বিষাদ-বৃক্ষ পর্ব-১৪

0
152

#বিষাদ-বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৪

আনতারার হাতে গাঢ় নীল কাতান শাড়ি। সেটাই নিয়ে সে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। এই রুমে আয়না ছিল না। আজ সকালেই দু- পাল্লার বড় একট কাঠের আলমারি এসেছে। আলমারির এক পাল্লায় বড় একটা আয়না, আরেক পাল্লায় বড় একটা ফুল। আলমারিটা আনতারার এতো ভালো লাগলো। সে সাথে সাথেই তার কাপড়, টাপড় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছে। এ কয়দিন তার সব জিনিস ব্যাগেই ছিল। সে ঐ আলমারিতে তুলেনি। আজাদও নিজে থেকে কিছু বলেনি। তাই এমনিতেই ছিল।

সে আয়নায় নিজেকে ঘুরে ফিরে দেখলো। তার গায়ে নীল ব্লাউজ, পেটিকোট। সাইজ ঠিক নেই। পেটিকোট কোমরে গুঁজে, ব্লাউজ নিচে গিট্টু দিয়ে সাইজ বানিয়েছে।

এগুলোও আলমারির সাথে এসেছে। আরো এসেছে স্নো, পাউডার, চিরুনি মেয়েদের আরো প্রয়োজনীয় যা যা লাগে সব। দুপুরে আজ তাদের সবার দাওয়াত আছে। সেই দিন যেই মহিলাটা মারা গেছে তার কুলখানি। মহিলার কথা মনে পড়তেই তার বাবার কথা মনে পড়ল। ইশ! কত দিন বাবাকে দেখে না। বলতেই তার বাবার মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল।

আনতারা শাড়ি হাতেই খাটে বসলো। বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। তাকাতেই পুকুরটা নজরে পড়ল। সে সেই পুকুরের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে রইল।

তখনি দরজায় ধরাম ধরাম দুটো পড়ল। আনতারা দরজার দিকে ফিরে তাকালো। সে বুঝতে পারছে কে? এই বাসায় এমন থাবা একজনেই মারতে পারে।

সে ভেবেছিল রাতে রুমে গেলেই আজাদ তাকে আবার ধরবে। শরবত না দেওয়ায় আবার কিছু বলবে। তবে তেমন কিছুই দেখা গেল না। আজাদ খেয়ে দেয়ে আয়েশ করে শুলো। বিকেলে এত কথা হলো সেগুলো মনে থাকার কোন লক্ষণ তার মধ্যে দেখা গেল না। বরং শোয়ার কিছুক্ষণ মাঝেই সে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েও গেলো।

আনতারার ধারনা এই লোকের কোন দুঃখ, টুঃখ নেই। চিন্তা ভাবনাও নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে এতো কি কাজ করে কে জানে?

তখনি দরজায় আরো দুটো পড়ল। এবারের দুটোর ওজন আগের দু- টোর চেয়ে আরো বেশি। দরজা আজকে শেষ। তবুও আনতারা কোন টু শব্দ করল না। না উঠে গিয়ে দরজা খুললো।সে যে ভাবে বসে ছিল সে ভাবেই বসে রইল। সে এমনিতে খুব নরম প্রকৃতির মেয়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন তার কিছু ভালো লাগে না। তখন তার কিছুই করতে ইচ্ছে করে না। কিছুই না।

সে আবার বাইরের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরেই শবনমের গলা শোনা গেল। তাকে ডাকছে। আনতারা বড় একটা শ্বাস ফেললো! শাড়ি গায়ে পেঁচিয়ে এগিয়ে গেল। দরজা খুলতেই শবনম হেসে ফেললো। শবনমের গায়ে আজ মেরুন রঙের কাতান শাড়ি। হাতে গলায় কানে গয়নায় ভরপুর। আজ তাকে দেখতে অন্য রকম সুন্দর লাগছে।

