#বাতাস_বলে_দেয়
#ফারহানা_কবীর_মানাল
৭.
সন্ধ্যার পর থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। থেমে থেমে মেঘ ডাকছে। আরিফ চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসে আছে। তৃপ্ত ভঙ্গিতে ছোট ছোট চুমুক দিচ্ছে। ডিম লাইটের আলোয় তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। ইনান তার দাদার কাছে। আমি আরিফের কাছে গিয়ে বসলাম। করুণ গলায় বললাম, “কথাগুলো বলবে না?”
সে বোধহয় অল্প একটু হাসল। এক ঝলক দাঁত দেখা গেল। সরল গলায় বলল, “বললে তো বলেই দিলাম। চা শেষ করি। হতে পারে এই কাপই তোমার হাতে তৈরি চায়ের শেষ কাপ। কে বলতে পারে! হয়তো এরপর আর কখনো তোমার হাতের চা পান করা হলো না।”
“কি এমন কথা বলবে? যার জন্য তুমি এমন চিন্তা করছ!”
আরিফ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল, “আমি চাই কথাগুলো তুমি খুব মনোযোগ সহকারে শুনবে। কথার মাঝখানে কাজের অযুহাতে উঠে যেতে পারবে না। তাই তোমার সব কাজ সেরে এসো।”
“তাহলে এখন থাকুক। খাওয়া-দাওয়া শেষে না হয় শুনব। এতক্ষণ যখন অপেক্ষা করেছি। আর একটু অপেক্ষা করতে খুব বেশি অসুবিধা হবে না।”
আরিফ উঠে গেল। খাবার টেবিলে শাশুড়ি মা কিছু খেতে পারলেন না। হিমি কথা বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলেন। আমার গলাটাও বারবার ধরে আসছিল। হিমি বেশ সৌখিন স্বভাবের। রান্না ভালো না হলে খেতে পারে না। জে’লে কি খাচ্ছে কে জানে! হয়তো না খেয়ে আছে।
শ্বশুর আব্বু বললেন, “কাল সকালে উঠে গরুর গোশত ভুনা করে দিও। আমার এক বন্ধু আছে, পুলিশে চাকরি করত। এখন অবশ্য রিটায়ার্ড করেছে। তবে থানায় যোগাযোগ আছে। ওকে বলে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেব।”
“আব্বা, আপনার বন্ধুকে বলে জামিনের কোন ব্যবস্থা করা যায় না?”
“না মা, দারোগা সাথে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন সুপারিশে কাজ হবে না।”
শ্বশুর আব্বু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। খেয়াল করলাম তিনিও খেতে পারছেন না। বারবার ফতুয়ার হাতায় চোখ মুছচ্ছেন।
খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে ঘরে গেলাম। আরিফ বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। তার চোখ-মুখ শান্ত। যেন নদীর স্রোত স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে আমায় দেখে উঠে দাঁড়াল। বাতি নিভিয়ে দিয়ে বলল, “ইনান ঘুম। বারান্দায় এসো।”
বৃষ্টি তখনও থামেনি। রেলিঙের পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে হাত বাড়িয়ে দিলাম। আঙুলের দিকে সামান্য একটু ভিজল। বৃষ্টি যতটা জোরালো মনে হচ্ছিল ততটা জোরালো নয়। কুয়াশার মতো পড়ছে।
আরিফ বলল, “ওখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এদিকে এসো। আমার কাছে এসে বসো। একটা হাত ধরো আমার।”
আমি ওর কাছে গিয়ে বসলাম। সে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “অনেকদিনের সংসার আমাদের। কখনো কী আমায় লোভী মনে হয়েছে? মনে হয়েছে আমার টাকার লোভ আছে?”
