বিষচন্দ্রিমা পর্ব-০৫

0
3

#বিষচন্দ্রিমা
#পর্ব৫
#তামান্না_আনজুম_মায়া
শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির তীব্রতার সাথে রোদের তেজ টাও যেনো বেশি।যেদিন রোদ উঠে সেদিন তা সহ্য করা বড় দায়।সকাল সারে আটটা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে তরী সাথে আছে ফারাবী।দুজনে আয়নার সামনে এক প্রকার মারা’মারি লাগিয়ে দিয়েছে একজন সামনে যায় তো আরেকজন গিয়ে আবার সামনে দাঁড়ায় যার ফলে কেউই ঠিক মতো তৈরি হতে পারছে না।
তরী এবার বিরক্তিতে চেচিয়ে বলে

,,কি সমস্যা আপনার দেখছেন না তৈরি হচ্ছি?আপনি বর বার সামনে আসছেন কেনো?

,,আমার রুম আয়নাও আমার সব কিছু আমার তাই আগে রেডি হওয়ার অধিকার ও আমার।

দাঁত কিড়মিড়িয়ে তরী এগিয়ে এসে বললো

,,আমি আগে এসেছি আয়নার সামনে তাই আগে রেডি আমি হবো,আর এখন এই রুমের সব কিছুতে সমান অধিকার আমার ও আছে।

,,তোমাকে অধিকার কে দিলো?

,,যে বিয়ে করেছে সে দিয়েছে।

নীল রঙা কামিজ পরনে তরীর সাদা ত্বকে রঙটা যেনো জ্বলজ্বল করছে।কোমর ছড়ানো চুল গুলো অবাধ্যের মতো উড়ে যাচ্ছে। জড়জেটের ওড়নাটা উড়ছে এলোমেলো ভাবে।ফারাবী তাকালো তরীর দিকে, মেয়েটি দিন দিন তাকে এতো আকর্ষণ করছে কেনো?না চাইতেও সে বার বার এই মেয়ের দিকে এক অদৃশ্য টান অনুভব করছে ।মাত্ররো কয়েকদিন হলো মেয়েটি এসেছে তার জীবনে।ফারাবী হঠাৎ তরীর কোমর জড়িয়ে টেনে নিলো নিজের দিকে।আকষ্মিক ঘটনায় তরীর হাতের চিরুনি ঠাস করে নিচে পড়ে গেলো।ফারাবী তাকিয়ে আছে তরীরি দিকে তার দৃষ্টি এলেমেলো কিসের যেনো হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত!তরী কেঁপে উঠলো কিছুটা এতোটা কাছে এখন পর্যন্ত আসেনি ফারাবী কি করতে চাইছে কি ছেলেটা?
তরী মিন মিন করে বলে

,,কি করছেন ফারাবী?ছাড়ু,,,,

ফারাবীর মুখ আগানো দেখে এবার শ্বাস আটকে আসলো তরীর, কথা গলায় আটকে গেছে,ফারাবী তরীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে

,,এতো জ্বা লাময়ী রূপ নিয়ে ভার্সিটিতে কি ছেলে পটাতে যাচ্ছো তুমি?

ফারাবীর নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে তরীর ঘাড়ে, তরী নিজের কামিজ খামচে ধরলো।কথা বলার মতো শক্তি খুঁজে পাচ্ছে না। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো।

ফারাবী আবারও বললো,এবারে তার কন্ঠে ছিলো কিছুটা আদেশের সুর

,,তুমি যেভাবেই হও যেমনই হও,আমি মানি আর না মানি, তুমি ভুলে যাবে না তুমি শেখ ইসরাক ফারাবীর বউ!
ফারাবী থেমে আবার বলে
ওড়না ঠিকঠাক ভাবে মাথায় পেচিয়ে চুল গুলো বেঁধে তার পর বের হবে, নতুবা,,,,,

