#বাতাসে_তার_সৌরভ–২৬
স্বপ্নের মতো কোন দিন কি হয়?যার প্রতিটি মুহূর্ত মানুষ আলাদা আলাদা স্বপ্নে দেখে সব একসাথে হলে আনন্দে শরীর ঝিমঝিম করতে থাকে, চিৎকার দিতে মন চায়। জেরিনেরও চিৎকার দিতে মন চাইছে,কিন্তু ফাইভস্টার হোটেল সুইটে ব্যাপারটা খুব বেশী দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে। সলিটায়ারটা চোখের সামনে রেখে
সোহরাব হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন হ্যাপি?
– আমি ভাবতে পারছি না সোহরাব…
জেরিন দ্রুত চোখে অশ্রু নিয়ে এলো।
সোহরাব আনন্দের সাথে আংটিটা তার অনামিকায় পরিয়ে দিলেন বললেন – ডিজাইন পছন্দ হবে কিনা চিন্তায় ছিলাম তাড়াহুড়োয় নিয়ে নেওয়া. ।
-আমি তোমাকে পেয়েছি এইই তো অনেক।
জেরিন মিষ্টি গলায় বলল।
যদিও ডিজাইন তার তেমন একটা ভালো লাগেনি, পাথরটা একটু বড় হলে ভালো হতো।
সোহরাব জেরিনের হাত চেপে বললেন –
শুধু আমাকে পেলেই হবে না আমি চাই তোমার সব শখ পূরণ হোক। সকালে তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে যাও”
-রেজিস্ট্রি কি সকালেই?
– না, আগে দুজনে মিলে সময় করে শপিং করব। কিচেনে পার্টির চাপ নেই তুষার সামলে নেবে। এরপর রেডি হয়ে সোজা রেজিস্ট্রার অফিসে।
-সত্যি
– কোন সন্দেহ?
জেরিন মাথা নাড়লো কোন সন্দেহ নেই। ঝামেলা শুধু একটাই সোহরাবের দুই পুত্র। বিশেষ করে ইস্রাফিল সামদানী অর্ণব। এই চরিত্রটা পেছন থেকে ভাই গ্যাব্রিয়েল আর তার বাপের কলকাঠি ভালোই নাড়ে।এদের ঝামেলার কিছু কিছু জেরিন আন্দাজ করতে পারে না তা নয়, যতদুর জানে gabriel’s কিচেন নিয়ে দেন দরবার চলছে।কিন্তু আসল বিষয়টা কি এখনো জানা হয়নি।
এত অন্তরঙ্গতার পরেও সোহরাব তার ছেলেদের সাথে জেরিনের একটা পর্দা দিয়ে রাখে। যদিও এরপর পর্দা সরে যাবে কারণ কাল থেকে জেরিন হয়ে যাবে মিসেস জেরিন সামদানী। দীর্ঘ দিনের ধৈর্য ও সাধনার ফল ভাবতেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। সোহরাবও দেখা গেল বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন।
আনন্দের প্রলয়ে গভীর প্রেমের রসায়ন মিশতে দ্বিধা ছিলো না হুট করে বাধা এলো মুঠোফোন থেকে। আবেগে ডোবা জেরিন কলটা কেটে দিচ্ছিল কিন্তু দেখা গেল ওয়াটসএপে গ্যাব্রিয়েলের কল।
সোহরাব সাহেব উঠে গেলেন।হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে এসে ভিডিওকল ওপেন করলেন
ওপাসব থেকে রম্যের চেহারা দেখা যাচ্ছে তবে তার আশেপাশের পরিবেশটা ঠিক যেন স্বাভাবিক নয়।
-হেই রমি কী অবস্থা বেটা?
– ড্যাড তুমি কেমন আছ?
-বেশ ভালো তুমি ডালাসের মধ্যে কোথাও? না বাইরে?
রম্য অল্প কেশে জবাব দিলো -ড্যাড আমি আসলে বাংলাদেশে।
-বাংলাদেশে!
– হ্যাঁ তবে ঢাকায় নয় সাতক্ষীরা!
– আর ইউ ইনসেইন!
সোহরাব সাহেবের কন্ঠে বিস্ময় ঝরে পড়ছে।
” ইটস আ লঙ স্টোরি ড্যাড ”
” বল তোমার লঙ স্টোরি, তাছাড়া কোন অপশন নেই।
রম্য ছোট নি:শ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে স্বল্পবাক্যে বুঝিয়ে বলল। সোহরাব সাহেব একে একে জানছেন আর মাথায় এক একটা আকাশের স্তর ভেঙে পড়ছে।
তবে ঘটনা শুধু ছেলের কর্মকাণ্ড শোনা পর্যন্ত শেষ হলো তা নয়,রম্যের পরিচয় নিশ্চিত করতে ফোন চলে গেল নদীর বড়মামার কাছে৷স্ক্রিনের ওপাশে বসা ভদ্রলোক ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছেন
-সো ইউ আর গ্যাব্রিয়েল সামদানীস ফাদার, আই এম মোজাফফর আহমেদ।
সোহরাব সাহেব বাংলায় বললেন – জি ভাই আমি আপনাকে চিনেছি আমাদের একবার ঢাকায় দেখা হয়েছিল। নদীকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন। আমার সাথে রাবেয়া ছিল মনে আছে?
মোজাফফর সাহেব স্থির তাকিয়ে আছে গৌরাঙ্গ মানুষটাকে এতক্ষণে মনে পড়ল। নদীর বাবার বন্ধু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল রাবেয়া। তার মানে এই বিলিতি ছেলেটা সত্যিই এই মানুষটার পুত্র।এতক্ষণ যা বিশ্বাস করা কঠিন হচ্ছিল। একটা বিষয়ে প্রশান্তি এলেও মোজাফফর সাহেব তার যুক্তিতে অনড়।
“আমি মানলাম আপনার ছেলে আমেরিকান তার চিন্তা-ভাবনা অন্যরকম, কিন্তু সে বোকা নয়। কোন একটা জিনিস বুঝিয়ে বললে তো বোঝার কথা। তাকে পরিস্থিতি বোঝানোর অনেক চেষ্টা চলেছে কিন্তু সে জেদ করছে। আমাদের এখানে গ্রামে নিজের সমাজ আছে, আইন আছে সংস্কৃতি আছে। আপনি দয়া করে আপনার ছেলেকে বোঝান। সে বিষয়টাকে আরো জটিল করে তুলছে। ”
” নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই মূলত রম্য তার স্টাফদের নিয়ে একটু বেশি কন্সার্ন তো।নদীর প্রতি কেয়ারিংয়ের জন্য হয়তো.. আপনি চিন্তা করবেন না আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি৷
” জি দয়া করে বুঝিয়ে বলেন সে এখানে এসে যথেষ্ট নাটক কইরেসে ”
সোহরাব সামদানী পুত্রের সাথে ভিডিও কলে গেলেন, রাগ গাম্ভীর্যে মুখ থমথম করছে। রম্য নিজের কাচুমাচু ভাব তার সামনে কণ্ঠ পরিষ্কার করে বলল, ” ড্যাড একটা ছোট মিস্টেকে আটকে গেল, যদিও আমি ব্যাপারটা সামলিয়ে নিয়েছিলাম… ”
“কতটা সামলে নিয়েছো আমি দেখতে পাচ্ছি।আমাকে না জানিয়ে দেশে এসেছ সোজা সাতক্ষীরা চলে গেছ ”
“তুমি আমার এক্সপ্লেনেশন টা তো শোনো, ”
“এক্সপ্লেনেশন ঢাকায় এসে দেবে, আপাতত এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হও! আমি চাই না তোমার জন্য মেয়েটা কোন বড় মূল্য দিক, ডু ইউ গেট ইট? ”
” ইয়েস স্যার ”
” কালকের মধ্যে আমি তোমাকে ঢাকায় দেখতে চাই, এন্ড ইউ উইল মেক ইট হেপেন,এট এনি কস্ট”
সোহরাব সাহেব ফোন রাখলেন।
জেরিন আবেশে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো -কাল তাহলে আমরা কখন বের হচ্ছি?
