#বধূ_কোন_আলো_লাগলো_চোখে
#পর্বসংখ্যা_৫৭
#Esrat_Ety
হসপিটালের সামনে দলের ছেলেদের ভিড়। সবাই এমন ভাবে দাড়িয়ে আছে যেন এখান থেকে একটা স্বস্তির খবর না নিয়ে তারা যাবে না।
ধীরপায়ে এগিয়ে যাচ্ছে আলো, আতাউর আলম মেয়ের হাত ধরে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরে আলো বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠে,”হাত ছাড়ো আব্বু। আমি হাঁটতে পারি।”
আতাউর আলম হাত ছেড়ে দিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকায়। মুখটা কেমন কাঠিন্যতায় ছেয়ে আছে।
কেবিনের বাইরে করিডোরে দাঁড়িয়ে ইশমাম আর ইলহাম ডক্টরের সাথে কথা বলছে।
পাশে দাঁড়িয়ে ইশিতা মুখে ওড়না চেপে কেঁ’দে যাচ্ছে। তাকে শান্তনা দিচ্ছে শান্ত।
আলো এগিয়ে যায়। সবাই করুণ দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকায়। তাকাবেই তো অমন করে, স্বামীর এক্সি*ডেন্ট হয়েছে, সবাই ভাবছে আলো ভে’ঙে পরেছে। কিন্তু ওরা কেউ জানে না আলো ঠিক কি।
ডাক্তার আলোকে দেখে কিছু বলার আগেই আলো স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,”জ্ঞান ফিরতে কতক্ষন লাগবে? না না, জ্ঞান না, উনি ঠিক কতক্ষনে কথা বলতে পারবে বলতে পারেন?”
আলোর কন্ঠের দৃঢ়তা ডাক্তারকে খুব অবাক করেছে। ইশমাম আর ইলহাম তাকিয়ে আছে আলোর দিকে। কিছু সময় পরে ডাক্তার বলে ওঠে,”আটচল্লিশ ঘন্টার আগে তো জ্ঞান ফিরবে না ধারণা করছি, কথা বলার মতো পরিস্থিতি কবে হবে তা বলতে পারছি না। খুবই বিশ্রী ভাবে ইনজ্যুরড। আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
আলো একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”ঠিকাছে। বুঝতে পেরেছি।”
কেবিনের দরজার দিকে একপলক তাকিয়ে ডাক্তারকে আবারও বলে ওঠে,”একটু যেতে চাচ্ছি আমার স্বামীর কাছে। কিছুক্ষণের জন্য। অনুগ্রহ পূর্বক অনুমতি দিন।”
ডাক্তার প্রথমে রাজি হতে না চাইলেও আলোর শীতল আচরণ দেখে রাজি হলেন। যথেষ্ট প্রাপ্তবয়স্ক মনে হচ্ছে মেয়েটাকে। কোনো চেঁচামেচি, কান্নাকাটি হয়তো করবে না।
মাথা ঝাঁকিয়ে আলোকে বলে,”হ্যা। যাও। কান্নাকাটি করো না।”
আলো ম্লান হাসে। ক্লান্ত অবসন্ন দুটি চোখে করিডোরে থাকা প্রত্যেকের দিকে একবার করে তাকিয়ে ধীরপায়ে হেঁটে সামিনের কেবিনে ঢোকে।
***
একটা চেয়ার টেনে বেডের একদম পাশে বসেছে আলো। যদিও ডক্টর আলোকে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতে বলেছিলো।
সামিনের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। সাদা রঙের চাদর দিয়ে গা ঢেকে রাখা। মাথায় ব্যান্ডেজ। ডান গালে একটা চোখে লাগার মতো ক্ষ’ত। ফরসা মুখটাতে বুঝি পার্মানেন্টলি একটা দাগ বসে গেলো। চোখ ঘুরিয়ে বেডের পাশে মনিটরে চোখ রাখে আলো। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে সামিনের দিকে তাকায়।
অনেকটা সাহস নিয়ে চাদর সরিয়ে সামিনের হাতের ওপর হাতটা হাতটা রাখে। উষ্ণ হাতটার আঙুলের ফাঁকে আঙুল রেখে সামিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”আমাদের গল্পে একমাত্র আপনিই বাকি ছিলেন হসপিটালে এডমিট হওয়ার। আজ ষোলকলা পূর্ণ করে দিলেন। যাই হোক, আপনাকে এভাবে একদম মানায় না। আপনাকে পাঞ্জাবি পরে,হাতা গুটিয়ে রাখলে বেশ সুন্দর লাগে।”
