বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
262

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৪+৩৫+৩৬
_________________

আজ লিলির গায়ে হলুদ। পুরো বাড়ি জুড়েই যেন বিয়ে বিয়ে গন্ধ বেরিয়ে গেছে। আজ সন্ধ্যায় হলুদ হবে আর কাল দুপুরে বিয়ে। বর্তমানে পুরো বাড়ি সাজগোছের তোড়জোড় পড়ে গেছে। সাধারণত বাড়ির সামনের বড় মাঠে প্যান্ডেল সাজানো হবে। বর্তমানে সেটা করতেই ব্যস্ত সবাই।’

‘এলেমেলোভাবে খোলা চুলে,সাদা রঙের থ্রি-পিচ সাথে চোখে চশমা পড়তে পড়তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে অথৈ। সকালের ঘুমের রেশটা এখনো কাটে নি তাঁর। মাত্রই ঘুম থেকে উঠে হাল্কা ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয় অথৈ। পুরো বাড়িটাতে ফুলের সুবাসে ভরে আছে সাথে পুরো বাড়ি জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ফুল। সিঁড়ির রেলিংগুলোকেও সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে। অথৈ নিচে নেমে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো তাঁর মাকে। কিন্তু কোথাও তাঁর মা নেই হঠাৎই চোখ যায় অথৈর লিলির ছোট বোন নিলুর দিকে। অথৈ ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ নিলু মা কোথায় রে?’

ছোট বাচ্চাদের সাথে খেলা করছিল নিলু হুট করেই অথৈর কথা শুনে বললো সে,

‘ কাকিমা তো আম্মুর সাথে বাহিরে গেছে?’

‘ কি কেন?’

‘ ওই আপুর বরের জন্য কি জানি আনা হয় নি সেটাই আনতেই গেছে।’

‘ আর লিলি আপু কোথায়?’

‘ লিলি আপু, তা তো জানি না।’

‘ ওহ ঠিক আছে।’

‘ হুম।’

বলেই বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠলো নিলু। নিলুর কাজ দেখে অথৈও আর কিছু না বলে বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে চললো বাহিরের দিকে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এই জন্যই অথৈ কোথাও আসতে চায় না। বেশি মানুষদের ভিড়ে নিজেকে কেমন যেন এলিয়েন এলিয়েন আর একা একা মনে হয় অথৈর। অথৈ গায়ের ওড়নাটা মাথায় জড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হলো। বাহিরে প্যান্ডেল সাজানো হচ্ছে। অথৈ আশেপাশে দু’পলক তাকিয়ে হাতে থাকা ফোনটা নিয়ে মাকে একটা ফোন করলো প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে তাঁর। এরই মাঝে বাহিরে লাউডে গান বাজতে শুরু করলো। এতে যেন বিরক্তির চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে অথৈ। গান বাজনা বিয়ে এইসব একদমই পছন্দ করে না অথৈ। কেমন যেন অস্থিরতা আর বিরক্ত লাগে তাঁর। অথৈ বুঝে উঠতে পারে না গায়ে হলুদ সেই সন্ধ্যাবেলা আর এখন কেবল সকাল দশটা না এগারোটা বাজে এখনই কেনো লাউডে গান ছাড়া লাগে। অথৈ লাউডস্পিকারের দিকে একপলক তাকিয়ে মোবাইল হাতে হাঁটতে হাঁটতে একদম প্যান্ডেলের মাঝখানে চলে যায় তাঁকে কেন্দ্র করেই উপরে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে যেটা আপাতত খেয়াল করে নি অথৈ। প্রথম কলে মা ফোন না তুললেও দ্বিতীয় কল তুলতেই অথৈ বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললো,

‘ আম্মু কোথায় তুমি? আমায় কিছু না বলেই চলে গেলে আমায় নিয়ে যেতে পারতে তো?’

অথৈর কথা শুনে অপরপাশে অথৈর মা বলে উঠল,

‘ আরে তুই তো ঘুমিয়ে ছিলি তাই তো ডাকি নি, তবে চিন্তা করিস না আমাদের হয়ে গেছে এক্ষুনি ফিরছি আমরা। তোর ব্রেকফাস্ট রান্নাঘরে রাখা আছে খেয়ে নিস।’

‘ ব্রেকফাস্ট লাগবে না তুমি আগে এখানে আসো আর লিলি আপু কো…

আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেল অথৈর। একদিকে লাউডে মিউজিকের কারনে ঠিকমতো তেমন কিছু শুনতে পেলো না অথৈ তারওপর ফোন কেটে গেল রাগে যেন মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো তার। অথৈ রেগেমেগে এইবার লিলিকে কল করলো সকাল সকাল গেল কই মেয়েটা?’

এমন সময় বাড়ির গেটের ভিতর ঢুকলো নীরব আর রবিন। নীরবের পরনে ব্লাক কালার শার্ট আর ভিতরে ওয়াইট টিশার্ট সাথে ব্লাক জিন্স, চুলগুলো বরাবরের মতোই সুন্দর করে সাজানো, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। নীরবকে দেখেই আশেপাশের কিছু মেয়েরা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।তবে সেসবের দিকে নীরবের কোনো হুস নেই কারন তাঁর চোখ তো খুঁজছে অথৈকে। অথৈর চিন্তায় কাল রাতে ঘুম হয় নি নীরবের। হঠাৎই রবিন সামনের দিকে হাত দেখিয়ে বলে উঠল,

‘ ওই তো অথৈ চল সবার আগে তোকে অথৈর সাথে পরিচয় করিয়ে দেই?’

রবিনের কথা শুনে নীররও তাকালো সামনে, এলেমেলো ভাবে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। অথৈর চেহারা দেখে নীরব বুঝতে পেরেছে কোনো কারনে অথৈ বিরক্ত। নীরব রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এখন লাগবে না পড়ে কথা বলবো ওর সাথে?’

‘ কিন্তু এখন করলে কি সমস্যা দেখতে হবে না অথৈর তোকে মনে আছে কি না?’

‘ এখন দরকার নেই আমার মনে হয় ও কোনো কারনে ডিপ্রেসড।’

‘ আরে কিছু হবে না চল..

বলেই চললো নীরব আর রবিন অথৈর দিকে।

রবিনকে যেতে দেখে নীরবও আর বেশি না ভেবে চললো অথৈর দিকে হয়তো এটাই সুযোগ অথৈর সাথে কথা বলার। আনমনেই এগোচ্ছে নীরব অথৈর দিকে আর তাঁর পাশেই রবিন।’

এদিকে লিলি ফোন না তোলাতে বিরক্তি নিয়ে উল্টোদিকে ঘুরলো অথৈই পরক্ষণেই নীরব আর রবিনকে তাঁর দিকে আসতে দেখে হাল্কা থমকে গেল সে। নীরব তাঁর দিকেই আসছে, কেমন যেন হার্টবিট বেড়ে গেল অথৈর। হুট করে কেমন কেন লাগছে বুঝতে পারছে না অথৈ, নীরবকে তো সে প্রথম দেখছে না তাহলে। হয়তো নীরব তাকে প্রপোজ করেছিল তাঁর জন্যই এমন হচ্ছে।’

‘ আচ্ছা নীরব কি বলার জন্য এখানে আসছে? যদি প্রশ্ন করে আমি ভার্সিটি ছেড়ে চলে কেন এসেছি তাহলে? বা সবার সামনে যদি উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করে বসে তখন?’