” বের হচ্ছি না, কারণ কাল বিয়েটা হচ্ছে না। ”
সোহরাব সাহেব গম্ভীর মুখে উঠে গেলেন।
******
রম্য বাবার কথোপকথনের ফিরতে নিমরাজি হলো। মোজাফফর সাহেব ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছেন। হিসাবটা একটু মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছেলেটা প্রমাণপত্র যা দিয়েছে তাতে কোন ঘাপলা মনে হচ্ছে না, আইডি পাসপোর্ট সবই ঠিক আছে।কিন্তু প্রশ্ন হল এই ছেলের সাথে নদীর এত অন্তরঙ্গতা হলো কী করে? আর যদি বেশি অন্তরঙ্গতা হয়েই যায় তাহলে অন্যজায়গায় নদীর বিয়ের চিন্তা করা কি ঠিক হবে?
গ্যাব্রিয়েলকে শানু মোটামুটি ভরসা দিলেন নদী তার সাথেই ফিরবে। সে মেনে ফিরে যাচ্ছিল, পথে হঠাৎই আরেক বিপত্তি। উঠোনে শাহবাজ সদলেবলে রুদ্রমূর্তিতে দাঁড়িয়ে ।
“এরাম কইরে পালায় বাঁচলি তো হবে না একটা হিসেব তো দিতি হবে।
শাহজাহান এগিয়ে এলেন, “আল্লাহ বাঁচায়েছে আমার ছেলের কপালে এরাম কুলটা ছেল না। ”
শাহবাজ বলল ” কিন্তু ভাইজান এই ছেলেরে তো এমনে ছাড়া যাবি নানে। আমার বাড়িতে এসে লিলারঙ্গ কইরে চিকন গলি ধইরে ভাগবে আমরা কী দাঁড়ায় আঙুল চোষবো? ”
দুইভাইয়ের চিৎকারে অন্দরে বসা মেয়েরা সবাই জানালাও বারান্দায় ঝুঁকে এলো । নদী আতঙ্কিত হয়ে দেখলো গ্যাব্রিয়েলের দিকে কেমন মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসছে শাহবাজের লোকজন।
মবিন আর বড়মামা ধমকে ঠেকিয়ে রাখছে তাদের। রম্যর সাথে নদীর চোখাচোখি হলে সে হাত দিয়ে শান্ত থাকতে বলছে, যেন সব সামলে ফেলবে । নদীর কেমন অসহায় বোধ হচ্ছে,
” খালামনি এইগুলা কী হচ্ছে?ওকে তো বড়মামা ছেড়ে দিয়েছিল তাহলে খালু এমন করছে কেন?”
নদীর প্রশ্নের শানু কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবার আগেই, রানুর কোথা থেকে ঝড়ের গতিতে উড়ে এলেন ভেতর বাড়ি থেকে,
” এই বারোভাতারি মেইয়ে মানুষ তুই এইখানে দাঁড়ায় কি নাগর দেখতিসিস?ভেতরে আয়… ”
” হেই ইউ লেইডি, ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার ”
রম্যের উঁচু স্পষ্ট কন্ঠ।অর্বাচীন বিলেতি যুবকের ঔদ্ধত্য দেখিয়ে রানুখালা হতভম্ব। আক্রোশ ফেটে পড়ল নদীর উপর, হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন।নদীর খোঁজে রম্য বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে শাহবাজও মারমুখী হয়ে এগিয়ে এলো, মবিন ঠেকালো তাদের। রম্য ফোন ক্যামেরার ভিডিও অন করে ফেলল। নিশিকেও মামিরা ভেতর পাঠালো।বাইরের পুরুষরা ক্রমে উগ্র হয়ে উঠছে।
” এখন বুঝতি পারিসি ওই বন্দুক টন্দুক সব সাজানো নাটক। আমি কি জানিনে? সব এই বিলিতির কারবার। এই মেইয়ে আপনি আর কোথাও বে দেন আমিও দেখবো ভাইজান, আমার সরল সোজা ছেলে বইলে মেইনে নিয়েছিল… এর একটা বিহিত করতেই হবে। ” শাহজাহান সাহেব চেঁচিয়ে মোজাফফরকে বলে চলেছেন ।
” ওহ আই সি তাড় মানে , আপনি এখনো আপনার সাইকো ছেলের সাথে নদীর বিয়ের প্ল্যান ড্রপ কড়েন নাই? “রম্য টেনে টেনে অকপটে আরও বলল, “ইউ নো ওয়াট, শানু আন্টি আর মবিন আমাকে এশিউরেন্স দিয়েছিল দ্যাট নদী উইল বি ফাইন বাট, এখন আমি নিজে চোখে যা দেখলাম সি ইজ নট সেইফ হিয়ার এট অল।”
বড়মামা অবাক হয়ে বললেন, “দেখ ছেলে বেশি বাড়িয়ো না। আমি শান্ত কত্তিসি সব আমাগের মেয়ের ভালো আমাগের চেয়ে কি তুমি বুঝবে? ”
“সরি টু সে আঙ্কেল, একচুলি এই মুহুর্তে আপনাদের চেয়ে মেহরোজের ভালো আমিই বেশি বুঝছি। নিয়ে আসুন পুলিশ, আই ওন্ট টেইক এ সিঙ্গেল স্টেপ উইথ আউট হার, লেটস সি ওয়াট ইউ কেন ডু ”
রম্য চেয়ার টেনে আরও খুটি গেড়ে বসে গেল।তাকে ঘিরে শাহবাজের দলবল হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে।বিদেশি একজন তরুণের এমন অদ্ভুত আচরণে কী করবে বুঝতে পারছে না।
শাহজাহানের মাথায় ক্ষোভের উদগীরণ।উত্তেজনা যেন চেন রি-একশনের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে গেছে, ওইদিকে জানালার শিক ধরে শাহীন চিৎকার করে যাচ্ছে, “আমাকে কারাগারে বন্দী কইরে রেইখেসো… কিন্তু হৃদয় বন্দী না..নদীরে একটা ফুলের টোকা দিলি রক্তে বন্যা বয়ে যাবে কলাম ।”
আরও কিছু ফিল্মি ডায়লগ ছিলো কিন্তু তার দিকে কেউ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলো না। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ক্রমাগত রম্য হয়ে উঠছিল।
এক সময় থানা থেকে ওসি সাহেবও এলেন।বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ওসি একটা সালিশের মতো করলেন।
দুই পক্ষের বয়ান শুনে ওসি সাহেব একটা ভিডিও কলে আবার সোহরাব সামদানীর সাথে কথা বলে নিলেন।
ভেতরের একটা ঘরে নদীকেও এক অর্থে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে ঘিরে আছে অন্যান্য আত্মিয়োস্বজন। গ্যাব্রিয়েলের খোঁজ না জেনে অস্থিরতায় জানালার গ্রিলে মাথা ফাটিয়ে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছিল নদীর। তবে গোটা পরিস্থিতি উপভোগ করছিল একজনই
