বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০২

0
3

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব২
#তামান্না_আনজুম_মায়া
মেয়েটিকে ভীষণ অদ্ভুত মনে হলো ফারাবীর!
গাড়িতে উঠার পর থেকে বেশ কয়েবার নামটি মনে মনে জপ করেছে সে “আঙ্গিনা আইরিন তরী”!
মুখ দেখতে পায়নি এখনো,না বিয়ের আগে দেখেছে, মেয়েটার মাথায় ঘোমটা টানা মাথা নিচু করে রেখেছে।গ্রামের মেয়েদের আবার এই এক সমস্যা লজ্জা তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান,কিছুটা বিরক্ত হলো ফারাবী।আবারও অবাক হলো মেয়েটা আসার সময় কাঁদেনি!তার কাছে বিষয়টা এখনো হজম হচ্ছে না,বিয়ের দিন মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে একবারে সে ন্স লেস হয়ে যায় আর এই মেয়ে কেমন নীরবতা পালন করে যাচ্ছে!না জানি তার বাপ বিয়েতে মেয়ের নামে জি*ন প*রী কিছু একটা তার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে!ফারাবীর মনে হলো সে একটা সামান্য মেয়েকে ভয় পাচ্ছে।নিজের ভাবনায় নিজেই এক গাদা বিরক্ত ছুঁড়ে মারলো।
এই মেয়েকে তো সে বিয়েই করতে চায়নি, তাকে নিয়ে এতো ভাবার কি আছে।মরু ক বাঁচুক তাতে তার কিছু যায় আসে না!

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো রাত প্রায় আটটা।জয়নাল নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো।ফারাবী কে ইশারা করলো গাড়ির দরজা টা খুলে দিতে।ফারাবী কে অবাক করে মেয়েটা ঝট করে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়লো, একবারও তাকায় নি তার দিকে,সামনে এগিয়ে গেলো দ্রুত।ফারাবী রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো।এই মেয়ের সাহস কম নয় যেখানে বাড়ির সবাই তার রাগ কে ভয় পায়, তার সাথে উচু গলায় কথা বলে না সেখানে এই মেয়ে কিছু ঘন্টার মধ্যে এসেই তাকে অ্যাটি টিউড দেখাচ্ছে!

তরী দরজায় এসে দাঁড়াতেই ভিতর থেকে এক প্রকার ছুটে আসলেন সায়েবা শেখ।পরম আদর মাথা কন্ঠে বললেন।
,,মা আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?

শ্বশুর বাড়িতে এসে এরকম প্রশ্ন প্রথম তাকে করা হবে কল্পনা ও করেনি তরী।মহিলাটির দিক এক পলক তাকিয়ে উপর নিচ মাথা ঝাঁকালো।
সায়েবা বুঝলেন, ছেলেকে পেছনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললো

,,কিরে পিছনে কি করছিস, বউমার পাশে এসে দাঁড়া বরণ করতে হবে তো নাকি।কতোক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখবো মেয়েটা কে।

মায়ের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তরীর পাশে এসে দাড়ালো ফারাবী।

বরণ পর্ব শেষে তরীকে ফারাবীর রুমে এনে বসিয়ে দিলেন।পর পর নিজ থেকেই কথা বলে যাচ্ছেন তিনি।তরী বুঝতে পেরেছেন এটা ফারাবীর মা মানে তার শাশুড়ী। শাশুড়ী কে নিয়ে মনে মনে পুষে রাখা ভয় গুলো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে তার।সায়েবা এগিয়ে এসে তরীর হাত ধরে সামনে রাখা কাঠের কারুকার্য সম্পন্ন আলমারি টার কাছে আসলো।তরী অবাক নেত্রে সব কিছু দেখে যাচ্ছে।

,,তরী মামনি!এখানে তোমার সব প্রয়োজনীয় জিনিস আছে।তোমার শ্বশুর টাও না একটা যা তা! হঠাৎ করে বিয়ে ঠিক করে ফেললো তাই কম সময়ে যতটুকু পেরেছি তাই এনেছি।ঢাকা ফিরে তোমার পছন্দ মতো সব কিনে আনবো কেমন। আজ এই মায়ের পছন্দতেই একটু ম্যানেজ করে নাও।

তরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো,অশ্রু কণা গুলো বেরিয়ে আসতে পুরো দমে চেষ্টা করছে।এতোটা যত্ন এতোটা মায়া নিয়ে আজ পর্যন্ত তার সাথে কেউ কথা বলেনি।মাকে দেখতে কেমন তার ভালোবাসা কেমন কিছুই জানা নেই তরীর।মনে হচ্ছে আল্লাহ তাকে শাশুড়ী রূপে মা দান করেছে।

তরীকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে সায়েবা আবারও বললেন
,,কি হলো মামনি পছন্দ হয়নি?
তিনি তরীর থুতনিতে হাত রাখলেন উঁচিয়ে ধরলেন শুকিয়ে যাওয়া গোলগাল শুভ্র মুখশ্রী।তরীর চোখে পানি দেখে সায়েবা তাকে আলতো হাতে আগলে নিলেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন

,,মা কে বলো কি অসুবিধে হচ্ছে।বাড়ির সবাই কে মনে পড়ছে?মা কে মনে পড়ছে?

তরী কন্ঠ কেঁপে উঠলো,মিয়িয়ে যাওয়া সুরে বললো

,,আমা,,র মা নেই।

সায়েবা জানতেন না কথাটি।তিনি শুধু মেয়ের ছবি দেখেছিলো অন্য কিছু জানায়নি জয়নাল।মা নেই কথাটি কেমন অন্তরে লাগলো তার।

,,হুশ!বোকা মেয়ে আমি আছি না। আমিই তো তোমার মা, একদম মন খারা প করবে না। দেখো মেয়ের কান্ড কেঁদে কেটে একাকার হয়ে গেছে।শোন যেহেতু আমি তোর মা তাই এখন এই মুহুর্তে আদেশ করছি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ নিচে আসবি, আমি আজ নিজ হাতে তোকে খাইয়ে দিবো।

তরী সায়েবাকে জড়িয়ে ধরে বললো।

,,ঠিক আছে মা।
সায়েবা তরীকে কপালে চুমু একে দিয়ে বেরিয়ে গেলো।সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় তার মন বিষণ্ণ হয়ে গেলো।সায়েবা খুবই নরম মনের মহিলা।বাড়ির প্রতিটি সদস্যের প্রতি তার অগাধ টান।এই মানুষটাও তেমন বাড়ির প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার স্থান!
সায়েবা নিচে নেমেই স্বামীর উদ্দেশ্য বললো

,,তোমার গুনধর ছেলে কোথায় গেলো আবার।বিয়ে তো দিয়েছো এখন কি বিয়ের প্রথম রাতে বউ ফেলে বাহিরে থাকবে নাকি?

,,তা তো জানি না।বিয়ে করেছে এই অনেক।এখন তোমার ছেলে যে কি করবে তা আমার জানা নেই।

সায়েবা শেখ কপাল চাপড়ালেন, এরকম খামখেয়ালি করতে থাকলে ছেলেটার কি হবে ভবিষ্যতে। একটু ঠিক হবে ভেবে স্বামীর কথায় বিয়ে করাতে রাজি হয়েছেন।কিন্তু সেই ছেলে বিয়ে করে বউ ফেলে বাহিরে হাওয়া খেতে চলে গেছে।
*****-
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলো তরী।মাথাটা পুরো ধরে আছে।এক কাপ চা খেতে পারলে ভালো হতো।হাঁটু অব্দি লং একটা কুর্তি সাথে জিন্স, ওড়নাটা মাথায় দিয়ে ঘোমটা টেনে নিলো, গোসল করায় চুল গুলো ভেজা। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো তার উপর ওইরকম একটা ভারী শাড়ি। গোসল করে এখন নিজেকে অনেকটাই ফ্রেশ লাগছে।সায়েবার কথা মতো নিচে নেমে গেলো সে,ড্রয়িং রুমে বসে আছে জয়নাল।তরীকে দেখে মুচকি হেসে হাতের ইশারায় পাশে বসতে বললো।তরী বসে পড়লো,তখন সদর দরজা দিয়ে বাসায় ঢুকলো ফারাবী নিজের বাবার পাশে মেয়েটিকে দেখে আন্দাজ করলো এটাকেই হয়তো বিয়ে করে এনেছে!ফারাবী কে দেখে সায়েবা বললেন দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আয় খেতে বসবো সবাই।

