#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৩
#লেখিকা : সাদিয়া
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
ভাই পরিচয়টা যেন পছন্দ হলো না ফয়সালের, সোজা গিয়ে ওর বুকে বিধলো। ও তো আর নিশার মায়ের পেটের ভাই না। ফয়সাল ফট করে উত্তর দিল : আপন ভাই না, মামাতো ভাই।
আয়না তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফয়সালের দিকে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আবসারের সাথে মিলিয়ে দেখছে। ফয়সাল বেশ ফর্সা কিন্তু আবসারের গায়ের রংটা একটু চাপা যদিও আগে এতটা চাপা ছিল না আর্মিতে যুক্ত হবার পর অতিরিক্ত পরিশ্রম, রোদে পুড়ে গায়ের রংটা একটু চেপে গেছে। ফয়সাল বেশ স্টাইলিশ , সর্বাঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া সেখানে আবসার সাদা সিধে। লম্বা দুই জনই সেইম সেইমই। ছেলেটাকে সম্পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করতে মাথার দিকে তাকাতেই আঁতকে উঠলো আয়না। ও আগে থেকেই জানে নিশার ছেলেদের চুলের প্রতি আলাদা একটা ভালো লাগা আছে। এই ছেলের চুলগুলো তো একদম নিশার পছন্দমতো আর আবসারের চুলগুলো একদম জিরো সাইজ। এখন কি হবে?
এর মধ্যে হঠাৎ আবসার বলল – এখন তাহলে যাওয়া যাক।
আবসারকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো ফয়সালের। চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল – আপনি সেই লোকটা না যাকে শপিং মলে নিশার সাথে দেখেছিলাম।
আবসার ছোট করে জবাব দিলো : হুম।
ফয়সাল বলল – তুমিও কি নিশার ফ্রেন্ড? দেখতে তো ওদের থেকে বয়স্ক লাগছে ।
আবসার ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো – প্রথমত তুমি নয় আপনি বলো আমি তোমাদের থেকে কমপক্ষে ১০ বছরের বড়। যদিও আমাকে দেখতে ততটা বয়স্ক মনে হয় না, এখনও তোমাদের থেকে ইয়ং লাগে।
আবসারের কথা শুনে নিশার পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু ভয়ে হাসতেও পারছে না। এই লোক বলে কিনা ওদের থেকে ইয়ং লাগছে। লাগুক ইয়ং তাই বলে কি বয়স থেমে আছে , বয়সে তো সেই ঢেমনা বুড়ো। ওরা কেবল ২০ এ পা রেখেছে আর সেখানে আবসারের বয়স ৩০ এর কোঠায়। নিশার কাছে এই আবসার নামক বান্দাকে আগে বয়স্ক না লাগলেও এখন লাগছে। আয়নাও মুখ টিপে হাসছে, ও ঠিক বুঝতে পারছে আবসার জেলাসিতে এইসব কথা বলছে, না হয় ও কখনও এই সব কথা বলার লোক নয়।
এবার নিশা মুখ খুলল , বলল – আমরা এখন আসি ভাইয়া, বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম তো তাই আর কি?
ফয়সাল অবাক হয়ে বলল – তোদের থেকে ১০ বছরের বড় এই লোকও কি তোদের বন্ধু?
নিশা বলল – না ও আয়নার ভাই।
ফয়সাল বলল – ওহ উনি তাহলে তোর বান্ধবীর ভাই।
কথাটা শুনে আবসারের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। বান্ধবীর ভাই হোক না গিয়ে ওর বয়ফ্রেন্ড হোক তোর বাপের কি? আবসার এখান থেকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিতে শুরু করলো। হঠাৎ মাঝখান থেকে ফয়সাল উঠে বলল – ইউ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমি তোদের সাথে জয়েন্ট করতে পারি?