একটু থেমে আলো সামিনের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে ওঠে,”জীবনের এই পরিস্থিতিতে আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি আপনাকে আজীবন ঘৃ’ণা করবো মেয়র সাহেব। আজীবন।”
মাথা তুলে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে। ইচ্ছে করছে সামনে শুয়ে থাকা মানুষটার বুকে মাথা রাখতে। ইচ্ছে করছে সমস্ত যন্ত্রনার ভর ঐ মানুষটার গায়ে ছেড়ে দিতে।
গলার কাছে কান্না দলা পাকিয়ে উঠতে চেয়েছিলো। আলো রানী তা পাত্তা না দিয়ে ঠান্ডা গলায়, দৃঢ়তার সাথে বলে ওঠে,”আমার আপনাকে লাগবে লাগবে লাগবে, বুঝতে পেরেছেন আপনি? আমার শুধু আমার স্বামীকে চাই।”
***
ডক্টর ভিজিট করে চলে গিয়েছেন কিছুক্ষণ আগে। আলো একটা লম্বা বেঞ্চিতে বসে বসে ঝিমুচ্ছিলো। কিছুক্ষণ আগে বেশ কয়েকবার বমি হয়েছে তার। শরীরটা অসম্ভব ক্লান্ত। মাথা ঘুরিয়ে দেখে ইলহাম আর ইশিতা মুখোমুখি একটা বেঞ্চিতে মাথা নিচু করে বসে আছে। শান্ত আর পরী এতক্ষণ ছিলো। শান্ত অফিসে চলে গিয়েছে, পরী ক্লাসে। আতাউর আলম তখন থেকে করিডোরের এমাথা থেকে ওমাথা পায়চারি করছে।
সকাল পেড়িয়ে প্রায় দুপুর হতে চলেছে। হঠাৎ তার সামনে এসে ইশমাম একটা টিস্যু পেপারে মোড়ানো স্যান্ডউইচ ধরে। আলো মাথা তুলে ইশমামের দিকে তাকায়। ইশমাম ঠান্ডা গলায় বলে,”আমরা সবাই খেয়েছি। শুধু তুমিই বাকি আছো। খেয়ে নাও।”
আলো দৃষ্টি নামিয়ে ইশমামের হাতের স্যান্ডউইচের দিকে তাকায়। কিচ্ছু মুখে দিতে ইচ্ছে করছে না এখন। কিন্তু তাকে খেতেই হবে, ঐ অপদার্থ লোকটার চিন্তায় চিন্তায় তার ভেতরের ছোট্ট প্রানটাকে সে একদম কষ্ট দেবে না, কখনোই না। একমিনিট কিছু একটা চিন্তা করে ইশমামের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,”এসব খাবো না। তুমি ক্যান্টিন থেকে আমার জন্য দুটো ডিম,এক বোতল দুধ আর কিছু ফল নিয়ে এসো।”
ইশমাম আলোর দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। আলোর এতো স্বাভাবিক আচরণ সবার কাছেই বেশ অস্বাভাবিক লাগছে। আতাউর আলম এসে আলোর সামনে দাঁড়িয়ে পরে, নরম গলায় বলে ওঠে,”কি আম্মু? কি লাগবে?”
_দুটো সেদ্ধ ডিম,এক বোতল দুধ, আর কিছু ফল। যাও কেউ নিয়ে এসো।
ইশমাম দ্বিতীয় বারের মতো আলোর আদেশ শুনে কোনো বাক্য ব্যয় না করে ক্যান্টিনে চলে যায়।
ডিম দু’টো মনের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে আলো খেয়েছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি আবার বমি এসে যাবে। ডিম দু’টো শেষ করে একটা খেজুর খেয়ে দুমিনিট বিরতি নিয়ে দুধের বোতলটা হাতে তুলে নেয়। ছিপি খুলে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বাম হাতে নাক চেপে ধরে ঢকঢক করে পুরো বোতল খালি করে।
দূরে বসে সবাই হা হয়ে আলোর কান্ডকারখানা দেখতে থাকে। আতাউর আলম মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। মেয়েটাকে স্বাভাবিক লাগছে না।
সামিনের অবস্থা একই রকম। সন্ধ্যায় আলো কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে দরজার কাচ দিয়ে কিছুক্ষণ দেখে ঘুরে দাঁড়ায়। ধীরপায়ে হেঁটে ইলহামের কাছে গিয়ে বলে,”তোমরা কে থাকবে এখানে ভাইয়া? আমি রাত জাগতে পারবো না। কে থাকতে চাচ্ছো?”