” মাই গড নদু ওয়াট আ সিচুয়েশন! পিওর ড্রামাটিক এন্টারটেইনমেন্ট ফর বাবুর্চি! আই লাইক ইট ”
নিশির কথা নদী হতাশায় ঠিক ভাবে কাঁদতেও পারল না করিডরে মবিনের দেখা পেল সে চিন্তিত মুখে এগিয়ে এসে বলল,
” নদী নরমাল হও, ওসি সাহেব ডেকে পাঠিয়েছেন শান্ত গলায় কথা বলবে, কী বলবে বল তো ? ”
” মবিনভাই ওনারা যা চান তাই হবে, ব্যাস গ্যাব্রিয়েলকে ছেড়ে দিক। ওর এই ঝামেলার মধ্যে না আসাই ভালো ”
” খবরদার এমন বোকামি করো না। এই দিকে নিজের হাত ধুয়ে ফেললে গ্যাব্রিয়েলের সমস্যা আরও বাড়বে ”
মবিনের কথায় নদী থমকে গেল। সেই মুহূর্তে মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো। এক অর্থে বোবা চিন্তা মাথায় ভর করে ওসির সামনে এসে বসলো। শান্তমুখেই বলল,তাকে এই বাড়িতে অস্ত্রের মুখে শাহীনের সাথে বিয়ের জন্য বাধ্য করা হয়েছিলো।শাহীনের বাবা ও মা দুজনের ইন্দনেই হয়েছিলো। গ্যাব্রিয়েল স্যার এখানে তার অফিসের কিছু ডকুমেন্ট নিতে এসেছিলেন সুযোগ বুঝে নদী নিজেই তার চলে যেতে চেয়েছিল।
“গ্যাব্রিয়েল বলছেন তিনিই আপনাকে অফার দিয়েছিলেন ”
“তিনি তো কিছু জানতেনই না, অফার কি দেবেন? “নদী একঝলক রম্যের দিকে একঝলক তাকিয়ে উত্তর দিলো।
” তাহলে এখন সাথে নেবার জেদ করছেন কেন? ”
উত্তরটা রম্যই আগ বাড়িয়ে দিলো, বিকজ নো ওয়ান এলস কেয়ারস এজ মাচ এজ আই ডু ফর হার। কান্ট ইউ সি মেয়েটাকে কীভাবে টর্চার করা হচ্ছে? তুমি নিজে ওর ওয়ানাবি হাজবেন্ডকে অস্ত্রসহ এরেস্ট করেছ ”
শাহজাহান সাহেব চিৎকার করে উঠলেন,
” যথেষ্ট হইয়েসে ওসি সাহেব! এই মজনুরি সাথে নিয়ে যান তো, সোজা অপহরণের মামলা দেবেন…. ”
” উল্টো অপহরণের মামলা খাতি পারেন।” ওসি সাহেব চেঁচিয়ে উঠলেন।” যিরাম কইরে ঘিরে রেইখেসেন,এই ছেলের গায়ের ফুলির টোকা লাগলেই হইলো।সোহরাব সামদানী কিডা জানেন?জায়গা মতো ফোন করলে খুটি নইড়ে যাবেনে এর মধ্যি দুটা ফোন এইসে গেছে। সে বইলেসে ডলারের লোভে পইড়ে এত এত মানুষ নিয়ে আপনারা ছেলে আটকে রেইখেসেন। ছেলে তো ভিডিও বাপেরেও পাঠিয়েছে, আপনাগের কাছে মেইয়ে নি যাওয়ার ভিডিয়ো আছে? চপড়চপড় বইকেই যাচ্ছেন..!” ওসি সাহেবের ধমকে শাহজাহান আরও একটু দমে গেলেন।
মোজাফফর সাহেব শান্তমুখে রম্যের সামনাসামনি চেয়ার টেনে বসলেন, একটু শীতল কন্ঠে বললেন,”শোন বাবা,তুমি যেভাবে চাচ্ছ সে নদীর ভালোর জন্যি বুঝতি পারিসি, কিন্তু এ কোনভাবে হবি নানে। এটা আমাগের কালচার না, আমাদের মেয়েদের সিকিউরড রাখতে হয় ”
” আপনারা মেয়েদের প্রায় বন্দী করে বড় করেন,এন্ড উইথ ওউট দেয়ার কনভেন্স, একসময় একটা সম্পূর্ণ অচেনা মানুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন যাদের তারা নামটাও ঠিক মতো জানে না। ওয়াও অসাধারণ সিকিউরিটি সিস্টেম!
” তা তোমাদের সিস্টেমে চলতি গিয়ে এই পরিবারে সম্প্রতি একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেছে তা জানো নিশ্চয়ই। শানু বলেছিল তখন তুমি অনেক সাহায্য করেছ, এইজন্যি তোমায় ভালো ভেবেই বলছি । নিশির জন্যি তার বাপ ছিলো মা ছিল, যিরাম সিরাম হলিও মেইয়েরে পানিতে পড়তি দেবে না৷কিন্তু নদী পানিতে পড়লে ধরার মতো কেউ নেই।”
” না থাকলে সাঁতার শিখে নেবে, বিয়েটাই কি সমাধান?
“হ্যাঁ এতিম মেইয়েদের জন্য বিয়েটাই সমাধান । এই পৃথিবীতে কারো বিশ্বাস নেই। লিখিত বোঝাপড়া ছাড়া দায়িত্ব না নেওয়া যায়, না দেওয়া যায়”
” ওকে ফাইন! দায়িত্ব নিতে কী করতে হবে বলেন, আমি নিতে চাই। যেকোনো টার্মস এন্ড কন্ডিশনস, ওর এনি সর্ট অফ রিটেন এগ্রিমেন্ট…”
মোজাফফর সাহেব বললেন ” এগ্রিমেন্ট না সেটেলমেন্ট, রাজি থাকলে আমি নদীরে তোমার সাথে দেব, নয়তো তুমি তোমার রাস্তায় যাবে, আর নদীর ব্যবস্থা আমরা নেব। এন্ড দ্যাট উইল বি নান অফ ইউর বিজনেস”
***
পরদিন সকাল
রম্য বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। যদিও উচিত হচ্ছে না তার উপস্থিতির জন্য রাঁধুনিরা মনোযোগ দিতে পারছে না।কিন্তু বিষয়টি না দেখেও পারছে না।
দেশটায় এত এত রান্নার ভেরিয়েশন
একটু মসলার এদিকওদিক করে ফ্লেবার পরিবর্তন হয়ে যায়।কোকোনাট মিল্ক দিয়ে যে পোলাও রান্না করা যায় এটাই সে আগে জানতো না। বর্তমান এই জিনিসের অসাধারণ সুরভিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মেহরোজের বড়মামার স্ত্রী খুবই দক্ষতার সাথে হাত চালাচ্ছেন। হাতের গতিতে বোঝা যায় তিনি ভালো রাঁধেন। রম্য এগিয়ে গিয়ে তার সাহায্য করতে চাইছিলো মহিলা আঁতকে উঠলেন। ইংরেজি ভালো বলতে পারেন না।তবুও যা বুঝলো সে বাড়ির বিশেষ অতিথি, অতিথিদের দিয়ে কাজ করানো ভয়ংকর অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। তবে রম্যের চোখে আগ্রহ যেন ঝিকমিক করছে।
নাজিয়া কাজ করতে করতে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করছেন
– ইউ হ্যাভ মাদার? মা আছে?