শবনম হেসেই বলল, — শাড়ি পেঁচিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকলে হবে? বলেছি না কিছু লাগলে ডাকতে।
আনতারা হালকা হাসলো! দাওয়াতের জন্য আসাদ ভাই বাসায়। ভাবিও রুমে তৈরি হচ্ছিল। আনতারার ডাকতে লজ্জা করল। তাই আর যায়নি।

শবনম ভেতরে আসতে আসতে বলল, — বুঝলাম শাড়ির জন্য দরজা খুলোনি। তবে কথা বলোনি কেন? ঐদিকে আরেকজন টেনশনে শেষ। আমার দরজায় থাবা মেরে মেরে ভেঙে ফেলার অবস্থা।

আনতারা ঠোঁট টিপে হাসল। শবনমও হাসল! হেসে শাড়ির আঁচল হাতে নিতে নিতে বলল, — ইশ! ছোট ভাই আর রং পাইনি। নীলে তো আজ তোমার শরীরে আগুন ধরে যাবে।

আনতারা উত্তর দিলো না। এই সব কিছু আজাদ কিনে এনেছে নাকি? সে তো ভেবেছে হয়তো তার শাশুড়ি কিনেছে। সে ভেবেই আলমারির দিকে তাকালো। আলমারির তাক ভর্তি কাপড়। যেমন সুতির তেমন’ই বিভিন্ন ধরণের। কোন রঙ মনে হয় আর বাকি রাখেনি। আর পেটিকোট, ব্লাউজ! আনতারার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল একটা শ্রোত বয়ে গেল।

তখনি শবনমের কন্ঠ শোনা গেল। সে শাড়ি পরাচ্ছে আর বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলছে, — এটা তো সত্যিই কানা। ছায়া, ব্লাউজ সব এনেছে দু- সাইজ করে বড়। নিজের বউ তাও মাপমতো যদি না আনতে পারে। এই গরু সারা জীবন করলটা কি?

আনতারা শাড়িতে এমনিতেই অভ্যস্ত না। তার মধ্যে কাতান শাড়ি। ভারী তারমধ্যে ফুলে ফেলে তার অবস্থা নাজেহাল। সে খুব কষ্টে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে আসলো। হাঁটতে গিয়ে সে নেয়ে ঘেমে একাকার। কাজল লেপটে গেছে, ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে।

ইব্রাহিম একবার তাকালো। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। সে আবসারদের জন্যই গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা আসতেই নিজেই এগিয়ে আবসারকে ধরল।

আনতারাদের বসানো হয়েছে একেবারে ভেতর বাড়িতে। এখানে অবশ্য মানুষজন নেই বললেই চলে । শুধু চেয়ারম্যান বাড়ির মানুষ আর তাদের আত্মীয় – স্বজন। আনতারাকে দেখে চেয়ারম্যান গিন্নি অবাক হয়ে বলল, — মুর্শিদা আপা এই মেয়ে তুমি কই পাইলা? এ- তো বেহেস্তের হুর।

মুর্শিদা হালকা একটু হাসলো। বেহেস্তের হুর তার পুত্র বধু সেরকম কোন খুশি তার চোখে মুখে দেখা গেল না।

— এই মেয়ে তোমার কোন বোন টোন নাই। আমার জহিরকেও তো বিয়ে করাবো। থাকলে বলো তো।

আনতারা দু- পাশে মাথা নাড়ালো। চেয়ারম্যান গিন্নি হতাশ হয়ে বললেন, — মনের মত মেয়ে পাচ্ছি না। একটা মাত্র ছেলে। চেয়েছিলাম ওর দাদি বেঁচে থাকতে থাকতেই বউ বাড়িতে আনবো। আর হলো কই। ও মুর্শিদা আপা তোমার নজরে ভালো মেয়ে আছে নি। থাকলে বইলো।

