বিষাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৩১+৩২

0
304

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩১
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
‘ওর বেঁচে থাকা আমার জন্য বিপদজনক। আমাদের সিক্রেট কারবারির সব প্রমাণ লুকিয়ে কালেক্ট করেছে। এবং একটা আননোন নাম্বার থেকে কল করে আমাদের হুম-কি দিচ্ছে। আমরা যদি ওর কথা না শুনি তাহলে সে সব কিছু ওহ মিডিয়ায় ছাপিয়ে দিবে।’

‘সে হু-মকি দিলো আর তোরা ভয় পেয়ে গুটিগুটি পায়ে আমার কাছে আসলি। ভুলে গেছিস? সিংহের গর্জনে বন কেঁপে ওঠে। সিংহ গুহায় ঢোকার আগে ও পরে সিংহ সিংহ-ই থাকে। কিছুদিন শিকার করিনি বলে কী? সবাই ভাবছে সিংহ দূর্বল হয়ে পরেছে? ছোট্ট ছোট্ট লোকজন এখন হুম-কি দিচ্ছে। বুঝাতে হবে, এ.স বছর খানেক আগেও সিংহ ছিল আর বছর খানেক পরেও সিংহ-ই থাকবে। এক ঘন্টার মধ্যে আমার লোকটার খবর চাই। সে কোথায় আছে সে ডিটেইলস আমি আমার টেবিলের ওপরে চাই।’

টেবিলের ওপরে একটা ফটোকপির কাগজ রাখল তাজ। তীক্ষ্ণ চোখে তাকাই লোকটার এড্রেস দেখল। শাহাদাত আঙুল দিয়ে কপাল চুলকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘আমার বিরুদ্ধে কী প্রমাণ আছে এই মধ্য বয়স্ক লোকটার কাছে?’
প্রবীর শানিতকণ্ঠে বলল,
‘লোকটার ওপর একজন কে নজর রাখতে বলেছিলাম। ও জানিয়েছে, লোকটা কিছুক্ষণ আগে তার দ্বিতীয় বাড়িতে গেছে। সাথে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে ছিল।’
প্রবীরের কথা কর্ণপাত হতে হেসে বলল, ‘এতো মেঘ না চাইতে জল।’
____________
অন্ধকার ঘরে এক মেয়ে ও বয়স্ক লোকের অদ্ভুত আওয়াজ দরজার বাহির পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ। রাগে দাঁত কটমট করছে তাজ। তেড়েমেরে যেতে লাগল দরজার দিকে। দরজা ভাঙার প্রস্তুতি নিলো। আরিশ তাজ কে থামিয়ে দেয়। তেজ রাগী গলায় বলল, ‘বাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে এখানে নির্জন বাড়িতে একটা মেয়েকে নিয়ে এসে ন’ষ্টা-মি করছে। আর তুই আমাকে আটকাচ্ছিস?’

এ.স গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমি যেটা বুঝি সেটা তুই বুঝিস না। তোর লজ্জা করবে না একটা মেয়ে ও ছেলে কে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে?’
আরিশের কথার পিঠে চুপসে গেলো তাজ। ডোন্ট কেয়ার এটিটিউট দেখিয়ে ওয়াসিফ বলল, ‘তোদের যা ইচ্ছা কর বাবা। আমার তো খিদে পেয়েছে দেখি কিচেনে কি আছে?’
আমান গজগজ করে বলল, ‘তুই এখানে কাজে আসছিস নাকি গিলতে?’
ওয়াসিফ হাই তুলে বলল, ‘আপাতত গিলতে।’
_________
মেয়েটা চলে যাওয়ার জন্য আর্জি করছে। এবং দু’হাতে জলিল কে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটার এভাবে হাত ছুটোছুটি করছে দেখে রেগে গেলো জলিল। রেগেমেগে তার আঙুল দিয়ে মেয়েটার পিঠে আঁচড় কাটলো। মেয়েটা ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। জলিল হিংস্র পশুর মতো মেয়েটার বুকে কামড় বসাল। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে উঠল। জলিল মেয়েটার শরীর ভোগ করতে ব্যাস্ত হয়ে উঠল। মেয়েটার ঠোঁটে কামড় বসায়। মেয়েটার চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরল। জলিল কানে কানে বলল, ‘বহু বছর পর ভার্জিন মেয়ে পেয়েছি৷ একবার খেয়েই ছেড়ে দেই কি করে বল? তোর টাকার প্রয়োজন আমি তোকে টাকা দিবো প্রয়োজনে ডাবল দিবো তবুও আজ আমি আমার পরিপূর্ণ তৃপ্তি না পর্যন্ত তোকে ছাড়বো না।’