“না হয়নি। বিয়ের চার বছরে তুমি তোমার শ্বশুর বাড়ি থেকে এক পয়সার জিনিস আনতে বলোনি। ঈদ কুরবানি কোন অনুষ্ঠানে নতুন কাপড় না আসলে মুখ ভার করে থাকনি। রমজান মাসে ইফতার পাঠানোর ব্যাপারেও তোমার সিদ্ধান্ত অন্যরকম। তুমি এক কথায় নিষেধ করেছ– যেন তোমার বাড়িতে এসব কিছু না আসে। খুব বেশি খাওয়াতে ইচ্ছে করলে একদিন দাওয়াত দিবে। এতটুকুই যথেষ্ট। মেয়ের বাড়ি ইফতার পাঠানোর নিয়মটা নাকি তোমার কাছে খুবই বিরক্ত লাগে। যাইহোক, কিছু না নিয়েও কখনো আমার বাপের বাড়ি লোকদের অবজ্ঞা করোনি। তারা এলে বাজারের বড় মাছ, ভালো গোশত, টাটকা সবজি এনে খাইয়েছ।
স্ত্রী হিসাবে তোমাকে লোভী বলার কোন কারণ নেই।”
“শুধু এতটুকু?”
“এর বাইরেও কখনো মনে হয়নি।”
আরিফ অল্প হাসল। হাসল একটু অন্যরকমভাবে। যেন হাসিতে তাচ্ছিল্যের রেশ লেগে আছে। তরল গলায় বলল, “আমি আমাদের বাড়িটা বন্ধক রেখেছি।”
“তোমার কথা বুঝতে পারছি না। বাড়ি বন্ধক দিয়েছ মানে?”
“জানোই তো সুরভি আপা কিছুদিন আগে আমাদের অফিসে চাকরি নিয়েছে। প্রথম দিকে সে খুবই মিশুক ছিল। প্রায় প্রতিদিন অফিসের সব স্টার্ফদের জন্য এটা ওটা রান্না করে নিয়ে আসত। ক্যান্টিনে বসে সবাই মিলে বেশ আয়েশ করে সে-সব খাবার খেতাম। বসকেও বেশ কয়েকবার সেধেছে। কিন্তু তিনি কিছু নেননি।”
“এর সাথে বাড়ি বন্ধকের কি সম্পর্ক?”
“সম্পর্ক আছে। যতদূর শুনেছি সুরভি আপার আর্থিক অবস্থা ভালো না। সে এতকিছু নিয়ে আসে, ব্যাপারটা একটু খটকা লাগল। জিজ্ঞেস করতে বলল– দেশের বাড়িতে স্বামীর যে জায়গাজমি আছে, সেগুলো দলিলপত্র ব্যাংকে জমা দিয়ে লোন নিয়েছে। ছ’মাস পর আসল টাকাসহ আসলের অর্ধেক মুনাফা পাবে। এখন জমানো টাকা যা খরচ করছে। ছ’মাস পরেই আর্থিক অবস্থা ভালো হয়ে যাবে। তখন এসব চিন্তা থাকবে না।”
“তার মানে তুমিও…”
“সে আমাদের সবাইকেও এই কাজ করতে বলে। কাগজপত্র দেখায়। বলে এটা বিশ্বাসযোগ্য। ওরা বিদেশি কোন কোম্পানিতে ইনভেস্ট করবে। সেখান থেকে লাভের অংশ দেবে। প্রথম দিকে আমি রাজি ছিলাম না। যখন দেখলাম অফিসের সবাই এই কাজ করছে তখন আমিও।”
“লোনের ব্যাপারটা অতো ভালো বুঝিনি। দলিলপত্র জমা রেখে লোন নিয়েছ আবার বলছ বন্ধক।”
“মার্জিন ঋণ বা মার্টগেজ ঋণ। বাংলাদেশে সাধারণত এই প্রক্রিয়াটি হাইপোথেকেশন বা বন্ধক রাখা নামে পরিচিত। যখন সম্পত্তির দলিল ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে তার বিনিময়ে টাকা গ্রহণ করা হয় তখন সেটাকে বলে– বন্ধক ঋণ (Secured Loan against Property) অথবা হাইপোথেকেটেড লোন।”
“কত টাকা এনেছ?”
“পঞ্চাশ লাখ।”
“কিহ!!”
আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। আরিফ এমন কাজ করতে পারে কখনো কল্পনাও করিনি। হতভম্ব গলায় বললাম, “কোন কোন জায়গায় দলিল দিয়েছ? আর এখন কি হয়েছে?”
