বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব-২৫+২৬+২৭

0
461

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_২৫
জাওয়াদ জামী

” চিপসগুলো কি মিউজিয়ামে রাখবে ভেবেছ! যদি রাখতেই মন চায় তবে আমি পরে কিনে দিব। এখন এগুলো খাও। ” তাহমিদের কথা শুনে কুহু ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকে।
” বইন আমার, তাত্তারি খা। তুই-ই দুনিয়ায় একমাত্র, যে চিপস হাতে নিয়ে বসে আছিস। এর আগে আর কেউ চিপস হাতে নিয়ে বসে থাকেনি৷ ” আনানের খোঁ’চা শুনে তাহমিদ চোখ গরম করে তাকায়।
কুহু কিছু না বলে প্যাকেট খুলে চিপস মুখে দেয়৷

সুপ্তিকে ঘিরে ওর বোনেরা বসে আছে। রাহাত তাহমিদ, আনান, নিহানদের সাথে আড্ডায় মেতেছে।
” এরপর তো আমাদের হবু ডক্টরের পালা? বউ কি ঠিক করাই আছে, নাকি আমাদের খুঁজে দিতে হবে? ” রাহাত প্রশ্ন করে তাহমিদকে।
” আমার আবার দয়ার শরীর। আমার বউ খুঁজতে গিয়ে আপনারা এনার্জি লস করবেন, তা হতে দিতে পারিনা। তাই বউ রেডিই রেখেছি। সময় হলেই টুপ করে সবার সামনে হাজির করব।”
” আমার শা’লাবাবু দেখছি দারুণ ফরোয়ার্ড! সবার কথা কত ভাবে! এমন শা’লা’বাবু ঘরে ঘরে দরকার। ” রাহাত হেসে বলে।
” দুলাভাই, আমাদের তাহমিদ ভাই, দ্বায়িত্ববান পুরুষ। তাই বিয়ের আগেই বউয়ের দ্বায়িত্ব কাঁধে নেয়ার চেষ্টা করছে। ” আনান দুজনের মধ্যে ফোঁড়ন কাটে৷
” তাই নাকি! তা বউটা কে শা’লাবাবু? ” রাহাত দুজনের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
” সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। ” আনান উত্তর দেয়।
এভাবেই আড্ডা চলতে থাকে।

সুপ্তির পাশে কুহু বসে আছে। সুপ্তি কুহুকে নানান প্রশ্ন করছে। মা কেন আসেনি, বারবার জানতে চাচ্ছে কুহুর কাছে। ওর মন বড্ড উচাটন করছে। সবাই এসেছে অথচ মা আসেনি। কুহু সুপ্তিকে বারবার বোঝাচ্ছে, ফুপু ঠিক আছে। কিন্তু সুপ্তি তা মানতে নারাজ।
” কি রে, ছাতার মিস্ত্রির বউ। দিনকাল কেমন যাচ্ছে? শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে সম্মান করছিস তো? আর জামাইকে আঙ্গুলে নাচানোর মিশন শুরু করেছিস? ” তাহমিদ দুজনের কথার মাঝে বাগড়া দেয়।
” তাহমিদের বাচ্চা, ঐটা ছাতার মিস্ত্রি নয়, আর্কিটেক্ট হবে। আমার কাউকে নাচানোর জন্য মিশন শুরু করতে হয়না। আমার চোখের দিকে তাকালেই জনগণ নাচতে প্রস্তুত হয়ে যায়। ”
” বাপরে ক্ষমতাবান নারী তুই! তোর চেখে কি ম্যাগনেট আছে নাকি! দেখি একবার তাকাতো আমার দিকে। ”
” তুই থামবি ব’দ পোলা। এত খোঁচাস কেন! চলেই তো এসেছি তোর বাড়ি থেকে। ”
” একবারে তো আর চলে আসিননি। দুই-চার মাসে হলেও একবার যাবি। তাই খোঁ’চা’নো বন্ধ হবে নট। ”
কুহু ওদের দুই ভাই-বোনের কথা শুনছে আর মৃদু হাসছে।
” ভালো কথা, ছাতার মিস্ত্রির বউ। সেদিনের পর থেকে, তোর মামাতো বোনের সামনে আমি ইচ্ছে করে আসিনা। চেষ্টা করি তার সামনে না পরতে।মাঝেমাঝে বাধ্য হয়েই তার সামনে আসতে হয়। সে যেন এইটা নিয়ে আবার কাহিনী না করে। আমি কথা রাখতে খুব ভালো করেই জানি। ”
কুহুর কেন যেন তাহমিদের কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল।
” তুই আমার বোনকে এমন করে বলছিস কেন? আমার বোনটা কত ভালো জানিস? শুধু একটু বোকা এই যা। তবে একসময় এমন বোকা আর থাকবেনা। ”
” এর জন্য আমাকে যে কত কষ্ট করতে হবে, তা আমিই জানি। জিরোকে হিরো বানানোর চেষ্টা যে আমাকেই করতে হবে, তা কি বুঝতে পারছিস? ”
কুহু তাহমিদের কথার পূর্ণ মানে বুঝতে পারলেও চুপ করে থাকে।
” জিরোকে হিরো বানাতে পারদর্শী হিরো আলম। ” সুপ্তি হাসতে হাসতে কুহুর শরীরে ঢরে পরে।
” কি বললি, আমি হিরো আলম! তাহলে তোর জামাই রিপন ভিডিও। আগেতো ছিল ছাতার মিস্ত্রি। আর এখন প্রমোশন পেয়ে হলো রিপন ভিডিও। ” তাহমিদও কম যায়না।
কুহু এবার চুপ করে থাকতে পারলনা। ফিক করে হেসে দিল। কুহুর হাসির আওয়াজে তাহমিদ ওর দিকে তাকায়। ও আজই প্রথম এমনভাবে কুহুকে হাসতে দেখল। আর এ-ও দেখল বামপাশের গজদাঁত ওর হাসিকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। তাহমিদ কয়েক মুহূর্ত মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকে।

সুপ্তিকে নিয়ে ফিরতে রাত হয়ে যায়। তাই কুহুর আর হোস্টেলে যাওয়া হয়না।
পরদিন সকালে খাবার খেয়েই ও ফুপুকে বলে, আজকেই হোস্টেলে ফিরবে। তিনিও রাজি হন। কয়েকদিন থেকে কুহুর পড়াশোনা হচ্ছেনা, তাই রাজি না হয়ে উপায় নেই।
তাহমিনা আক্তার কুহুর যাওয়ার কথা শুনলে, কুহুকে বলে দেন, তাহমিদ ওকে পোঁছে দিবে। কুহু শুধু মাথা নাড়ায়।

দিদুনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, কুহু ফুপুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
ড্রয়িংরুমে কায়েস, শিউলি আক্তার বসে ছিল। কুহু গুটিগুটি পায়ে বাবার কাছে যায়। শিহাব বাবার পাশে বসে ছিল। কুহু শিহাবকে কাছে টেনে নেয়। চুমু দেয় ওর কপালে।
” বাবা আমি আসছি। তোমরা ভালো থেকো। ” বাবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কুহু বেরিয়ে আসে। একটিবার শিউলি আক্তারের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার প্রয়োজনবোধ করেনা। শিউলি আক্তারের সেইদিনের আচরণ ওর মনে দাগ কেটে গেছে। তারউপর বড় ফুপুর বলা কথাগুলো ও বারবার বিশ্লেষণ করেছে। এবং এটাই বুঝেছে যে, এবার ওকে শক্ত হতে হবে।
শিউলি আক্তার অবাক হয়ে গেছে কুহুর আচরণে। কুহু সবার কাছ থেকে বিদায় নিল, অথচ একটাবারও তাকে বলার প্রয়োজন মনে করলনা!
বাইরে এসে দেখল তাহমিনা আক্তার গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। তার হাতে একটা ব্যাগ।
” কুহু, এখানে কিছু খাবার আছে। ফ্রিজে রেখে দিবি। আর আমি কয়েকদিন পর তাহমিদকে পাঠাবো তোকে আনতে। চলে আসবি কিন্তু। ” তাহমিনা আক্তারের কথায় অধিকারবোধ চাপা থাকেনা।
তাহমিনা আক্তারকে সালাম জানিয়ে গাড়িতে উঠে কুহু। পুরো রাস্তা দুজনেই নিরব থাকে। একজনের মনে হাজার কথার ফুলঝুরি ছুটেছে, কিন্তু বলার সাহস নেই। আরেকজন তো নিরবতাকেই নিজের সঙ্গী করেছে।
কুহুর হোস্টেলের সামনে এসে গাড়ি থামায় তাহমিদ। কুহু নিচে নামলে, তাহমিদ ওর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।
” এখানে চকলেট, চিপস, আর আইসক্রিম আছে। ইচ্ছে হলে খেও, না হলে ফেলে দিও। ” ভাবলেশহীন মুখে বলে তাহমিদ।
” আপনি সব সময় এভাবে কথা বলেন কেন! ” সাহস করে কুহু বলেই ফেলে।
” কিভাবে কথা বলি? ” সিরিয়াস হয়ে জানতে চায় তাহমিদ। কিন্তু ভেতর ভেতর ও হাসিতে ফেটে পরছে। ওর কথার ভঙ্গিতে কুহু বেশ ভড়কে গেছে।
” সব সময় কেমন বাঁকাভাবে কথা বলেন। এখন যেমন বললেন। ” ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় কুহু।
” আমি মানুষটাই তো বাঁকা, তাহলে কথা সোজাভাবে বলব কেমন করে। ”
কুহু আর কিছু না বলে তাহমিদের হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে হোস্টেলের গেইট অতিক্রম করে।
তাহমিদ হাসিমুখে ওর যাওয়া দেখে।

শাহনাজ সুলতানা আজ বিকেলে নিজ বাড়িতে যাবেন। আগামীকাল যাবে নাজমা পারভিন। কায়েস আর শিউলিও আগামীকাল যাবে। আজ সকাল একে একে সকল আত্মীয় স্বজনরা বিদায় নিচ্ছে। আজ থেকে ‘ কুঞ্জছায়া ‘ ফাঁকা হয়ে যাবে।

কুহুর এইচএসসি পরীক্ষার আর ছয়মাসও নেই।
ও পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে গেছে। সুপ্তির বিয়ের পর আর বড় ফুপুর বাসায় যাওয়া হয়নি। আর না গেছে ফুলতলা। ক্লাস, কোচিং নিয়ে ব্যস্ত কুহু। আফরোজা নাজনীনও ওকে তার বাসায় আসতে বলেলনি। তিনি চাচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেই তিনি কুহুকে তার কাছে আসতে বলবেন। তাহমিনা আক্তার অবশ্য বড় জায়ের কাছে কুহুকে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, কুহু পরীক্ষার পরই আসুক। তাই তাহমিনা আক্তারও আর জোড় করেননি।
‘ কুঞ্জছায়া ‘ থেকে আসার পর তাহমিদের সাথে কুহুর আর দেখা হয়নি। যদিওবা কুহু তাহমিদকে দেখেনি কিন্তু তাহমিদ ঠিকই আড়াল থেকে কুহুকে প্রতিনিয়তই দেখেছে।

ঘড়িতে রাত বারোটার ঘন্টা বেজেছে। কুহু মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। ঠিক সেই সময় ফোনে ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠে। কুহু ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করে। কিছুদিন থেকে একটা আননোন নম্বর থেকে সকালে, রাতে দুইবার নিয়ম করে ম্যাসেজ দিচ্ছে কেউ। ম্যাসেজে তেমন কিছুই লেখা থাকেনা। শুধু শুভ সকাল আর শুভ রাত্রীতেই সীমাবদ্ধ। কুহু প্রথম প্রথম কয়েকটা নম্বর ব্লক করেছে, কিন্তু যতবারই একটা নম্বর ব্লক করে, পরে নতুন আরেকটা নম্বর থেকে ম্যাসেজ আসে। তাই পরে আর এই নম্বর ব্লক করেনি। যার ইচ্ছে হয়, সে ম্যাসেজ দিক।

ক্লাস শেষ করে সবে মাত্র হোস্টেলে ফিরেছে কুহু। ঘামে ভিজে গেছে শরীরের পোশাক। হাতের উল্টোপিঠে কপালের ঘাম মুছে, আলনায় থাকা জামাকাপড় নিয়ে, করিডোরের উল্টোদিকে থাকা ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
গোসল সেরে এসে দেখল অনবরত ওর ফোন বেজেই চলেছে। স্ক্রীনে ভেসে উঠেছে শিউলি আক্তারের নাম। কৌতুহলে কপাল কুঁচকে আসে কুহুর। ছোটমা কোনদিন ওকে নিজ থেকে ফোন দেয়নি, আজ হঠাৎ তার ফোন এসেছে! কারও কি কোন বিপদ হয়েছে!

চলবে….