– জি আমার মা আছে।
– শি আমেরিকান?
– ইয়েস বাই বার্থ আমেরিকান বাট একচুলি স্কটিশ ।মূলত আমার মায়ের পেরেন্টসরা স্কটিশ৷
-ওরে জ্বালা! বিটিশ শাশুড়ী নদীরে তোর কপালে শনিরে, নাজিয়া আবার ইংরেজিতে ফিরে গেলেন, “হি(?) নোজ ইউ হিয়ার?
-হু মাই মম? নো আই থিংক নট…রম্য একটু অপ্রতিভ ভাবে হাসলো, মাকে তো আসলেই বলা হয়নি সে বাংলাদেশে আসছে। তিনি জানেন রম্য এখনো ভেগাসেই আছে। এবার রম্যকে ফিরে আসতে দেখে রেবেকা কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন। ইন্ডিয়ান মাদারদের মত আয়োজন করে ছেলের জন্য ডেট খুঁজছিলেন। একটা ম্যাক্সিকান মেয়েকে ভালোও নাকি লেগেছিল চাইছিলেন রম্য তার সাথে একটু জেলাপ হোক। রম্য সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়ে লাস ভেগাস চলে এলো আর এখন তো সোজা বাংলাদেশ । রেবেকা জানার পর কী করবেন রম্য ভাবতে চাইছে না।
হাতের কাছে অর্ণব আছে, তার কানে বিস্ফোরণ করবেন নিঃসন্দেহে। এরপর নিশ্চিত এটাক হবে বাবা। হে আল্লাহ রক্ষা কর।
অর্ণবই তো সাতক্ষীরা আসার বিষয়ে চেচামেচি করেছিল তার ধারণায় বাংলাদেশ রুরাল এরিয়া অনেক ভয়ংকর। এখানের সাথে ট্রাইব্যাল খুব রুথলেস রিচুয়াল হয়, ধরা পড়লে রেগে মেগে রম্যকে কেটেকুটে খেয়ে না ফেলে। তবে কাল নদীর আঙ্কেলরা যা শুরু করেছিলো তাতে রম্যের সত্যি একটু ভয় লাগছিল। এখন গোটা বিষয়টা ভাবলে একটু নাটক নাটক লাগছে।
মোজাফফর সাহেবের কথা শানুর মুখে তর্জমা শুনে রম্য ভড়কে গিয়েছিল। ” আন্টি, জোর করে ধরে ধরে বিয়ে দেওয়া কি আপনাদের হবি না প্রফেশন? ”
” বাড়ি এসে নাটক করা কি তোমার প্রফেশন? নাকি দায়িত্বের কথায় ভয় লেগেছে? ” মোজাফফর সাহেব চটে উত্তর দিলেন।
সে মুহূর্তে মনে হয়েছিল চলে যাওয়াই বেটার মবিনের একটা কথায় থমকে গেল, গ্যাব্রিয়েল তুমি যে সিচুয়েশন তৈরি করেছ, এখন ছেড়ে চলে গেলে গ্রামের লোকেরা নদীর লাইফ হেল করে দিবে।”
রম্যের অসহায় লাগছিল গলা শুকিয়ে আসছিল, শেষবারের মতো মোজাফফর সাহেবকে বলল,
” আমি কি মেহরোজের সাথে একবার পারসোনালি কথা বলতে পারি? ”
” না পারো না,”মোজাফফর সাহেবের ঘোষণা,” যা বলার আমাকে বল ”
” বলতাম যদি আপনাকে বিয়ে করতে হতো” রম্য রাগ দমিয়ে রাখতে পারেনি।
” এইদেশে গার্জেনদেরই আগে বিয়ে করতে হয় “নিশির কথায় চমকে গিয়েছিল রম্য। ” জাস্ট কিডিং বাবুর্চি! নদু এই জাহান্নাম থেকে বের হবার জন্য সব কন্ডিশনেই রাজি আছে। ব্যাস সে ইয়েস, ইফ ইউ কেয়ার ফর হার”
” ইয়েস ”
অতএব রাত প্রায় বারোটা নাগাদ রম্যকে সিগনেচার করতে হয়েছে এই দেশের সরকারি নীলচে কাগজে। ধর্মীয় পোশাকে একজন পুরুষ এলেন, তিনি বড় বড় চোখ করে শুরুতে রম্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, নাম শুনে আরও হতভম্ব। “গ্যাব্রিয়েল! এতো খ্রিস্টান ছেলে! এইটা আমার দ্বারা সম্ভব না।”
রম্যকে তখন তার পাসপোর্ট দেখাতে হলো। সেখানে উল্লেখিত মুসলিম ধর্ম নিশ্চিত হবার পর তিনি শান্ত হলেন।
কোরানের ভার্স বলা হলো, কিছু শপথ বাক্য যাতে রম্যকে এগ্রি করতে হলো। গোটা বিষয়টাই কিছুটা ফানি।কিন্তু করতে হলো।
ধীরে ধীরে গোটা সিনারিওই পরিবর্তন হতে থাকলো। একটা সিগনেচারের কারণে বা মোজাফফর সাহেব তো বটেই শাহজাহান নামের লোকটা হঠাৎ করেই ঠান্ডা মেরে গেলেন। শাহবাজকেও তিনি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করে ফেললেন। রম্যকে যখন খেতে দেওয়া হলো,খিদে মরে মিশরের পিরামিডে চলে গেছে। এত কিছু করেও লাভের লাভ কিছুই হলো না,নদীর দেখা পাওয়া গেল না। রাত গভীর হবার দরুন রম্যকেও আর বের হতে দেওয়া হলো না। তবে নিশ্চয়তা দেয়া হলো যে এখন ভয় নেই নদীকে নিয়ে তারা সকালে রওনা হতে পারবে।রম্যে আর মবিনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল বাড়িরই একটা রুমে। কাঠের কারুকাজ করা আসবাবে সাজানো অতিথির ঘর। যেটা তালাবদ্ধই থাকে, সময় সময় খুলে দেয়া হয়।
বাড়ির পরিস্থিতি শান্ত থাকলেও রম্য বেশ সন্ধিগ্ধ ছিল। ফোনে অর্ণব অস্থির করছিল–
” রাতে স্টে কর্তে হবে কেন,আর এই বাড়িই কেন? ভালো কোন হোটেল নেই?”
