বাবার ভালোবাসা পর্ব-৩৮+ ৩৯

0
372

বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৮
লেখাঃরাইসার_আব্বু

আমাকে আর কত কাঁদাবে? আমার চোখের জল আর কত চাও? বলোতো আমি ছোট্ট মানুষ সবাই আমাকে মারতে চাই। কেউ আমার কথা শুনে না। ছোট্ট বলে কি তুমি আমার কথা শুনবে না? তুমি আমার বাবাইকে ভালো করে দাও আল্লাহ। ভালো করে দাও। রাইসা মোনাজাত শেষ করে। তার বাবাই এর কাছে গিয়ে দেখে নাক রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আর কপালে হাত দিয়ে দেখলো সত্যিই জ্বর নেই। রাইসা মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালো। আল্লাহ তার ডাক শুনছে ।

‘ এদিকে পরের দিন সকাল বেলা রাইসার গান রেকর্ড হয়। তিনদিন পর গান রিলিজ হওয়ার কথা।

– সকাল বেলা কাজের ভুয়া আসছে। রাইসা পড়া রেডি করে কাজের ভুয়াকে টুকটাক সাহায্য করছে। রান্না শেষ হলে কাজের ভুয়া রাইসাকে বললো’ মামনি তোমার কাছে টাকা আছে? কথা ম্যাডামকে ফোন দিয়েছিলাম বলেছে সে কোন টাকা দিতে পারবে না। ‘
– আন্টি আপনি উনার কাছে কেন টাকা চেয়েছেন? ” না মা, আসলে ছেলেটা অসুস্থ। অসুধ কেনার কোন টাকা নেই, তার উপর বাজার করার টাকাও নেই। তাই তোমাকে বলছিলাম যদি কিছু টাকা দিতে। ”

” আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি দেখছি। রাইসা খরচের চারহাজার টাকা থেকে, দু’হাজার টাকা ভুয়াকে দিল। ভুয়া টাকাটা নিয়েই বাসায় চলে গেল।

রাইসা খারার প্লেটে সাজিয়ে রাজকে যখন আবারো খাইয়ে দিবে ঠিক সেই সময় লক্ষ করলো আবারো রাজের নাক দিয়ে ব্লেডিং হচ্ছে। আবারে জ্বর উঠছে।
। রাইসার খুব ভয় হচ্ছে। রাইসা কোন উপারান্ত না পেয়ে কণাকে ফোন করে আসতে বললো।

‘ কিছুক্ষণ পর দরজায় কে যেন নর্ক করলো। দরজা খুলেই দেখি বাড়িওয়ালা। রাইসা বাড়িওয়ালা রবিন সাহেবকে দেখে সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বললো।

‘ রবিন সাহেব বাড়ির ভেতরে না এসেই বললো’ এই যে মামনি বাড়ি ভাড়া টাকা আছে তোমার কাছে? এ মাসের বাড়ি ভাড়া টাকা কিন্তু ওই ম্যাডাম দিয়ে যায়নি। ম্যাডামকে ফোন করেছিলাম বলছে সে নাকি কোন টাকা দিতে পারবে না। শোন মাসের পাঁচ তারিখ চলে গেছে তোমাকে এর আগেও বলে দিয়েছিলাম পাঁচ তারিখের মধ্যে টাকা না দিতে পারলে বাড়ি থেকে বের করে দিবো। পাঁচ তারিখ গিয়ে দশ তারিখ মাঝে বাড়ি ভাড়া যদি না দিতে পারো তাহলে তোমার পঙ্গু বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যাবে। দশ তারিখ হতে চললো। কালকের মধ্যে যদি টাকা না শোধ করতে পারো। তাহলে পরশুদিন নতুন ভাড়াটিয়া উঠবে কথা হয়েছে তাদের সাথে।

– আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন, আপনার টাকা ঠিক শোধ করে দিবো। এমন অবস্থায় বাবাকে নিয়ে কোথাও যাবো বলেন?