আলোর কথা শুনে সবাই বারবার শুধু অবাক হতে থাকে। ইশিতা উদ্বিগ্নতার সাথে বলে,”তুমি কি অসুস্থ ভাবী? শরীর খারাপ তোমার?”
_না আমি অসুস্থ নই, শুধু আমার শরীরটা একটু বিশ্রাম চাচ্ছে।
ইশিতা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে,”তুমি মেজো ভাইয়া আর ইশমামের সাথে বাড়িতে যাও তবে। আজ আমি থাকবো। যাও।”
_আচ্ছা।
আলো অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে।
আতাউর আলম প্রথমে যেতে চায়নি,ইশিতা জোর করে তাকে আর রেহেনাকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়িতে। দরজার কাচ দিয়ে ভাইকে একপলক দেখে গিয়ে বেঞ্চিতে বসে থাকে চুপচাপ।
হসপিটাল রোড থেকে মোড় ঘুরতেই হাইওয়েতে জ্যামে পরেছে ইলহামের গাড়ি। বিরক্ত ভঙ্গিতে বসে আছে সে।
আলো গাড়ির জানালার বাইরে চোখ রাখে। গতকাল ভয়াবহ ঝড়ের পরে আজকের রাতের আকাশটা বেশ নীলাভ কালো।
দৃষ্টি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সবকিছু দেখতে দেখতে হঠাৎ দূরের সিগন্যালে চোখ যায়। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে মাথা ঘুরিয়ে ইশমাম আর ইলহাম দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলে,”তোমরা কেউ ঐ সিগন্যালের ওখান থেকে কদবেল কিনে আনো। আমার খুব কদবেল ভর্তা খেতে ইচ্ছে করছে।”
ইশমাম আর ইলহাম একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। তারা এবার মোটামুটি নিশ্চিত আলোর মাথা খারাপ হয়েছে। কয়েক মূহুর্ত সময় নিয়ে ইশমাম বলে ওঠে,”আর ইউ শিওর?”
_হু।
ইশমাম গাড়ি থেকে নেমে চারটা কদবেল কিনে গাড়িতে উঠে বসে আলোর হাতে দেয়।
বাড়িতে এসে আলো প্রথমেই গোসল করে নামাজ আদায় করে নেয়। তারপর বিছানায় বেশ আয়েশ করে বসে হাতের পেয়ালা থেকে কদবেল ভর্তা খেতে থাকে।
রাত প্রায় এগারোটা বেজে গিয়েছে। আলোর ঘুম প্রয়োজন। তার রাত জাগলে চলবে না। বিছানা ঠিক করে টান টান হয়ে শুয়ে পরে সে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থেকে ধীরে ধীরে ডানহাত টা নিজের তলপেটের ওপর রাখে। ধরা গলায় বিরবির করে বলে ওঠে,”আজকেও তোর বাবা তোর কথা জানলো নারে।”
একটু থেমে আবারও বলতে থাকে একা একা,”সবার মতো তুইও ভাবছিস আমি কাঁদছি না কেনো তাইনা? আমি আসলে স্ত্রী হবার পনেরো তম শর্ত পালন করছি।”
***
শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে সামিনের ব্যবহৃত জামাকাপড় ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ঘরে এসে ঘরটা একটু গোছগাছ করতে থাকে। রিতু ইরফানকে নিয়ে এসে দরজার কাছে দাড়ায়। সে এই মাত্র হসপিটাল থেকে এসেছে।
আলো রিতুকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এসে ইরফানকে কোলে তুলে নিয়ে ইরফানের সাথে একা একা কথা বলতে থাকে। রিতু আলোকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। সামিনের এক্সি*ডেন্টের পরে একটুও ভে*ঙে পরেনি। কিন্তু এখন একটু বেশিই অস্বাভাবিক লাগছে আলোকে। এতোটা কাঠিন্যতা একজন স্ত্রীর সাথে যায়না।
ইশমাম এসে দরজার বাইরে দাঁড়ায়। আলোর দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে বলে,”হসপিটাল যাচ্ছি। তুমি যাবে ভাবী?”