” সম্ভবত নেই। অন্তত গুগল ম্যাপ তা দেখাচ্ছে না। এরা বলছে রাতে বের হলে ডাকাতের হাতে লুটে যাবার সম্ভাবনা আছে”
” নিজেরা কম বড় ডাকাত নাকি?যাহোক আমি রাবেয়া আন্টিকে কল করছি। তিনি বলছেন সমস্যা নেই। তবে আমি কাউকে ট্রাস্ট করছি না। তুই তোর ওয়েরাবাউট আপডেট দিতে থাকবি ”
” বিপদ এলে আপডেটে কাজ হবে না। দোয়া কর যে ভালোয় ভালোয় ফিরি,তবে অনি কাজটা কি ঠিক হলো? ”
” যআ হলো, ইট ওয়াজ নিডেড, সিচুয়েশন বিচারে কিছু কাজ ঠিক বেঠিক হিসেব না করাই ভালো রমি।এখন যেভাবে হোক জায়গাটা থেকে মেয়েটাকে নিয়ে বের হ, এট এনি কস্ট ”
রাত বাড়তে বাড়তে রম্যের চিন্তা বাড়ছিল। চোখের সামনে কিছু আগে উঠোনে শাহবাজের জংলি ক্রাউডটা মনে পড়ছে। এদিকে যার জন্য এত যুদ্ধ সেই মেহরোজেরও দেখা মেই। সন্দেহ হচ্ছে তারা কি ফ্রড করল, রাতে এসে যদি এটাক করে? মবিনকে একসময় ঘরে আসতে দেখে একটু নিশ্চিন্ত হলো।
” ভয় নেই, মালেকা সময় মতো সরে গিয়ে একটা কাজের কাজ করেছে,ইউ এন ও স্যারকে দিয়ে একটু হুমকিতেই সরকারি ঠিকাদার শাহজাহান সাহেব ঠান্ডা। এখন পারলে কোলে করে বসিয়ে রাখবে তোমাকে। তাছাড়াও তুমি বাড়ির সান ইন ল, এইদেশি কালচারে মোস্ট অনারেবল গেস্ট ”
” সান ইন ল! ” রম্যের কথাটা বুঝতে একটু সময় লাগলো, আর যখন বুঝলো, কৌতুকে হেসে ফেলল ” ওহ ইয়া আফকোর্স, কাগজে-কলমে তো তাইইই…”
” কাগজে কলমে মানে?” মবিন যেন একটু থমকে গেল রম্যের কথায়।
” কাগজে কলমেই তো, মেহরোজের মামার কন্ডিশন মোতাবেক।”
মবিন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে একটু সময় পরে জিজ্ঞেস করল ” গ্যাব্রিয়েল কিছু মনে করো না, তুমি নদীকে ভালোবাসো তো তাই না? ”
” ভালোবাসা?” এই প্রশ্নে রম্যকে কিছুটা বিভ্রান্ত দেখালো, কিন্তু উত্তর সাজানোর আগেই দরজায় হাল্কা টোকা ,নিশি হাসিমুখে উঁকিঝুঁকি মারছে,
” হ্যালো, হ্যালো, হ্যালো হেই বাবুর্চি ইঞ্জয়িং ইউর ফার্স্ট নাইট উইথ দিস কাবাব মে হাড্ডি? ”
” হাড্ডি! ” নিশির কথায় মবিন একটু মর্মাহত হলো,” আমাকে কম্পেনিয়ন বল মেহমান হয়ে এখানে এসে সেবাই করে যাচ্ছি। ”
“ওহ পুওর ফেলো, যাক তোমার এখন ছুটি এখন বাবুর্চির সার্ভিসে নদুকে দেওয়া হলো”
একটু পরে শানু ঘরে এসে বললেন, কাছের এক প্রতিবেশী বাড়িতে মবিনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও পরিকল্পনা এমন ছিল না,কিন্তু নিশির চেঁচামেচিতে ব্যাবস্থা করতে হলো। এই বিষয়ে সে অতি আগ্রহী। শানুর হঠাৎই মনটা নরম হলো। নদীর মায়ের বিয়েও এমনই হুট করে পাত্রী দেখতে এসে মাঝরাতে হয়ে যায়।
মনে পড়ে গাছে ফোটা গাদাফুল ছিড়ে ছিটিয়ে তাড়াহুড়ো করে বাসর সাজিয়েছিল রানু আর শানু মিলে। সেই বিয়ের কত প্রতীক্ষার পর এই নদী এসেছিল । ততদিনে বাকি বোনেরা বিয়ে করে মা হয়ে গেছে। নস্টালজিয়া কাটিয়ে শানুই নদীকে নিয়ে এলেন ঘরে। রম্য দেখলো নদীর হলুদ শাড়ি বদলে অন্য একটা লাল সুতির শাড়ি পরে আছে। এই পোশাকে মেয়েটার নিখুঁত খাঁজের দেহসৌষ্ঠব ফুটে ওঠে। যদিও নিরাভরণ ব্রোঞ্জ রঙের অবয়বটাও অনন্য ; রম্য শাসালো নিজেকে। বিনা কারণে এলোমেলো চিন্তা এসে ভর করে মাঝে মাঝে।
নদী আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সোজাসুজি তাকাচ্ছে না। শানু আন্তরিক গলায় বললেন ” গ্যাব্রিয়েল,আমি বুঝতে পারছি নতুন জায়গা, তোমার কম্ফোর্ট ফিল নাও হতে পার। তবে একটাই তো রাত। কাল তো সবাই রওনা দিচ্ছ, নদী নাহয় এখানে থাকলো ”
” নো নো আন্টি, শি ডাজনট নিড টু ডু দ্যাট, অনেক স্ট্রেস গেছে ওর টায়ার্ড হবে, আই এম পারফেক্টলি অল রাইট ”
শানু একটু অবাক, রম্যের কথা ঠিক যেন বুঝতে পারছিলেন না।
নিশি ফুর্তির মেজাজে বলল ” ও ডোন্ট বি শাই বাবুর্চি, এই পর্যন্ত দশবার নদুর খবর নিয়েছ, বিশবার নদুকে দেখতে চেয়েছো, তোমার দুঃখ কমাতে আমি এত যুদ্ধ করে নিয়ে এলাম এখন লজ্জায় নুয়ে পড়ছ ,হোয়াই সো প্রুডি প্রুডি ডার্লিং, ইজনট হি সো কিউট নদু? ”
মেয়ের ফাজলামোতে শানু বিব্রত মবিন বলল” কাল জার্নি আছে, আপাতত ঘুমাতে গেলে বিষয়টা আরও কিউট হয় তাই না নিশি,রাত বাড়ছে। ”
“মবিন ইউ আর কোয়ায়েট বোরিং ইউ নো দ্যাট? ”
” বেশি ইন্টারেস্টিং মানুষের আশেপাশে বোরিং মানুষ থাকতে হয়, সো শেল উই?”
শানু অবাক হয়ে খেয়াল করলেন মবিন চোখের ইশারায় কিছু বোঝাতেই নিশি বুঝলো,মবিনের মতো এত মার্জিত ব্যক্তিত্বের সাথে মেয়ের বোঝাপড়া হতে পারে ভেবেই অবাক লাগছে।
” বাই বাবুর্চি, নদু বেস্ট অফ লাক বেইব, এণ্ড টেল মি হাউ ইট ওয়াজ আর কোন সাজেশন লাগলে কল মি এনিটাইম। ”
শানু ধমকে নিয়ে গেল মেয়েকে। ঘরময় কিংকর্তব্যবিমুঢ় নীরবতা। নদীর ঠোঁটে যেন সেলাই পড়ে গিয়েছে। একটা লহমায় জীবনের হিসেব পালটে চোখের মাঝে রাজ্যের আড়ষ্টতা চলে এসেছে। মনের প্রশ্ন, এটা কি সে চাইছিলো? না চায়নি এখনই এমন কল্পনাতীত কিছু চাওয়ার মতো বোকা সে ছিলো না, তবে স্বপ্নও কি দেখেনি? সেটা এত তাড়াতাড়ি হাতের মুঠোয় এসে যাবে ভাবতে পারছে না।নদী রম্যকে আড়াল করে নিজের হাতে একটা ছোট চিমটি কেটে বুঝতে চাইছিল বাস্তবতা। হাতে অনুভূতি আছে, আর রম্য সত্যিই তার সামনে দাঁড়িয়ে।
” আমি সরি মেহরোজ “রম্যই নীরবতা ভাঙলো।
সরি? নদীর একটু মনোক্ষুণ্ণ হলো প্রথম কথায় এই বাক্যটা না বললেই কি হতো না?