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_২৬
জাওয়াদ জামী

কুহু ফোন রিসিভ করতে দোমনা করছে। ও চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। ততক্ষণে ফোন কে’টে গেছে। পরক্ষণেই আবার ফোন বেজে উঠল।
” কেমন আছো ছোটমা? শিহ…” কুহুর কথা শেষ হবার আগেই ওপরপাশ থেকে কথা ভেসে আসে।
” আপু, আমি শিহাব। খুব জরুরি কথা আছে তোমার সাথে। ” শিহাবের গলায় উৎকন্ঠা গোপন থাকেনা।
” কি হয়েছে সোনা! তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? বাবা ভালো আছে তো? তোরা সবাই ভালো আছিস? ”
” আমরা ভালো নেই আপু। আব্বু ভীষণ অসুস্থ। ”
” কি হয়েছে বাবার? বাবা ঠিক আছে তো? ” ভয়ে কুহুর গলা কাঁপছে। ওর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
শিহাবও কাঁদতে শুরু করেছে। কোনমতে কান্না থামিয়ে বলে,
” আপু, আম্মু আব্বুকে ধাক্কা মেরেছে, আব্বু পরে যেয়ে, বুকে লেগেছে। ” শিহাবের কথা শুনে কুহুর দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়। এ কি শুনছে সে!
” কি বলছিস এসব শিহাব! আমাকে খুলে বল, কি হয়েছে? ”
” দৃষ্টি আপু, আমাদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলেকে পছন্দ করে। ওকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। কিন্তু আব্বু এতে মত নেই। এদিকে আম্মু চায় ঐ ছেলেটার সাথেই আপুর বিয়ে হোক। এ নিয়ে আব্বুর সাথে আম্মুর খুব কথা কা’টা’কা’টি হয়। এক পর্যায়ে রে’গে যেয়ে আম্মু আব্বুকে জোরে ধা’ক্কা দেয়। আব্বু বারান্দার টেবিলে যেয়ে ধা’ক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। সেখানেই আব্বুকে ভালো করে শুইয়ে দিয়ে, মাথায় পানি ঢালে আম্মু। খানিকক্ষণ পর আব্বুর জ্ঞান ফিরে। তারপর থেকেই আব্বু অসুস্থ। জানো আপু, দৃষ্টি আপু যাকে বিয়ে করতে চাইছে, সেই ছেলেটা ভালো নয়। ও নে’শা করে আর জু’য়া খেলে । তাই আব্বু বিয়েতে রাজি নয়। আম্মু সব সময়ই নিজের ফোন আর আব্বুর ফোন তার কাছে রাখছে। আব্বুকে কেউ ফোন দিলে, তার সাথে আম্মুই কথা বলছে। তাই আমি এই কয়দিন তোমাকে ফোন করার সুযোগ পাইনি। একটু আগে কে যেন আব্বুর ফোনে ফোন দিয়েছে, আম্মু বাগানে যেয়ে কথা বলছে। এই সুযোগে আমি তোমার কাছে ফোন করেছি। ”
শিহাবের কথাগুলো শুনে কুহু কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকে। এ কি শুনছে সে! ছোটমার এত অধঃপতন হয়েছে, যে বাবার গায়ে হাত তুলতে এতটুকু বাঁধলোনা!
” আপু, তুমি বাড়িতে একবার আসবে। আব্বু শুধু কাঁদছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আপু। তুমি এসে আব্বুকে বাঁচাও আপু। ” কুহুর ভাবনায় ব্য’ব’চ্ছে’দ ঘটিয়ে কথা বলে শিহাব।
” আমি আসব সোনা। তুই কাঁদিসনা, বাবাকে দেখে রাখিস। ”
” আপু, আমি যে তোমাকে ফোন করেছি, তা আম্মুকে বলোনা। আম্মু জানতে পারলে আমাকে মা’র’বে। ”
” আচ্ছা বলবনা। তুই শুধু বাবাকে দেখে রাখিস। আমি খুব তারাতারি আসব। ” কুহু ফোন কে’টে দেয়। কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকে। এমনটা কেন হল!
কুহু ধাতস্থ হয়ে বড় ফুপুকে ফোন করে। তাকে সবটা জানিয়ে, একবার গ্রামে যেতে চায়। কিন্তু আফরোজা নাজনীন কুহুকে সেখানে একা যেতে দিতে রাজি হয়না। তিনি নিজেও কুহুর সাথে যেতে চান। তিনি জানান আগামী সোমবার তিনি কুহুকে নিয়ে ফুলতলা যাবেন। তিনি এখন রীতির শ্বশুর বাড়ি আছেন। সেখান থেকে আগামীকাল ঢাকায় ফিরে সোমবার ফুলতলা যাবেন। কুহু ফুপুর কথায় সায় দেয়৷ তবে ওর মন বড্ড উচাটন করছে। আজ কেবল শনিবার। মাঝখানে আরও একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে।

পরদিন দুপুরেই আফরোজা নাজনীন নিজ বাসায় হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করেন। তিনি দুই বোনের সাথে কথা বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও তারা এখন কেউই আসতে পারবেনা। আনানের পরীক্ষা চলছে তাই শাহনাজ সুলতানার পক্ষে এখন ফুলতলা যাওয়া সম্ভব নয়। আর নাজমা পারভিনের শ্বশুর অসুস্থ হয়ে বিছানা নিয়েছে। তিনি ছাড়া শ্বশুরকে দেখার মত কেউই নেই। তাই তিনিও আসতে পারবেননা। অগত্যা আফরোজা নাজনীনকে একাই যেতে হবে। তিনি যেহেতু দুপুরের মধ্যেই ফিরেছেন, তাই সিদ্ধান্ত নেন আজই কুহুকে নিয়ে ফুলতলা যাবেন। তাহমিনা আক্তারকে সব খুলে বলতেই, তিনি বাধ সাধছেন। গ্রামে যেতে রাত হয়ে যাবে। যেহেতু সানাউল রাশেদিন এখন ঢাকায় নেই, তাই একা দুইজনকে একা যেতে দিতে তিনি নারাজ।