টেবিলে খাবার সাজিয়ে তরীকে চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলেন তিনি।কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারাবী হাজির,সায়েবা শেখ নিজ হাতে খাবার মেখে মুখের সামনে ধরলো তরীর।তরীকে খাবার খাওয়াতে দেখে ফারাবী বলে উঠলো
,,আব্বু দেখেছো এই নাকি আমার আম্মু!আমাকে তো কোনো দিন খাইয়ে দিলো না,কে না কে এসেছে বাসায় তাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা করছে যেনো আমাকে চিনেই না!

তরী ফারাবীর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো, মনে মনে বললো ছেলেরাও এতো হিং সুটে হয়।
জয়নাল শেখ বললেন
,,তরী মা তুই কিছু মনে করিস না তো। এই বলদের কথা আমরা কেউই শুনি না!

ফারাবী চোখ গরম করে তাকালো, একটা বাহিরের মেয়ের সামনে তার সম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে।
আচ্ছা যা বলছিলাম জয়নাল শেখের কথায় সবাই তার দিকে তাকালো

,,ফারাবী তুমি তো জানোই বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তোমার বিয়ে দিয়েছি।কাল দুপুরেই আমরা বাড়িতে ফিরবো।তোমার দীদুন কে তো চিনোই,সবাই মানলেও তাকে মানানো কঠিন।তবে তোমাকে তিনি ভীষণ ভালোবাসে তোমার কথা কখনো ফেলতে পারবে না।তাই তুমি গিয়ে বলবে তুমি আর তরী দুজন দুজনকে ভালোবাসতে! এখন একটা সমস্যা হওয়ায় হুট করে বিয়ে করে নিয়েছো।আর এখানে তুমি না করতে পারবে না,যদি তুমি আমার কথা না শুনো তো আমি মা কে জানাতে বাধ্য হবো তুমি কি কি করে বেড়াও!এখন তুমি সিদ্ধান্ত নেও তুমি কি করবে।

ফারাবী খাবার খাওয়া বন্ধ করে,এ প্রকার প্লেট ছুঁড়ে উঠে গেলো।রাগী কন্ঠে বললো

,,তোমার কি মনে হয় না বাবা তুমি একটা সামান্য ইস্যু কে কেন্দ্র করে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছো!

জয়নাল ছেলের কথায় পাত্তা দিলো না, ফারাবী হনহন করে রুমে চলে গেলো

তরী আরো কিছু সময় পর রুমে আসলো ধীর পায়ে প্রবেশ করলো ভিতরে।ফারাবীর দিকে তাকালো একবার উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সুদর্শন যুবক। গায়ে খয়েরী রঙের টি শার্ট জড়ানো।তরী পাশে কাটিয়ে চলে গেলো ফারাবী কে।ফারাবী মাথার চুল টেনে ধরে ছিলো এতোক্ষণ চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়ে আছে।তরী বুঝলো না কিছুই, চুপচাপ এগিয়ে গেলো পাশে থাকা সোফার দিকে।সে কিছুতেই এরকম একটা মানুষের সাথে থাকবে না।তরী বেশ অবাকই হয়েছে ফারাবী তাকে দেখে একবার রিয়েক্ট ও করলো না দেখে।ছেলেটি কি তাকে মনেই রাখেনি!জোর করে তুলে নিয়ে
অস ভ্যতা করেছে নিজের প্রয়োজন শেষে এরা কাকেই বা মনে রাখে?তরী চোখ বুজে নিলো ভীষণ ক্লান্ত সে।

তরী চোখ বোজা অবস্থাই বুঝলো কেউ তার উপর ঝুঁকে আছে।দ্রুত গতিতে চোখ খোললো নিজের মুখের কাছে ফারাবী কে দেখে একপ্রকার ছিটকে সরে গেলো।

,,কি সমস্যা আপনার?এভাবে কাছে এসে দাড়িয়ে আছেন কেনো।মেয়ে দেখলেই তার উপর ঝা পিয়ে পড়তে চান?নোং রা লোক!

