#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৩১
জাওয়াদ জামী
আফরোজা নাজনীন খাবার টেবিলে সানাউল রাশেদিনকে জানান, কুহুর বিয়ের বিষয়ে। মেডিকেলে থাকতে শাহনাজ যা যা বলেছিল তার সবটাই বলেন। সানাউল রাশেদিন ছেলের ডিটেইলস জানতে চান। তখন আফরোজা নাজনীন জানান, ছেলে একটা প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে কিছুদিন হল। পাশাপাশি বিসিএস দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ছেলেরা এক ভাই, এক বোন। বোন বড় এবং সে ব্যাংকার। ছেলের বাবাও ব্যাংকার। এবং এও জানায় তারা অতি দ্রুতই কনেপক্ষের সিদ্ধান্ত জানতে চায়।
সানাউল রাশেদিন সব শুনে বললেন, ” আগে কুহুর থেকে তার মতামত জানতে চাও। এরপর কায়েসের সাথে কথা বল। তারপর আমরা সব খোঁজ খবর নিয়ে সামনে এগোব। ”
তাহমিনা আক্তার কুহুর বিয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। তিনি একনজর তাহমিদের দিকে তাকান। তাহমিদ একমনে খেয়ে চলেছে। তবে তার চোখের কোনে জমে থাকা পানি, তাহমিনার দৃষ্টি এড়ায়নি।
আজ তিনি বুঝতে পারলেন কিছুদিন যাবৎ তাহমিদের মনমরা হয়ে থাকার কারন।
রাতে সবাই যখন যার যার রুমে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন তাহমিনা বড় জায়ের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।
” বড় ভাবি, ঘুমিয়ে পরেছেন? ”
” কে? তাহমিনা, আয় ভেতরে আয়। এখনো ঘুমাইনি তবে ঘুমের প্রস্তুতি চলছে। ”
তাহমিনা ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করে।
” আপনাদের সাথে কিছু কথা বলতে এসেছিলাম। ” তাহমিনা ইতস্ততভাবে বলে উঠেন।
” এত সংকোচ করছিস কেন! কথা থাকলে বলবি। তার আগে বস। ”
” কি ব্যাপার তাহমিনা, কোন সমস্যা হয়েছে? তোমাকে এমন লাগছে কেন? ” সানাউল রাশেদিন জহুরির চোখে দেখছেন ছোট ভাইয়ের বউকে। তিনি তাহমিনাকে দেখেই বুঝতে পেরেছেন, কিছু একটা হয়েছে।
” বড় ভাই, একটু সমস্যাই দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিভাবে আপনাদের বলব, সেটা বুঝতে পারছিনা। ”
” আমাদের কাছে অন্তত কোন ভনিতা করোনা। তোমার যা বলার নিঃসংকোচে বল। ” পুনরায় বললেন সানাউল রাশেদিন।
” বড় ভাই, আপনাদের কাছে আমি কিছু চাই। দয়া করে আমাকে ফিরিয়ে দিবেননা। ভাবি আপনার কাছে অনুরোধ, আপনি আপনার ছেলের দিকটা একটু ভাববেন। ”
” কি হয়েছে তাহমিনা! তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? এত না ঘুরিয়ে যা বলার সোজাসোজি বল। আর আমার ছেলের বিষয়ে যে-কোন সিদ্ধান্ত নিতে, কখনোই কোন দ্বিধা কাজ করেনা নিজের মাঝে। তার ভালোর জন্য যা করা প্রয়োজন, আমার জীবন দিয়ে হলেও সেটাই করব। ”
আফরোজা নাজনীনের কথায় একটু ভরসা পান তাহমিনা।
” বড় ভাই, ভাবি, আপনারা জানেন কুহুকে নিয়ে সেই ঘটনার পর থেকে তাহমিদ বেশ আপসেট ছিল। দিনের পর দিন ও মনোকষ্টে ভুগেছে। ও একটা সময় নিজের ভুল বুঝতে পারে। এরপর একটা সময় অনুধাবন করে, সেইদিনের সিদ্ধান্ত তার ভুল ছিল। কুহুকে ওর জীবনে প্রয়োজন। নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়া করে বুঝতে পেরেছে, ও কুহুকে ভালোবাসে। কুহুকে ছাড়া ওর চলবেনা। কিন্তু ও বড়মাকে ভয় পাচ্ছে। বড়মা সব শোনার পর যদি রাজি না হয়। ” তাকমিনার কথাগুলো শোনার পর আফরোজা নাজনীনের মত সানাউল রাশেদিনও যেন আকাশ থেকে পরলেন।
সানাউল রাশেদিন ভাবছেন, ভালোই যদি বাসবে তবে সেদিন কেন এত ভাব নিয়েছিল! ছেলেটা যে আস্ত তার ছেঁ’ড়া তা তিনি মনে মনে ভেবে নেন। তবে স্ত্রীর সামনে আপাতত তার প্রানপ্রিয় ছেলের সম্পর্কে কিছু বলার সাহস নেই।
” কি বলছিস এসব, তাহমিনা! এটাও কি সত্যি! তাহমিদ কুহুকে পছন্দ করে! আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা কিছুতেই। ”
” একশো ভাগ সত্যি, ভাবি। আপনারা যেদিন মেডিকেলে বিয়ের বিষয়ে কথা বলেন, সেদিন আপনাদের আশেপাশে কি ও ছিল? ”
আফরোজা নাজনীন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ান।
” আমি হিসেব করে দেখলাম সেদিনের পর থেকেই আমার ছেলেটা কেমন মনমরা হয়ে গেছে। দিনের পর দিন অনিয়ম করছে। ঠিকমত খাচ্ছেনা। অকারণে রাত জাগছে। আমি অনেক জিজ্ঞেস করেছি, কিন্তু ও কোন উত্তর দেয়নি। ”
” আমিও বেশ কিছুদিন থেকেই লক্ষ্য করেছি, ছেলেটা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। আমিও জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। তার আগে তুই এটা বল, কেমন করে জানলি তাহমিদ কুহুকে পছন্দ করে? ”
” ও আমার কাছে নিজের মুখে স্বীকার করেছে। এ-ও বলেছে, ও কুহুকে বিয়ে করতে চায়। ওর একটাই চাওয়া ছিল, সব যেন আগের মত হয়ে যায়। কুহু আবার এই বাসায় আসুক। কুহুকে আমারও ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ, তাই আমিও ওকে ভরসা দিয়েছি। ”
” ঐ আহাম্মকটাকে এক্ষুনি এখানো ডাকো তাহমিনা। আজ ওর পিঠের ছা’ল তুলব আমি। কোথায় সে বড় মাপের ডক্টর হবে, তা না করে প্রেম প্রেম খেলছে! যখন বিয়ের কথা বলেছিলাম, তখন নবাবজাদার কি তে’জ! ” সানাউল রাশেদিন রা’গে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়েছেন।
তাহমিনা নীরবে উঠে আসেন। ছেলের রুমে এসে, ওকে বড়মার ঘরে যেতে বলেন।
” শোন, তুমি আমার ছেলেকে অন্যায় কিছু বলতে পারবেনা। ভালো কোন কথা থাকলে বলবে, না থাকলে চুপ করে বসে থাকবে। ” আফরোজা নাজনীন স্বামীর ওপর ফুঁ’সে ওঠেন।
স্ত্রীর এহেন আচরণে তিনি চুপসে যান।
তাহমিদ নিচে বড়মার রুমে আসছে আর ভাবছে, হঠাৎ তাকে ডাকছে কেন! ওর পিছুপিছু যে তাহমিনাও আসছে তা একদমই খেয়াল করেনা৷
” বড়মা, আসব? ”
” এসো নবাবজাদা, এসো। তোমাকে সুস্বাগত। এসে বড়ই উদ্ধার করলে আমাকে। ” খোঁচা মারার সুযোগ হাতছাড়া করেননা সানাউল রাশেদিন।
” বড়মা, সিনিয়র ভদ্রলোককে দয়া করে চুপ থাকতে বল। আমার এখন তার কোন কথা শোনার মুড নেই। ”
” তোমার সব মুডতো অন্য জায়গায় আটকে গেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমার কথা শুনতে ভালো লাগবেনা। ”
” বড়মা, তুমি কি কিছু বলবে? না আমি চলে যাব? ”
” তুই বস, বাপ। তোর সাথে কিছু কথা আছে। ”
তাহমিদ বড়মার কাছে বসে। তাহমিনা দরজার পাশে দাঁড়ানো।
” তাহমিনা, তুই দাঁড়িয়ে থাকলি কেন? তুই ও বস। ”
তাহমিনা আক্তার ডিভানে বসে।
” বাপ, তুই আমার কতখানি জুড়ে আছিস, তা আমার থেকে বেশি কেউ জানেনা। তোর সুখে যেমন আমি সুখী হই, তেমনি তোর দুঃখে, কষ্টে আমিও কাঁদি। তুই আমার কাছে কিছু চাইবি, কিন্তু আমি তা কখনো তোকে দিবনা এটা হতেই পারেনা। প্রয়োজনে আমার কলিজা কে’টে তোকে আমি দিতে পারি৷ তোর কি আমার কাছে কিছু চাওয়ার আছে? থাকলে এখনই সময়, তুই নিঃসংকোচে চেয়ে নে। সেটা হোক যেকোনো কিছু৷ ” আফরোজা নাজনীন তাহমিদের মুখে শুনতে চাচ্ছেন। তিনি চাইছেন যদি তাহমিদ কুহুকে ভালোবাসে, তবে সে নিজ মুখে বলুক।
তাহমিদ বড়মার কথা শুনে দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেছে। ও কি চাইবে বড়মার কাছে! ওর চাওয়া তো একটাই। সেটা শুধুই কুহু। তাই সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। কি করবে এখন। আবার এটাই প্রকৃত সময় তার মনের কথা বলার। ওর আজকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে কুহুকে পাওয়া না পাওয়া। বেশ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে অনেককিছুই ভাবে তাহমিদ।
এদিকে ছয়জোড়া চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে, এটা ভালোভাবেই অনুভব করতে পারছে।
মাথা নিচু করে রেখেই কথা বলে তাহমিদ,
” বড়মা, সারাজীবন তুমি আমাকে যা দিয়েছ, এরপর আর কিছুই চাইবার থাকেনা। কিন্তু সব সময় পরিস্থিতি আমাদের হাতে থাকেনা৷ যার ফলে কিছু না চাওয়ার থাকলেও, কোথাও না কোথাও কিছু না পাওয়া থেকেই যায়। আর আমার এই পাওয়া কিছু হলো কুহু। তোমার কাছে আমি শুধু ওকেই চাই। ওকে পেলেই আমার সকল পাওয়ার পথ পূর্ণ হবে। ”
আফরোজা নাজনীন মৃদু হেসে বলেন,
” তুই ভেবেচিন্তে এসব বলছিস, বাপ? পরে তো আবার আফসোস করবিনা ? ”
” না বড়মা, আমার আফসোস থাকবে কুহুকে না পেলে। আমার সকল স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া শুধুই তাকে ঘিরে। ”
” তাহমিনা, তুই আজকের ঘটনার স্বাক্ষী থাকলি কিন্তু। এই যে সিনিয়র রাশেদিন, তুমিও স্বাক্ষী থেকো। এখন রুমে যা, বাপ। পড়তে বস গিয়ে৷ ”
” বাহ্, চমৎকার! এখানে যে যার মতামত প্রদান করল, তখন আমাকে লাগলনা! কিন্তু স্বাক্ষীর বেলায় এই রাশেদিনকেই দরকার! সব স্বা’র্থ’প’রে’র দল৷ সানাউল রাশেদিন কিছুক্ষণ গজগজ করে বারান্দায় চলে যান।
তাহমিদ বড়মার কথামত রুমে চলে আসে। তবে ও বড়মার কথা শুনে যা বোঝার বুঝে নেয়।
” তাহমিনা, আমি কালকেই কুহুর সাথে কথা বলব। ও রাজি থাকলে আমি দেরি করবনা। সব ব্যবস্থা তারাতারি করতে বলব তাহমিদে বাবা-চাচাকে। ”
তাহমিনাও বড় জায়ের সিদ্ধান্তে খুব খুশি হন।
পরদিন সকালেই আফরোজা নাজনীন কুহুকে ফোন করেন। কোচিং শেষ করেই তিনি কুহুকে এই বাসায় আসতে বলেন। তিনি জানান তাহমিদ মেডিকেল থেকে ফেরার পথে ওকে নিয়ে আসবে। কুহু ফুপুর কথায় রাজি হয়।
আফরোজা নাজনীন তাহমিদকে বলে দেন কুহুকে আনার জন্য।
তাহমিদ ক্লাস শেষ করে কুহুর হোস্টেলের সামনে এসে দাঁড়ায়। আজ সে সিএনজি করে এসেছে।
হোস্টেলের সামনে এসে তাহমিদ ফোন করে কুহুকে। তাহমিদের ফোন পেয়েই হোস্টেল থেকে বেরিয়ে আসে কুহু। ও বুঝতে পারে তাহমিদ বাইরে অপেক্ষা করছে, তাই ফোন রিসিভ না করেই বের হয়। এদিকে তাহমিদ পরপর দুইবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু কুহু রিসিভ করেনি। বিরক্ত হয়ে তৃতীয়বার ফোন দিতেই, কুহুকে দেখল গেইট পার হতে। তাহমিদ ফোন কেটে সিএনজির খোঁজে চারপাশে তাকায়। সামনে একটা সিএনজি দেখে সেদিকে এগিয়ে যায়। কুহুও তাহমিদকে দেখতে পেয়ে সেদিকে যায়।
তাহমিদ সিএনজি ভাড়া করে কুহুর দিকে তাকালে, কুহু একটু জোরে হেঁটে যায়। কুহুকে পেছনে বসতে বলে, নিজে সামনে বসে। তাহমিদের এহেন আচরণে কুহু অবাক হয়ে যায়। সেদিনের পর থেকে মানুষটা আর ওর সাথে কথা বলেনা। সব সময়ই এড়িয়ে চলে। কুহু বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথার অস্তিত্ব টের পায়। সে-ও বুঝলনা কুহুর কষ্ট! তবে কিসের ভালোবাসা তার!
বাসার গেইটের সামনে এসে সিএনজি দাঁড়ালে তাহমিদ ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সোজা ভেতরে ঢুকে যায়। একটাবারও কুহুর দিকে তাকায়না। কুহু ধীরেসুস্থে ভেতরে প্রবেশ করে। ততক্ষণে তাহমিদ বাসার ভেতরে ঢুকে গেছে। কুহুও ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করলে আশেপাশে তাহমিদের অস্তিত্ব দেখলনা।
কুহুকে দেখে তাহমিনা আক্তার হাসিমুখে এগিয়ে আসেন। জড়িয়ে ধরেন বুকে৷ কুহুও তাকে সালাম জানায়। তিনি হাসিমুখে উত্তর দেন।
আফরোজা নাজনীন ভাইয়ের মেয়েকে দেখে হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকেন।
কুহু ফুপুর কাছে গিয়ে সালাম দেয়। তিনি উত্তর নেন।
রাতে খাবার পর আফরোজা নাজনীন কুহুকে নিজের রুমে ডাকেন। কুহু ফুপুর রুমে এসে দেখল, ফুপা অফিসের কাজ করছে। আর ফুপু তার পাশে বসে আছে।
কুহু ভেতরে আসলে ওকে নিজের কাছে বসান আফরোজা নাজনীন।
” তোকে কয়েকটা কথা বলব, সোনা মা। তুই নির্দ্বিধায় তোর মতামত জানাবি। আমি তোকে কোনরকম জোর করবনা। ”
” কি কথা ফুপু! ”
” আমরা চাই তুই ভালো থাক। আমাদের বয়স হয়েছে, কখন কি হয়ে যায় তা বলতে পারিনা। তাই চাইছি তোর একটা স্থায়ী ঠিকানা দিতে। তাই আমরা সুস্থ থাকতে থাকেই তোর বিয়ের কথা চিন্তা করছি। বিয়ের পর তোর পড়ার সুযোগ থাকবে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত যোগ্য হবি। সে ব্যবস্থা আমরা করব। এতে কি তোর মত আছে? ”
” তোমরা যা বলবে তাই হবে। ” কুহুর বুক ফে’টে যাচ্ছে। সময় এসেছে তাহমিদের থেকে দূরে যাওয়ার।
” আমি তোর মতামত জানতে চেয়েছি। তুই কি চাইছিস? ”
” আমি আগে পড়াশোনা শেষ করতে চাই, ফুপু। ” কুহু সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছেড়ে জবাব দেয়।
” তোর ইচ্ছার সাথে আমিও একমত। কিন্তু যদি এখন বিয়ে ঠিক করে রাখতে চাই? তোর পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে হবে, এক্ষেত্রে তুই কি বলিস? ”
কুহু বুঝতে পারছে ফুপু বিয়ের বিষয় নিয়ে সিরিয়াস। সে নিজেও চিন্তা করে দেখল, যদি বিয়ে ঠিক হয়ে থাকে এতে অসুবিধা নেই। পড়াশোনা শেষ করেই নাহয় বিয়েটা করল।
কুহু মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।
” তাহমিদকে পাত্র হিসেবে তোর কাছে কেমন মনে হয়? ” ফুপুর প্রশ্ন শুনে কুহুর দম বন্ধ হয়ে আসে। মুহুর্তের মাঝেই মনে হচ্ছে কলিজা মুখের ভেতর চলে এসেছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। কোন কথা আসছেনা তার ঠোঁটের আগায়।
” সোনা মা, কথা বলছিসনা কেন! তোর কি তাহমিদকে পছন্দ নয়? তুই না চাইলে, আমি ওকে না করে দিব। ”
কুহু বুঝে নেয় তাহমিদ বাসায় সব জানিয়েছে। কিন্তু ও কিভাবে ফুপুকে হ্যাঁ বলবে!
” মাগো, আমরা সব সময়ই চেয়েছি তুমি এই বাড়িতে বউ হয়ে এস। সেই মত প্রথমবার এগিয়েছিলাম। দূর্ভাগ্যবশত সেদিন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। কিন্তু এবার সেই দূর্ভাগ্যই নিজে তোমাকে চেয়েছে। তাই আমরাও আর না করতে পারিনি। এবার শুধু তোমার মতামত নেয়া বাকি। ” কুহুকে চুপ করে থাকতে দেখে মুখ খোলেন সানাউল রাশেদিন।
ফুপার কথা শুনে কুহুর ভিষণ হাসি পায়। তাহমিদকে ফুপা দূর্ভাগ্য বলছে!
” সোনা মা, তোকে আমরা জোর করবনা। তুই শুধু হ্যাঁ অথবা না বল। ”
অনেকক্ষণ চুপচাপ থেকে কুহু ছোট্ট করে উত্তর দেয়, ” হুম। ”
ব্যাস আফরোজা নাজনীন বুঝে যান। তিনি কুহুকে জড়িয়ে ধরে কপালে পরম মমতায় চুম্বন করেন।
চলবে..
#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৩২
জাওয়াদ জামী
কুহু সিক্তার রুমে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়।
” কুহু রে, তুই আজকাল আমাকে পর করে দিয়েছিস ! কতশত গোপন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, কিন্তু আমাকে জানাস না। এই দুঃখ কোথায় রাখি। ” সিক্তা কুহুকে দেখা মাত্রই ন্যাকা কান্না শুরু করেছে।
এদিকে কুহু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সিক্তার পানে চেয়ে আছে। ও সিক্তার কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারছেনা।
” কি বলছিস! কিসের গোপন ঘটনা! আমি বুঝতে পারছিনা সিক্ত, ইট্টু খুলে বল। ” কুহু সব সময়ই সিক্তাকে সিক্ত ডাকে।
” তোকে যে তাহমিদ ভাইয়া পছন্দ করে তা একটিবারও আমাকে জানাসনি! আবার তোকে নাকি বিয়েও করতে চেয়েছে, তাও আবার আব্বুর সামনে কনফেস করেছে! এটা ভাবা যায়!
সকালে আম্মু যখন দিদুনকে এসব জানাল, তখন দিদুন বলল, সে-ও সব জানে। সবাই সব কিছু জানে, শুধু আমি ছাড়া! এভাবে আমাকে হিট দিতে পারলি? ”
সিক্তার কথা শুনে কুহুর মাথা ঘুরছে। বাড়িসুদ্ধ সবাই এই কথা জেনে গেছে!
” দেখ সিক্ত, আমি এসবের কিছুই জানিনা। অযথা আমাকে খোঁ’চা’বি’না। ” ইচ্ছে করেই কুহু, বিষয়টা গোপন করে। সিক্তা সবটা জানলে কুহুকে খে’পি’য়ে মা’র’বে।
” বুঝি, সব বুঝি। বিয়ে না হতেই, আমি পর হয়ে গেছি। বিয়ের পর দেখা যাবে, আমাকে চিনবিইনা। ” সিক্তা মুখ বেঁকিয়ে বলে।
কুহু কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
তাহমিদের ঘুম আসছেনা। বড়মার সাথে কুহুর কি কথা হল, তা জানতে অস্থির হয়ে আছে। কুহু কি রাজি হয়েছে? যে ত্যা’ড়া মেয়ে ও। ও যে কি করবে তা বোধগম্য নয় তাহমিদের। সারারাত বিছানায় উথালপাতাল করছে তাহমিদ। পুরো রাত নির্ঘুম কাটায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আফরোজা নাজনীন নামাজ আদায় করে, সোজা রান্নাঘরে আসেন। একটু পর তাহমিনা আক্তারও আসেন। তাহমিনা আক্তার উসখুস করছেন। তিনি কুহুর মতামত কি তা জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন।
” তাহমিনা, এবার আর আমাদের নতুন সম্পর্কে জড়াতে কোন বাঁধা রইলনা। তোর ছোট বউমা অবশেষে পেয়েই গেলি। তবে ভালো করে শুনে রাখ, দ’জ্জা’ল শ্বাশুড়ির পার্ট কিন্তু করতে পারবিনা। আমার ভাইঝি বড্ড বোকা। পাহাড়সম দুঃখ মুখ বুজে সইবে, তবুও মুখ ফুটে কিছু বলবেনা। ”
আফরোজা নাজনীনের কথা শুনে তাহমিনা আক্তার বুঝে নেন কুহু রাজি হয়েছে। তিনি অতি উত্তেজনা বশত তার বড় জা’কে জড়িয়ে ধরেন।
” ভাবি, আমি পৃথিবীর সেরা শ্বাশুড়ি হয়ে দেখাব। কুহু মাকে, কোন অভিযোগের সুযোগই দিবনা। ধন্যবাদ ভাবি, আমার কথা রাখবার জন্য। ”
” ধন্যবাদ দিচ্ছিস কেন! আর আমি তোর সাথে মজা করলাম। আর তুই সিরিয়াসভাবে নিলি! আমি খুব ভালোভাবেই জানি, তুই শ্বাশুড়ি হিসেবে কেমন। ”
” ভাবি, আমি একটু আসছি। বেশি দেরি হবেনা। ” কথাটা বলা মাত্রই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাহমিনা।
তাহমিদ বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়ছিল। তবে বই শুধু মুখের সামনে ধরেই আছে। পড়ায় মনযোগ দিতে পারছেনা। এমন সময় হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢোকেন তাহমিনা আক্তার।
” বাবু, তুই উঠেছিস? একটা খুশির খবর আছে। এবার মা’কে পর করে দেয়ার সময় তোর এসেছে। বড় ছেলে বিয়ে করেই তার মা’কে পর করে দিয়েছে। এবার ছোট ছেলের পালা। ” হাসিমুখে বলেন তাহমিনা। তবে তার মুখে হাসি থাকলেও, বড় ছেলের এরূপ পর হওয়ার তীব্র য’ন্ত্র’ণা তাকে কুঁ’ড়ে কুঁ’ড়ে খায়।
তাহমিদ মায়ের কথা শুনে উঠে বসে। ততক্ষণে তাহমিনা তার ছেলের পাশে বসেছেন।
” শোন মা, দুনিয়ায় ধ্বং’স’য’জ্ঞ বাঁধলেও, আমি তোমার ছেলে আর তুমি আমার মা’ই থাকবে। পর হয়ে যাওয়ার মত সন্তান তুমি জন্ম দাওনি। আর সন্তানকে সেভাবে মানুষও করনি। তাই তোমার ছোট ছেলেকে হারানোর ভয় তুমি করোনা। ” কথাটা বলেই পরক্ষণেই তাহমিদ ওর মায়ের পুরো কথার মর্মার্থ উদঘাটন করে। তারপরও জিজ্ঞাসু নয়নে মায়ের দিকে তাকায়।
তাহমিনা আক্তারও ছেলের দৃষ্টি বুঝতে পেরে জবাব দেন, ” কুহু রাজি হয়েছে। এবার শুধু ভালো দিনক্ষণ দেখে সব ঠিক করার পালা। তার আগে তোর বাবার সাথে কথা বলতে হবে। তার ছেলের এত আনন্দের দিনে, বাবা হয়ে সে পাশে থাকতে পারছেনা। ”
তাহমিদ মা’কে জড়িয়ে ধরেছে।
” শোন মা, আজ যা বলার বলেছ, কিন্তু ভবিষ্যতে কখনোই এমন কথা বলবেনা। তোমার ছোট ছেলে তার মা’কে যেমন সম্মান দিতে জানে, তেমনি একজন মায়ের তার সন্তানের প্রতি কি কি অধিকার, তাও তার জানা আছে। আবার স্ত্রীর ওপর সকল দ্বায়িত্ব-কর্তব্য পালনের সকল নিয়ম সম্পর্কে সে সচেতন। একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের স্থান এব স্ত্রীর স্থান সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ অবগত। তাই এই স্থান গুলিয়ে ফেলার কোন সম্ভাবনাই তোমার ছেলের নেই। ”
ছেলের কথা শুনে হাসেন তাহমিনা আক্তার। তিনি ভালোই তার ছেলেকে জানেন। আর কুহু সে-তো নরম কাদামাটি। ওকে যেভাবে গড়ে তোলা হবে, ও সেভাবেই গড়ে উঠবে। সম্পর্কের মূল্যায়ন করতে জানে এই মেয়ে।
” মা, সেই মেয়ে এখন কোথায়? আজকাল তার ভিষণ অহমিকা হয়েছে। ”
” ওর একটুও অহমিকা নেই বুঝলি। ও বরাবরই চুপচাপ ধরনের। আজ ও সিক্তার রুমে আছে। এবার উঠে ফ্রেশ হয়ে নে। এখন আমি যাই। তোর বড়মা একাই রান্নাঘর সামলাচ্ছ। ” তাহমিনা আক্তার রুম থেকে বেরিয়ে আসেন।
তাহমিদ মায়ের কথা না শুনে পুনরায় বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয়। ওর ভিষণ ঘুম পাচ্ছে। সারারাতের ঘুমেরা এখন চোখের পাতায় চেপে বসেছে। আর মায়ের মুখে আনন্দের খবর শুনেই সকল টেনশন নিমেষেই উবে গেছে। তাই ঘুমেরা রাজত্ব করছে চোখের পাতায়। আর ঠোঁটে মেখে রয় হাসির রেশ।
চোখ বন্ধ করে সটান হয়ে শুয়ে থাকে তাহমিদ। এক সময় ঘুমিয়েও যায়। কিন্তু তখনও ঠোঁটের কোনে লেগে আছে প্রশান্তির হাসি।
কুহু ঘুম থেকে উঠে দেখল সিক্তা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ঘড়ির দিকে চোখ পরতেই দেখল নয়টা বেজে গেছে। ফজরের নামাজ আদায় করে, আবার বিছানায় গড়াগড়ি দিতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। ঝটপট করে বিছানা ছাড়ে কুহু। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে।
ওর বেশ লজ্জা লাগছে। সবার সাথে কথা বলবে কেমন করে, ভাবতেই লজ্জা পাচ্ছে। গতকাল অব্দি ও এই বাসায় আফরোজা নাজনীনের ভাইঝি হিসেবে সমাদৃত হত। কিন্তু আজ থেকে আরেকটা সম্পর্কের অধিকারবলে এই বাসায় সমাদৃত হবে। কতইনা বিচিত্র এই জীবন! ও কি ভাবতে পেরেছিল, সেদিন বিয়ে করতে অস্বীকার করার পর আবারও সেই মানুষটাই ওকে বিয়ে করতে উদগ্রীব হয়ে যাবে!
” এইযে, ছোট নাতবউ, এত কি ভাবছ শুনি? চোখের সামনে আমি জলজ্যান্ত মানুষ বসে আছি, কিন্তু তুমি দেখেও দেখছনা! নাকি শ্বশুর বাড়ি পছন্দ হয়নি? ” আয়েশা সালেহার কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে কুহু৷
আয়েশা সালেহা কুহর হাত ধরে ওকে নিজের পাশে বসান৷
” দেখি আমার লজ্জাবতী লাজুকলতাকে। এখনই এত লজ্জা পেলে বিয়ের পর কি করবে শুনি! একটু লজ্জাতো আমার নাতির জন্য রাখ। নাকি বাসর ঘরে আমার নাতির লাজুকলতা দেখার সৌভাগ্য হবেনা! ”
” দিদুন প্লিজ, এভাবে বলোনা। ”
” মা, একবার কষ্ট করে এদিকে আসবেন। আজ নাহয় সবার সাথে এক টেবিলে বসে নাস্তা করবেন। ” তাহমিনা আক্তার শ্বাশুড়িকে অনুনয় করেন।
” হ্যাঁ বউমা, আজ আমি নাতি-নাতনীদের সাথে নাস্তা করব। আমার মন আজ ভিষণ ভালো। তুমি তাহমিদ আর সিক্তাকে ডাকো। ”
কুহু দিদুনকে ধরে ডাইনিং টেবিলের নিয়ে এসে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ পর তাহমিদ আর সিক্তা নিচে নামে।
কুহু দিদুনের পাশে বসে এটাসেটা গল্প করছিল।
সিক্তা তাহমিদের সাথে খুনসুটি করতে করতে এগিয়ে আসছে।
তাহমিদকে একনজর আঁড়চোখে দেখেই কুহু দিদুনের দিকে মনযোগ দেয়। তাহমিদ কুহুকে দেখেও না দেখার ভান করে চেয়ার টেনে বসে।
” শুভ সকাল। কেমন আছো, দিদুন?”
” শুভ সকাল, নতুন জামাই। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। এবার তোমার খবর বল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে তোমাদের আর তুই বলে ডাকবনা। ”
দিদুনের মুখে নতুন জামাই ডাক শুনে তাহমিদের বুকের র’ক্ত ছ’ল’কে উঠে।
সিক্তা দিদুনের কথায় হৈহৈ করে উঠে।
” ভাইয়া, আমি কিন্তু তোমার নতুন আত্নীয় হলাম। এবার ট্রিট দাও। ট্রিট ছাড়া চলবেনা। ”
” নতুন আত্মীয় হয়েছিস, এটা আজ বুঝলি গ’র্দ’ভ? আমিতো সেই কবে থেকেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তোদের মোটা মাথায় ঢুকলে তো। এজন্য তোদের কোন ট্রিট নেই। ”
” কি! তুমি আবার আমাদের কবে জানিয়েছ? অযথা ভাও দিওনা। ট্রিট চাই, দিতে হবে। ”
” এতই যখন ট্রিটের শখ, তবে যা সিনিয়র রাশেদিনের কাছ থেকে নিয়ে নে। আমার কাছে এত ছ্যাঁ’চ’ড়া’মো করে লাভ নেই। ” তাহমিদের কাটকাট জবাব শুনে মুখ ফোলায় কুহু।
” সোনা মা, তুই ক্লাস করবিনা আজকে? ” আফরোজা নাজনীন মাংসের বাটি টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করেন কুহুকে।
” ফুপু, আজ এগারোটায় এবং সাড়ে বারোটায় ক্লাস আছে। আমি দশটার দিকে বের হব। ”
” তাহমিদ, তুই কখন যাবি বাপ? তোর ক্লাস নেই আজকে? ”
” বড়মা, আমার আজকে সাড়ে দশটা থেকে ক্লাস আছে। এক্ষুনি আমাকে বের হতে হবে। ”
” তুই গাড়ি নিয়ে যাস। কুহুকে নিয়ে আমি যাব। ওকে নামিয়ে দিয়ে একটু শপিংয়ে যেতে হবে। ”
সকলের কথার মাঝে কুহু অবাক হয়ে লক্ষ্য করল, এখন পর্যন্ত তাহমিদ ওর দিকে একবারও তাকায়নি!
বিকেলে ক্লাস করে ফেরার পথে তাহমিদ কুহুর হোস্টেলের সামনে দাঁড়ায়। বড়মা কুহুকে নিয়ে ফিরতে বলেছে। কুহু কলেজে ক্লাস শেষে, কোচিং করে হোস্টেলে আসে ওর জামাকাপড় নিতে। তাহমিদ হোস্টেলের সামনে এসে কুহুকে ফোন দেয়। কুহু ঝটপট ফোন রিসিভ করে।
” আসসালামু আলাইকুম। ”
” আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। ” ব্যাস এতটুকু বলেই ফোন কেটে দেয় তাহমিদ।
কুহু বাইরে আসলে তাহমিদ গাড়ির পেছনের দরজা খুলে দেয়, আর নিজে বসে ড্রাইভারের পাশে। কুহু শুধু নিরবে তাহমিদের নির্দেশ পালন করে।
চলবে।
#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৩৩
জাওয়াদ জামী
তাহমিদের এমন আচরণ দেখে কুহু অবাক হয়ে গেছে। যে ছেলেটা কিছুদিন আগেও কুহুর জন্য পা’গ’লা’মি করত, আজ সে একবারও ওর দিকে তাকাচ্ছেনা!
সারা রাস্তা নানান চিন্তা করতে করতে ওরা পৌঁছায় ‘ কুঞ্জছায়া ‘ য়। তাহমিদ গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে দিলে কুহু বেরিয়ে আসে।
ওরা ভেতরে আসলে তাহমিনা আক্তার দুজনকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলেন। তিনিও টেবিলে খাবার দিয়ে, ওদের অপেক্ষা করতে থাকেন।
দু’জন ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে আসে। যে যার মত চেয়ারে বসে। তাহমিনা ওদের প্লেটে খাবার বেরে দেন। দুজনেই চুপচাপ খেতে থাকে।
তাহমিনা আক্তার দুজনের নিরবতা দেখে চিন্তায় পরে যান। আর যাই হোক তার ছেলে এমন চুপচাপ থাকার বান্দা নয়। তারপর ওর পছন্দের মেয়ের সাথেই বিয়েও ঠিক হয়েছে, তবুও ছেলেটা এত নীরব কেন!
” তাহমিদ, তোর কি হয়েছে, বাবু? তুই এমন চুপচাপ আছিস কেন? শরীর খারাপ লাগছে? ”
মায়ের কথায় মাথা তুলে তাকায় তাহমিদ।
” কই, আমার তো কিছু হয়নি, মা। নিজেকে মানুষের কাছে সস্তা করতে চাইনা আজকাল। তাই একটু বদলানোর চেষ্টায় আছি। আমি দেখেছি, ব্যক্তিত্ব না থাকলে কেউ দাম দেয়না। ”
” কে বলেছে তোর ব্যক্তিত্ব নেই! আমার ছেলে হীরার টুকরা। তাকে হেয় করার দুঃসাহস কার আছে! ”
” নিজের ছেলে বলে এমন সার্টিফিকেট দিচ্ছ, মা। ছেলের শত অন্যায়ও মায়ের চোখে পরবেনা এটাই স্বাভাবিক। ”
” কুহু, তুই বলতো মা, আমার ছেলের কি ব্যক্তিত্ব নেই? ও কি খা’রা’প ছেলে? ” তাহমিনা আক্তার হাল না ছেড়ে কুহুকে জিজ্ঞেস করেন৷
কুহু তাহমিনা আক্তারের প্রশ্ন শুনে বিষম খায়। উত্তর দেয়ার মত কথা খুঁজে পায়না।
” বাদ দাওনা, মা। সে আর কি বলবে। মেয়েদের কাছে ছেলেরা সব সময়ই খা’রা’প। কিন্তু তুমি তো মা। মায়ের আলাদা কোন জাত হয়না। আলাদা কোন সংজ্ঞা হয়না। মায়ের রূপ মমতাময়ীতেই প্রকাশ পায়। তাই তোমার প্রশ্নের উত্তর তার কাছে নেই। ” কুহু কিছু বলার আগেই তাহমিদ উত্তর দেয়।
কুহু বেশ বুঝতে পারছে তাহমিদ ওকে পরোক্ষভাবে কথা শোনাচ্ছে। তবে কি সেদিনের ঘটনার জন্য সে কুহুর উপর নারাজ! তবে তাহমিদ যে ওকে লে’জে’গো’ব’রে খেলাবে তা বুঝতে বাকি থাকেনা।
কুহু সিদ্ধান্ত নেয় ঘটনা বেশিদূর এগোতে দেয়া যাবেনা। তার আগেই সব ঠিক করে নিতে হবে। দূরত্ব এমন পরিমাণে বাড়তে দেয়া ঠিক নয়, যে দূরত্ব সব ত’ছ’ন’ছ করে দেয়।
কায়েস বারান্দায় ছেলেকে নিয়ে বসে আছে। সে বাড়িতে থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করছে। শিহাব স্কুল থেকে ফিরে বাবার কাছে বসেছে। বাবার সাথে নানান গল্প করছে। শিউলি আক্তার রান্নাঘরে এসে স্বামী- সন্তানের জন্য নাস্তা তৈরি করছে। তবে এখনও কায়েস স্ত্রীর সাথে কথা বলেনা। স্ত্রীর প্রতি মন বি’ষি’য়ে গেছে। হয়তোবা আর কখনোই সে শিউলির সাথে কথা বলবেনা।
সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে দৃষ্টি স্বামীসহ হঠাৎই বাবার বাড়িতে আসল। দৃষ্টিকে দেখেই কায়েসের মুখের ভেতর তিতা হয়ে যায়। যে মেয়ে বাবা-মা’র মুখে চু’ন’কা’লি মাখাতে একটুও দ্বিধা করেনা, আর যাইহোক সেই মেয়ের থেকে কখনোই ভালো কিছু আশা করা যায়না।
কায়েস মেয়েকে দেখে নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু সবুজ তাকে চুপচাপ থাকতে দিলনা। সে বারান্দায় এসে কায়েসকে সালাম দিলে, কায়েস সালামের জবাব দিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।
শিউলি আক্তার মেয়ে-জামাইকে দেখে আহলাদে গদগদ হয়ে যায়। হরেকরকম নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করে তাদের। রাতের খাবারের জন্য তিন রকমের মাছ, দেশি মুরগীর মাংস, হাঁসের মাংস, ডিম ভুনা, বেগুনভাজা, করলা ভাজা রান্না করে।
রাতের খাবার কব্জি ডুবিয়ে খায় সবুজ। একটিবারও শ্বশুর অথবা শিহাবকে ডাকার প্রয়োজনবোধ করেনা।
কায়েস সেই বিকেলে নিজের ঘরে ঢুকেছে, এখন পর্যন্ত বের হয়নি৷
তার মোটেও ইচ্ছে নেই এমন বে’য়া’দ’ব মেয়ের মুখ দেখার। নিজের ঘরেই রাতের খাবার সাড়ে কায়েস।
রাত দশটা। কায়েস তার ছেলেকে অংক করাচ্ছে। এমন সময় ঘরে আসে দৃষ্টি। সোজা এসে বাবার পায়ের কাছে বসে। দৃষ্টিকে দেখে চোখ-মুখ কোঁচকায় কায়েস।
” আব্বু, সন্তান হাজার কোন ভুল করলেও বাবা-মা মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারেনা। আমি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করা যায়না, আব্বু। ”
” অনিচ্ছায় ভুল করলে, ক্ষমা করা যায়। কিন্তু যে ইচ্ছা করে ভুল করে,অন্যায় করে তার কোন ক্ষমা হয়না৷ ভুল করবার আগে আমি সেটা শুধরে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুই সেসব মানিসনি৷ তাই আমার কোন ইচ্ছেই নেই, তোকে মেনে নেয়ার। আমি ভুলে গেছি, দৃষ্টি নামে আমার কোন মেয়ে আছে। ” কায়েসের সোজাসাপটা উত্তর শুনে, দৃষ্টি ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে।
” বাবা, তুমি এভাবে আমাকে অস্বীকার করোনা। তোমরা ছাড়া আমার কেউই নেই। ”
” কেন, যার জন্য আমার সম্মান মাটিতে মেশাতো তোর একটুও বুক কাঁ’পে’নি, এখন তো সেই তোর আপনজন, সবকিছু। আমার সময় নষ্ট করিসনা। তোকে মানুষ করতে পারিনি বলে এখন আর আফসোস হয়না। এখন আমার ছেলের দিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে। আমার বিশ্বাস এই ছেলে সমাজের সামনে কখনো আমার নাক কা’ট’বে’না। ” কায়েস ঘৃণাভরে দৃষ্টির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু দৃষ্টি একচুলও নড়েনা। ও কায়েসের পা চেপে ধরে। বারবার অনুরোধ করে ক্ষমা করে দিতে।
সন্তান পৃথিবীর নিকৃষ্টতর ব্যাক্তি হলেও বাবা-মা কখনোই তাদের দূরে ঠেলে দিতে পারেনা। হয়তো তাদের জন্য মনে সাময়িক রাগ, ঘৃণা কিংবা অভিমানের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এগুলো কখনোই চিরস্থায়ী হয়না। তাই মেয়ের এমন আকুতি কায়েসের মনও গলিয়ে দেয়। কায়েস সকল অভিমান ভুলে মেয়েকে বুকে টেনে নেয়।
সকাল থেকেই শিউলি আক্তার ব্যস্ত সময় পার করছে। তার একমাত্র মেয়ের জামাই এসেছে। সে সকাল সাতটা বাজতে বাজতেই, চার ধরনের পিঠা বানিয়েছে। এছাড়াও পরোটা সেমাই, পায়েস তৈরি করেছে।
সবুজ ঘুম থেকে উঠে বেলা দশটায়। এরপর সে নবাবি চালে বাইরে এসে বাড়ির চতুষ্কোণ পর্যবেক্ষন করছে। দৃষ্টি কোথাও থেকে ছুটে এনে ব্রাশে টুথপেষ্ট লাগিয়ে সবুজের হাতে দেয়। সবুজ ব্রাশ নিয়ে কলপাড়ে যায়। যা ঘরের জানালা দিয়ে দৃষ্টিগোচর হয় কায়েসের৷
শ্বশুর বাড়ির ভুঁড়ি ভোজ মন্দ লাগছেনা সবুজের। এভাবে দিনাতিপাত করলে খুব একটা খারাপ লাগবেনা। সবুজ মনে মনে ফ’ন্দি আঁটে এই বাড়িতে খুঁটি গাড়ার।
সকালে খাবার পর সবুজ কোথাও বেরিয়ে যায়। যাওয়ার আগে দৃষ্টিকে ইশারায় কিছু বলে যায়।
কায়েস ধীরে ধীরে বাগানের ভেতর হাঁটছে। এমন সময় দৃষ্টি তার পাশে এসে দাঁড়ায়।
” আব্বু, তোমার সাথে কিছু কথা ছিল। ”
” বল, কি বলবি। ”
” আব্বু, আমি এই তিনমাসেই বুঝতে পেরেছি তুমি সবসময়ই সঠিক ছিলে। সেদিন তোমার কথা না শুনে অনেক বড় ভুল করেছি। আজ তার খেসারত দিচ্ছি। ”
” দৃষ্টি, তোর কি হয়েছে? আমার কাছে কিছু লুকাসনা মা। তুই কি ভালো আছিস? ”
” আব্বু, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি উঠতে-বসতে আমাকে খোঁটা দেয়। তাদের ছেলে বেকার। আমার ব্যায়ভারও তাদেরই বহন করতে হচ্ছে। তারউপর বাবার বাড়ি থেকে কোন টাকা-পয়সা নিয়ে যাইনি। এসব নিয়ে আমাকে দিনরাত কথা শোনায়। বাড়ির সব কাজ আমাকেই করতে হয়। তিনজন কাজের মেয়ে ছিল। তাদের দুইজনকে বিদায় করে দিয়েছে। ঐ দুইজন মেয়ের কাজ আমার করতে হয়। কাজ করলেই তবে খেতে পাই। ” দৃষ্টি ডুকরে কেঁদে উঠে।
কায়েস অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
যেই মেয়ে কখনো এক গ্লাম পানি ঢেলে খায়নি, আজ তাকে কাজের মেয়ের মত খাটতে হয়! একজন বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে আজ। সে সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। তাই তার সন্তানের আজ এই দশা।
” আমি তোকে চেয়ারম্যান বাড়িতে আর পাঠাবনা, মা। তুই আবার স্কুলে যাবি। এসএসসি পাশ করে, ঢাকায় ভর্তি হবি। তোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, দৃষ্টি। ”
” না আব্বু, এটা হয়না। আমি এখানে একবারে চলে আসলে, আরেকবার চারদিকে ছিহ্ ছিহ্ রব পরে যাবে। আবারও তোমাকে অনেক অপমান সইতে হবে। আর আমি চাইলেও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবনা। তাছাড়া আমি চাইনা আমার জন্য তোমরা আবার অ’প’মা’নি’ত হও। এছাড়াও আরও কিছু সমস্যা আছে। ”
