বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব-২+৩

0
399

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২+৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

আলোর স্বামী আতিক ছুটে এসে তার সতীন রূ’পাকে এলো’পা’তা’ড়ি মা’র’তে মা’র’তে বলে,
‘তোর এত বড় সাহস আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস।’

আতিক এইমুহূর্তে যেন প’শুর ন্যায় শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছিল। আতিকের এই ভয়ংকর রূপ দেখে আলো স্তব্ধ হয়ে যায়। রূপাকে কি নির্ম’মভাবে মা’রছে আতিক। অথচ রূপার সাথে তার ভালোবাসার বিয়ে। আতিকের মা’র খেয়ে রূপার অবস্থা খুব খা’রা’প হয়ে যায়। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল জীবনের শে’ষ প্রান্তে দাড়িয়ে আছে। আলোর খুব মায়া হয় রূপার উপর। যতই সে আলোর সতীন হয়ে আসুক সেও তো একটা মানুষ।

আলো রূপাকে বাচানোর জন্য আতিকের সামনে ঢাল হয়ে দাড়ায়। আতিকের বিবেকবুদ্ধি তখন লোপ পেয়েছে। আতিক রূপাকে ছেড়ে আলোকে মা’রতে উদ্যত হয়৷ এক লা’থিতে আলোকে দূরে সরিয়ে দেয়। আলোর পেটে ভয়ানক আঘাত লাগে৷ কষ্টে যন্ত্রণায় আলো ছটফট করতে থাকে। আমিনা বেগম ছুটে যায় আলোর কাছে। আলো বলে,
‘আমার খুব কষ্ট হচ্ছে আম্মা। আমার বাচ্চাটা মনে হয় আর বাচবে না।’

আলোর কথাটা কানে আসতেই থেকে যায় আতিক। এমন একটা খবর যে তাকে শুনতে হবে সেটা সে কল্পনাও করতে পারেনি। আমিনা বেগম মুখে আচল দিয়ে কাদতে থাকেন। আতিকের দিকে অ’গ্নি’দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘নিজের সন্তানের ক্ষতির কারণ যদি তুই হোস। তাহলে আমি ভুলে যাব তুই আমার সন্তান। নিজের হাতে তোকে শে’ষ করে দেব।’

আতিক ছুটে এসে আমিনাকে বলে,
‘কি হয়েছে আম্মু বলো আমায়। আলো কি প্রেগন্যান্ট। আমাকে কিছু বলো নি কেন?’

আমিনা বেগম রাগে ক’ট’ম’ট করতে করতে বলেন,
‘তুই সুযোগ দিয়েছিলি কখন? কয়েকদিন থেকে আলোর মাথা ব্যাথা, বমির সমস্যা। তাই আমি কাল ওকে নিয়ে হাসপাতালে যাই পরীক্ষা করতে। তখনই এই সুসংবাদটা পাই। বাড়িতে ফিরে তোকে এই খবরটা জানিয়ে সারপ্রাইজ দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই তো আমাদেরকেই সারপ্রাইজ দিয়ে দিলি। নতুন বউকে নিয়ে এলি। আলোকে নির্দয়ের মতো ঘর থেকে বের করে দিলি। মেয়েটা এই অবস্থায় কত কষ্ট সহ্য করল।’

আলো সমানে গোঙাতে থাকে। আমিনা বেগম আতিককে বলেন,
‘তুই গাড়ি বের কর এক্ষুনি। আলোকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’

আতিক আলোকে কোলে করে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তোলে। তারপর তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।

৩.
‘কি অবস্থা আমার স্ত্রীর?’

আতিক তীব্র উৎকন্ঠার সাথে প্রশ্নটি করে। আতিকের উৎকন্ঠার বিপরীতে ডাক্তার দুঃখের সাথে বলেন,
‘দুঃখিত মিস্টার হোসাইন আপনার স্ত্রীর মিস ক্যারেজ হয়ে গেছে। আপনাদের একটু সচেতন হওয়া দরকার ছিল। ওনার পেটে এত বেশি আঘাত লাগল কি করে?’

