বিবর্ণ আলোকবর্ষ পর্ব-২৯ এবং শেষ পর্ব

0
479

#বিবর্ণ_আলোকবর্ষ
#পর্বঃ২৯ এবং শেষ পর্ব✨
#লেখিকাঃদিশা মনি

আদিত্যকে ঠেলে সরিয়ে দেয় আলো। ছু’রিটা সোজা গিয়ে তার বুকে বিধিয়ে দেয়। মাতাল থাকায় সে কিছু করতে পারছিল না। আলো লা’থি মা’রে আদিত্যর মুখে।

‘তোর মতো শ’য়তানদের পরিস্থিতি এর থেকেও খারাপ হওয়া উচিৎ।’

বুকে টানা দশবার ছু’রিকাঘাত করে আদিত্যর মৃত্যু নিশ্চিত করে আলো।

আদিত্যর লা’শটা টেনে বিছানার নিচে রেখে বাইরে চলে আসে। লতা বলে,
‘তোমার মিশন কমপ্লিট? ‘

‘হুম। এবার পরবর্তী টার্গেট মিস্টার ধ্রুব খান। ওনাকেও একই পরিণতি বরণ করতে হবে। রুহির কাছে শুনলাম ও ধ্রুবকে পটাতে সক্ষম হয়েছে। ধ্রুবকে আজকে নিজের ফ্লাটে ডেকেছে। ‘

‘আমার ভয় করছে আলো। রুহি খুব ভীতু, আর বোকা। ও যদি কোন ভুল করে অথবা কোনভাবে ফেসে যায়।’

‘আমি সব পরিকল্পনা সূক্ষ্ম ভাবে করেছি। আমরা কেউ ধরা পড়ব না। বিশ্বাস রাখো আমার উপর।’

আলো গাড়িতে উঠে যায়। এবার ধ্রুবকেও একই পরিণতির স্বীকার হতে হবে।

৫৭.
রুহির কোমড়ে হাত দিয়ে আছে ধ্রুব। রুহির খুব ঘৃণা হতে থাকে ধ্রুবর স্পর্শে। শুধুমাত্র আলোর জন্য এসব সহ্য করছে রুহি। ধ্রুব রুহিকে আরো কাছে টানার চেষ্টা করে। রুহি ধ্রুবকে দূরে সরিয়ে দেয়। ধ্রুব এর কারণে রেগে যায়।

‘এসব কি রুহি? হোয়াট দা ফা’ক? আমাকে নিজের ফ্লাটে ডেকে এনে এখন কি করছ এসব? দূরে দূরে আছো কেন? আজ আমাদের রুমডেট করার কথা ছিল।’

‘এই ফ্লাট আমার নয়।’

‘হোয়াট?’

‘হুম ভাড়া নিয়েছি।’

‘যাহোক তুমি এখন কি করবে সেটা বলো।’

‘আমার একটু সময় লাগবে প্রস্তুত হতে।’

‘ওকে ফাইন তুমি টাইম নাও। আমি গেলাম বাই।’

রুহি ভাবে,
‘না এরকম হলে চলবে না। আলো এখনো আসেনি। আলো আসা পর্যন্ত যেভাবেই হোক ধ্রুবকে আমায় আটকে রাখতেই হবে।’

রুহি ধ্রুবকে গিয়ে পিছন থেকে হাগ দেয়।

‘এমন করছ কেন বেবি? আমাকে একটু টাইম দাও।’

‘আমি যে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। তোমাকে দেখে আমার ভিতরে তোলপাড় চলছে। আমি ক্ষুধার্ত হায়নায় পরিণত হয়েছি। আমার ক্ষুধা তুমি মেটাবে না?’

রুহি কি বললে বুঝতে পারে না। ধ্রুব এগিয়ে আসে তার দিকে। রুহি ভয়ে পিছিয়ে যায়।

‘ভয় পেয়োনা বেবি। আমি আজ তোমায় অনেক আনন্দ দেব।’

রুহিকে কাছে টেনে তাকে কিস করতে যাবে তখনই আলো এসে পিছন থেকে লোহার র’ড দিয়ে ধ্রুবর মাথায় আঘাত করে।

‘কে তুই? কেন এসেছিস এখানে?’

