#বাঁধনহীন_সেই_বাঁধন_অকারণ|১৫|
#শার্লিন_হাসান
-আলিশা জান আজকে আমাদের বাসর রাত ভুলে গেলে?
আয়মানের কথায় আলিশা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কাঠকাঠ গলায় বলে,
-তো কী হয়েছে? এখন কী আমি মাইকিং করবো নাকী আমাদের বাসর রাত। যা তো সোফায় গিয়ে ঘুমা। একদম স্বামীর অধিকার দেখাতে আসবি না।
-বিয়ে করেছি অবশ্যই অধিকার দেখাবো জান। আর যাই বলো আমি কিন্তু তোমায় ভালোবাসি জান।
-তোর ভালোবাসায় থুঃ মারি আমি। আমায় ফাঁসিয়েছিস তাই না? সব তোর আর তোর মায়ের প্লানিং ছিলো?
-হুশ এতো কথা বলে না জান।
আয়মান উঠে লাইট অফ করে দেয়। আলিশা নিজেকে গুটিয়ে নেয়। চুপচাপ বালিশ ঠিক করে এককাত হয়ে শুয়ে পড়ে। ঘুম নেই তার চোখে। সত্যি বিয়েটা হয়ে গেলো? রুদ্রর আলিশা আয়মানের হয়ে গেলো? চোখের অহর্নিশ বেয়ে অশ্রু পড়ছে আলিশার।
আয়মান চোখ বন্ধ করে ঘুমানো ট্রাই করছে। আজকে তার শান্তি লাগছে তবে বেশী না অল্প। রুদ্রকে একবারের জন্য রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে বেশী শান্তি লাগতো তার।
*****
রাত দেড়টার দিকে বাড়ী ফিরেছে নিবরাস। ক্লান্ত দেহ নিয়ে লিভিং রুমে আসতে দেখলো মিসবাহ বসে আছে। নিবরাস ব্রু কুঁচকে তাকায়। এতো রাত অব্দি বাদড়টা সজাগ ভাবতে টনক নড়লো। তার মা ঘুমোচ্ছে পাশের রুমে। নিবরাস প্রশ্ন করে মিসবাহকে।
-মামু এখনো জেগে আছো যে?
-মামা একটা কথা বলার জন্য।
-এটা আগামী কালকে ও বলা যেতো। কে বলেছে এভাবে রাগ জাগতে? আসলেই এখনকার যুগের বাচ্চাগুলা একেকটা যন্ত্রের থেকে কম না।
-মামা বউমনি কী বলেছে জানো?
-আবার কোমড় ভাঙা লাউডস্পিকারের কথা?
-বউমনি! তুমি জানো আমি তোমার কল কেটে দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে বলেছিলাম, ‘এই বউমনি আমার মামার মতো করে আমায় মিসবাহ সোনা বলে ডাকো না? তারপর বউমনি কী বলেছে জানো?
-কী?
-বলেছে, ‘তোমার মামাকে বলো আমায় বউ বানিয়ে নিতে তারপর বলবো।’
-ইম্পসিবল! বাচ্চা পাকনামী কম করো। যাও ঘুমাও নাহলে আমি রুড বিহেভ করবো। মামার বিয়ের সময় হলে মামা বিয়ে করবে।
-মামা আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
-আবার কী কথা?
-আগামী কালকে তুমি বউমনিকে বলবে আমায় মিসবাহ সোনা বলে ডাক দিতে। তাহলেই আর বিয়ে করতে হবে না।
-বেশী পেকে গেছো তুমি মিসবাহ্! যাও ঘুমাও আর একটা কথাও না।
কঠোর গলায় বলে নিবরাস। মিসবাহ উঠে চলে যায় তার মায়ের কাছে। নিবরাস নিজের রুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে সে।
এপাশ-ওপাশ করছে মেঘ। ঘুম আসছে না তার। রাতের শহর নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে কিছুটা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সেই মানুষটা যে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমের ঘোরে চলে যেতে পারে। এই রাত জাগা,কাউকে মিস করা। বিশ্রী একটা অনুভূতি। মেঘের কান্না করতে মন চাইছে। এই আবেগের রেশ কবে কেটে যাবে?