“যেখানে যা ছিল সব দিয়েছি। জমানো টাকাও দিয়েছি।”
“আরিফ এসব তুমি কি বলছ? আব্বা আম্মা ব্যাপারটা জানে?”
“না জানে না। আব্বাকে বলেছিলাম জমির খাজনা দিতে হবে, কিছু কাগজপত্র ডিজিটাল করতে হবে। কয়েকটা জায়গায় তার সই প্রয়োজন।”
“কতদিন আগের কথা? এখন সেই টাকার কি হয়েছে?”
“মাসে দুয়েক আগের কথা, আব্বার সই নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সুরভি আপা কাছে দিয়েছি।”
“অফিসের আর কে কে টাকা দিয়েছে?”
“মোহন, তমাল, সবুজ, প্রদীপ দা, সিমা এরা সবাই দিয়েছে। টাকা দেওয়ার এক মাসের মাথায় প্রায় ষাট হাজার টাকা লাভ পেয়েছি।”
কি বলব বুঝতে পারলাম না। হঠাৎই যেন আমার কথা ফুরিয়ে গেছে। সুস্থ মানুষের পক্ষে এমন কাজ করা সম্ভব কি-না জানা নেই। নিজের বসতবাড়ি বন্ধক রাখা! এতক্ষণে আরিফের অন্যমনস্ক থাকা, ব্যবহারের পরিবর্তনের কারণ পরিষ্কার হলো। হঠাৎই মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। মেঘের গর্জনে কানে তালা লেগে যায়। আরিফ খানিকক্ষণ বাইরে দিকে তাকিয়ে রইল। খুব অসহায় এবং ক্লান্ত গলায় বলল, “তানজিলা, আমার মনে হচ্ছে ওই টাকাগুলো আর পাবো না।”
“কি বলছ তুমি? টাকা পাবে না মানে?”
“টাকা মা”ই’র হয়ে গেছে। মাস খানেক আগে একদিন সুরভি আপা কাঁদতে কাঁদতে অফিসে ঢুকল। বিলাপ করতে করতে বলল– আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। যে লোকের কাছে টাকা দিয়েছিল সে নাকি সব টাকা মে’রে দিয়ে পালিয়ে গেছে। কোথাও তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।”
“তারপর? খোঁজ পাওয়া যায়নি?”
“তারপর আর কি! সবার মাথায় আকাশ ভে’ঙে পড়েছে। তমাল তো প্রায় পা’গ’ল হয়ে গেছে। প্রথম মাসে লাভের টাকা পাওয়ার পর ওর শ্বশুরের কাছ থেকেও দশলাখ ধার করেছে।”
মাথা ভার ভার লাগছে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে। হঠাৎই আরিফ আমায় জড়িয়ে ধরল। বেশ শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। ভেজা গলায় বলল, “আমি কি করব বলো? কিভাবে এমন পা’পে জড়িয়ে গিয়েছি জানি না। মনে হচ্ছে কেউ আমার গলায়, বুকে, সারা শরীরে অসংখ্য পে’রে’ক পুঁ’তে দিয়েছে। আব্বা মা’কে কি বলব, টাকা কোথায় পাব কিছু বুঝতে পারছি না। সময়মতো ব্যাংকের টাকা দিতে না পারলে ওরা বাড়ি, জমি সবকিছু নিলামে তুলবে। তখন সবাই মিলে পথে বসতে হবে।”
“চিন্তা করো না। একটা কিছু ব্যবস্থা হবে। তোমাদের কাছে কাগজপত্র নেই? টাকা দেওয়ার সময় কোন প্রমাণ রাখোনি? কে’স করোনি?”
“স্টাম্পের ওপর সই দিয়ে টাকা নিয়েছে। থানায় ডাইরি করেছি। ওরা কি করছে আল্লাহই ভালো জানে।”
“এতদিন আমায় কেন কিছু বলোনি? আর আজকেই হঠাৎ বলছ কেন?”