আবসারের এখন ইচ্ছে করছে চিল্লিয়ে বলতে – অবশ্যই মাইন্ড করবো। তোর মতিগতি আমার ভালো ঠেকছে না। তুই আমার প্রেমটা হওয়ার আগেই আমার প্রেমের দিকে কুনজর দিচ্ছিস। ইচ্ছে তো করছে তোকে মেরে এখনই ভর্তা বানাতে কিন্তু তাও পারছি না।
মনে মনে আবসার আবসারের অনেক কিছু করতে ইচ্ছে করলেও সামনাসামনি সে একদম গম্ভীরতা পালন করছে। ভিতরে ভিতরে যে তার কতটা বাচ্চামো লুকিয়ে আছে তা একমাত্র সে ছাড়া আর কেউ জানে না।
সবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিশা একটা মেকি হাসি দিয়ে বলল – না না কি সমস্যা আসুন আমাদের সাথে।
আয়না কিছু বলতেও পারছে সইতেও পারছে না ভিতরে ভিতরে শুধু রাগে ফুঁসছে। নাহ এই ব্যাটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে , এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। নিশাকে যেভাবে হোক ওর ভাইয়ের বউ করে বাড়িতে তুলতে হবে। লোকচক্ষুর আড়ালে ৫ টা সেন্টারফ্রুট কিনে মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলো আয়না।
ঘোরাঘুরি শেষ করেছে প্রায় সন্ধ্যার দিকে। এর মধ্যে ফয়সাল একবারও নিশার আশেপাশে ঘেষতে পারেনি। ঘেঁষতে চায়নি বললে ভুল হবে। ঘেঁষতে চেয়েছ খুব কিন্তু আবসার আর আয়নার জন্য পারেনি। যখনই নিশার সাথে একটু কথা বলতে গিয়েছে তখনই কোথা থেকে আয়না এসে নিশাকে টেনেটুনে অন্যপাশে নিয়ে গেছে না হয় আবসার এসে গম্ভীর কন্ঠে ধমক দেওয়া শুরু করেছে। আজ এই একদিনেই ফয়সালও বেশ আবসারের ধমকের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে। আবসারের প্রতিটি ধমকে কেঁপে উঠছে ফয়সাল। তবে ঘোরাঘুরি শেষে ফয়সাল যখন চলে যাবে তখন আয়না এক ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। ফয়সালের চুলের মধ্যে চিবোনো মুখের সেন্টারফ্রুটগুলো সযত্মে লাগিয়ে দিয়েছে। না থাকবে চুল আর না থাকবে চুল নিয়ে ভয়। বাড়িতে গিয়েই আজ ফয়সালের এত সুন্দর চুলগুলো কাটতে হবে ভেবেই মনে মনে শয়তানি হাসি দিচ্ছে আয়না। ফয়সাল যাওয়ার আগে নিশাকে একবার বলেছিল বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কথা কিন্তু আয়না নিশাকে টেনেটুনে রেখে দিয়েছে। আজ নিশাকে আয়নার বাড়িতেই থাকতে হবে, কাজলও থাকবে। তিন বান্ধবী আজ আড্ডা দিবে। তবে ফয়সালের আচরনে আজ বেশ অবাক হয়েছে নিশা। যে ছেলে নিশাকে অপমান ছাড়া কখনও কথা বলে না সেই ছেলে আজ ওকে এক বারও অপমান করেনি উল্টো বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেছে। ভুতে টুতে ধরেনি তো আবার ফয়সালকে, কে জানে?
________________________
রুমের মধ্যে জামা কাপড় চেঞ্জ করছিল আবসার। হঠাৎ দরজায় কারো শব্দ পেয়ে জিজ্ঞেস করল – কে?
দরজার ওপাশ থেকে আয়না বলল – আমি , ভাইয়া আসবো?
আবসার কেবলই গায়ের পাঞ্জাবিটা ধরেছিল খুলবে। পাঞ্জাবিটা আবার আগের মতো গায়ে জড়িয়ে বলল – আয়
আয়না গুটি গুটি পায়ে রুমে ঢুকে আবসারের হাতে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে বলল – নে এটা ধর।
আবসার ভ্রু কুঁচকে প্যাকেটের দিকে তাকিয়ে বলল – কি এটা?
আয়না বলল – ডিউ, ডিউ।
আবসার বলল – ডিউ কি?
আয়না বিরক্তি নিয়ে বলল – ডিউও চিনিস না? এটা ফর্সা হওয়ার ক্রিম। এটা মেখে ফর্সা হবি তুই।
আবসার রেগে একটা ধমক দিয়ে বলল – মজা করছিস আমার সাথে? এইসব ছাই পাশ মেখে ফর্সা হবো আমি?
