#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৩
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি(লেখিকা)
দরজা খুলে সামনের মানুষ কে দেখে চমকে ওঠে রাহি। বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে যায়। নিজের কল্পনা ভেবে হাতে একটা চিমটি কেটে দেখে,ব্যথায় আউচ শব্দ করে ওঠে। হাত ডলতে ডলতে ফের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সাফওয়ান চৌধুরী জারিরের পানে তাকায়। জারিরের চাহুনি গম্ভীর, জারির কিছু না বলে রাহি কে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকে পরে। রাহি সরে দাঁড়িয়ে এখনো সটান হয়ে জারিরের দিকে তাকিয়ে আছে। জারির সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।
রাহি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার সাথে কি হচ্ছে ঠিক করে বোঝার চেষ্টা করে । রাহি’র মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, কাল তাকে বলা হলো জারির বিদেশ চলে গেছে, তাহলে আজ কিভাবে ফিরে আসা সম্ভব! সবকিছু অবিশ্বাস্য লাগছে! রাহি’র ভাবনার মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা খুলার শব্দ পায় রাহি। রাহি ওয়াশরুমের দিকেই তাকিয়ে ছিল, জারির দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই রাহি’র সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। জারির দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। রাহি ও কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢোকে ফ্রেশ হতে।
জারির গা’য়ে শার্ট জড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। গা’য়ে কম্বল টেনে দিয়ে চোখের উপর ডান হাত দিয়ে চোখ বুজে থাকে। কিছুক্ষণ পর রাহি ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এক নজর বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে জারির শুয়ে আছে। রাহির’ রুমে থাকতে অস্বস্তি বোধ হয়। রাহি দ্রুত পা’য়ে রুম ত্যাগ করে। জারির বুঝতে পারে রাহি রুম থেকে চলে গেছে।
___________
ড্রয়িংরুমে বসে চা খাচ্ছেন আসাদ চৌধুরী। তার পাশেই বসে আছেন তার বাবা আইয়ুব চৌধুরী, তিনি সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন। রাহি ড্রয়িংরুমে এসে আসাদ চৌধুরী র পাশে বসে, পাশে কাউকে বসতে দেখে তাকিয়ে রাহি কে দেখে মুচকি হেসে বলেন,
” গুড মর্নিং, রাহি মামনি। রাহি মৃদু হেসে জবাব দেয়,
” শুভ সকাল আঙ্কেল।
রাহি কিছু টা সংকোচ বোধ করে বলল, আঙ্কেল একটা কথা বলব?
” হ্যাঁ বলো মামনি।
” আঙ্কেল আপনার ছেলে মানে ওনি নাকি বিদেশ চলে গেছেন, তাহলে এখানে কিভাবে কি? রাহি’র প্রশ্নে তিনি চুপ করে থাকেন। পাশ থেকে আইয়ুব চৌধুরী ও রাহি’র দিকে তাকান। আইয়ুব চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
” আমরাও এ ব্যাপারে কিছু জানি না রাহি। কিছুক্ষণ ছবুর করো সব জানতে পারবে। রাহি কিছু না বলে বাড়ির ছাদে চলে যায়। ছাদে দাড়িয়ে দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়। রাহি ভাবে একদিক থেকে ভালোই হয়েছে, জারির যেহেতু বাসায় ফিরে এসেছে সেহেতু তার বাবা মা এ ব্যাপারে কিছু জানবে না। এমন হাজারো কথা ভাবতে থাকে রাহি। রাহি’র ভাবনার ছেদ পড়ে একটা মেয়ে’র কথায়, মেয়েটা বলল,
” ভাবিমণি, আপনাকে নিচে খেতে ডাকছে। রাহি মাথা নেড়ে বলল,
