কথাটা বলে সামিন শেষ করতে পারে না। রনি এগিয়ে এসে বলে,”ভাই ছেলে দুটোকে ধরা হয়েছে। পুলিশের হেফা/জতে আছে। ”
একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আশেপাশে তাকায় সে। আতাউর আলম একই ভাবে পরে আছে । সামিন ইমা/র্জে/ন্সি ইউ/নিটের দরজার দিকে একপলক তাকিয়ে শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। ফুয়াদ বলে,”কোথায় যাচ্ছিস?”
কোনো জবাব না দিয়ে সামিন বেড়িয়ে যায় হসপিটাল থেকে।
***
ভেতর থেকে কান/ ফা/টা/নো আর্ত/নাদে পুরো দালান ভারি হয়ে উঠেছে। কিন্তু কারো সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছে। কম্পিউটার অপা/রেটর একমনে ডেস্কটপে কিছু একটা দেখে যাচ্ছে।
থানার কন/স্টে/বল সুধীর দাশ রি/ম্যা/ন্ড রুমের দরজার বাইরে
ব/ন্দু/ক মেঝেতে ঠে/কিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ ভাবলেশহীন।
“সামিন স্টপ। স্টপ সামিন। ম/রে যাবে ও।”
পেছন থেকে গাঁয়ের সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে সামিনকে ফেরানোর চেষ্টা করছে সমীর। সাদিক ল/কা/পের একপাশে মেঝেতে গুটিয়ে বসে আছে, ভ/য়া/র্ত চোখে সে সামিনের তা/ন্ড/ব দেখছে। রবিকে বোধ হয় শে/ষ করে ছাড়বে। এরপর তার পালা।
সামিন রবির মাথা পা দিয়ে পি/ষে দিতে চায়। রবি তী/ব্র আর্ত/নাদ করে ওঠে, সামিন চেঁচিয়ে বলতে থাকে, “কি ক্ষ/তি করেছি আমি তোর? কোন জন্মের প্রতি/শোধ নিলি তুই? বল। ম/রা/র আগে বলে যা।”
সমীর সামিনকে জা/প/টে ধরে,”সামিন ছেড়ে দে ভাই। সামিন এটা অন্যায়। আমার চাকরি চলে যাবে। বোঝার চেষ্টা কর।
ওর র/ক্ত/ব/মি হচ্ছে। ”
সমীর কে ধা/ক্কা দিয়ে সামিন রবির দিকে তাকিয়ে বলে,” জবাব দে তোর কি ক্ষ/তি করেছি আমি।”
_ভাই, ভাই আল্লাহর ক/স/ম আমরা আপনার বৌকে কিছু করতে চাইনি। আমাদের টা/র্গে/ট নৌশিন ছিলো। হুট করে নৌশিন নিচু হয়ে যাওয়ায় আপনার বৌয়ের গায়ে লেগে গিয়েছে। ভাই আপনার বৌকে কিছু করতে চাইনি।
সামিন দাঁতে দাঁত চেপে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে রবির মাথাটা চে/পে ধরে। সমীর কোনো দি/শা খুঁজে না পেয়ে কনস্টেবল ডেকে সামিনকে ছাড়িয়ে নেয়।
সামিন হাপাচ্ছে। সমীর একটা চেয়ার টেনে সামিনকে বসিয়ে দেয়। গায়ের হালকা আকাশি রঙের শার্টে র/ক্তে/র ছো/প ছো/প দাগ । এক গ্লাস পানি খেয়ে নিস্তেজ হয়ে বসে থাকে।
সমীর গিয়ে সাদিককে মা/র/তে থাকে,”নৌশিনকে কেনো এ/সি/ড মা/র/তে চেয়েছিলি? কার কথায়? জবাব দে।”
_স্যার সৈকত ভাই। শমশের ভুঁইয়ার ছেলে।
কেঁ/দে ফেলে সাদিক।
সামিন সাদিকের দিকে তাকিয়ে আছে হিং/স্র দুটি চোখে। এমন সময় সাদিকের ফোন বেজে ওঠে। সমীর গম্ভীর কন্ঠে বলে,”কে ফোন দিয়েছে? ”
সাদিক কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা তুলে বলে,”সৈকত ভুঁইয়া ফোন দিয়েছে স্যার!”