*****
পরের দিব সকালে রাইহান চৌধুরী আসে সাদবিকে নিয়ে। ঘড়ির কাটা সকল সাড়ে নয়টা। চৌধুরী বাড়ীতে প্রবেশ করে তারা দু’জন। ফাইজা চৌধুরীকে দেখে সাদবি জড়িয়ে ধরে সালাম দেয়। মোটামুটি সবাই উপস্থিত এখন। ফাইজা চৌধুরীও আগলে নেয় সাদবিকে। তখন রাইহান চৌধুরী বলেন,
-উনি তোমার দাদীন সাদবি। যাকে দেখার জন্য তুমি বায়না ধরতে।
-হ্যাঁ আমি চিনে ফেলেছি বাবা।
রাইহান চৌধুরী একে,একে সবার নাম বলেন। সাদবি সবার সাথে কুশল বিনিময় করে লাস্ট রুদ্রর কাছে যায়। একটু ইতস্ত বোধ করছে সাদবি। রুদ্রকে অন্যরকম লাগে বাকী সবার মতো মিশে না দেখতেই বুঝা গেলো। সাদবিকে দেখে খুশিই হয়েছেন ফাইজা চৌধুরী। শতহোক নিজের ছেলের অংশ। রাখি, রুদ্র,আরিশ,অর্ণব,আরেহীর মতো সেও তো একজন। সাদবি রুদ্রর সামনে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
-জারিফ ভাইয়া আমি সাদবি।
রুদ্র হাত মেলায়। মুচকি হেসে বলে,
-কেমন আছো পুচকি?
-আলহামদুলিল্লাহ।
সাদবি খুশি হয়ে যায়। ভাবতে পারেনি সবাই এতো মিশুক হবে। ফাইজা চৌধুরী আর কিছু বলেননি। এতোবছর পর ছেলে এসেছে নাতনিকে নিয়ে। এখন কিছু বললে মন খারাপ হবে। সাদবির এতো আনন্দ দেখে আর কথা বাড়াননি। থাকুক আরেহীর বিয়ে সামনে। সবাই নাস্তা করতে বসে। সাদবি সে রাখি,আরেহীর সাথে গল্প শুরু করে দিয়েছে।
আফিয়ান চৌধুরী এবং আরিয়ান চৌধুরী রাইহান চৌধুরীর সাথে ভালোমন্দ কথা বলে অফিস চলে যান। বাকী দিকটা অর্ণব,আরিশ সামলাবে। রুদ্র সহ তারা তিনজন বেড়িয়ে পড়েছে রিলেটিভিদের ইনভাইট দিতে। কয়েকজনকে ইনভিটেশন কার্ড দিয়ে তারা মেহরাবদের বাড়ী যাবে। আরিশ এক্সাইটমেন্ট নিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে। মেঘকে একনজর দেখবে।
কিন্তু তালুকদার বাড়ীতে এসে তার মুখটা ছোট হয়ে যায়। অর্ণব,রুদ্র তাকে নিয়ে মজা নেয়। ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে কার্ড দেয় মহীউদ্দীন তালুকদারকে। আসার সময় আরিশ বলে,
-আন্টি মেঘকে বলুন চলে আসতে। প্রয়োজনে এড্রেস বলুন আমি গিয়ে নিয়ে আসি। প্লিজ আন্টি বলুন আমার বোনের বিয়েতে ওকে থাকতে
আরিশের কথায় আফরোজা বেগম বললেন,
-ও আসবে না এতো তাড়াতাড়ি। গিয়েও লাভ নেই।
আরিশ মুখটা মলিন করে বিদায় জানিয়ে বেড়িয়ে আসে। রুদ্র, অর্ণব গাড়ীতে বসে হাসছে। আরিশ পেছনের সীটে গা এলিয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। অর্ণব ড্রাইভিং করছে তার পাশে রুদ্র বসা। আরিশের অবস্থা দেখে তারা দুজন হাসছে। ছ্যাকা খেলেও কেউ এতো মন খারাপ করে না, পছন্দের মানুষকে না দেখতে পেয়ে আরিশ যতটা করছে।
আরিশ, অর্ণবকে অফিসের সামনে নামিয়ে দিয়ে রুদ্র গাড়ী নিয়ে উল্টো রাস্তা ধরেছে। কলেজে কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছে সে। এখন একটু ঘুরাঘুরি করবে। লেকের কাছে যাবে রুদ্র। ঠান্ডা বাতাস দরকার তার।
