বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে পর্ব-৪৫

0
1130

#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৪৫
#Esrat_Ety

আলো শুকনো মুখে সামিনের দিকে তাকায়। সামিন তার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে মনে বলে ওঠে,”তুমি আমার ইমোশন নিয়ে ভাবছো আছিয়া?”

আলো বারবার রিকোয়েস্ট করতে থাকে চাইনিজ লোকটাকে। সামিন ধস্তা*ধস্তি বন্ধ করে আলোকে ঠান্ডা গলায় বলে,”একদম ওর কাছে অনুরোধ করবে না। একদম না।”

আলো সামিনের দিকে তাকায়। সামিনকে অস্বাভাবিক শান্ত লাগছে এখন। এমন সময় সেখানে একটা পুলিশ ভ্যান চলে আসে।

চাইনিজ লোকগুলো সামিনকে ছেড়ে দিয়ে আ’ত’ঙ্কি’ত মুখ নিয়ে আশেপাশে তাকায়। কপস গুলো বের হয়ে আসে, চাইনিজ গ্যাং পালানোর পথ খুঁজে পায় না। এসে সব কটাকে ধরে ফেলে কপস গুলো।
অফিসার সামিনের দিকে তাকিয়ে বিনয়ের সাথে বলে,”এক্স*ট্রিমলি সরি ম্যান! আপনার লোকেশন টা বুঝতে একটু সময় লেগেছে।”

সামিন গায়ে ঝারা দিয়ে বলে,”আপনাদের দেশে এসব হচ্ছে? সিরি*য়াসলি? অবিশ্বাস্য!”

পুলিশ অফিসার লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”স্যার এখানের চায়না টাউনের কিছু লোক খুবই উগ্র, এদের ক*ন্ট্রোল করা মুশকিল। আর তার উপরে এখন ট্যুরিস্টদের চাপ একটু বেশি। এই যে এগুলোকে দেখছেন, এরা পেশায় মেছো, লুকিয়ে লুকিয়ে মি*থের বিজনেস করে, এরা রিসেন্টলি জেল থেকে বেরিয়েছে। সবগুলো হা*রামজাদা। আমরা লজ্জিত।”

সামিন হেসে পুলিশ অফিসারকে বলে,”ইটস্ ওকে।”

তারপর ঘুরে চাইনিজ দলপতির মুখোমুখি দাঁড়ায়, দলপতির হাত থেকে থা*বা মেরে আলোর লকেট টা নিয়ে বলে,”এটা আমার বৌয়ের।”

আলো অবাক হয়ে আশেপাশে তাকাচ্ছে। চাইনিজ গ্যাং-কে ভ্যানে তোলা হয়। আলো সাহস পেয়ে এক নাগাড়ে কিছু গালা*গাল দিয়ে দেয় চাইনিজ গুলোকে। পুলিশের লোক গুলো আলোর দিকে অবাক চোখে একপলক তাকিয়ে চলে যায়।

সামিন ঘুরে আলোর দিকে তাকায়,বলে,”ওদের বাংলায় গা*লি দিচ্ছো কেনো? ওরা তো কিছুই বুঝলো না!”

আলো প্রায় ছুটে এসে সামিনের ডানহাত ধরে উল্টে পাল্টে দেখতে থাকে,কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”আ*ঘাত লাগেনি তো চা*কুর?”

সামিন চুপচাপ আলোকে দেখতে থাকে। আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”পুলিশ কিভাবে টের পেলো?”

সামিন মৃদু হেসে পকেট থেকে ফোনটা বের করে আলোকে দেখিয়ে বলে,”ওরা যখন আমাদের দিকে আসছিলো,তখনই কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে এই অ্যা*পসে ঢুকে কাছের চেক*পোস্টে আমার লোকেশন পাঠিয়ে ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ছিলাম। সাবধানের মা*র নেই। সিঙ্গাপুরের নিয়ম শৃঙ্খলা আইন সম্পর্কে তোমার কোনো আইডিয়া নেই। মোস্ট ডেভেলপড এ্যান্ড সেফেস্ট কা*ন্ট্রি।”

আলো শুকনো গলায় বলে,”কিসের সেফেস্ট? রাত এতোটাও গভীর না অথচ কতটা বিপদে পরতে যাচ্ছিলাম আমরা।”

_এরকম টুকটাক অপরাধী সব যায়গায় ঘুরে বেড়ায় আলো। আর তাছাড়া ড্রা*গ এ*ডিক্ট ওরা, ওরা এতো কিছু ভেবে অ*পরাধ করতে নামে না। জেলে যাওয়া আসা লেগে থাকে ওদের‌। তাই ভয় পায়না সহজে।

আলো চুপ করে সামিনের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন বলে,”হাতে কিছু হয়নি আমার। রিল্যাক্স।”

আলো চোখ সরিয়ে নেয়। সামিন রেগে রেগে বলে,”ওই চাইনিজটার কাছে তুমি রিকোয়েস্ট করছিলে কেনো এতো? আমি তো ভেবেছি তুমি কারাতে করবে। কতদিনের শখ আমার তোমার কারাতে দেখার!”