_রিসিভ কর। আর যা যা শিখিয়ে দেবো সেটা বলবি। স্পি/কার অন কর।
সাদিক মাথা নাড়ায়।
ফোনটা রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে সৈকত বলে,”কিরে শা/লা। ফোন ধরছিলি না কেনো? কাজ হয়েছে? ত/ড়/পেছে ও? রাস্তায় রাস্তায় লাফিয়েছে তাই না? গড়াগড়ি খেয়েছে ওর সুন্দর মুখ চেপে ধরে? ”
সাদিক একটা ঢোক গিলে বলে,”ভাই একটা ভুল হয়ে গিয়েছে ।”
“ভুল মানে? কি ভুল?”
_ভাই, এ/সি/ড নৌশিনের মুখে ছুঁ/ড়/তে গিয়ে ভুল করে সামিন ইয়াসারের বৌয়ের গায়ে লেগেছে।
_হোয়াট! আলোর গাঁয়ে?
_হু ভাই।
_কি হয়েছে? ওর মুখ পু/ড়ে গিয়েছে?
_না ভাই। গায়ে লেগেছে। পিঠে।
ওপাশ থেকে সৈকতের পৈ/শা/চিক হাসির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ হেসে নিয়ে বলে,” মাত্র? এতো কম শা/স্তি! এটা কিভাবে মানা যায়। এ/সি/ড না, ওকে তো রে/ই/প করতে চেয়েছিলাম আমি। গ্যাং রে/ইং/প। ওর মতো মেয়ের সাথে ওটাই করা উচিত, ওর তেজ ওভাবেই ভাঙা উচিত। ওর জুতার ময়লা মাখিয়ে দিয়েছিলো আমাকে। আমি ওর শরীরে ক/লং/ক মাখিয়ে দিতাম। সামিন ইয়াসার হাত কামড়াতো। শুনেছি ওকে ছে/ড়ে দিচ্ছে সামিন। তাহলে ভালোই হবে। আমরা আমাদের কাজ নি/র্বি/ঘ্নে করতে পারবো। আচ্ছা তোরা চলে আয়। আমাদের ক্লা/ব/ঘরে, নতুন দুটো বোতল আনিয়েছি। একেবারে আসল টা। নৌশিনকেও পরে দেখে নেবো।”
সৈকত ফোন কেটে দেয়। সামিন তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ায়। সমীর আবারও সামিনকে ধরে ফেলে,”কোথায় যাচ্ছিস?”
সামিন শীতল চোখে তাকায় সমীরের দিকে। সমীর চেঁচিয়ে বলে ওঠে,”না। তুই একটুও বাড়াবাড়ি করবি না সামিন। আমি ফো/র্স পাঠাচ্ছি। আমি নিজে যাচ্ছি। তুই কিচ্ছু করবি না। তোর বৌ হসপিটালে সামিন,ডোন্ট ফরগেট দ্যাট!”
সামিন পুনরায় চেয়ারে ধপ করে বসে পরে, বিড়বিড় করে বলে,” শু/য়ো/রে/র বা/চ্চা গুলো বুঝতেও পারছে না, ওরা আ/ঘা/ত সামিনের বৌকে নয়। সামিনকেই করেছে।”
***
চোখ খুলে রেহেনা বিড়বিড় করে আলোর নাম ধরে ডাকতে থাকে। ইশিতা এগিয়ে এসে রেহেনার হাত ধরে বলে,”আন্টি ভাবী ঠিক আছে। ভাবী একেবারে ঠিক আছে। ঘুমাচ্ছে ভাবী। আপনি শান্ত হোন।”
রেহেনা দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে। ঠোঁ/ট কে/পে ওঠে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,”জানো মা, জীবদ্দশায় আমি এক ওয়াক্ত নামাজ ছাড়িনি। কখনোই রবকে কৃতজ্ঞতা জানাতে কার্পণ্য করিনি। সব প্রার্থনাতে আমি শুধু স্বামী সন্তানের ভালো চেয়েছি। মেয়েটা আমার কিসের
শা/স্তি পাচ্ছে বলো তো। জীবনে কখনো একটা পিঁপড়াকে ক/ষ্ট দেয়নি। একটা মি/থ্যা কথা বলে নি। অ/ন্যা/য়ের সাথে আ/পো/ষ করেনি। তবুও এতো ক/ষ্ট কেন ওর।”
ইশিতা চুপ করে রেহেনার দিকে তাকিয়ে আছে। রেহেনা অঝোর ধারায় কেঁ/দে যাচ্ছে।