– সেটা আমি কি করে বলবো? আমি কি এতিমখানা খুলে বসেছি নাকি? শোন কাল দুপুরের মধ্যে যদি টাকা না দিতে পারো তাহলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো। রবিন সাহেব কথাগুলো বলে বের হয়ে গেলো।
– রবিন সাহেব চলে যাওয়ার পর রাইসা আবারো চলে যায় তার বাবার কাছে। জ্বর কমছে না। ফোটা ফোটা ব্লাড আসছে নাক দিয়ে। রাইসা বারবার কণার ফোনে ট্রায় করছে। কিন্তু বারবার নাম্বারটা বন্ধ শুনাচ্ছে। ফোন ট্রায় করতে করতে আসরের আযান হয়ে যায়। রাইসা অযু করে আসরের নামায আদায় করে নেয়। নামায শেষ করতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। গিয়ে দরজা খুলে দেয়। রাইসা দরজা খুলতেই কণা দেখে রাইসা কাঁদছে।
– মামনি কাঁদছো কেনো?
– ডাক্তার আন্টি, বাবাই আবার আগের মতো অসুস্থ হয়ে গেছে। কণা রাইসাকে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে রাজের কন্ডিশন তেমন ভালো নয়। কণা একটা ইনজেকশন আর কিছু মেডিসিন দিয়ে বললো’ রাইসা মামনি তুমি কোন চিন্তা করো না। তোমার বাবাই এখন ঘুমাবে।”

” রাইসা মনে মনে ভাবছে বাড়ি ভাড়ার কথা কণা আন্টিকে বলবে। কিন্তু কণা আন্টি ফ্রিতে চিকিৎসা করছে এখন যদি বাড়ি ভাড়ার কথা বলে কেমন দেখা যায়। এই ভেবে কণাকে কিছু না বলে রাইসা কণাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কণার দু’গালে পাপ্পি দিয়ে দেয়। কণা রাইসার কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়।

‘ রাতে রাইসা আর খায় না। বারবার বাড়ি ভাড়ার টাকার কথা মনে পড়ছে। কালকে দশহাজার টাকা কিভাবে দিবে? এসব ভাবতে ভাবতে রাইসার চোখে পানি এসে যায়। রাইসা তার বাবার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমিয়ে যায়। ফজরের আযান শুনে রাইসার ঘুম ভেঙে যায়। রাইসা বিছানা থেকে উঠে অযু করে ফজরের নামায শেষ করে মোনাজাতে, সেদিনের ন্যায় আজও কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগে! হে বিশ্বজাহানের অধিপতী, তুমি চাইলেই ফকিরকে বাদশা আর বাদশাকে ফকির বানাতে পারো। ও আল্লাহ তুমি দেখো না আমার বাবা অসুস্থ, আমি অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কোথাই যাবো বলো? কাল টাকা না দিলে আঙ্কেল বাসা থেকে বের করে দিবে। ও আল্লাহ তুমি না সর্বোত্তম সাহায্যকারী তুমি আমাকে সাহায্য করো। আমার বাবাকে সুস্থ করে দাও। ও আল্লাহ শুনেছি বাদশাহ শাজাহান যদি চাইলে তুমি তাকে মোঘল সাম্রাজ্য দিতে পারো। ও বাদশার বাদশাহ আমি কোন সাম্রাজ্য চায় না তুমি আমাকে মাথা গুজা একটু আশ্রয় দিয়ো। আমার বাবাকে সুস্থ করে দিয়ো। রাইসা মোনাজাত শেষ করে ডাইয়ি লিখতে বসলো। রাইসা তার মনের সকল কথা ডাইয়িতে লিখে রাখে।

– পরের দিন দুপুর বেলা বাড়ি ওয়ালা রাইসাকে বললো মামনি টাকা দাও বাড়ি ভাড়ার।

– আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন। ঠিক দিয়ে দিবো?
– হাহা আমাকে পাগল পাইছো? টাকা কি আল্লাই দিয়ে যাবো? না টাকার গাছ লাগিয়েছো? না তোমার পঙ্গু বাবা টাকা দিতে পারবে? আমি কিছু জানি না। বাড়ি থেকে এখনি বের হয়ে যাও।