আলো অবাক চোখে সামিনের দিকে তাকায়,বলে,”আমি এখনো আ*তঙ্ক থেকে বের হতে পারছি না আর আপনি মজা করছেন? ওদের চারজনের হাতে চা*কু ছিলো। আমি কটা চা*কু সামাল দিতাম? আমি অতটাও মাথামোটা নই।”

সামিন হেসে ফেলে,বলে,”অতটাও মাথা মোটা নও? কতটা মাথামোটা তাহলে? আচ্ছা তুমি তাহলে স্বীকার করলে একটু না একটু হলেও তুমি মাথামোটা?

আলো লজ্জিত মুখটা নামিয়ে রেখেছে। সামিন মুচকি মুচকি হাসছে। কিছুক্ষণ পরে আলো বলে ওঠে,”পুলিশ আসবে জেনেও এতো মারা*মারি করার কি দরকার ছিলো? শান্ত হয়ে থাকতে পারতেন না?”

_শিওর ছিলাম না আমার সিগ*ন্যাল পৌঁছেছে কি না। আর ভয় হচ্ছিল। ভেবেছি তোমার গায়ে হাত দিয়ে ফেলবে।

আলো চোখ তুলে সামিনের দিকে তাকায়। সামিন আলোর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে আলোর কাছে চলে যায়। হাতের লকেট টা আলোকে পরিয়ে দিতে দিতে বলে,”শাশুড়ি মায়ের বালার জন্য এতোটা উৎকণ্ঠা?”

আলো নিশ্চুপ। সামিন নরম গলায় বলতে থাকে,”জা কে জা ভাবতে পারছো, ননদকে ননদ ভাবতে পারছো, দেবরকে দেবর ভাবতে পারছো, শাশুড়িকে শাশুড়ি ভাবতে পারছো, শুধু স্বামীকেই………..”

চুপ হয়ে যায় সামিন। আলো সামিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

সামিন প্রসঙ্গ পালটে বলে,”চলো। এখন একটু ধাতস্থ হও,কিছুই হতো না আমাদের।”

***
গলার লকেটটা হাতে ধরে রেখে আলো চুপচাপ নিজের বিছানায় বসে আছে। তার দৃষ্টি সামিনের দিকে। সামিন তার নিজের বিছানায় বসে ইশমামের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছে।

আলোর দৃষ্টি সামিনের থেকে সরছে না। লোকটা তার নিজের সবকিছুর প্রতি কতটা কেয়ারিং। এইযে আলোকে নিয়ে সিঙ্গাপুর এসেছে অথচ ঠিকই ভাই,বোন,বেস্টফ্রেন্ড,সবার সাথে সময় করে কথা বলছে, পাশাপাশি দলের কাজ সবকিছু সামলে যাচ্ছে। একটু বিরক্তি নেই।

হঠাৎ সামিন উচ্চশব্দে হেসে ওঠে, আলোর ঘোর কেটে যায়। কিছু একটা নিয়ে ইশমামের সাথে হাসাহাসি করছে।

আলো দেখতে থাকে, এই লোকটা নিজেও অতটা বড় নয় অথচ ভাইকে সবসময় বাচ্চা ছেলেদের মতো আহ্লাদ করে, ভাই খেয়েছে কিনা, ঠান্ডা লাগিয়েছে কিনা, মে*ডিসিন নিয়েছে কিনা।

ইশমামের সাথে কথা বলতে বলতে সামিন একবার আলোর দিকে তাকায়, তারপর নিচু স্বরে বলে ওঠে,”তোমার কি অসুবিধা হচ্ছে?”

আলো মাথা নেড়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”মোটেও না। আপনি কথা বলুন।”

সামিন আবারো কথা বলতে শুরু করে। আর আলো দেখতে থাকে সামিনকে।

***
সকাল সকাল আবারও সেই একই বিব্রতকর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি। সামিন এবার বেশ বিরক্ত হয়। লিফট কি চু*মু খাওয়ার যায়গা?

চু*মু খেতে থাকা নতুন দম্পতি নিজেরাও বিব্রত হয়ে তাকিয়ে থাকে আলো আর সামিনের দিকে।

সামিন চোখ সরিয়ে নেয়। লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। আলো সামিনের পেছনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো।‌ সামিন ঘাড় ঘুরিয়ে আলোকে দেখে। গাল দুটো লাল হয়ে আছে লজ্জায়। সামিন নিচু স্বরে বলে,”আজ চেঁচালে না যে?”