রম্য একটু প্রস্তুতি নিয়ে বলল যাই হলো ” আমার একটা সমস্যা হয়েছে,ওয়াশ রুমে যাওয়া দরকার ”
” হ্যাঁ নিশ্চয়ই এই দিকে” নদী আঙ্গুল তুলে বাথরুমে দরজা দেখিয়ে দিল।
” আমি জানি কিন্তু প্রবলেমটা একটু টেকনিক্যাল। তুমি কি আমাকে একটু দেখিয়ে দেবে? যদিও বিব্রতকর কিন্তু অবস্থা যা তাতে আর দেরি হলে আমার ব্লাডার ফেটে যাবে”
নদী আরক্ততা কাটিয়ে ইন্ডিয়ান স্টাইল প্যানের ব্যবহার যতটা সম্ভব বুঝিয়ে দিলো৷
রম্য মুখ অন্ধকার করে বলল” মানে পুশিক্যাটরা যেভাবে বসে? ”
” হ্যাঁ ”
“এই দেশে সবাই এভাবেই করে? ”
” হ্যাঁ ”
তুমিও কর? নদী আতঙ্ক নিয়ে এমন প্রশ্ন আশা করছিল।তবে রম্য কথা না বাড়িয়ে চিন্তিত মুখে বাথরুমে গেল। নদী হতবাক হয়ে বসে থাকল ঘরে। মনে মনে বিড়বিড় করছে এটা সত্যি নয়, এটা সত্যি নয়।
রম্য ফিরে এলো হাসিমুখে,” ফাইনালি আই হ্যাভ ডান ইট!দো ইট ওয়াজ ট্রিকি! বাট ফিলিং মাচ রিলিফড! থ্যাংকস মেহরোজ ইউ মেইড মাই ডে”
নদী তাকিয়ে আছে,এমন বিষয়ে কাউকে এতটা উচ্ছাসিত সে জীবনে দেখেনি।
রম্য মাথা নেড়ে বলল ” দোষটা আমারই। উত্তেজনায় হাল্কা হতে খেয়ালই ছিল না। এইখানের সিচুয়েশন দেখে মাথা হঠাৎ গরম হয়ে গেল। কিন্তু ফাইনালি তোমাকে বের করার আর কোন রাস্তা পাইনি… ”
” স্যার ব্যাখ্যার দরকার নেই ”
“দরকার আছে। “রম্য বিছানায় বসতে বসতে বলল,” ঢাকায় একবার আমি তোমায় দেয়াল ভেজানো একজনকে লাথি মেরে ফেলে দিতে দেখেছি। মনে পড়ে? ”
নদী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। রম্য স্বগতোক্তি করে বলল,
” এই বিষয়গুলো এই দেশের সবাই যেন নিয়ম হিসেবে নিয়ে নিয়েছে।কিন্তু তুমি নাওনি। আমি ওই দিন থেকেই খেয়াল করছি তোমাকে। কারো এগিয়ে যাবার জন্য এমন সাহস খুব জরুরী। সাহসের সাথে তুমি মেধাবীও। তুমি টেস্টের ব্যালেন্স করতে পারো।আমার বিশ্বাস চাইলে তুমি দেশসেরা শেফ হতে পারো খামতি শুধু কনফিডেন্সের। আমি সেটাই দিতে চাইছি,হৃদয় থেকে, মোস্ট আর্ডেন্টলি। ”
” থ্যাংকস স্যার” নদী যন্ত্রের মতো বলল যদিও থ্যাংকস দেওয়াও যথেষ্ট না। তার আরও কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু শব্দরা যেন লজ্জায় ঘোমটা পড়েছে।
” ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম নদু ” রম্য বলতে বলতে হেসে ফেলেছিল।” এটাই তোমার নিক নেইম, নয়?
” শুধু নিশির জন্য, ” নদী মুখ কালো করে জবাব দিলো, ” আমার নাম নদী”
” ওহ রিভার, নাইস নেইম! রম্য হঠাৎ করমর্দনের জন্য হাত এগিয়ে দিলো,” হ্যালো নদী, আমি রম্য ”
” হ্যালো রম্য”
নদীও সহজভাবে হাতটা ধরেছিল।গম্ভীর শেফ গ্যাব্রিয়েল সামদানীর খোলস থেকে আলাদা একজন হাসিখুশি দৃঢ়চেতা তরুণ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যার একটা বাংলা নাম আছে।শেফ গ্যাব্রিয়েলকে সে চিনলেও এই যুবককে জানার অনেক কিছু আছে। যে চুম্বকের মতোই তাকে আকর্ষণ করছে।
রম্য সহজভাবে বলল” রিচুয়াল তো শেষ, তুমি চাইলে তোমার ঘরে গিয়ে ঘুমাতে পারো”
“আজ আমাকে এখানেই থাকতে হবে ”
“ওকে দেন, বাট আর ইউ কম্ফোর্টেবল উইথ শাড়ি ”
” আমার অভ্যাস আছে ”
নদী মুখে বলল অভ্যাস আছে কিন্তু মাথায় দুশ্চিন্তা। শাড়ি উঠে যাবার ভয়, আককচল সরার ভয়ে সম্ভবত তার ঘুমই আসবে না।
“রিল্যাক্স থাকো নদী, কাল আমাদের ঢাকা যেতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।আর দিলে তারো ব্যবস্থা আছে ” রম্য খাটে হেলান দিয়ে বলছে।
” রম্য একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
” শিওর”
” আপনি আমায় শুধু নিয়ে যেতেই এত কিছু করলেন? কেন করলেন? আর আমি কেন রাজি হলাম সেটাও তো জানতে চাইলেন না ”
জবাব এলো না, বিছানার চাদর থেকে চোখ তুলে নদী দেখলো রম্য তলিয়ে গেছে ঘুমের রাজ্যে।সুন্দর মুখটায় ক্লান্তি মাখা, ভারী নিঃশ্বাস ওঠা নামা করছে। নদী তার হাতে আরেকবার চিমটি কাটলো। এমন চিমটি সে কেটেছিল কাজির সামনে কবুল বলতে সময়ও। সত্যি-মিথ্যা প্রমাণে আজ রাত হয়তো এমন আঘাতে আঘাতেই কেটে যাবে। নদীকে পোড়াচ্ছে কিছু নিয়ম রক্ষার তাড়া। ঘরে ঢোকার আগে বড়মামি বলেছিলেন স্বামীর পা ছুঁয়ে সালাম করতে।
ছোটমামির প্রতিবাদ ” ওগের আবার সালাম কী গো, ও ছেলে বুঝবেই না। আর পা ছুঁয়ে সালামও কোন ধর্মিয় নিয়মে পড়ে না”
” বেশি বোঝ? তুমি কর নাই?স্বামীর পুজো দেচ্ছ নাকি, শুধু পাই তো ধরছে। এটা সম্মান করার মতো ”
” সম্মান দেখাতি পা ধরতি হবে ক্যান ”
” ছুতো ধইরে কত্তি হয়,এতে ভালোবাসা বাড়ে”
মামিদের দ্বন্দ্বের মাঝে কোনটা ঠিক বেঠিক নদী জানেনা। কিন্তু এখন প্রবলভাবে ইচ্ছে হচ্ছে মানুষটার পা সে স্পর্শ করে। হাত বাড়িয়ে হঠাৎ উৎসাহ কমে এলো,কী সুন্দর ফর্সা নিখুঁত পায়ের পাতা মানুষটার আর নদীর হাত কতটা কৃষ্ণবর্ণ। এমন সুন্দর একজন গোটা পৃথিবীর সাথে তার জন্য লড়েছে, ভাবলেও চোখটা ভরে আসে অশ্রুতে।