রাত প্রায় তিন টা বাজে এখনও মেয়েটার ওপরে নির্যাতন করছে জলিল। ঘন্টা খানেক পর, ছেড়ে দেয় সে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বাথরুমে চলে যায়৷ ফ্রেশ হয়ে আসতে জলিল মানিব্যাগ থেকে মেয়েটার হাতে টাকা গুঁজে দেয়। মেয়েটা ঠিক মতো হাঁটতে পারছে না। তবুও কষ্ট করে সে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির বাহিরে চলে আসে। জলিল বাথরুম গিয়ে শাওয়ার নিয়ে রুমে আসে। রুমে আসতে অবাক হয়ে যায়৷ চারজন ছেলে তার রুমের চার কোণায় দাঁড়িয়ে আছে। তাদের চিনতে মোটেও ভুল হয়নি জলিলের। তাদের দেখে শুঁকনো ঢোক গিলল সে। দরজার সামনে থেকে সিটি বাজিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল আরিশ। ওদের চারজন কে দেখে যতটা না ভরকে গিয়েছিল তার থেকে তিনগুন বেশি ভয় পেলো সে আরিশ কে দেখে।

আরিশ বিছানার অবস্থা দেখে ঘৃণায় চোখ সরিয়ে নেয়। তাজ কে বলে, ‘ও-কে ধরপ বাহিরে নিয়ে আয়।’

আরিশের হু-মকি শুনে জলিল ভয় পায়। সে ভয়ে কাঁপছে। আরিশ লোকটার চুল ধরে টান মারল। শক্ত গলায় বলল, ‘এই সাহস নিয়ে তুই আমার পিছনে লাগতে আসছিলি?’

জলিলের থেকে সব সত্য বের করল প্রমাণ গুলো কোথায় আছে। জলিলের ল্যাপটপে আছে, আর ল্যাপটপ রুমে রয়েছে। রুম থেকে ল্যাপটপ এনে সব ডকুমেন্টস নষ্ট করে ল্যাপটপ ভেঙে গুঁড়িয়ে ফেলল। আরিশের ইশারায় প্রবীর গান পয়েন্ট করল জলিলের মাথায়। কিছুক্ষণ পর ঠাস একটা শব্দ হলো। প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সোজা হয়ে দাঁড়াল আরিশ। ঘাড় টা কিঞ্চিত বাঁকা করে বলল, ‘ভালোর সাথে ভালো তবে খারাপের সাথে ঠিক কতটা হিংস্র পরিমাপ করা কঠিন।’
____________
হাসপাতাল_কিছুক্ষণ আগে। রাত ৯টা বাজে বিশ মিনিট অশ্রুসিক্ত চোখে তাকাই রুহানি বেড ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। অশ্রুসিক্ত চোখে নাজিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে, সে নাসরিনের একটা কথাও বিশ্বাস করেনি৷ আরিশের কথা নাজিন শুধু শুনেইনি বরং ‘ও’ অডিও রেকর্ড ও করেছে। রুহানি কে জোর গলায় বলল, সে রেকর্ড করেছে আমার মুখের কথা বিশ্বাস না হলে রেকর্ডিং শোন। ফোনের রেকর্ডিং রুহানি কে শুনানোর জন্য ব্যাগ হাত দিলো। কিন্তু ব্যাগের কোথাও ফোন নেই। মাথায় হাত দিয়ে ফোন কোথায় রাখছিল মনে করার চেষ্টা করছে। তারাহুরো করে বের হতে গিয়ে ফোন আরিশের বাড়ির কোথাও ফেলে দিয়ে আসছে। মনে আসতে ভীষণ রাগ হল নাজিনের৷ সে রুহানির হাত ধরে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করল। রুহানি কিছুতে নাজিনের কথা বিশ্বাস করছে। নাজিনের জোরাজুরিতে উত্তেজিত হয়ে উঠল রুহানি। নিজ বেস্ট ফ্রেন্ড কে বিশ্বাস করতে পারছে না। কেনো নাজিন তার কাছে আরিশের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে? রুহানি’র কন্ডিশন খারাপ দেখে বেলকনির দরজার সামনে থেকে দৌঁড়ে কাছে আসে শীষ। ফোনে কথা শেষ করে কেবিনে পা রাখছিল। তখনই নাসরিনের কথা শুনে থমকে দাঁড়ায়।