” বড় ভাবি, আপনি কুহুকে নিয়ে একা যাবেননা। এত রাস্তা তারউপর যেতে রাত হয়ে যাবে। যতই ড্রাইভার থাকুক, তবুও চিন্তা থেকেই যায়৷ আপনি বরং তাহমিদকে সাথে নিন। ”
” ও কি যাবে? আমার সাথে কুহু যাচ্ছে, এতে তাহমিদের যদি অসুবিধা হয়। আমি চাইনা, আবার আমাদের ভুলে কুহু চিরদিনের জন্য দূরে চলে যাক। ”
” একই ভুল মানুষ একবারই করে। আর তাহমিদ প্রথমবার ভুল করার পর থেকে, অনুশোচনায় ভুগছে। তাই আমি জানি একই ভুল ও দুইবার করবেনা। আর সময়ও তো পাল্টায়। কে বলতে পারে, যে কুহুকে ও একদিন অসম্মান করেছিল, একসময় দেখা গেল সেই কুহুই ওর সবকিছু হয়ে গেছে। আমরা অনেক কিছু জানলেও, কার মন কখন, কিসে হারাবে তা কিন্তু জানিনা। ” তাহমিনা আক্তারের কথা শুনে আফরোজা নাজনীন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
” কি বলতে চাচ্ছিস তুই, তাহমিনা? আমার কাছে কিছু কি লুকাচ্ছিস? ”
” কিছুই লুকাচ্ছিনা। শুধু বলতে চাইছি, তোমার বাপ এখন আগের মত কাটখোট্টা নেই। কুহুর প্রতি যথেষ্ট নরম হয়েছে, ওর মন। ওকে যেতে বললে, ও বরং খুশিই হবে। কথা বলে সময় নষ্ট না করে, তুমি তোমার বাপকে ফোন করে কুহুকে নিয়ে আসতে বল। ওর মেডিকেল থেকে আসার সময় হয়ে গেছে। আর কুহুকেও তো তৈরি হয়ে থাকতে হবে। ” তাহমিনার কথায় যুক্তি আছে দেখে, আফরোজা নাজনীন আর কথা বাড়ায়না। তাহমিদকে ফোন করে, কুহুকে নিয়ে আসতে বলেন। আবার কুহুকে ফোন করে তৈরি হতে বলেন। এরপর শাহনাজ সুলতানাকে ফোন দিয়ে, সাজ্জাদ স্যারকে কুহুর হোস্টেল সুপারের কাছে বলতে বলেন।
শাহনাজ সুলতানা তার দেবরকে ফোন দিয়ে সবটা জানালে, তিনি হোস্টেল সুপারকে বলে দেন কুহুকে কেউ নিতে গেলে যেন বের হতে দেয়।
কুহু ফুপুর কথামত তৈরি হয়ে থাকে। তাহমিদ হোস্টেলের গেইটে এসে কুহুকে ফোন করে। আননোন নম্বর দেখে কুহু একটু ইতস্তত করে, ফোন রিসিভ করে।
” আসসালামু আলাইকুম। ” সালাম দিয়ে নিশ্চুপ থাকে কুহু।
” ওয়ালাইকুমু সালাম। আমি তাহমিদ বলছি। আসি গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তুমি তৈরি হয়ে থাকলে চলে এস। ”
” জ্বি, আমি তৈরি আছি। এক্ষুনি আসছি। ” বলেই ফোন কে’টে দেয় কুহু৷
তাহমিদ গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পর দেখল কুহু একটা ছোট ব্যাগ হাতে নিয়ে গেইট দিয়ে বের হচ্ছে। ও গাড়ির কাছে আসলে তাহমিদ দরজা খুলে দেয়। কুহু কোন কথা না বলে গাড়িতে উঠে বসে।
সারা রাস্তা কেউ কোন কথা বলেনা। কুহুর মন খারাপ দেখে তাহমিদও ওকে ঘাঁটায়না।

ওরা ” কুঞ্জছায়া”য় পৌঁছে দেখল আফরোজা নাজনীন তৈরি হয়ে ওদের অপেক্ষা করছিল। আর তাহমিনা আক্তার ওদের দুজনের জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছিল। তাকমিদকে ফ্রেশ হতে বলে, তিনি খাবার বাড়েন। তাহমিদ ফ্রেশ হয়ে একেবারে তৈরি হয়ে নিচে নামে। কুহু খেতে না চাইলেও তাহমিনা আক্তার ওকে জোর করে খাওয়ায়। দুজনকেই একসাথে খাইয়ে দেয় তাহমিনা আক্তার।
ওদের খাওয়া শেষ হওয়া মাত্রই আফরোজা নাজনীন বেরিয়ে পরেন।

গ্রামে পৌঁছাতে ওদের রাত আটটার বেশি বেজে যায়। পথিমধ্যে তাহমিদ রাতের জন্য খাবার কিনে। কারন ও জানে, সেখানে রাতে রান্না করার মত কোন পরিস্থিতি থাকবেনা। তাছাড়া ড্রাইভার আংকেল যাচ্ছেন, ওরা নিজেরা না খেয়ে থাকলেও, আংকেলকে না খাইয়ে রাখা তাদের পরিবারের জন্য সম্মানজনক হবেনা।

কুহুর বাড়ির গেইটের সামনে এসে গাড়ি থামায় ড্রাইভার। কয়েকবার বেশ জোরে হর্ন বাজায়।
শিউলি তখন একটা রুমে মেয়ের সাথে ফুসুরফাসুর করছিল।
” তরে কইলাম, এখনই বাপের কাছে পোলাডার কথা কইসনা। আগে ঐ কুহু হা’রা’ম’জা’দি’র একটা ব্যবস্থা করি। হেরে বাড়ি থাইকা চিরদিনের মত তাড়াই, সব নিজের হাতের মুঠায় লই, তারপর তুই নিজের কথা কইস। কিন্তু তুই আমার কথা না শুইনা, দিলি আমার পরিকল্পনার বারোডা বাজায়। ”
দৃষ্টি মায়ের কথা শুনেও না শোনার ভান ধরে। ওর আপাতত কারও কোন কথা শোনার ইচ্ছে নেইে। ওর মাথায় এখন শুধু চেয়ারম্যানের ছেলে সবুজ ঘুরছে।
এমতাবস্থায় গাড়ির হর্নের আওয়াজ শুনে মা-মেয়ে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।
” এখন কে আসল, আম্মু! আমাদের গেইটের সামনেই তো হর্ন বাজছে, মনে হচ্ছে। ”
” আমিও তো বুঝতাছিনা কে আইল। চল তো গিয়া দেখি। ”
শিউলি আক্তার গেইট খুলেই থমকে গেছে৷ ও স্বপ্নেও ভাবেনি, এখন ওর ননদকে মোটেও আশা করেনি। আবার সাথে কুহু আর তাহমিদও আছে!
” আপা, আপ্নে এত রাইতে! আসেন ভিতরে আসেন। ”
” কেমন আছিস তোরা? কায়েস কই? দোকান থেকে আসেনি? এতক্ষণ তো দোকান থেকে চলে আসার কথা। ”
আফরোজা নাজনীনের কথা শুনে শিউলির বুক শুকিয়ে আসছে। এখন কি জবাব দিবে সে!
” কি রে, কথা বলছিসনা কেন! কায়েস কই? ”
” আপা, হেয় অসুস্থ। তাই দোকানে যায়নি। ঘরে শুইয়া রইছে। ” ভয়ে ভয়ে জবাব দেয় শিউলি।
” কি বলছিস! কি হয়েছে ওর! ” বলেই আফরোজা নাজনীন দৌড়ে যায় ভাইয়ের রুমে৷
আসলে কুহুই তাকে বলতে নিষেধ করেছিল, শিউলির কাছে যাতে সত্য না বলে। পরে দেখা গেল শিউলি শিহাবকে মা’র’ধ’র করল।
তাই আফরোজা নাজনীনও শিউলিকে ধরা দেননি।