” আর কি সমস্যা আছে! আমাকে সব খুলে বল, দৃষ্টি। আমি বাবা হয়ে, তোকে অনুরোধ করছি। ”
দৃষ্টি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর মুখ খোলে।
” আব্বু, আমি চলে আসলে ওরা খুব রে’গে যাবে। তুমি ওদেরকে জানোনা। আমার শ্বশুর নিজের সম্মান বাঁচাতে যতদূর প্রয়োজন যেতে পারে। ”
” মানছি তোর শ্বশুরের লা’ঠি’র জোর আছে। তবে তোর বাবারও জোর কিছু কম নেই। তুই চাইলে আমি ওদের ব্যবস্থা নিতে পারি। আমি চাইনা আমার মেয়ে চেয়ারম্যান বাড়িতে পঁ’চে ম’রু’ক। ” কায়েস রে’গে গেছে।
” আব্বু, তুমি একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমি আম্মুর সাথে এসব আলোচনা করিনি। কারন আমি ভালো করেই জানি আম্মু সব শুনলে তুলকালাম কান্ড বাঁধাবে৷ তুমিই একমাত্র আমাকে বাঁচাতে পার। ” দৃষ্টি অনুনয় করছে কায়েসকে৷
“তুই যখন আমার কথা শুনবিইনা, তখন আর কি করার। আমাকে কি করতে হবে বল। মেয়ের বিপদে তার পাশে থাকবনা, এমন বাবা আমি নই। ”
” বাবা, তোমার জামাই একটা ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে। আমার শ্বশুরের একটা স মিল আছে। তোমার জামাই সেখানে কিছু টাকা খাটিয়ে, ব্যবসাটা নিজের নামে দাঁড় করাতে চাচ্ছে৷ কিন্তু আমার শ্বশুর কোন টাকা দিবেনা। তুমি যদি টাকাটা দিতে, তাহলে ও ব্যবসাটা শুরু করতে পারত। আর আমাকেও ঐ বাড়িতে কোন ক’টু কথা শুনতে হতনা। ”
কায়েস অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকায়। তার এই ছোট মেয়েটাও সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে শিখে গেছে! সংসারে নিজের প্রাধান্য রাখতে গিয়ে বাবার কাছে হাত পাততে একটুও লজ্জা পাচ্ছেনা! নাকি ভেতরে ভেতরে লজ্জা পাচ্ছে! যা প্রকাশ করতে চাইছেনা।
” কত টাকা লাগবে? ” স্তিমিত গলায় জিজ্ঞেস করে কায়েস।
” ছয় লাখ হলেই চলবে। ”
” ছয় লাখ! এত টাকা আমাকে দিতে হবে! ”
” আব্বু, তোমার দো’হা’ই লাগে। আমার সংসারটা ভে’ঙে যেতে দিওনা৷ আর কখনোই তোমার কাছে কিছু চাইবনা। এটাই প্রথম, আর এটাই শেষ। ” দৃষ্টি কিছুতেই কান্না থামাতে পারছেনা।
” কাঁদিসনা, মা। আমি তোর ফুপুর সাথে কথা বলে দেখি। দেখছি কতটুকু কি করতে পারি। ”
” প্লিজ আব্বু, তুমি ফুপুকে কিছু বলোনা। ফুপু জানলে কিছুতেই টাকা দিতে দিবেনা। ”
” আচ্ছা, তুই বাড়ির ভেতর যা। আমি দেখছি। ”
দৃষ্টি বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলে, কায়েস চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়। এতটুকু বয়সেই তার মেয়েটাকে সংসারের রাজনীতির মাঝে জড়িয়ে পরতে হয়েছে।
অনেক ভেবেচিন্তে কায়েস ফোন করে বড় বোনকে৷ আফরোজা নাজনীন ফোন রিসিভ করলে, তাকে সালাম দেয় কায়েস। এরপর ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে৷ দুই ভাই-বোন কিছুক্ষণ কথা বলার পর, কায়েস সুযোগ বুঝে দৃষ্টির বিষয়ে আলোচনা করে। আফরোজা নাজনীন সেসব শুনে শিউরে ওঠেন।
” কায়েস, একবার যদি সবুজকে টাকা দিস, পরে ওর মনে লোভ জন্মাবে। আর বারবার এমন করতেই থাকবে। কিন্তু আবার দৃষ্টির দিকটাও দেখা দরকার। মেয়েটা কষ্টে আছে শুনে বুকের ভিতর দু’ম’ড়ে মু’চ’ড়ে যাচ্ছে। কত আদরের মেয়ে আমাদের। ”
” আমি কি করব, আপা? মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। গায়ের রং কালো হয়ে গেছে। শুকিয়ে গেছে অনেকটা। ”
” আচ্ছা শোন। এত চিন্তা করিসনা। এখন টাকাটা দিয়ে দে। তবে দেয়ার সময় ঐ ছেলেকে বলবি, ভবিষ্যতে তুই আর একটা টাকাও ওকে দিবিনা। আর দৃষ্টিকে বলবি, এরপর ওরা দৃষ্টির সাথে কোন অন্যায় করলে তুই ব্যবস্থা নিবি। ওদের ছেড়ে কথা বলবিনা। এটা ঐ ছেলেকেও জানাবি। আর তুই কখনোই ওদের কাছে নিজেকে দূর্বল হিসেবে ধরা দিবিনা৷ এরপর থেকে আমাদের সবসময়ই দৃষ্টির খোঁজখবর রাখতে হবে। মেয়ে ভুল করেছে তাই বলে তাকে দূরে ঠেলে দিব এটা হতে পারেনা। ”
কায়েস বোনের সাথে কথা বলে স্বস্তিবোধ করে৷
পরদিন সকালে কায়েস শিহাবকে নিয়ে ব্যাংকে যায়। ছয় লাখ টাকা তুলে নিয়ে আসে।
দুপুরের খাবার পর সবুজের সামনে দৃষ্টিকে ডেকে ওর হাতে টাকা তুলে দেয় কায়েস। আর দৃষ্টিকে সাবধান করে দেয়, যাতে ঐ বাড়ির কেউ কোন ক’টু কথা বললে সাথে সাথে যেন তাকে জানায়। প্রয়োজনে সে ব্যবস্থা নিবে। কায়েসের কথা শুনে সবুজ ভেতরে ভেতরে ভরকে যায়। ও ভালোই বুঝতে পারছে, সামনের যা ঘটবে তার কিছুই সহজ হবেনা।
টাকা হাতে পেয়েই সবুজ আর দেরি করেনা। দৃষ্টিকে নিয়ে চলে নিজের বাড়ি।
চলবে…