ডাক্তারের কথা শুনে আতিকের মাথা নিচু হয়ে যায়। সে ডাক্তারের সামনেই কেদে দেয়।

‘আমি আমার সন্তানের খু’নি ডক্টর। আমার কারণেই এমনটা হয়েছে।’

ডাক্তার আতিকের কথার কোন মানে খুঁজে পায়না। আতিক ছুটে যায় আলোর কেবিনে।

আমিনা বেগম আলোকে শান্তনা দিচ্ছিলেন কিন্তু আলোকে সামলাতে পারছিলেন না। আলো সমানে কেদেই চলছিল। সন্তান হারানোর কষ্ট আলো মেনে নিতে পারছিল না। কত আশায় ছিল আলো যে নতুন সন্তান এসে তার জীবনটা বদলে দেবে কিন্তু তার ভাগ্যে বুঝি সন্তান সুখ নেই।

‘আমার জীবনটা এমন কেন আম্মা। আমার জীবনটা এত কষ্টে ভরা কেন? আমার জন্মই হয়েছে বিবর্ণ ভাবে। জন্মের পরেই মাকে হারিয়েছি। সৎ মা যদিও মায়ের মতোই ভালোবাসা দিয়েছে কিন্তু সৎ বোনের অত্যা’চার সহ্য করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত। আমার নিজের আপু জোনাকির জীবনও আমার মতো জানেন। বেচারি ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু বিয়ের চার বছরেও সন্তান না হওয়ায় ওর স্বামী ওকে ডিভোর্স দিয়েছিল। এরপর সমাজের লোকের কত কথা সহ্য করেছে। আমাদের দুই বোনের জীবনই আস্ত একটা বিবর্ণ আলোকবর্ষ জানেন। যেই আলোকবর্ষে আলোর কোন চিহ্ন নেই।’

আলোর কথাগুলো আমিনা বেগমের বুক ক্ষ’ত’বি’ক্ষ’ত করে দেয়। আতিকও দাড়িয়ে আলোর সব কথা শুনে ফেলে। নিজের প্রতি ঘৃ’ণা তার আরও বেড়ে যায়।

আলোর নজর পড়ে দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা আতিকের উপর। আতিককে দেখে ক্ষো’ভে ফে’টে পড়ে আলো।

‘ঐ লোকটা এখানে কি করছে আম্মা? আমার সন্তানকে মে’রেও কি ওনার শান্তি হয়নি? এখন আমাকেও কি মা’রতে চান? ওনাকে চলে যেতে আমার সামনে থেকে। নাহলে আমি ওনাকে খু’ন করে দেব।’

আতিক আলোর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। আমিনা বেগম এসে আতিককে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। তিনি বলেন,
‘তোর মতো কুলা’ঙ্গা’র ছেলে জন্ম দিয়ে আমি পা’প করেছি। এখন চাইলেও সেই পা’পমো’চন করতে পারব না। ভাগ্য ভালো তোর বাবা বেচে নেই। নাহলে তিনি এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারতেন না।’

‘আম্মু আমি জানি আমি ভুল করেছি। আমি আমার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। আমায় ক্ষমা করে দাও আম্মু।’

‘তোকে আমি বা আলো কেউ কখনো ক্ষমা করব না। আর খবরদার আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না। তোকে নিজের ছেলে বলতেও আমার ঘৃ’ণা হচ্ছে। কোন পাপের ফলে যে, তোর মতো একটা প’শুকে জন্ম দিয়েছি। তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা বলছি। নাহলে তোকে মে’রে নিজের পা’পের প্রায়শ্চিত্ত করব।’

আতিক চলে আসে হাসপাতাল থেকে। অনুতা’পের আগু’নে দগ্ধ হচ্ছে আতিক। বেচে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আর তার নেই। অসময়ে সঠিন জ্ঞান কোন কাজে আছে না। আতিকের ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছে। এখন সে চাইলেও আর কিছু ঠিক করতে পারবে না। কারণ সে নিজের হাতেই সবকিছু ন’ষ্ট করে দিয়েছে।

৪.
আতিক বাড়ি ফিরে দেখে রূপা কোথাও নেই। রূপার প্রতি যদিও এখন তার আর কোন মায়া নেই। রূপাকে নিজের জীবনের সবথেকে বড় ভুল মনে হচ্ছে তার। আতিক এখন চায় সব যেন ঠিক হয়ে যায়। যদি ফিরে যেতে পারত একদিন আগে তাহলে সে সব ঠিক করতে পারত।

আচমকা কলিং বেলের শব্দে আতিক বিরক্ত হয়। কে এলো এখন? আলো আর আমিনা বেগম তো এখন হাসপাতালে। এত তাড়াতাড়ি নিশ্চয়ই হাসপাতাল থেকে আসবে না। তাহলে কি রূপা ফিরে এলো?

রূপার কথা ভেবে আতিকের মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সে দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খুলে যা দেখে সেটার জন্য সে মোটেই প্রস্তুত ছিলনা।

হ্যা, রূপাই এসেছে তবে একা আসেনি। সাথে পুলিশ নিয়ে এসেছে। রূপা পুলিশদেরকে বলে,
‘গ্রেফতার করুন এই লোকটাকে। এনার একজন স্ত্রী থাকা স্বত্বেও ইনি তার অনুমতি না নিয়ে আমায় বিয়ে করেছেন, বিয়ের পর আমার উপর অক’থ্য অত্যা’চা’র করেছেন। আমি ওনার নামে নারী নি’র্যা’তনের মামলা করব।’

আতিক নিমেষেই ঠান্ডা হয়ে যায়। জে’লে যাওয়ার ভয়ে রূপার পা ধরে বসে পড়ে আতিক। অনুরোধ করে,
‘আমাকে তুমি জে’লে পাঠিও না রূপা। আমি তো তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে এনেছিলাম। তখন একটু মাথায় রাগ উঠে গিয়েছিল তাই,,,,তুমি সেইজন্য আমায় পুলিশে দেবে?’

রূপা এক ঝ’টকায় আতিককে নিজের পা থেকে সরিয়ে বলে,
‘তুই আমাকে যেভাবে মে’রেছিস তারপরও তোকে ক্ষ’মা করব ভাবছিস? তোকে জে’লের ভাত খাইয়ে তবে আমার শান্তি।’

সঙ্গে সঙ্গে আতিককে গ্রেফতার করা হয়। আতিককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশ স্টেশনে। রূপা তৃপ্তির হাসি হাসে।

আলো তার শাশুড়ীর সাথে হাসপাতালে ছিল। রূপাও হাসপাতালে চলে আসে। রূপাকে দেখে তারা কেউই খুশি হয়না বরং তারা দুজনেই রূপাকে দেখে প্রচণ্ড রেগে যায়।

রূপা খিলখিল করে হেসে বলে,
‘আতিক এখন জে’লে এই সুখবরটাই দিতে এলাম।’

সাথে সাথে আমিনা বেগমের থা’প্পর তার গালে পড়ে। তিনি বলেন,
‘তোর মতো মেয়েদের জন্যই শত শত মেয়ের সংসার, স্বপ্ন ন’ষ্ট হয়। তোদের চরম শা’স্তি পাওয়া উচিৎ।’

রূপা মৃদু হাসে। রূপা আলোর দিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
‘আমি কিন্তু তোমার অনেক বড় উপকার করেছি। তোমার উচিৎ আমাকে ধন্যবাদ জানানো।’
চলবে ইনশাআল্লাহ
>>গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন।

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা মনি

রূপা আলোর দিকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,
‘আমি কিন্তু তোমার অনেক বড় উপকার করেছি। তোমার উচিৎ আমাকে ধন্যবাদ জানানো।’

আলো রূপার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকায়। এই মুহুর্তে রূপাকে তার পৃথিবীর সবথেকে খা’রা’প মেয়ে মনে হচ্ছে। আলো রসিকতার সাথে বলে,
‘তোমার মতো মেয়েরা আর যাই হোক কারো উপকারের কারণ হতে পারে না। তোমরা শুধু অন্যের সংসার ভাঙতে পারো।’

‘হ্যা ঠিক বলেছ আমি খারাপ মেয়ে। আমি জানি আমি খারাপ। কিন্তু তোমার স্বামীর থেকে কম খারাপ। তুমি জানো তোমার স্বামী একজন ধ’র্ষ’ক?’

রূপার কথাটা শুনে আলোর মাথা বনবন করে ঘুরতে থাকে। সে এটা জানে যে আতিক ভালো লোক নয়। কিন্তু এত বড় একটা অন্যায়ের সাথে যে আতিক যুক্ত থাকতে পারে সেটা তার ভাবনারও বাইরে ছিল।

রূপা বলতে থাকে,
‘কি অবাক হচ্ছো তাইনা? আমার কথাটা নিশ্চয়ই বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে তোমার শাশুড়ীকে জিজ্ঞাসা করো।’

আলো আমিনা বেগমের দিকে তাকায়। আমিনা বেগম চোখ নামিয়ে নেন। তার চোখে মুখে অনুশোচনার ছাপ স্পষ্ট। আলোর মনে সন্দেহ দানা বাধে। তাহলে কি রূপা যা বলছে তা সত্য?

‘চুপ আছেন কেন মিসেস আমিনা বেগম উত্তর দিন। আপনার ছেলের এত বড় একটা সত্য কিভাবে লুকালেন নিজের ছেলের বউয়ের থেকে? মেয়েটাকে এতদিন এভাবে ঠকাতে পারলেন?’

রূপার কথাটা শুনে আমিনা বেগম আলোর দিকে তাকান।

‘বিশ্বাস কর আলো আমি তোকে ঠকাতে চাইনি। এটা অনেক বছর আগের একটা ঘটনা। সেইসময় আতিক একটা ভুল করে ফেলেছিল। প্রমাণের অভাবে আর টাকা পয়সার জোর খাটিয়ে সব বিষয় ধামাচাপা দেওয়া হয়। আমি ভেবেছিলাম আতিক এতদিনে বদলে গেছে কিন্তু….’

আলোর হতবাকে সীমা ছাড়িয়ে যায়। এই একবছরে আতিকের থেকে খারাপ ব্যবহার সহ্য করেছিল সে শুধু নিজের শাশুড়ীর ভালোবাসার জন্য। আর আজ আলো জানতে পারল তিনিও কি-না তাকে ঠ’কি’য়েছেন। আলোর গোটা পৃথিবীটা অন্ধ’কা’রে নিম’জ্জি’ত হয়। এখন আলোর মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে কেউই ভরসার যোগ্য নয়। নাহলে যেই আমিনা বেগমকে আলো অন্ধের মতো বিশ্বাস করতো সেই কিনা আলোকে একটা ধ’র্ষ’কের সাথে বিয়ে দিয়েছে।