কায়েস বিছানায় টানটান হয়ে শুয়ে, ব্য’থা’য় কা’ত’রা’চ্ছে। আফরোজা নাজনীন হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে, ভাইয়ের অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। কুহুও বাবার মাথার পাশে বসে কাঁদছে। ওর বাবার শরীর শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে, মুখটা শুকনো।
” বাবা, ও বাবা, কি হয়েছে তোমার? তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে? ” কুহু কান্নার মাঝেই বাবাকে প্রশ্ন করে।
” আমাকে মাফ করে দিস, মা। তোর প্রতি আমি অনেক অন্যায় করেছি। ” বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বলে কায়েস। ব্য’থা’র কারনে তার কথা বলতে ক’ষ্ট হচ্ছে।
” ও বাবা, তুমি কেন আমার কাছে ক্ষমা চাইছ। তুমি তো আমার বাবা। বাবাদের মুখ কখনোই সন্তানের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য নয়। ঐ মুখ শুধু দোয়া করার জন্য। ”
কুহুর কথা তাহমিদের বুকে লা’গে। মেয়েটা কত সহজেই, কঠিন কথাটা বলল।
” শিউলি, আমার ভাইয়ের এমন অবস্থা, অথচ তুই একটিবারও আমাকে বলার প্রয়োজনবোধ করিসনি? আমি কাল সকালেও তোর সাথে কথা বলেছি, তুই তখনও আমাকে কিছু বলিসনি! এত লুকোচুরি কিসের তোর? কালকের আগেরদিনও তোর সাথে কথা হয়েছে, কায়েসের ফোনেই। কুই বললি, ও ফোন ভুল করে রেখে গাজীপুর গেছে। তুই মিথ্যা বললি কেন আমার কাছে? জবাব দে, চুপ করে থাকিসনা। আর ওকে ডাক্তার দেখিয়েছিস? ” আফরোজা নাজনীন রা’গে দিশেহারা হয়ে গেছেন।
” নগেন ডাক্তারকে দেখাইতাছি। হেয় ওষুধ দিছে। ”
” কায়েসের বোনেরা ঢাকায়ই থাকে। তুই তাদের সাথে আলোচনা না করে, তাদেরকে না জানিয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস! নিজেকে খুব বড় মনে করিস তুই? তোর মাথায় কি একবারও আসেনি, আমরা আমাদের ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে তোকে কি করতে পারি? তুই বে’য়া’দ’ব এটা জানতাম, কিন্তু এতবড় দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন তা জানতামনা৷ আরে নিজের স্বামীর ওপর সব মেয়েরই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, মায়া সবই থাকে। কিন্তু তোর কি এসবের কিছুই নেই! ” আজ আফরোজা নাজনীনের মুখে কিছুই আটকাচ্ছেনা।
” বড়মা, এত হাইপার হয়োনা। শান্ত হও, প্লিজ৷ তুমি দেখ মামার কিচ্ছু হবেনা। আমরা আছিতো। ” তাহমিদ বড়মাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছে।
” ও বাপ, তুই একটু দেখনা, আমার ভাইটার কি হয়েছে। তুই তো ডাক্তারি পড়ছিস, একটু হলেও তো বুঝবি, বল? এরা গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে আমার ভাইকে চিকিৎসা করাচ্ছে। নগেন ডাক্তার চিকিৎসার কি জানে! ”
” আমি দেখছি, বড়মা। তার আগে তুমি একটু শান্ত হও। ”
তাহমিদ ধীরে ধীরে সময় নিয়ে কায়েসকে পর্যবেক্ষন করলো।
” কি হয়েছে, বাপ? কিছু বুঝলি? বড়মাকে, বল কি হয়েছে? ”
” আন্টি, আমাকে মামার ঔষধগুলো দেখাবেন? ” বড়মার কথার উত্তর না দিয়ে, তাহমিদ শিউলির সাথে কথা বলে।
শিউলি ঔষধের বাক্স এনে দেয় তাহমিদের কাছে। তাহমিদ বাক্সটা নিয়ে বারান্দায় আসে৷ আফরোজা নাজনীনও ওর পিছু পিছু আসে। সেই সাথে কুহু আর শিউলিও আসে।
” বড়মা, মামার বুকের হাড় ভেঙেছে। তবে বোঝা যাচ্ছেনা কয়টা ভে’ঙে’ছে। মেডিকেলে নিতে হবে। তা নাহলে ই’ন’ফে’ক’শ’নে’র ভয় আছে। আর এই ঔষধগুলোও উনার জন্য ভুল। ”
তাহমিদের কথা শুনে এবার ভয় পায় শিউলি। ও ভেবেছিল বুকে হয়তো জোরে আ’ঘা’ত লেগেছে, তাই কায়েস বিছানা থেকে উঠতে পারছেনা৷ ও ভাবতেও পারেনি এমন কিছু ঘটতে পারে। মানুষটার যদি কিছু হয়ে যায়! ভাবতেই শিউলির বুক ফে’টে যাচ্ছে। ও মেয়ের সাথ দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এখন স্বামীকে হারিয়ে ও মেয়ের চাওয়া পূরণ করতে পারবেনা।
” বাবা তাহমিদ, তুমি মানুষটারে ঠিক কইরা দেও।
যা যা করন লাগে, তুমি কর৷ ”
আফরোজা নাজনীন তাহমিদের কথা শোনার পর থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন। এ পর্যায়ে তিনি মুখ খোলেন।
” বাপ, আমি ওকে ঢাকায় নিয়ে যাব। তুই ব্যবস্থা কর। আজ রাতেই যেতে চাই। ”
” এ্যাম্বুলেন্স লাগবে, বড়মা। আমি দেখছি, এদিকে কোন এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় কিনা। ”

তাহমিদ অনেক চেষ্টা করেও এই এলাকার কোন এ্যাম্বুলেন্স পায়না। বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফোন করেছে৷ রাতেই একটা এ্যাম্বুলেন্স ফুলতলার পথে রওনা দিবে।
তাহমিদ ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে বাজারে এসে দুইটা ঔষধ নেয় কায়েসের জন্য। আজ রাতের জন্য এই দুইটা ঔষধ কায়েসকে একটু নিরাপদ রাখবে৷

কুহু শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। শিহাব ফুপুর পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে। তাহমিদ ঔষধ এনে কায়েসকে খাইয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর আফরোজা নাজনীন উঠে, ড্রাইভারকে খেতে দেন। তিনি তাহমিদের আনা খাবারগুলোই খেতে দেন। এরপর তিনি তাহমিদ আর শিহাবকে খেতে দেন। সবশেষে তিনি আর কুহু খেয়ে কায়েসের পাশে এসে বসেন। তিনি ভুলে একবারের জন্যও শিউলি আর তার মেয়েকে খেতে ডাকেননি।

তাহমিদকে দক্ষিণের ঘরে থাকতে দেয়া হয়েছে। ওর পাশের রুমে ড্রাইভার শুয়েছে। তাহমিদের চোখে ঘুম নেই। ওর বারবার কুহুর কান্নারত মুখ চোখে ভাসছে।