“কারণ পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। আমার মনে হয় সুরভি আপার খু’নের সাথে এই টাকা সম্পর্ক আছে। আজ সে মা’রা গিয়েছে। কাল হয়তো আমি ম’র’ব। সত্যিটা তোমায় জানিয়ে যেতে চাই।”
“সুরভি আপার খু’ন টাকার কারণে হয়েছে?”
“তেমনটাই সন্দেহ হয় আমার। সবুজ বেশ কয়েকবার সুরভি আপাকে হু’ম’কি দিয়েছে। বলেছে টাকা পেলে সুরভি আপাকে খু’ন করে ফেলবে।”
“এ কথা তুমি পুলিশকে বলেছ?”
“বলেছি। সবকিছু বলেছি।”
“দারোগা সাহেব তো আমাদের এসব কিছুই বললেন না। উল্টো ভুলভাল প্রশ্ন করে গেলেন। তোমায় কিছু বলেছে?”
“বলেছে– তদন্ত করে দেখবে। পুলিশেরা সব তথ্য সাধারণ মানুষকে বলে না। তাছাড়া খু’নের সময় তুমি ওই বাড়িতে ছিলে। প্রধান সন্দেহভাজন হিসাবে তোমার নাম আছে।”
“আরিফ!”
“বলো।”
“সবকিছুর জন্য দুঃখিত। তুমি এতটা চিন্তায় ছিলে বুঝতে পারিনি। আমি সত্যিই খুব দুঃখিত।”
“তুমি আমায় ছেড়ে যাবে না তো? দেখো আমি জানি যে পুরুষ এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করতে পারে তার সাথে জীবন কাটানো যায় না। তাছাড়া আমি বাড়ির মালিকও না। আব্বাকে মিথ্যে বলে সই নিয়েছি। হিমি, ইনান, মা, তুমি কারোর কথা চিন্তা করিনি। একবারের জন্যও মনে হয়নি টাকা মা’র যেতে পারে। খুবই কুৎসিত এবং জ’ঘ’ন্য একটা কাজ করেছি। কিন্তু তুমি তো জানো আমি এমন ছিলাম না। কেন করলাম আমি এমন! কেন করলাম!”
আরিফ দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকতে লাগল। ওর গায়ে হাত রেখে বললাম, “এমন করো না। এই অবস্থায় তুমি ভে’ঙে পড়লে আমাদের কি হবে বলো? যা হওয়ার হয়েছে। এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।”
“কিভাবে কি করব? কাকে খুঁজব? সুরভি আপা সব জানত, সে খু’ন হয়েছে। পুলিশ কবে কি করবে কোন ভরসা নেই। ব্যাংক আমার জন্য অপেক্ষা করবে না।”
“আল্লাহ ভরসা। সময় যা আছে এর মধ্যে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ঘরে চলো, ইনান একা, ভয় পাবে। ঠান্ডা বাতাস আসছে। গায়ে লাগলে শরীর খারাপ হবে।”
আরিফ আমার হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। ক্লান্ত পায়ে হেঁটে দু’জনে ঘরে চলে এলাম। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে। খুব কাছে কোথায় বাজ পড়ল। বিকট শব্দে যেন সবকিছু কেঁপে উঠল।
সকালে খুব ভোরে উঠে রান্না চড়ালাম। শশুর আব্বু বাজার থেকে গরুর গোশত নিয়ে এসেছে। মশলা কষানো হয়ে এসেছে। মশলার গন্ধে ঘর ম-ম করছে। ধুয়ে রাখা গোশতের টুকরোগুলো মশলার মধ্যে দিয়ে দিলাম। খেয়াল করলাম আমার হাত কাঁপছে। এত বড় দুশ্চিন্তা নিয়ে জীবন কাটানো বেশ মুশকিলের। আরিফ কিভাবে এতটা স্বাভাবিক থাকছে?
রান্না শেষে শাশুড়ি মা বললেন, “আমার শরীরটা ভালো না। এই রোদে গেলে বাঁচতে পারব না। ইনান আমার কাছে থাকুক। তুমি আরিফের সাথে গিয়ে গোশতটা দিয়ে এসো।”
অমত করলাম না। তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ইনানকে সাথে নিয়ে কোন অসুবিধা হতো না। কিন্তু রোদে গরমে না নেওয়াই ভালো মনে করলাম।
শ্বশুর আব্বু বোধহয় আগে থেকে ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। ওখানে যেতেই একজন হাবিলদার এসে গোশতের বক্স দিলো। গম্ভীর গলায় বলল, “হিমির নামে? খু’নের কে’স?”