সামিন উদাস চোখে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশটা দেখতে থাকে। এখানে। এই স্থানেই শুরু হয়েছিলো সবকিছুর। এখানে একটা বিশাল মঞ্চ ছিলো। জনসমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ছিলো । মুখের সামনে ছিলো
মা/ই/ক্রো/ফোন। হঠাৎ গালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে সামিন ঘুরে তাকাতেই দেখে চোখে পানি নিয়ে অগ্নি/মূর্তি ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে এক শ্যাম-সুন্দরী। ছোটো খাটো দেখতে। মায়াবী আয়তাকার চোখ দুটো রসগোল্লা সাইজের মতো বানিয়ে সামিনের দিকে ঘৃ/ণা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো।
চোখের সামনে সে দৃশ্য পুনরায় ভেসে উঠতেই সামিন আনমনে হেসে ওঠে। সেদিন কি পরিমান রা/গ জন্মেছিল ঐ তে/জী মেয়েটার প্রতি। ইচ্ছে করছিলো খু/ন করে ফেলতে। আর আজ সেই মেয়েটির জন্য তাকে খু/ন হতে হচ্ছে। অনূভুতিরা গ/লা টি/পে সামিন ইয়াসারের সত্তাকে খু/ন করছে প্রতিনিয়ত।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামিন এগিয়ে যায়। পার্কের বেঞ্চিতে বসে থাকে চুপচাপ। হসপিটালে এখন যাবে না সে। তার আছিয়ার সাথে বোঝাপড়া আছে আজ। এতো লোকের ভীড়ে সে তার আছিয়াকে ক/টু কথা শোনাতে পারবে না।
ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। সমীরের ফোন। সামিন রিসিভ করে।
“কি ব্যাপার? কন/স্টে/বল পাঠিয়ে দিলি কেন মাঝ রাস্তায়? তুই হসপিটাল যাসনি?”
_যাবো। কি করেছিস তুই?
সামিন তেজী কন্ঠে বলে ওঠে।
“অন দ্যা ওয়ে সামিন।”
সামিন একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে,”লা/শ হলেও চাই।”
***
ডাক্তার রুবি এসে ফুয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,”সামিন কোথায়? ”
_কোথায় যেন বেড়িয়েছে আন্টি।
রুবি বলে,”ট্রিট/মে/ন্ট চলছে। চিন্তা করতে বারণ করো। সবাই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাও যে মুখের কিছু হয়নি ফুয়াদ। একটা মেয়ের মৃ/ত্যু হওয়া ভালো তার থেকে।”
ফুয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাথা নাড়ায়। সামিন কোথায় গেলো বুঝতে পারছে না সে। কোনো অ/ঘ/টন ঘটায়নি তো আবার। থানায় ফোন দিয়েও কিছু জানতে পারলো না। ফোন বের করে আবার সামিনের নাম্বার ডায়াল করে সে। সামিন ফোনটা রিসিভ করে। ফুয়াদ বলে,”কোথায় গিয়েছিস তুই? কি উল্টো পাল্টা করছিস। হসপিটালে আয়।”
_রাতে আসবো।
_তুই কোথায় সামিন?
_আন্ডার কন/স্ট্রা/ক/শন টা/ও/য়ার টার নিচে।
_ওখানে কি করছিস?
ফুয়াদ অবাক হয়ে জানতে চায়। সামিন ঠান্ডা গলায় বলে,”স্মৃতি নাড়াচাড়া।”
_মানে?
_মানে কিছু না। আমার শাশুড়ির জ্ঞা/ন ফিরেছে?
