বিষাদ বৃক্ষ পর্ব-১২

0
39

#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১২

আনতারার গায়ে আজ জলপাই রঙের শাড়ি। এই শাড়িটাই তখন তার শাশুড়ি পাঠিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে একেবারে গোসল করে সে পরেছে। অবশ্য সে পরেনি, শবনম ভাবি পরিয়ে দিয়েছে। ছোট বেলা থেকে সে বড় হয়েছে একা। বলতে গেলে একেবারেই একা। স্কুল ছাড়া ঘর থেকেও তেমন বেরও হত না। বাসায় শুধু মাঝে মাঝে মারুফা চাচি আর ইমরুল চাচা আসতেন। তাই তার পরিচিত মানুষের গন্ডি নেই বললেই চলে। সেখানে শবনম ভাবির মতো মানুষের যত্ন তার কাছে অকল্পনীয়। এখানে এসেছে পর থেকে এই মানুষটা তার জন্য বিনা সার্থে করে যাচ্ছে। তাই শবনম ভাবি তার কাছে আসলেই এতো ভালো লাগে। মনের যত মেঘ কুয়াশা সব কেমন নিমিষেই কেটে যায়।

যায় বলেই আনতারার ইচ্ছে করে এই মানুষটা সাথে সাথে থাকতে। তবে ভাবি এত ব্যস্ত। তার ভাসুর মানে আসাদ ভাই মানুষটা কেমন আনতারা জানে না। সকালে খাবারের পর দেখা হলো। তার একটু ভয় ভয়ই করল। তবে তাকে অবাক করে হালকা হেসে বলেছে — জ্বর কমেছে আনতারা?

আনতারাও তখন হালকা হেসে মাথা নাড়িয়েছে। তবে শবনম ভাবির দিকে চোখ পড়তেই দেখল। সে পেছন থেকে নিজে নিজেই আস্তে আস্তে মুখ ভেঙিয়ে অভিনয় করে বলছে, – জ্বর কমেছে আনতারা। আনতারার তখন এতো হাসি পেল। তবে আসাদ ভাই সামনে থাকায় সে চুপচাপই রইল। তখন চুপচাপ থাকলেও এখন মনে পরে তার আবার হাসি পেয়ে গেল।

— একা একা হাসো ক্যা। উপরে আবার জ্বিনের আসর টাছর আছে নি।

আনতারা সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিল। নিয়ে মাথার ঘোমটা ঠিক করল । শাড়িটা একটু সিল্কি ধরনের, তার মধ্যে আবার খোলা ভেজা চুল। ঘোমটা রাখতে কষ্ট হচ্ছে। বার বার পড়ছে, বার বার তুলতে হচ্ছে। সে তুলেই একবার তার নানী শাশুড়ির দিকে তাকালো। সে আর তার নানী শাশুড়ি বসে আছে তার শাশুড়ির রুমে। মসজিদের ইমাম এসেছে। সাথে এলাকার কিছু মানুষ। তার বাবার জন্য দোয়া পড়ানো হচ্ছে। অবশ্য দোয়া আরেকবারও পড়ানো হয়েছে। তাদের বাসায়। ইমরুল চাচা সব করেছিলেন। তখন অবশ্য তার হুশ ছিল না। তবে আজ আছে। আছে বলেই মোনাজাতের সময় তার ভেতর ভেঙে এলো। বাড়ির সব মহিলারা তখন এখানেই বসেছিল। কেউ কিছু না বললেও শবনম ভাবি নিঃশব্দে জড়িয়ে ধরে বসে ছিল।

এভাবে তাকে বাবা ছাড়া আর কেউ জড়িয়ে ধরেছিল বলে তার মনে পরে না। সময় বুঝি শূণ্যস্থান এভাবেই পূরণ করে।