এরকম হাজারো কথা মাথায় এসে আঁটকে যাচ্ছে অথৈর। অথৈ আনমনেই একটু পিছিয়ে গেল। কেমন যেন হাল্কা ভয় লাগছে তাঁর।’

রবিন আর নীরব হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলো একদম অথৈর সামনে। অথৈ বরিনকে দেখে হাল্কা হাসলো কিন্তু কিছু বললো না। রবিন অথৈর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ কিরে সারাদিন কোথায় থাকিস বল তো, তোকে তো খুঁজে পাওয়াই যায় না?’

‘ কোথায় আর থাকবো বাড়িতেই থাকি।’

‘ হুম বুঝতে পারছি,

এতটুকু বলে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো রবিন অথৈকে,

‘ মিট আমার ছোট বেলার বন্ধু নীরব।’

রবিনের এবারের কথা শুনে এবার কি বলবে অথৈ ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। হাল্কা অসস্থিতা ফিল হচ্ছে অথৈর। অথৈর অবস্থা বুঝতে পেরে নীরব নিজেই বলে উঠল,

‘ কেমন আছো?’

নীরবের কন্ঠ কানে আসতেই হাল্কা কেঁপে উঠলো অথৈই। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ জ্বী ভালো আপনি?’

‘ হুম ভালো।’

ওদের দুজনের কথা শুনে রবিন বলে উঠল,

‘ কি আপনি আপনি করছিস তুই জানিস ও কে?’

এবার বেশ অবাক হয়েই বললো অথৈ,

‘ কে উনি?’

‘ আরে ওই যে ছোট বেলায় তুই আর ও

আর কিছু বলার আগেই ডাক পড়লো রবিনের লিলির বাবা ডাক দিয়েছে তাঁকে। চাচার ডাক শুনে রবিনও আর কিছু বলতে না পেরে বলে উঠল,

‘ কাকা ডাকছে তোরা দুজন কথা বল আমি এক্ষুনি আসছি?’

উওরে অথৈকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় রবিন। অন্যদিকে নীরব নীরবেই তাকিয়ে আছে অথৈর মুখের দিকে। নীরবের চোখের দিকে একপলক তাকিয়েও তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে ফেললো অথৈ। অথৈর কাজে হাল্কা হেঁসে বললো নীরব,

‘ আমার চোখের দিকে তাকাতেও কি ভয় হয় নাকি তোমার?’

নীরবের কথা শুনে হাল্কা ঘাবড়ানো মাখা কন্ঠ নিয়ে বললো অথৈ,

‘ ভয় হবে কেন?’

‘ তাহলে তাকাচ্ছো না কেন?’

নীরবের এবারের কথা শুনে নীরবের চোখে চোখ রাখলো অথৈ তারপর বললো,

‘ আহি কেমন আছে?’

‘ মন ভেঙে দিলে কি কেউ আর ভালো থাকে।’ ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে )

নীরবের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কথা বলাটা ঠিক পছন্দ হচ্ছে না অথৈর। অথৈ নিজেও সোজাসাপ্টা বলে দিল,

‘ মন ভাঙলে যখন কেউ ভালো থাকে না তাহলে মন ভাঙলেন কেন?’

‘ তুমি কেন ভাঙলে?’

এবার যেন সত্যি সত্যি থমকে গেল অথৈ। তারপরও নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো অথৈ,

‘ কারনটা তো আপনাকে আগেই বলেছি?’

‘ এই যে আহি আমায় ভালোবাসে তাই?’

‘ না শুধু আহি ভালোবাসে তাঁর জন্য নয় আমি নিজেও আপনাকে ভালোবাসি না।’

‘ হুম জানি কিন্তু এর পিছনে কারন কি শুধু আহি?’

‘ না আহি কেন হতে যাবে।’

‘ তাহলে?’

‘ আমি আপনাকে এত প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবো কেন? আপনাকে আমার ভালো লাগে না এটাই হলো আসল সত্যি।’

‘ বলেই নীরবকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয় অথৈ। এরই মাঝে ঘটলো আর একটা ঘটনা হুট করেই পায়ে কিছু বাজতে অথৈ গিয়ে পড়তে নিলো নীরবের গায়ের ওপর, নীরবের পাশ দিয়েই ঝুলে ছিলো একটা দঁড়ি যেটা পুরো স্টেজের প্যান্ডেলটাকে কভার করে আছে। অথৈ নিজেকে বাঁচাতে সেই দড়ি ধরে দিলো টান। সাথে সাথে স্টেজ জুড়ে সাজানো প্যান্ডেলের কাপড় খুলে পড়লো সোজা নীরব আর অথৈর ওপর। হুট করে এমন কিছু হওয়াতে অথৈ নীরব দুজনেই পুরো হা হয়ে গেল। নীরব তো বুঝতেই পারলো না কি হলো এইমাত্র। অতঃপর নীরব অথৈকে সামলাতে না পেরে প্যান্ডেল সমেত অথৈকে নিয়ে পড়ে গেল নিচে। নীরব নিচে তাঁর ওপরে অথৈ আর তাদের উপরে বিয়ের প্যান্ডেল। আশেপাশের লোকজনও পুরো অবাক কেউ কিছু বুঝতে পারে নি কি হলো এইমাত্র আর কি করেই বা হলো এমন।’

হা হয়ে তাকিয়ে আছে নীরব অথৈ একে অপরের দিকে। হুট করে এমন কিছু হওয়ার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না তেমন। এমন একটা বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দুজনের মধ্যে যে অথৈ চাইলেও উঠতে পারছে না নীরবের উপর দিয়ে। যতবারই উঠতে যাচ্ছে ততবারই প্যান্ডেলের ভাড়ে আবার গড়িয়ে পড়ছে নীরবের উপর। নীরব অথৈর কাজ দেখে বলে উঠল,

‘ কুলডাউন আমি দেখছি?’

বলেই আস্তে আস্তে তাঁর হাত দিয়ে তাদেরকে জড়িয়ে থাকা প্যান্ডেলটাকে সরাতে লাগলো নীরব। অন্যদিকে অথৈর এখন কান্না পাচ্ছে ভিষন কারন বার বার অথৈর ঠোঁট নীরবের গালকে স্পর্শ করছে। এই মুহূর্তে নিজের মাথার চুল নিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে অথৈর কি কারনে সে ওই দড়িটা ধরতে গেল। সে ভেবে ছিল ওটা ধরলে হয়তো সে নীরবের উপর পড়বে না। কিন্তু হলো কি পড়লো তো পড়লোই এখন ওটার ভাঁড়ে নিজেকে ছাড়াতেও পারছে না। ভিষনভাবে কান্না পাচ্ছে অথৈর। জীবনে কখনো এইরকম বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয় নি তাঁকে।’

অবশেষে ধীরে ধীরে নীরব খুঁজে পেলো প্যান্ডেলের মাথা এরই মধ্যে আশেপাশের লোকজনও এসে উঠালো নীরব আর অথৈকে। অথৈ তো উঠেই আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা চলে গেল বাড়ির ভিতরে। এতক্ষন যেন বুক ধরফর করছিল তাঁর। অন্যদিকে নীরব কিছুক্ষন অথৈর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো। এরই মধ্যে প্যান্ডেল বাঁধানো একজন লোক এসে বললো,

‘ সরি স্যার আসলে হুট করে টান পড়াতে আর আমরা কেবলই ওটাকে বাঁধতে নিয়েছিলাম তাই হাত থেকে ছুটে।’

উওরে লোকটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বললো নীরব,

‘ ইট’স ওঁকে।’

এরই মধ্যে যেখানে দৌড়ে আসলো রবিন। নীরবের সামনে এসে বললো সে,

‘ তুই ঠিক আছিস তো?’

