বিষাদনীড়ে মায়াতরী পর্ব-৪৮

0
273

বিষাদনীড়ে মায়াতরী [৪৮]
প্রভা আফরিন
_
খিলানচর

“এমনটা কবে থেকে?”
পালি ভেজা গলায় খুদিবুকে জিজ্ঞেস করল। খুদিবু আক্ষেপ করে বললেন,
“তোর মায় যে বছর ম’র’লো, হেই বছর আর চর থাইকা কুনুখানে যায় নাই। মাথা-মুথা ঠিকই আছিলো। একলা থাকতো, একলাই খাইতো। পরের বছর বন্যা হইলো, চর ডুবলো, লগে করবীর কব্বরখানাও ডুবলো। তহন পানির ভিত্রে নাইম্যা খালি চিল্লাইতো। করবী করবী কইয়া কি জানি কইতো কেউ বুঝতাম না। কি যে য’ন্ত্র’ণা করছে হেই বৎসর! পরেই বুঝলাম মাথায় গোলমাল দেহা দিছে। পাগলাডায় বউরে অনেক মোহাব্বত করতো। শোক সামলাইতে পারে নাই। তোর হামিদ চাচার ঘরে একবেলা খাইতো আর কব্বরের চাইর ধারে ঘুরঘুর করতো। তোর চাচি সারাদিন কত্ত গা’লম’ন্দ করছে! কিচ্ছু গায়ে মাখে নাই। বোবার মতো থাকছে। চরের পোলাপাইন পাগল পাগল কইয়া কম জ্বালায় নাই। একদিন কই জানি গেল গা! বছরখানিক আর খোঁজ পাওন যায় নাই। খোঁজ নেওনের মানুষও নাই। পরে একদিন নদীর কাছারের ফজল ওরে পাইয়া আনছিলো। চুল-দাড়ি বড়ো বড়ো হইয়া, পিন্দনের কাপড় ছিড়া এক্কেরে পাগলের বেশে পথে পথে ঘুরতাছিলো৷ করবী নাম যদি না কইতো ফজলও হেরে চিনতো না। হেরপরে অনেকদিন এই চরেই আছিলো। মাসখানেক আগে আবারো উধাও হইয়া গেল। এত্ত বছর পরে পাগলায় পথ চিন্যা তোর ধারে কেমনে গেল? তোরে চিনতে পারল?”

পালির কোটরাগত অশ্রু চিবুক গড়িয়ে পড়ছে। আব্বা, তার আব্বা এতগুলো বছর এমন জীবনযাপন করেছে? অথচ সে ভেবেছে দায়িত্ব এড়াতে আব্বা তার সাথে যোগাযোগ করে না! পালির নিজের ভাবনার ওপর অভিসম্পাত করে। খুদিবুর প্রশ্নে বলল,
“আব্বা আমাকে প্রথম দেখাতেই চিনেছে। আব্বার অবস্থা দেখে প্রথমে একটু চমকে গিয়েছিলাম। পায়ে জুতোটাও ছিল না৷ তবে এমন কোনো অসংলগ্ন আচরণ করেনি যাতে সন্দেহ হয়। মামার সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলেছে আমাকে নিয়ে আসতে।”
খুদিবুর চোখ ছলছল করে। পালির গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,
“আহারে সোনা! পাগল হোক আর যাই হোক, বাপ তো। মাইয়ার টানে ঠিকই ছুইট্যা গেছে। তোর উছিলায় হয়তো আবার সুস্থ হইতে পারে।”

মহসিন আবারো গা’লম’ন্দ শুরু করেছে। পালি গলার স্বর শুনেই ছুটে ঘর থেকে বের হলো। মহসিন বাঁশের বেড়াখানা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন আর চিলচিৎকার করে বলছেন,
“আবার বেড়াখানা ভাঙছে? বেহানবেলা মাত্র সব ঠিক কইরা দিয়া গেলাম। বেলা হইতে না হইতেই দিছে ভাইঙ্গা!”
পালি দু-হাতে মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। ঝাপসা দৃষ্টিতে আব্বার আচরণ দেখতে থাকে। মহসিন তাকে দেখে গলার স্বর নিচু করলেন। অভিযোগের কণ্ঠে বললেন,
“দেখ না মা, বেড়াখানা বারবার ভাইঙ্গা দিতাছে। মানুষটা কত বছর পর ইট্টু শান্তিতে আছে, তা সইহ্য হইতাছে না। ইচ্ছা কইরা ভাইঙ্গা দিতাছে আমি জানি।”

