#বিষাদময়_সুর
#পর্ব_৪
#ছনিয়া_তাবাচ্ছুম_অনি (লেখিকা)
দুপুর বারোটা। দেখে মনে হচ্ছে সকাল সাতটা বাজে। কারণ আকাশ আজ মেঘলা, আকাশে মেঘ জমেছে। পরিবেশ টা শীতল, সাথে ঠান্ডা বাতাস। ছাদের খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে রাহি আর জারির। দুজনেই নিশ্চুপ! রাহি শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুরের বিল্ডিংয়ের দিকে। জারিরও সেম, সেও সামনে তাকিয়ে আছে। রাহি’র গা’য়ে শাল জড়ানো। রাহি নড়েচড়ে দাঁড়ায়। এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে রাহি’র অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। জারির পকেটে হাত গুঁজে হালকা কেশে বলল,
” রাফিয়া,,,
রাহি চকিত দৃষ্টিতে জারিরের দিকে তাকায়। কারণ রাহি কে কেউ কখনো রাফিয়া নামে ডাকে নি। সবাই রাহি নামেই চেনে। আজ হুট করে জারিরের মুখে নিজের নাম শুনে চমকে ওঠে রাহি। রাহি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
” আপনি আমার নাম জানেন ?
রাহি’র চমকানো মুখ দেখে অস্বস্তিতে পরে যায় জারির। ফের আবার রাহি’র প্রশ্ন শুনে নিজেও অবাক হয়। জারির রাহি’র কথায় জবাব দেয়,
” হ্যাঁ, কেন কি হয়েছে?
” তেমন কিছু না। আমাকে ওই নামে কেউ ডাকে না তো এজন্য আরকি। ইট’স নরমাল।
” ওহ। ছোট্ট জবাব জারিরের।
আবারও দুজনের মাঝে নিরবতা কাটে কিছু সময়।। জারির কে চুপ দেখে রাহি নিজেই বলল,
” আপনি কি বলার জন্য এসেছেন, দ্রুত বললে ভালো হয়।
” আসলে সেদিনের বিষয়টার জন্য আই এম সরি। তখন মাথাটা ঠিক ছিল না, তোমাকে বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝতে। তুমি তো আর অবুঝ নও।
” আপনি কি বলবেন সেটা বলুন। এত ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার দরকার নেই। আপনি কি বলবেন, আপনার ডিভোর্স চাই । ঠিক আছে আপনি ডিভোর্স লেটার পেয়ে যাবেন। বিয়ের তিন মাস না হলে তো আর ডিভোর্স দেওয়া যায় না, সেজন্য বলছি মাত্র তিনটা মাস অপেক্ষা করুন নিজেই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দেবো।
রাহি’র কথা ‘য় আশ্চর্য হয়ে যায় জারির। জারির ভাবেনি রাহি তাকে এভাবে বলবে? রাহি কে দেখে বোঝা যায় না রাহি এভাবে মুখের উপর কথা বলতে পারে।
রাহি নিতান্তই শান্ত মেয়ে। কখনো কারোর সাথে উঁচু গলায় কথা বলে না, যদি না তাকে রাগানো হয় কিংবা কটু কথা বলা হয়। রাহি ছোট বেলা থেকেই বিদেশে থেকেছে বন্ধু বান্ধব নিয়ে সময় কাটিয়েছে। বাড়তি ঝামেলা থেকে দুরে থেকেছে।
জারির নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। জারিরের মুখে কোনো কথা নেই। রাহি আবারও বলল,
” আর কিছু লাগবে মিস্টার সাফওয়ান চৌধুরী জারির। জারির চমকে তাকায় রাহি’র পানে। রাহি তাচ্ছিল্যের হেসে বলল,
” আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন?
” হ্যাঁ বলো।
” এমনটা কেন করলেন জারির? কেন আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন? কেন আমার সুখময় জীবনে #বিষাদময়_সুর এনে দিলেন? যদি বিয়ে করার ইচ্ছেই না থাকে তাহলে সরাসরি কেন না করে দিলেন না? কেন আমার সাজানো গুছানো জীবনটা এলোমেলো করে দিলেন? আপনি যদি অন্য মেয়েকে ভাললোবেসে থাকেন, তাহলে কেন আপনার ফ্যামিলি কে বললেন না? কেন কেন? আমি মানলাম আপনি না-হয় আপনি ফ্যামিলিকে বলতে পারেন নি, বাট আমাকে একটা বার বলতে পারতেন। আমি না করে দিতাম। এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে দম নেয় রাহি। রাহি’র কথায় মাথা নিচু করে নেয় জারির। জারিরের কথা বলার মুখ নেয় তবুও মাথা উচু করে রাহি’র চোখের দিকে তাকায়। জারির রাহির প্রশ্নের জবাব দেয়,
” আমার কোনো ইচ্ছে ছিল তোমার জীবনটা নষ্ট করার। আমি নিজেও কখনো চাইনি আমার জন্য কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট হোক। আমি না পেরেছি পরিবারের কাউকে কিছু বলতে আর না পেরেছি তোমাকে বলতে। বাট আমি সেদিন রাতের বিষয়টার জন্য সরি রাফিয়া। আমি সবটা বলছি সেদিন কেন এমন করেছি। কেন তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি।
” থাক আমি শুনতে চাই না। আপনি কেন বা কিসের জন্য এমন করছেন তার ব্যাপারে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
রাহি’র কথায় থেমে যায় জারির। দু’জনের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ নিরবতা কাটে। নিরবতা ভেঙে রাহি বলল,
সরি, আমি বলছিলাম একটা কথা জানতে চাই বাট আমাকে আরেকটা কথা বলবেন। আমি শুনতে চাইতাম তবে মনের ভিতর খচখচানি রয়ে যাবে এজন্য আরকি।
” আচ্ছা বলো।
” আঙ্কেল বলল, আপনি বিদেশ চলে গেছেন। তাহলে আজ কিভাবে ফিরে আসলেন। এমনটা কি আদোও সম্ভব!