উওরে নীরব রবিনের গলা জড়িয়ে ধরে মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম আমার আবার কি হবে?’

নীরবের কাজে রবিন অবাক হয়ে বললো,

‘ না ওই যে শুনলাম প্যান্ডেল খুলে পড়েছে নাকি তাই ভাবলাম তোদের ওপর পড়লো নাকি তুই আর অথৈ তো ছিলি প্যান্ডেলের মাঝখানে তাই আর কি?’

রবিনের কথা শুনে নীরব তেমন কোনো রিয়েকশন না দিয়েই বললো,

‘ ওহ হুম তেমনটাই কিছু হয়েছিল?’

‘ যাক বাদ দে তুই ঠিক আছিস আর অথৈকেও তো দেখলাম বাড়ির ভিতরে যেতে চল তোর সাথে বাড়ির সবার পরিচয় করিয়ে দেই।’

বলেই চললো রবিন নীরবকে নিয়ে। নীরবও বেশি কিছু না ভেবে চললো রবিনের সাথে। কিছুক্ষন আগে ঠিক কি কি হলো ঠিক মাথা থেকে যাচ্ছে না নীরবের। আনমনেই হেঁসে ফেললো সে।’

_____

হসপিটালের করিডোরে থাকা চেয়ারের বসে আছে আহি আর তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে রিনি। কাল শেষ রাতের দিকেই ঘুমিয়েছে দুজন। কাল বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় আহি আর যায় নি বাসায় হসপিটালেই থেকে যায়। আহি তো কাল রাতে শুভকে দেখে চরম অবাক সেও ভাবতে পারে নি শুভ একজন ডাক্তার হবে। প্রথমে অবাক হলেও পরক্ষণে খুশি হয়েছে সে। আহিও এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল জাস্টই ঘুম ভাঙলো তাঁর। এরই মাঝে ফোনটা বেজে উঠলো আহির উপরে মায়ের নাম্বার দেখে ফোনটা তুললো সে। তারপর বললো,

‘ তুমি টেনশন নিও আমি এক্ষুনি আসছি?’

এতটুকু বলে ফোনটা কেটে দেয় সে। আহির কন্ঠ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যায় রিনির আস্তে আস্তে আহির কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে সে। সারারাত একদিকে থাকার কারনে তাঁর ঘাড় ব্যাথা করছে। রিনির তাঁর মাথাটাকে এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে বললো,

‘ বাসায় যাবি এখন?’

‘ হুম তুই তো জানিস আমায় আবার হসপিটালে যেতে হবে।’

‘ হুম যা গিয়ে ফোন দিস?’

‘ হুম আমি আবার রাতে আসবো আনে।’

‘ ঠিক আছে।’

উওরে আহিও আর কিছু না বলে সবাইকে বিদায় জানিয়ে চলে যায় বাসার উদ্দেশ্যে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় দুপুর বারোটার কাছাকাছি বেজে গেছে।’

____

অফিসে নিজের রুমে বসে আছে আদ্রিয়ান। চোখের সামনে বার বার তাঁর আহির সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাসছে। আহিতে এতটাই মগ্ন যে, তার সামনে নিলয় ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে আছে এটাই বুঝতে পারে নি আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে নিলয় জাস্ট হা হয়েই তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ানের দিকে। কারন কম হলেও নিলয় ১০ বার বলেছে আদ্রিয়ানকে এই ফাইলগুলোতে তাঁর কিছু সাইন লাগবে কিন্তু আদ্রিয়ানের যেন নিলয়ের কথা কানেই পৌঁছায় নি। নিলয় আদ্রিয়ানের কানের কাছে তাঁর মুখ নিয়ে বললো,

‘ স্যার আপনার সাইন লাগবে?’

সাথে সাথে যেন আদ্রিয়ান চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো সে,

‘ হুম কি?’

বলেই তাকালো আদ্রিয়ান সামনেই নিলয়কে দেখে অবাক হয়ে বললো সে,

‘ তুই, তুই কখন এলি?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে নিলয়ের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। সেই কখন থেকে সে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ানের সামনে আর আদ্রিয়ান কি না তাঁকে এতক্ষণ দেখতেই পায় নি? অবাক কান্ড আদ্রিয়ানের সাথে কাজ করে এতবছরে যেন আজ প্রথম এত অবাক হলো নিলয় আদ্রিয়ানের কান্ড দেখে।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৫
_________________

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিলয় আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। আদ্রিয়ানের কান্ড কারখানা যেন এখনো হজম হচ্ছে না নিলয়ের। নিলয় আদ্রিয়ানের কপাল আর গলায় হাত দিয়ে বললো,

‘ দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো, জ্বরটর আসে নি তো আবার?’

নিলয়ের কাজে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,

‘ কি করছিস কি তুই আমি একদম ঠিক আছি।’

‘ তাহলে এমন করছিস কেন?’

‘ কি করেছি আমি?’

‘ কি করিস নি তাই বল সেই কখন থেকে তোর সাইন নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি আর তুই কি না প্রশ্ন করছিস আমি কখন এসেছি?’

‘ ওহ সাইন লাগবে আগে বলবি তো কই পেপারগুলো দেখি।

বলেই নিলয়ের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে এঁকে এঁকে সব কাগজে সাইন করে দিলো আদ্রিয়ান। তারপর বসা থেকে উঠে বললো সে,

‘ আজকের সব কাজগুলো তুই দেখেনিস আমার কিছু কাজ আছে।’

বলেই নিজের চুলটাকে একবার ঠিক করে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের কাজে জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে।’

‘ নির্ঘাত বেডাকে ভূতে ধরেছে,দেখতে হচ্ছে তো কাহিনিটা আসলে কি?’

বলেই থাইগ্লাসের উপর থেকে নিচে তাকালো নিলয়।’

এক প্রকার নাচতে নাচতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল আদ্রিয়ান।’

____

রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছে অথৈর মা, সাথে লিলির মা সহ আরো অনেকে। আর অথৈ বসে আছে সোফায়। কতক্ষণ আগে অথৈ বাড়ি ঢোকার আগেই লিলির মা আর অথৈর মা আসে বাড়িতে।
কয়েক মুহূর্ত আগে কি ঘটলো তাঁর সাথে সেটাই যেন মাথা থেকে যাচ্ছে না অথৈর। বার বার শুধু প্যান্ডেল পড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা ভেসে আসছে তাঁর সামনে। বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে সোফায় বসেই চোখ বন্ধ করে ফেললো অথৈ। সাথে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বিরবির করে বললো সে,

‘ উফ! কেন যে ওই দড়িটা ধরে টান দিতে গেলাম আমি?’ শালার আজকের দিনটাই খারাপ।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রবিন আর নীরব। নীরব কাল এখানে আসার পর আজ প্রথমই আসছে লিলিদের বাড়িতে। যদিও তাঁকে চিনতে মোটামুটি সবারই প্রবলেম হচ্ছে। রবিন নীরবের হাত ধরে নিয়ে যায় লিলির মায়ের সামনে। যদিও যাওয়ার আগে একপলক তাকিয়ে ছিল অথৈর দিকে। অথৈও খেয়াল করে কিন্তু পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে ফেলে সে। রবিন তাঁর কাকির কাছে নীরবকে নিয়ে বললো,

‘ কাকি?’

হুট করেই কাজের মধ্যে রবিনের কন্ঠ শুনে বললো লিলির মা,

‘ হুম এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো?’

‘ আসছি তো অনেক আগেই কাকার সাথে কথা বলতে ছিলাম।’

‘ ওহ তা ও কে? (নীরবের দিকে তাকিয়ে)

কাকির কথা শুনে বললো রবিন,

‘ তুমি ওকে চিনতে পারো নি?’

‘ না তো..

‘ আরে ও হচ্ছে নীরব ওই যে মনে ছোটবেলায় মাছ ধরে এনে তোমায় রান্না করতে বলতো।’

লিলির মা কিছুক্ষন ভেবে বললো,

‘ ওহ ওই চশমা পড়া পুঁচকে ছেলেটা ওমা কত বড় হয়ে গেছে, সেই কবে দেখেছিলাম। কত বড় হয়ে গেছো তা কেমন আছো তুমি?’

লিলির মায়ের কথা শুনে নীরব মুচকি হেঁসে শান্ত গলায় বললো,

‘ জ্বী ভালো আপনি ভালো আছেন তো?’

‘ হুম, তোমায় তো চেনাই যাচ্ছে না বাবা।’

উওরে শুধু হাসলো নীরব। এরপর অথৈর মা এবং লিলির মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দিলো নীরব।’

রান্নাঘর থেকে এতো হাসাহাসি করার শব্দ শুনে সোফায় বসে থাকা লিলির বাবা বলে উঠলেন,

‘ কি রে রবিন রান্না ঘরে এত হাসাহাসি হচ্ছে কি নিয়ে?’

লিলির বাবার কথা শুনে সবাই চুপ করে রইলো। কিন্তু রবিন বলে উঠল,

‘ না কাকা তেমন কোনো ব্যাপার না।’

‘ আজকে যে এখনো চা খাই নি তাঁর দিকে তোর চাচির হুস আছে কোনো নাকি সারাদিন রান্নাঘরেই কাটিয়ে দেওয়ার পন করেছে। মেয়ের বিয়ে দেখে কি চাও খেতে পারবো না আজ।’

লিলির বাবার কথা শুনে ঠোঁটে কামড় দিল লিলির মা সে সত্যি ভুলে গিয়েছিল। চটজলদি ফ্লাস্ক থেকে চা কাঁপে বেড়ে বললেন তিনি,

‘ আমি সত্যি ভুলে গেছি রে তোরাও আয় তোর কাকার সাথেও পরিচয় করিয়ে দেই নীরবের।’

উওরে নীরব আর রবিনও কিছু না বলে চলে যায় লিলির বাবার কাছে।’

সোফায় তখনও বসে ছিল অথৈই। যদিও রান্না ঘরে কি নিয়ে হাসাহাসি হচ্ছে সেটা শুনতে পায় নি সে। অথৈ তো এটাই বুঝতে পারলো না নীরবের সাথে এ বাড়ির সম্পর্ক কিসের। কাকির সাথে এমন ভাবে মিশে গেছে যেন কত বছরের পুরনো সম্পর্ক।’

লিলির মা লিলির বাবার দিকে চা টা এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এই নেও তোমার চা?’

উওরে লিলির বাবাও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ অবশেষে তবে বের হলে রান্নাঘর থেকে।’

‘ হুম ওসব বাদ দেও আগে বলো তো তুমি ওঁকে চিনতে পেরেছো কি না?’ (নীরবের দিকে তাকিয়ে)

এতক্ষণ পর লিলির বাবা খেয়াল করলো নীরবকে। নীরবের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি,

‘ না তো ও কে?’

‘ কে আবার ওই যে ছোট বেলায় তোমার পুকুরের জিয়িয়ে রাখা মাছ যে ধরতো সেই নীরব।’

এতবছর পর সেই নীরবকে দেখে অবাক হয়ে বললো লিলির বাবা,

‘ ওহ আমি তো চিনতেই পারি নি?’ কত বড় হয়ে গেছে। তা কেমন আছিস?’

‘ জ্বী ভালো কাকা আপনি?’

নীরবের কথা শুনে চায়ের কাঁপে এক চুমুক দিয়ে বললো লিলির বাবা,

‘ হুম ভালো ছোট বেলায় তো তুই আর অথৈ মিলে রোজ বিকেলে একসাথে মাছ চুরি করে পালাতি।’

লিলির বাবার কথা শুনে মাথা চুলকাতে চুলকাতে দাঁত কেলানি হাসি দিলো নীরব। তারপর বললো,

‘ এ তো দেখি কাকার ভালো মতোই মনে আছে আমার কথা।’

‘ তোকে ভুলে যাবো কি করে? তোদের জন্য তোর চাঁচির কত কথা যে শুনেছি আমি, তার হিসাব আছে?’

এদিকে কাকার কথা শুনে অথৈর যেন মাথা ঘুরাচ্ছে কি বলছে এঁরা। অথৈ অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো সবার মুখের দিকে। তার মানে কি সেই ছোট বেলার চশমা পড়া ছেলেটিই নীরব– কথাটা ভাবতেই বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো অথৈর। না না এটা হতে পারে না। অথৈকে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে দেখে রবিন চলে গেল অথৈর কাছে তারপর বললো,

‘ কিরে শকট হয়ে গেলি নাকি তার মানে তখন নীরব তোকে ওর পরিচয় দেয় নি।’

উওরে অবাক হয়ে রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো অথৈ,

‘ উনি,

‘ উনি হলো নীরব যার সাথে ছোট বেলায় একসাথে অনেকটা সময় কাটিয়ে ছিলি। ও মাছ ধরতো তুই বসে থাকতি। মনে পড়ছে কিছু। বেডা এর আগেও তো তোর সামনে সাইকেল নিয়ে পড়ে গিয়েছিল তাই না।’

বলেই হেঁসে ফেললো রবিন। আর অথৈ জাস্ট স্তব্ধ হয়ে রবিনের থেকে চোখ সরিয়ে তাকালো নীরবের দিকে। নীরব তখন হেঁসে হেঁসে কথা বলছে সবার সাথে। বুকের ভিতর এক অজানা ভয় এসে গ্রাস করলো অথৈকে। অথৈ আর বসে থাকতে না পেরে দৌড়ে চলে গেল উপরে কেন যেন সে যাকে সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসে সেই নীরব এটা ভেবেই প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে অথৈর।’

অথৈকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে সবাই ভাবলো হয়তো ছোট বেলায় তাঁর আর নীরবের কান্ডকারখানার কথা শুনে লজ্জায় পালালো।’

.

নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দরজা গেসে দাঁড়িয়ে আছে অথৈ। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর, এটা কি হলো শেষে কি না সে যাকে ভালোবাসে সে নীরব হলো।

‘ না না এটা হতে পারে না ওই ছেলেটা কিছুতেই নীরব হতে পারে না। যদি সত্যি সত্যি নীরব হয় তাহলে আমি কি করবো? একদিকে আমার অনুভূতি আর অন্য দিকে আহি।’

মাথাটা চেপে ধরে নিচে বসে পড়লো অথৈ। এ কোনো মায়াজালে আঁটকে পড়েলো সে। অথৈর ভীষণভাবে কান্না পাচ্ছে। কি হলো এটা সেটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তাঁর। এমন সময় অথৈর দরজায় নক করলো অথৈর মা বললেন উনি,

‘ কি রে ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিস কেন কিছু খাবি না নাকি।’

মায়ের কন্ঠ শুনতেই হকচকিয়ে উঠল অথৈ। তাঁরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো সে,

‘ হুম খাবো তুমি আমার খাবার এখানে নিয়ে আসো?’