আলো ইশমামের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে? কথা বলতে পারছে?”
_নাহ।
_তাহলে আমার গিয়ে কাজ নেই। গিয়ে ঐ ভ*ন্ড লোকটার মুখ দেখবো বসে বসে? আমার তো ওনার সাথে বোঝাপড়া আছে। যখন কথা বলার অবস্থায় ফিরবে তখন আমাকে বলবে।
ইশমাম চুপচাপ চলে যায়। রিতু অবাক চোখে আলোকে কিছুক্ষণ দেখে ইরফানকে নিয়ে চলে যায়।
আলো আবারও ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পরে। বিছানায় নতুন চাদর বিছিয়ে দেয়। ইদানিং সবকিছু নিয়ে মনটা কেমন খুঁতখুঁতে হয়ে গিয়েছে। অবশ্য সে জানে এই সময়ে হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অবসাদ ঘিরে ধরে। মন ভালো রাখার জন্য একটা পরিপাটি সুন্দর শোবার ঘর, কিছু ভালো বই এখন খুব জরুরি। ঘরটাকে গুছিয়ে নিয়ে লাইব্রেরী থেকে বেছে বেছে কিছু বই আনতে হবে।
হুট করে বমি ভাব হতেই আলো দৌড়ে বেসিনের কাছে যায়। হরহর করে বমি করে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে বেরিয়ে এসে গোছানো বিছানাটা অগোছালো করে শুয়ে পরে। শরীরটা বিছানার সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে যেন!
চিৎ হয়ে শুয়ে সিলিংয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে দীর্ঘসময় । চোখের কার্নিশে হঠাৎ দুফোঁটা তরল জমা হয়। শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে ফেলে মনে মনে বলে ওঠে,”কল্পনা করে রেখেছিলাম আপনাকে খবরটা দিতেই আপনি পাগলের মতো চিৎকার দিয়ে আমাকে আগলে নেবেন। কোলে তুলে উন্মাদের মতো আনন্দ করবেন। আদরে ভরিয়ে দেবেন আমার কপাল। আজ খবরটা জানার আটচল্লিশ ঘন্টা হয়ে গিয়েছে। অথচ আপনিই এখনও জানলেন না।খুব ফাকা ফাকা লাগছে আমার মেয়র সাহেব। খুব। আপনার আছিয়া কেমন আপনার আদর শূন্য হয়ে পরে আছে দেখুন।”
***
দলের ছেলেরা কিছুক্ষণ পরপর তাদের ভাইয়ের খোঁজ নিতে ছুটে আসছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক এসোসিয়েশনের লোকজন থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছে। ফুয়াদ, জামিল সবার সাথে কথা বলছে। আতাউর আলম আর রেহেনা বেঞ্চিতে বসে আছে। রেহেনা সেই তখন থেকে রাগে কাঁ*পছে। আতাউর আলম একটু পর পর স্ত্রীকে শান্ত থাকবার পরামর্শ দিচ্ছে।
“কি শান্ত হবো আমি? ওটা কেমন মেয়ে? দিল এত শক্ত। স্বামীর প্রতি কোনো দরদ নেই। ওর শশুরবাড়ির লোক কি ভাবছে বলোতো ?”
_শরীর টা হয়তো খারাপ।
আমতা আমতা করে বলে ওঠে আতাউর আলম।
_কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছো তুমি? না আছে কোনো সহবত, না জানে কোনো আদব কায়দা। শরীর ভর্তি শুধু জেদ, স্বার্থপরতা।
_আমাকে বলছো কেনো? জন্ম কি আমি একা দিয়েছি?
রেহেনা চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”বিপদে স্বামীর পাশে না থেকে বাড়িতে গিয়ে আয়েশ করছে। অমন মেয়ে আমার ছেলের বৌ হলে কবে ঘার ধা*ক্কা দিয়ে বের করে দিতাম।”
ফুয়াদ দূর থেকে রেহেনা আতাউরকে দেখে ইশিতার দিকে তাকিয়ে বলে ,”ওনাদের কি হয়েছে?”