_হু।
_অদ্ভুত ফ্যামিলিতে জুরে গিয়েছি ভাই। একটা লোকও স্বাভাবিক না। কথায় কথায় জ্ঞা/ন হারায়, কথায় কথায় স্ট্রো/ক করে। আর আমার বৌয়ের কথা কি বলবো। সে তো কাঁ/ধে অলটাইম ঝামেলা নিয়ে ঘোরে।
ফুয়াদ চুপ করে থাকে। সামিন বলে,”ওনাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দে। বলে দে ফ্রম নাউ আলো ইজ হার হাজব্যান্ড’স রেসপনসিবিলিটি।”
ফোন কেটে সামিন চুপ করে বসে থাকে। সে এখন যে স্থানে আছে এখানে একদিন ভয় দেখিয়ে আলোকে ডেকে এনে নিজের পা ধরিয়েছিলো সামিন। রা/গ, এই রা/গ মানুষকে দিয়ে কতটা নিচু কাজ করিয়ে নেয়।
চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে ক্লান্ত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ায় সে। মাগরীবের আজান দিয়ে দিয়েছে। পরি/ত্যাক্ত আন্ডার কন্স/ট্রাক/শন টাওয়ার টা থেকে বেরিয়ে এসে মেইন রোডে দাঁড়িয়ে পরে। আশেপাশের লোকজন তাকে অদ্ভুত চোখে দেখছে। মেয়র সামিন ইয়াসার মির্জা এমন আলুথালু বেশে এখানে কি করছে! এখানে তার কাজ কী?
***
“পুলিশের সাথে ব/ন্দু/ক/যু/দ্ধে বিরোধীদলীয় নেতা শমসের ভুঁইয়ার ছোট ছেলে সৈকত ভুঁইয়া নি/হ/ত। আজ বিকাল পাঁচটা নাগাদ, পুলিশের এক স্পেশাল টি/ম তার ক্লা/বে খোজ চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মা/দ/ক/দ্রব্য ও অ/স্ত্র উদ্ধার করে। পুলিশের থেকে বাঁচতে সে পুলিশের দিকে গু/লি ছো/ড়ে এবং পুলিশ আ/ত্ম/রক্ষায় পাল্টা গু/লি ছু/ড়/লে সে মা/রা যায়। তার লা/শ পো/স্ট/ম/র্টে/মর জন্য সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে সে আজকের মহিলা কলেজ রোডের এ/সি/ড কান্ডের মুল হোতা। ছেলের আ/ক/স্মিক মৃ/ত্যু/র শো/ক না সইতে পেরে হৃদ/রো/গে আ/ক্রা/ন্ত হওয়ায় সাবেক মেয়র শমশের ভুঁইয়াকে গ্রীনলাইফ মেডিকেয়ার হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে। এখনো তার বড় ছেলে সাগর ভুঁইয়া এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি। ”
হসপিটালের ওয়েটিং রুমে হাত বেঁধে টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে সামিন। তার মুখ ভাবলেশহীন। সৈকতের মৃ/ত্যু/র খবরে লোকজনের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনো না কোনো কারনে সবাই খুশি হয়েছে খবরটায়। কম ত্রা/স সৃষ্টি তো করেনি গত ছয় মাসে। কিশোর গ্যাং-এর গ/ড ফাদার ছিলো। কত অভিভাবকের অভিযোগ ছিলো ওর নামে। এতো অল্প বয়সেই মা/দ/কের সাম্রাজ্য বিস্তার করে বসেছিলো।
ঘুরে ফিরে সবাই সামিন ইয়াসার মির্জাকে দেখছে। পরনে জিন্স প্যান্ট, গায়ে হালকা আকাশী রঙের শার্ট। শার্টে ছোপছোপ কালো কালো দাগ। বলিষ্ঠ দেহে শার্ট টা আঁট/সাঁট হয়ে আছে। পুরো বিধ্বস্ত লাগছে সামিনকে। সব আগন্তুকেরা সামিনের দিকে ঘুরে ফিরে তাকাচ্ছে। মেয়র সাহেবের এই অবস্থা কেন সেটা জিজ্ঞেস করার সাহস নেই তাদের।
“ভাইয়া।”
ইশিতার ডাকে সামিন ঘুরে দাঁড়ায়।
_যাসনি তোরা? ইলহাম রিতু কোথায়?
_ভ/মি/ট হচ্ছে ভাবীর। ওয়াশ রুমে নিয়ে গেছে মেজো ভাইয়া।
_তোরা চলে যা। আমি থাকবো এখানে।
_ইশমাম বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে ভাইয়া। ওকে বলবো?