‘আমি এখানে আসিনি মিস্টার ধ্রুব খান। আমি তোমায় এখানে নিয়ে এসেছি মৃত্যু উপহার দেব বলে।’

‘তারমানে রুহি তুমি আমায় ঠকিয়েছ? কি উদ্দ্যেশ্য তোমাদের?’

‘তোকে শে’ষ করাই আমাদের উদ্দ্যেশ্য।’

‘মানে? কি শত্রুতা।’

‘এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি। মনে নেই তুই কিভাবে আমার মুখ চেপে ধরে ছিলি। আমি আলো। সেই আলো যার বোনকে তোরা চার বন্ধু মিলে শে’ষ করে দিয়েছিস।’

ভয়ে ধ্রুবর গলা শুকিয়ে আসে। ধ্রুব রুহিকে নিজের কাছে টেনে বলে,
‘খবরদার আমার কাছে আসবি না। নাহলে এই রুহি মেয়েটাকে আমি এখুনি শে’ষ করে দেব।’

রুহি ধ্রুবর অন্ডকোষ বরাবর লা’থি মা’রে।

‘মেয়েদেরকে তোরা খুব দূর্বল ভাবিস তাইনা? আমরা মোটেই দূর্বল নই। আজ তুই টের পাবি মেয়েরা কতটা শক্তিশালী। আলো তুমি মে’রে ফেল এই জা’নোয়ারটাকে৷ না জানি কত শত মেয়ের জীবন ন’ষ্ট করেছে এই শ’য়তানটা।’

আলো ধ্রুবর হাতে ছু’রি দিয়ে আঘাত করে। ধ্রুব পালটা আঘাত করার চেষ্টা করলে ব্যর্থ হয়। তার খুব ক্লান্ত লাগছিল, ঘুম পাচ্ছিল। রুহি হেসে বলে,
‘তোকে একটু আগে যে বার্গার খাওয়ালাম তাতে ওষুধ ছিল। এখন আস্তে আস্তে এর প্রভাবে তুই কিছু করতে পারবি না।’

আলো ধ্রুবর বুকেও ছু’রি বসিয়ে দেয়। ধ্রুব চিৎকার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়৷ আলো জোরে একটি লা’থি মারে ধ্রুবর মুখে। পায়ের জু’তা খুলে তাকে মা’রে। ধ্রুব ম’রে যায়। আলো আর রুহি মিলে ধ্রুব’র লাশ বস্তাবন্দি করে ডোবায় ফেলে দিয়ে আসে।

৫৮.
বর্ষ খুব টেনশনে আছে। আলো হঠাৎ কোথায় চলে গেল সে বুঝতে পারছে না। আলো নিজের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফেরে। রুমে এসে দেখে বর্ষ তার অপেক্ষাতেই বসে আছে। আলোকে দেখে বর্ষ বলে,
‘এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো। কোথায় ছিলে তুমি?’

‘একটু কাজে গিয়েছিলাম।’

‘ও।’

‘আপনার মন কি খারাপ?’

‘না, না মন খারাপ হবে কেন? আমার স্ত্রী বাসর রাতে এভাবে বাইরে গেল আর আমার মন খারাপ হবে?’

‘বুঝেছি আপনার রাগ হয়েছে। কোন ব্যাপার না। সব রাগ চলে যাবে। আমি বাসর রাতের জন্য প্রস্তুত।’

‘আমি করবোনা বাসর। যাও তুমি নিজের কাজে যাও।’

‘এত অভিমান?’

‘হ্যা।’

‘তাহলে আমি সত্যি চলে যাচ্ছি।’

আলো চলে যেতে চাইলে বর্ষ দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
‘এভাবে চলে যেওনা। আমার মন যে ব্যকুল হয়ে আছে তোমাকে পাওয়ার জন্য। আলো আর বর্ষকে যে আজেক হতে হবে। একসাথে মিলে আলোকবর্ষ তৈরি করতে হবে।’

বর্ষ আলোকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে। আলোকে কোলে তুলে নেয়। তাকে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। আলোর ঠোটে নিজের ঠোট স্পর্শ করে আলতো করে। আলতো চুমুতে ভরিয়ে দেয় আলোর মুখ।

ধীরে ধীরে তারা আরো কাছে আসে। আলোর চুলের খোপা খুলে তার চুলের ঘ্রাণ নেয় বর্ষ।

‘তোমার চুল থেকে খুব সুগন্ধ আসছে৷ কি শ্যাম্পু দাও তুমি?’