রুহানির হেল্থ আরও খারাপ হচ্ছে দেখে উচ্চস্বরে, ‘নার্স নার্স।’ বলে চেঁচাতে লাগল। দরজার সামনে ভিড় জমেছে। কেউ ভেতরে আসতে পারছে না। দরজা ভেতর থেকে লক করা। দরজায় কষাঘাতে শীষ রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলল, ‘দাঁড়িয়ে আছেন কেন? গিয়ে দরজা টা খুলে দিন।’

দরজা খোলার পর দুজন নার্স ভেতরে আসে এবং উনারা নাজিন কে কেবিন থেকে বের করে দেয়। নাজিন কখন আসছে কেউ দেখেনি। সকলের চক্ষুর আড়ালে সে কেবিনে ঢুকেছিল। হঠাৎ কি এমন হয়েছে ভেতরে যার ধরুণ ডাক্তার শীষ নার্সদের এভাবে ডাকলেন? হতবিহ্বল চোখে নাজিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নাজিন দুইহাতে মুখমণ্ডল চেপে ধরে কাঁদছে।
___________
দু’দিন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল রুহানি। এ দুদিনে একবার আরিশ হাসপাতালে যায়নি৷ হাসপাতালে বাহিরের মানুষ জন বেশি এলাউ ছিল না। সব সময় একা থাকতে হত। মাঝেমধ্যে ডাঃ শীষ রুহানিকে চেক-আপ করার জন্য আসতেন এবং বসে অনেকক্ষণ গল্প করেন। একা সময়ে শীষ কে পাশে পেয়ে শীষের সাথে জেনো ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায় রুহানির।

ইয়ানার কাছে বহুবার জিজ্ঞেস করে আরিশের কথা সে প্রতিবার আরিশ কে ভুলে যাওয়ার জন্য বলে। নাজিন তার হারিয়ে যাওয়া ফোনটা অনেক গুঁজে কিন্তু পায়না। আসলে ফোনটা রাস্তায় একটা অটোর মধ্যে পরে গিয়েছিল পরে একজন লোক ফোনটা পেয়ে নিজের কাছে রেখে দেয়। সিম খুলে অন্য জায়গায় কম দামে ফোনটা বিক্রি করে ফেলে।

এই দু’দিনে হাসপাতালের সামনে থেকে একটুও সরেনি ইয়াসির। সে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। তাকে হাজার বার বলেও হাসপাতাল থেকে সরাতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর রুহানি কে রিলিজ করা হবে। লাস্ট বার চেক আপ করার জন্য ডাক্তার শীষ কেবিনে আসে। রুহানির সাথে বসে কিছু ক্ষণ গল্প করে। চলে যাবে বলে, কিছুটা মন খারাপ করে সে। রুহানির মন খারাপ হয়। বন্ধু বলে কথা। রুহানি ও শীষ ঠিক করল হাসপাতালের বাহিরেও ওরা দেখা করবে ওদের বন্ধুত্ব টাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে।

রিসিপশনের পাশে ইয়াসির কে দেখে অবাক হল রুহানি। এগিয়ে যেতে নেয় ইয়াসির দিকে। ইয়ানা শক্ত করে ধরল রুহানির হাত। রুহানি তার মায়ের হাতটি ছাড়িয়ে বলল, ‘ছাড়ো মাম্মাহ। আমি ভালো আঙ্কেলের সাথে কথা বলবো।’

রুহানির মুখে ভালো আঙ্কেল ডাক শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় ইয়ানা। কেননা রুহানি ভালো আঙ্কেল বলে তার কাছে একজন লোকের গুণগান করেছিল। যার সাথে তার লেকে দেখা হয়েছিল। বিচলিত হয়ে উঠল ইয়ানার মন। তার মানে রুহানির সাথে প্রকৃতি ওর বাবার অনেক আগেই দেখা করিয়ে দিয়েছিল কিন্তু কেউ কাউকে চিনতে পারেনি। ইয়ানার হাত হালকা হয়ে যায়। রুহানি দৌঁড়ে ছুটে যায় ইয়াসির কাছে। রুহানি উল্লাসিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘আঙ্কেল আরিশ আসেনি?’