৫.
‘তুমি জানো আলো তোমার স্বামী আতিক কি করেছিল? আমার চাচাতো বোন রেহানা, খুব সহজ সরল একটি মেয়ে ছিল। গ্রাম থেকে পড়াশোনার উদ্দ্যেশ্যে আমাদের কাছে শহরে আসে। রেহানা খুব মিশুকে ছিল সবার সাথে ভালোভাবে মিশত। গ্রাম্য মেয়ে হওয়ায় ওর মনে তেমন প্যা’চ ছিলনা। সবাইকে বিশ্বাস করতো। আমি প্রথম প্রথম ওকে পছন্দ করতাম না কিন্তু ওর মিশুকে স্বভাবের জন্য ওর সাথে না মিশেও পারি না। আতিক আমার বন্ধু হওয়ার সুবাদে প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যেত। আমাদের ফ্যামিলি ভীষণ মডার্ন ছিল তাই এই নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা ছিলনা। আমিও ছিলাম তেমনই হুটহাট ছেলে বন্ধুদের বাড়িতে নিয়ে আসতাম। হ্যা এটা ঠিক আমি অনেক ছেলের সাথেই রিলেশনে ছিলাম কিন্তু রেহানা তো এমন ছিলনা। আমি আতিককে খুব ভালো করেই চিনতাম। তাই রেহানার দিকে যখন ও তাকাতো তখন ওর তাকানো দেখেই আমি বুঝে যেতাম ও কোন ফ’ন্দি আটছে। আমি তখন অনেক স্বার্থপর ছিলাম তাই নিজের ছাড়া আর কারো কথা ভাবিনি। একদিন যখন আমরা কেউ বাড়িতে ছিলাম না তখন আতিক আমাদের বাড়িতে আসল। রেহানা বাড়িতে একা ছিল। ওকে একা বাড়িতে দেখে আতিক একটা সুযোগ পেয়ে যায় নিজের চা’হিদা মেটানোর। সেইদিন আতিক রেহানাকে ধ*র্ষ*ণ করে।’

রূপার কথাগুলো শুনে আলো কাপতে থাকে। আতিকের উপর ঘৃ’ণা আর রাগে সে ফে’টে পড়ে। রূপার চোখে জল। রূপা বলে,
‘জানো আমিও না খুব একটা ভালো মেতে তেমনটা নয়। রেহানা সেদিন আমাকেই সর্বপ্রথম তার সাথে হওয়া অবিচারের কথা বলে। আমার মতো একটা মেয়ে যে বিয়ের আগে নিজের স’তী’ত্ব খুইয়ে বসেছিলাম তাই আমার কাছে এসব খুব সাধারণ মনে হয়েছিল। আমি রেহানাকে বলেছিলাম চুপ থাকতে। রেহানা সেদিন আমার কথায় খুব কষ্ট পেয়েছিল। আমার দিকে কিরকম ঘৃ’ণার দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। এরপর রেহানা আমাদের বাড়ি ছেড়ে গ্রামে চলে যায়। গ্রামে গিয়ে ওর বাবা-মাকে সব জানায়। রেহানার বাবা একজন শিক্ষক ছিলেন। তিনি তার মেয়ের প্রতি হওয়া অন্যায় মুখ বুজে মেনে নিতে চাননি। তিনি আমার বাবার সাথে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করেন কিন্তু আমার বাবাও কোন ঝা’মে’লায় জড়াতে চাননি। তাই তিনি বলেন তাকে কোনরকম সাহায্য করতে না করে দিয়েছিলেন। রেহানার বাবা তখন নিজ উদ্যোগে পুলিশের কাছে মামলা করে আতিকের নামে। কিন্তু আতিকের ক্ষমতার কাছে তারা হার মেনে যায়। আতিকের তো কিছুই হয়না বরং সবাই রেহানার নামেই ছি ছি করতে থাকে। রেহানা এসব সহ্য করতে না পেরে সু’ই’সা’ই’ড….’

রূপা থেকে যায়। আলো ব্যঙ্গ করে বলে,
‘তুমি একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের পাশে দাড়াতে পারলে না? এখন আর কেদে কি হবে। রেহানার পরিস্থিতির জন্য কিন্তু কোন না কোনভাবে তুমিও দায়ি। তুমি আর তোমার বাবা একটু সাহায্য করলেই হয়তো রেহানা আজ এরকম সিদ্ধান্ত নিত না।’

‘আমি জানি সেটা। আমিও দো’ষী। রেহানার মৃ’ত্যুর পর আমি অনু’শো’চনায় দ’গ্ধ হতে থাকি। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আতিককে একদিন না একদিন তার পা’পের শাস্তি দেবোই। কিন্তু সেইসময় আমার হাতে কিছু ছিলনা।’

৬.
আলো রূপাকে জিজ্ঞেস করে,
‘আতিককে শা’স্তি দেওয়ার জন্য তোমায় ওকে বিয়ে করতে হলো কেন?’

