#বিষাক্ত_ভালোবাসা
পর্ব:০৬
লেখনীতে : শারমিন আক্তার বর্ষা
গভীর রাত শহরের ফাঁকা রাস্তা পেরিয়ে যাচ্ছে গাড়িটা।
ঘাড় কাত করে বার কয়েক পাশে তাকাল A.S ! পাশের সিটে রুহানির অ’জ্ঞান দে’হ। ক্লোরোফোম নাকে শুকিয়ে রুহানিকে পুনরায় অজ্ঞান করে A.S ! সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে গাড়ি চালাচ্ছে, রাস্তার পাশে খানিকটা দূরত্ব বাদে বাদে ল্যাম্পপোস্ট।
‘পি’স্তল দেখে রুহানি জ্ঞান হারিয়ে A.S এর ওপরে পরে যায়। সাবধানতা অবলম্বন করে রুহানিকে সোফায় সোজা করে শুইয়ে দিয়ে রুহানির পায়ের কাছে স্থির বসে রয় A.S ! গম্ভীর কণ্ঠে তাকে মেয়েটির তথ্য জানানোর জন্য বলল সে।
ওপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে রুহানির লাগেজ সার্চ করার জন্য এগিয়ে যায় ওয়াসিফ। লাগেজ লক করা, বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও ওয়াসিফ আনলক করতে পারল না। এতে বেশ বিরক্ত বোধ করল A.S রাগে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে, তাজ শান্ত কণ্ঠে বলে,
— এগুলো আমার বাম হাতের খেল। তুই সর আমি দুই মিনিটে খুলে দিচ্ছি।
লাগেজ আনলক করে কিছু কাগজপত্র পেলো তাজ। কাগজপত্র গুলো A.S এর দিকে এগিয়ে দিতে,মৃদু হাসল সে। রুহানির সেলফোন হাতে নিয়ে চোখ বুলালো। ফোনটা বন্ধ, ফোন অন করল। এক মূহুর্তে ফোনের লক আনলক করে ফেলল সে। আনলক করতে ফোনের ওয়ালপেপারে রুহানির হাস্যজ্জ্বল মুখশ্রীর একখানা ছবি ফুটে ওঠল। ঠোঁট জোড়া কিঞ্চিত বাঁকা করে মৃদু হাসল A.S ‘ফোনের ওয়ালপেপার থেকে দৃষ্টি নামিয়ে পাশে শুয়ে থাকা নমনীর দিকে তাকাল। রুহানির ফোন ঘাটাঘাটি করছে, কল লিস্ট চেক করল। মেসেজ চেক করল। ফোনের গ্যালারী চেক করল। ফোন গ্যালারীতে বেশিরভাগ রুহানির ছবি ও ফ্রেন্ডস দের সাথে গ্রুপ ছবি। সবগুলো ছবিতে তার ঠোঁটে উজ্জ্বল হাসি প্রস্ফুটিত। মেসেজে একটা বাড়ির এড্রেস দেখতে পেলো সে। ফোন অন করতে অনেকগুলো মেসেজ এসেছে। একটা বাড়ির এড্রেস ও কিছু বাক্য লিখা,
‘রুহু এটা আমার বাড়ির সঠিক লোকেশন তুই ট্যাক্সি করে চলে যায়। আমার ভীষণ টেনশন হচ্ছে।
রুহানিকে যারা কিডনেপ করে নিয়ে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য কড়া করে আমান বলে,
— এবার ঠিক মেয়েকে ধরে নিয়ে আসবি। নয়তো একটাও কাল সকালের সূর্য দেখতে পাবি না।
তারা নিচু মস্তক, হাবোধক ইশারা করে চলে যায়। যে করেই হোক নেহাকে খুঁজে নিয়ে আসবে। তাজ শুরু থেকে লক্ষ্য করছে, রুহানিকে দেখার পর থেকে A.S কেমন জেনো শান্ত হয়েগেছে।কারো ওপর রাগ ঝাড়ছে না। নেহাকে পাওয়া যায়নি সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। রুহানির পাসপোর্ট থেকে, রুহানির নাম, পরিচয় ঠিকানা এবং ও যে কানাডার সিটিজেন জানতে পারল। A.S এর বিপরীতে বসছে ওয়াসিফ,সে সন্দেহের নজরে তাকিয়ে সরু কণ্ঠে বলল,
— মেয়েটার সাথে কি করার প্ল্যান?