শিউলি ব্যাগ গোছাচ্ছে। কায়েসের কাপড়চোপড় সহ প্রয়োজনিয় জিনিসপত্র ব্যাগে তুলে দিয়েছে। এরপর ওর নিজের কাপড়চোপড়ের ব্যাগ গোছাতে গেলেই বাঁধা দেন আফরোজা নাজনীন।
” তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিসনা। আমার ভাইকে আমিই নিয়ে যেতে পারব। তার চিকিৎসাও আমিই করাব। এরমধ্যে তোকে কোন প্রয়োজন নেই। ”
” এসব কি কন, আপা! আমার স্বামী আর আমিই যামুনা? ”
” না ছোটমা, তুমি যাবেনা। বাবার জন্য আমি আছি। আমি আমার টাকায় বাবার চিকিৎসা করাব। দাদু আমাকে যা দিয়ে গেছেন, তা দিয়ে বাবার চিকিৎসা করতে অসুবিধা হবেনা। ”
” কুহু, বেশি কথা কইবিনা কইলাম। তুই কথা কওনের কে? ”
” এতদিন চুপ ছিলাম জন্যই তুমি এতটা বেড়েছ৷ আমি বাবার মেয়ে। তার বিষয়ে যেকোনো কথা বলার অধিকার আমার আছে। আজ তোমার জন্যই বাবার এই অবস্থা ভুলে যেওনা। এতদিন বাবাকে হারানোর ভয়ে চুপ থেকেছি। কিন্তু আজ যখন আমি চুপ থেকেও বাবার এমন অবস্থা হল, তখন তুমি কি করে আশা কর আমি আরও চুপ থাকব? তুমি আমার কোমল মন দেখেছ, কিন্তু প্রয়োজনে যে আমি কঠিন হতে পারি, এখন থেকে সেইটা দেখবে। আমার একটাই কথা তুমি যাবেনা। ” কুহুর কথা শুনে শিউলি তব্দা খেয়ে যায়।
ননদ আর সতীনের মেয়ের বিরোধিতায় শিউলির কাপড় গোছানো হয়না। সারারাত আফরোজা, শিউলি আর কুহু মিলে কায়েসের কাছে বসে থাকে। দৃষ্টি দশটার আগেই নিজের ঘরে গিয়ে দরজা দিয়েছে। ও মাঝরাত পর্যন্ত সবুজের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে৷ একটাবারও বাবার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনবোধ করেনা।

ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ঘুম ভাঙ্গে কুহুর। চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে, বুঝতে পারেনি৷ আড়মোড়া ভেঙে উঠে অজু করে নামাজ আদায় করে। এরপর সোজা চলে যায় রান্নাঘরে।

সকাল ছয়টায় ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো তাহমিদের। এ্যাস্বুলেন্সের চালক ফোন দিয়েছে। তাহমিদ ফোন রিসিভ করতেই সে জানায়, ফুলতলা পৌঁছেছে। তাহমিদ লোকেশন জানিয়ে দিয়ে বাইরে আসে৷
আফরোজা নাজনীন উঠানে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছিলেন।
” বড়মা, এ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে। মামাকে তৈরি করে, নিজেরাও তৈরি হও। ”
” তুই ফ্রেশ হয়ে নে, বাপ। গোছানো শেষ। ড্রাইভারকে খেতে দিয়েছি। ফ্রেশ হয়ে তুইও খেয়ে নে। এ্যাম্বুলেন্স আসলে সেই ড্রাইভারকেও খাইয়েই তবে বের হব। ”
” এত সকালে খাবনা বড়মা। তুমি বরং আর সবাইকে খেতে দিও। ”
” কুহু সেই ফজরের নামাজ আদায় করে রান্না করেছে৷ মেয়েটা এত কষ্ট করে রান্না করেছে, আর তুই বলছিস না খেয়েই চলে যাবি! ঢাকা পৌঁছাতে দেরি হবে, এতক্ষণ না খেয়ে থাকবি? ”
তাহমিদ কিছু না বলে ফ্রেশ হতে যায়।

টেবিলে গরম ভাত, বেগুন ভাজা, কৈ মাছ ভাজা, আর ধোঁয়া ওঠা মুরগীর মাংসের ঝোল দেখেই এই সাত সকালে তাহমিদের পেটে ক্ষুধা মোচড় দেয়। অথচ সে একটু আগেই বলেছে খাবেনা। কিন্তু যেই শুনেছে, কুহু রান্না করেছে, তখন আর না করেনি৷
তৃপ্তি সহকারে খেয়ে উঠে তাহমিদ। মনে মনে বলে, বউ আমার দারুণ গুণবতী!

গতরাতে তাহমিদের আনা ঔষধ খেয়ে ব্যথা অনেকটাই কমেছে কায়েসের। ওরা দুই-তিনজন মিলে ধরাধরি করে তাকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলে৷ শিউলিকে রেখেই এ্যাম্বুলেন্সে উঠে কুহু, আফরোজা আর তাহমিদ। ওদের বাড়ির গাড়িতে ব্যাগপত্র পাঠিয়ে দেয়। তাহমিদ রাতেই মেডিকেলে ফোন দিয়ে কেবিন রেডি করতে বলেছে। ওরা পৌঁছানো মাত্রই ভর্তি করানো হবে৷ তাহমিদ ওর স্যারদের সাথে কথা বলেছে।
কুহু বারবার আল্লাহকে ডাকছে।
আফরোজা নাজনীন বোনদের ফোন করতে ব্যস্ত।

চলবে…

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_২৭
জাওয়াদ জামী

শিউলি আক্তার ডুকরে কাঁদছে। সে ভাবতেই পারেনি তার স্বামীর সাথে এমন কিছু হবে। কায়েসের সাথে যেতে পারেনি বলে তার আফসোসের অন্ত নেই।
শিহাব মায়ের থেকে একটু দূরে বসে আছে। ওর চোখেও পানি। মনে একটাই চিন্তা হানা দিচ্ছে, আব্বু সুস্থ হবে তো?

সারাটা রাস্তা কুহু কাঁদতে কাঁদতে যায়। কায়েস ঘুমাচ্ছে। তাহমিদ সকালে কোন একটা ঔষধ দিয়েছিল, যার প্রভাবে ব্যথা কম অনুভব করছে এবং সেই সাথে ঘুমাচ্ছে।

মধ্য দুপুরে ওরা মেডিকেলে পৌঁছায়। তাহমিদ পূর্বেই সব ব্যবস্থা করে রেখেছিল, তাই কায়েসকে ভর্তি করতে কোন ঝামেলা হয়না। ওরা মেডিকেলে পৌঁছানোর খানিক পরেই তাহমিনা আক্তার হাজির হন সেখানে৷
কায়েসকে ভর্তির পর ডক্টর আসলেন। যিনি তাহমিদের শিক্ষক। তিনি সকল পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে জানালেন, বুকের তিনটা হাড় ভেঙে গেছে। গত কয়েকদিন থেকে চিকিৎসার অভাবে সেখানে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে অপারেশন করা প্রয়োজন। তাহমিদ বড়মার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় অপারেশনের। ডাক্টরকে ওদের সিদ্ধান্ত জানালে, তিনি জানান আগামীকাল দুপরেই অপারেশন করবেন।