_ভাবী কেনো হসপিটালে আসছে না এজন্য আন্টি আংকেলকে রাগারাগী করছে।
ফুয়াদ বলে,”কথা হয়েছে আলোর সাথে? কেনো আসছে না? অসুস্থ?”
ইলহাম পাশ থেকে উঠে বলে,”না সুস্থ। জানি না কেনো আসে না। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলে জ্ঞান ফিরলে খবর দিও। আজ সকালে ইশমাম খাবার টেবিলে বসে জানতে চেয়েছে, জবাব না দিয়ে আচারের বৈয়ম নিয়ে উঠে গিয়েছে।”
ইশিতার সামান্য খটকা লাগলেও কিছু চিন্তা করার আগেই ফুয়াদ বলে ওঠে,”ডক্টর কি বলছে?”
_স্টেবল । আল্লাহ সহায় হয়েছেন।
***
চালতা, কাঁচা আম, তেঁতুল, আমড়া, জলপাই । সবধরনের আচারের বৈয়ম সাজিয়ে রাখা। সবগুলো একটু একটু করে টেস্ট করে হাতে চালতার আচারের বৈয়ম টা তুলে নেয়। টেবিলের ওপর থেকে হুমায়ূন আহমেদের বহুব্রীহি বইটা নিয়ে বিছানায় এসে বসে পরে।
সারাদিন বই পরে, আচার খেয়ে কাটে তার। মনটা সারাক্ষণ উতলা হয়ে থাকে মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য। কিন্তু সাহেবের জ্ঞান এখনো ফিরছে না। আলোর ধৈর্য্য পরিক্ষা করছে আসলে। ধৈর্য্যের পরিক্ষা কি ইয়াসার মির্জা একাই দেবে? এখন আলোও একটু দিক।
উপন্যাসটা তাকে টানছে না। বইটা যথাস্থানে রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই থ’মকে যায়। মাথাটা ঘুরছে। কপালে কিছুক্ষণ হাত চেপে রেখে হাত টা ধীরে ধীরে তলপেটে রাখে। বিড়বিড় করে বলে,”তুই ছেলে না মেয়ে? প্লিজ ছেলে হোস না। আমি দু’টো ইয়াসার মির্জাকে সামলাতে পারবো না।”
রাত প্রায় অর্ধেক ফুরিয়ে গিয়েছে, ঘুম আসছিলো না দেখে আলো ওযু করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলে তার মনের সমস্ত অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। মোনাজাত শেষ করে উঠে দাড়াতেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হয়। জায়নামাজ যথাস্থানে রেখে দরজা খুলে দেখে ইশমাম দাঁড়িয়ে। হাত ঘড়ি টা হাতে পরে নিতে নিতে তাড়াহুড়ো করে বলে,”ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছে চলো।”.
_কথা বলতে পারছে?
_জ্ঞান ফিরেছে,কথাও বলতে পারবে।
_যাও তুমি, যখন কথা বলতে পারবে তখন এসে আমাকে নিয়ে যেও।
ইশমাম কিছুক্ষণ অবাক চোখে আলোকে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আলো দরজা বন্ধ করে জলপাইয়ের আচারের বৈয়ম টা হাতে নিয়ে বিছানার ওপর বসে পরে।
***
গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট করতে গিয়ে দেখে পরীও দরজা থেকে তাড়াহুড়ো করে বের হচ্ছে। ইশমাম ম্লান হেসে জিজ্ঞেস করে,”কোথায় যাচ্ছো?”