ওয়াসিফের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো A.S’ তাত্ক্ষণিক মাথা ডানে বামে নাড়ালো, মানে কিছু না। রুহানির ডানহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মৃদু হাসল সে। তার ওই হাসির পিছনে রহস্য কী? কি চলছে তার মাথায়? কারো বোঝার সাধ্য নাই।
ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে চারজনে A.S এর দিকে তাকাল, কিয়দংশ পর আঁড়চোখে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে, তাজ,আমান,ওয়াসিফ ও প্রবীর।
প্রবীর কিছুক্ষণ দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ছিল। পরক্ষণে শানিতকণ্ঠে বলল,
— ব্রো, কি চলছে তোর মাথায়? প্রবীরের কথায় মৃদু সহাস্যে হেসে ওঠল A.S’ তৎক্ষনাৎ ক্লোরোফোম মাখা রুমালটা রুহানির নাকে চেপে ধরে। ঠোঁট জোড়া চোকা করে বন্ধু দের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিল। রুহানিকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়ির কাছে আসে, ফ্রন্টসিটে রুহানিকে বসিয়ে সিটবেল্ট টা বেঁধে দেয়। রুহানির দিকে খানিক টা ঝুঁকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ভারী নিঃশ্বাস ফেলে সে। তৎক্ষনাৎ ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে।
ড্রাইভার সরাফাত হাসান ধীরকণ্ঠে শুধালো, ‘স্যার আমি ড্রাইভ করি?’
রাগী লুকে সরাফাতের দিকে তাকাল। A.S এর চোখের দৃষ্টি দেখে ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সরাফাত। A.S সে স্বভাবসুলভ ভাবে গম্ভীর ও কম কথা বলে। তার তীক্ষ্ণ চোখের চাহনি মা’রা’ত্মক ভয়াবহ। গম্ভীর মুখো ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে গাড়িতে ওঠে বসে,ড্রাইভিংয়ে মনযোগ দেয়।
কনকনে শীত, ঠান্ডা বাতাস বইছে। তীব্র গতিতে গাড়ি ছুটছে। রুহানির মাথা খানিকটা একপাশে ঝুঁকে যাচ্ছে। A.S এর নজরে আবদ্ধ হতে একহাত দিয়ে রুহানির ঘাড় সোজা করে সিটের মাঝামাঝি রাখে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর,আগের ন্যায় আবারও হেলে পরে। A.S রুহানির সিটবেল্ট খুলে দেয়,রুহানির হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। রুহানির মাথা নিজ কাঁধের ওপর রাখে। একনজর জ্ঞানহীন রুহানির দিকে তাকাল।একহাত দিয়ে গাড়ি স্লো ড্রাইভ করছে,অন্য হাত দিয়ে রুহানিকে আগলে রাখছে।
রাত প্রায় এগারোটা দুইতলার একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে এসে গাড়ি ব্রেক কষলো A.S! গাড়ির হনের শব্দ শুনে ভেতর থেকে ছুটে বেরিয়ে আসে শ্যামা ও তার বাবা। গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ির ডোর খুলে,বের হয় A.S সরু দৃষ্টিতে শ্যামা ও তার বাবার দিকে তাকায়। গাড়ির অন্যপাশে গিয়ে,ডোর খুলে রুহানিকে পাঁজা কোলে নিয়ে আসে। রুহানি কে দেখে উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে আসে শ্যামা। রুহানির গালে হাত দিয়ে,বারবার বলছে, রুহানির কি হয়েছে ও ওঠছে না কেন? আপনি কে? ওকে কোথায় পেলেন? শ্যামার কথার পিঠে A.S শান্ত কণ্ঠে বলে,
— আগে বাড়ির ভেতরে চলুন। ওনাকে বেডে শুইয়ে দিতে হবে। তারপর না হয় আমি আপনাদের সব বলছি।
শ্যামার বাবা A.S কে নিজের সাথে যেতে বললেন। শ্যামা A.S এর পিছু পিছু দ্রুত হেঁটে যাচ্ছে। শ্যামার রুমে নিয়ে এসে রুহানিকে শুইয়ে দেয়। রুহানির গায়ে পাতলা কম্বল জড়িয়ে দেয় A.S রুহানির ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে সুক্ষ্ম শ্বাস ফেলে সে!