******
স্বপ্ন বাস্তবতার দোলাচলে চোখে ঘুম যে নেমেছিল টের পেলো ভোরের আলোর দাপটের সাথে রানুখালার চিৎকারে৷ ছেলেকে তার ঘরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
” তোমরা সবাই আমার ছাওয়ালডারে ভয় দেখায়েস! ভয়ে পালিয়েসে। আমার শাহীনির যদি কিছু হয় কাউরি ছাড়ব না বইলে দিচ্ছি”
” শাহীনির আর কি হবে সে কারে হওয়ায় এই চিনতে করগে যা আমরা কি আর বুঝি নে” মোজাফফর সাহেবের কন্ঠে বিরক্তি। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত জানেন শাহিনের তালা খুলে পালিয়ে যেতে তার বাবামারই হাত আছে। এর আগেও অপকর্ম করার পরে ছেলেকে সুচতুরভাবে তারা সরিয়ে ছিলেন। কাল রম্যের সাথে পায়ে পা বাড়িয়ে ঝামেলার মধ্যে শাহিন সরে পড়েছে। হয়তো গোটা ব্যাপারটাই সাজানো।
শাহীনের খোঁজ মিলাতে মিলাতে দুপুর গড়ালো । রাজপুত্র পাশের পাড়ার কোন বন্ধুর বাড়িতে বসে আছেন । রানু খালা পুত্রশোকে অতিথি আপ্যায়নের কোন কিছুতেই অংশ নিলেন না। এই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন শানুখালা আর নদীর মামিরা।
দুপুরে খেয়ে অতিথিরা আর দেরি করতে চায় না।
রম্য আগ্রহ নিয়ে গ্রাম্য অনুষ্ঠান ক্যামেরাবন্দী করছে। ইচ্ছে ছিল লাইভে চলে যায়। কিন্তু এতে কিছু ছোট ঝামেলা আছে। রম্যের বর্তমান লোকেশন আপাতত যত কম জানানো যায় ততই মঙ্গল। তবে ক্রাউডের থেকে বেশি সে আগ্রহ নিয়ে রান্নার কর্মযজ্ঞ দেখেছে। ইন্ডিয়ান ক্যুইজিনের নিজেস্ব একটা এরোমার ব্যাপার থাকে বিশেষ করে পেয়াজের প্রসেস এটায় তার খুব আগ্রহ। নদী রেডি হয়ে আসতে আসতে দেখা গেল বাকি বাবুর্চিদের সাথে দক্ষতার সাথে সে বেরেস্তার হাড়ি নিড়ানি দিচ্ছে। চোখেমুখে একাগ্রতা।
নদী কিছু বলতে গিয়েও শানু আটকে ফেলল।
“লেট হিম ইনজয়, এটাই তার প্যাশন মনে হচ্ছে”
” আপনি আমাদের সাথে যাচ্ছেন না শানুখালা”
” না যাবো না। যাওয়া যেহেতু এক সপ্তাহে পিছিয়েছে ভাবছি এইখানে কিছু ঝামেলা মিটিয়ে ফেলি। তাছাড়াও তোর কিছু আমানতও আছে সেগুলো বের করতে হবে, বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য থাকতে হবে।মানুষের লোভ থেকে তুই নাহলে বাঁচতে পারবি না। ”
“খালামনি আমার কিছু লাগবে না, ওই নানাভাইয়ের জমি রানুখালাই নিক নাহয়। ”
” কেন নেবে? ফাজলামো? তোর আমার মতো গাধারাই এমন স্বার্থপর গুলোর জিভ বড় করে দেয়৷ এরা জন্মই নেয় পরেরটা সাবাড় করতে। নিশি তোর সাথে ফিরে যাবে রানুর সাথে আমি বোঝাপড়া করে ফিরব। তাছাড়াও মবিনের সাথে নিশুর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হলে মন্দ হয় না কী বলিস”
নদী অস্বীকার করে পারলো না। এমন হলে আসলেই ভালো হয়।।শানুখালা কিছু পর একটা গোল বাক্স এগিয়ে দিলেন, ” এই নে ধর তোর বড়মামার পক্ষ থেকে ”
বাক্সে চিকন দুটো সলিড চুড়ির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল নদী।
শানু বললেন ” হজে গিয়ে তোর বিয়ের জন্য কিনে এনেছিল নাকি, নিজের দিতে দ্বিধা হচ্ছিল আমার হাতে দেওয়ালো”
” এই চুড়ি মামা বড় মামির জন্য এনেছিল, খালা আমি এটা নেব না”
” আলবত নিবি!” শানু নদীর হাতে চুড়িগুলো পরাতে পরাতে বললেন “ভাইজানকে তোর বাবা যতটা সাহায্য করেছে তার তুলনায় এটা কিছুই না। এখন এই উদারতা তোর পোষায় না জীবন হাত পেতে তোকে যাই ভালোকিছু দেবে সেটা ছাড়বি না, ছেড়ে দেওয়া বোকামি বুঝলি? ”
নদী অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো হাতের দিকে, তার হাতে সোনার কোন জিনিস এই প্রথম। শানু বললেন, ” তোর বড়মামার ওপর রাগ রাখিস না মা।ভাইজান যা করতে চেয়েছিলো নিশির ঘটনায় ভয় পেয়েই চেয়েছিলো। তিনি চান নি তুই সেই ভুল করিস”
” খালা আমি শুধু ঢাকায় পড়তে চেয়েছিলাম ”
“তুই ঢাকায় থাক এটাই ভাইজান চান না ”
” কেন?”
শানু কিছু বলতে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলেন। ” আছে কিছু ঝামেলা এইটা নিয়ে আপাতত ভাবার দরকার নাই।গ্যাব্রিয়েল ইনশাআল্লাহ সামাল দিতে পারবে। আমি আশাবাদী যে তোর জীবনটা আর দশটা বিবাহিত মেয়ের মতো হবে না। স্বামী সোহাগি, গতরখাটা জানোয়ার, বছর ঘুরে বাচ্চাকাচ্চার বোঝা, নিজের পরিচয় ধ্বংস করে বাবুর আম্মা হয়ে জীবন শেষ। বড় ভাইজানের পছন্দের ছেলে তোকে গৃহপালিত পশুর পরিচয় ছাড়া আর কিছুই দিতে পারতো না। ”
নদী অবাক হয়ে খেয়াল করলো শানুর কথায় একটা বিচিত্র ক্ষোভ ঝরে পড়ছে, ” গ্যাব্রিয়েল আর দশটা নিমচা বাঙাল ছেলের মতো না, তুইও নিজের পরিচয় তৈরির জন্য যা করা দরকার তাই করবি।”
শানুর কথার অর্থ নদীর মাথায় ঢুকলো না।কথার মাঝে কখনও কখনও মানুষ নিজের হৃদয়ের আয়নায় মেলে ধরে।
শানু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কিছু স্লিপ তাকে বুঝিয়ে দিলেন। এটা যত্ন করে রাখতে হবে। খুব নাকি গুরুত্বপূর্ণ। নদীর কেমন যেন বুক কেঁপে উঠলো। কাগুজে এই সমন কি আসলেও তার জীবন পরিবর্তন করতে পারবে?