ফারাবী চট করে দুরে সরে গেলো দৃষ্টি ফেরালো তরীর দিকে মেয়েটা কাঁপছে রিতীমতো। ফারাবী হাসলো তরীর অবস্থা দেখে জব্দ করার মুখ্যম একটা পথ পেয়ে গেছে।
নিজের কাজ শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় আবার বললো

,,তাড়াতাড়ি আসবে না হয় রেখে চলে যাবো।

তরী চোখ খুললো এবার তড়িঘড়ি করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল আঁচড়ে একটা কাটার সাহায্যে আটকে দিলো,ওড়না ভালো করে পিন আপ করে বের হয়ে গেলো।মুখে প্রসাধানীর ছিটে ফোঁটা ও নেই।তবুও কি সুন্দর স্নিগ্ধ লাগছে মেয়েটিকে।তরী নিচে নামতেই এগিয়ে আসলেন সায়েবা।
জাহেরা শেখ গলা উচিয়ে বললো বড় বউ মা নাত বউকে খাবার দেও জলদি ভার্সিটি যেতে হবে তাকে।তরী তাকালো বৃদ্ধ মানুষটির দিকে তাকে উপর থেকেই কঠিন ধাঁচের মনে হয় ভেতর থেকে মোমের মতোই নরম।তরীর নিজেকে সত্যি অনেক ভাগ্যবান মনে হয়, এতো ভালো পরিবার পাবে এতো গুলো মানুষের ভালোবাসা পাবে কখনো ভাবেনি।
সায়েবা তাড়া দিলেন তরী কে বসার জন্য, তরী বসতে যাবে তখনই সানায়া বলে

,,মাম্মাম আমার পাশে বসো।
তরী এগিয়ে গিয়ে বসলো,চোখাচোখি হলো ফারাবীর সাথে তরী সুযোগ বুঝে একটা ভেংচি কেটে দিলো তাকে।
সানায়া বললো
,,জানো মাম্মাম আমি কিন্তু স্কুলে যাবো কাল থেকে পাপা আমাকে একটা সুন্দর বই আর ব্যাগ এনে দিয়েছে।
তরী গভীর মনোযোগ দিয়ে সানায়ার কথা শুনছে আর খাচ্ছে।
তরী যাওয়ার সময় সানায়ার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,মাম্মাম এসে আবার গল্প করবো মামনি।সানায়া হেসে টাটা দিয়েছে,তরী সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো
বাহিরে যাওয়ার পর দেখলো ফারাবী দাড়িয়ে আছে, ছেলেটার ভাব দেখলে গাঁ শিরশির করে তরীর মন চায় ওই সুন্দর সেট করা চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে তাতে এক বালতি বালি ছুঁড়ে মারতে।

ফারাবী দাড়িয়ে আছে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে হাতের আঙুলের সাহায্য ঘুরাচ্ছে চাবি।

তরী এগিয়ে গিয়ে বলে

,,বাইকে যাবেন?

ফারাবী ভ্রু কুঁচকে বললো

,,না প্লেনে করে!

,,আশ্চর্য লোক তো আপনি কথায় কথায় এতো ত্যাড়ামি করেন কেনো?

,,তুমি কেনো এমন প্রশ্ন করো,বাইক দেখতে পাচ্ছো যেহেতু বাইকেই যাবো।
তোমার মতো মেয়েকে বাইকে উঠাতে হবে ভেবেই কষ্ট হচ্ছে।আমার সাধের বাইক টাও কষ্ট পাবে এবার!

,,ওহ!তাই তো আপনার বাইক তো শুধু আপনার পাশে স্বপ্না কে কল্পনা করে।অন্য কোনো মেয়েকে সহ্য করবে কেনো?
আমি রিকশা করে চলে যাবো, আমার এতো সখ জাগেনি কারো বাইকে চড়ার।
ফারাবী মুহুর্তেই রেগে গেলো হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলো সে।মেয়েটা কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে ভুলে না কখনো!
তরী ইতিমধ্যে এগিয়ে গেছে সামনে, রিকশা নেওয়ারও জন্য ফারাবীর এবার রাগ লাগলো এই মেয়েটা এতো বেশি বুঝে কেনো?