_সবাই আমাকে জংলি ভাবতো। এখানে আসার পর থেকে আপনাকে আমি বিব্রত করেই যাচ্ছি। গতকালের লিফটের ঘটনা, রেস্টুরেন্টের ওয়াইনের ঘটনা। আসলে আমি এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছি না। কখনো নিজের শহরের গন্ডির বাইরে যাইনি তো। যা দাপিয়ে বেড়ানোর নিজের শহরেই বেড়িয়েছি। বিদেশী এসব কালচার সম্পর্কে ধারণা আমার আছে, তবে চোখের সামনে দেখে সহজে নিতে পারার মতো মানসিকতা আমার তৈরি হয়নি এখনো, সময় লাগবে হয়তো। তাছাড়া আমার একাডেমিক নলেজও খুব কম। আপনি ঠিকই বলেছিলেন,আমি খালি কলসি।
আমাকে ম্যানার*লেস মনে হচ্ছে তাই না? মনে হচ্ছে আমি গ্রাম থেকে উঠে এসেছি তাই না?

সাবলীল ভাবে বলে আলো। সামিন আলোর দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থেকে বলে,”হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই, তুমি যথেষ্ট স্মার্ট মেয়ে, এ ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারাকে স্মার্টনেস বলে কি না জানা নেই, তবে আমার তোমাকে সবদিক থেকেই স্মার্ট মনে হয়।”

আলো চুপ করে থাকে, সামিন বলে,”এসো লিফট এসে গিয়েছে।”

তারা দু’জনে ব্যাতীত অন্য কেউ লিফটে নেই। সামিন আড়চোখে একবার আলোকে দেখে, মেয়েটার মুখটা এমন থমথমে কেনো? নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে? কিন্তু সামিনের তো ওর সবকিছুকেই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এটা ঐ মেয়েটাকে কিভাবে বোঝাবে।

হঠাৎ আলো সামিনের দিকে তাকায়। দু’জনের চোখে চোখাচোখি হতেই আলো চোখ নামিয়ে নেয়। সামিন ধীরে ধীরে আলোর দিকে এগিয়ে যায়। আলো কিছুটা ঘা*বড়ে যায়। সামিন আলোর অনেকটা কাছে গিয়ে বাকা হাসি হাসে, তারপর আলোর শাড়ির আঁচল টেনে আলোর ডান কাঁধে তুলে দিতে দিতে নরম গলায় বলে,”আমার কাছে স্মার্টনেসের সংজ্ঞা ভিন্ন আলো, আমার জীবন সঙ্গিনী হিসেবে যেটুকু স্মার্টনেস থাকা দরকার তার পুরোটাই তোমার মধ্যে আছে, এবার তুমি বলো তোমার স্বামী হিসেবে আমি যথেষ্ট স্মার্ট কি?”

আলো একপলক সামিনের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। সামিন আলোর থেকে কোনো উত্তর আশা করে না। সে বলতে থাকে,” এই সিঙ্গাপুর সিটি, এই কালচার, এ দেশীয় ম্যা*নারস দিয়ে আমাদের দরকার কি আলো? আমরা তো ফিরে যাবো আমাদের ছোটো শহরে, তুমি সেখানেই দাপিয়ে বেড়িও। শাড়ির আঁচল ডান কাঁধে তুলে গলাবাজি করো কিংবা সালোয়ার কামিজের ওড়না গাঁয়ে জরিয়ে নিয়ে হম্বিতম্বি করো।
আমার তোমার বর্তমানের জড়তা কিংবা নাদানের মতো জংলি আচরণ গ্রহণ করতে একটুও অসুবিধে হচ্ছে না। আমি উপভোগ করছি। প্রকাশ্যে চু*মু খাওয়া, ও*য়াইন দেখলে যেকোনো মুসলিম মেয়ে ওভাবেই রিয়াক্ট করতো সম্ভবত। তাই বলে তুমি জংলি হয়ে যাওনি। একটা জংলি মেয়ে কখনোই লোন তুলে, কিছু তৃতীয় লি*ঙ্গের মানুষ নিয়ে রীতিমতো বিজনেস দা*ড় করানোর চিন্তা করবে না। একজন অসম্ভব স*ভ্য, মুক্তচিন্তার অধিকারী এবং অদম্য সাহসিকতার মেয়েই করবে।”

আলো থমকে দাঁড়িয়ে থাকে সামিনের কথা গুলো শুনে। এই লোকটা খুব সুন্দর করে কথা বলে। জনগণকেও কি এভাবেই পটিয়ে নেয় এই মেয়র সাহেব?

সামিন আলোর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নেয়। আলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, মনে মনে বলে,”আমি নিজেকে এতোটা অনুভব করতে পারিনি যতটা আপনি পেরেছেন, তবুও কেনো আপনাকে গ্রহণ করে নিতে আমার এতো জড়তা। তবে কি আমিই ত্রুটিপূর্ণ ইয়াসার মির্জা?”

***
ডক্টর এনজি হুই ওয়েন। প্লা*স্টিক, পুনর্গঠন এবং নান্দনিক সা*র্জারি। ট্যা*ন টক সেং হসপিটাল, সিঙ্গাপুর।

সামিন ম্যাগাজিনটা উলটে পালটে দেখছে। আলো চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,”ডক্টর কি মহিলা?”

_হ্যা, মহিলা। কেনো?
সামিন আলোর দিকে তাকায়। আলো মাথা নেড়ে বলে,”এমনিই জিজ্ঞেস করলাম। নাম দেখে বুঝতে পারছি না।”

সামিন আবারও ম্যাগাজিনে চোখ রাখে। আলো আড়চোখে সামিনকে দেখছে। আজ সামিন একটা কালো রঙের শার্ট পরেছে। সুন্দর লাগছে, হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে।

সামিন ম্যাগাজিনটা রেখে আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”খাবে কিছু? কোনো পানীয়? নিয়ে আসি?”

আলো মাথা নাড়ায়। সামিন আলোর হাতের ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলে,”যা যা বলেছি, নিয়েছো ব্যাগে?”

আলো মাথা নেড়ে বলে,”হ্যা।”
সামিন আলোকে নিয়ে আজ সেন্তোসা আইল্যান্ডে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। সেখানে গিয়ে একটা মোটেল বুক করে বিশ্রাম নিতে যা যা প্রয়োজনীয় জিনিস লাগবে সবকিছুই গুছিয়ে নিয়েছে আলো। সামিনের অতিরিক্ত শার্ট, কিংবা তার শাড়ি। সবই নিয়েছে ব্যাগে।

রিসিপশনের মেয়েটি এসে সামিন আর আলোকে ডেকে নেয়। তারা মেয়েটির পিছু পিছু ডক্টরের কেবিনে যায়।

ডক্টর এনজিকে দেখে মনেই হচ্ছে না তার বয়স আটচল্লিশ বছর এবং একুশ বছরের ডাক্তারি ক্যারিয়ার। বরং তার বয়স ছত্রিশ কি আটত্রিশের কাছাকাছি মনে হচ্ছে। সামিনের দিকে তাকিয়ে একটা প্রশ্বস্ত হাসি দিয়ে বলে,”তুমিই সামিন? তোমার সাথেই কথা হয়েছিলো আমার?”
সামিন মাথা নাড়ায়। এনজি আলোর দিকে তাকিয়ে সামিনকে বলে,”তোমার স্ত্রী একজন অতি রূপবতী নারী সামিন।”

সামিন ম্লান হাসে। এনজি বলতে থাকে,”সা*র্জারির আগে আমি তোমার স্ত্রীর ক্ষ*তটা সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছি। আজ ওকে দেখবো। তারপর তোমাকে জানিয়ে দেবো কখন সা*র্জারি হবে।”

সামিন সম্মতি জানায়। এনজি উঠে দাঁড়ায়, আলোকে বলে আমি তোমার ক্ষ*তটা দেখতে চাচ্ছি আলো।

সামিন তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি বাইরে অপেক্ষা করছি ম্যাম।”

এনজি অবাক হয়ে বলে,”তুমি তো হাজবেন্ড সামিন, থাকতে পারো। ও কিছুটা মনের জোর পাবে।”

আলো আর সামিন একে অপরের মুখের দিকে অস্বস্তি নিয়ে তাকায়। কিছু সময় পরে সামিন বলে,”আপনি দেখুন ম্যাম,আমি আসছি।”

“সা*র্জারি কখন হবে?”
প্রশ্নটি করে আলো সামিনের দিকে তাকায়। সামিন বলে,”আমাদের ইন*ফর্ম করা হবে।”

আলো সংকোচ নিয়ে এদিক ওদিক তাকায়। সামিন বুঝতে পেরে বলে,”কি? অসুবিধে কোনো?”

_ওয়াশ রুমে যেতে চাচ্ছি।

সামিন আলোর হাত থেকে তার ব্যাগটা নিয়ে নেয়। তারপর বলে,”ওদিকটায় যাও, আমি এখানে অপেক্ষা করছি।”

মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আলো ডানদিকে তাকায়। তার বয়সী একজন নারী চেহারায় নতুন করে মেইকআপ লাগাচ্ছে। মহিলা আলোকে একপলক দেখে বলে,”কোন দেশ?”

_বাংলাদেশ।

_ব্যাংলাদেশ? কেনো এসেছো?

আলো কিছু বলতে যাবে তার আগেই বলে,”স্ত*ন ছোট বড় করার জন্য ডক্টর এনজি খুবই ভালো। আমি এসেছি স্ত*ন ছোটো করাতে। বেবিকে ব্রে*স্ট ফিডিং করিয়ে আমার সৌন্দর্য সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

আলোর কান গরম হয়ে গিয়েছে ভদ্রমহিলার কথা গুলো শুনে। সে কোনো জবাব না দিয়ে টিস্যু পেপার দিয়ে নিজের ভেজা মুখটা মুছে নিতে থাকে। মহিলা বলতে থাকে,”আমার কয়েকজন বান্ধবী বেশ ভালো ফল পেয়েছে। তুমিও নির্বিঘ্নে করাতে পারো।”

_সবাই এখানে ওসব করাতে আসে না ম্যাম।
নিচু স্বরে বলে আলো।

কৌতুহলী ভদ্রমহিলা বলে,”তুমি কেনো এসেছো তবে? নাক নাকি লিপসের সা*র্জারি। কিন্তু তুমি তো দেখতে খুবই চমৎকার।”

আলো কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে যায়।

সামিন দাঁড়িয়ে আছে তার ব্যাগ হাতে। মেয়র সাহেবের এই রূপ দেখে খুবই হাসি পাচ্ছে আলোর।
বৌয়ের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন গুরুগম্ভীর নেতা। সাহেবদের মতো পোশাক পরে হাতে বৌয়ের ভ্যানিটি ব্যাগ, কি এক অদ্ভুত দৃশ্য!
আলো এগিয়ে গিয়ে ব্যাগটা নিয়ে নেয়।

***
সবগুলো থিমপার্ক ঘুরে শেষমেশ সামিন আর আলো সেন্তোসা বিচের দিকে যায়। সামিন আড়চোখে আলোকে একপলক দেখে। আজ উড়ন*চন্ডী আলোকে খুবই শান্ত লাগছে, কোনো ব্যাপারেই সিন*ক্রিয়েট করছে না। অযথা প্রশ্ন করছে না, আপত্তি জানাচ্ছে না।

আলো সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে। সামিন বলে,”তুমি কখনও ঘোরাঘুরি করোনি তাইনা খুব একটা?”

আলো মাথা নাড়ায়। তারপর বলে,”সবসময় নিজের লেখাপড়া, বিভিন্ন প্রতিযোগীতা এসব নিয়েই থেকেছি। ঘোরাঘুরি বলতে ছুটি পেলে মামাবাড়ি যেতাম। আমাদের আর কোনো রিলেটিভ নেই তেমন।”

_তোমার রুমে দেখেছি একটা আলমারি ভর্তি তোমার পুরস্কার। এতো পুরস্কার কিসের জন্য ?

_ওগুলো সব রচনা লেখা,বিতর্কের জন্য পেয়েছি। আমার আর কোনো গুণ নেই। ক্লাস সিক্স থেকেই আমি বিতর্ক করি।

_তুমি বিতার্কিক? ইশমামও বিতার্কিক। ওর-ও এসবের জন্য অনেক পুরস্কার আছে বাড়িতে।

আলো অস্বস্তিতে পরে যায় ইশমামের কথা শুনে। বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই তো তাদের দুজনের আলাপ হয়েছিলো।

সামিন আলোর নীরবতা দেখে বলে,”চলো ওদিকটায় যাই।”

হাঁটতে হাঁটতে বিচের একটা ফাঁকা জায়গায় এসে তারা দাঁড়িয়ে পরে। পরিবেশ টা খুব ভালো লাগছে আলোর।

বিচে স্বামী স্ত্রী সবাই ঘনিষ্ঠ হয়ে হাঁটছে। আলো টের পেলো তার হঠাৎ করে খুব ভালো লাগছে এই দৃশ্যটাও।

“এখানে থাকবে?”
আলো সামিনের দিকে তাকায় তার কথা শুনে। সামিন বলতে থাকে,”চলো মোটেলে ঢুকি। তোমার বিশ্রাম দরকার। আমরা এখন ফিরছি না, সন্ধ্যার পরে সূর্যাস্ত দেখে ফিরবো।”

***
লিফটের দরজা খুলে যেতেই সামিন আলোর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”আজ চু*মুখোর কোনো কাপল নেই।”

আলো লজ্জিত ভঙ্গিতে হাসে। সামিন বলে,”শুরুতে আমিও তোমার মতোই খুবই বিরক্ত হয়ে যেতাম। প্রথম যখন ইউএসএ গিয়েছিলাম ইশমামের কাছে। তখন ইশমামের সামনে এমন পরিস্থিতিতে পরে গিয়েছিলাম আমি। দুই ভাই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম। ইশমাম প্রায় পালিয়ে গিয়েছিলো আমার পেছন থেকে। লিফট বন্ধ হতে পেছনে ঘুরে দেখি আমার ভাই নেই।”

আলো ফিক করে হেসে দেয়। সামিনের কাছে সে হাসি বড় মধুর লাগে। এই মেয়ে যখন হাসে তখন একে পুরো অন্যরকম লাগে।

রুমে ঢুকে সামিন ব্যাগপত্র রেখে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পরে। আলো ধীরপায়ে হেটে আয়নার সামনে যায়। নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকে, হঠাৎ গলার কাছটায় তার চোখ যেতেই মুখটা ফ্যা*কাশে হয়ে যায়।

ঘুরে সামিনের দিকে তাকায়। তারপর ছুটে গিয়ে পার্স ব্যাগ খুলে ব্যাগের সব জিনিসপত্র ঢেলে দেয় বিছানায়। সামিন উঠে বসে, অবাক হয়ে বলে,”কি হয়েছে? কি খুজছো?”