রুহানি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দুইহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরল ইয়াসির। আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় রুহানি। সে বুঝতে পারছে না কেনো ইয়াসির তাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলেন। রুহানি জেনো একটা ভ্রমে চলে গেছে। ইয়াসির রুহানি কে নিজের সামনে দাঁড় করালো। মেয়ের গালে হাত ছুঁয়ালো কপালে চুমু দিলো। রুহানি ভ্রু কুঁচকানো করে তাকিয়ে আছে। ইয়াসির জড়ানো কণ্ঠে বলল, ‘তুই আমার মেয়ে। আমার মেয়ে তুই।’
– ‘মেয়ে?’
‘হ্যাঁ। আমার মেয়ে। আমি তোর বাবা। তুই আসবি খবর পেয়ে তোকে দেখার জন্য কাতর হয়ে ছিলাম আমি একুশটা বছর। আমার শেষ ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর আগে তোকে জেনো একটিবার দেখতে পাই। দেখ সে ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করে দিয়েছে।”

আগের সব ঘটনা রুহানি ভুলে গেলো। সে পিছনে ফিরে তাকাল তার মায়ের দিকে। ইয়ানা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চুপ থাকা বলে দিচ্ছে ইয়াসির যা বলছে সত্য। ইয়াসির ই তার বাবা যাকে খুঁজতে সে বাংলাদেশে এসেছে। বাবা বলে কান্নায় ভেঙে পরে রুহানি। দুইহাতে ইয়াসির কে জড়িয়ে ধরে ‘বাবা’ বলে কান্না করছে।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসে। রুহানি তার মা’কে অনেকক্ষণ যাবত বুঝাচ্ছে।
‘ অতীত ভুলে যাওয়ার জন্য৷ অতীত কে মনে রেখে বর্তমান চলা কঠিন। মানুষ বলেই ভুল। মানুষ ভুল করবে। একজন ভুল করলে অন্য জন কে তাকে ক্ষমা করে মানিয়ে নিতে হয়। ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাহিলে ক্ষমা করতে হয়। বাবা ভুল করেছে তোমার চলে যাওয়ায় সে কষ্ট পেয়েছে তুমিও কিন্তু সুখে ছিলে না। তুমিও কষ্টে ছিলে। তাহলে কেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত দু’জনে কষ্টে থাকবা। তোমাদের কাছে অপশন আছে নিজেদের সাথে থেকে ভালো থাকার। তাছাড়া তোমাদের কিন্তু ডিভোর্স হয়নি। গর্ভবতী অবস্থায় ডিভোর্স প্রযোজ্য নয়। আমি কিছু শুনতে চাই না। তোমাদের দু’জন কে এক হতে হবে। সবার মা বাবা আছে আমার থাকতেও নেই৷ ছোটো থেকে বাবা ছাড়া বড় হয়েছি মা। তুমি কেন তোমার মেয়ে কে তার বাবা থেকে বঞ্চিত করবা? তুমি বাবাকে ক্ষমা করে দাও আর সব মনমালিন্য মিটিয়ে নাও।’

রুহানির সাথে ওর বন্ধুরাও বলল সাথে রুহানির নানা নানী ও একই কথা বলল। কেননা তারা দু’জন তো জানেন, ইয়ানা ইয়াসিরের প্রতি দৃঢ় ভালোবাসা’। সে দ্বিতীয় বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনি। ইয়াসির ইয়ানার হাত ধরে ক্ষমা চাইলো। ভুলের জন্য মাফ চাইল, সে তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত। ইয়ানা গম্ভীর শ্বাস ফেলল। মেয়ে স্বামী বাবা মা সবার দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর সব কিছু ভুলে ইয়াসির’কে মাফ করে দেয়। পাশ থেকে আদনান চেঁচিয়ে বলল,

‘ওহহ ইয়াহহ। এবার আঙ্কেল আন্টির বিয়া খাবো।’

আদনানের লাগামহীন কথায় ইয়ানা লজ্জা পেলো। এবং বাকিরা সবাই সশব্দে হাসতে শুরু করে। ইয়ানা, রুহানি সবাই কে সাথে নিয়ে ইয়াসির তার বাড়িতে আসে। রুহানি বাড়িতে আসার পর থেকে আরিশ কে দেখেনি। ইয়ানা চমকায় তার দেয়ালে পোর্টেট গুলো দেখে।

মামুর সাথে মামির সব ঠিকঠাক হয়েগেছে শুনে তৃপ্তির হাসি হাসল আরিশ। সে তো এটাই চেয়েছিল তার মামনি ফিরে আসুক৷ ওরা বাড়ি আসছে পর থেকে সেমুখি আর হয়নি আরিশ। সে তার একটা ফ্ল্যাটে চলে গেছে। আজ দু’দিন ধরে ওখানেই আছে। তার ফোনটাও বন্ধ। ফোন অপেন করলে ইয়াসিরের সাথে কথা বলে আবারও বন্ধ করে নেয়। আরিশের আদেশে সেই দু’জন গার্ড কে খুঁজে বের করে আনা হল। ওদের শুধু হুকুম দিয়েছিল রুহানি জেনো বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তাকে জেনো আটকানো হয়৷ তাই বলে তাকে মে’রে আহত করার অনুমতি দেয়নি৷