” রাইসা দৌড়ে গিয়ে, রবিন সাহেবের পা ধরে বললো, আঙ্কেল দয়া করেন। বাবাকে নিয়ে কোথাই যাবো বলেন? প্লিজ তাড়িয়ে দিবেন না।
-রবিন সাহেব রাইসাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। রবিন সাহেব তার সাথে থাকা দু’টি লোককে ডাক দিয়ে বললো, এই তোদের কিসের জন্য নিয়ে আসছি? বের কর পঙ্গুটাকে। ঘরে তালা দিয়ে দিবো। রবিন সাহেবের সাথে থাকা দুটি লোক রাজকে খাট থেকে বের করে বাহিরে শুইয়ে দেয়। রাইসা বাবার মাথাটা উরুর উপর নিয়ে কাঁদতে থাকে। আর বরিন সাহেবকে বলতে লাগে আঙ্কেল কয়েকটা দিন সময় দেন। প্লিজ দয়া করেন। রাইসার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। রাজের কলিজাটা ফেঁটে যাচ্ছি। নিজের প্রতি ধিক্কার জানাতে মন চাচ্ছে। মানুষ কতটা নিরুপায় হলে তার মেয়ের দু’চোখের পানি মুছে দিতে পারে না।

-রবিন সাহেব একটা তালা ঝুলিয়ে দিল দরজায়। রাইসা কত কাকুতি-মিনতী করছে সেসব কিছু শুনছে না রবিন সাহেব। হঠাৎ এমন সময় রবিন সাহেবের বাড়িতে দু’টি কার্র এসে দাঁড়ালো। রাইসা গাড়ির দিকে তাকাতেই দেখে রোহান চৌধুরী।
রোহান চৌধুরি রাইসাকে দেখেই বললো,’মামনি তোমার গান পূর্বের সকল রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। এতটা ফ্লপ হবে ভাবতেও পারিনি। আর তুমি বাহিরে এভাবে বসে আছো কেন?
” রাইসা রোহান চৌধুরীকে সব খুলে বললো। ”

” মিঃ রবিন আপনাকে তো পুলিশে দেওয়া দরকার। আর কতটাকা বাড়ি ভাড়া এই নেন এখানে পঞ্চাশ হাজার আছে। এই বলে রোহান চৌধুরী রবিন সাহেবের মুখে টাকার বান্ডেল ছুরে মারে। এমন সময় রবিন সাহেব এর স্ত্রী এসে বলতে লাগে, ‘ এই রাইসার ছবি টিভিতে টিভিতে দেখাচ্ছে! তুমি জানো? কি সুন্দর গান করে। এতো বড় শিল্পী আছে তুমি বলোই নি।

” রবিন সাহেব ঘরের দরজা খুলে দিয়ে বলে, রাইসা মামনি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। ”

” রাইসা কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। ”

” সত্যিই আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছো? ”

” হ্যাঁ আঙ্কেল, আপনার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। বাবাই বলেছে ক্ষমা কারীকে আমার আল্লাহ পছন্দ করে।
” রবিন সাহেব কি বলবে বুঝতে পারছে না।মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

” রাইসা ও তার বাবাকে নিয়ে রোহান সাহেব, রুমে যায়। রুমে গিয়েই রোহান সাহেব রাইসাকে পাঁচ লক্ষ টাকার একটা চেক দিয়ে বলে মামনী তুমি আমার ভাগ্যের চাকা খুলে দিয়েছো। এটা তোমার জন্য সামান্য পরে আরো দিবো।

” রাইসার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। সে কোন স্বপ্ন দেখছে না তো। এদিকে কয়েকমাসের মাঝে রাইসার গান, ছড়িয়ে পড়লো সারা বিশ্বে । সবাই রাইসার কন্ঠের পাগল। যেকোন গান সে গাইতে পারে। সবাই বলে রাইসার মাঝে আধাত্মিক কিছু রয়েছে। তা না হলে ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া মেয়ে এতই বিস্ময়কর হয় কিভাবে।

” এতো কিছুর মাঝেও রাইসা আল্লাহকে ভুলে না। দিনদিন আল্লাহর প্রতি তার বিশ্বাস বেড়ে যায়। নামায পড়ে প্রতিদিন তার বাবার জন্য দোআ করে। রাইসা গত ছয় মাসে কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। বাড়ি গাড়ি সব হয়েছে।

” রাজ অনেকটা সুস্থ। কথা বলতে পারে। কিন্তু হাত পা নাড়াতে পারে না। রাইসার কাছে এটাই অনেক তার বাবা কথা বলতে পারে।

” রাইসা আজ তার বাবার পছন্দের বিরিয়ানী রান্না করেছে তাও নিজ হাতে। তার বাবাইকে খাইয়ে দিয়ে নামায পড়ে নেয় সে। নামায পড়ে এসে দেখে তার বাবা বিছানা থেকে পড়ে গেছে। রাইসা তার বাবাকে ফ্লরে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে তার বাবার কাছে যায়। রাইসা গিয়ে দেখে তার বাবা সেন্সলেন্স হয়ে গেছে। রাইসা তারর বাবার মাথাটা উরুর উপর রেখে বলতে লাগে, কি হয়েছে বাবাই কথা বলো। প্লিজ কথা বলো। রাজ কোন কথা বলছে না। রাইসার অনেক ভয় হচ্ছে।

” রাজের কথা বলা না দেখে রাইসা কেদেয় দেয়। ও বাবাই কথা বলো বাবাই। কথা বলো না তুমি। প্লিজ কথা বলো তুমি। রাজ কোন কথা বলছে না । রাইসার চোখের পানি রাজের মুখের উপর পড়ছে। রাজ চেয়ে দেখে রাইসা কাঁদছে।
” কি হলো মামনি কাঁদছো কেনো? এই বলে রাজ রাইসার চোখের পানি মুছে দেয়।

” রাইসা চমকে যায়! বাবাই তুমি হাত নাড়াতে পারো? রাজও অবাক হয়ে যায়। তার হাত পা নাড়াতে পাচ্ছে। রাইসার কাধে ভর দিয়ে রাজ কোন রকম দাঁড়িয়ে যায়।

”’ রাজ এখন অনেকটায় সুস্থ একদিন, রাইসা তার বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে কথাকে পুলিশের গাড়িতে হ্যান্ডকাপ পরা দেখে দাঁড়াতে বলে।

” রাজ পুলিশকে জিজ্ঞেস করে কথাকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
” পুলিশ রাজকে যা বলে তা শোনার জন্য রাজ ও রাইসা কেউ প্রস্তুত ছিল না। কথাকে নাকি হোটেলে আপত্তিকর কাজের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

চলবে””””””’

বাবার_ভালোবাসা
পর্বঃ৩৯
লেখাঃ রাইসার_আব্বু

রাজও অবাক হয়ে যায়। তার হাত পা নাড়াতে পাচ্ছে। রাইসার কাধে ভর দিয়ে রাজ কোন রকম দাঁড়িয়ে যায়।

”’ রাজ এখন অনেকটায় সুস্থ একদিন, রাইসা তার বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যায়। হসপিটাল থেকে ফেরার পথে কথাকে পুলিশের গাড়িতে হ্যান্ডকাপ পরা দেখে দাঁড়াতে বলে।

” রাজ পুলিশকে জিজ্ঞেস করে কথাকে কেন থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
” পুলিশ রাজকে যা বলে তা শোনার জন্য রাজ ও রাইসা কেউ প্রস্তুত ছিল না। কথাকে নাকি হোটেলে আপত্তিকর কাজের জন্য পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

” কি বলছেন এসব? ডাক্তার আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো? কথা এমন মেয়ে না। ‘

”কি বলছেন আপনি? হোটেল রংধনুতে এই মেয়ে সহ আরো কয়েকটা মেয়েকে ধরেছি। এরা আসলে ভদ্রতার আড়ালে দেহ -ব্যবসা করে থাকে।

” আঙ্কেল কি বলছেন এসব? উনি এমন করবে কেন? ”

– পুলিশ অফিসার সিয়াম রাইসাকে দেখে চমকে গেল! এই সেই শিল্পী যাকে দেখার জন্য পুরো দেশ পাগল! কি যাদু দিয়েছে কন্ঠে!
‘ কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন? ‘ বাবাই তুমি পুলিশ আঙ্কেলকে বলো উনাকে ছেড়ে দিতে।

” মিঃ সিয়াম, কথাকে আপনারা ছেড়ে দেন। ও খুব ভালো বংশের মেয়ে। এসব তার বাবা সহ্য করতে পারবে না। আর পরর্বতীতে এমন কোন ঘটনা ঘটবে না।

” ঠিক আছে। এভারেই মতো ছেড়ে দিচ্ছি। আর হ্যাঁ তুমি শিল্পী রাইসা না? তোমাকে দেখতে পারবো ভাবতেই পারিনি। মামনি তোমার সাথে একটা সেলফি নেওয়া যাবে?