তরীর এমন বক্তব্যের কারন বুঝলো না, মেয়েটি তার সম্পর্কে এতো বা জে ধারনা রাখতে পারে কি করে।কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে এরকম মন্তব্য করার সাহস হয় কি করে!ফারাবী রেগে বলে উঠলো

,,এই মেয়ে কি যা তা বলছো?তোমার সাহস তো কম নয়।কি করবে এগিয়ে আসলে, তুমি ভুলে গেছো আজ আমাদের বাসর রাত!

তরীর এবার প্রাণ যায় যায় অবস্থা, ফারাবী তরীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে তার।ফারাবী কি এখন তার সাথে না না আর ভাবতে পারছে না তরী। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তার।ফারাবী এসে দাড়িয়েছে কিছুটা দূরে।তরী আশপাশে তাকাতে ব্যাস্ত হঠাৎ নজরে এলো ড্রয়ারের ফিতর একটা পি স্তল!তরী সাত পাঁচ না ভেবে ঝড়ের বেগে পিস্ত ল টা হাতে তুলে নিলো।পি স্ত ল টা নিজের মাথার দিকে তাক করে বললো
,,যদি আপনি আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা ও করেন তো আমি এখানেই নিজেকে শেষ করে দিবো।তবুও আপনার মতো মানুষের ছোঁয়া আমি বেঁচে থাকতে সহ্য করতে পারবো না।

ফারাবী থতমত খেয়ে গেলো,কি করছে কি এই মেয়েটা,বিরক্ত হয়ে ফারাবী বললো

,,আর ইউ মে ড আঙ্গিনা!
ফারাবীর মুখে আঙ্গিনা নাম শুনে চমকালো তরী তাকে সবাই তরী বলেই ডাকে এই ছেলে এই নামে ডাকলো কেনো?

,,গা ন টা নিচে রাখো।

,,না!

,,এটা কোনো খেলনা না, বাচ্চাদের মতো করবে না।

হঠাৎ করে লাইট বন্ধ হয়ে গেছে সাথেই জোরে গু লি করার শব্দ ভেসে আসলো।
তরী জোরে চিৎকার করে উঠলো।ঘাবড়ে গেল ফারাবী,
মেয়েটা সত্যি সত্যি নিজেকে শু ট করে দেয়নি তো। ফারাবীর কেমন অস্বস্তি হওয়া শুরু করেছে ভিতর ভিতর।অন্ধকারের মাঝেই কিছু একটা ধাপ করে এসে ফারাবীর বুকের উপর পড়লো।ফারাবী হাত দিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কি।তখন লাইট জ্বলে উঠলো,তরী একেবারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে ফারাবী কে।হতভম্ব ভাব কাটিয়ে ফারাবী এবার ঠোঁট কামড়ে হাসলো।এই মেয়ে সামান্য এক গু লির শব্দ পেয়ে যা ভয় পেয়েছে সে কিনা একটু আগে নিজের মাথায় ব ন্দু ক ঠেকিয়ে বসে ছিলো।তাকে ভয় দেখাচ্ছিলো।ফারাবী হেসে নিজ মনেই বললো ইন্টারেস্টিং!

,,হ্যালো মিসেস ভীতুর ডিম!

তরী নড়লো না পর্যন্ত মেয়েটা সত্যি ভয় পেয়েছে।ভেবেছিলো হয়তে নিজের হাত থেকেই গু লি বেরিয়েছে আর সে এখন ইহজগতে নেই।

বাহির থেকে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কানোর শব্দে তরীর হুঁ শ ফিরলো নিজেকে ফারাবীর এতো কাছে দেখ লজ্জা পেলো।ভয় পেয়ে আর কোথাও যেতে পারলো না শেষে কিনা এই ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে।ভেবেই গা গুলিয়ে আসলো।তরী নিজেকে মুহুর্তেই স্বাভাবিক করে পাশ ফিরে গেলো।ফারাবী হাতে পি স্তল নিয়ে এগিয়ে গেলো।দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সায়েবা সাথে জয়নাল শেখ।

জয়নাল শেখ এক প্রকার হাঁপাতে হাঁপাতে বললো

,,বাহিরে একজন গার্ড কে কারা যেনো মে রে দিয়েছে।মনে হচ্ছে এটা বিরোধী নেতার কাজ।আমি সবাইকে সর্তক থাকতে বলেছি তুমি আজ বের হবে না রুম থেকে। তরীর খেয়াল রাখবে।ফারাবী মাথা নাড়ালো।
তারা দুজন চলে যেতেই তরী ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

ফারাবী মজার করার জন্য বললো

,,কে জানি বলেছিলো আমি ছুঁয়ে দিলে একদম অ ক্কা
পাবে।এখন যা দেখলাম বাবা এতো সুন্দর হয়েও বিপদে আছি যখন তখন মেয়েরা এসে গায়ের উপর ঢলে পড়ে।হুটহাট জড়িয়ে ধরে!ইনোসেন্ট ছেলেটার যে কি হবে,না জানি একা পেয়ে ইজ্জত লুটে নেয়।

তরী মুখ দুটো হা হয়ে গেলো,ভেবাচেকা খেয়ে গেছে কথা শুনেই।কি বললো ছেলেটা তার ই জ্জত, যে কিনা মেয়েদের ইজ্জ তে নিয়ে ছিনি মিনি খেলে সে বলছে এসব কথা।মানুষ এতো ভালো অভিনয় করতে পারে!

তরী কে হা হয়ে তাকাতে দেখে ফারাবী বলল

,,শুনো!শেখ বাড়ির বউ হয়েছো এরকম দুই চারটা
গু লির শব্দ রোজই শুনতে পাবে।এতটুকুতেই ভয় পাওয়ার মেয়ে তো তোমাকে মনে হয় না।তা যাই হোক
আমি একজন কে ভালোবাসি।

তরী বুকের উপর দু হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে।ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে বলে উঠলো

,,ভালো!তো তাকে বিয়ে না করে আমাকে বিয়ে করার কারন?

,,তার কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।

ফারাবী তরীর দিকে তাকালো সে অন্য কাউকে ভালোবাসে এটা শোনার পর ও মেয়েটার মাঝে কোনো পরিবর্তন হলো না।স্বামী অন্য কাউকে ভালোবাসে কথাটা কোনো মেয়েই স্বাভাবিক ভাবে নেয় না।

,,আমি তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবো না। আমার থেকে এরকম কিছু আশা করাটা তোমার বোকামী!

,,আমিন!

,,মানে!

,,বিশ্বাস করেন মিস্টার ফারাবী আপনার প্রতি আমার যা পরিমান রাগ ঘৃ ণা ছিলো সে ক্ষেত্রে আপনার কোনো কথাই আমার পছন্দ হওয়ার কথা নয়।তবে এই কথাটা শুনে আমি ভীষণ খুশি এতো খুশি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।আপনার মতো একটা মানুষ স্বামীর অধিকার চাইতে আসলেও স্বজ্ঞানে তা আমি কখনো দিতাম না।কিন্তু আপনি নিজ থেকেই বলছেন আপনি আমাকে স্ত্রী মানেন না শুনে আমি অভিভূত এর থেকে শ্রুতিমধুর কথা আমি জীবনেও শুনি নি!টাস্ট মি!

ফারাবী শক্ত চোখে তাকালো,এই মেয়েটা তাকে বার বার অপমান করছে।কিন্তু কেনো?মেয়েটা কি তাকে আগে থেকে চিনে?তার তো মনে নেই এরকম কোনো মেয়ের কথা।কে এই মেয়ে!

,,তুমি কি আমাকে আগে থেকে চিনতে আঙ্গিনা?

তরী চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে বললো

,,খুবই বা জে রকম ভাবে পরিচিত আমরা, আমার জীবনের সবচেয়ে খা রাপ সময় বহন করে নিয়ে এসেছিলেন আপনি।তবে আপনার আমাকে মনে না রাখাটাই স্বাভাবিক বলেই মনে হয়।আপনি তো মেয়েদেরকে লাইক টিস্যুর মতো ইউ জ করে ছুঁড়ে ফেলেন!

ফারাবী চমকালো,তার সত্যি মেয়েটিকে মনে নেই,আর মেয়েটা এসব কি বলে যাচ্ছে।সে আর মেয়ে,জীবনে একটা মেয়ের দিকেই সে তাকিয়ে ছিলো সে ছিলো তার গালফ্রেন্ড স্বপ্না!এরকম মিথ্যা অপ বাদ কেনো দিচ্ছে মেয়েটি তাকে।

,,তোমার কি মনে হয় না তুমি না জেনে শুনে আমার নামে মিথ্যা এলি গেশন আনছো?

,,না! আমার চোখের দেখা, আমাকে করা আপনার ওই নোং রা স্পর্শ গুলো কখনোই কোনো ভুল হতে পারে না ফারাবী।আপনি একজন খুবই সুক্ষ্ম মস্তিষ্কের অভিনেতা আপনাকে দেখে বুঝার উপায় নেই আপনার মাঝে এরকম দান*বীয় এক সত্তা লুকিয়ে আছে।

ফারাবী এবার ভীষণ ক্ষে পে গেলো।

,,এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার কখন থেকে কি সব বলে যাচ্ছো।কিছু বলছি না দেখে কি মাথা কিনে নিয়েছো নাকি।

তরী ভয় পেলো না উল্টো হাসলো,গাল এলানো হাসিটা মারা ত্মক লাগলো ফারাবীর কাছে,রহস্যে ঘেরা এই নারী।ফারাবী চোখ বন্ধ করে নিজের চুল টেনে ধরলো।
কাঠকাঠ কন্ঠে বললো

,,কাল দিদুনের সামনে পার্ফেক্ট স্বামী স্ত্রীর অভিনয় করতে হবে আমাদের।তুমি সেটা চাইলে করতে হবে না চাইলেও।তুমি বা আমি কেউই নিজ ইচ্ছেতে বিয়ে করিনি,পরিবারের সামনে এমন কোনো কিছু করবে না যাতে তাদের সন্দেহ হয়।আমি আমার দিদুনকে কোনো বাহিরের মেয়ের জন্য কষ্ট পেতে দেখতে চাই না।

তরী এবার হু হা করে হেসে উঠলো যেনো কোনো মজার জোকস শুনে নিয়েছে।মুখ দিয়ে সিটি বাজিয়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেলো কিছুটা থেমে বললো

,,ওকে ডিল ডান!

,,,তুমি কি সোফায় ঘুমাবে?না মানে আম্মু জানতে পারলে আমাকে সকাল সকাল হসপিটালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিবে।

তরী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেললো

,,দরকার পড়লে আমি পঁচা পানির ডোবায় ঘুমাবো তাও আপনার সাথে একই বিছানায় কখনো না।আপনার আম্মু নিশ্চয়ই এসে এখানে দেখবে না আমরা কে কোথায় ঘুমাচ্ছি।তো নো বকবক নিজের খাটে নিজে ঘুমান।নাকি চান্স নিতে চাচ্ছেন মিস্টার ফারাবী?
ভ্রু কুঁচকে কথা টি বলেই তরী আরেক দফা চোখ মারলো।ফারাবী তাকিয়ে দেখলো শুধু,সে চুপচাপ খাটে শুয়ে পড়লো।মেয়েটা বড্ড বেশি ঝগ*ড়ুটে। কোনো কথার উত্তর স্বাভাবিক ভাবে দেয় না।কোন জন্মের শ ত্রু তার সু ধ তুলছে ওপরওয়ালা জানেন।

সকালে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে ফারাবীর।কিন্তু সে তো নিজের রুমে ঘুমিয়েছে।চোখ খুলে লাফিয়ে বসে পড়লো বিছানায়।তার সামনে হাতে বালতি নিয়ে দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে তরী।

,,তুমি আমার গায়ে পানি ঢেলেছো?হাও ডেয়ার ইউ!
রাগে পুরো শরীর জ্ব লে যাচ্ছে ফারাবীর।

,,ধুরু মিয়া!রাখেন আপনার ডেয়ার ফে য়ার।আপনার আম্মু কখন থেকে আপনাকে ডাকছে।আপনি কুম্ভ*কর্ণের মতো ঘুমিয়ে যাচ্ছেন তো কি করবো।মনে হলো পানি ইজ দ্যা বেস্ট অপশন!

,,লাইক সিরিয়াসলি?তুমি কি পাবনা ফেরত জলহ*স্তীর বংশধর!তোমার কি হাত নেই ওটা দিয়ে ধাক্কা দিতে পারোনি?

