#বাঁধনহীন_সেই_বাঁধন_অকারণ|১১|
#শার্লিন_হাসান
(নিচের নোট পড়ার অনুরোধ রইলো)
পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আফরোজা বেগমের কাছে গেলো মেঘ। আহ্লাদী স্বরে বললো,
-আম্মু আমি আন্টিদের বাসায় যাই আজকে?
-আচ্ছা মেহরাবকে বলবো নামিয়ে দিয়ে আসতে।
-আচ্ছা।
মেঘ প্রস্থান করে রুমে আসতে পেছন দিয়ে রাখি আসে। মেঘ ব্যাগ গোছাচ্ছে। রাখিকে দেখে বলে,
-কিছু বলবে?
-হ্যাঁ বলবোই। আজকে আমার সাথে চলো না? কী হয়েছে গেলে?
-আন্টির বাসায় যাবো।
-আম্মুকে বলে দিবে আমার সাথে যাবে তুমি।
-না আমি আন্টিদপর বাসায়ই যাবো।
-আচ্ছা মেঘ তুমি শুনেছো একটা কথা?
-কী কথা?
-আলিশা আপুর সাথে যে রুদ্র ভাইয়া পেচআপ করে নিয়েছে।
-এটা কী বলো তুমি? আলিশা আপুকে কেন ছেড়ে দিলো? আসলেই পৃথিবীতে সত্যি কারের ভালোবাসা পূর্ণতা পায় না। স্যারকে বুঝিয়ে বলো না?
-না বুঝানোর কী আছে। তার জন্য অন্য জায়গায় মেয়ে দেখবো।
-স্বার্থপর তোমরা। স্যার আলিশা আপুকে লাভ করে সেখানে অন্য কাউকে সে মেনে নিতে পারবে না। আর তাঁদেরকে বেস্ট লাগে বুঝলে?
-হু লাগেই তো। এখন চলো চৌধুরী বাড়ী যাবে।
-আচ্ছা তুমি যাও আমি বলছি।
মেঘের কথায় প্রস্থান করে রাখি। রাখির কথা মেঘ বিশ্বাস করেনি। বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে তাকে হয়ত বা পরীক্ষা করছে। আলিশা রুদ্রর ব্রেকআপ কখনো হবে না। রুদ্রকে দেখলেই বুঝা যায় কতটা লয়্যাল। আলিশাকে কতটা লাভ করে।
তখন আবার মেঘের ফোনে মেসেজ আসে। চেক করে মেঘ। এটা আর কেউ না আরিশ। তাঁদের বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করছে। সীন করে রেখে দিয়েছে মেসেজ।
-আপনাকে পাবো না জেনেও ভালোবেসেছি। সেজন্য আপনার জায়গায় নতুন কাউকে ভালোবাসতে আমার ভয় হয়। কল্পনায় এসে আপনি যা ছন্নছাড়া বানিয়ে দিলেন আমায় নতুন কেউ বানালে আমি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না। ভে’ঙে পরবো আর সোজা হয়ে দাঁড়ানোর মনোবল বা শক্তি আমার মাঝে বিদ্যমান থাকবে না।
মেঘ রেডি হয়ে নেয়। নাস্তা করে মহরাবের সাথে রওনা হয়। মেহরাব মেঘকে তার আন্টির বাসার সামনে নামিয়েে দিয়ে চলে যায় স্কুলে। মায়া,মোহনার সাথে মেঘের বেশ ভালো সময় কেটে যায়।
রাখি ব্যাগ গোছাচ্ছে। মেঘ চলে গেছে কিছুক্ষণ আগে। সেও যাবে! রুদ্র এসে তাকে নিয়ে যাবে। আজকে হুটহাট মায়ের কথা মনে পড়লো তার। আসলেই কিছু একটা গড়মিল আছে। অথচ কেউ খুঁটিয়ে দেখলো না। তার দাদীর কাছে শুনেছে তার মায়ের আগে থেকে নাকী হার্টে প্রবলেম ছিলো। এছাড়া তখন নাকী সে হার্ট অ্যাটাক করেছে। হয়ত বা করাটা স্বাভাবিক!