মুর্শিদার মা আনতারাকে তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেন। মেয়ের রুপ আছে বলতেই হবে। সারা জীবন শুনলেন অতি রুপবতীরা না পায় বর, না পায় ঘর। এই মেয়ের বেলা উল্টো হলো কিভাবে কে জানে। অবশ্য সময় বলবে। পেয়েছে নাকি, না পেয়েছে। বিয়ে হইলেই কি আর সংসার হয়।

আজকে বিকেলে সে চলে যাবে। সকালেই যেত। তবে মুর্শিদা বলল, দুপুরের তাদের মসজিদের ইমাম সহ এলাকার আরো কিছু মুরব্বি আসবে। দোয়া পড়াবে। খাবার, দাবারতো আছেই। তাই বিকেলের দিকে যেতে।

কোথাকার কে না কে ? তার জন্য এতো দোয়া পড়ানোর দরকার কি? অযথা টাকা নষ্ট। এদিকে আবার তার ছোট মেয়ে রাগ করে আছে। করবে’ই না কেন? এতদিন বিয়ের কথা দিয়ে এখন অন্য আরেকজনকে বউ করে নিয়ে আসছে। তার নাতনীর এখন গতি কি হইবো। সবার মধ্যে জানাজানি হাওয়া। গাঁও গ্রামে বিয়ে ভাঙা আর বিয়ের কথা ভাঙা একি কথা। আঙুল তো মেয়ের দিকেই উঠে। এখন এই ভাঙা বিয়ের মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে হইবো? কে দায় নিবো এ সবের। অথচ ছেলে দিব্যি সুন্দরী বউ নিয়ে নেচে বেরাচ্ছে। আহারে তার নাতনীটা। খাওয়া দাওয়াও নাকি ঠিক মতো করছে না। নাতনীর দুঃখে তার দুঃখের কূল কিনারা রইল না। আর সব এই মেয়ের জন্য। হঠাৎ করে যদি না টপকাতো, তাহলে সব ঠিক থাকত।

তার এতো রাগ লাগল। সেই রাগ ভেতরে দমিয়ে বিরক্ত মুখে বলল,– হাত পা গুটায়ে বইসা আছো ক্যা।

আনতারা চোখ তুলে তাকালো। তার তাকানো দেখে মুর্শিদার মা বলল, — এভাবে আমার দিকে তাকাইয়া লাভ নাই। আমার মেয়ের মন গলতে পারে, আমার এত সহজে গলে না। তাই কান খুলে শুনে রাখ। আমার মেয়ের উপরে খবরদার মতব্বরি করার চেষ্টা করবা না। ওতো সাত জনমের ভাগ্য এমন ভাসা কুলা হইয়াও এমন শ্বশুর বাড়ি পাইছো। তাই সব সময় শাশুড়ির খেদমত করবা। শাশুড়িরা হলো মাথার মুকুট। সেই মুকুট সব সময় মাথায় কইরা রাখতে হয়। বুঝেছ?

আনতারা আস্তে করে উপর নিজে মাথা নাড়ল।
— বিয়ের পর রুপ হলো ছাতার মাথা। আসল হইলো গুণ। আমরা পালকি থেকে নেমেই কোমরে কাছ দিয়া কাম করছি। এহনকার বউরা আর কিছু না পারুক উইড়া চলতে ঠিক পারে। তাই উড়াউড়ি কম করবা।

আনতারা আগের আস্তে করে মাথা কাত করল।

— আর এভাবে সব সময় মুখ কম চালাইবা। মেয়েগো সব চেয়ে বড় দুশমন হলো মেয়েগো মুখ। একবার খুললে, সেটা হাজার চেষ্টা করলেও আর লাগাম টানা যায় না। তাই আগেই সাবধান। এখন যাও। আমার জন্য কল থাইকা ঠান্ডা পানি আনো। গরমে জান বাইর হওয়ার জোগার। আরাম আয়েশ তো কম করলা না। এবার নানী শাশুড়ির একটু খেদমত কর।