‘ফেয়ার এন্ড লাভলি।’

‘খুব সুন্দর শ্যাম্পুটা। এই গন্ধটা আমাকে আরো বেশি মাতাল করে দিচ্ছে। ‘

আলো বর্ষর বুকে মাথা রেখে বলে,
‘আমাকে আরো কিছুক্ষণ এভাবে থাকতে দেবেন?’

‘হুম।’

আলো কিছুক্ষণ এভাবেই থাকে। বর্ষ এবার আলোর উপরে উঠে পড়ে। আলোকে আরো জোরালোভাবে চুমু দিতে থাকে।

এই রাতটা সাক্ষী হয় এক সুন্দর ভালোবাসার ✨

সকালে আলোর ঘুম ভেঙে যায়। আলো উঠতে চাইলে বর্ষ তাকে টেনে ধরে।

‘এখন আবার কি হলো?’

‘এভাবে যেতে দেব না। আগে আমায় একটা গিফট দিতে হবে।’

‘কি গিফট?’

বর্ষ নিজের ঠোটের দিকে ইশারা করলে আলো বুঝে যায় বর্ষ কি চাইছে।

‘ছি আপনি এমন কেন?’

‘কেমন আমি?’

‘জানেন না?’

‘উহুম।’

আলো আলতো করে বর্ষর ঠোটে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বলে এমন। বলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়।

বর্ষ যেন কোন ঘোরে চলে যায়।


রান্নাঘরে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিল আলো। আজ তার বৌভাত। জরিনা আলোর কাছে আসে।

‘তুমি কাল কোথায় গিয়েছিলে আলো?’

‘একটু বাইরে।’

‘কাল আমি তোমায় ছু’রি নিয়ে যেতে দেখেছি। এ নিয়ে কি কাজ তোমার?’

আলো চুপ থাকে। জরিনা বলে,
‘দেখো কোন বিপদ যেন না হয়। যা করার সাবধানে করো।’

‘আমার একটা সাহায্য করতে পারবেন জরিনা আন্টি?’

‘কি সাহায্য?’

‘আমার জন্য ঝাল মরিচের গুড়ো তৈরি করে রাখবেন। আজ কাজে লাগবে।’

জরিনা তাই করে। মরিচের গুড়ো করে দেয় আলোকে। আলো আজ রাতে আবার তার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

৫৯.
আলো মরিচের গুড়ো নিয়ে এসেছে এরিকের বন্ধু রাহুলের বাড়িতে। রাহুল নিজের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। আলো তার রুমে গিয়ে দরজা নক করে। রাহুল দরাজ খুলে দিতেই রাহুলের চোখে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে দেয়। রাহুল চোখ হাত দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। এই সুযোগে আলো ছু’রিট বের করে বসিয়ে দেয় রাহুলের গলায়। রাহুল যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। আলো রাহুলকে বলে,
‘আমার বোনও এমব কষ্ট পেয়েছিল যখন তোরা ওকে আঘাত করেছিলি। এখন বোঝ কত কষ্ট। এই হাত দিয়ে আমার বোনকে গাড়ি থেকে ধা’ক্কা দিয়ে ফেলেছিলি না তুই।’

আলো রাহুলের হাত ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। একসময় রাহুল প্রাণত্যাগ করে। রাহুলের লা’শের দিকে থাকিয়ে হাসতে থাকে আলো। এখন শুধু এরিকের উপর প্রতিশোধ নিতে পারলেই সে জয়ী হবে।

৬০ এবং শেষ খন্ড ✨
এরিক দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেভাবে একের পর এক তার বন্ধুরা এভাবে মা’রা যাচ্ছে তাতে আর দেশে থাকার ভরসা পাচ্ছে না। এরিকের কাছে একটি ফোনকল আসে। এরিককে বলা হয়,
‘তোমার বোনকে কিডন্যাপ করেছি। যদি তাকে বাচাতে চাও তো যেই ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে চলে এসো। চালাকি করে পুলিশ আনতে যেওনা। ফল ভালো হবে না।’