পরী বিনয়ের সাথে বলে,”হসপিটালেই। ভাইয়াকে দেখতে।”
ইশমাম হুট করে বলে ওঠে,”এসো,আমি পৌঁছে দিচ্ছি। আমিও ওখানেই যাচ্ছি।”
পরী লাজুক হেসে সম্মতি দেয়। গাড়িতে ওঠার আগে দাঁড়িয়ে পরে, ইশমাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। পরী বলে,”ইশিতা আপুর ফোনের চার্জার টা নিতে ভুলে গিয়েছি।”
_ঠিকাছে যাও। আমি অপেক্ষা করছি।
পরী মাথা নাড়িয়ে অন্দরমহলে চলে যায়। ইশমাম চুপচাপ বসে আছে গাড়িতে।
কিছুক্ষণ পরে পরী বেরিয়ে আসে ভেতর থেকে। মিররে ইশমাম পরীকে দেখছে। তাড়াহুড়ো করে হেঁটে আসছে মেয়েটা। ইশমামের হঠাৎ মনে হলো এক্ষুনি হুমরি খেয়ে পরবে পরী। কথাটা ভেবেই মিরর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে কয়েক মুহূর্ত পরে আবারও মিররে চোখ রাখে। তখন দেখে পরী নেই। আশ্চর্য! মেয়েটাকে তো এইমাত্র আসতে দেখলো সে। দরজা খুলে বাইরে নেমে ইশমাম হতভম্ব হয়ে যায়।
সে যেমনটা কল্পনা করেছিলো পরী ঠিক সেভাবেই হুমরি খেয়ে পরে আছে। ইশমাম না চাইতেও উচ্চশব্দে হেসে ফেলে। পরী মাথা তুলে ইশমামের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। মুখটা এমন করে রেখেছে যেন সে কোনো অপরাধ করে ফেলেছে।
ইশমাম হাসতে থাকে,হাসতে হাসতে বলে ওঠে,”তুমি কারো লাইফে শান্তনা পুরস্কার হবে কি না জানি না। তবে তুমি পৃথিবীতে এক পিসই। তোমার মতো শান্তনা পুরস্কার কোনো পুরুষ আর কোথাও খুঁজে পাবে না।”
পরী ইশমামের কথায় রিয়াক্ট করে না। উল্টো তাকিয়ে আছে তার দিকে। এই লোকটার হাসি অসম্ভব সুন্দর।
ইশমাম হাসি থামিয়ে পরীর দিকে তাকিয়ে বলে,”সরি হাসার জন্য!”
পরী নিচু স্বরে বলে ওঠে,”আপনি আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবেন? আমি সালোয়ার কামিজটা বদলে আসছি!”
***
ভাইবোনের মুখের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসে সামিন। সবাই চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে আছে। ফুয়াদ নীরবতা ভেঙে বলে ওঠে,”তোর বিয়ের পর থেকে সবগুলো ভ্যাকেশন ট্রিপ আমার ক্যান*সেল করতে হয়েছে। তুই আমার সাথে এমন কেনো করিস?”
_সরি।
মৃদু স্বরে বলে ওঠে সামিন।
ইশিতা বলে,”আমার আর শান্তর রিসিপশন টা ভেস্তে দিলে। তুমি এতো খা’রাপ কেন ভাইয়া?”
সামিন হেসে বলে,”সরি।”
মাথা ঘুরিয়ে ইশমামের দিকে তাকায় সামিন, ইশমাম পকেট থেকে সামিনের কার্ড বের করে বলে,”ল্যাপটপ টা ভে’ঙে ফেলেছো। সব টাকা আমি ঐ প্রজেক্টে লাগিয়েছিলাম। আপাতত এই কার্ড টা আমার কাছে থাকবে। আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন দেবো।”
মৃদু হেসে সামিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথা ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকায়। ইশিতা বলে,”ভাবীকে খুজছো? ভাবী আসেনি।”
সামিন আলোকেই খুঁজছিলো। তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে আলো কি বলতে চেয়েছিলো সেদিন রাতে। খুব জানতে ইচ্ছে করছে। ইশিতার দিকে তাকিয়ে সামিন বলে ওঠে,”তোদের ভাবী তোদের কিছু বলেছে?”
_কি বলবে?
_কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা?
ইশিতা মাথা নাড়ায়। সামিন বলে,”কিছুই বলেনি? আমার ব্যাপারে কিছুই বলেনি?”
_বলেছে।
ফুয়াদ বলে ওঠে। সামিন উৎসাহের সাথে বলে ওঠে,”কি বলেছে?”