আলো আতংকিত মুখ নিয়ে বলে ওঠে,”আমি সম্ভবত….!”

_তুমি সম্ভবত কি?

_আমি সম্ভবত আপনার দেওয়া লকেট টা মোটেলে ফেলে এসেছি।

_হোয়াট!
শব্দটা উঁচু গলায় বলে সামিন। আলো মুখ শুকনো করে বসে আছে।

_মোটেলে কিভাবে ফেলে এসেছো?

_ওয়াশ রুমে, গোসলের সময় খুলে রেখেছিলাম মিররের সামনে।

সামিন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। আলোর খুব অস্বস্তি হচ্ছে।

সামিন উঠে দাঁড়ায়। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”কিছুক্ষণ একা থাকতে পারবে?”

“কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”

_সেই মোটেলে।

_এখন? এতো রাতে?

সামিন কিছু বলে না। দরজার দিকে যেতে নেয়। আলো বলে,”থাক না, বাদ দিন।”

সামিন ঘুরে তাকায় আলোর দিকে, গম্ভীর কন্ঠে বলে,”শুধু তোমার ঐ হাতের বালা দুটো না, ঐ লকেট টার সাথেও আমার অনেকটা ইমোশন জরিয়ে আছে। আমি ওটা এতো সহজে হারিয়ে ফেলতে চাচ্ছি না।”

আলো সামিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সামিন চুপচাপ রুম থেকে চলে যায়।

***

তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে আলো একই ভাবে বসে থাকে। তার নিজের ওপর নিজের প্রচন্ড রা*গ হচ্ছে। কতটা কেয়ারলেস সে! সামিনের সেই দৃষ্টি আলোকে অস্বস্তি দিচ্ছে। যাওয়ার সময় তাকে দেখে মনে হয়েছে সে আলোর উপর রা*গ করেছে তার দেওয়া উপহার এভাবে কেয়ারলেসের মতো যেখানে সেখানে ফেলে আসার জন্য। আলো বেশ অবাক হচ্ছে, সামিন তার ওপর বিরক্ত হয়েছে তাতে তার এতো খারাপ লাগছে কেনো!

জড়তা কাটিয়ে নিয়ে আলো ফোনটা হাতে নেয়। সামিনের নাম্বার ডায়াল করতেই একজন নারী কন্ঠ বলে ওঠে,”দ্যা নাম্বার ইউ আর ট্রাইং টু কল ইজ কারেন্টলি সুইচস্টপড!”

মোটেলের রিসিপশনিস্ট সামিনের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সামিন গম্ভীর কন্ঠে বলে,”আমি চে*ক করে দেখতে চাই।”

_কিন্তু স্যার, এটা তো সম্ভব না। নতুন গেইস্ট উঠেছে ওই ঘরে। আর তাছাড়া আপনাদের জিনিস,আপনাদের রেসপনসিবিলিটি ছিলো।

সামিন পকেটে থেকে কিছু ক্যাশ বের করে রিসিপশনিস্টকে দিয়ে বলে,”এখনো সম্ভব না ?”

রিসিপশনিস্ট এদিকে ওদিকে তাকিয়ে টাকাগুলো নিয়ে নেয়, তারপর বলে,”দেখছি স্যার।”

ওয়াশ রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও লকেট টা খুজে পাওয়া গেলো না।

রুমের নতুন গেইস্ট বিরক্ত ভঙ্গিতে মোটেলের ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে আছে। ম্যানেজার ফিসফিসিয়ে বলে,”উনি একজন ডি*টেক্টিভ। ওনাকে ওনার কাজ করতে দিন।”

অতিথি লোকটা অবাক চোখে সামিনকে দেখে। সামিনের চেহারা, বডি দেখে তাকে ডি*টেক্টিভই মনে হচ্ছে, চেহারায় পুরো শার্লক হোমস ভাব আছে। তাই নিজের বিরক্তি প্রকাশ না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

লকেট টা কোথাও খুজে না পেয়ে সামিন বিরস মুখে বের হয়। ম্যানেজার সামিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,”খুজে পেয়েছেন স্যার?”