লোক দু’টো কে একটা বন্ধ রুমে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোক দু’টো ছটফট করছে। আসলেই তাদের মস্তবড় ভুল হয়েছে। অন্ধকার ঘরে হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ শুনে নড়েচড়ে ওঠে ওরা দু’জন। সামনের চেয়ার টায় বসে আরিশ। দু’জনের সাথে দু চারটে কথা বলে। চুলের মুঠি ধরে দু’জনের গালে কোষে কয়েকটা থাপ্পড় মারে। এতেও ওর জ্বালা কমেনি। তাজ ও আমান কে ইশারা করল৷ দু’জনে দুই বোতল অ্যাসিড নিয়ে আসল এবং তা গার্ডদের শরীরে ছুড়ে মারল। মুখে ও শরীরে এসিড ছুড়ে মারার কারণে পুড়ে যায় ত্বক, বিকৃত হয়ে ওঠে চেহারা। চোখে এসিড লাগলে অন্ধ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মুখে কাপড় বাঁধা শব্দ করতে পারছে না। কৈ মাছের মতো লাফাচ্ছে দুজন।
__________
তিন দিন পর, ডাক্তার শীষ এর সাথে দেখা করতে রুহানি ও ওর বন্ধুরা একটা ছোটো লেক অথবা পার্ক বলা যায়। সেখানে আসে। শ্যামা আসতে পারেনি গতকাল রাতে ওর স্বামী আসলে বলে ‘ও ওর শশুর বাড়ি চলে যায়। ডাক্তার শীষ আসতে দেরি করছেন। গাছের নিচে বসার জন্য বড়বড় বেঞ্চ রয়েছে। অনেক হয়তো এখানে বিকেল দিকে হাঁটতে আসে ও এখানে বসে বিশ্রাম নেয়।

রুহানি ও ওর বন্ধু রা মিলে বসে অপেক্ষা করছে। ওরাও ওদের ফ্রেন্ড গুলো কে এখানে আসার জন্য বলেছে। তারা রাস্তায় আছে কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবে। রুহানির হঠাৎ চোখ পরল রাস্তার পাশে ওদের থেকে বেশ কিছুটা দূরে আরিশ ওর বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের সাথে আরও তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোক গুলো কথা শেষ করে গাড়িতে ওঠে যায়। আরিশ হেঁটে নিজের গাড়ির ডোরে হাত রাখে। রুহানি আরিশের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। তাকে প্রশ্ন করে এখানে কি করছে? বাড়ি যাচ্ছে না কেন?

রুহানি কে এই সময় এখানে দেখে চমকে ওঠে আরিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে দেখা হয়ে গেলো রুহানির সাথে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। রুহানির মায়াবী মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে এক ঘোরে ডুব দিতে লাগল আরিশ। পরক্ষণে চোয়াল শক্ত করে বলল, ‘আমি কোথায় থাকবো? কোথায় যাবো কোথায় যাবো না। সে কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাবো না। আমাকে যেতে হবে সরো আমার সামনে থেকে।’

রুহানি ভালোবাসার অধিকার খাটালো। ব্যর্থ হলো। আরিশের পরিবর্তন তাকে বিব্রত করছে। সে জানতে চাইলো কেনো করছো আমার সাথে এমন। তবে কি ভালোবাসোনি তুমি আমায়?

আরিশ কাঠকাঠ কথায় রুহানিকে শোনালো সে তাকে ভালোবাসেনি। রুহানির চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরল। সে বিশ্বাস করল না আরিশের কথাখানি। ধরে ফেলল আরিশের হাত শক্ত করে। সে মূহুর্তে এসে উপস্থিত হল ডাক্তার শীষ। আরিশ এক ঝটকায় রুহানির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে গেলো। রুহানি গিয়ে ছিটকে পরল মাটিতে। গাড়িটা চলতে লাগল। শীষ ছুটে আসল রুহানির কাছে। তার ধরে বসল পাশে। ফ্রন্ট সিটে বসেছে আরিশ। গাড়ির সাইট মিরর দিয়ে দেখছে ডাক্তার রুহানির হাত ধরেছে। রাগে হাত মুঠ করে নিয়েছে। কপালে রগ শীরদাঁড়া হয়ে গেছে। আরিশ কে দেখে ভয়ে শুঁকনো ঢোক গিলছে, তাজ ও ওয়াসিফ। আমান ও প্রবীর আজ অন্য কাজে অফিসে রয়ে গেছে। লুকিং গ্লাসে ওয়াসিফের দিকে তাকাল তাজ। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ছে তাজ ও ওয়াসিফের। আরিশ কে অবাক করে দিয়ে ডাক্তার শীষ নর্মালি আলতো হাতে জড়িয়ে ধরল রুহানি কে। রুহানির কান্না থামছে না দেখেই সে রুহানি কে জড়িয়ে ধরেছে। আরিশ চোখ দু’টো বড় বড় করে তাকাল। কর্কশকণ্ঠে চেঁচিয়ে বলল, ‘ওই গাড়ি ব্রেক কর।’