_বলেছে তুই একটা ভ’ন্ড। অপ*দার্থ।
সামিনের মুখটা শুকিয়ে যায়। ঠিক তখনই ইলহাম কেবিনে ঢুকে বলে,”ভাবীকে নিয়ে এসেছি। তোরা বাইরে যা। ”
মৃদু বাতাসে কেবিনের জানালার পর্দা নড়ছে। আলো সেদিকে একবার তাকিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। সামিন একদৃষ্টে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে খুবই অসুস্থ দেখাচ্ছে।
ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে আলো একটা চেয়ার টেনে সামিনের বেডের পাশে বসে। সামিনের চোখে চোখ রেখে ঠান্ডা গলায় বলে, “স্বামী হবার একটাই শর্ত। সেটা হলো সারাজীবন স্ত্রীকে আগলে রাখা, ভালোবাসা,আদর,যত্ন,আহ্লাদে। নিজের কাছে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ধরে রাখা, মাথার স্ক্রু ঢিলা হয়ে যাওয়া স্ত্রী ছেড়ে যেতে চাইলেও কখনোই তাকে যেতে না দেওয়া।
এমন বড় বড় কথাই বলছিলেন না সেদিন? তারপর? তারপর কি করলেন? নিজেই ছেড়ে যাচ্ছিলেন? এতটা অতিষ্ঠ করে দিয়েছিলাম আপনাকে আমি!”
সামিন ম্লান হাসে। আলো বলতে থাকে,”নির্লজ্জ লোক! লজ্জা করে না এখন হাসতে? ইচ্ছে করছে আপনাকে….”
_স্বামীর গায়ে হাত তুলতে নেই আছিয়া।
মৃদু আওয়াজে বলে সামিন। আলো চুপচাপ তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ সামিনের দিকে, কঠিন দৃষ্টি দিয়ে। ক্ষণবাদেই সামিনের ডান হাতটা টেনে নিয়ে অসংখ্য চু’মু খেতে থাকে সেই হাতে। চুমু খেতে খেতে চাপা কান্নায় ভে’ঙে পরে আলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় সামিন। কয়েক মূহুর্ত আগের কঠিন রূপটা হঠাৎ এমন হয়ে গিয়েছে কেনো! কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে সামিন বলে ওঠে,”থামো। থামো আলো।”
আলো থামেনা, উন্মাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে সামিনের হাতটা দুহাতে আগলে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলতে থাকে,”শুনতে চাই না কি হয়েছিলো। জানতে চাই না কি হচ্ছে। শুধু দেখতে চাই আমি। আমাদের আগামীর দিনগুলো আপনাকে পাশে নিয়ে দেখতে চাই আমি।”
সামিন বাম হাতটা উঠিয়ে আলোর হাতের উপর রেখে নরম গলায় বলে,”ভে*ঙে পরেছিলে এভাবে?”
আলো মাথা নেড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”মোটেও না। স্ত্রী হবার পনেরো তম শর্ত হচ্ছে স্বামীর বিপদে মনের জোর হারাতে নেই। সেটাই পালন করছিলাম। আর তাছাড়া,আমি ভেঙে পরলে আমাকে সামলাতো কে? আপনি যে ছিলেন না। আমার তো নিজেকে সামলাতে কেবল আপনাকেই প্রয়োজন।”
_তবে এখন কাঁদছো কেন?
_আপনাকে সুস্থ দেখে একটু ভে’ঙে পরতে ইচ্ছে হলো।
সামিন ম্লান হাসে। আলো সামিনের চোখে চোখ রেখে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে ওঠে,”ভেঙে পরলে আরেকজনের যে খুব কষ্ট হতো। তখন তো আপনিও কষ্ট পেতেন।”
সামিন আলোর কথা বুঝতে না পেরে বলে,”মানে?”
আলো চোখের পানি মুছে লাজুক হাসি হাসে। সামিনের ডানহাত টা টেনে নিজের পেটে চেপে ধরে বলে ওঠে,”কেউ আসতে চলেছে মেয়র সাহেব। আপনি যাকে খুব করে চাইতেন।”
সামিন বোকার মতো আলোর দিকে তাকিয়ে আছে। তার এখন কি করা উচিত!
আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,”খুব ইচ্ছে করছে তাইনা আমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে? কি লাভ! সে পথ তো নিজেই বন্ধ করে দিয়েছেন! পা দুটোর কি হাল করেছেন। আপনার পা ঠিক হতে হতে আমাদের বাচ্চা হাঁটতে শিখে যাবে সম্ভবত মেয়র সাহেব।”
সামিনকে খোঁচা মেরে কথা বলতে বলতে আলো খেয়াল করলো না তার সামনে বেডে বসে থাকা মানুষটা কতটা আবেগী হয়ে উঠেছে। কতটা ছ’ট’ফ’ট করছে তার ভেতরটা আলোকে জরিয়ে ধরার জন্য। আলো সামিনের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি?”