*****
আলিশা বেড়িয়েছে। গতকালকের বিয়ের শাড়ী তার পরণে। যে জানে না সে কোথায় যাবে! রাস্তাও চেনে না। এলোমেলো ভাবে হেঁটে চলেছে সে। আয়মানের চোখ ফাঁকি দিয়েই বাড়ী থেকে বেড়িয়েছে। যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু লম্বা পথ। মনে,মনে বলছে একবার শুধু রুদ্রর দেখা পাক সে।
ভেতরের রোড থেকে মেইন রোডে উঠতে আলিশা জেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। এখন গাড়ী ধরতে পারলেই হলো। কিন্তু কীভাবে? তার কাছে তো কোন টাকাই নেই।
হাতের দিকে নজর দেয় আলিশা। রুদ্রর দেওয়া রিংটা এখনো আছে। কিন্তু এটা কিছুতে সে বিক্রি করবে না। অন্য আঙুলে থাকা গোল্ডের রিংটার দিকে নজর দেয় আলিশা। সাত পাঁচ না ভেবে গোল্ডের দোকান খুঁজতে থাকে। পেয়ে ও যায় আলিশা। সেখানে গিয়ে দোকানদারের কাছে রিংটা বিক্রি করে দেয়। বারো হাজার টাকা এসেছে রিংয়ের দাম। টাকাটা নিয়ে আলিশা বেড়িয়ে আসে। জায়গার নাম জিজ্ঞেস করে। টেক্সি (সঠিক নাম জানি না) ধরে নিজের বাড়ীর দিকে রওনা হয় আলিশা। মনের মাঝে অজানা ভয় কাজ করছে তার। শুধু খান বাড়ীতে একবার যেতে পারলেই হলো। বাকীটা দেখা যাবে। আয়মান! আরেকটা ন’রপশু। এতো সহজে আলিশাকে ছেড়ে দিবে? দুনিয়ার যত চিন্তা আছে সব এই মূহুর্তে আলিশার মাথায়। এতো চাপ,চিন্তা কুলচ্ছে না। একটু পর ক্ষিদে অনুভব হলো আলিশার। সকাল থেকে এখন অব্দি কিছুই খায়নি সে। বাজারে গিয়ে কিছু কিনে খাবে সিদ্ধান্ত নেয় আলিশা।
লেকের কাছ থেকে ঘন্টাখানিকের মতো ঘুরে রুদ্র বাজারের দিকে রওনা দেয়। আলিশার সাথে কথা হয়না কয়েকদিন হলো। আলিশা খোঁজ নেয়নি তার সেও দেয়নি। আলিশা দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে সেজন্য রুদ্র ও গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে।
গাড়ী চালাচ্ছে একমনে। এরই মধ্যে ব্রেক কষে রুদ্র। অল্পের জন্য মেয়েটি গাড়ীর নিচে পড়েনি। রাগ হয় ভীষণ রুদ্রের।
– দেখেশুনে চলতে পারেনা আবার শাড়ী পড়ে রাস্তায় বের হয় ইডিয়েট মেয়ে।
বিড়বিড় করে বলে রুদ্র।
আলিশা নিজের শাড়ীর আঁচল হাতের মুঠোয় নেয়। সাথে মনে,মনে কয়টা গালি দেয় ড্রাইভারকে।
#চলবে
#বাঁধনহীন_সেই_বাঁধন_অকারণ|১৬\
#শার্লিন_হাসান
রুদ্র বিরক্তি নিয়ে গাড়ী ড্রাইভিং করছে। সাথে অচেনা মেয়েটাকে তো বকেই যাচ্ছে।
-শাড়ী পড়তে পারে না আবার রাস্তায় বের হয়। বিরক্তিকর।
বিড়বিড় করে বললো রুদ্র। চৌধুরী বাড়ীর দিকে রওনা হয় সে।
দোকানে এসে কেক আর পানি খেয়ে নেয় আলিশা। গাড়ীতে উঠে রওনা দেয় খান বাড়ীর উদ্দেশ্যে। রুদ্রর দেখা পেলো না সে। আচ্ছা রুদ্র কী তাকে ভুলে গেলো? হাজারো জল্পনাকল্পনার মাঝে খান বাড়ীর গেটের সামনে এসে গাড়ী থামে। আলিশা ভাড়া দিয়ে ভেতরের দিকে চলে যায়।