চলবে… ইন শা আল্লাহ।

#বিষাক্ত_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩২
#লেখিকা #শারমিন_আক্তার_বর্ষা
তীক্ষ্ণ চোখে তাকাই আছে আরিশ গাড়ির সাইড মিরর দিয়ে। হিংসে হচ্ছে ভীষণ হিংসে হচ্ছে। তাজ দ্রুত পায়ে ব্রেক কষলো। বা’হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে নাকের ডগায় চুলকে গাড়ি থেকে নামে আরিশ। দ্রুতগামীর মতো ছুটে যায় রুহানির কাছে। একহাত ধরে টেনে তুলে ফেলল। পরণে জামা কাপড়ে ধুলো লেগে আছে। রুহানি কে আচমকা টান মারায় কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে ডাক্তার শীষ। শীষ ওঠে দাঁড়াল। রুহানির একহাত ধরে টানতে লাগল। একপাশে শীষ ও অন্য পাশে আরিশ। দু’জনে দু হাত ধরে টানছে। শীষ শক্ত হাতে রুহানির হাত ধরে বলল, ‘ওহ হ্যালো। হাত ছাড়ুন।’
আরিশ হুংকার দিয়ে বলল, ‘তুই ওর হাত ছাড়।’

কেউ কারো কথা কানে নিচ্ছে না। দু’জনে দু’জন কে হুম-কি দিচ্ছে। হাত না ছাড়লে এটা করবে সেটা করবে। বেঞ্চে বসেই উৎসুক ভাবে ওদের দুজনকে দেখছে ওরা। শীষ বলল,
‘আপনি কে এটা বলার আমি ওর হাত ছাড়বো কি ছাড়বো না?’
আরিশ গলা খাঁকারি দিলো, শান্ত গলায় বলল, ‘আমি ওর ভাই। মামাতো ভাই।’

আরিশের কথা কর্ণপাত হতে রুহানি সহ ওর বন্ধুদের মুখ হা হয়ে গেছে। শীষ রাগী গলায় বলল, ‘আপন ভাই তো নন। এখন যান এখান থেকে।’
দাত চিবিয়ে বলল, ‘আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।’
‘দেখে তো মনে হচ্ছে না। তাছাড়া রুহানি আমাকে বলেনি ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে বলে। যান তো আপনি এখান থেকে তাছাড়া আমি এখানে রুহানি কে প্রপোজ করতে আসছি। শুধু শুধু সময় নষ্ট হচ্ছে।’

আরিশ রেগে শাসিতকণ্ঠে বলল, ‘রুহানি শুধু আমার। ও-কে টাচ্ করার অধিকার আমার। ও আমার না হলে অন্য কারো হবে না। বিয়ে করলে আমাকেই করবে।’
‘হইছে হইছে যান এন্তে।’

রাগী চোখে রুহানি ও শীষের দিকে তাকিয়ে চলে যেতে নেয় আরিশ। আরিশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটে শীষ। রুহানির হাত ছাড়তে সে একটু ধম নেয়। শীষ বলে ওদিক টায় বলো। গিয়ে বসি। আরিশ কিছুটা পথ হেঁটে চলে যায়। আবার হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো পিছনে ঘুরে ওদের যেতে দেখে এক প্রকার দৌঁড়ে আসল। আরিশ চট করে রুহানির হাত ধরে টান মারে। রুহানি অবাক চোখে তাকায়। আরিশ দ্রুত হাত ধরে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। শীষ মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলে হেঁটে যাচ্ছে। পাশে যে মানুষ টা নেই। সেদিকে খেয়াল নাই। মুখ বড়সড় করে আরিশের কান্ড গিলছে রুহানির বন্ধুরা ও মিটমিট করে হাসছে। প্রবীর কে গাড়ির পেছন থেকে সামনে পাঠিয়ে দেয়। ও নিজে পেছনে রুহানি কে নিয়ে বসে। তাজকে সোজা বাড়ি যাওয়ার জন্য বলে। রাস্তা থেকে একজন কাজী কে তুলে নেয়। ইয়ানা বাড়ি নেই, ওর বাবা মা চলে যাবে বলে এয়ারপোর্টে গেছে।