সামিন গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে বলে,”এদিকে এসো!”
আলো চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে বেডের একপাশে বসে। সামিন বলতে থাকে,”আমাকে জরিয়ে ধরো । শক্ত করে।”
আলো সামিনকে জরিয়ে ধরে। কিছুক্ষণ দুজনে চুপচাপ থাকে। সামিন নরম গলায় বলে ওঠে,”আমি আর ওভাবে গাড়ি চালাবো না কখনও।”
আলো চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ তারপর বলতে শুরু করে,”কি বলেছি বুঝতে পেরেছেন? শুধু ভবিষ্যত নিয়ে ভাববো আমি। আপনি এমপি ইলেকশন ল’ড়বেন। স্ত্রী হিসেবে সবসময় আমি আপনার পাশে থাকবো। রাজনীতি করবেন,আমাকে সময় দেবেন,বাচ্চাকে সময় দেবেন, ভাই-বোনকে দেখবেন।
সামনে আমাদের কত কাজ। ইশিতার রিসিপশন, ইশমামের জন্য মেয়ে দেখা, ইহানের সুন্নতে খৎনা, আমার শ্বশুরের মৃত্যুবার্ষিকী। কত কাজ সামনে আমাদের দুজনের। ঐ বাড়ির অভিভাবক আমরা দুজন। আমাদের ঠিক থাকতে হবে না? বলুন?”
এপর্যন্ত বলে আলো থেমে দুহাতে সামিনের গাল আগলে ধরে সামিনের চোখে চোখ রেখে বলে,”বলুন! আমাদের ঠিক থাকতে হবে না? আমরা কি ও বাড়ির অভিভাবক নই?”
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সামিন মাথা নাড়ায়। আলো আবারও সামিনকে জরিয়ে ধরে। সামিন আবেশে দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে। আলো বলতে থাকে,”এবার আমার সাথে শপথ বাক্য পাঠ করতে থাকুন মেয়র সাহেব।”
সামিন দু’চোখ বন্ধ করেই বলে ওঠে,”কেমন শপথ বাক্য?”
_যা বলবো সাথে সাথে বলবেন। বলুন আমি সামিন ইয়াসার মির্জা শপথ করিতেছি যে।
_আমি সামিন ইয়াসার মির্জা শপথ করিতেছি যে।
_আমি আমার বৌয়ের একান্ত বাধ্য স্বামী হয়ে থাকিব এবং জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে তার কাছ থেকে মতামত নেবো।
সামিন হেসে আলোকে রিপিট করে।
আলো বলতে থাকে,”আমি ইয়াসার মির্জা এও শপথ করিলাম যে আমার দুই ভাই, ইলহাম এবং ইশমাম । বাবা মায়ের অবর্তমানে আমিই তাদের একমাত্র অভিভাবক। আমার যথাসাধ্য চেষ্টা থাকিবে তাদের জীবনকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দেওয়া এবং তাদের আগলে রাখার। তাদের জীবনের সামনের পথগুলো পাড়ি দিতে তাদের পথপ্রদর্শক হওয়া।”
সামিন বা হাতে আলোকে আগলে ধরে রিপিট করে কথাগুলো।
আলো বলে,”আমার ছোটো বোন ইশিতা এবং ভগ্নিপতির সহিত আজীবন সুসম্পর্ক বজায় রাখিবো।”
সামিন হেসে রিপিট করে।
আলো থেমে গিয়ে সামিনের দিকে তাকায়। কপাল কুঁচকে বলে,”হাসছেন কেনো আপনি? আমি মজা করছি?”
সামিন মাথা নেড়ে বলে,”না।”
সকালের কড়া মিষ্টি রোদ এসে জানালা থেকে সরাসরি কেবিনের ভেতরে প্রবেশ করে। সামিনের গালে রোদের স্পর্শ লাগতেই চোখ নাক কুঁচকে ফেলে সে। আলোর দিকে তাকিয়ে বলে,”যাও তো। গিয়ে জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিয়ে এসো তো।”
আলো বলে,”কেনো। আলোটা ভালো লাগছে তো।”
সামিন ম্লান হেসে আলোর হাত ধরে বলে,”আমার জীবনে আলো আছে তো। আমার আর ঐ আলোর প্রয়োজন নেই।”
চলমান…..