লিভিং রুমে আসতে দেখলো তার মা রেডি হয়েছে কোথাও যাওয়ার জন্য। আলিশাকে দেখে আফিয়া ইসলাম তাকায়। মেয়ের মুখটা শুকিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো কিছুটা। আলিশা নিজেকে সামলাতে পারে না। আফিয়া ইসলামকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। মেয়ের অবস্থা দেখে আফিয়া ইসলাম নিজেকে সামলাতে পারে না। নিজেও কান্না করে দেয়।
-আম্মু আমি ম’রে যাবো তাও আয়মানের সাথে সংসার করবো না। বাবাকে বলো ওকে জেলে পুড়ে দিতে। প্লিজ আম্মু আমার জীবন আমি নরক বানাতে চাই না।
-কিন্তু আলিশা তোমার বাবা তো এসবে আর নাক গলাবেন না।
-প্লিজ আম্মু তুমি বাবাকে বুঝাও। আমি এক্সামটা দিয়ে বিডি ছেড়ে চলে যাবো।
-দেখি মা। শান্ত হও! আমার একমাত্র মেয়ে আমি চাই সে সুখে থাক। আয়মান যা করেছে এটার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে।
আলিশা চোখ মুছে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আফিয়া ইসলামকে প্রশ্ন করে,
-তুমি কোথায় যাচ্ছো আম্মু?
-রোশানের বিয়েতে। আগামী কালকে হলুদ অনুষ্ঠান রোশানের।
-বাবা যাবে?
-হ্যাঁ আগামী কালকে যাবে সে।
-আচ্ছা তাহলে যাও।
আফিয়া ইসলাম আলিশার কপালে চুমু খায়। গাড়ীতে বসতে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দেয়।
আলিশা নিজের রুমে যায়। শাড়ী খুলে চেন্জ করে নেয়। পিয়াসাকে বলে তাকে খাবার দিতে। খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়ে। মাথায় অজস্র চিন্তাভাবনা। তার মনে হয় সে এই শহর ছাড়তে পারলেই মুক্ত। না চাই রুদ্রকে আর না চাই আয়মানকে। সে শুধু শান্তি চায়,শান্তি!
*******
বেলকনিতে বসে,বসে ফোন স্ক্রোল করছে মেঘ। পাশের বেলকনি থেকে কারোর কথা আওয়াজ আসতে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। নিবরাসকে দেখে মুখ বাকায়। এই লোক আস্ত দামড়া হয়ে বাচ্চাদের সাথে দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে। বাচ্চাটা আর কেউ না মিসবাহ। মেঘকে এদিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিসবাহ চিল্লিয়ে বলে,
-ওই দেখো বউমনি তাকিয়ে আছে। তুমি বললেই সে আমায় মিসবাহ সোনা বলে ডাকবে।
-চুপ থাকো মিসবাহ। আর বউমনি এসব বাদ দাও। তোমাকে মিসবাহ সোনা একমাত্র আমি বলি আর দ্বিতীয়ত তোমার মামনি বলবে তোমায় আউট লোক না।
-মামনিই তো বউমনি। মামু তুমি না, ভালো বলো না?
-বেশী পেকে গেছো তুমি। আপুকে বলবো?
-এই বউমনিইইই..!
মিসবাহর ডাকে মেঘ পুনরায় তাকায়। নিবরাস এদিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ আশেপাশে তাকায়। কেউই নেই তাহলে ডাকটা দিলো কাকে? তখন আবার মিসবাহ বলে,
-এই যে বউমনি আমি মিসবাহ তোমাকেই বলছি।
-হ্যাঁ বলো?
-আমার মামু মিস্টার মুয়াম্মার নিবরাস মির্জা তোমায় কিছু রিকুয়েচ করে বলবে?
-ওটা রিকুয়েচ না রিকুয়েষ্ট হবে মিসবাহ্।
নিবরাসের কথায় মিসবাহ তাকায়। পরক্ষণে বলে,
-ওই একই হলো মামু। এবার বলো বউমনিকে।
-মিসেস কোমড় ভাঙা লাউডস্পিকার। আমার ভাগিনা আমায় পাগ’ল করে দিচ্ছে। প্লিজ ওকে একটু মিসবাহ সোনা বলে ডাক দিন তো?