আর ভাবেনি রাখি চটজলদি কিচেনে গেলো সে।
চৌধুরী বাড়ীতে তোরজোর চলছে আয়োজনের। পাত্রপক্ষ আসবে। চৌধুরী বাড়ীর ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা। ফাইজা চৌধুরী বসে আছেন সোফায়। তিনি অপেক্ষায় আছেন কখন রুদ্র রাখি আসবে। এই দু’টো বাচ্চাকে একটু বেশী ভালোবাসেন তিনি। ছোট থেকে তার নিজ হাতে গড়া তারা দু’জন । জাফিয়ার কথা মনে পড়তে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন তিনি। সেদিন জাফিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে আসেন তিনি। পোস্ট মার্ডাম করাতে বলেন। করানো হয় সেখানে জানায় জাফিয়া নাকী হার্ট অ্যাটাক করেছে। করাটা স্বাভাবিক নিজের হাজবেন্ড আরেকটা বিয়ে করলো সেখানেও একটা ছেলে আছে অথচ তার সাথেও সুন্দর ভাবে অভিনয় করে সংসার করে গেলো। কত বিশ্বাস,ভরসা ছিলো অথচ বেঈমানীর শিকার হলো। এই সাদিয়া! যার মুখটা দর্শন করার ইচ্ছে আর নেই ফাইজা চৌধুরীর। আর না নিজের ছেলের। কী করে পারলো আরেকটা বিয়ে করতে?
তখন অন্তি আসে ফোন হাতে। ফাইজা চৌধুরীর দিকে এগিয়ে দেয় ফোন। রাইহান চৌধুরী কল দিয়েছেন। ফাইজা চৌধুরী কথা বলতে নারাজ। তবুও ফোন কানে দিলেন। অপরপাশ থেকে সালাম আসতে ফাইজা চৌধুরী সালামের জবাব দিলেন।
রাইহান চৌধুরী হাউমাউ করে কাঁদছে। ফাইজা চৌধুরী ঘাবড়ে যান কিছুটা।
-কী হয়েছে বাপ?
-মা আয়মান আমার সন্তান না। আর সাদিয়া আমায় ফাঁসিয়ে বিয়েটা করেছে। জাফিয়ার কাছে আমি অপরাধী হয়েই থেকে গেলাম। আমি জাফিয়াকে খু’ন করিনি মা। আমি ওকে বাঁচাতে চেয়েছি।
-হয়েছে বন্ধ করো নাটক। ওর হার্ট অ্যাটাকের পেছনে তো তুমিই দায়ী রাইহান। কত বিশ্বাস করতো মেয়েটা তোমাকে। সে জায়গায় লুকিয়ে বিয়ে করে বাচ্চা সহ নিয়ে আসলে তুমি জানতে জাফিয়ার হার্টে প্রবলেম ছিলো। আর হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে আর হার্ট অ্যাটাক করেছে তোমার কারণে। তোমার ভুলের কারণে। আয়মান এখন যারই সন্তান হোক সমাজ তো জানে সে তোমার ছেলে। পারবে নিজের অতীত ঘেঁটে সামনে আনতে? আসলে কী জানো বাপ আমার মনে হয় আমি তোমায় মানুষের মতো মানুষ করতে পারিনি।
-মা!
-ডাকবে না তুমি আমায় মা বলে। ভাবো তো আমার নাতি নাতনি কত গুলো বছর ধরে মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত, কতগুলো বছর মা বলে ডাক দিতে পারে না।
-আমি জানি মা।
-আমার বেস্টফ্রেন্ড জরাক ইয়সুফের কাছে আমি আজোও অপরাধী। একমাত্র তার মেয়েকে কথা দিয়ে আশা করে তোমার বউ করে আনলাম। বড় পূত্র বধু। আমার ছেলে আমার সন্মান রাখলো না। মাঝখানে আমার নাতিনাতনি!
-মা আমার বাচ্চারা আমায় বাবা বলে ডাকে না। আমার ও তো কষ্ট হয় মা। মানুষ মাত্রই তো ভুল!