‘ ঠিক আছে।’

বলেই চলে যায় অথৈর মা। অথৈও মায়ের চলে যাওয়াটা বুঝতে পেরে বিছানায় গিয়ে বসলো। একরাশ অস্থিরতা ফিল হচ্ছে অথৈর। এখন কি করবে সে ঠিক বুঝতে পারছে না।’

____

গাড়ি করে যাচ্ছে আদ্রিয়ান কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না। আদ্রিয়ান আজ যেন নিজের মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা ফিল করছে। কিন্তু কি ফিল করছে বা কেন কিছু ফিল করছে এটাই যেন বুঝতে পারছে না আদ্রিয়ান। তাই আনমনেই গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলছিল সে। এমন সময় মাথায় স্কাফ সাথে কালো রঙের সানগ্লাস পড়া একটা মেয়ে চলে আসলো তার গাড়ির সামনে। হুট করে এমনটা হওয়াতে আদ্রিয়ান কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে গাড়িতে ব্রেক কষলো জলদি। আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো ঠিক মেয়েটার সামনে। মেয়েটাও যে ভয় পায় নি এমনটা নয় একটু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এমনটা হয়েছে। মেয়েটি নিজেই আদ্রিয়ানের গাড়ির দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

‘ আই এম স…

আর কিছু বলার আগেই ভিতরে আদ্রিয়ানকে দেখে বললো সে,

‘ আরে আদ্রিয়ান ভাইয়া যে,

বলেই উল্টোদিক ঘুরে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে পড়লো সে। মেয়েটির কাজে আদ্রিয়ান যেন হতভম্ব সে সত্যি চিনতে পারে নি মেয়েটাকে। কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সে,

‘ কে আপনি?’

আদ্রিয়ানের কথা মেয়েটি তাঁর চোখের চশমা সাথে মাথায় পড়া স্কাফটা খুলে বললো,

‘ আরে তুমি আমায় চিনতে পারো নি আমি প্রীতি,

এতক্ষণ পর মেয়েটির ফেস আর নাম শুনে মনে পড়লো আদ্রিয়ানের সেদিনের শ্রীমঙ্গল থেকে ফেরার পথে প্লেনে বসে আলাপ হওয়া মেয়েটির কথা। আদ্রিয়ান বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ তুমি তাও আবার এভাবে?’

‘ আর বলবেন না ভাইয়া বাড়ি থেকে লুকিয়ে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাচ্ছিলাম।’

প্রীতির এবারের কথা শুনে আদ্রিয়ান চোখ বড় বড় করে ফেললো কিন্তু কিছু বললো না। আদ্রিয়ানকে চুপচাপ থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল প্রীতি,

‘ কিন্তু আশেপাশে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম তাই হেঁটে ওদিক টায় যাচ্ছিলাম আর তখনই তোমার গাড়ি আসলো সামনে। খুব ভালো হয়েছে আমায় একটু পৌঁছে দিবে ওই সামনেই যাবো।’

‘ রিয়েলি তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার কাছে লিফট চাইছো।’

উওরে হাসলো প্রীতি। প্রীতির হাসি দেখে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তা কতগুলো বয়ফ্রেন্ড আছে তোমার?’

‘ কি যে বলো না তুমি একটাই বয়ফ্রেন্ড আমার। আমি একজনকেই ভালোবাসি আর বিয়ে করলে ওঁকেই করবো।’

‘ খুব ভালো।’

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলো আদ্রিয়ান। কি একটা ব্যাপার হলো। আদ্রিয়ান বেশ বুঝতে পেরেছে এই মেয়েটা সারা রাস্তায় এখন বকবক করবে। তাই হলো পুরো রাস্তা জুড়ে বকবক করছে সে। হঠাৎই বলে উঠল প্রীতি,

‘ আচ্ছা তোমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই ভাইয়া?’

প্রীতির কথা শুনে আদ্রিয়ানও না বোধক মাথা নাড়ালো। আদ্রিয়ানের মাথা নাড়ানো দেখে প্রীতি অবাক হয়ে বললো,

‘ কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই?’

‘ না।’

‘ যা তুমি মিথ্যে কথা বলছো এত সুন্দর দেখতে একটা ছেলের নাকি গার্লফ্রেন্ড নেই আমাকে বোকা পেয়েছো নাকি?’

‘ আরে সত্যি বলছি, আসলে কি বলো তো আমার মেয়েদের তেমন একটা পছন্দ নয়। আর আমি কখনো সেইভাবে কোনো মেয়েকে নিয়ে ভাবি নি।’

‘ এখনও ভাবো না,কেউ তো একজন আছে নিশ্চয়ই। ‘

‘ আরে নেই সত্যি বলছি।’

‘ 😒😒😒

প্রীতির চাহনী দেখে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তবে একটা কথা বলবো তোমায়?’

‘ হুম বলো।’

‘ ইদানীং আমি নিজের মধ্যে কেমন একটা চেঞ্জিং লক্ষ করছি।’

‘ সেটা কেমন?’

‘ সেটাই তো বুঝতে পারছি না, আমার মনে হচ্ছে আমি একটু পাল্টে গেছি বাট সেটা যে আসলে কেন সেটাই বুঝতে পারছি না। আমি খুব রাগী স্বভাবের কিন্তু সেই স্বভাবটা যে হারিয়ে যাচ্ছে আমার কাছ থেকে।’

‘ তোমার লাইফে কি কোনো মেয়ে এসেছে ভাইয়া?’

আদ্রিয়ান কিছুক্ষন চুপ থেকে থেকে বললো,

‘ মেয়ে একজন আছে বুঝলে ওই আমার লাইফের প্রথম একটা মেয়ে যে মেয়েটা কারনে অকারনে আমার কাছাকাছি চলে আসে। ওর সাথে আমার কাটানো অনেক মুহূর্ত আছে যেগুলো আমি চাইলেও ভুলে যেতে পারছি না। প্রথমে তো আমি ওঁকে সহ্যই করতে পারতাম না কিন্তু এখন যেন ওর সাথে দেখা হলেই আমার বেশি ভালো লাগে। কিছুদিন যাবৎ মনে হচ্ছে আমার জীবনে প্রতিটা মুহূর্তে,, ‘ i feel her. এসব কেন হচ্ছে এটার কারনটা কি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রীতি মুচকি হেঁসে বললো,

‘ কারন you love her.

প্রীতির কথা শুনেই গাড়িতে ব্রেক কষলো আদ্রিয়ান। গাড়ি থামিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ হোয়াট?’

উওরে হাসে প্রীতি। প্রীতির হাসি দেখে বেশ বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ তুমি হাসছো কেন?’