রূপা বলে,
‘কারণ আমার মনে হয়েছিল আতিকের ঘরে ঢুকলে ওর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া সহজ হবে আর ঠিক সেটাই হলো। আতিকের সিক্রেট লকার থেকে আমি ওর বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ পাই। রেহানা ছাড়াও আরো অনেক মেয়ের সাথে অন্যায় করেছিল আতিক। আতিক খুব বোকা ছিল জানো নিজের অপ’রা’ধের প্রমাণগুলো সে নিজের কাছে রেখে দিত। এগুলো দেখে ও খুশি হতো। মেয়েদের প্রতি অন্যা’য় করে সে নিজেকে আ’সল পুরুষ ভাবত। আমি কাল রাতে সুযোগ বুঝে আতিকের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সময় ওর নাকে এমন একটা পারফিউম দেই যাতে করে ও অজ্ঞান হয়ে যায়। তারপর আতিকের বিরু’দ্ধে কিছু প্রমাণ পাই কিন্তু সেগুলো যথেষ্ট ছিলনা। এরপর পরেরদিন আমি ইচ্ছে করেই ঝা’মেলা তৈরি করি যাতে আতিক রেগে যায়। কারণ আমি জানতাম আতিক রেগে গেলে ও বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে আর সেই সুযোগে আমি অনেকটা সময় পাবো আরো প্রমাণ জোগাড় করার। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি জানতাম না তুমি প্রেগন্যান্ট ছিলে আর আমাকে বাচানোর জন্য নিজের এত বড় ক্ষতিটা করে ফেলবে। সেদিন তুমি যাওয়ার পর আমি আতিকের রুমে গিয়ে ওর সিক্রেট লকারটা খুঁজে পাই। তারপর সেখান থেকে তার বিরু’দ্ধে অনেক শক্তপোক্ত প্রমাণ পাই। যেই পুলিশ অফিসার আতিককে গ্রে’ফ’তার করেছে সে আর কেউ নয় রেহানার আপন বড় ভাই। রেহানার প্রতি অবিচার হতে দেখে সে শপথ করেছিল একদিন পুলিশ হয়ে নিজের বোনের প্রতি হওয়া অন্যায়ের বিচার করবেই। তার সাথে মিলেই আমি সব পরিকল্পনা করি। আমি সব প্রমাণ এরপর তার হাতে তুলে দেই। তারপর সে এসে আতিককে গ্রেফতার করে। যদিও আতিককে সাময়িকভাবে না’রী নি’র্যা’ত’নের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু এখন তার সব অপরাধ দেশবাসীর কাছে আনা হবে। আমিও অনেক অন্যায় করেছি আমাকেও জে’লে যেতে হবে। তোমার সাথে আমি ক্ষ’মা চাইব না সেই মুখ আমার নেই। তোমার এরকম পরিস্থিতির জন্য আমিই হয়তো দায়ি কিন্তু একবার ভেবো দেখো আতিকের মতো একটা ছেলের সাথে সংসার করার থেকে এইরকম পরিস্থিতিতে থাকা ভালো নয় কি?’

‘ঠিক বলেছ তুমি রূপা। আমি যদি আগে জানতাম আতিক এত খা’রা’প একজন মানুষ তাহলে কবেই সব ছেড়ে চলে যেতাম। আর আম্মা আপনি। আপনাকে আমি খুব বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু আপনি….আমি আতিকের কাছ থেকে ডিভোর্স চাইব। তারপর সব ছেড়ে চলে যাব। জানি আমাকে সামনের জীবনে এক বিবর্ণ আলোকবর্ষ পারি দিতে হবে। তবুও আমি খুব খুশি যে আতিক তার পা’পের শাস্তি পেয়েছে। আমি এখন প্রস্তুত এক বিবর্ণ আলোকবর্ষ পারি দেওয়ার জন্য। দেখা যাক জীবন আমায় কোথায় নিয়ে যায়।’
চলবে ইনশাআল্লাহ
>>গল্পটা আপনাদের কেমন লাগছে কমেন্ট করে জানাবেন।