-এটা আগে বুঝা উচিত ছিলো তোমার।
******
-হুটহাট বিয়েটা ভেঙে দিলে তুমি আলিশা? এটা কোন ধরনের ব্যবহার আলিশা?
প্রশ্ন করলেন আফিয়া ইসলাম। আলিশা সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কঠোর গলায় বলে,
-বেশ করেছি। এখন তো যাচ্ছে আরেকটা বিয়ে করতে সমস্যা কোথায়? আর আমার ভালোবাসার মানুষ আছে।
-এটা আগে বললে না কেন তুমি? কথা দিয়ে কথার খেলাপ করা আমার পছন্দ না। তোমার জন্য আমার বোনকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি।
-তোমাদের সন্মান বাঁচানোর জন্যই তো করলাম কাজটা। নাহলে তোমরা ও মরতে আমায় ও মারতে। ও আমায় এতো সহজে ছেড়ে দিবে না।
বিড়বিড় করে বললো আলিশা। তখন আফিয়া ইসলাম বললেন,
-কী বলছো ক্লিয়ার বলো না?
-আয়মান আরহাম চৌধুরী। ও আসবে তখন নাহয় দেখো বিষয়টা।
-কোন আরহাম আয়মান আসবে না। বেয়াদব মেয়ে তোমার মা তোমায় রায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছে। রোশানের সাথে বিয়ে ভেঙে তুমি যদি মনে করে থাকো তুমি আয়মানকে বিয়ে করবে সে ভাবনা বাদ। আগামী কালকেই তোমার বিয়ে দিচ্ছি আমি। পাত্র সব রেডি তোমায় শিকড় দিয়ে না বেঁধে দিচ্ছি আমি তো আমার নাম ও আশরাফ খান না।
আলিশা চুপসে যায়। এখন তার কোন কথাই কাজ হবে না। কারণ সে দুইদিন আগে বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
-তোমার জন্য ও এতো বাড় বেড়েছে। বেয়াদব একটা ওর ফ্যামিলি তে তো এমন রেকর্ড আছে ছেলেদের সাথে রাত বিরাতে ঘুরে বেড়ানো। ও জানে এসব কারা করে? এসব করে বস্তির মেয়েরা! ছেলে নিয়ে রাত বিরাতে ঘুরা। পারিবারিক শিক্ষা সুন্দর ভাবে দিতে পারিনি আমি।
-তুমি থামো না?
-কী থামবো আমি?
আফিয়া ইসলাম কে ধমক দিয়ে বললেন আশরাফ খান। আলিশা ততক্ষণে নিজের রুমে।
-আগামী কালকে ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে পছন্দ হলে আগামী কালকেই ওকে বিয়ে দিয়ে দেবো।
-না জেনে শুনে কার সাথে দিবে তুমি?
-ছেলে ভালো। আমার ক্লায়েন্ট! এতোদিন তার বাবা বিজন্যাসে ছিলো এখন সে দায়িত্ব নিয়েছে। শাহরিয়ার শিকদার সায়ন্তিক তার নাম।
-কিন্তু..!
-আর একটা কথা বললে তুমি সহ বেড়িয়ে যাবে আমার বাড়ী থেকে। বিকেলে সব শপিং চলে আসনে চুপচাপ কাজ করবে। আগামী কালকেই ওর বিয়েটা আমি দেবো।
*******
রাখিকে নিয়ে চৌধুরী বাড়ীতে রওনা দিয়েছে রুদ্র। হঠাত করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। তবে কারণটা খুঁজে পাচ্ছে না। কাউকে মিসিং লাগছে। কারোর মুখটা দেখার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু কাকে মিসিং লাগছে সেটাই বুঝতে পারছে না। চুপচাপ ড্রাইভিং করছে রুদ্র। রাখি ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
-ভাই ভাল্লাগে না বিয়েটা কবে করছো?
-করবো তো! এই তো সামনের মাসে।
-আলিশার সাথে কথা হয়?
-না!
-কেনো?