‘ হাসবো না তো কি করবো তুমি একটা মেয়েকে ভালোবাসো অথচ বুঝতে পারছো না।’

‘ আচ্ছা আমি যে সত্যি ওঁকে ভালোবাসি এটা বুঝবো কি করে? আইমিন তুমি যে তোমার বয়ফ্রেন্ডকেই ভালোবাসো এটা বুঝলে কি করে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে প্রীতি বেশ আগ্রহের সঙ্গে বলতে লাগলো,

‘ ভালোবাসা হলো একটা অনুভূতি। এই অনুভূতির মধ্যে আছে ভালো-লাগা খারাপ লাগা দুঃখ কষ্ট। তুমি যখন কাউকে ভালোবাসতে শুরু করবে দেখবে তাঁকে ছাঁড়া তোমার আর কিছুই ভালো লাগবে না। সে যখন তোমার সামনে আসবে you feel something, দেখবে তোমার হাত অটোমেটিক তোমার বুকের কাছে চলে যাবে। তুমি যখন তাঁর চোখের দিকে তাকাবে মনে হবে সেখানেই যেন ডুবে থাকো সারাক্ষণ। তাঁর স্পর্শ, তাঁর হাঁটা চলা, পাগলামি ইত্যাদিতে কখনোই তুমি বরিং ফিল করবে না। তোমার ভালো লাগবে তাঁর সাথে মিশতে, তাঁর সাথে কথা বলতে। রাতে ঘুমাতে পারবে না চোখ বন্ধ করলেই যেন তাঁর ফেসটা তোমার সামনে ভাসবে। তাঁর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি। আর একটা কমন বিষয় সেটা হলো জ্বেলাসি।’

‘ সেটা কেমন?’

‘ সেটা এমনই যে তোমার প্রিয় মানুষটার কাছে তুমি কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারবে না ইত্যাদি। এইরকম হাজারো আছে এবার বলো এগুলোর কোনো কিছু ফিল করছো তুমি?’

‘ আমি তো এগুলো খেয়াল করি নি আর রাতে তো আমি এমনি ঘুমাতে পারি না।’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে বিস্ময় নিয়ে বললো প্রীতি,

‘ মানে?’

‘ আছে কিছু বাদ দেও।’

এতটুকু বলে আবারো গাড়ি চালাতে শুরু করলো আদ্রিয়ান। সে সত্যি জানে না আহিকে দেখলে এইসব কিছু হয় কি না তাঁর। বাট আহিকে তো সে ফিল করে, আহির সাথে কাটানো সেইসব মুহূর্তগুলো আজও মনে পড়ে আদ্রিয়ানের। সেই বিয়ে বাড়িতে প্রথম দেখা, গাড়ির পিছনে লুকানো, অফিসের ইন্টারভিউ দিতে দেখে রাগা, শ্রীমঙ্গলে একসাথে কাটানো, আহিকে জড়িয়ে ধরা। আহিকে জড়িয়ে ধরার কথা মনে পড়তেই মনে পড়লো আদ্রিয়ানের তাঁর সমস্যার সমাধান তো আহির কাছেই আছে। কিন্তু…

আর বেশি ভাবলো না আদ্রিয়ান কেমন যেন সবকিছু ঘোলাটে লাগছে তাঁর কাছে।’

কিছুক্ষন পর হঠাৎই একটা রাস্তার সামনে গাড়ি থামাতে বললো প্রীতি। প্রীতির কথামতো আদ্রিয়ানও গাড়ি থামালো। গাড়ি থামতেই প্রীতি গাড়ি থেকে নেমে বললো,

‘ থ্যাংক ইউ ভাইয়া। আর অল দা বেস্ট।’

প্রীতির কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,

‘ অল দা বেস্ট কেন?’

‘ কারন খুব শীঘ্রই তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে প্রপোজ করবে।

উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই প্রীতি বাই বলে মুচকি হেঁসে চলে গেল। আর আদ্রিয়ান জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো প্রীতির যাওয়ার পানে। যেন প্রীতি যা বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।’

প্রীতি কিছুদূর যেতেই আদ্রিয়ান আবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। আর ভাবতে লাগলো প্রীতির কথাগুলো। তাঁকে জানতেই হবে সে সত্যি আহিকে ভালোবাসে কি না, কিন্তু কিভাবে?’

____

দুপুরের কড়া রোদ্দুরের মাঝে আনমনেই হাঁটছে আহি। তাঁর মূল উদ্দেশ্য হলো হসপিটালে যাওয়া। আজ একটু লেট হয়েছে তাঁর। আসলে রিনিদের কাছ বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে একটু ঘুমিয়ে ছিল সে। যার কারনেই একটু লেট হয়েছে তাঁর। তবে এতে খুব অসুবিধা হবে না হয়তো। এর রকম নানা কিছু ভাবতেই এগোচ্ছিল আহি। এমন সময় তাঁর সামনে আসলো একটা গাড়ি।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৬
_________________

কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আহি সামনের গাড়িটার দিকে। যদিও তাঁর বুঝতে বাকি নেই গাড়িটা আসলে কাঁর। সে তো অবাক এটা ভেবে এইভাবে হুটহাট কোথা থেকে চলে আসে আদ্রিয়ান। আহির ভাবনার মাঝেই আদ্রিয়ান গাড়ির দরজা খুলে এগিয়ে আসলো আহির দিকে। আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতেই আহি দু’পা ফেলে এগিয়ে গেল আদ্রিয়ানদের দিকে তারপর বললো,

‘ আপনি এখানে?’

‘ হুম আমি তা কোথায় যাচ্ছো নিশ্চয়ই হসপিটালে?’

‘ হুম।’

‘ আসো আমি তোমায় পৌঁছে দেই?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি বেশ ভরকে গিয়ে বললো,

‘ তাঁর আর প্রয়োজন নেই আর একটু এগোলেই তো হসপিটাল।’

আহির কথা শুনে রাস্তাটার আশেপাশে দেখলো আদ্রিয়ান। ঠিকই তো এ মোড়টা থেকে বের হলেই সামনে হসপিটাল। আদ্রিয়ানের কেমন যেন নার্ভাস লাগছে কি করে কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। আদ্রিয়ানকে নার্ভাস হতে দেখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো আহি,

‘ আপনি কি কিছু বলবেন আমায়?’

আহির কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে উঠল আদ্রিয়ান তারপর বললো,

‘ হুম কিছু বলার ছিল।’

‘ তাহলে বলছেন না কেন?’

‘ আসলে কাল দুপুরের দিকে আমার সাথে বের হবে আহি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো আহি,

‘ কোথায়?’

‘ আছে একটা জায়গা যাবে আমার সাথে?’

‘ কোনো বিশেষ কারন আছে কি না মানে হুট করে কোথাও যাওয়ার জন্য বলছেন?’

এখন আদ্রিয়ান কি বলবে। আদ্রিয়ান কিছুটা বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ কারন তো একটা আছে কিন্তু সেটা তোমায় বলা যাবে না তুমি কাল যাবে কি না সেটা বলো?’

আহি কিছুক্ষন ভেবে চিন্তে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে।’

আহির কথা শুনে খুশি হয়ে বললো আদ্রিয়ান,

‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ কাল আমি তোমার জন্য দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকে এখানে অপেক্ষা করবো তুমি এসো।’

উওরে আহিও মুচকি হেঁসে বললো,

‘ ঠিক আছে।’

উওরে আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে চটজলদি চলে যায় গাড়ি নিয়ে। আর আহি জাস্ট হা হয়ে রইলো আদ্রিয়ানের যাওয়ার পানে। আদ্রিয়ানের কান্ড কারখানাটা কেমন যেন একটু লাগলো আহির। পরক্ষণেই বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল সে হসপিটালের দিকে।’

____

‘ বিকেল চারটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট’

সোহানের কেভিনে চুপচাপ বসে আছে রিনি। তাঁর মাও আছে সাথে। সকাল থেকেই ঘুমিয়ে আছে সোহান মাঝখানে দু’বার চোখ খুলেছিল সে। তবে আপাতত তাঁর খাওয়া দাওয়া বন্ধ। শুধু হাতে কেনেলা লাগিয়ে খাওয়ার স্যালাইন চলছে তাঁর। রিনি চুপচাপ তাকিয়ে আছে ভাইয়ের মুখের দিকে। আজ তাঁর বড় আপুও আসবে সোহানকে দেখতে।’

এমন সময় তাঁর রুমে প্রবেশ করলো শুভ। ডাক্তারি পোশাক পড়েই এগিয়ে আসছে সে এদিকে। আজ সারাদিন অপারেশনের কাজে ব্যস্ত থাকায় এদিকে তেমনটা আসা হয় নি তাঁর। শুভকে আসতে দেখেই রিনির মা বলে উঠল,

‘ তুমি এসেছো বাবা?’