সামিন তার কথার জবাব না দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে,”আমরা যাওয়ার পরে রুম ক্লিন করার জন্য যে রুম বয় এসেছিলো তার সাথে আমি কথা বলতে চাই।”

_কিন্তু স্যার এভাবে….
ম্যানেজার মিনমিন করতে থাকে। সামিন ওয়ালেট থেকে আরো কিছু ক্যাশ বের করে ম্যানেজারের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”নিয়ে আসুন ওকে।”

***
আরো একঘন্টা অতিবাহিত হয়। আলোর মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিচ্ছে। ফোনটা লাগাতার বন্ধ। আলোকে কেয়ারলেস ভাবে, আসল কেয়ারলেস তো সে নিজে! আসুক আজকে। আজ এতো এতো এতো কথা শোনাবে, ঐ ইয়াসার মির্জার জনমের শিক্ষা হয়ে যাবে!

উঠে দাঁড়ায় আলো, ফোনটা হাতে নিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে রুম ল*ক করে। তারপর হেটে লিফটের দিকে যায়।

“তুমিই মিনজো?”

উনিশ বিশ বছরের একজন ছেলে সামিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায়। তার চেহারা ভাবলেশহীন।

সামিন বলে,”দেখো মিনজো। আমি স্পষ্ট কথা এবং কাজ পছন্দ করি। তোমাকে আমি ঐ লকেটটার সমপরিমাণ মূল্য দিয়ে দেবো, তুমি আমাকে লকেট টা দাও।”

মিনজো এমন ভাবে সামিনের দিকে তাকিয়ে আছে, যেন সে কিছুই বুঝতে পারছে না।

সামিন বলে,” বিশ্বাস হচ্ছে না?”

কথাটা বলে সামিন নিজের কার্ড বের করে বলে,”চলো এক্ষুনি দিচ্ছি। তুমি শুধু আমাকে লকেট টা দাও মিনজো। এবং আমি তোমাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি এই ব্যাপারে তোমার মালিক কিছুই জানবে না।”

সামিনের হাতের কার্ড টার দিকে তাকিয়ে মিনজো আবারও সামিনের দিকে তাকায়, তারপর ঠান্ডা গলায় বলে,”আমার কাছে কোনো লকেট নেই স্যার!”

সামিনের মাথায় প্রচন্ড রা*গ উঠে যায়, কিন্তু সে তার নার্ভ ঠান্ডা করার চেষ্টা করে বলে,”দেখো মিনজো, ওটা আমি আমার ওয়াইফের জন্য খুব ভালোবেসে কিনেছি, ওটা আমার কাছে খুব ইম্পরট্যান্ট। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো। আচ্ছা আমি তোমাকে বাড়িয়ে দেবো টাকা।”

কন্ঠে আকুলতা সামিনের। সেই আকুলতা খুবই রহস্য জনক ভাবে উনিশ বছরের ছেলেটি বুঝতে সক্ষম হলো।

একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে আপন মনে মিনজো বলে,”কেনো যে আমি এতো ভালো হলাম!”

তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে পকেট থেকে সেই লকেট টা বের করে সামিনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”এখন কে*টে পরুন হিরো। আমার চাকরি যাওয়ার আগে।”

সামিন আনন্দিত চোখে লকেট টার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মিনজোর দিকে কৃতজ্ঞ ভঙ্গিতে তাকিয়ে বলে,”অসংখ্য ধন্যবাদ মিনজো। তুমি চাইলে আমি তোমাকে কিছু ক্যাশ…”

সামিন ওয়ালেট থেকে কয়েকটা নোট বের করতে থাকে। মিনজো সামিন কে থামিয়ে দিয়ে বলে,”দরকার নেই।”

তারপর কয়েক মুহূর্ত কিছু একটা ভেবে বলে,”আচ্ছা অর্ধেক দিন, ভালোমানুষীর একটা দাম আছে। ফ্রিতে ভালোমানুষী দেখানো ঠিক না।”

একটু থেমে তারপর আবার বলে,”আমার ছোটো বোনের জুতো কিনবো।”

সামিন হেসে পুরো টাকাটা মিনজোর হাতে দিয়ে বলে,”পুরোটাই নাও। তোমার নিজের জন্যও কিনে নিও।”

***
গভীর রাত, সবাই আলোর দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। আলো সরাসরি রিসিপশনে চলে যায়, রিসিপশনিস্ট মেয়েটি আলোর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,”বলুন ম্যাম, কিভাবে সাহায্য করতে পারি।”

আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”আমার স্বামী পাঁচ ঘন্টা পেরিয়ে গিয়েছে হোটেল থেকে বের হয়েছে, তার ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অন্য কোনো উপায় নেই তার সাথে যোগাযোগ করার। না আমার কাছে কোনো ক্যাশ আছে, না কার্ড। আমি কিভাবে তার সাথে যোগাযোগ করবো কিছু বুঝতে পারছি না।”

_ম্যাম আপনার স্বামী কোথায় গিয়েছে?