ফারাবী তেড়ে গিয়ে তরীর হাত ধরে নিয়ে আসলো বাইকের সামনে,কঠিন সুরে বললো
,,চুপচাপ বাইকে উঠে বসবা,না হয় পা ভেঙ্গে বাসায় রেখে যাবো বেয়া’দব মেয়ে!

তরী অপমান হজম করে নিলো,বাড়ির সবাই যদি জানে সে একা গিয়েছে তাতে লাগবে আরেক ঝা মেলা।ফারাবী ও কম কিসে সুযোগ বুঝে ওকে নিশ্চিত
ফাঁ সিয়ে দিবে সবার সামনে।তরী উঠে বসলো বাইকে
,যথাসম্ভব দুরত্ব রেখে বসেছে, ফারাবী কে ধরেও বসেনি।

ফারাবী বাইক স্টার্ট দেওয়ার আগে আবার বললো

,,ঠিকঠাক ধরে বসো, যদি পড়ে যাও তো তার জন্য আমি দায়ী থাকবো না।

তরী ভাব নিয়ে ধরলো না।
ফারাবী বাইক স্টার্ট দিতেই তরী গিয়ে পড়লো ফারাবীর উপর, তাল সামলাতে না পেরে চেপে ধরলো শার্টের এক অংশ।
ফারাবী দাঁতে দাঁত চেপে বললো
,,আগেই বলেছিলাম ধরে বসতে,বেশি বুঝা মেয়ে মানুষের স্বভাব।আমার কাঁধে হাত রাখলে কি তোমাকে কেউ জেল ফাঁ*সি দিবে মিসেস?

ফারাবীর মুখে মিসেস ডাক শুনে কিছু সময়ের জন্য হলেও তরী থমকে গেছে।ডাকটা কেনো যেনো ভালো লাগলো তার।

,,কাগজে কলমে হলেও তো আমি তোমার একমাত্র স্বামী, আমার কাঁধে হাত রাখতেই পারো।পরপুরুষ তো নই!

তরী নিরবে শুনলো কথাটি,কথাটি তে এতো ভালোলাগা আছে, কথাটি কি জা দুর মতো কাজ করলো?তরী তৎক্ষনাৎ হাত রাখলো কাঁধে, ফারাবী বাইক চালালো আবার।
ভাবলো মেয়েটি এরকম অদ্ভুত কেনো?তার বাইকে উঠার জন্য কতো মেয়ে পা গল আর এই মেয়ে যেনো উঠতে না পারলে বাঁচে, গাঁ ঘেঁষে বসা তো দূর হাত লাগাতেও যেনো একশো বার ভাবে। আর বাকি মেয়েরা সুযোগ পেলেই ঢলে পড়ে গায়ের উপর।এমনকি স্বপ্নার মধ্যেও এতোটা জড়তা কোনো দিন দেখেনি সে,সাবলীল ভাবে মিশে যেতো মেয়েটা,কখনো লজ্জা পেতে দেখেনি,আর এই মেয়ে তো রণচণ্ডী রূপ ধারন করেও লজ্জা পায়!
একই জাত একই রূপ তবুও কেনো এতো পার্থক্য!শুধুই কি কাকতালীয় নাকি সবই ছলনা!
—–
ফারাবী বাইক থামালো ভার্সিটির কিছুটা আগে,তরী পুরো রাস্তা আর একটা কথাও বলেনি।

,,নামো।
তরী নেমে গেলো চুপচাপ।
,,বাইকে করে নিয়ে এসেছি বলে ভেবো না ভার্সিটি নিয়ে গিয়ে তোমাকে নিজের বউ বলে পরিচয় দিবো।তোমার সাথে এসেছি শুধু দিদুনের কথা ভেবে বাবার জোড়াজুড়িতে।
তরী দুহাত বুকে গুঁজে বলে উঠলো
,,নিজেকে কি ভাবেন আপনি?আমার ও এতো সখ নাই আপনার মতো একটা কার্টুনের নামে পরিচিত হওয়ার।এখানে আপনি না নামালেও আমি নেমে যেতাম।আপনার সাথে এসেছি এতেই আমার গাঁ গুলিয়ে আসছে।যান তো আমি একাই যেতে পারি,বলেই হাঁটা ধরলো