মায়ের কথা শুনে রিনিও তাকালো পিছনে সামনেই শুভকে দেখেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল তাঁর। হুট করেই এমন এক অনুভূতি আসাতে বিষন্ন রিনি। শুভ একপলক রিনির দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসলো সোহানের দিকে তারপর মুচকি হেঁসে বললো,

‘ হুম আন্টি আসলে সারাদিন ব্যস্ত থাকায় তেমন আসা হয় নি তা কোনো প্রবলেম করছে না তো পেসেন্ট?’

‘ না বাবা তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

উওরে শুভ কিছু না বলে সোহানের বেডের পাশ থেকে সোহানের ফাইলটা নিয়ে দেখতে লাগলো। মোটামুটি সবকিছুই ঠিক ঠাক। শুভ সবকিছু চেক করে বলে উঠল,

‘ টেনশন নিবেন না দেখবেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবেন উনি।’

উওরে হাল্কা হেঁসে বললো রিনির মা,

‘ সবকিছুই আল্লাহ আর তোমার জন্য হয়েছে বাবা।’

‘ এমনভাবে বলবেন না, আমি তো তেমন কিছুই করি নি যা করার সব আল্লাহই করেছেন।’

‘ হুম বাবা।’

এমন সময় রিনির ফোনটা বেজে উঠলো উপরে নীরবের নাম দেখে হকচকিয়ে উঠল সে। কারন সচারাচর তাঁর ফোনে ফোন করে না নীরব হয়তো ভাইয়ার কথা শুনেই ফোন করেছে সে। রিনি ফোনটা তুলে ‘হ্যালো নীরব ভাইয়া’ বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। শুভ বিষয়টা খেয়াল করেছি ঠিকই তবে বেশি ভাবলো না। চুপচাপ রিনির মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলো সে। এই মহিলাকে কেন যেন খুব ভালো লেগেছে শুভর। বিশেষ করে ওনার ‘বাবা’ ডাকটা শুনে কেমন যেন একটা মা মা গন্ধ আসে।’

.

হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে রিনি নীরবের সাথে। নীরব তো হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ সোহানের এসব কি করে হলো রিনি আর আমাকে এগুলো জানাও নি কেন, আমি যদি মীরাকে কাল ফোন না করতাম তাহলে তো জানতেই পারতাম না, এখন কেমন আছে ও আমি কালই ঢাকা ব্যাক করছি।’

নীরবের একের পর এক কথা শুনে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবে রিনি, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তাই বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ শান্ত হও ভাইয়া। আমি সব বলছি। আসলে কাল শেষ রাতের দিকে বাইক নিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে এক্সিডেন্ট হয় ভাইয়া, বিষয়টা গুরুতর হলেও এখন সব ঠিক আছে। ডাক্তার বলেছে ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমায় বলি নি কারন আহি বারন করেছিল।’

রিনির এবারের কথা শুনে নীরব বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ আহি বারন করেছে কিন্তু কেন?’

‘ তুমি যে তোমার অনেক পুরনো এক ফ্রেন্ডের বাড়িতে গেছো সেটা আমি আহি আর সোহান ভাইয়া দুজনের কাছে থেকেই শুনেছি। কিন্তু আহি কাল রাতে বললো তুমি নাকি ডিপ্রেসড, সাথে মনখারাপও আছে তাই আপাতত সোহান ভাইয়ার বিষয়টা তোমাকে যেন না বলি। হয়তো সোহান ভাইয়ার কথা শুনে আরো ডিপ্রেসড হয়ে যাবে। কিন্তু মীরা আপু যে তোমায় বলে দিবে এটা ভাবতে পারি নি। তুমি চিন্তা করো না, ভাইয়া একদম ঠিক আছে আর তোমায় আপাতত আসতে হবে না কার নাকি বিয়েতে গেছো একদম বিয়ে টিয়ে খেয়ে মন ফ্রেশ করে এসো। এদিকটা আমরা সামলে নিবো।’

উওরে নীরব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

‘ ঠিক আছে। সোহানের ঘুম ভাঙলে আমায় ফোন করিস।’

‘ ওকে ভাইয়া এখন রাখি তবে?’

‘ ঠিক আছে রাখ।’

উওরে রিনিও কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিয়ে চললো ভাইয়ের রুমের দিকে। আর সেই মুহূর্তেই রুম থেকে বের হয় শুভ। আবারো দুজন মুখোমুখি শুভকে দেখলেই কেমন একটা লাগে রিনির। শুভ দু’পলক রিনির দিকে তাকিয়ে চলে যেতে লাগলো রিনির পাশ কাটিয়ে। শুভকে যেতে দেখে হঠাৎই বলে উঠল রিনি,

‘ শুনুন?’

হুট করেই রিনির গলা কানে আসতেই থেমে গেল শুভ। শুভ থামতেই রিনি পিছিয়ে এসে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল শুভকে,

‘ থ্যাংক ইউ।’

রিনির ‘থ্যাংক ইউ’ শুনে কেমন যেন এক শিহরণ বয়ে গেল শুভর ভিতর দিয়ে। শুভ রিনির দিকে ঘুরে কিছু বলবে তাঁর আগেই রিনি উল্টোদিক ঘুরে চলে গেল। রিনি যাওয়ার ফলে শুভও কিছু বলতে পারলো না মুচকি হেঁসে চলে গেল সে নিজের চেম্বারের দিকে।’

____

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে অনেক আগেই। রাতের আকাশে তাঁরাও ভর করেছে ভীষন যদিও উপরে প্যান্ডেলের কাপড় টানানো দেখে সেগুলো দেখা যাচ্ছে না। প্যান্ডেলের নিচেই লাউডে গান বাজছে কিছু কিছু ছেলে-মেয়েরা সেই গানের তালে তালে নাচছে ভিষন। লিলির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে অনেক আগেই এখন প্রায় শেষের দিকে। চারিদিকে হাসি আনন্দ নাচ গানে যেন টুইটুম্বর কিন্তু এত সবের মাঝেও অথৈর ঠোঁটে হাসি নেই কোনো। সে তো গায়ে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে চুপচাপ বসে আছে নিরালায় চেয়ারে। এত গান বাজনার আওয়াজ চলছে তাও যেন সব কিছু ঠুকনো লাগছে অথৈর কাছে। তার মাথায় তো এইমুহূর্তে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে নীরব আর আহি, নীরব আর আহি শুধুই নীরব আর আহি। চোখের সামনে একদিকে নীরবের সাথে কাটানো তাঁর ছোট বেলার মুহূর্তগুলো ভাসছে তো আরেকদিকে আহির মতো একটা ভালো বন্ধুর কথা মনে পড়ছে তাঁর। যে তাঁর সাথে দেখা হতেই বন্ধু নয় বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলেছিল। তাঁর এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না সে যাকে এতদিন যাবৎ না দেখেই কল্পনাতে ভালোবেসে গেছে সেই কি না নীরব। নীরবের কথা ভাবতেই আহির ফেসটা বার বার চোখের সামনে আসে অথৈর। যত যাইহোক সে আহিকে ঠকাতে পারে না। এক একটা জিনিস ভাববেই মাথা ভনভন করছে অথৈর। এমন সময় অথৈর ভাবনার মাঝে ওর কপালের সামনে থাকা চুলগুলো ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো নীরব। হুট করেই কিছু একটার স্পর্শ পেতেই চমকে উঠলো অথৈ। পরক্ষণেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকাতেই সামনে নীরবের ফেসটা দেখতেই বুকটা কেঁপে উঠলো তাঁর।’