আরিফ মাথা দোলালো। সে আগের চেয়ে গম্ভীর গলায় বলল, “খাওয়ার সময় দেওয়া হবে। ইচ্ছে করলে কয়েদির সাথে দেখা করতে পারেন। সোজা গিয়ে ডানদিকের লোকটা বললেই হবে। বেশি কথাবার্তা বলবেন না। একজন একজন করে যাবেন।”
হিমির চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। হয়তো কাঁদছিল। তাকে গতদিনের ঘটনা খুলে বললাম। গল্পের ছলেই বলেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো ওর মন খানিকটা হালকা হবে। সবকিছু শুনে হিমি বলল, “মেয়েটা কেমন দেখতে ছিল? লম্বা মতো? ছিপছিপে মিষ্টি গড়ন? কালো বোরকা পরে?”
“একদম ঠিক। তুমি কিভাবে বুঝলে? আমি তো মেয়েটার বর্ননা দিইনি।”
“চকলেটটা তোমার কাছে আছে? আমাকে দেখাতে পারবে? মেয়েটার তার নাম বলেনি?”
ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে ওকে দেখলাম। বিস্মিত গলায় বললাম, “মেয়েটার নাম নাইমা। তুমি ওকে চেনো?”
হিমি সহজ গলায় বলল, “আমার সাথে এক ক্লাসে পড়ে। গতকাল আমায় দেখতে এসেছিল।”
“তোমার পরিচিত? বেশ ভালো মা’রা’মা’রি করতে পারে।”
“নাইমা মার্শাল আর্ট শেখে। অদ্ভুত ধরনের মেয়ে তবে মনটা অনেক ভালো। ওর বাড়ির লোকেরাও বেশ অদ্ভুত।”
“অদ্ভুত বলতে?”
“দেখ ভাবী, সাত গ্রামে একজন মেয়ে দেখাতে পারবে যে মার্শাল আর্ট শেখে বা জানে? বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য শিখলে ভিন্ন কথা কিন্তু ও কোন কারণ ছাড়াই শিখছে। জিজ্ঞেস করলে বলে– আত্মরক্ষার জন্য শিখি। যেন হুট করেই কেউ আমার কোন ক্ষ’তি করতে না পারে। ওর ভাই ওকে মার্শাল আর্ট শেখার জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করে দিয়েছে। সপ্তাহে চারদিন খুলনা যায়।”
“অদ্ভুত হলেও ব্যাপারটা বেশ ভালোই। আমার মনে হয় সবার শেখা উচিত।”
“এর বাইরেও নাইমার অনেক গুণ আছে। সারাক্ষণ বই পড়ে। গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাহিত্য কোন কিছু বাদ রাখে না। দু’দিন পরপর লাইব্রেরি থেকে নতুন বই নেয়। প্রতি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পায়। চব্বিশ ঘণ্টাই রুটিন মেনে চলে।”
“এতকিছু সামলায় কি করে?”
“জানি না। ওর ব্যাগে অনেক চকলেট থাকে। কিনে রেখে দেয়। প্রথমবার পরিচিত হলে তাকে একটা করে চকলেট দেয়। প্রথম যেদিন ওর সাথে দেখা হয়েছিল- তিনটে চকলেট নিয়েছিলাম। খুব মজা লাগছিল ব্যাপারটা।”
হিমি হাসছে। বেশ উৎসাহী গলায় নাইমার গল্প বলছে। ওকে হাসতে দেখে ভালো লাগল। কিছু বলব তার আগেই এক লোক এসে বলল, “সময় শেষ। জে’লখানা গল্প করার জায়গা না।”
হিমিকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে এলাম। আরিফ দাঁড়িয়ে আছে। অফিসে যাবে বলেছিল। যায়নি।
চলবে