পালি চোখ মুছে এগিয়ে এলো। আব্বার বাহু আঁকড়ে ধরে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“আপনি আর আমি মিলে ঠিক করে নেব। আর কেউ ভাঙবে না।”
মহসিন মাথা নাড়ল। তবে সে কথা তার মনে রইলো না। বেলা গড়াতে আবারও চিৎকার শুরু করল ভাঙা বেড়া নিয়ে। পালি পড়ল অথৈ জলে। মাথা গোজার ঘরটা আগে সাড়াতে হবে। হামিদ চাচার ঘরে থাকতে বা খেতে পালির মন সায় দিচ্ছে না। রোকসানা চাচি তাকে খুব একটা ভালো করে গ্রহণ করতে পারেনি সে বুঝেছে। পালি আসার সময় যে টাকা নিয়ে এসেছে তা ঘরের মেরামতের পেছনে দিয়ে দিলে খাবে কী? রান্নার সরঞ্জামাদিও কিনতে হবে। ভাগ্যিস মনে করে নানি টাকাগুলো দিয়েছিলেন। আব্বা তো রোজগার করার অবস্থাতেই নেই। উনার কাছে টাকা থাকবে এ আশা করা বোকামি। পালির একটা চিন্তা দূর করে দিলেন খুদিবু। তিনি নিজের ঘরেই পালিকে রাধতে বললেন। থাকতেও বললেন। পালি থাকতে সায় দিলো না। হামিদ চাচাকে দরকারি জিনিসপত্র আনতে টালিপাড়ার বাজারে পাঠিয়ে সে বিকেল নাগাদ ইমনকে সঙ্গে নিয়ে মায়ের কবরের বেড়াখানা বেধে ফেলল। মহসিনের রাগারাগি থেমে গেল। মনে হলো তিনি লজ্জা পেলেন। পরদিন তিনি নিজে হাতেই মেয়ের জন্য ঘরের বেড়া বেধে দিলেন। ভাঙা দরজার কপাটখানা কোনোরকম মেরামত করে কাজ চালানোর মতো করলেন। চাল মেরামত করা গেল না। তাতে টাকা লাগবে। মহসিনের হাতে মেয়েকে খাওয়ানোর জন্য বাজার করার টাকা পর্যন্ত নেই। পালি যখন ঘুরে ঘুরে ঘরের অবস্থা দেখছিলো মহসিন বিব্রত মুখে বললেন,
“তোরে এইহানে আনা ভুল হইছে রে মা। মামার বাড়িত ভালো থাকতি। হুদা হুদা কষ্ট দিলাম।”

পালি তার আব্বাকে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এইযে এখন তিনি বুঝদার মানুষ। মেয়ের ভালোমন্দ সবই বুঝতে পারছেন। খানিক বাদেই আবার তা ভুলে যাবেন। করবী কেন্দ্রিক বিষয়েই মহসিন একটু এলোমেলো হয়ে যায়। পালির মায়া হয়। সে নিজে থেকে কি পারত না আব্বার খোঁজ নিতে? নিজের কাছে নিয়ে রাখতে? অবশ্য সে নিজেই অন্যের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। পালি খুব করে তাগিদ অনুভব করে, তাকে কিছু করতে হবে। আব্বাকে নিজের কাছে রাখতে হবে।

পালি ঘরের ভেতর হতে সমস্ত পুরোনো জিনিসপত্র বের করে ঝেড়ে বেছে দেখল। তাদের ব্যবহার্য প্রায় কিছুই নেই। এত বছর পড়ে থাকা ঘরের জিনিসপত্র অক্ষত থাকবে তা আশা করাও বোকামি। ঘরখানা ঝেড়ে মুছে বসবাসযোগ্য করতে বাপ-মেয়ের দুদিন পেরোলো। পালি নিজের হাতে খুদিবুসহ তিনজনের রান্না করে দুবেলা। মহসিন তৃপ্তি করে খায়। যেন কতদিন তিনি ভালো করে খান না। সেই দৃশ্য দেখেও পালির কান্না পায়৷ সে কি ছিচকাদুনে হয়ে গেল নাকি?
ইমন পালির আশেপাশে ঘুরঘুর করে। ছেলেটাকে পালির বেশ পছন্দ। প্রতিবেলা চরের মহিলা ও বাচ্চারা তার সঙ্গে গল্প করতে আসে। নতুন কেউ এলে এমনটাই ঘটে। অনধিকারচর্চা করে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতেও ছাড়ে না। মামা বাড়িতে অবস্থান কেমন? সে বিয়ে কেন করছে না এ ধরনের প্রশ্ন বেশি শুনতে হয়। পালি অবশ্য মুচকি হাসি দিয়েই পাশ কাটায়। কিন্তু মনের কোথাও যেন শূন্যটা টের পায়। কার জন্য? নিজেই নিজেকে প্রশ্নটা করে সে অপ্রতিভ হয়ে ওঠে।

এবছর প্রলয়কন্যা আষাঢ়ের আগমণ খুব একটা আড়ম্বরপূর্ণ হয়নি। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিলো অনাবৃষ্টিতে খরা লাগবে। দুদিন বাদের স্বয়ং আষাঢ়-ই সেই ভাবনায় আকাশ ভেঙে জল ঢালল। বিরামহীন বৃষ্টিতে মেতে উঠল প্রকৃতি। মাটির গা ধুয়ে সেই ঘোলা বৃষ্টি মিশতে লাগল নদীতে। পালির ভোগান্তি বাড়ল। ভাঙা চাল থেকে পানি পড়ছে। এখানে ওখানে হাড়ি-পাতিল, বাটি, মগ দিয়ে পানি ধরতে হচ্ছে। চৌকিতেও পানি পড়ে বিছানা ভিজে গেছে। রাতটা সে বসে বসে, আধোঘুমে, আধো জাগরণে কাটিয়ে দিলো। পরদিন সকালেই আব্বাকে বলে চৌকির অবস্থান পরিবর্তন করালো। বেলা হলেও সূর্য তার উজ্জ্বল মুখখানি কৃষ্ণ মেঘপল্লব দিয়ে ঢেকে রেখেছে। আরেকখন্ড কৃষ্ণমেঘ তখন খুদিবুর উনুনে রান্না চাপিয়েছে। আদা পিষতে পিষতে দেখতে পেল মহসিন কাদার মাঝে হাটু গেড়ে বসে করবীর কবরের ওপর কচুপাতা বিছিয়ে দিচ্ছে। পালি বেরিয়ে এলো।
“কী করছেন আব্বা?”
“তোর মায়ের ঠান্ডা লাগব। ঢাইক্কা দিতাছি।”

পালির বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। কচুপাতাগুলো বড়া ভাজতে এনে দিয়েছিলেন খুদিবু। সে নিরবে দাঁড়িয়ে দেখে এক পাগল প্রেমিকের ব্যর্থ নিবেদন। অদৃশ্য করবীর ঠান্ডায় যেন মহসিনের হৃদয়ের বৃষ্টিভেজা মাটি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। পালির নিগম সেনের কথা মনে পড়ল। কিছুদিন আগে লোকটার চিরতরুণ প্রেম তার চোখে অশ্রু এনে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল এর চেয়ে নির্মল প্রেম আর হয় না। আজ তার সে ভাবনা শিখরে পৌঁছে দিলো এই অবুজ প্রেমিকটি। যার উত্তপ্ত প্রেম পালির হৃদয়ে র’ক্তক্ষ’রণ ঘটায়। ভালোবাসার কত ধরন! কত বিচিত্রতা!

এক সপ্তাহ গড়িয়েছে পালির খিলানচরে আগমনের। সে স্বাধীনভাবে নিজের ঘরের প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেয়। আপন ইচ্ছেয় কাজ করে। কেউ আদেশ করে না, নিষেধ করে না। ভুল করলে কারো ভয়ে তটস্থ হতে হয় না। এই তো নিজের বাড়ির সুখ, শান্তি। অল্প কয়েকদিনেই সে যেন সংসারের গিন্নী হয়ে উঠেছে। সবকিছুতে তার কেমন মায়া পড়ে গেছে। মহসিন এখন স্বাভাবিক আছেন। পালির সমস্ত ভালোমন্দ খেয়াল রাখেন। তবে মেয়ের টাকা নিতে উনার ভারী লজ্জা। কাজের সন্ধানে বের হতে চান। পালি আটকে দেয়। আব্বাকে কাছে পেলেই সে খুশি। মহসিন সংকোচ করেন। মেয়ের মুরুব্বিয়ানা উনাকে মুগ্ধ করে। অন্ধ স্নেহে বুদ হয়ে থাকেন। যেন পালি হচ্ছে মা আর তিনি অবুজ শিশু।

আবহাওয়ার অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। গতকাল রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানি বাড়ছে। সকলের মধ্যে আবারো আসন্ন বন্যার আশঙ্কা। হামিদ চাচা বলে গেলেন টালিপাড়ার দিকে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আ’গ্রা’সী নদী রা’ক্ষ’সে’র মতো জমি গি’লে খাচ্ছে। এবারের বন্যা সব গ্রা’স করতে আসছে। পালির বুকটা ধ্বক করে ওঠে। তার স্মৃতিতে ঠাঁই পাওয়া শেষ বন্যাটি যে তার জীবনটাই উলোটপালোট করে দিয়েছিল। আজও তার ঘা দ’গদ’গে। আবারো এমন একটা বন্যা সে দেখতে চায় না। পালি আব্বার কাছে অনুনয় করে,
“আব্বা, চলুন এখান থেকে চলে যাই। আপনাকে শালুগঞ্জ থাকতে হবে না। আমরা দূরে কোথাও চলে যাব। আপনি আমার সঙ্গে থাকবেন।”
মহসিন কাঁঠাল গাছতলায় তর্জনী উঁচিয়ে বললেন,
“আমার কাছে তার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা আছিলো আমার সান্নিধ্য পাওয়া। দুইবেলা ভাত জোটানোর লইগ্যা তার সেই ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারি নাই। হেই রাগে করবী আমার কাছে আহে না। আমি আর দূরে যাওনের ভুল করমু না। তারে ছাইড়া কোত্থাও যামু না। কথা দিছি তো।”
______________