_সেন্তোসা আইল্যান্ড থেকে খানিকটা দূরে, হাইওয়ে সংলগ্ন এসেম্বলি পার্ক মোটেলে। আমি ঠিকভাবে বলতেও পারছি না, আমি খেয়াল করিনি অতকিছু।

আলোর গলা কাঁপছে। হাত পা কেমন অবশ হয়ে যাচ্ছে। রিসিপশনের লোকগুলো আলোর উৎকণ্ঠা বুঝতে পেরে বলে,”ম্যাম, আপনি বসুন।”

আলো বসে না, শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেনো তার বুকে সূক্ষ্ম যন্ত্রনা হচ্ছে! কেনো!

রিসিপশনের লোকগুলো নিজেদের মধ্যে কিছু আলোচনা করে, তারপর আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”ম্যাম কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছি আপনাকে। তারপর যদি আপনার মন সায় না দেয় আমরা পুলিশকে ইনফর্ম করবো! মাত্র পাঁচ ঘন্টা হয়েছে।

_মাত্র? পাঁচ ঘন্টা আপনাদের কাছে মাত্র মনে হচ্ছে? এখান থেকে সেন্তোসা আইল্যান্ড যেতে কতক্ষন লাগে? কতক্ষন!

আলোর গলা কাঁপছে! এখন সে দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। গতকাল রাতের ঘটনা মনে করে আ*তঙ্কে ভেতরটা জমে যাচ্ছে।

“তুমি সামিনের বৌ না?”
বাংলা ভাষা শুনে আলো ঘুরে তাকায়। নাফিসা কালাম আর তার হাজবেন্ড আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

আলোর আ’ত’ঙ্কি’ত মুখ দেখে তারা এগিয়ে যায়।

“আমাকে চিনতে পেরেছো? এয়ারপোর্টে দেখা হয়েছিলো? তোমরা এই হোটেলে উঠেছো? তোমার স্বামী কোথায়?”

আলো অসহায়ের মতো এদিকে ওদিকে তাকিয়ে তাদের কথার জবাব না দিয়ে রিসিপশনে ছুটে যায়। চেঁচিয়ে বলতে থাকে,”প্লিজ পুলিশকে ইন*ফর্ম করুন প্লিজ।”

নাফিসা কালাম এগিয়ে যায়। আলোর কাঁধে হাত রেখে নরম গলায় বলে,”কি হয়েছে বেটা? কোনো সমস্যা? আমাদের বলো!”

আলোর চোখের কার্নিশ ভিজে গিয়েছে। নিজেকে ধাতস্থ করে বলে,”উনি পাঁচ ঘন্টা আগে এখান থেকে বেরিয়েছেন। এখনো ফেরেননি। আমারই ভুল, আমার ওনাকে অত রাতে যেতে দেওয়া উচিত হয়নি। আমার ভুল।”

কাঁ*পতে থাকে আলো। কিছুতেই ধাতস্থ হতে পারছে না। না পারছে চোখের পানি আটকাতে।
রিসিপশনের লোকগুলো শুকনো মুখে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
আলো ধপ করে একটা সোফায় বসে পরে, বিরবির করে বলে,”কেনো! আমার সাথেই এরকম হচ্ছে কেনো!”

নাফিসা আলোর কাঁধে হাত রেখে বলে,”শান্ত হও মেয়ে, শান্ত হও। পাঁচ ঘন্টা..”

_পাচ ঘন্টার ব্যাপার নয় আন্টি। উনি এমন কখনোই করবেন না, আমি ওনাকে চিনি।

কথাটা কোনো মতে বলে শেষ করে এবং শেষমেশ কেঁদেই ফেলে পাথরকন্যা আলো।

সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। রিসিপশনের ভদ্রমহিলা পুলিশকে ইন*ফর্ম করার সিদ্ধান্ত নেয়।

“কি হয়েছে আলো।”

আলোর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামিন। সামিনের কন্ঠস্বর শুনে আলো মাথা তুলে তাকায়।

তাদের আশেপাশের লোকজন তাদের দেখতে থাকে। লবিতে একটা সোফাতে আলো বসেছিলো।

সামিন দ্রুতপায়ে তার দিকে এগিয়ে যায়। কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? কি হয়েছে?”

আলো ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। তার ভেজা দুটি চোখের দৃষ্টি সামিনের চোখের দিকে।

সামিন আলোর মুখোমুখি দাঁড়ায়।

_কি হয়েছে আলো বলো তুমি এভাবে কাঁদছো কেন?

আলো চুপ করে সামিনের চোখের দিকেই তাকিয়ে থাকে।

সামিন রাগী গলায় বলে,”উত্তর দাও, কাঁদছো কেনো মেয়ে! কি হয়েছে তোমার?”

আলো কোনো জবাব দেয়না, পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে সে এবং পরক্ষনেই সামিনকে অবাক, হতবাক, হতভম্ব এবং চমকে দিয়ে হুট করে সবার সামনে সামিনকে জরিয়ে ধরে।

ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব সামিন। বোকার মতো চারদিকে তাকাচ্ছে।

চলমান….