এরিক নিজের বোনকে খুব ভালোবাসে। তাই এলিনার ব্যাপারে এরকম কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারে না। গতরাত থেকে মেয়েটা বাড়ি ফেরেনি। তাই এরিক ঐ ঠিকানায় চলে যায়।

এসে দেখে যায়গাটা পুরো ফাকা। আচমকা আলো চলে আসে। এসে পিছন থেকে এরিককে আঘাত করার চেষ্টা করে। এরিক যেন বুঝে যায় আলোর উপস্থিতি। তাই খপ করে আলোর হাত ধরে ফেলে। শ’য়তানী হেসে বলে,
‘কি ভেবেছিলি এত সহজে আমায় শে’ষ করবি? আজ দেখ তোর সাথে আমি কি করি। সেদিনের অপূর্ণ কাজটা আজ পূর্ণ করে নেব।’

এরিক আলোর দিকে এগিয়ে আসতে থাকে তখনই একটি ছু’রি ভেদ করে যায় তার বুক। এরিক চমকে যায়। এরিক চমকে পিছনে ফিরে দেখতে পায় বর্ষকে। আলোও হতবাক হয়ে যায় বর্ষকে দেখে। বর্ষ মৃদু হেসে বলে,
‘আমাকেও তো বর্ণর প্রতিশোধটা নিতে হতো। বর্ণর মৃত্যুর জন তুও দায়ী। তুই যদি জোনাকিকে না মা’রতি তাহলে…আমার স্ত্রীরও ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিস তুই। তাই এটা তোর প্রাপ্য ছিল।’

কথাটা বলে একের পর এক ছু’রি বসিয়ে দেয় এরিকের বুকে। এরিকের পুরো শরীর একসময় নিস্তেজ হয়ে যায়।

আলো অবাক হয়ে বর্ষর দিকে তাকায়। বর্ষ বলে,
‘আমি সব করেছি আলো। আমি এলিনাকে কিডন্যাপ করিয়ে নিয়েছিলাম। এরিককেও আমি ডেকেছিলাম। কিন্তু তুমি এলে কোথা থেকে?’

আলো হাসে।

‘আমি তো এরিককে ফলো করে এখানে আসি। আমি তো জানতেই পারিনি আপনি এতটা বুদ্ধিমান।’

‘তোমার স্বামীকে তো এটুকু বুদ্ধিমান হতেই হতো। যাইহোক আমি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আজই এই দেশ ছেড়ে চলে যাব আমরা।’

‘মানে?’

‘আম্মু আর জরিনা আন্টি অলরেডি লন্ডনে পৌঁছেও গেছে। আমাদেরও সেখানে যেতে হবে। এই দেশে থাকলে তদন্তের সাপেক্ষে সবকিছু সামনে আসতে পারে। তাই এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো হবে।’

‘আমার পুরো জীবনটায় যে বিবর্ণ আলোকবর্ষ পারি দিতে হয়েছে। এখন আমি ক্লান্ত। ভেবেছিলাম সবকিছু হয়ে যাবার পর নিজের দোষ স্বীকার করে নেব পুলিশের কাছে,,,’

‘না। তুমি এখন আমার স্ত্রী। তুমি যা করেছ তা অন্যায় নয়। হয়তো আইনের চোখে অন্যায় কিন্তু ন্যায়ের দিক থেকে দেখতে গেলে অন্যায় নয়। ঐ পাপীরা কখনো শাস্তি পেতোনা তথাকথিত আইনের মাধ্যমে।’

‘আপনি কি আমাকে নিজের জীবনে সত্যি থাকতে দেবেন? একটা খু’নিকে?’

‘যদি এই কথা বলো তাহলে আমিও কিন্তু খু’ন করেছি। তবে আমার মনে হয় যে আমরা দোষীদের শাস্তি দিয়েছি। তাই এখন আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবা উচিৎ। চলো তোমার হাত ধরে বিবর্ণ আলোকবর্ষে পা বারিয়েই দেখি।’

আলো মৃদু হেসে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। বর্ষর হাত ধরে তার সাথে এয়ারপোর্টে চলে আসে। ফ্লাইটে উঠে চলে আসে লন্ডন। আলোর বিবর্ণ জীবনটা বর্ষর সাথে এই নতুন শহরে হয়ে উঠুক আলোকময় ✨

✨✨✨সমাপ্ত✨✨✨✨✨