কোমড় ভাঙা লাউডস্পিকার নামটা শোনে রাগ হয় মেঘের। দুনিয়াতে কী নামের অভাব পড়েছে? তার এতো সুন্দর নাম মারশিয়া জাহান মেঘ থাকতে কোমড় ভাঙা লাউডস্পিকার? লোকটা তো তার নামই জানে না। ভাবনার মাঝে আবারো মিসবাহ বলে,
-বউমনি বলো?
-মিসবাহ সোনা তোমার মামুকে বলিও মানুষকে উল্টাপাল্টা নামে না ডেকে সুন্দর নামে ডাকতে। নাহলে কপালে বউ জুটবে না। আমার নামের এমন বিকৃতি লোকটা যাতে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে।
-তোমার নাম কী বউমনি?
-মারশিয়া জাহান মেঘ।
কথাটা বলে মেঘ উঠে চলে আসে। মেঘ যেতে নিবরাস মিসবাহকে কান মলানি দেয়।
-ওকে আর বউমনি বলবে না। তুমি কী মিসবাহ? বেড বয় অপরিচিত মানুষকে কীসব বউমনি বলছো? এতো বেশী পাকনামী করো কেন?
-বউমনি ভুল কিছু বলেনি আসলেই তোমার কপালে বউ জুটবে না।
কথাটা বলে চলে আসে মিসবাহ। নিবরাস সেখানে দাঁড়িয়ে রয়।
****
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে আয়মান। নাস্তা করে উঠে সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
-আলিশাকে দেখেছো?
-না দেখিনি। আমি ভাবলাম ও ঘুমাচ্ছে।
উঠে দাঁড়ায় আয়মান। সাদিয়া সহ পুরো বাড়ী তন্নতন্ন করে খুঁজে আলিশাকে। রেগে সাদিয়াকে বলে,
-আরো ঘুমাও পড়ে,পড়ে। তোমার জন্য ও পালিয়ে গেছে
-আমি তো পাশের রুমে। তুমি টের ফেলে না ও তোমার পাশ থেকে চলে গেলো।
-এই এলাকা ছেড়ে নিজের এলাকায় চলো। কোন এক জায়গায় এনে রেখেছো আমায়। এখন আমায় প্রোপার্টি দাও! রাইহান চৌধুরী জানি আমায় গ্রহণ করবেন না। আমার ভবিষ্যত অন্ধকার।
-আলিশার বাবার প্রোপার্টি আলিশার করে নেও তারপর তোমার।
– আলিশাকে আর জোর করি কীভাবে? বিয়েটা নাহয় করলাম! ও আমায় ডিভোর্স দিলে আমার তো আর কিছু করার থাকবে না। আর বেশী বাড়াবাড়ি করলে যদি জেলে ঢুকিয়ে দেয়? এই না যে আমি অনেক প্রভাবশালী আমার টাকা পয়সার অভাব নেই। দুই চারটা থানা আমার পকেটে রাখবো। আলিশার বাবা আশরাফ খানের অনেক নাম ডাক সাথে সে অনেক টাকার মালিক। সে জায়গায় আমার মতো ধূলোময়লাকে পা দিয়ে সরিয়ে দিতেও তার কয়েক ঘন্টার ব্যপার।
-এতোই যখন চিন্তা করলে তাহলে বিয়েটা করলে কেন?
-জানি না। শুধু রুদ্রর থেকে আলিশাকে কেড়ে নিতে।
-জিততে পারলে না তুমি।
আয়মান কথা বাড়ায় না। আলিশা পালিয়ে গেছে ভাবতে মাথায় রক্ত উঠে যায় আয়মানের। আলিশার এতো বড় কলিজা তার খাঁচা থেকে বেড়িয়ে গেলো। কী করবে? কিছুই করতে পারবে না। রুদ্রকে আবার নিজের করে নিবে? উঁহু কখনো না। ভেবে শয়তানী হাসি দেয় আয়মান। আলিশার সাথে যত চ্যাট,পিকচার,ভিডিও আছে সব রুদ্রর হোয়াটসঅ্যাপে সেন্ড করে। বাঁকা হাসে আয়মান।
-রুদ্র এসব দেখে কয়দিন শোক করো তারপর শহর ছেড়ে উদাও হয়ে যাও। বেস্ট অফ লাক।
বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে বসেছে তখন সাদবি আসে রুদ্রর রুমে। অনুমতি দিতে ভেতরে এসে বসে। রুদ্রকে দেখে সাদবি নিজের ভেতরে চাপা রাখা কথাগুলো বলেই দেয়।
-আলিশা আপু তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো তাই না?