কুহু বারান্দায় বসে কাঁদছে। ওর পাশে তাহমিনা আক্তার বসে আছে। ফুপু কথা বলছে ডক্টরের সাথে। এমন সময় তাহমিদ সেখানে আসে। কুহুর সামনে এক গ্লাস পানি বাড়িয়ে দেয়। কুহু তাহমিদের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দেয়। ওর তো পিপাসা লাগেনি! তবে তাহমিদ কেন ওকে পানি দিচ্ছে!
” জলদি খেয়ে নাও। এখানে স্যালাইন গুলিয়ে এনেছি। সারাটা রাস্তা যে হারে কেঁদেছ, আমি ভয়ই পেয়েছিলাম। শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে গেছে, না জানি রাস্তায়ই কিছু একটা ঘটে যায়। ভাগ্য ভালো তেমন কিছুই হয়নি। এখন স্যালাইন না খেলে দেখা যাবে, ডিহাইড্রেশন হয়ে বাপ-মেয়ে একসাথে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছ। তারাতারি খেয়ে নাও। তোমার এখন সুস্থ থাকা জরুরি। তাছাড়া যে ত্যা’ড়া মেয়ে তুমি, বাপের সেবা করতে দিলেও, নিজের বিষয়ে আমাকে নাক গলাতে দিবেনা, তা ভালোই জানি। ” তাহমিদের কথা শুনে কুহু বিরাট ঝটকা খায়। এই মানুষটা বলে কি! এর মাথার তার ছেঁ’ড়া নাকি!
” আহ, তাহমিদ কি শুরু করেছিস এসব! এখন মেয়েটার পেছনে না লাগলেই কি নয়? দেখছিস ও এমনিতেই বাবার চিন্তায় অস্থির। তার ওপর তুই ওকে খোঁ’চা’চ্ছি’স? ”
” তুমি আর ওর পক্ষ নিয়ে কথা বলনা মা। এই মেয়ে এমনিতেই যে ত্যা’ড়া, এরপর তোমার সাপোর্ট পেলে ইন্টারন্যাশনাল ত্যা’ড়া কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পাবে। এখন এই স্যালাইনটুকু ওকে খেতে বল৷ আর বেশি চিন্তা করতে নিষেধ কর। ওর বাপের কিছুই হবেনা। এ যাত্রায় তার লাইফের লাইসেন্স রিনিউ হলো। তবে আরে একটা দিন দেরি হলেই টপকে যেত। ”
কুহু যতই তাহমিদের কথা শুনছে ততই ওর মাথা ঘুরাচ্ছে। কি অবলীলায় কঠিন কথাগুলো বলছে, এই অ’স’ভ্য ছেলে।
” আন্টি, তোমার ছেলেকেই তার আনা স্যালাইন খাওয়াও। বকবক তো কম করলোনা। এখন এই স্যালাইন তারই প্রয়োজন। ” কুহু রে’গে একসা।
তাহমিদ ওর রা’গ দেখে হাসছে। এই মেয়ে রা’গ’তেও জানে!
” তাহমিদ, তুই যাবি? তুই কি বলতো? আমি তোকে দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি! ”
” অবাক পরেও হতে পারবে। এখন ওকে এটা খেতে বল। আর সে যদি কথা না শোনে, তবে আমি ওকে জোর করে খাওয়াব বলে দিলাম। ”
তাহমিদের কথা শুনে কুহু আশেপাশে তাকিয়ে দেখল, অনেক লোকজন হাঁটাহাঁটি করছে। এত মানুষজনের সামনে যদি, ওকে সত্যিই জোর করে! এই ভেবেই কুহু তাহমিদের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়েই ঢকঢক করে পান করে গ্লাসের সবটুকু স্যালাইন পানি। এরপর খালি গ্লাস এগিয়ে দেয় তাহমিদের দিকে।
তাহমিদ গ্লাস নিয়ে মুচকি হেসে প্রস্থান করে। কারন ও জানত, ও যদি এভাবে কথা না বলত তবে কুহু কিছুতেই খেতোনা। গতকাল থেকেই মেয়েটা কেঁদেকেটে বুক ভাসাচ্ছে। ওকে দেখেই বোঝা যায়, অনেক দূর্বল হয়ে গেছে।

সন্ধ্যা থেকেই ওদেরকে মেডিকেল থেকে বাসায় যেতে তাড়া দিচ্ছে তাহমিদ। আফরোজা নাজনীন ভাইকে রেখে কিছুতেই যেতে চাচ্ছেননা। আর কুহুও বারবার বলছে, বাবার কাছেই থাকবে
এদিকে সেই সকাল থেকে ওরা না খাওয়া। তাহমিনা আক্তার দুপুরে আসার সময় খাবার আনতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার শ্বাশুড়ির কথায় আনেননি। তিনি বলেছিলেন, ওরা আসছে এরপর কোথায় কোথায় দৌড়াতে হবে। খাবার খাওয়ার সময় পাবেনা। হয়েছেও তাই। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে তারা ঝামেলামুক্ত হন। তাই এখন তাহমিদ ওদের বাসায় পাঠাতে চাচ্ছে। কিন্তু কেউই রাজি নয়।
” বড়মা, তোমরা চলে যাও। আমি আজ রাতে মেডিকেলে থাকব। এমনকি আমাদের ক্লাসের অনেকেই আজ এখানে থাকবে৷ আমরা মামার খেয়াল রাখতে পারব। তুমি বরং বাসায় গিয়ে রেষ্ট নাও। অনেক ধকল গেছে তোমার ওপর। কাল সকালে আবার আসবে। আমি আর একটা কথাও শুনতে চাইনা। তোমরা এখনই যাবে। ”
” বাপ, ওর যদি কিছু প্রয়োজন হয়, কিংবা ক্ষুধা লাগে। তখন ওকে কে দেখবে? আমি বরং থাকি। কুহু আর তাহমিনা বাসায় যাক। ”
” না ফুপু, আমিও তোমার সাথে থাকব। বাবাকে এভাবে রেখে আমি যাবনা। ”
” এই মেয়ে, তুমি শুনতে পাওনি আমি কি বলেছি? তোমরা কেউই এখানে থাকতে পারবেনা। আমি এখানে থাকব, বুঝেছ? তাছাড়া কাল তোমার ক্লাস নেই? কোচিং নেই? তুমি ক্লাস করে এখানে আসবে এবং কোচিংয়ের আগেই ফিরে যাবে। আমার কথার ওপর যদি আর কিছু বলেছ, তবে ঠাঁ’টি’য়ে একটা দিব। বড়মা তোমরা বাসায় যাও। আর একটা কথা বলবেনা। ”
তাহমিদ রেগে গেছে বুঝতে পেরে আফরোজা নাজনীন আর কিছুই বলেননা। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, নার্সদের কাছে তাকে দেখতে বলে বেরিয়ে আসেন কেবিন থেকে।
” মা, ওকে দেখে রেখ। বাসায় নিয়ে যেয়ে খাইয়ে দিও। ও সকাল থেকেই না খেয়ে আছে। ”
” আমি জানি বাসায় যাওয়ার পর কি করতে হবে। কত দ্বায়িত্ববান হয়ে গেছে আমার ছেলে! যে ছেলে কখনো মা খেয়েছে কিনা তা জিজ্ঞেস করেনি! আর আজ সেই ছেলেই আরেকজনের কথা ভাবছে! ” মুচকি হেসে বললেন তাহমিনা।
” প্লিজ মা, তুমি অন্তত এভাবে বলোনা। আমরা ছাড়া ওর কে আছে। ওর ভালোমন্দ আমাদেরই দেখতে হবে। ”
” হয়েছে, হয়েছে। একটু আগেই যে ধমকটা দিলি, এরপর ওকে পাওয়ার আশা বাদ দে। এমন ভাবে কথা বলিস, যেন মুখে নিমপাতার রস লেগে আছে। একটু ভালো করে কথা বলতে পারিসনা? এমনিতেই মেয়েটা চিন্তায় পা’গ’ল হয়ে আছে। এরমধ্যে তুই শুধু ওকে ধ’ম’কা’স। আচ্ছা শোন, বাসায় যাবিনা? তুই কি খাবিনা? সকাল থেকেই এভাবে আছিস, ফ্রেশ হতে হবেনা? তুইও বাসায় চল। গোসল সেরে, খেয়েদেয়ে আবার আসবি। ”
” স্যারকে না বলে আমি যেতে পারবনা, মা। আচ্ছা তুমি একটু অপেক্ষা কর, আমি বড়মাকে ডাকছি। স্যারের সাথে কথা বলে দেখছি উনি কি বলেন। ”
তাহমিদ ফোন করে বড়মার কাছে। তিনি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাহমিনার। তাহমিদে ওর বড়মাকে একটু অপেক্ষা করতে বলে। এরপর সোজা যায় স্যারের কাছে। তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মা, বড়মা আর কুহুকে নিয়ে বাসায় আসে।
বাসায় এসে যে যার রুমে যায়। কুহু আসে সিক্তান রুমে। সিক্তার কাছ থেকে একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে।
গোসল সেরে ওরা নিচে আসে। তাহমিনা আক্তার খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছেন। তাহমিদ, কুহু আর আফরোজা নাজনীন একসাথে খেতে বসে। খাওয়া শেষে তাহমিদ বেরিয়ে যায় মেডিকেলের উদ্দেশ্যে।