জারির মৃদু হেসে বলল, আমি জানতাম তুমি এমনই কিছুই বলবে। তোমার মনের মধ্যে এই প্রশ্ন টা জাগবেই, শুধু তুমি না আমাদের ফ্যামিলির সবারই। আমি বিদেশ থেকে কিভাবে আসলাম। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক! তাহলে শোনো।
” জ্বি বলেন।
~ফ্লাশব্যাক~
সেদিন রাতে বাসা থেকে বেড়িয়ে সোজা ক্লাবে চলে যায়। আমি আগে কখনোই ক্লাবে যায়নি। এমনকি কোনো দিন বিয়ারও খাইনি। তখন মাথা ঠিক ছিল না। ক্লাবে গিয়ে অনেক গুলা বিয়ার অর্ডার করি। সেগুলো অস্বাভাবিক ভাবে খেয়ে ফেলি। এরপর সেখানেই আমি জ্ঞান হারিয়ে পরে যায়। যখন জ্ঞান ফেরে তখন নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করি। চোখ ডলে চারপাশ লক্ষ্য করতেই বুঝতে পারি রুমটা আমার বন্ধু শ্রেয়ানের। তখন বাজে ভোর পাঁচ টা ত্রিশ মিনিট। তারপর ফ্রেশ হয়ে আসি। ক্লাব থেকে শ্রেয়ানই আমাকে তার বাসায় নিয়ে আসে। আমার কাছে তখন পাসপোর্ট ছিল। আমি আগেই টিকিট কনফার্ম করে রাখছিলাম। বিয়ার খাওয়ার জন্য আমার অনেক নেশা হয়ে যায়, শ্রেয়ান লেবুর সরবত খাইয়ে আমার নেশা কাটায়। তারপর আমি ডিসিশন নেয় আমি আর দেশে থাকব না। আমি একটা চিঠি লিখে শ্রেয়ানের কাছে দেই, আর শ্রেয়ান সেটা বাসায় দিয়ে যায়। শ্রেয়ানের বাসা থেকে ছয়টার বের হই। কারণ সাতটায় আমার ফ্লাইট ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যায়, কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার পর আমার মন সায় দেয় না। সাতটায় প্লেন আকাশে উড়াল দেয়। আর আমি এয়ারপোর্টেের বেঞ্চে বসে থাকি। একসময় এয়ারপোর্টে থাকা গার্ড রা বলে সেখান থেকে চলে যেতে কারণ আমি ঘন্টা দুয়েকের বেশি সেখানে ছিলাম। ফের চলে আসলাম শ্রেয়ানের বাসায়। আমাকে দেখে শ্রেয়ান অবাক হলেও কিছু বলে না। তার থেকে খুশি হয় বেশি। শ্রেয়ান অনেক বুঝানোর পরেও আমি আমার কথায় অনড় ছিলাম। সারাটা দিন, রাত থেকে আজ সকালে বাসায় ফিরে আসি বলে রাহি’র দিকে তাকায়। রাহি জারিরের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। জারির কে থামতে দেখে ফের প্রশ্ন করে,
” ফিরে আসলেন কেন? কিসের এত পিছুটান জারির?
রাহি’র কথায় জারির জবাব দেয়,
” কিসের জন্য এই পিছুটান আমি জানি না। তবে আমার বার বার মনে হচ্ছিল আমি যা করছি আদো কি ঠিক করছি।
রাহি গম্ভীর কণ্ঠে সুধালো,
” আপনি ফিরে এসে বিপদে পড়ে গেছেন জারির।
” বিপদ! কিসের বিপদের কথা বলছো তুমি? অবাক হয়ে,
রাহি মুচকি হেসে বলল, এত প্যানিক নিচ্ছেন কেন? আমি সেরকম কিছু মিন করতে চাই নি। অ্যাই মিন বলতে চাইছি, সবকিছুর একটা নিয়ম থাকে। আর বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছে আর আপনিও ফিরে আসছেন, এখন মরো বাঁচো আপনাকে আমার সাথে যেতে হবে। তারজন্য আপনি বিপদে পড়ে গেলেন না। সেটা বলছি।
” জারির হাফ ছেড়ে বাঁচল। মৃদু স্বরে বলল, আমি তো কি না কি ভেবে বসলাম। আবার কোন বিপদ আসল ভেবে খুব টেনশনে পরে গিছিলাম। যাই হোক সে সব দেখা যাবে।
রাহি করুণ স্বরে বলে, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন জারির?
” নিশ্চয়ই, বলো কি?
” আপনি আগামী তিন মাস কাউকে কিছু বলবেন না। তিন মাস না হলে তো আমাদের ডিভোর্স হচ্ছে না। আর এখনই যদি আমার বাবা মা জানতে পারে তাহলে খুব ভেঙে পড়বে। তাই আমি চাই না তাদের এই মুহূর্তে কোনো রকম কষ্ট পাক।
” তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। আমি বুঝতে পারছি। আমি চেষ্টা করব। আর হ্যা আমার ব্যাপারটা বুজার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অতঃপর দুজনে দু’জনের মতো নিচে নেমে আসল।
চলবে ইনশা আল্লাহ
রিচেক দেওয়া হয়নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন