বিন্দু থেকে বৃত্ত পর্ব-৪০+৪১+৪২

0
477

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৪০
জাওয়াদ জামী

দুপুর পরে সবুজ বাড়িতে আসলেই, ওর মা ছেলের কানে দৃষ্টিকে নিয়ে বি’ষ ঢুকিয়ে দেয়। দৃষ্টি তাকে যা যা বলেছে সেগুলোও বলে। এবং যেগুলো বলেনি সেগুলোও ইনিয়েবিনিয়ে বলে। এসব শুনে সবুজের ভিষণ রা’গ হয়। কিন্তু ও জানে এখন রা’গ করলেই ওকে সবকিছু হারাতে হবে। তাই সে মায়ের কথা পাত্তা না দিয়ে, মাকে বলে,
” মা, অযথাই রাগ কর কেন! দৃষ্টিকে নিজের মনমতো চলতে দাও। এখন থেকে তুমি দৃষ্টির কথামতো চলবে। ওকে হাতে রাখলেই তবে, ও ওর বাপের বাড়ি থেকে অনেক কিছু নিয়ে আসবে। দেখলেনা ওর বাবার কাছ থেকে টাকা চাইতেই কেমন দিয়ে দিল। মা ও সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ওকে কারনে অকারণে খুঁ’চি’ও’না। ”

সবুজের মা চিন্তা করে দেখল, তার ছেলে যা বলেছে, এতে এক বিন্দুও মিথ্যা নেই। তাই তিনি ছেলের কথার সাথে তাল মেলান।

এরপর বেশ কয়েকদিন দৃষ্টির শ্বশুর বাড়ির দিনগুলো আরাম-আয়েশেই কাটে। শ্বাশুড়ি ওকে খোঁ’চা দিয়ে কথা বলেনা। খেতে বসলেই মাছের মাথা, মাছের বড় টুকরো, প্রয়োজনের অধিক মাংস না চাইতেও দৃষ্টির পাতে দেয়। দৃষ্টিও এতে খুব খুশি।
এরইমধ্যে দৃষ্টির মামাশ্বশুর আসে চেয়ারম্যান বাড়িতে। তার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে চেয়ারম্যান বাড়ির সকলকে দাওয়াত করেছে। বিয়ের তিনদিন আগে থেকে দৃষ্টিকে নিয়ে তার বোনকে যেতে বলে। দৃষ্টির শ্বাশুড়িও রাজি হয়। ও সবুজের কাছে ওর মামা বাড়ির গল্প শুনেছে। তারা নাকি খুব অবস্থা সম্পন্ন। তাই ননদের বিয়েতে নানা শ্বশুরের বাড়িতে যেতে হবে শুনে ওর মন খারাপ হয়ে যায়। সেখানে সব আত্মীয় স্বজনরা আসবে, বাহারি শাড়ি, গহনা পরবে। কিন্তু দৃষ্টির এসবের কিছুই নেই। ও মন খারাপ করে নিজের রুমে এসে শুয়ে থাকে।

দৃষ্টির আজকাল মনে হয়, ও যদি আব্বুর পছন্দে বিয়ে করত, তবে এত কষ্ট করতে হতনা। পর্যাপ্ত শাড়ি, গহনা কিংবা টাকার অভাব আব্বু কখনোই হতে দিতনা। মাসে অন্তত একবার হলেও আব্বু ওকে দেখতে আসত। কতকিছু আনত সাথে করে। ছোট ভাইটাও মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসত।
কষ্টে দৃষ্টির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরতে থাকে। ঠিক এই সময় শিউলি আক্তার মেয়েকে ফোন দিয়েছে। মায়ের নম্বর ফোনে ভাসতে দেখে, দৃষ্টির মুখে হাসি ফোটে।

” হ্যালো আম্মু, কেমন আছো? আব্বু কেমন আছে? শিহাব কোথায় আম্মু? ” একনাগাড়ে প্রশ্নগুলো করে দৃষ্টি।
” একবারে এত প্রশ্ন করলে, আগে কোনডার উত্তর দিমু, মা! আমরা সগলেই ভালো আছি। শিহাব ইস্কুলে গেছে। তর বাপে মার্কেটে গেছে। তার আজকাল ব্যবসা খু্ব ভালো হইতাছে। এহন ক তুই ভালো আছস? তর আকাইম্মা শাউড়ী ভালো আছে? জামাই কনে? ”
” তোমার জামাই মিলে গেছে। আমার শ্বাশুড়ি তার ভাইয়ের সাথে কথা বলছে। এরা সবাই ভালো আছে। ”
” তর মামাশ্বশুর আইছে? কবে আইছে হেয়? ”
” আজকেই আসছে। তার মেয়ের বিয়ে। সেজন্য আমাদের দাওয়াত করতে এসেছে। ”
” তরা যাবিনা বিয়াতে? যাইয়া বেড়ায় আসিস। বিয়ার পর তো তরে ওরা একবারও সেখানে নেয়নি। এই সুযোগও ছাড়িসনা। ”
” আমার যেতে ইচ্ছে করছেনা, আম্মু। সেখানে সবাই দামী শাড়ি, গহনা পরে আসবে, কিন্তু আমার কিছুই নেই। তাই ভাবছি আমি যাবনা। ” মন খারাপ করে বলে দৃষ্টি।
” পা’গ’ল মাইয়া কয় কি দেখছ! তর মা কি মরছে! তুই কাইলকাই আইয়া আমার সব গয়নাডি নিয়া যা। আপাতত সেইগুলাই বিয়াতে পর। পরে তর বাপকে কইয়া, আমি তরে বিশ ভরির গয়না গড়াইয়া দিমু। আর আমি পনের হাজার টাকা দিমুনি, তাই দিয়া শাড়ি কিন্যা নিবি। আমার মাইয়া যেন বিয়ার বাড়িতে সবচেয়ে দামী শাড়ি পরে সে ব্যবস্থা আমি করমু। ”
মায়ের কথা শুনে দৃষ্টির মন প্রসন্ন হয়। মুখের অনাবিল হাসিই বলে দিচ্ছে ওর বুকের ওপর থেকে কোন ভারী পাথর নেমে গেছে।

রাতে সবুজ বাড়িতে আসলে দৃষ্টি তাকে মায়ের সাথে কথপোকথনের সবটাই জানায়। সবুজ দৃষ্টির কথা শুনে ভেতরে ভেতরে খুব খুশি হয়।
পরদিন সকাল হতে না হতেই সবুজ দৃষ্টিকে নিয়ে ফুলতলা আসে।
বিকেলেই আবার বাড়ির দিকে রওনা দেয়। এবার তাদের সাথে আছে শিউলির দেয়া পনের ভরির গহনা এবং পঁচিশ হাজার টাকা। শিউলি প্রথমে পনের হাজার টাকা দিতে চাইলেও, পরে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে পঁচিশ হাজার টাকা দেয়।
শিউলির টাকা ও গহনা দেয়ার কথা কায়েসের অজানা থেকে গেল। সে জানলওনা নিজের সব গহনা এবং জমানো টাকা দৃষ্টিকে দিয়ে শিউলি ভবিষ্যতে নিঃশেষ হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল৷

কুহু অ্যাডমিশনের জন্য কোচিং করছে৷ ও আর সিক্তা একসাথে ভর্তি হয়েছে। দুজনে পড়াশোনায় ভিষণ মনযোগী হয়েছে।
আনানের পরীক্ষা চলছে তাই ও বেশ কিছুদিন যাবৎ এ বাসায় আসছেনা।
তাহমিদের পরীক্ষা শেষের দিকে। সে এমনিতেই পড়ুয়া ছেলে, পরীক্ষা ছাড়াও সব সময়ই হাতে বই নিয়ে বসে থাকে। আর পরীক্ষার সময় তো কথাই নেই। এ সময় রাতে তিন ঘন্টার বেশি ঘুমায়না।
কুহুর সাথে এ কয়দিনে তাহমিদের খুব একটা দেখা হয়নি। কুহু ইচ্ছে করেই তাহমিদের আশেপাশে ভিড়েনা। কারন কুহু চায়না, ওর জন্য তাহমিদের পড়াশোনায় ক্ষ’তি হোক।

পরীক্ষা শেষ করে বাসায় আসতে তাহমিদের বিকেল হয়ে গেছে। কুহুরা কোচিং শেষে কিছুক্ষণ আগেই বাসায় এসেছে।
তাহমিদ বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে সোজা নিচে আসে। সেই সকালে খেয়ে বেরিয়েছিল, এখন শেষ বিকেল। দুপুরে কিছুই খায়নি তাই প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে।
এদিকে কুহু, সিক্তাও দুপুরে খায়নি। ওরা খাবার টেবিলে বসতেই তাহমিদ সেখানে আসে।

” বড়মা, খুব ক্ষুধা লেগেছে। তারাতারি খেতে দাও৷ ” কুহুর পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে তাহমিদ বলে।
” ভাইয়া, এটা কি করছ! নিজের চেয়ার ছেড়ে এখানে বসলে কেন! সব সময়ই দেখেছি, তুমি ঐ চেয়ার ছাড়া বসনা। কিন্তু আজ এখানে বসলে! আমাদের পাশে কখনোই এভাবে বসোনি কিন্তু। বিয়ের আগেই এই দশা! বিয়ের পর যে কি হবে ভাবতেই ভয় হচ্ছে। ” সিক্তা ইচ্ছে করেই তাহমিদের পেছনে লাগছে।
” সত্যিই বলেছিস৷ বিয়ের আগেই তোর বোনের পেছনে লেপ্টে আছি। নিজের তৈরি আগের সব নিয়ম ভাঙ্গছি। বিষয়টা আমার ক্ষেত্রে যেমন সত্য। তেমনি আনানের বিষয় নিয়েও আমি চিন্তিত। বেচারা আজকাল আর আমার জন্য এই বাসায় আসেনা। ” আর বেশি কিছু তাহমিদকে বলতে হলনা। ওর এই সামান্য কথা শুনেই সিক্তা বিষম খায়।
ও ভাবছে এসব গোপন ব্যাপার ভাইয়া জানল কেমন করে!

কুহু দুই ভাই-বোনের কথা শুনছে। কিন্তু তাহমিদের শেষের কথা শুনে একটু থমকায়। ওদের দুজনের কথার মাঝে হঠাৎ আনান আসল কেন বুঝতে পারেনা।

আফরোজা নাজনীন একে একে ছেলে-মেয়েদের খাবার দেন।
চিংড়ির দোপেয়াজা কুহুর খুব পছন্দের। তাই অন্য তরকারি না নিয়ে শুধু সেটা দিয়েই খেতে থাকে। তাহমিদ খাওয়ার মাঝেই কুহুর পছন্দ-অপছন্দ সব লক্ষ্য করে।
আফরোজা নাজনীন তাহমিদের প্লেটে চিংড়ির দোপেয়াজা তুলে দিলে, ও সকলের অগোচরে কুহুর প্লেটে দুইটা চিংড়ি দেয়। কুহুর আর তাহমিদকে কিছু বলা হয়ে উঠেনা। তাহমিনা আক্তার এসে ছেলের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
সযত্নে তিনি ছেলের পাতে এটা-সেটা তুলে দেন। কুহু আর সিক্তাও বাদ যায়না।

খাওয়া শেষে তাহমিদ নিজের রুমে এসে, ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। আজকে আর কোন পড়া নয়। আজ শুধু ঘুম।

সকালে ঘুম উঠতে দশটার বেশি বেজে যায়। এত বেলা হয়েছে অথচ কেউ ওকে ডাকেনি! আর দেরি না করে ঝটপট বিছানা ছাড়ে তাহমিদ। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখল তাওহীদ তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছে। হঠাৎ বাসায় ভাইকে দেখে অবাক হয়ে গেছে তাহমিদ। এভাবে না জানিয়ে ওরা কেন এসেছে!
তাহমিদকে দেখে তূর দৌড়ে এসে চাচ্চুর কোলে উঠে। তাহমিদও আগলে নেয় ভাতিজীকে। দুজনে মিষ্টি মধুর আলাপনে মেতে উঠে।

প্রাথমিক আলাপ বিনিময় করে তাওহীদ নিজের রুমে আসে। ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে নাস্তা সেড়ে নেয়।

তাওহীদের স্ত্রী নীরা কুহুকে দেখার পর থেকে মুখ গোমড়া করে আছে। ওর শ্বশুর বাড়িতে ওকে সমাদর না করে, সবাই কুহুকে নিয়ে মাতামাতি করে, এটা নীরা মানতে পারছেনা। ও কুহুকে হেনস্তা করার কোন উপায় খুঁজছে।

দুপুরে খাবার পর সবাই ড্রয়িংরুমে বসে টুকটাক কথা বলছে। কুহু ফুপুর সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। যদিও আফরোজা নাজনীন কুহুকে কাজ করতে বারণ করেছেন, তবুও কুহু ফুপুর কথা শোনেনি।
সানাউল রাশেদিন কুহুর কাছে এক কাপ চা চাইলে, কুহু তাকে চা বানিয়ে দেয়।
এই অসময়ে বড় চাচ্চু চা পান করবে শুনে তাহমিদ তার পেছনে লাগতে ভুল করেনা।

” বুঝলে দিদুন, মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধনী হলে, দুপুরেও চা পান করে। এরা আসলে আশেপাশের সবাইকে নিজের বিলাসিতা দেখিয়ে মজা পায়। ”
” আম্মা, আপনার নাতি রুপী বে’য়া’দ’ব’টা’কে আমার বিষয়ে কোন কথা বলতে নিষেধ করে দেন। আমি যদি একবার রে’গে যাই, তবে ওর বাপের নাম ভুলিয়ে ছাড়ব বলে দিলাম। আমার চৌদ্দ পুরুষের মধ্যে এর মত বে’য়া’দ’ব একটাও জন্মায়নি। ”
” দিদুন, সিনিয়র রাশেদিনের কাছে কি তার চৌদ্দ পুরুষের লিষ্ট আছে! নাকি তার চৌদ্দ পুরুষের মধ্যে কে, কি করেছে সেগুলো মনে রাখার কন্ট্রাক নিয়ে রেখেছে! সত্যিই তুমি রত্নগর্ভা দিদুন। এমন ছেলের জন্ম দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়! ”
” তাহমিদ, কি শুরু করলি এসব! বড় চাচ্চুকে সম্মান দিতে ভুলে গেছিস? ” তাহমিদের বাবা শফিউল রাশেদিন ছেলেকে থামাতে বলে উঠেন।

” শোন শফিউল, সম্মান জিনিসটা তোমার ছেলের চৌদ্দ হাতের ভেতরে নেই। সম্মানও তাকে দেখে ভয় পায়। কখনযে সম্মানকে অসম্মানে রুপান্তরিত করবে তোমার ছেলে, সেজন্যে তারা আগেভাগেই তার কাছ থেকে দূরে থাকে। ” সানাউল রাশেদিন খোঁ’চা মারে তাহমিদকে।

” দিদুন, দেখেছ, আমাদের সামনে সম্মানের গ্যারেজ বসে আছে! যার পুরো শরীরে সম্মানের দল জায়গা পেতে মা’রা’মা’রি করছে! ” তাহমিদও পাল্টা খোঁচা দেয় সা’না’উ’ল রাশেদিনকে৷

এবার তাদের ঝগড়ার মাঝে হস্তক্ষেপ করেন আফরোজা নাজনীন। দুজনকেই ধমকে থামিয়ে দেন।

এতক্ষণ নীরা এসব দেখে ভেতর ভেতর জ্ব’ল’ছি’ল। এত বড় ছেলেকে এত আস্কারা দেয়ার কি আছে তা সে ভেবে পায়না। এজন্য সে আফরোজা নাজনীনকে পছন্দ করেনা। কারন তিনি সব সময়ই তাহমিদকে সাপোর্ট করেন।

কুহু কেবলই দিদুনের কাছে বসেছে। দিদুন কুহুর মাথায় মমতায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

” কুহুমনি, আমাকে একটা পান বানিয়ে দিবে? অনেকক্ষন পান ছাড়া বসে আছি। ”
” এক্ষুনি দিচ্ছি, দিদুন। ”
” দিদুন, তুমি পান খাবে, সেটা আমাকে বললেই পারতে। বাড়ির মেহমানকে দিয়ে কাজ করাতে নেই, জানোনা? এই মেহমান আজ আছে কাল নেই। তাকে একটু রেষ্ট করতে দাও। গ্রামের মানুষ ও, দিনরাত হেঁসেল সামলেছে, এখানে যে কয়দিন আছে সে কয়টাদিন অন্তত রেষ্ট করুক। ” নীরা ব্যঙ্গাত্বক গলায় দিদুনকে বলে।

নীরার কথা শুনে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে কথা থামিয়ে নীরার স্পর্ধা অবলোকন করছে।

” কি বলছিস নীরা! কুহু আমাদের ঘরের মেয়ে। ও মেহমান হতে যাবে কেন! ” দিদুন মিষ্টি কথায় পরিস্থিতি সামলে নিতে চাচ্ছেন।

” মেহমান যে ঘরের মানুষ হয়, তা আমি তোমার কাছ থেকেই শুনলাম। অবশ্য এ ধরনের মেহমানকে ঘরের মানুষই বলা যায়। যাদের কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই। যারা একবার ধনীদের বাড়িতে আসলে, আর যেতে চায়না। যাদের পরিবারের লোকজনের কোন সম্মান নেই। একটা যুবতী মেয়েকে দিনের পর দিন অন্যের বাড়িতে রেখে দেয়। এদের বংশ যে কতটা নিচু, তা এদের এমন আচরণেই বোঝা যায়। ”

নীরার কথা শুনে আফরোজা নাজনীন অপমানে মাথা নিচু করে। কুহু সেখান থেকে দিদুনের রুমে এসে মুখ লুকায়।
নীরা মুচকি মুচকি হাসছে। ওর উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। এক ঢিলে দুই পাখি মে’রে’ছে। বড়মাকে অপমান করাও হল, আবার কুহুকে এই বাড়ি থেকে বের করার রাস্তাও করে দিল৷

কিন্তু নীরার এই হাসি দীর্ঘস্থায়ী হয়না। গালে সপাটে একটা চ’ড় খেয়ে তাকিয়ে থাকে সামনের ব্যাক্তির দিকে।
তাহমিনা আক্তারের চোখমুখ রা’গে’র চোটে লাল হয়ে গেছে। শান্ত,ধীর মানুষটা যেন এই মুহূর্তে ভয়ংকরী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন।
নীরার বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে ওর শ্বাশুড়ি ওকে চ’ড় মে’রে’ছে।

তাহমিনা আক্তার সেখান থেকে সরে যেয়ে, তাওহীদের সামনে দাঁড়ান। সাত-আটটা চ’ড় পরপর বসিয়ে দেন ছেলের গালে৷

চলবে…

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৪১
জাওয়াদ জামী

তাওহীদ গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেই মা কোনদিন ওর গায়ে হাত তোলেনি, আজ সেই মা ওকে এতগুলো চ’ড় মারল!

” আজ মনে হচ্ছে, তোকে জন্ম দিয়ে আমি পাপ করেছি। যে বড়মার হাত ধরে হাঁটতে শিখেছিস, যে বড়মা নিজের মুখের খাবার তোকে খাইয়েছে, যে বড়মার কাছে তোর হাতেখড়ি হয়েছিল, আজ তোর সামনে তোর বউ সেই মানুষটাকে ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করছে, তার বংশ পরিচয় নিয়ে কথা তুলছে, আর সেগুলো তুই বসে বসে উপভোগ করছিস! আমারই ভুল হয়েছে পরের মেয়েকে থা’প্প’ড় দিয়ে। সে-তো অন্য বাড়ির মেয়ে, এসব কিছুই জানেনা। সে বলতেই পারে, যেহেতু তার শিক্ষার অভাব আছে। কিন্তু তুই কিভাবে বড়মার অপমান সহ্য করতে পারলি?
তোকে তো আমরা সঠিক শিক্ষা দিয়েই বড় করেছি? তবে কি আমাদের শিক্ষায় ভুল ছিল? এই থা’প্প’ড়’গু’লো আমার অনেক আগেই তোকে মা’রা দরকার ছিল। তাহলে অন্তত আজ এই দিন দেখতে হতোনা। আমার ছেলের বউ তার শ্বশুর বাড়ির সবাইকে অসম্মান করতোনা। আর আমি কি-না এতদিন ভেবেছি, ভালোবাসা দিয়ে সব ঠিক করব! তোরা ভালোবাসা পাবার যোগ্যই না। কান খুলে তুই আর তোর বউ শুনে রাখ, একটু আগে যে কুহুকে তোর বউ অপমান করল, সেই কুহু আমার ছোট ছেলের বউ হবে। আর সে শিক্ষাদীক্ষায়, আচার-আচরণে কিংবা বংশ পরিচয়ে তোর বউয়ের থেকে হাজারগুনে ভালো। আর সবশেষে বলছি, এক্ষুনি তুই তোর বউকে নিয়ে এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। যে ছেলের বউ আমার বড় বোন সমতুল্য জা’কে অপমান করেছে, আর আমার ছেলে বসে বসে সেগুলো উপভোগ করেছে, সেই পাপীদের মুখ আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেখতে চাইনা। এমনকি আমার মৃত্যুর পরেও তোরা আমাকে দেখতে আসবিনা। ”

‘ কুঞ্জছায়া’র ড্রয়িংরুমে বিরাজ করছে শ্মশানের নিরবতা। সানাউল রাশেদিন স্ত্রীর দিকে ব্যথিত চোখে তাকিয়ে আছেন। শফিউল রাশেদিনের মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে রয়েছে। তার ছেলে ও ছেলের বউ আজ তাকে সবার সামনে চরমভাবে অপমান করেছে। যে বড় ভাবিকে তিনি মায়ের পরে স্থান দিয়েছেন, তাকে আজ তার ছেলে কাঁদিয়েছে। এই লজ্জা মৃত্যুর সমতুল্য।
আয়েশা সালেহা কাঁদছেন। কি থেকে কি হয়ে গেল।
সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক আছে তাহমিদ। কোন বিকার ওর মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। সিঙ্গেল সোফায় শরীর এলিয়ে দিয়ে, হাসিমুখে উপভোগ করছে সামনের দৃশ্য।
নীরার কথা শুনে ওর মাথায় আ’গু’ন ধরে গিয়েছিল। প্রতিবাদ করতে দাঁড়ানো মাত্রই ওর মা গিয়ে নীরাকে তার পাওনা বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে ও এসব নীরবে সহ্য করবে এমনটাও নয়। আগে সবাই যা বলার বলে নিক। তারপর নাহয় লাষ্ট ফিনিশিং তাহমিদই করবে।

মায়ের মুখে এতগুলো কথা শুনে তাওহীদের হুঁশ আসে। এসব কি বলল মা! আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলছে!

” মা, তুমি এসব কি বলছ! আমি মানছি নীরা ভুল করেছে। ভুল আমিও করেছি। আমি বড়মার পা ধরে ক্ষমা চাইব। প্রয়োজনে নীরাও বড়মার পায়ে ধরবে। তবুও তুমি এসব বলোনা, মা। ”

” তাওহীদ তোমার মা’ র সাথে আমি একমত। তোমার বিয়ের পর থেকেই আমি লক্ষ্য করেছি, নীরা আমাদের কাউকেই তেমন পছন্দ করেনা। কি অপরাধ করেছি, সেটা আমাদের জানা নেই৷ তাই ভালো হয়, চিরতরে তুমি এই বাড়ির সাথে সম্পর্ক ঘুচাও। তোমার যা যা প্রাপ্য তার সবটাই আমি তোমাকে দিয়ে দিব। আমি এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তুমি তোমার ভাগের সকল সম্পত্তির দাম অনুযায়ী টাকা পাবে। আমিও চাইনা তুমি ভবিষ্যতে এ বাড়িতে পা রাখ। তাই আমার যা কিছু তুমি পাবে, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সেই পরিমাণ টাকা তুমি শীঘ্রই পেয়ে যাবে। ” শফিউল রাশেদিনের সিদ্ধান্ত শুনে সবাই হতবাক হয়ে গেছে।

” বাবা, আমার কোন টাকার প্রয়োজন নেই। আমার শুধু তোমাদের প্রয়োজন। তুমি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিওনা, প্লিজ। ” তাওহীদ হাতজোড় করে অনুরোধ করছে।

” তোমার জীবনে আমাদের কোন প্রয়োজনিয়তা নেই। তুমি স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে সুখী থাক। যেটা তোমার স্ত্রী চায়। একজন স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে সুখী করা তোমার কর্তব্য। আমার আর কিছুই বলার নেই। তোমরা এখন আসতে পার। ”

তাওহীদ দৌড়ে গিয়ে বড়মার পায়ে পরে।

” বড়মা, সন্তান কোন ভুল করলে বাবা-মাকেই তাদের সেই ভুল সংশোধন করে দিতে হয়। প্রয়োজনে শাস্তিও দিতে হয়। আমার ক্ষমাও বাবা-মা’ই করতে পারে। আমি ভুল করেছি বড়মা। আমাকে এই শাস্তি বাদে যেকোন শাস্তি দাও। আমার কোন আপত্তি নেই। তবুও এই বাড়ি থেকে আমাকে দূরে থাকতে বলোনা। ” তাওহীদ ডুকরে কেঁদে উঠে।

নীরা তাওহীদের কান্না দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ওর একটা সামান্য কথায় যে এতকিছু ঘটবে, তা ওর কল্পনায়ও ছিলনা। কিন্তু নীরা জানেনা ওর কাছে যেই কথা সামান্য, এই বাড়ির সকলের কাছে তা ক্ষমাহীন অপরাধ।

” ওঠ, বাবা। তুই কাঁদছিস কেন! তোর বাবা-মা কি বলল না বলল, তাতে এভাবে রিয়্যাক্ট করছিস! রেগে গেলে বাবা-মা এমন অনেক কিছুই বলে। তুই আ…….” আফরোজা নাজনীন কথা শেষ করতে পারেননা৷ সানাউল রাশেদিন তাকে টেনে নিয়ে যান নিজের রুমে৷

” তোমাকে ওদের ভেতর কথা বলতে কে বলেছে? আরও অপমানিত হতে চাও? এত মহান হওয়ার দরকার কি? জীবনে কি পেয়েছ মহানুভবতা দেখিয়ে! ” সানাউল রাশেদিন তার স্ত্রীকে রুমে নিয়ে যেতে যেতে কথাগুলো বললেন।
আসলে তিনি তার প্রানপ্রিয় স্ত্রীর এরূপ অপমান সহ্য করতে পারেননি।

” তুমি খুশি? বড়মাকে চুড়ান্ত অপমান হতে দেখে? তুমি কেমন পুরুষ? যে তার স্ত্রীকে শাসন করতে পারেনা। একজন পুরুষের কাছে মা এবং স্ত্রীর আসন আলাদা। তোমার স্ত্রী তো সেই হিসেবই ভুল করেছে। যে মেয়ে একজন মা আর একজন স্ত্রীর সম্পর্কের সমীকরণ করতে পারেনা, সে কি আদৌ কারও স্ত্রী হওয়ার যোগ্য! কিছুদিন আগে অব্দি ভেবেছি, তোমার সাথে দেখা হলে তোমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিব ভুল আর সঠিক। আজ সেই দিনও এসেছে। কিন্তু জানো আজ রুচিতে বাঁধছে তোমার সাথে কথা বলতে। যে পুরুষ স্ত্রীর ব’র্ব’র আচরণের সাথ দেয়, সে সত্যিকারের পুরুষ কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে। তবে তোমার স্ত্রীকে একটা কথা পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দাও, কুহুকে নিয়ে ভবিষ্যতে আর একটা ক’টু’বা’ক্য উচ্চারণ করলে, আমি তার জিভ কে’টে ফেলব। আর রইলো বড়মার বিষয়, সে আমার কাছে মায়ের থেকেও বেশি। তাই এই ভুল ভবিষ্যতে আর যেন না হয়। ”
তাহমিদের গলায় কিছু একটা ছিল যা শুনে নীরার অ’ন্ত’রা’ত্মা কেঁ’পে ওঠে।

” তুমি এখনও দাঁড়িয়ে আছ! তোমাদের লাগেজ নিয়ে এখুনি বেরিয়ে যাও। ” কথাটা বলেই শফিউল রাশেদিন তার মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ান। যেখানে কিছুক্ষন আগে কুহু গেছে।

” মা, তুমি এভাবে চুপ করে থেকোনা। বাবাকে বোঝাও। আমি তোমাদের না দেখে থাকতে পারবনা। ”
তাহমিনা আক্তার নিশ্চুপ।
” আহ্ তাওহীদ, কি শুরু করেছ বলতো? তারা চাননা আমরা এই বাড়িতে থাকি। তবে তোমার কিসের এত টান! আমি লাগেজ নিয়ে আসছি, এক্ষুনি বেরোব। তোমার এত আদিখ্যেতা কিসের তা আমি ভেবে পাইনা। সেই তো টিপিক্যাল একটা পরিবার। তবুও সবার কিসের এত অহংকার তা আজও বুঝলামনা। ” নীরা কথার মধ্যে দিয়ে তাওহীদকে উ’স্কে দেয়।

” আমাদের এই টিপিক্যাল পরিবার নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। এখানে সবার প্রতি সবার শ্রদ্ধাবোধ আছে, ভালোবাসা আছে, একতা আছে। আর বিপদে পাশে থাকার প্রবনতা। যেগুলো তোমার মত মেয়ের সাথে যায়না। তুমি শুধু ভাঙতেই শিখেছ। গড়ার মধ্যেও যে সুখ আছে তা তুমি জানোনা। তবে ভাঙতে ভাঙতে এমন যেন না হয় , যেখানে নিজেরই কোন ঠাঁই থাকবেনা। ” তাহমিদ না চাইতেও বলে।

” তাহমিদ, তুই মা’কে একটু বুঝা। মা কবে থেকে এতটা নি’ষ্ঠু’র হল! আমার মেয়েটা তোদেরকে খুব ভালোবাসে। এখানে না আসলে ও কষ্ট পাবে। ওকে আমাদের বেঁধে রাখার সাধ্য নেই। ”

” দোয়া করি, তোর মেয়ে যেন তার মায়ের মত না হয়। আর যাই করিস, ওকে সুশিক্ষা দিস। তবে কি জানিস, মায়া কাটাতে হলে একবারে গোড়া থেকেই কাটাতে হয়। নতুবা সেই গোড়া থেকেই নতুন করে মায়ার জন্ম নেয়। আমিও চেষ্টা করব একবারে গোড়া থেকে মায়া কাটানোর। যে মায়া সারাজীবন শুধুই ভোগাবে, লাভ কি সেই মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে? আর কি বললি? আমি নি’ষ্ঠু’র হলাম কবে থেকে? নি’ষ্ঠু’র আমি হইনি। আমি শুধু মা হওয়ার পাপমোচন করছি। এতেই যদি আমি নি’ষ্ঠু’র উপাধি পাই, তাতে আপত্তি নেই। ” এতক্ষণে কাঠিন্যের মুখোশ খুলে যায়, তাহমিনার মুখ থেকে। হু হু করে কেঁদে উঠেন তিনি।
এতকিছুর পরও নীরার মধ্যে কোন অনুশোচনা নেই দেখে তার কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়।

কুহু বিছানায় বসে কাঁদছে। কেন তার সাথেই সবসময় এমন হয়। আজ মনে হচ্ছে, ছোটমা সব সময় অপয়া বলত, তা সে ঠিকই বলত। অপমান যেন কিছুতেই ওর পিছু ছাড়েনা।

” কুহু মা, বিকেল হয়ে গেছে অথচ তুমি আমাকে চা দিলেনা। দুইদিন পর চলেই যাব। এই দুইটা দিন কি তোমার হাতের চা পান করতে চাইলে খুব অপরাধ হবে। ” শফিউল রাশেদিন কুহুর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
কুহু উনার আগমন টের পেয়েই চোখের পানি মুছে নেয়।

” এখনই চা পান করবেন, আংকেল? ” আসলে কুহু এখন বাইরে যেতে চাচ্ছেনা। ড্রয়িংরুমে সবাই বসে আছে। এখন সেখানে যেতে ওর মন সায় দিচ্ছেনা।

” আমি তোমার আংকেল হই! জানতো মা, বড় সাধ করে বড় ছেলের বিয়ে করিয়েছিলাম। একটা মেয়ের আফসোস সব সময়ই ছিল। ভেবেছিলাম বড় ছেলের বউ আসলে তাকে আমি মেয়ের মত করে রাখব। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে বউমা হয়ে থাকতে চাইল। মেয়ে আর হলোনা। তারপর ফাইনালি যখন জানলাম তুমিই আমার ছোট ছেলের বউ হচ্ছ, তখন ভিষণ খুশি হয়েছিলাম। এবার একটা মেয়ে সত্যিই পাব। কিন্তু তুমিও দেখছি আমাকে আগে থেকেই পর ভাবছ! আমার বাবা ডাক শোনার ইচ্ছে, কিন্তু তুমি আংকেল ডাকছ! ”
কুহু শফিউল রাশেদিনের এমন কথায় বেশ বিব্রত হয়। তিনি বাবা ডাকতে বলছেন। কিন্তু বিয়ের আগে এরূপ সম্ভাষণ ও কিভাবে করবে। একটু লজ্জাও লাগছে।
শফিউল রাশেদিন বুঝতে পারছেন কুহুর তাকে বাবা ডাকতে প্রথম প্রথম লজ্জা লাগবে। তাই তিনি কুহুর লজ্জা ভাঙতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।

” থাক মা, তোমার যদি আমাকে বাবা ডাকতে সমস্যা হয়, তাহলে আমাকে বাবা ডাকতে হবেনা।তোমাকে জোড় করার অধিকার আমার নেই। তুমি বরং বাবা না ডেকে, চা-ই নিয়ে আস। ”
শফিউল রাশেদিনের এমন কথা শুনে কুহুর বেশ কষ্ট হয়।
তিনি তো শুধু বাবা ডাকটাই শুনতে চেয়েছেন। এটাতো অন্যায় নয়। বেশ কিছুক্ষণ দ্বিধার দোলাচালে দুলে কুহু মুখ খোলে,

” আপনি একটু অপেক্ষা করুন, বাবা। আমি চা নিয়ে আসছি। ”
কুহুর মুখে বাবা ডাক শুনে শফিউল রাশেদিনের মুখে সুখের হাসি ফুটে। একটুআধটু অভিনয় থেকে যদি ভালো কিছু হয়, তবে মাঝেমধ্যে এমন অভিনয় করা যেতেই পারে।

” মাগো, তুমি তোমার মা’কে, মানে তাহমিনাকে একগ্লাস লেবুর শরবত করে দিও। তাহলে তার গরম মাথা ঠান্ডা হবে। ” আসলে শফিউল রাশেদিন কুহুর মন ভালো করতে চাচ্ছেন।

” আচ্ছা, বাবা। ” কুহু হেসে জবাব দেয়।
শফিউল রাশেদিন কুহুর মুখে পুনরায় বাবা ডাক শুনে ওকে বুকে জরিয়ে নেন। কেঁদে উঠেন হুহু করে। অনেকদিন পর আজ যেন তার বুক জুড়ালো।

কুহু ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই দেখল সেখানে তাওহীদ, তাহমিদ এবং তাহমিনা আক্তার, নীরা দাঁড়িয়ে আছে। তাওহীদ বারবার তার মা’কে কিছু বোঝাতে চাইছে। কিন্তু তাহমিনা আক্তার তার ছেলের কথা শুনতে ইচ্ছুক নন।
কুহু দ্রুতপায়ে রান্নাঘরে আসে। চুলায় পানি বসিয়ে দেয়।
তাহমিদ আঁড়চোখে কুহুকে রান্নাঘরে যেতে দেখল। কুহুকে দেখেই ওর ঠোঁটে হাসি ফোটে। মেয়েটার জন্য বড্ড চিন্তা হচ্ছিল।

চলবে…

#বিন্দু_থেকে_বৃত্ত
#পার্ট_৪২
জাওয়াদ জামী

নীরা চাইছে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে যেতে। আজ যখন একেবারে একা থাকার সুযোগ এসেছে, ও সেটা হাতছাড়া করতে চায়না।
ও কখনোই চায়নি শ্বশুর বাড়িতে থাকতে, এমনকি এটাও চায়না, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ওর কাছে গিয়ে থাকুক। ও চায় ওর ফ্ল্যাটে নিজের মত করে থাকতে। নীরা বরাবরই উচ্চাভিলাষী স্বভাবের। সেই সাথে স্বাধীনচেতা। শ্বশুর বাড়িতে থাকলে, তাদের সাথে যোগাযোগ রাখলে স্বাধীনতায় বাঁধা আসতে পারে ভেবেই সে দূরে থাকতে চায়। যেখানে শুধু তার বাবা-মা, ভাই-বোনরাই আসবে।

তাওহীদ বারবার ওর মায়ের কাছে ক্ষমা চাচ্ছে। কিন্তু তাহমিনা আক্তার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।

” যেখানে তোর বউ চাইছেনা এই বাড়িতে থাকতে, সেখানে তুই এমন নাছোড়বান্দার মত করছিস কেন? বউকে প্রশ্রয় দেয়ার সময় কিংবা অন্যায় যখন করেছিস, তখন একবারও মনে হয়নি, আমরাও একদিন মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি? আমার যা বলার বলে দিয়েছি, এরপরও যদি তুই না যাস, তবে আমাকেই এই বাড়ি ছাড়তে হবে। ”

” মা, তুমি আমাকে এভাবে বলছ, এতে তোমার কষ্ট হচ্ছেনা! আমি সব সময়ই তোমার আদরের ছেলে ছিলাম। ”

” না, আমার কোন কষ্ট হচ্ছেনা। অনেক লেখাপড়ার সুবাদে একটা প্রবাদ তোর জানা থাকার কথা। ” দুষ্টু গরুর থেকে, শূন্য গোয়াল ভালো। ” আশা করছি আর কিছু বলতে হবেনা। ”

তাহমিদ আজকে ওর মায়ের এই রূপ দেখে অবাক হয়ে গেছে। তার শান্ত, ধীর স্বভাবের মা আজ এভাবে গর্জে উঠল! যেই মা কখনোই কারও সাথে উচ্চস্বরে কথা বলেনি, আজ সেই মানুষটা এতটা রিয়্যাক্ট করল!

তাওহীদ বুঝতে পারছে, কিছুতেই মায়ের সিদ্ধান্ত বদলাবেনা। তাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

তূর দাদীমাকে রেখে কোথাও যাবেনা বলে কান্নাকাটি শুরু করেছে। নাতনীর কান্না দেখে তাহমিনা আক্তারের বুক ফেটে যাচ্ছে। তিনি যতই বলুন না কেন, মায়া গোড়া থেকে উপরে ফেলবেন, কিন্তু তিনি নিজেও এটা জানেন তা কখনোই হবার নয়। এই নাতনী তার প্রান। তিনি নাতনীর থেকে দূরে থাকলেও প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলেছেন, তূরের সাথে। পিচ্চিটাও কত আবদার, নালিশ জানিয়েছে দাদীমার কাছে। ভিডিও কলে থাকা অবস্থায়ই কত বায়না ধরেছে। যতই দূরে থাকুক না কেন, তূরের সব আবদার তিনি পূরণ করেছেন।

ওরা ‘ কুঞ্জছায়া ‘ র সীমানা পেরোলে, তাহমিনা আক্তার তার রুমে এসে অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
তাহমিদ বুঝতে পারে তার মা ভেতরে যেয় কাঁদছে। কিন্তু সে মায়ের কাছে না যেয়ে ড্রয়িংরুমেই বসে থাকে।

কুহু শরবত নিয়ে তাহমিনা আক্তারের রুমের দিকে যেতেই তাহমিদ ওকে নিজের কাছে ডাকে।

” হাতে কি? ”
” শরবত। মা’র জন্য নিয়ে যাচ্ছি। ”
” কার জন্য! ” কুহুর মুখে মা শব্দ শুনে তাহমিদ ধন্দে পরে যায়।
” যেটা শুনেছেন সেটাই। আপনার মা’কেই মা বললাম। ”
” অবশেষে। যাহোক গ্লাসটা আমাকে দাও। গলা শুকিয়ে গেছে। মা’কে কিছুক্ষণ পর দিও। এখন মা একটু একা থাকুক।

সেই রাতে কারও খাওয়া হলোনা।
সকলের মন খারাপ থাকায়, সন্ধ্যার পর পরই যে যার রুমে ঢুকে যায়।

তাহমিনা আক্তারের রাত কাটল নির্ঘুম। বারবার তাওহীদের অনুনয় মাখা কথা, অসহায় চেহারা চোখের সামনে ভাসছে। তূরের কান্নার কথা মনে হলেই, বুকের ভিতর দু’ম’ড়ে’মু’চ’ড়ে যাচ্ছে।
তিনি ভেবে পাননা, মায়েরা কেন এত বেহায়া হয়?
সন্তান হাজার অপমান করার পর, হাজার অবহেলা করার পরও কেন তাদের জন্য দোয়া ছাড়া অন্য কিছুই আসেনা!

তাওহীদ নিয়মিত বাড়ির সবার কাছে ফোন করে।কিন্তু ওর নম্বর দেখলেই কেউ ফোন রিসিভ করেনা। তাহমিনা আক্তার সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছেন, কেউ যেন ওর ফোন রিসিভ করেনা। আফরোজা নাজনীনের ইচ্ছে হওয়া স্বত্বেও তাহমিনা আক্তারের কথায় তাওহীদের ফোন রিসিভ করেননা।

দৃষ্টি মামাশ্বশুরের বাড়িতে খুব হৈ-হুল্লোড় করে কাটায়। সাতদিন সেখানে কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে। দুইদিন পর ফুলতলা যেতে চাইলে ওর শ্বাশুড়ি বাধ সাধে। তার একটাই কথা, সাতদিন বেড়ানোর পর আবার কিসের বাপের বাড়ি যাওয়া। একমাসের আগে বাপেরবড়ি যাওয়া হবেনা।
শ্বাশুড়ির কথা শুনে দৃষ্টির মন খারাপ হয়ে যায়।
কতদিন হয়েছে বাবার বাড়িতে যায়নি। এরপর আবার মায়ের গহনা এনেছে পনেরদিন হয়ে গেছে। গহনাগুলো ফেরত দেয়ার জন্য হলেও ফুলতলা যাওয়া দরকার৷ কিন্তু শ্বাশুড়ির সাথে সাথে সবুজও বেঁকে বসেছে। একমাসের আগে সেখানে যাওয়া হবেনা।
বাধ্য হয়ে দৃষ্টি গহনাগুলো আলমিরার মাঝে গোপন সিন্দুকে রাখে। আলমিরা ভালোভাবে লক করে চাবি ড্রেসিংটেবিলের গোপন কুঠুরিতে রেখে দেয়। যেই কুঠুরির খোঁজ এ বাড়ির কেউ জানেনা।

তিনদিন পর দৃষ্টি ওর শ্বাশুড়ির সাথে পাশের গ্রামে যায়। ওর শ্বাশুড়ির খালা মারা গেছে। সেজন্যই ওরা সকাল সকাল রওনা দেয়। ওর শ্বশুরের ইউনিয়ন পরিষদে কাজ থাকায় সে যেতে পারবেনা। সবুজ ব্যবসার জন্য শহরে যাবে। তাই দৃষ্টি ওর শ্বাশুড়ির সাথে গিয়েছে।
ওদের ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি তালাবন্ধ করে রেখে গিয়েছিল দৃষ্টির শ্বাশুড়ি। কিন্তু গেইটের সামনে এসে ওদের দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়। মেইন গেইটের তালা ভাঙ্গা! ওরা হন্তদন্ত হয়ে ভেতর ঢোকে। পরপর তিনটা ঘরের তালা ভাঙ্গা দেখে দৃষ্টির শরীর অবশ হয়ে আসছে। কারন তিনটা ঘরের মধ্যে তার ঘর আছে। দৃষ্টি দৌড়ে ওর রুমে ঢোকে। উদভ্রান্তের ন্যায় এদিকওদিক তাকায়। আলমিরার দিকে চোখ পরতেই ওর হার্টবিট থেমে যায়। আলমিরার লক ভাঙ্গা দেখে, এলোমেলো পায়ে সেদিকে এগোয়। দুর্বল হাতে আলমিরার দরজা খুলে যেখানে গহনা রেখেছে, প্রথমে সেখানেই হাত দেয়। সাথে সাথেই ওর বুক ফে’টে কান্না আসে। ভালো করে হাতড়াতে শুরু করে। কিন্তু গহনার জায়গা ফাঁকা! এবার দৃষ্টি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। আলমিরার ভেতর থেকে সমস্ত কাপড়চোপড় নামিয়ে তন্নতন্ন করে খুঁজে। কিন্তু গহনার বাক্সের টিকিটিও নজরে আসেনা।
দৃষ্টির কান্না শুনে ওর শ্বাশুড়ি দৌড়ে আসে। দৃষ্টিকে পাগলের ন্যায় করতে দেখে কি হয়েছে জিজ্ঞেস করে। দৃষ্টি জানায় গহনার বাক্স কোথাও নেই।
ওর শ্বাশুড়ির টাকাও খোয়া গেছে। এমনিতেই সে নিজের টাকা হারানোর শোকে কাতর ছিল, তারউপর দৃষ্টির গহনা নেই শুনে আহাজারি করতে শুরু করে। দৃষ্টির সাথে মিলে পুরো ঘর খুঁজে কোথাও পায়না গহনার বাক্স।
দৃষ্টি কাঁদছে আর বিলাপ করছে। ওর বাবাকে না জানিয়ে মা গহনাগুলো দিয়েছে। এখন সেগুলো ফেরৎ দিতে না পারলে, ঐ বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে।
গহনার শোকে কাঁদতে কাঁদতে দৃষ্টি অজ্ঞান হয়ে যায়। ওর শ্বাশুড়ি এবার পড়েছে বিপদে। বাড়িতে কোন পুরুষ নেই, তারউপর এভাবে মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গেল। এবার কি করবে সে?