আনতারা সাথে সাথেই উঠল। টেবিরের উপর থেকে জগ হাতে বেরিয়ে এলো। জগ ভর্তি পানি। কল পারে এসে সেই পানি ফেলল। সে আগে কখনো কল চাপেনি। এখানে এসেছে পর থেকে সোহাগী, শবনম ভাবি দিচ্ছে। এমন না সে চেষ্টা করেনি। একবার চাপ দিয়েছিল এমন শক্ত। সে একটুও নড়াতে পারেনি। শবনম ভাবিতো হেসে দিশেহারা।

সে জগ কলের নিচে রাখলো। রেখে চুল খোঁপা করল। আঁচল পেঁচিয়ে কোমরে গুজলো। গুজে অনেক কষ্টে হাতল উঠিয়ে শরীরের যতো শক্তি আছে তা দিয়ে দিলো এক চাপ। চাপ দিতে দেরি ছিটকে ফিরে আসতে দেরি লাগেনি। আনতারা সাথে সাথেই নাক চেপে ধরল। ছিটকে একেবারে নাক বরাবর লেগেছে। সে কোন শব্দ করল না। তার মাথা ঝিমঝিম করছে। আনতারা নাক চেপে সেখানেই বসে পড়ল।

খাবার দাবার শেষ হতেই আজাদ বেরুলো। রুমের দিকে পা বাড়াতে গিয়েও থেমে গেল। কলপাড় সামনে। গোসলখানা আর বাথরুম ভেতরের দিকে। সেই কলপাড়ে একজন জুবুথুবু হয়ে বসে আছে। আর কে তার বুঝতে এক সেকেন্ডও লাগলো না। সে এগিয়ে গেল।

সে এগিয়ে যেতেই আনকারা চোখ তুলে তাকালো। আজাদ অবশ্য সেই চোখের দিকে তাকালো না। তার দৃষ্টি আনতারার নাক চেপে রাখা হাতের দিকে। যেখানে সাদা শুভ্র আঙুলের ভাজে ভাজে লাল রক্ত উঁকিঝুঁকি মারছে।

দু- দিন বৃষ্টি নেই। ভ্যাবসা গরম। এই ভ্যাবসা গরমকে ঠেলে হঠাৎ করেই এখন মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। আশে পাশের গ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা কে জানে?

ইব্রাহিম বারান্দায় এসে দাড়ালো। সে গ্রামে এসেছে সকালে। আর বের হয়নি। ভাইজানের বাড়িতে দাওয়াত ছিল। তবুও না। এমনিতেও যে এসে খুব একটা বেরোয় তাও না। এ গ্রাম তার ভালো লাগে না। অবশ্য ভালো লাগার মতো কিছু নেই ও। তবুও আসতে হয়। নাড়ির টান বলে একটা কথা আছে।

তখনি বাড়ির ভেতরে শোরগোল শোনা গেল। ইব্রাহিম এগিয়ে গেল না। সে এগিয়ে না গেলেও সে জানে তার কাছে খবর নিজেই আসবে। সে এ বাড়ির মাথা। মাথা যেই দিকে কাত সবাইকে সেই দিকেই কাত হতে হয়। হলোও তাই। তার ছোট ভাই হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে এলো। সে এই গ্রামের বর্তমান চেয়ারম্যান। অবশ্য চেয়ারম্যান হওয়ার কোন যোগ্যতা এর নেই। শুধু তার ক্ষমতায় হওয়া। সে এসে চিন্তিত ভাবে বলল, — ভাই মায় যেন কেমন করছে?