ফারাবী কিছু না বলে ভার্সিটিতে চলে গেলো অনেক দিন পর ভার্সিটি এসেছে বন্ধুদের সাথে দেখা করবে এর সাথে ঝ গড়া করে মুড নষ্ট করার ইচ্ছে নেই ওর।

তরীর এখান থেকে ভার্সিটি যেতে আর লাগবে তিন চার মিনিট। হেঁটে চলছে আপন মনে, অরিয়েন্টেশনের পর ভর্তি হয়েছে সে আজ গিয়েই সোজা ক্লাস করতে হবে।দশটায় ক্লাস এখনো অনেক সময় বাকি।
তরীর মনে হলো ওর পেছনে কেউ আছে,ফলো করছে ভয় পেয়েছে একটু,ঢাকা শহরে আজ তার প্রথম দিন নয় ছোট থেকেই একা থেকে অভ্যস্ত, তবে এই এলাকাটায় নতুন আশেপাশে ও তেমন মানুষ নেই।তরী হাঁটার গতি বাড়ালো,পেছনের ছায়াটাও যেনো তাকে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছে খুব দ্রুত।এবার দৌড় লাগালো সে
,,,,,
ফারাবী বাইক রেখে গিয়ে বসলো নিজেদের আড্ডার জায়গায়, ছুটে আসলো তন্ময়

,,ফারাবী পাশের মোড়ে দলের লোকের সাথে মারা*মারি লেগেছে।

ফারাবী জিজ্ঞেস করলো কোন পাশের মোড়?তন্ময়ের উত্তর পেয়ে দৌড় লাগালো কোনো দিক না তাকিয়ে তার মাথায় একটাই চিন্তা ওখানে সে তরী কে নামিয়ে এসেছে,মেয়েটার যদি কিছু হয়ে যায় তো,,আর ভাবতে পারলো না কিছু।

তরীও সমান তালে দৌড়ে এগোচ্ছে সামনে হঠাৎ শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিলেই সামলে নেয় কেউ।
ফারাবী কে চিনতে বেশি সময় লাগেনি তরীর, আরো একটু মিশে গেলো ফারাবীর সাথে, বুকের পাশের শার্টের অংশ খামচে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো
,,ও,,ই লো,,কটা আমাকে আমাকে ধরার জন্য এসেছিলো ফারাবী!আমার হাত ওড়না টেনে নিয়েছিলো।
ভয়ে এবার কেঁদে দিলো তরী,ফারাবী মুর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে তরীর মাথায় হাত রেখে,তার দৃষ্টি দূরে ছুটে যাওয়া মাক্স পরিহিত ছেলেগুলোর দিকে,এদের দেখে বিরোধী পক্ষের কারো মতো লাগছে না।তবে এরা কারা?তরীকে কেনো ধরতে এসেছিলো?
গলির ধারে হা ঙ্গামা কিছুটা কমে এসেছে,তন্ময়,অয়ন, তামিম ছুটে গিয়েছিলো প্রথমেই ফারাবী তরীকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে ফুটপাতের উপর।মেয়েটিকে ছাড়িয়ে দেওয়ার তাড়া নেই তার মাঝে।
গু*লি চলার শব্দে এবার অনেকটা ভয় পায় তরী, ফারাবী কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, পারলে ভিতরে ঢুকে লুকিয়ে পড়বে।
ফারাবী তাকালো রাস্তার দিকে সব ছেলেরা ছুটে চলেছে দিক বেদিক গু,লি কারো গায়ে লাগেনি,ফিরে এসেছে তন্ময়, তামিম,অয়ন।
তিনজনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফারাবীর উপর যে ছেলে দলের মানুষ কে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ছুটে সে আজকে গেলোই না!তবে তখন পুরো কথা না শুনেই ছুটে এসেছিলো কেনো?ফারাবীর বুকে লুকিয়ে থাকা মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না,তবে তাকে যে সযত্নে আগলে রেখেছে সে মানুষটাকে দেখে তারা রীতিমতো অবাক হচ্ছে।একটা মেয়েকে ফারাবী জড়িয়ে ধরেছে তাও নিজ থেকে!স্বপ্না কেউ তো কোনো দিন ধরেনি,এর আগেও তো অনেক কে বাঁচিয়েছে বিপদের হাত থেকে তাদেরও তো কখনো ছুঁয়ে দেয় নি।কে এই মেয়ে!তিন জনের দৃষ্টি উপেক্ষা করছেনা ফারাবী সবার অবস্থা দেখে যেনো মজা পাচ্ছে অনেকটা।