” জ্বি অবশ্যই!

‘পুলিশ অফিসার আর তার দলের সদস্যরা রাইসার সাথে সেলফি তুলছে।

” কথা হা হয়ে রাইসার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হচ্ছে সে যেন কিছুই ভাবতে পারছে না। সবচেয়ে অবাক হচ্ছে রাজকে দেখে। রাজ কিভাবে সুস্থ হলো! সে তো কথা বলতেই পারতো না। আর এখন দিব্য কথা বলছে চলাফেরা করছে। ডাক্তার তো বলছিল কোনদিন রাজ দাঁড়ানো তো দূরের কথা সুস্থ হতে পারবে না। কথা রাজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না বুকের ভেতরটা কেমন যেন দুমড়ে -মুচড়ে যাচ্ছে। লজ্জার মাথাটা নিচু করে আছে সে। হঠাৎ এমন সময় পুলিশ অফিসার সিয়াম বললো

” আচ্ছা মামনি আসি তাহলে। ”

” আচ্ছা! ”

” পুলিশ অফিসার চলে গেলে, কথা সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল! পিছন থেকে রাইসা বলে উঠলো, কোথায় যাচ্ছেন অনেক রাত হয়েছে তো। চলেন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।

” না মামনি আমার জন্য অনেক করেছো আর কিছু করতে হবে না। ”

” রাইসা মামনি তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো। ”

” আচ্ছা বাবাই। ”

” রাইসা গাড়িয়ে গিয়ে বসলে, রাজ কথার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ কেমন আছেন ম্যাডাম?’
” খুব ভালো। ”

” ওহ্ আচ্ছা! কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?”

” হুম করো”

” হোটেল রংধনুতে কেন গিয়েছিল? ” জানো আজ থানায় গেল কাল নিউজপেপারে বড় করে হেডলাইনে ছাপা হতো তোমার এই কথা। তোমার বাবা কি পারত এটা শুনে বেঁচে থাকতে?” অারর তোমার বড়লোক স্বামী কি ভাবতো? কেন গিয়েছিলে?

” কথা কাঁদছে কিছু বলছে না। রাজ বুঝতে পারলো তার কথাটা বলা ঠিক হয়নি। কথা কেঁদেই যাচ্ছে।

ম্যাডাম প্লিজ কাঁদবেন না। সরি আপনাকে এমন প্রশ্ন করার জন্য। আচ্ছা গাড়িতে উঠুন!

‘ কথা গাড়িতে গিয়ে রাইসার সাথে বসলো। রাইসা এখন দেখতে আরো কিউট হয়েছে। মনে হচ্ছে বেহেশত থেকে উঠে এসেছে। বার বার কথা রাইসার দিকে তাকাচ্ছে। কথার খুব করে ইচ্ছে করছে রাইসাকে একবার বুকে নিতে। রাইসার মুখে মা ডাক শুনতে। কথা রাইসার দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো রাইসা গাড়ির একদম সাইডে চলে গিয়েছে। মাঝখানে বেশ ফাঁকা রেখেছে। কথা মাঝখানে ফাঁকা দেখে বললো’ মামনি তুমি দূরে কেন কাছে এসে বসো। ”

” না ঠিক আছে ম্যাডাম! আমরা তো গরীব ছিলাম তাই কোন বড়লোকের কাছে ঘেষতে মানা। ”

” কথার মনে পড়ে গেল বিয়ে বাড়ির সেই কথাগুলো, রাইসা সেদিন কি কান্নাটায় না করেছিল। বিনিময়ে সে, রাইসাকে ছোটলোকের বাচ্চা বলে তাড়িয়ে দিয়েছে। রাইসা বাসার সামনে এসে বললো’ এখানেই দাড়ান ‘!

রাজ বললো’ কিন্তু ম্যাডাম, আপনাদের বাসা তো আরো এক কিলো দূরে!