বাড়ি তে ইয়াসির একা ছিল। কাজী সমেত হাজির হল। ইয়াসির কে এনিয়ে বিনিয়ে বিয়ে তো রাজি করায়। শেষ মূহুর্তে বেঁকে বসে রুহানি। সে তাকে বিয়ে করবে না কেননা সে তাকে কষ্ট দিয়েছে। রাগে ফুঁসছে আরিশ। ভয়ে রেজিস্ট্রি কাগজে সাইন করলো। কাজীর যেতে উপস্থিত হল ইয়ানা। সে আরিশের দিকে তেড়ে আসল। কিন্তু কিছু বলল না।

রুহানি দ্রুত তার রুমে চলে যায়। ইয়াসির আরিশের কাঁধে হাত রাখে আর বলে, দেখলে তোমার ইচ্ছে পূরণ হল। আরিশ ই হয়েছে তোমার মেয়ের জামাই। মৃদু হেসে চলে গেলো ইয়াসির।
ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে, তুমি রুহানির থেকে দূরে থাকবে। রুহানি তোমার কাছে ফিরতে চাইলে ও-কে দূরে সরিয়ে দিবা। কিন্তু তুমি তোমার কথা রাখোনি।’

আরিশ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
‘মামণি। ওইদিনের রাতের ঘটনা আমারও মনে আছে। আমি কত বার তোমার কাছে মিনতি করেছি। মামুর কাছে ফিরে আসো। রুহানি কে আমায় দান করো। কিন্তু তুমি কি শর্ত দিয়েছিলে, তোমার জীবনের ভুল তুমি দ্বিতীয় বার করতে চাও না। অনেক বুঝানোর পর শর্ত দিয়েছিলে, তুমি ফিরবে না। তবে তোমার মেয়ে তার বাবার পরিচয় ভালোবাসা পাবে। যদি আমি তাকে প্রত্যাখান করি ও নিজে তোমাদের থেকে দূরে সরে যাই। বিশ্বাস করো মামণি আমিও সেটাই করছিলাম। কিন্তু কি জানো? রুহানির ধারেকাছেও আমি কোনো ছেলেকে সহ্য করতে পারিনা। তোমাকে দেওয়া শর্তের জন্য আমি রুহানি কে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আর পারবো না। শুনেছি ছোট বেলায় তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসতে তবে এখন কি হয়েছে মামণি৷ কেনো শর্ত দিয়ে আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো?’

আরিশের কথার প্রতিত্ত্যর করল না ইয়ানা। মাথা নিচু করে চলে যায়। মনে মনে বলল, ‘তোকে আপন করতে না পারার কারণ হচ্ছে তোর বাবা। তখন তো আমি জানতাম না তোর বাবা কে। জেনেছি তো কানাডা খালার থেকে। তোর বাবার জন্য আমার বড় বোন।’

চোখের কোণে জল মুছে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে গেলো ইয়ানা। সন্ধ্যার পর পর বাড়ি ফিরে আসলো ওর বন্ধুরা। আগামীকাল ভোরের ফ্লাইটে সবাই কানাডা ব্যাক করবে। রুহানির বিয়ের খবর শুনে সবাই চমকে ওঠে। এবং খুশি হয়। শুধু নারাজ নাজিন। নাজিন বলল ‘ও’ কাল যাবে না। ওর শরীর খারাপ এক সপ্তাহ পর যাবে। কেউ আপত্তি করল না। পরে নাজিনের সাথে রুহানিও চলে যাবে। রাতে এই নিয়ে আর কেউ কোনো কথা বলেনি।
আকাশে হাতে গোনা কয়েকটি তারা ও একটা বড় চাঁদ। চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভারী নিঃশ্বাস ফেলল রুহানি। পেছন থেকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরল আরিশ। আরিশের স্পর্শে কেঁপে উঠল রুহানি।
নির্ঘুম রাত কাটছে নাজিনের সে কোনো ভাবে বিয়ে টা মানতে পারছে না। পুলিশের সাহায্য চেয়েছে। মোবাইল বের করার জন্য জিটি করেছে।
_____________
তিন ধরে বিয়ে হয়েছে। ভালোবাসা ও আনন্দে দিন কাটছে রুহানির। আল্লাহ জেনো সব খুশি তার আঁচলে ঢেলে দিয়েছে। রুহানির বিয়ের খবর শোনে তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি শীষ। চার দিন পর বিয়ে বৈকি বড় করে আয়োজন করবেন ইয়াসির। আরিশ অফিসে গেছে। কিছুক্ষণ পর ফিরবে কল দিয়ে বলেছে। আজ ইচ্ছে করে সাজছে রুহানি। শাড়ি পরেছে কপালে টিপ, লিপস্টিক।