ফারাবী শান্ত কন্ঠে তন্ময়ের উদ্দেশ্যে বললো

,,যা এখান থেকে!

তন্ময় হতবিহ্বল বাকি দুজনও, হেঁটে চলে গেলো তাঁরা। তন্ময় হাঁটছে আর পিছন ফিরে তাকাচ্ছে কয়েক বার।
তামিম কে খোঁচা মেরে বলছে

,,এই ফারাবীর কি হলো রে মাঝ রাস্তায় এক মেয়েকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে!অবিশ্বাস্য ব্যাপার,আমাকে কেউ চিমটি কাট ভাই।বাকি দুজনের ও হেলদোল নেই গিয়ে বসলো আগের জায়গায় একবার ব্যাটাকে পাই চেপে ধরবো তখন।
——
ফারাবী ধীর কন্ঠে ডাকলো
,,অঙ্গনা!
তরী অবাক হলো এই ছেলে তাকে একেক সময় সময় একেক নামে ডাকে কেনো,আঙ্গিনা থেকে সোজা অঙ্গনায় চলে গেছে, আকার ওকার গুলা উনার কি ক্ষতি করেছে যত্তসব। ফারাবী যেনো শুনে ফেললো তরীর মনে মনে বলা কথাটা, সে চমৎকার ভাবে হাসলো যা দেখতে পেলো না তরী।

,,ভয় পেয়েছো? অনেক বেশি?

,,হুম!

ফারাবী এই সহজ স্বীকারোক্তি দেখেই বুঝলো সত্যি ভয় পেয়েছে না হয় এই মেয়ে কোনো দিন শান্ত ভাবে কথা বলার মতো মানুষ না।

,,এতো ভয় পাচ্ছো কেনো আমি আছি তো,তোমার কিছু হবে না।ফারাবী থাকতে তার মিসেস কে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না!

,,আপনি কেনো আমার জন্য এতো কিছু করবেন?

ফারাবী মৌন রইলো, উত্তর টা তার নিজেরও জানা নেই।
ফারাবী ঠোঁট চেপে হাসলো,কানের কাছে ফিসফিস ফিসফিস করে বললো
,,আমাকে কখন থেকে জড়িয়ে ধরে আছো খেয়াল আছে তোমার?এটা কিন্তু একটা রাস্তা কতো মানুষ তাকিয়ে আছে তুমি জানো?

টনক নড়ে উঠলো তরীর, লজ্জায় মিশে যেতে মন চাইলো মাটিতে,সে কতোটা নির্লজ্জ হয়েছে, এভাবে মাঝরাস্তায় দিক বেদিক না দেখে একটা ছেলেকে সে জড়িয়ে ধরে আছে,কি লজ্জা কি লজ্জা! তরী সরে আসতে চাইলো তৎক্ষনাৎ তবে পারলো না,ফারাবী বেশ বুঝতে পারছে তরী কতোটা লজ্জা পেয়েছে,মেয়েটার লজ্জা মাখা মুখ দেখার লোভ সামলাতে পারলো না সে,তরী মাথা নিচু করে রেখেছে, ফারাবী গলার স্বর পরিবর্তন করে বললো