অথৈকে হুট করে এত চমকে উঠতে দেখে হাসলো নীরব তারপর বললো,

‘ কি হয়েছে বলো তো তোমার সেই সন্ধ্যা থেকেই দেখছি তুমি চুপচাপ বসে আছো এনি প্রবলেম?’

নীরবের কথা শুনে অথৈ কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। বেশ হতাশ সে। অথৈর মায়াভরা সাজ দেখে অনেক আগেই ফিদা নীরব আজ প্রথমই শাড়ি পড়া লুকিং এ দেখলো অথৈকে সে। শাড়িতে সে এত সুন্দর লাগবে অথৈকে এটা যেন ভাবে নি নীরব। কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি, হাতে হলুদ কাঁচের চুড়ি, চুলগুলো খোলা, চোখে চশমা মায়াবী মুখ, চোখে গোলাপি লিপস্টিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে অথৈকে নীরবের কাছে। নীরব আনমনেই বলে উঠল,

‘ হলুদের শাড়িতে যে রাঙিয়েছো তুমি,
সেই তুমিতে মুগ্ধ যেন আমি।’
তোমার হাতের কাঁচের বালার টুংটাং শব্দে,
আমার ভিতরটা যেন যাচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে।’

‘যদি বলতে একবার ভালোবাসি,
আমি না হয় বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতাম চলো বিয়ে করে আসি।’

বলেই হাল্কা হেঁসে ফেললো নীরব। তাঁরপর আবারো বললো,

‘ হু তবে ভয় নেই আমি কিন্তু এখানে ভালোবাসার দাবি নিয়ে আসি নি। দেখো তোমাকে আমায় আপাতত ভালোবাসতে হবে না। আগে যেমন ছিলে তেমনই হও বন্ধুত্বটা শুধু বজায় রাখো, প্লিজ।’

নীরবের একের পর এক কথা শুনে শুধু শীতল দৃষ্টিতে তাকালো অথৈ নীরবের দিকে। তবে কিছু বললো না। অথৈকে এখনো চুপচাপ থাকতে দেখে স্বাভাবিক গলায় বললো নীরব,

‘ যাহ বাবা এতো সুন্দর কবিতা শুনালাম কোনো রিয়েকশনই দিলে না, তুমি তো আসলেই অন্যরকম।’

নীরবের কথা শুনে অথৈ চুপচাপ নীরবের দিকে দৃষ্টি রেখে নীরবকে বলে উঠল,

‘ আচ্ছা আপনি কি সত্যি সেই ছোট বেলার সঙ্গী ছিলেন আমার।’

আচমকা অথৈর মুখে এমন ধরনের কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে বললো নীরব,

‘ মানে?’

‘ না কিছু না।’

এতটুকু বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো অথৈ তারপর অগ্রসর হলো নিজের রুমের দিকে। কেন যেন নীরবের ফেসটা দেখলেও তাঁর কষ্ট হচ্ছে এইমুহূর্তে। আর নীরব জাস্ট অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো অথৈর যাওয়ার পানে সে যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না অথৈর কথাটা।’

____

পরেরদিন দুপুর এগারোটা বেজে ১০ মিনিটে আদ্রিয়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালকের আহির সাথে কথা বলার সেই জায়গাটায়। আহির আসতে এখনো ২০ মিনিট বাকি আছে আদ্রিয়ান ২০ মিনিট আগে এসেই দাঁড়িয়ে আছে এখানে। একরাশ অস্থিরতা ফিল হচ্ছে তাঁর। কাল সারারাত আহির চিন্তায় ঘুম আসে নি আদ্রিয়ানের। আজকের দিনটা তাঁর ঠিক কিভাবে কাটবে এটা ভাবতে ভাবতেই রাত পেরিয়ে গেছে আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান রাতে এমনি ঘুমাতে পারে না আর কাল রাতে তো যেন যুদ্ধ চলেছে তাঁর মনের সাথে। কিন্তু সেই যুদ্ধে ব্যর্থ সে। সকালের ফুড়ফুড়ে আলোর পড়ে ঘুম আসে আদ্রিয়ানের। আর সকালেই কয়েকঘন্টা ঘুমিয়ে কেবল বের হয় সে গাড়ি নিয়ে। আজ আর অফিসে যায় নি। ঘুম ভাঙার পরই নিজেকে ফ্রেশ করে বেরিয়ে আসে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের পরনে ব্লাক কালার টিশার্ট সাথে আকাশী কালারের শার্ট, ব্লাক জিন্স, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ব্লট করা, চুলগুলো সুন্দর করে সাজানো, হাতে ব্লাক ওয়াচ। চোখে কালো সানগ্লাস পড়ে এসেছিল সে কিন্তু সেটা বর্তমানে গাড়ির ভিতর আছে। আদ্রিয়ান তাঁর ঘড়িরটার দিকে একবার চোখ বুলালো জাস্ট ১১ঃ১৫ মিনিট হয়েছে। সময় যেন আজ ফুরাচ্ছেই না আদ্রিয়ানের। প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে আদ্রিয়ানের। এই কড়া রোদ্দুরের মাঝে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে। আশেপাশে লোকজনগুলোও কেমন ভাবে তাকাচ্ছে তাঁর দিকে।’

এভাবে কিছুক্ষন কাটানোর পর,

হঠাৎ সামনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো আহি। পিছন দিকে ফিরে ছিল আদ্রিয়ান হঠাৎই এক ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস গায়ে লাগতেই সাথে কিছু একটা ফিল হতেই পিছন ঘুরে তাকালো সে। সামনে তাকাতেই দৃষ্টি গেল তার আহির দিকে। ওয়াইট জর্জেট থ্রি-পিচ, খোলা চুল, চোখে কাজল, হাতে সাদা কাঁচের চুড়ি, মুখে হাল্কা মেকাপ দিয়ে এদিকেই এগিয়ে আসতে লাগলো সে। আজ একদমই অন্যরকম লুকিং এ দেখছে আদ্রিয়ান আহিকে। বুকের ভিতর দক দক শব্দ হচ্ছে তাঁর। না চাইতেও আদ্রিয়ান হাত চলে যায় তাঁর বুকের কাছে। কিছুটা মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রয় সে আহির দিকে। হঠাৎই নিজের হুস আসতেই নিজের কাজ আর বুকের হাত দেখে। আহির দিকে আবারও দৃষ্টি রেখে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ আমি কি তবে সত্যি প্রেমে পড়েছি তোমার?’
!
!
!
!
!
#চলবে…..