শরীর ক্লান্ত থাকায় কুহু শোওয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পরে। আফরোজা নাজনীনেরও একই অবস্থা। আজ তিনি কুহুকে নিজের সাথে রেখেছেন। সানাউল রাশেদিন দেশের বাইরে গেছেন কিছুদিনের জন্য।

সকালে খাবার খেয়েই আফরোজা নাজনীন মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার সাথে কুহুও আছে।
কুহুকে মেডিকেলে দেখা মাত্রই তাহমিদের মাথা গ’র’ম হয়ে যায়। এই মেয়েকে সে ক্লাস শেষে আসতে বলেছিল, আর সে কিনা সকালেই এসে হাজির। ওর ইচ্ছে করছে কুহুকে আচ্ছামত ধো’লা’ই করতে। কিন্তু বড়মা থাকায় কিছু বলতে পারছেনা।
কায়েসের বুকের ব্যথা আগের থেকে কম। কিন্তু তিনি ভালোমত কথা বলতে পারছেননা। আফরোজা নাজনীন ভাইয়ের পাশে বসে আছেন।
ডক্টর এসে চেক-আপ করছেন। একটা নার্স কুহু আর আফরোজা নাজনীনকে বাইরে যেতে বললে তারা বাইরে এসে দাঁড়ায়। এমন সময় শিউলির নম্বর থেকে ফোন আসে আফরোজা নাজনীনের ফোনে। তিনি ফোন রিসিভ করে একটু ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ান ।

” তুমি একা দাঁড়িয়ে আছ কেন? বড়মা কোথায়? ” তাহমিদ জিজ্ঞেস করল কুহুকে।
” ফুপু ফোনে কথা বলছে। ”
” তোমাকে সকালে এখানে আসতে নিষেধ করেছিলাম। ক্লাস করে আসতে পারতে। ”
” বাবাকে এ অবস্থায় রেখে ক্লাসে মন বসবেনা। ”
” পরীক্ষার আর বেশি দেরি নেই। তুমি এখানে থাকলেও কিন্তু কোন লাভ নেই। আর ক্ষতিটাও তোমারই হচ্ছে। আমি মামার খেয়াল রাখতে পারব। আর নার্সদেরও বলে দিয়েছি। তারা তাদের সাধ্যমত মামার খেয়াল রাখবে। তুমি ক্লাস আর কোচিং মিস দিওনা। এখান থেকে সোজা হোস্টেলে যাবে। তোমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাসায় যাবে। সেখান থেকেই ক্লাস কর। আমি বড়মাকে বলে দিব। ” তাহমিদের কথার মাঝে অধিকারবোধ দেখে অবাক হয় কুহু।
এই মানুষটার মন বোঝা দায়। এই রা’গ তো এই স্বাভাবিক।
” আমি হোস্টেল থেকেই যাতায়াত করতে পারব। ” কুহুর বলতে দেরি, কিন্তু তাহমিদের রা’গ’তে দেরি হয়না।
” আবার ত্যা’ড়া’মি করছে দেখ! এই মেয়ে, তোমার কি ত্যা’ড়া লগ্নে জন্ম? নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছ, আমি যা বলব তার বিপরীতে যাবে তুমি? হোস্টেল থেকে যখনতখন বের হতে দিবে তোমাকে! নাকি সাহস খুব বেশি বেড়েছে? শুধু তুমি বলে আমি তোমার সব ত্যা’ড়া’মি সহ্য করছি। অন্য কেউ হলে, তার গাল লাল করে দিতাম। ”
” আপনি এভাবে রিয়্যাক্ট করছেন কেন! অন্য কারও সাথে তো এমনভাবে রা’গে’ন’না। শুধু আমার সাথেই রা’গ করেন কেন? ”
” আল্লাহ, আমাকে উল্টো প্রশ্ন করছে! মুখে মুখে কথাও বলছে আবার! এখন দেখছি আগেই ভালো ছিল এই মেয়ে। ”
” আমি আগে কিংবা এখন সবসময়ই ভালো ছিলাম, আছি, থাকব। ” সাহস করে বলে ফেলে কুহু।
” মাফ কর আমাকে। তোমার যা ইচ্ছে তাই কর। ” দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলে তাহমিদ। আর দুপদাপ পা ফেলে কোথাও চলে যায়।
কুহু নিজের আচরণে নিজেই অবাক হয়ে গেছে। ও কিভাবে তাহমিদের মুখের ওপর কথা বলল! এত সাহস হয়েছে ওর!

বিঃদ্রঃ গত কয়েকদিন থেকে হাসবেন্ড ভিষণ অসুস্থ। তাকে সময় দিতে যেয়ে, লিখার সময় পাচ্ছিনা। এবং পার্টগুলোও ছোট হচ্ছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমি সকলের নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।

চলবে…