আয়না ছো মেরে আবসারের হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে আবসারকে বলল – ঠিক আছে এই ক্রিম দিতে হবে না তোকে। দেখেছিস নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে নিশার ঐ মামাতো ভাইয়ের থেকে কত কালো তুই? এরপর নিশা যখন তোকে ছেড়ে ঐ ছেলেকে পছন্দ করবে তখন এই আমার কথা মনে করবি। আফসোস করবি কেন শুনলি না আমার কথা।
আবসার বলল – শোন যে আমাকে পছন্দ করার সে আমাকে এমনি পছন্দ করবে তার জন্য আমাকে ফর্সা হওয়ার ক্রিম মেখে ফর্সা হতে হবে না।
আয়না একটা ভেংচি কেটে চলে যেতে নিলে আবসার পিছু থাকলো ওকে। আমতা আমতা করে ছোট করে বলল – ক্রিমটা রেখে যা ।
আয়না খুশিমনে ক্রিমটা রেখে নাচতে নাচতে চলে গেল। আয়না যেতেই দরজা আটকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো আবসার, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো নিজেকে, সত্যিই ও অনেক কালো হয়ে গেছে?
___________________________
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে কেবলই একটা সিগারেট ধরিয়েছিল শাহরিয়ার। সিগারেট একদম সহ্য করতে পারে না আবসার। ওর আন্ডারে যারা যারা আছে তাদের সকলের কঠোরভাবে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। তারপর যদি কেউ ওর কথা অমান্য করে সিগারেট খায় তাহলে তার জন্য আছে কঠিন শাস্তি। কিন্তু এখন তো ওরা ছুটিতে। এখন হয়তো সিগারেট খেলেও সমস্যা নেই তাই ছাদে এসে একটা সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে একটা টান দিয়েছিল। কিন্তু ওর এই সুখ বুঝি কারো সহ্য হলো না। ওর পিছন থেকে আবসার গম্ভীর কন্ঠে বলল – সিগারেট খাচ্ছো শাহরিয়ার।
আঁতকে উঠলো শাহরিয়ার। ভয়ে সিগারেটটা মুখ থেকে নিচে পড়ে গেল। পিছন ফিরে দেখে আবসার রক্তচক্ষু নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কপালে যে আজ শনি আছে বুঝতে বাকি নেই শাহরিয়ারের, হাত পা কাঁপছে। বারবার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখছে, ছাদ থেকে মাটির দূরত্বটা কতটুকু। এখান থেকে আবসার যদি ওকে ফেলে দেয় তাহলে কি ওর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আছে। নাহ এখানে থেকে ফেলে দিলে সোজা উপরে। কোনো রকম ভয়ে একটা ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলল-
– স্যরি স্যার, আর হবে না। আর কোনো দিন সিগারেট খাবে না, সিগারেট ছুঁয়েও দেখবো না, গড প্রমিস স্যার। প্লিজ আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবেন না।
চলবে….
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৪
#লেখিকা : সাদিয়া
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
স্যরি স্যার, আর হবে না। আর কোনো দিন সিগারেট খাবে না, সিগারেট ছুঁয়েও দেখবো না, গড প্রমিস স্যার। প্লিজ আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবেন না।
আবসার শান্ত দৃষ্টিতে শাহরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই শান্ত দৃষ্টিই যেন শাহরিয়ারের হার্ট অ্যাটাকের করিয়ে দিতে সক্ষম। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবসার গম্ভীর কন্ঠে বলল – প্যান্ট শার্ট খুলে হাফ প্যান্ট পড়ে এই মুহূর্তে এই ছাদে ১০০ চক্কর দিবে।
মোটেও বিচলিত হলো না শাহরিয়ার, এ যেন ওর কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার। তবুও মিনমিনে গলায় একবার আবসারকে বলল – ৫০ চক্কর দিলে হয় না স্যার?
আবসার গম্ভীর কন্ঠে বলল – আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না শাহরিয়ার, যদি ছাদ থেকে পড়ে নিজের অকাল মৃত্যু না চাও তাহলে এই মুহূর্তে দৌড় শুরু করো।
শাহরিয়ার আর কথা না বাড়িয়ে শার্ট প্যান্ট খুলে দৌড় শুরু করলো।
____________________
( রাত ১ টা )
রুমে বসে গল্প করছিল নিশা, কাজল আর আয়না। লাইট জ্বলতে দেখলে আবসার বুঝে যাবে ওরা কেউ ঘুমায়নি তাই রুমের লাইটটা অফ করে অন্ধকারেই আড্ডা দিচ্ছিলো। হঠাৎ ছাদ থেকে আসা ধুপধাপ শব্দে ” ভুত ” বলে চিৎকার দিয়ে কাজল নিশার কোলে উঠে বসলো । নিশা আর আয়নাও খেয়াল করে এত রাতে ছাদে ধুপধাপ শব্দ শুনে চিৎকার করে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো। ভুতে ওদের তিন বান্ধবীর বড্ড ভয়। আর এত রাতে কারো ছাদে যাওয়ার কথাও না , আবসারের আদেশে সবাই এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। রুমে বসে তিন বান্ধবী ভুতের ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপছিল। মিনিট পাঁচেক পর নিশা বলে উঠলো –
– এই কাজল আয়না আমাদের কাছে কিন্তু এই মুহূর্তে বিশাল সুযোগ।
কাজল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল – কিসের সুযোগ?
নিশা বলল – শোন আমরা সবাই শুনেছি ভুত আছে, আমরা কখনও কি নিজের চোখে ভুত দেখিছি? দেখিনি তো, এখন ভুত নিজে হেঁটে হেঁটে আমাদের কাছে চলে এসেছে চল ভুত ধরি। আমরাই বোধ হয় পৃথিবীর প্রথম নারী হবো যারা এত সাহসিকতার সাথে ভুত ধরেছে। দেখবি কাল পত্রিকায় বড় বড় করে আমাদের নামে শিরোনাম বেড় হবে ” তিন সাহসী নারীর ভুত ধরার গল্প”
আয়না উঠে দাঁড়ালো, বুক ফুলিয়ে বলল – হুম চল, আজ প্রমান করে দেব আমরা নারী আমরা সব পারি।
কাজল ভুতের ভয়ে এখনও ঠকঠক করে কাঁপছে। কোনো মতে ঢোক গিলে বলল – না না আমি যাবো না তোরা , ভুতে আমার ভীষণ ভয় লাগে।
নিশা রেগে বলল – থাক তুই গেলাম আমরা। তুই কাল পত্রিকার শিরোনাম থেকে বাদ পরলি তাহলে । সারাজীবন ভীতুর ডিমই থেকে গেলি আর সাহসী হতে পারলি না বলে নিশা আর আয়না রুম থেকে বের হলো।
অগত্যা কাজলকেও ওদের পিছু পিছু যেতে হলো। ওর মনে রুমে একা থাকতেও ভয় লাগছে তার থেকে নিশা আর আয়নার সাথে গিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিক, ওর নামও পত্রিকার শিরোনামে উঠুক। কতদিনের স্বপ্ন ওর।
সামনে নিশা, মাঝখানে কাজল আর তার পিছনে আয়না। কাজল দুজনের মাঝখানে এসেছে ওর ধারনা ভুত যদি সামনে থেকে আসে তাহলে প্রথম নিশাকে ধরবে আর পিছন থেকে আসলে আয়নাকে ধরবে আর এই সুযোগে ও মাঝখান থেকে পালাবে। ছাদের দিকে তিনজন যত এগোচ্ছে ধুপধাপ আওয়াজ ততো বারছে। আলতোভাবে নিশা ছাদের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করলো , অন্ধকারে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না শুধু ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছে, মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে সামনের দিকে একটু এগিয়ে গেল, কাজল আর আয়না মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে ভয়ে ছাদের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। নিশা ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে একবার শাষালো যে ” কাল সাংবাদিকদের সব বলে দিবে। ও একাই সাহসিকতার পুরস্কার নিবে। ” নিশা একটু এগিয়ে যেতেই আচমকা কেউ একজন কাজল আর আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। কাজল চিৎকার করে নিজের তালমাতাল সামলাতে না পেরে ধপ করে বসে পড়লো। কিন্তু ধপ করে বসে পড়ার সময় যাতে নিজেকে সামলাতে ধরেছিল সামনের ব্যক্তির প্যান্ট, সামনের ব্যক্তির গায়ে আর কিছু না থাকায় হাতটা গিয়ে প্যান্টটাই আঁকড়ে ধরেছিল, ফলস্বরূপ সামনের ব্যক্তির প্যান্টটাও খুলে নিচে এসেছে। আয়নার হাতের মোবাইলের ফ্ল্যাসটা তখনও জ্বালানো ছিল, সামনের দৃশ্য দেখে সাথে সাথে জ্ঞান হারালো আয়না। বেচারি ভুত ধরতে এসে কি দেখতে কি দেখে ফেললো। এত বড় শকড, নিজেকে আর সামলাতে না পেরে জ্ঞান হারালো। আয়না আর কাজলের চিৎকার শুনে নিশা ঘুরে পিছনে তাকাতেই আবসার এসে দ্রুত চোখ চেপে ধরলো নিশার। নিশা চোখের সামনে থেকে আবসারের হাতটা এত সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু সে আরও শক্ত করে চোখ চেপে ধরে রয়েছে। নিশার চোখ থেকে হাত সরানোর তোড়জোড় দেখে অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে আবসার বলল – তোমার শুধু আমারটা দেখার অধিকার আছে আর কারোরটা না , তাও বিয়ের পর।
সবকিছু যেন নিশার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি দেখার কথা বলছে আবসার?
কাজল এখনও ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। শাহরিয়ার ভ্রু কুঁচকে কাজলের দিকে তাকিয়ে বলল – দেখা শেষ? তাহলে প্যান্টটা ছাড়ো। আর কত দেখবে?
শাহরিয়ার কথায় কাজল থতমত খেয়ে প্যান্টটা ছেড়ে দিল। শাহরিয়ার প্যান্টটা টেনে পড়েই খপ করে কাজলের হাতটা ধরলো। হতভম্ব হয়ে গেল কাজল। শাহরিয়ারের কাছ থেকে ছাত ছুটানোর জন্য মোচড়ামোড়ি শুরু করলো। শাহরিয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বলল – আমার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস দেখে নিয়েছো তাও আবার ফ্যালফ্যাল করে এতক্ষন ধরে এখন কোথায় যাচ্ছো?
কাজল বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলল – স্যরি , ভুলবশত দেখ নিয়েছি।
শাহরিয়ার বলল – তা বললে তো এখন আর হবে না চান্দু। আমাকে বিয়ে করতে হবে, আমার সব যখন দেখে নিয়েছো এখন আমার বউ হতে হবে।
কাজল ফ্যালফ্যাল করে শাহরিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। একে তো ভুত ধরতে এসে ভুতের বাপকে দেখে নিয়েছে, তার উপর এখন এই আজগুবি কথা , সব কাজলের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাথাটা হ্যাং হয়ে আছে ওর, কথা বলতে চেয়েও পারছে না। অতিরিক্ত শকডে কথা বলতে ভুলে গেছে। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। নিশাও ফ্যালফ্যাল করে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, কি দেখার কথা বলছে ওরা ?
_________________________
সকাল সকাল উঠেই নিশা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেছে। আজ আর কলেজে যাবে না। গতকাল হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে গেছে। আবসার সকাল সকাল উঠে যে জগিং – এ বেড়িছিলো নিশা বের হওয়ার সময়ও আসেনি তাই যাওয়ার সময় নিশার সাথে আর দেখা হয়নি আবসারের। নিশাও আর অপেক্ষা করেনি এরপর বের হলে নির্ঘাত জ্যামে পড়তে হবে। কাজলও নিশার সাথেই বেড়িয়েছে , সে এখন ভুলেও আর শাহরিয়ারের সামনে পড়তে চায় না। কাল রাতের ঘটনা মনে পড়লেই গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে যায়। শাহরিয়ারের কথা মনে পড়লেই লজ্জা, অসস্থি ঘিরে ধরে কাজলকে। এই বাড়ি থেকে যেতে পারলেই এখন বাঁচা যায়।
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। নিশাকে না দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো আবসারের। থমথমে গলায় আয়নাকে প্রশ্ন করলো – নিশা কোথায়?
আয়না খেতে খেতে উত্তর দিল – একটু আগে চলে গেছে ও। এখনও বোধ হয় বেশিদূর যেতে পারেনি।
নিশা চলে গেছে শুনে রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আবসারের। মেয়েটা ওকে না বলেই চলে গেল? বড্ড সাহস বেড়েছে মেয়েটার। ওর ধমককে কি এখন আর ভয় পায় না মেয়েটা। খাবার রেখেই উঠে পড়লো আবসার। পিছন থেকে আবিদা বেগম ডেকে বললেন – না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই?
আবসার গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিল – বাইরে খেয়ে নেব বলেই হনহন করে করে চলে গেল।
আবসার চলে যেতেই রেবেকা বানু আয়নাকে বলল – কি বুঝলা নাতনি?
আয়না খুশিতে গদগদ হয়ে বলল – প্ল্যান সাকসেসফুল লেবু।
চলবে….