শালুগঞ্জ

পালির গ্রাম ছাড়ার আজ পনেরো দিন। এই পনেরো দিনে রোজ দু-বেলা ঘাটে গিয়েছে হিমাদ। যতদূর চোখ যায় অপলক তাকিয়ে থেকেছে। এরপর আবার ফিরে এসেছে। আজও সকালে সে ঘাটে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর তিক্ত মনে রাইসমিলে না গিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। বাড়িতেও শান্তি নেই। জুলেখা তার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। হিমাদ সবকিছুর ওপর একপ্রকার বিরক্ত।

এদিকে নদীর অবস্থা ভালো না। শালুগঞ্জেও বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ফসলি জমি ডুবে গেছে। চারিদিকে থৈথৈ করছে জল আর জল। শালুগঞ্জে বন্যা! জীবনে যা ঘটেনি এবার তাই ঘটছে। মেহেরুন বানু উৎকণ্ঠায় প্রতিটা দিন পার করছেন। মেয়েটার কোনো খোঁজ নেই। খিলানচর কী এখনো শুষ্ক আছে? মেহেরুন বানুর বুক কেঁপে ওঠে। অনেক বছর আগে উনার জেদ ও ভুলে করবীটা খিলানচরে হারিয়ে গেল। তিনি অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েও মেয়ের দেখা পেলেন না। হিমাদের কাছ থেকে পালিকে দূরে সরাতে গিয়ে আবারও কি তিনি একই ভুল করলেন? মেহেরুন বানু ডুকরে কেঁদে ওঠেন। হিমাদের কাছে আকুতি করলেন পালিকে এনে দিতে।

হিমাদ ততক্ষণে মনে মনে তৈরি খিলানচর যাত্রা করতে। সে নিজের ঘরে তৈরি হয়ে নিচ্ছিলো। জুলেখা এসে বললেন,
“কাল শুক্কুরবার। টিয়ার বাড়িত প্রস্তাব নিয়া যামু। তুইও যাবি।”
হিমাদ বিরক্ত হলো। বলল,
“আমি এখন এসব ঝামেলায় জড়াতে চাই না।”
“বিয়া না করলি, পানচিনি কইরা রাখি।”
হিমাদ সে কথার উত্তর দিলো না। জুলেখা ফুঁসে উঠলেন।
“তোর সমস্যা কি হিমাদ? বিয়া করবি না নাকি টিয়ারে বিয়া করবি না? পছন্দের পাত্রী আছে?”
হিমাদ এবার মুখ তুলে চাইলো। ক্ষণকাল কি ভেবে হঠাৎ বলে উঠল,
“আছে।”
“কেডা?” জুলেখা দম বন্ধ করে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
“পরে জানা যাবে। আপাতত আমি খিলানচর যাব।”
“তুই কি পালির কথা কইতাছোস?”
“যদি তাই হয়?”
“হিমাদ!” জুলেখা গর্জে উঠলেন। গলার রগ খি’চি’য়ে বললেন,
“আমার ছেড়ার বউ হইব ওই কাঠ কয়লার কালি? আমার জান থাকতে তা হইব না।”
হিমাদ উত্তর দিলো না। তবে তার সদা গম্ভীর মুখে আরেকটু গাম্ভীর্য ঘিরে ধরল। জুলেখা ফোঁসফোঁস করতে করতে বলতে থাকেন,
“আমার খাইয়া, আমার বাড়িত বড়ো হইয়া আমারই ছেড়ার মাথা চা’বা’ইয়া খাইছে ওই ছেড়ি! সারাজীবন এই বাড়িত গাইড়া বইতে আমার ছেড়ার উপরে জাদু করছে‌!”
“বাজে কথা বোলো না মা। আমার দেরি হচ্ছে।”
জুলেখা ঘর ছেড়ে বের হওয়ার আগে দাঁতে দাঁত চেপে অ’ভি’সম্পাত করে বলে গেলেন
“ম’রু’ক, বন্যার পানিত ডুইবা ম’রু’ক হেই ছেড়ি।”

সকাল থেকে কয়েকদফা বৃষ্টি হয়ে প্রকৃতি এখন ভেজা। জুলেখা ভেজা উঠান মাড়িয়ে পুকুরপাড়ে যেতেই আচমকা পা পিছলালেন। বিকট চিৎকারে সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে তৎক্ষণাৎ ডান পা ভেঙে ফেললেন।

চলবে…