মুর্শিদা একটু হাসলো। যাকে বলে হাসার জন্য হাসা। কালো মেয়েদের অনেক সহ্য করতে হয়। এই যে সে নিজেই কত কথা শুনেছে। না তার শুশুর, স্বামী কখনও এমন কিছু করে নি। তবে শাশুড়ি যতদিন বেঁচে ছিলেন, একেবারে কড়ায় গন্ডায় ঠিক ভাবেই বুঝিয়েছেন। কপালগুনে এমন শুশুর বাড়ি পেয়েছি, স্বামী পেয়েছি। তাদের মাথায় বসিয়ে রাখলেও তাদের ঋণ শেষ হবে না।

মুর্শিদা মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ফেলে আশে পাশে নজর বুলালো। তার চেয়ে আমেনার রং ভালো উজ্জল। তাই মুনিয়া, মিথির গায়ের রং কিছুটা ফর্সা তবে তার মেয়েটা একেবারেই কালো। তার মেয়ের কপালে কি আছে কে জানে। বাপের বাড়িতে যতোই রাজরানী হয়ে থাক। শ্বশুর বাড়ি, শ্বশুর বাড়িই। অবশ্য ভালো একটা সম্বন্ধ তার বড় ভাই এনেছে। সে এখনো কাউকে কিছু বলেনি। তবে আসাদের বাপের সাথে কথা বলতে হবে। বলেই তিনি আশে পাশে আবার তাকালেন। মেয়েটা গেল কই?

বিথী ভ্রু কুঁচকে বলল, — ছাদের দরজা লাগালেন কেন?

জহির দরজা লাগিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে বলল, — আমার কথা আছে।

— কথা আছে ভালো কথা। এতে দরজার সম্পর্ক কি?

— তুই কখনো অন্যের কথা শোনার প্রয়োজন মনে করিস? নিজের টা বলিস তারপর নিজের মতো হাঁটা ধরিছ। তাই আগেই ব্যবস্থা করলাম।

বিথীর মুখ নির্বিকার। সেই নির্বিকার ভাবে বলল, — ব্যবস্থা করেন আর যাই করেন। কোন লাভ, টাভ নেই জহির ভাই। বাসায় থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। তাহলে যদি বড় মেয়ের আগে ছোট মেয়ে দিতে রাজি হয়।

জহির কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, — আমাদের মাঝে সব সময় মিথিকে টেনে আনিস কেন?

— তো কাকে আনবো? আমার তো আর কোন বোন নেই। তাছাড়া সময় অসময় তার সাথেই তো দেখি গুটুরগু করছেন।

জহির এগুলো। একেবারে বিথীর কাছাকাছি। তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, — কেন নিজেকে চোখে দেখিস না? মিথির সাথে গুটুরগু করতে দেখিস। গুটুরগুর বিষয় কি? সেটা একবার জিজ্ঞেস করে দেখলেই তো পারতি।

বিথী আকাশ থেকে পড়ল। পড়ে বলল, — আপনি আমাকে লাইন মেরেছেন নাকি?

— তুই একটা চরম গাধী।

বিথী জহিরকে ঢেলে সরালো। সরিয়ে বলল, — বিথী হোক আর মিথি। আমি বাবা প্রেম ট্রেমে নেই। বাড়িতে বলেন।

— সেটাতো বলবোই। তোর সমস্যা নেই তো?

— আমার কি সমস্যা হবে? আমার জহিরও যা, কুদ্দুস যা, ফকিরও তা। মা – বাবা যেখানে দেবে চোখ বন্ধ করে কবুল।

— তুই একটা হ্নদয় ছাড়া মেয়েরে বিথী।

— জ্বি শুকরিয়া। দুনিয়াতে এমন দু- একজন হ্নদয় ছাড়াই থাক। তাছাড়া সিমা আপাকে দেখেন নি। কি বড় বাড়ির মেয়ে। প্রেম করে গেল। পরে কাজের লোকের চেয়েও খারাপ অবস্থা। তাই বাবা আমি এসবে নেই। বলেই সে চলে যেতে নিল।

জহির হতাশসুরে বলল, — এজন্যই দরজা লাগিয়ে দিয়ে ছিলাম বুঝলি।

বিথা দাঁড়িয়ে অবাক সুরে বলল, — ওমা, আপনার আরো কথা বাকি আছে নাকি?

জহির বড় একটা শ্বাস ফেলল। ফেলে বলল, — না নেই। তুই যা।

বিথী যেতেই জহির কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তখনি মিথি এলো। হাতে তার শবরতের গ্লাস। চুমুক দিতে দিতে বলল, — ছ্যাঁকা খাওয়ার আগেই ব্যাঁকা হয়ে গেছেন নাকি ?

জহির হেসে ফেললো। তবে কিছু বলল না। দুটোই চরম কিছিমের ফাজিল।

সব মানুষের জন্য খাবার ব্যবস্থা বাইরে করলেও মুর্শিদা তার মেয়ে, ছেলের বউদের নিয়ে ঘরে বসেই খেলো। তাদের জন্য নাকি এখানেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুর্শিদা খুশি হলো। তারা প্রতিবেশি থাকলেও আশা যাওয়া কম। কম থাকলেও সম্পর্ক মোটামুটি ভালো। তাই হয়তো এই ব্যবস্থা। তা না হলে এই গরমে বাইরে বসে খেতে গেলে, গলা দিয়ে খাওন তো না আগুন নামতো। এই মরার বৃষ্টি কোথায় গিয়ে মরছে কে জানে। মেঘের ছিটেফোঁটাও কোথাও দেখা যাচ্ছে না। গরমে ছটফটিয়ে দু- একজন মানুষ না মেরে মনে হয় এই বৃষ্টির আর মুখ দেখা যাবে না। তাও ভালো এ বাড়ি ভালোই ঠান্ডা। বলেই তিনি পুরো বাড়িতে একবার চোখ বুলালেন।

চেয়ারম্যান বাড়িতে বড় দালান। তাদেরও দালান তবে এটা অন্য রকম। তাদের দালান তৈরি করেছিলের তার শ্বশুর। পরে আজাদরা ভেঙে নতুন করে করতে চেয়েছিল। তবে তার শ্বশুর বলেছে, আমি যেই কয়দিন বাঁচি এই ঘরেই বেঁচে যেতে চাই। পরে তোমরা নিজেদের মনের মতো করে নিয়ো। জানা কথা, আর কেউ কোন টু শব্দও করে নি। আগে এই শ্রদ্ধা, সম্মান সব কিছু তার ঠিকই লাগতো। তবে আজকাল কেন জানি তার গলার কাটা মনে হয়।

আনতারা বসে আছে সব সময়ের মতোই চুপচাপ। চুপচাপ বসলেও তার অস্থির লাগছে। এই ভ্যাবসা গরমে এমন শাড়িতে তার বরই নাজেহাল অবস্থা। খেতেও পারেনি তেমন। এখন কেমন বমি বমি লাগছে।
তখনি আজাদ এলো। সে অবশ্য এর মধ্যে কয়েক দফাই এসেছে। এবার এসে সোজা আনতারার দিকে তাকালো। তাকিয়ে বলল, — কোন সমস্যা?

আজাদের কথায় মুর্শিদা আনতারার দিকে তাকালো। এই মেয়ে তার সাথেই টুপ করে বসে আছে। এদিকে বিথী মিথি, বড় বউ, কারো খবর নেই। তারা এ বাড়িতে বাড়ির মানুষদের সাথে মিশে গেছে। এখন কোথায় আছে কে জানে? সে তাকিয়ে বলল, — কি হইছে?

আনতারা চোখ নিচু করল! আস্তে করে বলল, — ভালো লাগছে না।

— এক জায়গায় আইলেতো একটু অন্য রকম লাগবোই। তারপর আজাদের দিকে ফিরে বলল, — ওরে বড় বউগো কাছে দিয়া আয়। কথা টথা বললে ভালো লাগবো।

আজাদের কিছু বলতে হলো না আনতারা নিজেই উঠল। উঠে আজাদের পিছু পিছু রুমের বাহিরে এসেই বলল, — আমার বমি আসছে।

আজাদ প্রথমে বুঝলো না। ফিরে তাকিয়ে বলল,-
কি?

আজাদ ফিরতেই আনতারার গলা আরো নেমে গেল। আগের চেয়েও আস্তে বলল, — বমি বমি লাগছে।

আগের চেয়েও আস্তে বললেও দৃষ্টি মুখের উপরে থাকায় আজাদ এবার বুঝল। সে অবাক হলো না। বাড়ি থেকে বের হয়েই এর যে নাজেহাল অবস্থা সেটা যে কেও’ই দেখে বুঝবে।

তাই সে আনতারাকে আর ভেতরে নিলো না। বমি বমি লাগলেও এ বমি হবে না সে জানে। এটা গরমে অস্থিরের জন্য মনে হচ্ছে। সে বাড়ির পেছনের দিকে নিয়ে এলো। গ্রামের সব বাড়িতেই একটা না একটা পুকুর আছে। আগে তো চাপকল ছিল না। সব কাজ টাজ পুকুরেই হতো। এখন চাপ কল আছে তাই পুকুর দিন দিন অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তাদের বাড়িরটাও গেছে। তাবে এ বাড়িরটা সুন্দর। ঝকঝকে, পরিষ্কার। শান বাঁধিয়ে ঘাট করা হয়েছে।

গাছগাছালি ভরা শান্ত পরিবেশ। তার মধ্যে টলটলে পানির শান্ত দিঘী। আনতারর মন জুড়িয়ে গেল। এতক্ষণ যে ভেতরে ভেতরে একটা অস্থিরতা ছিল তা নিমিষেই মিশে গেল।

আনতারা সাথে সাথেই ঘোমটা ফেলে দিলো। দিয়ে পানির দিকে নিজেই এগিয়ে গেল। চোখ, মুখ জ্বলছে তার। সে এগিয়ে গিয়ে নিচু হয়ে চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো ।

টলটলে শান্ত দীঘি। তার সামনে নীল শাড়ি পরা অসম্ভব রুপবতী এক মেয়ে। আর সেই মেয়ে যদি হয় নিজের। কার সাধ্য চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার। আজাদও পারল না। সে এক পলকে তাকিয়ে রইল।

তখনি এক মহিলা এসে গলা খাঁকারি দিলো। আজাদ স্বাভাবিক ভাবেই ফিরে তাকালো, — এক মহিলা! কাজের লোক টোক হতে পারে। হাতে একটা ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে গ্লাসসহ এক জগ লেবুর শরবত। তাতে বরফকুচি ভাসছে। তাদের গ্রামে কারো বাসায় ফ্রিজ নেই। তবে গঞ্জে বরফকল আছে। এই গরমে শখ করে অনেকেই সেখান থেকে কেজি ধরে বরফ কিনে আনে। চেয়ারম্যান বাড়ি আনতেই পারে। তবে হঠাৎ করে তাদের এতো সমাদার?

সে হাত বাড়িয়ে গ্লাস নিলো। নিয়ে নিজই চুমুক দিলো। দিতেই হেসে ফেললো। হেসে প্রথম আনতারাকে নাম ধরে ডাকলো।

— আনতারা..

আনতারা ফিরে তাকালো। আজাদ গ্লাস উঁচু করে বলল, — নিন, আপনার জন্য এসেছে।

তার জন্য আসা শরবতের জন্য আনতারার কোন আগ্রহ দেখা গেল না। সে দেখল আজাদের বাঁকা হাসি। দেখেই জীবনে যা করেনি তা আজকে করল। শবনমের মতো মুখ বাঁকিয়ে ভেংচি কাটলো। কেটে আবার চোখে মুখে পানি দিতে লাগলো। ভালো লাগছে তার।

চলবে…….