রুহানির মাথার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল শ্যামা। পাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে শ্যামার বাবা A.S এর পরিচয় জানতে চায়।সে মলিনকণ্ঠে বলে,
— তোমাকে আমার চেনা চেনা লাগছে। কে তুমি?
সরু চোখে শ্যামার বাবার দিকে তাকাল A.S শান্ত কণ্ঠে নিজের পরিচয় দিলো সে। A.S এর পরিচয় পেয়ে থমথমে হয়ে যায় শ্যামা ও তার বাবা। থুতুমুতু খেয়ে যায়৷ কি থেকে কি করবে কিছুই বোধে আসছে না। A.S ইন্ডাস্ট্রিজের ওনার A.S যার সম্মন্ধে এতবছর ধরে শুধু নিউজ ও টিভি চ্যানেলে শুনে আসছে সে আজ তার নিজ বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে। মস্তিষ্ক জেনো হ্রাস পেয়েছে। মি.মাহিন তার স্ত্রী তে ডেকে বললেন, A.S এর আপ্যায়ন এর ব্যবস্থা করতে। কিন্তু A.S. তাতে বাঁধা দেয়। নির্মূল কণ্ঠে বলে,
— আমার জন্য আপনারা উত্তেজিত হবেন না। সবাই বসেন, আমার কয়েকটা কথা বলার আছে, কথা বলা শেষ হলে আমি চলে যাবো।
মি.মাহিন আপত্তি জানিয়ে বলে,
— আপনি একজন সফল বিজনেস ম্যান। আপনি আমার বাড়িতে পা রাখছেন এটা আমার ভাগ্য, আপনার জন্য কিছু করতে না পারলে আমার ভীষণ খারাপ লাগবে। কিছু অন্তত খেয়ে যাবেন প্লিজ।
অনেক অনুরোধের পর, A.S খাবারের জন্য রাজি হল। মিসেস.সুমাইয়া বেগম হরেক রকমের স্ন্যাকস ও কিছু খাবার এনে দিলেন। A.S সব কিছুতে নজর বোলালো তৎপর একটা বাটি হাতে নেয়। দুই চামচ পায়েশ খেয়ে সে বাটিটা পূনরায় রেখে দেয়। হাফ গ্লাস পানি খেয়ে বলে,
— বাস এতটুকুই। এতটা অনুরোধ করছেন বলে আমি এইটুকু খেলাম। এর বেশি আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
দরজার সামনে থেকে A.S কে দেখছে শ্যামা। মনে মনে আফসোস হচ্ছে তার, উৎসুক হয়ে বিড়বিড় করে বলল,
— এই সেই বিখ্যাত বিজনেস ম্যান যাকে আমি কল্পনা করেছিলাম মধ্য বয়স্ক বুড়ো হিসাবে। আর আজ তাকে সামনাসামনি দেখে পুরো টুস্কি খেয়ে যাচ্ছি। এত কিউট হ্যান্ডসাম! ওহ আল্লাহ! উঠিয়ে নাও আমাকে,নিজের চোখকে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।
ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে, চক্ষুজোড়া গোলগোল করে শ্যামা A.S এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শ্যামা দরজার সাথে হেলান দিয়ে আরও বলে,
— ইশশ! ইচ্ছে করছে এখন গিয়ে টুসস করে কয়েকটা সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেই ক্যাপশন দিবো, সেলফি উইথ ক্রাশ! উফপ, প্রথম বার দেখে কী আমি লাট্টু হয়ে গেলাম নাকি?
ডানে বামে মাথা ঝাঁকিয়ে,নিজেকে সংযত করল শ্যামা। নিজে নিজের মাথায় হাত দিয়ে কর্কশকণ্ঠে বলে,
— এইসব তুই কি ভাবছিস শ্যাম? তোর না এক সপ্তাহ পর বিয়ে? ছিহহ!
চলবে…. ইনশাআল্লাহ!