সন্ধ্যা ছয়টা দ্রুত ছুটে রুহানির রুমে ঢুকে নাজিন। হাঁপাচ্ছে মেয়েটা কপাল ভেজা। ঘামে জামা ভিজে পিঠের সাথে চিপকে গেছে। মনে হচ্ছে কেউ ও-কে তারা করেছিল। কি হয়েছে জানতে চাইলো রুহানি।

নাজিন দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল,
‘আমার হারানো ফোনটা পেয়েছি। একজন মধ্য বয়স্ক লোক ফোন টা বিক্রি করার জন্য নিয়ে ঘুরছিল। তার থেকে আমি আবারও টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে আসছি।’

‘ওহ এই ব্যাপার। সাধারণ একটা ফোনের জন্য এত প্যারা নিতে গেলি কেন? নতুন ফোন তো কিনেছিস। যাজ্ঞে যেভাবে হাঁপাচ্ছিস আমি ভাবলাম কি না কি আমান ভাইয়া তোকে দৌঁড়ানি দিয়েছে।’ বলে হাসতে লাগল রুহানি। রাগে দাঁত চেপে ধরে নাজিন। রুহানির হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো। তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, ‘হাসপাতালে তো আমার কথা বিশ্বাস করিসনি। নে এখন শোন।’

রুহানির ফোনের সব গুলো সফটওয়্যার লক করা। তাই ভেতরের ছবি ভিডিও রেকর্ড কোনো কিছু কেউ ডিলিট করতে পারেনি। প্রথমে ফোন পরেছিলো একটা নেশাখোর ফট্টোলের কাছে তারপর সে একজন বোকাসোকা মানুষের কাছে মাত্র পাঁচশ টাকায় বিক্রি করে মদ খেতে চলে যায়। লোকটাও ফোনের কিছু বুঝতে পারছিল না। ফোন নিয়েও বিপদে পরেছিল বলে ঘুরছিল যদি কেউ কিনে নেয়। নাজিন পুলিশ স্টেশন থেকে ফেরার পথে রাস্তায় লোকটা কে দেখে। রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফোনটা বিক্রি করার চেষ্টা করছে। রিক্সা থেকে নেমে ফোনটা হাতিয়ে দেখে। ওরই ফোন ওয়ালপেপারে ওরই পিক দেওয়া। লোকটার থেকে নিজেরই ফোন কিনে রিক্সায় বসে সব চেক দেয়। রেকর্ডিং টা এখনও সেভ আছে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

নাজিনের কাছ থেকে ভয়েস রেকর্ডিং শুনে স্তব্ধ হয়ে যায় রুহানি। চোখের কার্নিশ বেয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পরছে। আরিশের আড়ালে ওর ফোনে লোকেশন অন করে কানেক্ট করে নিয়েছিল। ওর জানতে হবে? ওর মনে যত প্রশ্ন ঘুরছে সব কিছুর উত্তর আরিশ কে দিতে হবে। নাজিন কে রুমে রেখে ফোন হাতে বেরিয়ে গেলো রুহানি। কান্না করছে কেনো ঠকালো কেন যেদিন নাজিনের কথা বিশ্বাস করল না? আরিশের ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে একটা জঙ্গলের মাঝামাঝি এসে গাড়ি থামালো রুহানি। চারিদিকে শুধু অন্ধকার বড় বড় গাছ সাথে অদ্ভুত পশুপাখির ডাক। ভয়ে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। রুহানি বুঝতে পারছে না এই সন্ধ্যা বেলা এই জঙ্গলে কেনো আরিশের ফোনের লোকেশন দেখাচ্ছে? এখানে কেন আসছে আরিশ? ফোনের টর্চলাইট অন করে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো।

মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে,
‘তাহলে কি আরিশ কাউকে খু/ন করবে বলে এখানে আসছে?’

চলবে… ইন শা আল্লাহ।