,,ছি!ছি! আঙ্গিনা তুমি এই মাঝ রাস্তায় একটা ভদ্র সভ্য ছেলে দেখে তার উপর ঝাপিয়ে পড়লে?তুমি কেমন মেয়ে, এভাবে আমার ইজ্জত লুটে নিতে চাইছো?জড়িয়ে ধরে,,,,,,,,

তরী কান চেপে ধরে বলে

,,এই চুপ একদম চুপ।আমি জড়িয়ে ধরবো আপনাকে? তার আগে আমি আইসি ইউর পেশেন্ট হয়ে যাবো, আপনার কাছে আসার থেকে ওইটা অনেক বেশি সেইফ!আপনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, লুচু কোথাকার।
বলেই হন হন করে চলে যেতে লাগলো,পেছন থেকে ফারাবী তরীর হাত টেনে ধরে,তরী বিরক্ত নিয়ে তাকায় ফারাবীর দিকে
ফারাবী এগিয়ে এসে তরীর ওড়না টেনে ঠিকঠাক করে দেয়।

,,এবার পার্ফেক্ট, নাও গো!

তরী পিটপিট করে তাকালো তাকে রেখেই এগিয়ে গেলো ফারাবী, তরী মনে মনে ভাবলো এতোটাও
খারা প না ছেলেটা!

দশটা বাজতে বাকি আর দুই মিনিট গেইট দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো সে,উদ্দেশ্যে ডিপার্টমেন্টের ক্লাস।

******
ফারাবীদের ক্লাস নেই এখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সে।ফারাবী গিয়ে বসতেই তিনজোড়া চোখ তার উপর হামলে পড়লো,ওই মেয়েটার সাথে পরবর্তীতে কি কি করেছে ফারাবী তা তিন জনই লুকিয়ে দেখেছে।তাদের বন্ধু লুকিয়ে চুরিয়ে আরেকটা প্রেম করছে কেউ ঘুনাক্ষরে ও টের পেলো না!

ফারাবী নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো
,,এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?আমাকে কি কোনো দিন দেখিসনি তোরা?

তন্ময় বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো
,,মেয়েটা কে ফরাবী মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না সব দেখেছি আমরা!

,,দেখেছিস তো আমি কি করবো।মেয়েটা কেউ না!

অয়ন বললো দোস্ত প্লিজ এতো রহস্য করিস না আমার কিন্তু ভাত হজম হবে না ভাই

,,তাহলে রুটি অথবা খিচুড়ি খেয়ে নিস!

,,তার মানে তুই বলবি না?

,,বলার মতো কিছু নেই তাই বলবো না।

তামিম চেচিয়ে উঠে বললো,ওই মেয়েটার সাথের মেয়েটা তো আমার গালফ্রেন্ড!

,,তোর গালফ্রেন্ড আছে?কবে পটাইলি?এই তোরা তলে তলে ট্যাম্টু চালাচ্ছিস আর আমি কিছুই জানি না!
তন্ময়ের কথায় চুপসে গেলো তামিম।

,,দোস্ত রাগ করিস না প্লিজ নিপার থেকে জেনে নিবো ফারাবীর সাথে ওই মেয়ের আসলেই কিছু আছে কিনা।

ফারাবী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে যা খুশি কর।

,,,,,,
সকাল দশটার ক্লাস আজ হবে না, তার উপর একই ডিপার্টমেন্টে নিজের প্রাণপ্রিয় বান্ধবী কে পেয়ে যাবে স্বপ্নেও ভাবেনি তরী,নিপা তার স্কুল কলেজের ফ্রেন্ড,সেই ছোট থেকে মেয়েটাকে চিনে সে,বিয়ের চক্করে মেয়েটার সাথে কথাও হয়নি ঠিক মতো।
দুই বান্ধবী মিলে কথা বলতে বসেছে এবার, এতোদিনের সব ঘটনা বলার মতো কাউকে পেয়ে মনে মনে অনেকটা স্বস্তি পেলো।

নিপা আর তরী কে লক্ষ করছে সেকেন্ড ইয়ারের দুটি মেয়ে, তাদের মধ্যে একজন বললো মেয়েটা কে রে?ওটাকে ডেকে নিয়ে আয় জুনিয়র হয়েছে হালকা পাতলা কাজ করে দিবে না তা কিভাবে হয়!