,,ওহ হ্যালো নিজেকে কোন দেশের মিনিস্টার ভাবেন আপনি?আপনার মতো ছুঁচোর গায়ে আমার এরকম সুন্দর হাত মানায় না।আপনাকে এই হাতে ধরার পর আমি আর কখনো ভাত খেতে পারবো না।এখনই কেমন গন্ধে মো মো করছে ছি!ভেবেই এখন হাত স্যানেটাইজ করা লাগবে।আপনি ভাই উঠে পড়ুন আমি হাত ধুয়ে আসি।

সকাল সকালে তরতাজা অপমান!ফারাবী বিছানা থেকে উঠে তরী কে ধরার জন্য এগেলো তার আগেই তরী এক দৌড়ে সোজা নিচে চলে গেছে।
বাড়িতে যাওয়ার তাড়ায় তরীর থেকে এখনো বদলা নেওয়া হয়নি ফারাবীর।সায়েবা তরীকে মিষ্টি কালারের একটা শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।তরী পড়েছে ফেসাদে জীবনে এসব শাড়ি পড়ে নাই বিয়ের পর জামাইয়ের জন্য পড়ার এক বস্তা সখ থাকলেও জামাই হিসাবে ফারাবী কে দেখে সে সখ নিজের গলা নিজে টিপে আত্নহ ত্যা করেছে।

গাড়িতে আবার এই ছেলের সাথে পুরোটা রাস্তা একা যেতে হবে ভেবেই সে হতাশ হলো।তার এতো ভালো শ্বশুর শাশুড়ীর ঘরে এরকম একটা পটল জন্মালো কেমনে বুঝে আসে না।শ্বশুড় শাশুড়ীর সাথে যাবে সে উপায়ও নেই তার শ্বশুর মশাই তাকে গাড়িতে উঠিয়ে বলে গেলো
,,প্রাইভেসি ফাস্ট,আমরা কাবাবে হাড্ডি হতে চাই না!

,,এই যে মহাশয়া ডাস্ট*বিন!সিট বেল্ট কি লাগাবেন নাকি আমি লাগিয়ে দেই ওইটা চাচ্ছেন?

,,ও হ্যালো আমার এতোটাও খারা প দিন আসেনি যে আপনার থেকে হেল্প নিবো।
তরী সিট বেল্ট আটকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো,গাড়ি চলছে আপন গতিতে তরী ফারাবীর দিকে ফিরেও তাকায়নি ফারাবী ও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে।আজ মনে হচ্ছে গাড়ি চালানো শিখাটা তার জীবনের একটা বড় ভুল দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে বড় ভুল গতকাল বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে না যাওয়া।একটা ডাকা তের মতো মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকতে হবে ভেবেই তার রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর ফারাবী খেয়াল করলো তরী ঘুমিয়ে গেছে সিট থেকে বার বার মাথা পড়ে যাচ্ছে বিরক্ততে মুখ দিয়ে চ মূলক শব্দ করলো।এ মেয়ে তো মহা
ঝা মেলা উপায়ন্তর না পেয়ে নিজের কাঁধে তরীর মাথা রাখলো।মেয়েটাও একটা জিনিস, ঘুমের মাঝেও তার হাত চেপে ধরেছে।

শেখ পরিবারের বিশাল বাড়িটার সামনে গাড়ি থামলো বিকাল গড়িয়েছে চারদিকে সোনালী আভা ছড়িয়েছে।ফারাবী কয়েকবার ডাকলো

,,এই আঙ্গিনা, আঙ্গিনা উঠো।
কিন্তু এ তো মরার মতো ঘুমাচ্ছে,মানুষ কি করে এতো সময় ঘুমায়,পুরো রাস্তা ঘুমিয়েছে তাও উঠার নাম নেই।ফারাবী এবার গাড়িতে থাকা পানির বোতলের সব পানি তরীর মুখের উপর ঢেলে দিলো।
তরী একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো আশপাশে না তাকিয়েই জোরে চিল্লিয়ে বললো

,,ওই কোন শা*লা রে!

ফারাবী ভেবাচেকা খেয়ে গেলো এই মেয়ের তো দেখছি মাথার সাথে সাথে মুখটাও খারা প!
চলবে?