সময় নিজের গতিতেই বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে দিলো। নদী শেষবারের মতো রানুখালার সাথে দেখা কর্তে গেলেও তিনি মুখ শক্ত করে রইলেন,চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,” বিলিতি বাবুর খায়েশ কত দিনে পুরোয় দেখব। দোয়া করি তোর কান্তে না হয়। সামলাতে যেন পারিস, সুখে থাক ”
বুকে চাবুকের আঁচড় নিয়ে নদী আর কথা বাড়ালো না।তাকে সত্যিকার বিদায় দিলেন নাহার বেগম জড়িয়ে আকুল হয়ে কাঁদলেন। ” কত না জ্বালায়েসিরে বোন কিন্তু দোয়াও কইরেসি অনেক, দেখ সত্যি রাজপুত্তুর এইয়েসে নিতি। চইলে যাচ্ছিস, আর হয়তো বুড়িরে দেখপি নে “নাহার কাঁদছেন কাঁদছে ঘরের সবাই নদীর চোখও ঝাপসা হচ্ছে ক্রমে চোখের পানি বড় মারাত্মক।
একদিন এই বাড়ির চার দেয়াল তার কাছে কারাগার লাগতো মুক্তির আশায় পালিয়ে গিয়েছিল রাতের আঁধারে। কিন্তু নিয়তি তার বিদায় হয়তো ঝলমলে দিনের আলোতেই লিখে রেখেছিল। অভিমান কমে বড়মামাকে দেখেও চোখ ভরে এলো।
” অনেক ভালো থাক মা! আমাদের যোগ্যতা হইলো না তোর ভালো ভাবে বিদায় দিতি মনে কষ্ট রাখিস না।দোয়া করি ভালো মতো পড়াশোনা কর সংসার কর
নদীকে গোটা পাড়াই আজ বিদায় জানাতে এসেছে মনে হলো। যারা কখনো ফিরেও নদীর দিকে চায়নি তাদের চোখে কেমন বিস্ময়।তাদের বিস্ময়ের কারণও আছে, নববধূ রূপে শুধু নদীই বিদায় নিচ্ছে তা না রম্যকে দেখা গেল এই ঝামেলার মধ্যে কেউ তাকে পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়েছে। ফর্সা রঙে লাল পাঞ্জাবি, এই পোশাকের সৌন্দর্যে রম্য নিজেও হকচকিয়ে গেছে। নদী আরেকবার হাতে চিমটি খেল। হ্যাঁ এটা সত্যি। শুধু পোশাক নয় রম্য দেখা গেল গাইড পেয়ে গেছে তিনি হলেন নিশি,
” বাবুর্চি,যাবার বেলায় এল্ডারদের ফিট টাচ কর নদীর মতো ”
” ওকে, কিন্তু কেন? ”
” কঠিন রিচুয়াল! করতেই হবে নয়তো যেতে দেবে না আবার আটকে রাখবে ”
রম্য ব্যাতিব্যস্ত হয়ে সব বড়দের পা ছোয়া শুরু করলো, বাদ রাখলো না রানুর ঠিকে ঝির পাও। যদিও চারিদিকে হাসাহাসির কারণটা তার মাথায় ঢুকলো না। গোটা ঘটনায় মবিন নিশির দিকে ঠান্ডা চোখে চেয়ে রইলো শুধু।
” ইনসেইন ”
” মিস্টার বোরিং” নিশির ক্ষোভ ভরা প্রতুত্তর।
সময় মতো চারজন উঠে গেল মবিনের গাড়িতে।
” ফাইনালি উই আর ফ্রী গাইজ ”
” ইয়েস ফাইনালি! ”
নদী ছাড়া বাকি তিনজন আনন্দে চিৎকার করে উঠলো। নদী শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে
তার চেনা বাড়ি পেছনের উঠোন, পশ্চিম পাশে গেটের পাশ দিয়ে উঠে যাওয়া বড়ই গাছ, চাপকল, বাশঝাড়, মাঝ দুপুরের রাস্তা ধরে হেঁটে চলা রাজহাঁসের পাল একে একে সবাই স্পষ্ট ভাবে দূরে সরে যাচ্ছে নেই শুধু ভুলু কুকুরটা। এবার এসে শুনেছিল কে নাকি বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছিলো। গেলবার বিদায় জানাতে এই রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিলো। শেষ দেখার কোন বিশেষ চিহ্ন থাকলে হয়তো মানুষ অনেক সহজেই তা এড়িয়ে যেত।মনে করে কষ্ট বাড়াতো না।বাবা মা বাবলুর সাথে যুক্ত হলো ভুলুর শেষ দেখার দৃশ্যটা।
” কিরে তোর ফোনে এত ম্যাসেজ আসছে! ফ্রেন্ডদের বলে দিয়েছিস নাকি ” নিশির খোঁচায় নদী জাগ্রত হলো। ম্যাসেজের আইডি দেখে পড়তে মন চাইলো না। তবে নিশির চোখে পড়ে গিয়েছিল ছো মেরে মোবাইল নিয়ে নিল
” ভালোবাসার নদী,
আমার হুদয়ে (হৃদয়ে) যে আগাত (আঘাত) দিয়েছ তা সইতে না পেরে চলে গেলাম, কিন্তু ফিরে আসব। আমি এই অপমান ভুলব না। মনে রেখ তুমি যদি আমার না হও তাহলে কারো হতে পাড়বে না। অলওয়েজ রিমেম্বার যে আই লাভ ইউ ফর এভার এন্ট এভার –হি হি হি! ” নিশি হাসির ফোয়ারা ছোটাচ্ছে,” ওহ হোয়াট এন ইমোশন নদু তোর জীবনে তো ড্রামাই ড্রামা তোর এডমায়রার থ্রেড দিসে আমাকে কেন কেউ দেয় না, আমি জেলাস ”
গাড়ি হাইওয়েতে নিতে নিতে মবিন বলল, “দেখ ব্যাপারটা একেবারে ফেলে দেবার মতো না। মাথাখারাপ মানুষকে একটু অবজারভেশনে রাখা উচিত এভাবে ছেড়ে দিলে হয়তো ঢাকায় এসে.. ”
” আরে ধুর ওই শাহীনের দৌড় আমার জানা আছে। লাইটার নিয়ে থ্রেট দেয়। এই গাধাটা গাধাই রয়ে যাবে।
” ফর এভার এন্ড এভার এন্ড এভার” রম্যের কথায় গাড়িতে আরেকবার হাসির তুবড়ি ছুটলো।
রম্যের মোবাইলেও একটা ম্যাসেজ এসেছে অর্ণবের। “ঢাকায় এসে ঝামেলা গুলো সলভ কর যেটা ওখানে পাকিয়েছিস। দেরি করিস না আমাদের হাতে সময় কম রমি, হ্যাভ এ সেফ জার্নি।”
(চলবে)
#শারমিন_আঞ্জুম