ইব্রাহিম বিচলিত হলো না। বয়স হয়েছে! অনেকদিন যাবতই হাঁটা চলা করতে পারে না। তাই যতটুকু বাঁচার বেঁচেছে। আর কত? তাছাড়া কোন বিষয়ই আজকাল তাকে ছোঁয় না। সে শান্ত ভাবেই বলল, — ভ্যান বের করতে বল। বলেই সে কাঠের চেয়ারে বসলো। রাস্তা না থাকার কারণে গ্রামে সে গাড়ি আনতে পারে না। এটা তার জন্য খুবই বিরক্তিকর। বড় নদীগুলোতে ফেরি আছে কিন্তু সমস্যা হলো, ফেরি পার করার পরও গাড়ি চলার মতো রাস্তা নেই।

তখনি ভ্যান বের করা হলো। তাদের নিজেদেরই ভ্যান। ফসলের সময় ফসল আনা নেওয়ার কাজে লাগে। এরকম বিপদে আপদেও লাগে। তার মাকে ধরাধরি করে ভ্যানে তুলা হলো। ভ্যানে তুলতেই ইব্রাহিমের মা ইব্রাহিমের দিকে হাত বাড়ালো। তার প্রথম সন্তান। অল্প বয়সে বিধবা হয়ে এই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে ছিলেন।তবে কেন জানি এই সন্তানকে তিনি আর চিনতে পারেন না।

ইব্রাহিম এগিয়ে গেল না। ভ্যাগ চালানোর ইশারা দিলো। ভ্যান এগিয়ে গেল। ইব্রাহিমের মা হাত বাড়িয়েই রইল। যতক্ষণ তার নাড়িছেঁড়া ধনকে দেখা যায়। দেখতেই থাকল।

আনতার সামনে ধোঁয়া ওঠা চা। সে অবশ্য চায়ে হাতও দিলো না। এমন না সে চা খায় না। তার বাবার চায়ের অভ্যাস ছিল। এখন না খাওয়ার কারণ তার নাক ব্যথা করছে। সে নাকে হালকা করে ধরতে যেতেই পরিমল বাবু হেসে বললেন, — উহু! হাত দেওয়া যাবে না।

আনতারা চোখ তুলে সামনে মানুষটার দিকে তাকালো। খাটো, মোটা হাসি খুশি একটা লোক। এখানে আসতেই সে বিস্ময়ে মাখা চোখে তাকিয়ে বলেছে, — আজাদ তুমি তো সত্যিই আকাশের চাঁদ ঘরে নিয়ে এসেছো। তোমার তো শাস্তি হওয়া উচিত। চাঁদকে ঘরে আনতে না আনতেই নাক ফাটিয়ে দিয়েছো।

আনতারা তখন লজ্জা পেয়েছে। ছোট বেলা থেকে সে এসব শুনে অভ্যস্ত। তবুও শ্বশুরের সামনে এসব শুনে তার লজ্জাই লাগল।

আহমাদ চিন্তিত হয়ে বলল, — কোন সমস্যা হবে নাতো দাদা?

— তেমন কিছু না। নাক নরম জায়গা। তাই এমন হয়েছে। এই ঔষুধগুলো নিয়মিত খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

আহমাদ স্বস্থির নিশ্বাস ফেললো। তখনি আজাদ এলো। পরিমল বাবুর সামনে থেকে ঔষুধদের কাগজটা নিয়ে চোখ বুলালো। বুলিয়ে বলল — একটা এক্সরে কি করে দেখব?

পরিমল বাবু হো হো করে হাসলেন! হেসে বললেন, — তোমার বউ তুমি করতে চাইলে অবশ্যই করবে।

আজাদ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে তাকালো! পরিমল বাবু হেসে বলল, — উহু এভাবে তোমাকে ঠিক মানাচ্ছে না আজাদ। একটু হাসতো।

আজাদ হেসে ফেলল! আনতারা তখনি চোখ তুলে তাকালো। সে তাকাতেই আজাদও তাকালো। তাকাতেই আনতারা চোখ ফিরিয়ে নিলো। তখনি বাইরে হইচই হলো। একটা ওয়ার্ড বয় এসে বলল, — চেয়ারম্যান সাবের মার অবস্থা ভালো না। নিয়া আইছে।