দৃষ্টি মেঝেতেই অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। ওর শ্বাশুড়ি দৃষ্টির চোখেমুখে একটু পানির ছিটা দেয়। তবুও ওর জ্ঞান ফিরেনা। অবশেষে ভদ্রমহিলা বিরক্ত হয়ে দৃষ্টিকে ঐ অবস্থায়ই ঘরে রেখে নিজের ঘরে চলে যায়। তার মোটেও ইচ্ছে নেই দৃষ্টির সেবা করার।

কতক্ষণ এভাবে পরে ছিল তা দৃষ্টির জানা নেই। চোখ খুলেই নিজেকে মেঝেয় আবিষ্কার করে সে। মাথা ভার হয়ে আছে। অনেক কষ্টে মেঝে হাতড়ে উঠে বসে। এদিকওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারে ঘরে সে সম্পূর্ণ একা। ঠিক তখনই পুনরায় মনে হয় গহনার কথা। আবারও ডুকরে কেঁদে উঠে। কি জবাব দেবে মায়ের কাছে! কিভাবে জানাবে তাকে, যে গহনাগুলো চুরি হয়েছে! কিছুই ভাবতে পারছেনা দৃষ্টি। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। হাত ব্যাগ থেকে ফোন বের করে সবুজের নম্বরে ফোন করে। রিং হয়েই যাচ্ছে কিন্তু সবুজ ফোন রিসিভ করেনা। বেশ কয়েকবার ফোন দেয় দৃষ্টি। কিন্তু সবুজ একবারও রিসিভ করেনা। দৃষ্টি বাইরে এসে দাঁড়ায়। ওর শ্বাশুড়ির ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল দরজা ভেতর থেকে লাগান। দৃষ্টি মনমরা হয়ে ভাবতে থাকে, তারা কিভাবে পারল এই অবস্থায় ওকে একা ঘরে ফেলে রেখে ঘুমাতে! এদিকে দুপুর থেকে না খাওয়ায় শরীর বেশ দূর্বল লাগছে। ক্ষুধাও লেগেছে। খাবার ঘরে এসে দেখল টেবিলে একটা বাটিতে আলু ভর্তা আর ছোট একটা বাটিতে কয়েক মুঠো ভাত রাখা আছে। দৃষ্টি হাত ধুয়ে এসে ভাতটুকু খেয়ে নেয়।
ধীর পায়ে নিজের ঘরে আসে। খাটে বসে নানান চিন্তা করতে থাকে। কে করল এমন! এই বাড়ির মানুষজন ছাড়া কেউই জানতনা গহনাগুলো কোথায় আছে। আর চেয়ারম্যান বাড়িতে চুরি করার সাহস কার হতে পারে!
দৃষ্টির ভাবনার মাঝেই ওর ফোন বেজে ওঠে। দৃষ্টি ফোন হাতে নিয়ে দেখল সবুজের নাম। দৃষ্টি ফোন
রিসিভ করে সবুজকে সবটা জানায়। সবুজ দৃষ্টির কথা শুনে চমকে উঠে। সে জানায় আগামীকাল দুপুরের আগেই ও চলে আসবে। এরপর দৃষ্টিকে নিয়ে থানায় যাবে। সবুজ এরকম অনেক আশ্বাস দিল দৃষ্টিকে।

পরদিন সবুজ বাড়িতে এসে দৃষ্টিকে নিয়ে থানায় যায়। অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে মামলা করে। দৃষ্টি ওর মা’কে জানালে সে গহনার শোকে আহাজারি করতে থাকে। সেই সাথে তার ভয়ও হয়, তার স্বামী জানলে কি হতে পারে এই ভেবে। অনেক ভেবেচিন্তে শিউলি কায়েসকে কিছু না বলার সিদ্ধান্ত নেয়। সেইমত দৃষ্টিকেও জানিয়ে দেয়।

কুহু কোচিং থেকে এসে বাসায় কাউকেই দেখলনা। সিক্তা কোচিং শেষে ওর এক বান্ধবীর সাথে শপিংয়ে গেছে। ও কুহুকেও যাওয়ার জন্য অনেক সেধেছে, কিন্তু কুহু যায়নি। ও বাসায় এসে কলিং বেল দিতেই লক্ষ্য করল দরজা খোলা রয়েছে। কোন কিছু না ভেবে ও ভেতরে ঢোকে। ওপরে এসে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ফুপুকে ডাকতে থাকে। কিন্তু ফুপু সাড়া দেয়না। এরপর একে একে তাহমিনা কিংবা দিদুকে ডেকেও লাভ হয়না। পরে গেইটম্যানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে তাহমিনা আক্তার দিদুনকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছে। আর ফুপু গিয়েছে ছোট ফুপুর বাসায়। তাহমিদ কোথায় তা তিনি বলতে পারলেননা। কুহু অবাক হয়ে ভাবে বাসায কেউই নেই, অথচ দরজা খোলা! এতবড় ভুল ফুপু কিংবা তাহমিনা আন্টি করছে!

এত বড় বাড়িতে একা থাকতে কুহুর একটু ভয় ভয় করছে। ও ভালোভাবে দরজা লক করে, রান্নাঘরে এসে খাবার নিয়ে ডাইনিং রুমে আসে।
কালোজিরে ভর্তা দিয়ে ভাত মাখিয়ে কেবলমাত্র মুখে দিয়েছে, তখনই পেছনে কারও আওয়াজ পায়। ভয়ে কুহুর কলিজা লাফ দিয়ে বাইরে আসতে চায়। ও কাঁপছে। কে এসেছে পেছনে? মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। সাহস করে উঠে দাঁড়ায়। পেছনে ফিরতেই কেউ হঠাৎই ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।
” আজকে পরে যেওনা কিন্তু। আমাকে রেখেই খাচ্ছ! একটুও মায়াদয়া নেই আমার জন্য! ” নেশাতুর কন্ঠ কানে আসতেই কুহু বুঝল ব্যাক্তিটি কে।
ও সেই অবস্থায়ই হেসে উত্তর দেয়,
” আমি কি জানি আপনি বাসায় আছেন। জানলে নিশ্চয়ই আপনাকে না ডেকে খেতে বসতামনা। কিন্তু এভাবে ভূতের মত পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন কেন! জানেন আমি কত ভয় পেয়েছি? ”
” আমি ভূত হই আর দৈত্য-দানব হই, সব রূপেই আমি তোমার। তাই এখন থেকে অভ্যাস করে নাও। হুটহাট তোমার সামনে, পেছনে, আশেপাশে আমি ছায়ার মত যখনতখন হাজির হব। এখন আমাকে একটু খাইয়ে দাওতো। মেডিকেল থেকে এসেই ঘুমিয়েছি, তাই খাওয়া হয়নি। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ”
” আমি খাইয়ে দিব! মানেটা কি? ”
” কেন খাইয়ে দিলে সমস্যা কি! নেহাৎ মা-বড়মা নেই, তাই তোমাকে বলছি। তাছাড়া আমার কি দরকার ছিল তোমার হাত থেকে খাওয়ার। এই কি দিয়ে খাচ্ছ তুমি? এটা রেখে মাংস নিয়ে আস। জলদি কর। ”
তাহমিদ ঠেলে কুহুকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দেয়। কুহু মাংসের বাটি নিয়ে এসে দেখল তাহমিদ ওর পাশের চেয়ারে বসেছে।
কুহু বাটি রাখতেই তাহমিদ ওর হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। প্লেটে আরেকটু ভাত নিয়ে, কয়েক টুকরা মাংস আর একটু ঝোল নেয়।
” এবার খাইয়ে দাও। ” বলেই হা করে তাহমিদ।
বাধ্য হয়ে কুহু কাঁপা কাঁপা হাতে তাহমিদের মুখে খাবার তুলে দেয়।

চলবে…