-ও ব্যস্ত থাকে আজাকাল। আমিও ব্যস্ত থাকি। কী জানি কেমন জেনো হয়ে যাচ্ছি দিনদিন।
-দূরে থাকে তো সেজন্য এমন লাগে। বিয়েটা করে নিজের কাছে রেখে দাও তাকে।
হাসে রুদ্র তবে জবাব দেয় না। চৌধুরী বাড়ীতে এসে প্রথমে ফাইজা চৌধুরীর সাথে দেখা করে রুদ্র। রাখিকে দেখে আরিশ বলেই ফেলে,
-একি মেঘকে আনোনি? একা একা চলে আসলে একটা মাত্র ননদ তোমার নিয়ে আসতে। আরোহীর এনগেজমেন্ট হবে ওর সাথে তো ভালোই সম্পর্ক ছিলো মেঘের।
তখন ফাইজা চৌধুরী বললেন,
-হ্যাঁ,হ্যাঁ নিয়ে আসতে রাখি। মেয়েটা বড্ড মিষ্টি আর মিশুক।
-যে নেই তাকে নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার আছে? দাদীন রাখিকে নিয়ে গল্প করো এসব মেঘ বৃষ্টিকে বাদ দিয়ে।
গম্ভীর কণ্ঠে বললো রুদ্র। তখন আরিশ বলে,
-ব্রো আই লাইক সী। তুমি বুঝোনা তাকে দেখার জন্য আমার মন ব্যকুল।
-কাকীমাকে বলি বিয়েটা দিয়ে দিতে তোকে।
-মেঘ হলেই হবে।
-এসব আজাইরা চিন্তা বাদ দে ভাই। মেয়েটা তোর থেকে বেটার কাউকে ডিজার্ভ করে। এইচএসসি দেক ভার্সিটি যাক। এখনো তো পিচ্চি।
-ধুর ভাই ভালোবাসার ক্ষেত্রে এসব ম্যাটার না। এই পিচ্চিটাকেই আমার ভালো লাগে।
-তাহলে অপেক্ষা কর পিচ্চির জন্য।
-এতো অপেক্ষা করতে পারবো না আমি৷
-কেন রিজেক্ট করে দিলো নাকী?
-তুমি এতোসব কিছু জানো কীভাবে? এই তুমি আলিশা আপুকে রেখে ওর সাথে টেম্পু চালাচ্ছ নাকী?
-মাথাটা সত্যি গেছে ওই মেঘের পাল্লায় পড়ে। তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে রিজেক্ট হয়ে এসেছিস।
-কেন ব্রো তুমি রিজেক্ট হয়ে আসার পর ও কী তোমার ফেসটা আমার মতো ছিলো?
-এই জারিফ আনান চৌধুরী রুদ্র কারোর কাছে রিজেক্ট হয়নি ওকে? আর মেঘ,মেঘ বাদ দিয়ে বিজন্যাসে মন দে।
-আমি বুঝলাম না তোমার জেলার্স ফিল হচ্ছে কেন?
-এটাকে জেলার্সি মনে হয় তোর কাছে? আমি ওর টিচার আর আমার গফ আছে বুঝলি? আমার মনে,প্রাণে আলিশা ছাড়া কেউ নেই। টিচার হিসাবে এটা আমার রেসপন্সিবিলিটিতে পড়ে।
-কলেজের সম্পর্ক পারিবারিক সম্পর্কে টানছো কেন? আসলে তুমি সম্পর্কের মূল্য বুঝো না।
-এখন তোদের থেকে আমায় শিখতে হবে সম্পর্কের মূল্য?
কথাটা বলে রুদ্র চলে আসে। এই আরিশ আর মেঘ দুটোই একরকম। সম্পর্কের মূল্য বুঝাবুঝি নিয়ে জ্ঞান। আরিশকে তো রুদ্রর কাছে এক্সট্রা বুঝরুক মনে হচ্ছে। সে তো মেঘের ভালো চেয়ে বলেছে এখন পড়াশোনায় ফোকাস করার সময় অন্যদিকে মন দিলে সব শেষ। এমনিতে এই মেয়ে যা লাড্ডু। এখন টেনেটুনে পাশ মিলায় প্রেমে আছাড় খেলে পাশের ‘প’ টাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
#চলবে