পরিমল বাবু এগিয়ে গেল। গিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। ডাক্তারি পেশায় অভিজ্ঞতা অনেক বড় জিনিস। আর তার সেটার অভাব নেই। সে দেখেই বুঝল। তবুও সে ভালো করে দেখল। পালস চেক করল। করে চেয়ারম্যান দিকে তাকিয়ে দু- পাশে মাথা নাড়লো। ইকবাল ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ল। ভ্যানে ইকবালের মায়ের সাথে তার বউ, মেয়ে এসেছিল। তারা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।

ইব্রাহিম এলো কিছুক্ষণ পরে। সে মোটরসাইকেলে এসেছে। এই গ্রামে একমাত্র চেয়ারম্যানেরই মোটর সাইকেল আছে। সে পরে বের হয়েছে বলে আসতেও দেরি হলো। মায়ের মৃত্যুর সংবাদে তাকে তেমন বিচলিত মনে হলো না। সে এগিয়ে আহমাদের দিকে আসলো। এসে স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল, — ভালো আছো আহমাদ?

আহমাদ মাথা নাড়ল। বাবার সাথে ইব্রাহিমের সম্পর্কটা অন্য রকম থাকলেও। আহমাদ খুব একটা ইব্রাহিমকে দেখতে পারে না। পারবেই বা কেন? এর কোন ভালো রেকর্ড নেই। ঢাকায় দু- নাম্বারি ব্যবসা আছে। টাকা, পয়সা প্রচুর। মানুষ খুন করার মতোও বদ নাম আছে।
সে বিয়ে করেনি। কেন করেনি কে জানে। তবে আহমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় হলেও ইব্রাহিমের শরীরের বাঁধ ভালো। এই যে শরীরে ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে আহমাদের ছোট ভাইয়ের মতোই লাগছে।

— এই ভর দুপুরে এখানে, কোন সমস্যা?

যার মা কিছুক্ষণ আগে মারা গেছে সে আরেকজনকে জিজ্ঞেস করছে সমস্যা কি? আহমাদ আগের মতোই মাথা দুলিয়ে বলল, — না। ছোট বউ নাকে একটু ব্যথা পেয়েছে তাই নিয়ে এসেছি।

ইব্রাহিম ভ্রু কুঁচকে বলল, — ছোট বউ? আজাদকে বিয়ে করিয়ে ফেলেছো নাকি?
— হ্যাঁ! বাবা চাইলো।
— আবসার ভাইজান কেমন আছে?
— ভালো।

তখনি আনতারা বেরিয়ে এলো। কাঁদছে কে দেখার জন্য। আজাদ দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার পেছনে এসে উঁকি দিল। সাদা থান পড়া বৃদ্ধ এক মহিলা। তার নিথর দেহটা পড়ে আছে। তবে চোখ খোলা। হাতটা বাড়ানো। তার মনে হলো তার দিকেই বাড়িয়ে আছে। সে ভয়ে আজাদের পেছনের শার্ট খামচে ধরল।

আজাদ পেছনে ফিরে তাকালো। নিশ্চুপ কিছুক্ষণ তাকিয়েই রইল। তারপর চোখ ফিরিয়ে আস্তে করে বলল, — ভেতরে গিয়ে বস।

আনতারা দু- সাইডে মাথা নাড়ালো। এখন সে কোথাও একা বসতে পারবে না। সে এমন ভাবে নাড়ালো, যেন আজাদ তার খুব’ই পরিচিত। এমন ভয় টয় পেলে সে এভাবেই আজাদকে আঁকড়ে ধরে।

আজাদের হাসি পেল। তবে সে এবার না হাসলো, না কিছু বলল । নিশ্চুপ সোজা আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইল। সে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলেও আরেক জন থমকে গেল। যাকে তার মায়ের মৃত্যু টলাতে পারে নি। আনতারার এক ঝলকে তাকে পুরো টলিয়ে ফেলল।

চলবে……..