” তুমি যাও, আমি আসছি।
মেয়েটা চলে যায়। মেয়েটা এ বাড়ির মেয়ে রিপ্তি। জারিরের চাচাতো বোন। বয়স আনুমানিক ১৬ কি ১৭ হবে। রাহি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলল, এ কেমন অনুভূতি আল্লাহ, আমার আর ভাল্লাগছে না। বড্ড কষ্ট হচ্ছে, সবকিছু থেকে মুক্তি পেতে চায়। অতঃপর ছাদ থেকে নেমে ড্রয়িংরুমে চলে আসে।
সকাল নয়টা। সবাই খাবার টেবিলে খেতে বসেছে। কম বেশি সকলেই উপস্থিত আছে, নেই শুধু জারির। রাহি মাথা নিচু করে ছোটো ছোটো করে এক লোকমা ভাত মুখে দেয়। খেতে না চাইলেও সবার সামনে তাকে খেতে হচ্ছে। কোনোরকমে খাওয়া শেষ করে রুমে আসে,এসে দেখে জারির একই ভাবে শুয়ে আছে। রাহি নিশ্চুপ পা ফেলে নিজের ফোন টা খাটের উপর থেকে ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে ফোন টা নিজের হাতে নেয়। তারপর সটান হয়ে দাঁড়ানোর আগেই আচমকা জারির চোখ মেলে তাকায়। অতঃপর দু’জনের দ্বিতীয় বারের মতো চোখাচোখি হয়ে যায়। রাহি দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর দ্রুততার সহিত রুম ত্যাগ করার জন্য পা বাড়ায়, তবে বেশি দুর যেতে পারে না, জারিরের কথায় থেমে যেতে হয় রাহি কে। পিছন থেকে জারির বলল,
” তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তোমার কি সময় হবে।
রাহি থমকানো দৃষ্টি নিয়ে জারিরের দিকে তাকায়, জারিরের দৃষ্টি ছিল শান্ত শিতল। রাহি বলল,
” ঠিক আছে, আমি ছাদে অপেক্ষা করছি আপনি আসুন বলে রুম ত্যাগ করে।
রাহি চলে যেতেই তার কিছু সময় পর রুমে প্রবেশ করে জারিরের মা হালিমা বেগম। তার হাতে খাবারের প্লেট। ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসেছেন। হালিমা বেগম রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,
” জারির বাবা হাত মুখ ধুয়ে আয় তোর জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।
জারির একই ভাবে বসে থেকে মায়ের কথায় জবাব দেয়,
” আম্মু,,,
” হ্যাঁ বাবু বল বসতে বসতে।
জারির আচমকা হালিমা বেগম কে জড়িয়ে ধরেন। হালিমা বেগম হাত থেকে খাবার প্লেট টেবিলে রেখে জারিরের পিঠে হাত রেখে বলল,
” কি হয়েছে আমার বাবুর। মা কে সব খুলে বল। ( হালিমা বেগম জারির কে সবসময় বাবু বলেই ডাকেন)
” আম্মু তুমি আমার উপরে রেগে নেয় তো?
” এভাবে বলছিস কেন বাবু, কিন্তু তুই কাজটা মোটেও ঠিক করিস নি বাবু। বিয়ের প্রথম রাতেই কেউ এভাবে বাসা ছেড়ে চলে যায়। রাহি মামনি খুব কষ্ট পেয়েছে জানিস।
” রাহি কে আম্মু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে জারির। হালিমা বেগম নিজের থেকে ছেলেকে সরিয়ে অবাক হয়ে বলল,
” রাহি কে চিনিস না।
” না আম্মু।
হালিমা বেগম হাসতে হাসতে বললেন, আরে পাগল রাহি তোর বিয়ে করা বউ। ‘বউ’ শব্দ টা শুনে নড়েচড়ে বসে জারির। নিজের ভিতরে কেমন একটা অনুভূতি হয়। যেটার সাথে আগে কখনো পরিচিত না জারির। হালিমা বেগম ফের বললেন,
” রাহি মামনির পুরো নাম রাফিয়া রাহি। তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটা বলে ডাকিস। এখন আর কোনো কথা নয় চুপচাপ খেয়ে নে। জারিরও আর কথা বাড়ায় না, হালিমা বেগম নিজে খাইয়ে দেয় ছেলেকে। জারিরও তৃপ্তি সহকারে খায়। খাওয়া শেষ হলে হালিমা বেগম এঁটো প্লেট নিয়ে চলে গেলে জারির বিছানা থেকে উঠে ছাঁদে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