-হ্যাঁ!
-এখনো আছে?
-আছে। কেনো?
-আয়মান ভাইয়ার সাথে তো আলিশা আপুর সম্পর্ক আছে সাথে কয়েকবার তারা ডেটেও গেছে।
স্তব্ধ হয়ে যায় রুদ্র। মাথাটা তার ভনভন করে ঘুরছে। সাদবি সত্যি বলছে তো? না এটা কী করে সম্ভব? আলিশা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আবার মনে হয় সাদবির কথা ঠিক। আলিশা আগের থেকে অনেক চেন্জ হয়ে গেছে। তখন আবার মেসেজের শব্দে টেবিলে থাকা ফোনের দিকে তাকায় দু’জন। রুদ্র ফোন হাতে নেয়। হোয়াটসঅ্যাপ ঢুকে পিক গুলো দেখে তার মাথা হ্যাং হয়ে যায়। সাদবিকে আইডিটা দেখিয়ে বলে,
-এটা আয়মানের আইডি না?
সাদবি দেখে। আসলেই এটা আয়মানের নাম্বার সাথে ডিপিও আয়মানের। রুদ্র গতকালকের বিয়ে ভিডিও দেখে। সাদবিও দেখে রুদ্রর সাথে। পরক্ষণে বলে,
-বিয়েও করে নিয়েছে?
রুদ্র তাকায়। ফোনটা রেখে বেলকনিতে যায়। সব মিছে লাগছে তার কাছে। আলিশা তাকে এতো বাজে ভাবে ঠকালো? ভালোবাসার অভিনয় করলো? আলিশার জন্য কতজনকে এভয়েড করলো রুদ্র অথচ আলিশা তাকে ঠকালো? আলিশার প্রতি লয়্যাল ছিলো রুদ্র কিন্তু বাজে ভাবে ঠকে গেলো। মনে পড়ে তার আর আলিশার বিয়ে নিয়ে তার কাজিন,রাখির করা প্লানিং। কত এক্সাইটেড ছিলো সবাই অথচ!!
সাদবি প্রস্থান করে। আয়মানের কাজে সে হতভম্ব। তার মাথা কাজ করছে না। রুদ্রর জন্য খারাপ লাগছে তার। আসলেই সত্যকারের ভালোবাসা গুলো এমনই হয়। একজন অন্ধের মতো ভালোবাসে অন্যজন অভিনয় করে। অন্ধের মতো ভালোবেসে ধোকা খেয়ে দিনশেষে
একা হয়ে যায়।
বিকেলের দিকে ছাঁদে এসেছে মেঘ। রুদ্রকে একনজর দেখার জন্য মনটা পুড়ছে। কিন্তু এই ব্যস্ত শহরে এতো অলিগলি এতো মানুষের মাঝে আদৌ তার আগন্তকের দেখা পাওয়া যাবে? উঁহু! অকল্পনীয় ব্যপারটা বারবার চিন্তা করছে মেঘ। তার পেছন দিয়ে কেউ তার হাত ধরে টান দেয়। চমকে তাকায় মেঘ। একটা ছোট বাচ্চা মেয়ে তার হাত ধরে আছে।
হাঁটু গেড়ে বসে মেঘ। বাচ্চাটাকে জিজ্ঞেস করে,
-কী নাম তোমার বাবু?
– আদিবা আয়াত নূর।
-বেশ সুন্দর নাম তো!
মিসবাহ,নিবরাস তখন ছাঁদে আসে। মিসবাহ দৌড়ে আসে।
-নূর তুমি একা,একা চলে এসেছো?
-ও তোমার কী হয় মিসবাহ?
মেঘের কথায় মিসবাহ বলে,
-আমার আন্টির মেয়ে নূর।
-তোমার আন্টি আছে আরেকজন?