‘ না এখানে আমার একটু দরকার আছে। তাই এখানেই নামিয়ে দেন। ”

” কথা গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। ”

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রাজের মনে বারবার নানা প্রশ্নের উদ্রেক হচ্ছে। কথা কি কারণে এসব কাজ করতে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। দেখতে দেখতে বাসায় এসে যায়। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে বারোটা বেজে গেছে।

” রাইসা আজ অনেক হ্যাপি তার বাবা হাটতে পারে। কথা বলতে পারে। তার খুশি যেন ধরে না। রাইসা তার বাবাইকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।

” রাজ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো টেবিলে খাবার সাজাচ্ছে। বাসায় কাজের লোক কাউকে আসতে দিচ্ছে না রাইসা। তার বাবাইকে নিজ হাতে খাওয়াবে! রাজ টেবিলে বসতেই রাজের কপালে চুমু দিয়ে বললো ‘ বাবাই মা সন্তানকে কিভাবে খাওয়াই জানো?’
” না তো জানি না তো? ‘

” হিহি আচ্ছা ! তুমি হা করো একদম কথা বলবে না। তোমার মা এখন তোমাকে খাইয়ে দিবে। রাইসা রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে। রাজের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রাইসা বাম হাতে রাজের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, ‘ বাবাই মা কি তার সন্তানের চোখের পানি দেখতে পারে?
‘ না তো।
” তাহলে তুমি কাঁদছো কেন?”
” না মা কাঁদছি না তো? আমি জানি না আমি কি এমন ভালো কাজ করছিলাম। যার জন্য আল্লাহ পৃথিবীর শেষ্ঠতম নেয়ামত আমায় দান করছে। হইছে মা পেট ভরে গেছে। এতো দিন তো আমার মা টা আমাকে খাইয়েছে। আজ আমি আমার মা কে খাওয়াবো। কতদিন আমার কলিজার টুকরাকে খাওয়াতে পারিনি। হা কর মা আমার।
-রাইসা খাচ্ছে আর কাঁদছে। আল্লাহ তার সব আশায় পূরণ করেছে। আল্লাহর প্রতি দিন দিন রাইসার বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে! খাওয়া শেষ হলে রাইসা রাজকে বলে ‘বাবাই তুমি আজ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। ”

‘ ঠিক আছে মা! রাজ রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে জানালার ক্লাস ভেদ করে, চাঁদের জোছনা যেন আরেকটা চাঁদের উপর পড়ছে। রাজের সামনে অজস্র স্মৃতি ভেসে উঠছে। ছোট বাচ্চাকে তার মা যেমন যত্নে রাখে তেমনি রাইসা খেয়ার রেখেছিল!

‘ এদিকে যতই দিন যাচ্ছে রাইসা ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী ছোট্ট রাইসার গান পৌঁছে গেছে! একনজর রাইসা দেখার জন্য কত মানুষ পাগল। দিনগুলো ভালোই কাটতেছিল। হঠাৎ একদিন সকালে বেলা রাইসার নামে একটা চিঠি আসলো! যদিও ইমেল করেছে। তবুও স্পেশাল ভাবে আমন্ত্রণ পত্র পাঠিয়েছে। সাথে চিরকুট! সামনে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সেরা শিল্পীর নাম ঘোষণা করবে সেখানে রাইসাকেও যেতে বলেছে।

” দেখতে দেখতে বৃহস্পতিবার চলে আসলো, সন্ধায় রাইসা তার বাবাকে নিয়ে উপস্থিত হলো অনুষ্ঠানে। রাত আটাটায় শত শত টিভি চ্যানেল লাইভ টেলিকাস্ট করছে! এমন সময় নাম ঘোষণায় পালা আসলো। উপস্থাপিকা, জেসিকা একটু সময় নিয়েই বললো,’এবারের বাংলাদেশের সেরা শিল্পীদের লড়াইয়ে সবাইকে পিছনে ফেলে সেরা শিল্পী নির্বাচিত হয়েছে কথাটা বলে একটু থামলো। সময় মনে হয় নিরবতা পালন করছে কেউ কিছু বলছে না। পিনপীনে নিরবতা বিরাজ করছে!
জেসিকা আবার বললো, কি হলো? সবাই চিন্তায় পড়ে গেলেন? চিন্তায় কিছু নেই। এবার বাংলাদেশের সেরা শিল্পী হয়েছে,” তাসনিম কারিমা রাইসা”। তো এখন আপনাদের সামনে আসছে রাইসা!