মিরা রাগে ফুঁসছে এই মেয়েটা তার ফারাবী কে জড়িয়ে ধরেছিলো সাহস কতো বড়!ফারাবী কে সে কবে থেকে পছন্দ করে আর এই মেয়ে কিনা তার পছন্দের মানুষের সাথে ঘেঁষা ঘেষি করে বেড়াচ্ছে আজ এটাতে সায়েস্তা করতে হবে।ফারাবী শুধুই তার।দরকার পড়লে এই মেয়েকে ও সরিয়ে দিবে,আন’স্মার্ট একটা, এরকম একটা মেয়েকে ফারাবী নিশ্চয়ই পাত্তা দিবে না,ঘোমটা দিয়ে বউ সেজে বসে আছে!ছোট লোক গুলা বড়লোক হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই একদম গলে গলে পড়ে যত্তসব।
নিপা আর তরীর কথার মাঝে তরীকে হাতের ইশারায় ডাকে এক মেয়ে।তরী এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে ওকেই ডাকছে।উঠে গিয়ে জিজ্ঞেস করে কি সমস্যা?
মেয়েটা বলে মিরা আপু তোমায় ডাকছে কথা আছে।

তরী যায় সাথে নিপা
তরী বিরক্তিমাখা কন্ঠে বলে
,,আমাকে ডাকার কারন?

,,সিনিয়র আমি তোমার,সালাম দাও বেয়া দপ

,,তরী ভ্রু কুঁচকায় পরে সালাম দেয়।

,,ওই যে ছেলেগুলো দেখতে পাচ্ছো তাদের মধ্যে খয়েরী রঙের শার্ট পড়া ছেলেটিকে গিয়ে বলবে ভাইয়া আপনাকে মিরা আপু সালাস সাথে ভালোবাসা পাঠিয়েছে!
তরী তাকালো ফারাবীর দিকে মেয়েটি ফারাবী কেই ইশারা করে দেখিয়েছে!আর কাউকে পেলো না এই মেয়ে?এই উজবুক টার সামনে এখন যেতে হবে।

তরী মাথা নেড়ে পা বাড়ালো,মিরা হাসলো মনে মনে ফারাবী কে কিছু বললে এই মেয়েকে আস্ত চিবিয়ে খাবে!ফারাবী যা রাগী এই মেয়ে তো জানেই না, এবার বুঝবে ঠেলা।

তরী এগিয়ে গেলো সেদিকে ফারাবীর ঠিক মুখোমুখি দাড়িয়েছে সে একবার তাকালো মিরার দিকে সে অনেকটাই এগিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে কি হবে দেখার জন্য।
অয়ন পানি খাওয়ার জন্য বোতল উঁচিয়েছে সবে।বাকিরা তাকালো মেয়েটির দিকে,পড়নের জামা দেখে বুঝলো এইটা কিছুক্ষণ আগের সে মেয়েটা হতে পারে।

তরী সোজাসাপটা বললো

,,ফারাবী ভাইয়া!
অয়ন মুখে পানি নিয়ে তৎক্ষনাৎ খুক খুক করে কেঁশে উঠলো।ফারাবী আর ভাইয়া! এ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এসে ফারাবী কে ভাইয়া ডাকেনি, এই মেয়েই প্রথম যার চোখে ফারাবী কে ভাই মনে হলো।
ফারাবী কটমট দৃষ্টিতে তাকালো তরীর দিকে।তরী ভাবলেশহীন ভাবে আবার বললো

,,মিরা আপু আপনাকে সালাম আর ভালোবাসা পাঠিয়েছে ভাইয়া!

পর পর দুইবার ভাইয়া!ফারাবী দাড়িয়ে রাগে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে
,,আমি তোমার ভাইয়া লাগি?
চলবে…