-না গো! আমার ছোট নানুর মেয়ের বাচ্চা এটা।
মিসবাহ র কথায় হাসে মেঘ। ঘুরে তাকাতে দেখলো নিবরাসকে দেখে ভড়কে যায় মেঘ। আমতাআমতা করে বলে,
-নূর ভীষণ কিউট। সেইজন্য জিজ্ঞেস করলাম।
মেঘের কথায় ভীষণ হাসি পায় নিবরাসের। মেয়েটা এমন ভাবে বলছে মনে হয় এক্ষুনি সে ধমক দিবে কেন নূরের সাথে কথা বললো, নাম জিজ্ঞেস করলো। নিবরাসকে চুপ থাকতে দেখে মেঘ নূরের গাল দু’টো টেনে দেয়। নূর ও মেঘের গাল টেনে দেয়। তখন নিবরাস বলে,
-আপনার নাম কী জেনো? বলেছিলেন..?
-মারশিয়া জাহান মেঘ।
-মনে পড়লো। তা কী করেন? জব নাকী স্টুডেন্ট?
-স্টুডেন্ট।
-কোন ইয়ারে?
-ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।
-গুড! ভালো ভাবে পড়াশোনা করুন।
-আপনাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি? আলগা দরদ! পড়াশোনা নিয়ে এসব আলগা দরদ বিরক্তিকর একটা ব্যপার। নিজে পড়াশোনা করে স্টাবলিস্ট হয়েছে সেজন্য এতো জ্ঞান। এসব জ্ঞান মেঘ মাথায় ও নেয় না।
বিরবির করছে মেঘ। তখন নিবরাস বলে,
-আপনি নিজে,নিজে কিছু বলছেন?
-হ্যাঁ,হ্যাঁ বলছিলাম তো! অনেক কিছু।
চলে আসে মেঘ। নিবরাস তার যাওয়ার পানে তাকায়। নূর,মিসবাহ কে নিয়ে দুষ্টুমিতে মেতে উঠে নিবরাস।
লিভিং রুমে প্রবেশ করতে মায়া এসে মেঘকে জিজ্ঞেস করে,
-কোথায় গিয়েছিলি?
-ছাঁদে। তোদের বাসার আশেপাশে এতো পাকনা বাচ্চা বাস করে সাথে তো দামড়া লোক আছেই। অসহ্য!
-কার কথা বলছিস তুই?
-না কেউ না।
*****
চৌধুরী পরিবারের সবাই শপিং করার জন্য বেড়িয়েছে। রুদ্রও আছে তাঁদের সাথে। তবে মনমরা সে। তেমন একটা কথা বলে না কারোর সাথে। আবারো হুটহাট চেন্জ ভাবাচ্ছে সবাইকে। রাখি তো চিন্তায় পড়ে গেছে তার ভাইকে নিয়ে। মেসেজ দিয়ে মেহরাবকে বলেছে ব্যপারটা জিজ্ঞেস করতে।
তার পাশে সাদবি বসা ছিলো। রাখিকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করে,
-কিছু হয়েছে আপু?
-হ্যাঁ রুদ্র ভাই!
সাদবি ভাবছে রাখিকে বলে দিবে ব্যপারটা? যদি রুদ্রর প্রব্লেম থাকে তাহলে? না থাক। অনুমতি ব্যতীত অন্যের পার্সোনাল ম্যাটার এভাবে পাবলিক করা তার ঠিক হবে না।
শপিং মলে এসে রুদ্র মেহরাবকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। বাকীরা শপিং করবে। শপিং শেষ হলে তাকে মেসেজ দিয়ে বলবে। রুদ্রকে দেখে মেহরাব বলে,
-কী হয়েছে তোর রুদ্র?
-না কিছু না।
-লুকিয়ে লাভ নেই আমি বুঝি।
-চল খোলামেলা কোথাও গিয়ে কথা বলি।
-ক্যাফেতে যাবি?
-চল।
দুজনে ক্যাফেতে এসে কোল্ড ড্রিং অর্ডার করে। মেহরাব পুনরায় বলে,
-এবার তো বল।
-আলিশার বিয়ে হয়ে গেছে মেহরাব।
মেহরাব থমকায়। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার। তখন রুদ্র তার ফোন বের করে আয়মানের পাঠানো কিছু পিকচার,ভিডিও চ্যাট মেহরাবকে দেখায়।
#চলবে