_নাহহ। শুধু শুধু টেনশন করবে। এমনিতেই মন খারাপ করে থাকে সারাদিন।
ইশিতা একটা প্যাকেট সামিনের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে,”শার্ট টা পাল্টে নাও। তোমাকে বিশ্রী লাগছে।”
সামিন চুপচাপ প্যাকেট টা নিয়ে পাশের একটা বেঞ্চিতে রেখে দেয়। দূরের একটা বেঞ্চিতে আতাউর আলম চুপচাপ বসে আছে। সবাইকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে সেও থেকে গিয়েছে । হাত বেঁ/ধে দৃষ্টি মেঝের দিকে দিয়ে রেখেছে।
সবাই চলে যায়, জামিল চুপচাপ করিডোরের একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সামিন জামিলের দিকে তাকিয়ে বলে,” তোর বৌ কে কথা দিয়েছিলাম তোকে দিয়ে চা/ম/চা/মি করাবো না। কিন্তু তুই জন্মগত চা/ম/চা। তোর মধ্যে থেকে চা/ম/চা ভাবটা গেলো না। যা এখান থেকে।
জামিল কিছুক্ষণ তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে যায়।
হসপিটালে থেকে গিয়েছে দু’টো লোক। আতাউর আলম এবং সামিন ইয়াসার মির্জা।
আতাউর আলমের মাথাটা বেশ ব্যাথা করতে শুরু করেছে। কপালের দুপাশের রগ দপদপ করছে। হঠাৎ তার সামনে কেউ একটা ওয়ান টাইম চায়ের কাপ এগিয়ে ধরে। মাথা তুলে সামিনকে দেখে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপ টা নেয়। সামিন নিজের জন্যও এক কাপ চা এনেছে। চায়ের কাপ হাত আতাউর আলমের থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে পরে।
দু’জনেই কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। তারপর সামিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে, “এখানের ক্যা/ন্টি/নের চা একেবারে বি/শ্রী। খুবই সস্তা চায়ের পাতা দেয়। মনে হয় যেসব চায়ের পাতা লা/শে/র ক/ফি/নে দেওয়া হয় সেটা। এই চা টা বাইরে থেকে আনলাম।”
আতাউর আলম চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
সামিন একপলক তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,”আপনার সাথে কখনোই খোলামেলা আলোচনা করা হয়নি।”
_কি আলোচনা?
আতাউর আলম সামিনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
_আমি আপনার এ/ক্সি/ডেন্ট করাইনি। কান ভাঙানো হয়েছিলো আপনার মেয়ের।
_আমিও জামিলকে কো/পা/নোর ব্যবস্থা করিনি। কান ভাঙানো হয়েছিলো তোমার।
দু’জনে আবার চুপচাপ। সামিনের দিকে তাকিয়ে আতাউর আলম বলে,”তোমার ধারনা তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাসো?”
_হু।
_তা আমার মেয়েকে কতটা ভালোবাসো তুমি?”
_আপনি যতটা আপনার মেয়েকে ভালোবাসেন তার থেকে একটু কম।
ঠান্ডা গলায় জবাব দেয় সামিন।
আতাউর আলম বলে,”লাভ কি। তুমি একটা গুন্ডা।”
সামিন ম্লান হাসে। আতাউর আলম সামিনের গায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”গায়ে র/ক্ত কেনো। কাকে কু/পি/য়ে এসেছো আবার।”
সামিন মৃদু হেসে চায়ের কাপটা বিনে ছু/ড়ে মে/রে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ক্লান্ত ভঙ্গিতে আলোর কেবিনের দিকে যায়।
দরজার বাইরে থেকে দুমিনিট ভেতরে তাকিয়ে থেকে পা বাড়ায় সামিন। পেছন থেকে ডাক্তার রুবি ডেকে ওঠে,”সামিন।”
সামিন ঘুরে তাকায়।
রুবি বলে,”কোথায় যাচ্ছো?”
_ভেতরে। ওর কাছে!