”রাইসা স্টেজে উঠেই মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো,’ আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, মহান আল্লাহর প্রতি। যিনি নগণ্য আমাকে এ জায়গায় এনে উপনীত করেছি। তার পর যিনি আমার এ সাফল্যের পিছনে ভূমিকা পালন করছে তিনি আমার বাবা। আমার বাবা পৃথিবীর শেষ্ঠ বাবা। যে বাবা আমার জন্য নিজের ভবিষৎতকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। আর আপনারা সবাই মনে রাখবেন প্রচেষ্টা আর সৎ উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ আপনাকে ঠিকই সাহায্য করবেন। মনে রাখবেন পৃথিবীর সবাই আপনাকে ভুলে গেলেও একজন শুধু আপনাকে ভুলে না। তিনি হচ্ছে আমাদের সৃষ্টিকর্তা! আমার মা তিনি আমাকে ছোট রেখেই চলে যায় অন্য মানুষের সাথে। বাবা মায়ের স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। যখন বুঝতে শিখেছি তখন বাবাকে একটা মেয়ে অনেক ভালোবাসত। আর যখন আমার বাবা একসিডেন্টে বাক-শক্তি হারিয়ে ফেলে , সারা শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়! তখন যে মেয়েটা আমার বাবাকে পাওয়ার জন্য ব্যস্ত ছিল। আমার মুখে মা ডাক শুনার জন্য যে পাগল ছিল। , সেও আমার বাবাকে একা রেখে চলে যায়। আমাকে ছোটলোকের বাচ্চা বলে বকা দিয়েছিল। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। উনার পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে বাবাইকে রেখে বিয়ে করে নিয়েছিল। যখন বাবাই এর নাক দিয়ে ব্লাড বের হতো। তখন ছোট্ট মানুষ কার কাছে যাবো। তখন নামাযে দাঁড়িয়ে যেতাম। আল্লাহর কাছে সব বলতাম। হ্যাঁ আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে। আর হ্যাঁ শেষে একজন নিস্বার্থ মানুষের নাম বলছি তিনি হলেন ডাক্তার ফাহমিদা বিনতে কণা। ‘ আর পরিশেষে আপনাদের সুস্থতা কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।

” রাইসার কথা শুনে প্রায় সবার চোখেই জল এসে গেছে। এদিকে অনুষ্ঠান শেষে রাজ রাইসাকে নিয়ে যখন বাসায় ফিরছিল ঠিক এমন সময় রাস্তায় পাশে মেয়েলি কন্ঠে চিৎকার শুনতে পেল! রাজ গাড়ি থামিয়ে নতুন তৈরী করা বিল্ডিংটার দিকে তাকাতেই দেখে দু’জন ছেলে একটা মেয়েকে জোর করে রেপ করতে চাচ্ছে। রাজের কথা শুনে ছেলে দু’টি ভয় পেয়ে যায় আর গাড়ির শব্দে মনে করে পুলিশ। ছেলে দু’টি দৌড়ে পালিয়ে গেলে, রাজ মেয়েটার কাছে গিয়ে দেখে বুকের উপর কাপড় ঠিকঠাক নেই। রাজ তার শার্টটা খুলে মুখের দিকে তাকাতেই চমকে যায়! কাঁপা -কাঁপা গলায় বলে কথা?

”’ কথা রাজকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বলতে লাগে রাজ আমাকে বাঁচাও!

” ম্যাডাম কি করছেন এসব? ভয় নেই আপনার কিছু হবে না ছাড়েন প্লিজ। রাজ কথাকে ছাড়িয়ে দিতেই কথা বলতে লাগল’ রাজ কেন বাঁচালে আমাকে? আমি ওই নরপশুদের হাতেই শেষ হয়ে যেতাম। কি করবো এ নষ্ট শরীর নিয়ে? আমি তোমার আর রাইসার সাথে খুব বেশি অন্যায় করেছি। যার জন্য নীলয় আমাকে বিয়ে করে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়ে পতিতার ট্যাগ ধরিয়ে দিয়েছে। আজ আমরা কোটিপতি থেকে রাস্তার ফকির। আজ ছেলেগুলো ছিল নীলয়ের পোষা কুকুর। জানতামনা নিলয় এতটা খারাপ। তার প্রয়োজন ছিল আমার শরীর আর টাকা। এখন আমার কোন দাম নেই! আমাকে সে বিক্রি করে দিয়েছিল! এদিকে বাবা স্টোক করে হসপিটালে ”’

চলবে”””””’