রুবি সামিনকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলে,”নো ওয়ে সামিন। ইন/ফেক/শনের ঝামেলা আছে। তুমি নিজেই জী/বা/ণু নিয়ে ঘুরছো। কি অবস্থা তোমার।”
_আন্টি,শার্ট পাল্টে আসছি আমি। একবার। প্লিজ।
রুবি বলে,”ঠিক আছে। চলো আগে সা/র্জি/ক্যা/ল পোশাক পরে নাও। তারপর ঢুকবে।”
***
হাই ডো/জের ইন/জেকশন দেওয়া হয়েছে। পিঠের ক্ষতটা সবচেয়ে বেশি। যখন এ/সি/ড ছোঁ/ড়া হচ্ছিলো তার কয়েক মুহূর্ত আগে একটা বালুভর্তি ট্রা/ক চলে গিয়েছিলো ওদের পাশ দিয়ে।
পে/ট্রোলের তীব্র গন্ধে আলো মুখে ওড়না চে/পে ধরে ঘুরে গিয়েছিলো। এ/সি/ড ছিটকে লেগে যায় তার পিঠে।
আলোকে কাত করে রাখা হয়েছে। চুল গুলোতে দুটো বেনী করে দিয়েছে নার্স। পুরো শরীর একটা সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
ধীরপায়ে হেটে গিয়ে সামিন কিছুটা দূরত্ব রেখে একটা চেয়ার টেনে বসে পরে।
দীর্ঘ সময় ধরে আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মুখটা এখন অতিরিক্ত ফরসা লাগছে। আলো যদি এখন নিজেকে দেখতো তাহলে নিজেই নিজেকে বলতো “সাদা মুলা।”
চুলে বাচ্চাদের মতো দুটো বেনী করে রাখা। ছোটোখাটো গোলগাল মুখটাকে আরো ছোটো লাগছে। এখন আলোকে দেখে চব্বিশ বছরের কোনো ভদ্রমহিলা নয় বরং সতের বছরের কিশোরী মেয়েদের মতো লাগছে। ঐ পাতলা দু’টো ঠোঁট দেখে কে বলবে ঐ ঠোঁট নেড়ে এই অভদ্রমহিলা কত কুৎ/সিত কুৎ/সিত গালি দেয় সবাইকে। চেহারার সাথে স্বভাব আচরণ কিচ্ছু যায়না মেয়েটার। চেহারা দেখে কতটা অবলা লাগে আর আচরণ দেখে মনে হয় জে/ল ফেরত লেডি ড্রা/গ মা/ফি/য়া।
সামিন আনমনে হেসে ফেলে। তারপর একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে,”কি বলেছিলে সেদিন? বলেছিলে,ইয়াসার মির্জা। চলুন তাহলে একটা বা/জি ধরা যাক। যদি ইলেকশনে আমরা জিতি তাহলে আমি যা বলবো তাই আপনি শুনবেন, আর যদি আপনি জেতেন তাহলে আপনি যা বলবেন আমি সেটা শুনবো। এটাই বলেছিলে তাই না ? তারপর কি হলো, আমি জিতলাম। বাজিতে জিতে শর্ত মোতাবেক তোমার আমার কথা শোনার কথা ছিলো তাইনা? আর আমি কি বলেছিলাম তোমাকে? তুমি ভালো থাকো এটাই তো তাইনা? এটাই তো শর্ত ছিল। তুমি আমার শর্ত মানলে কই? কেনো ভালো থাকলে না তুমি?”
এ পর্যন্ত বলে সামিন থামে। তারপর আবার বলতে শুরু করে,”শর্ত ভা/ঙ/লে কি হয় জানো তো আছিয়া? যে শর্ত ভা/ঙে তাকে শা/স্তি পেতে হয়। তোমাকেও শা/স্তি পেতে হবে। তোমাকে তোমার স্বামী শাস্তি দেবে আছিয়া।”
কথাগুলো বলে সামিন চুপ হয়ে যায়। চাদরের ফাঁক দিয়ে আলোর বা হাতের আঙ্গুল বের হয়ে আছে। সামিন তার হাত বাড়িয়ে আলোর একটা আঙ্গুল ছোঁ/য়। তারপর তার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।
কেবিনের দরজার বাইরে থেকে সামিনের দিকে আতাউর আলম তাকিয়ে আছে। তিনি ঐ ছেলেটার ব্যা/কু/ল/তাকে বিচার করতে পারছে না। তিনি শুধু দেখছে তার মেয়ের জন্য কেউ উৎ/কণ্ঠা নিয়ে বসে আছে, তার মতো। তার সাথে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে থাকতে চাইছে। প্রতিযোগীতার ফলাফল কি হবে? কে এগিয়ে থাকবে? কে?
আঙুলের ওপর থেকে হাত সরিয়ে আলোর মাথায় হাতটা আলতো করে বুলিয়ে দিয়ে বলে,”খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হও তুমি। তোমার
শা/স্তি/র জন্য প্রস্তুত হও। আমি অপেক্ষা করছি আছিয়া।”
চলমান…..