বিষাদ বৃক্ষ পর্ব-১৯

0
39

#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৯

আজ অনেকদিন পরে আকাশ মেঘলা। সকাল থেকে অন্ধকার হয়ে আছে। যে কোন সময় টুপটাপ করে বৃষ্টি শুরু হবে। এতো এতো গরমের পরে আকাশে এই মেঘটুকু ঘেন এক পশলা স্বস্থির ভেলা। আনতারার ভালো লাগছে। সে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। দৃষ্টি আকাশের দিকে।

মিথি আর বিথী বসে আছে সিঁড়িতে। ফিসফিস করে কিছু বলছে আর হাসছে। দিন ভরে কি এতো ফুসুর ফাসুর করে কে জানে। তবে আনতারার মনে হয় তারা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টা কাটাচ্ছে। এই সময়টা সে পাইনি।

তখনি শবনম ডাকলো। সে মিথি বিথীর সাইডে বসে পেয়ারা মাখছে। দু- মিনিটও সে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না। একটার পর একটা করতেই থাকে। সে হেসেই এগিয়ে গেল। বসল শবনমের পাশে।

বসতেই মিথি ঠোঁট টিপে হেসে বলল,– তোমার নাকের খবর কি ভাবি?

আনতারা মাথা নেড়ে বলল, — ভালো

— তুমি এতো ভীতুর ডিম । আমি একসাথে নাক, কান এমনকি এই যে দেখো উপর কানও করে ফেলেছি। আর এক নাক ফুটো করতে গিয়েই তোমার অর্ধেক গ্রামে ঢোল পিটে গেছে। সবাই কত হাসাহাসি করছে জানো?

আনতারার এতক্ষণের ভালো মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। সে ভয় পেয়েছে! তাতে তার দোষ কি? আনতারা কিছু বলল না । তবে বিথী মুখ বাঁকিয়ে বলল , — শুধু কপাল গুনে আমার ভাইয়ের ঘাড়ে গছে গেছে। তা না হলে, কোন জায়গায় ঠাঁই হতো কি না কে জানে । রং ছাড়া আছে কি? তাই নিয়েই যত ঢং।

আনতারার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। ছোট বেলা থেকে সে একা মানুষ। ঝগড়া, কটুকথা বা তর্ক সে কখনও করেনি। তার চোখে পানি চলে এলো। সে সাথে সাথেই সেই পানি ফেরানোর চেষ্টা করল। সব মানুষ কি এক রকম হয়? দেখা গেল এটাকেও তারা ঢং বলবে।

শবনম আনতারার দিকে তাকালো! সে বিথীকে সব সময় একটু ভয়ে ভয়েই থাকে। তবে আজ কি হলো কে জানে। সেও সমান তালে বলল , — আনতারার তো তাও রং আছে। তোমার কি আছে বিথী? কারো ঘাড়ে গছতে পারবে তো?

পাল্টা আক্রমনে বিথী অভ্যস্ত না। সব সময় সে’ই তো বলে। তবে আজ শবনমের কথায় সে থমকে গেল। কিছুক্ষণ সে সেই ভাবেই বসে রইল ।

তারপর সোজা চলে গেল মায়ের রুমে। মিথি একবার বিথী, একবার শবনমের দিকে তাকালো। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বলল, — আজকে তুমি শেষ ভাবি।

আনতারার গলা শুকিয়ে এলো। শবনম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফেলে উঠানের দিকে তাকালো। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে। শুকনো খড়খড়ে উঠানে কি সুন্দর বৃষ্টির ফোঁটা গুলো পড়ে সাথে সাথেই মিলিয়ে যাচ্ছে।

আজ বৃহস্পতিবার! হাফ স্কুল। আসাদ এসেছে সবার আগে। খাবার খেতে বসতেই মুর্শিদা থমথমে মুখে বলল, — আমার মেয়ের রং কালো। কাজ টাজের গুন নেই। জীবনে নাকি বিয়েই হবে না। না হোক! তার বাপ, মা মরে গেছে নি। তোর বউয়ের এতো চিন্তা ক্যা?

আসাদ প্রথমে বুঝল না। ভ্রু কুঁচকে বলল, — কি হয়েছে?

বিথী সাইড থেকে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। উঠে চেঁচিয়ে বলল, — কি হইছে তোমার সুন্দরী বউরে জিগাও। আমরা কালো বলে মানুষ না। আজকেই আমার খোঁটা শুনতে হইলো। আরতো দিন পইড়াই আছে। বাপ, মা মরুক এই বাড়িতে তো পাই রাখা যাইব না।

আসাদ ভাতে প্লেটে হাত রেখেই শান্ত ভাবে সোহাগী বলল — তোর ভাবিরে ডাক।

শবনম সাথে সাথেই এলো। আসাদ শবনমকে দেখে শান্ত ভাবে জিজ্ঞেস করল, — মা যা বলছে সত্যি?

শবনম আসাদের দিকে চোখ তুলে তাকালো। কোন কারণে শবনমের আজকে ভয় লাগলো না। তার মন বলল যা হবার হোক। আর কত? সে চোখ রেখেই বলল, — হ্যাঁ সত্যি।

শবনমের হ্যাঁ বলতে দেরী তবে আসাদের ভাতের প্লেট ছুঁড়ে মারতে দেরি হয়নি। শবনম কেঁপে উঠল। তার পায়ের আশ পাশ ভাতে মাখিয়ে গেল।

সব ছেলেদেরই হয়তো দু- টো রুপ থাকে। এক বাহিরের, আরেক ভেতরের। ভেতরের রুপটা হয়ত একমাত্র স্ত্রী নামক নারীরাই দেখে। আনতারা কি করবে বুঝতে পারল না। সে দৌড়ে গেল আবসারের রুমে।

আসাদ দু- কদম এগুলো। ধমকে বলল — কোন সাহসে তুমি আমার বোনকে এসব বলেছো? একটু সুন্দর হয়ে মানুষকে মানুষ মনে কর না, না? এক্ষুনি মাফ চাইবে আমার মা আর বোনের কাছে।

— শবনম কোন টু শব্দ করল না। সেখান থেকে নড়লোও না ।

আসাদ আরো ক্ষেপলো। এখনি এত বড় বেয়াদবি? সে তেড়ে গেল, হয়ত গায়েও হাত তুলে ফেলতো। তখনি আবসার এসে দিল এক ধমক। অলি আবসার কখনো সংসারের ঝুট ঝামেলায় আসে না। তবে আজ আনতার জন্য আসলেন। তার বাড়িতে তার সামনে তার বাড়ির বউর গায়ে হাত। সে মানতে পারল না। সে আসাদের দিকে তাকিয়ে কঠিন করে বললেন, — সংসার আমি নতুন করি না আসাদ। বরং অনেক স্রোতের বিপরীতে গিয়েও অনেক কাজ করেছি। করেছি বলেই যেই মায়ের হয়ে বউয়ের গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলে না। সে মা আজ এখানে। তা না হলে সে কোথায় থাকতো , সে নিজেও জানে না ।

আর তাকে একবার জিজ্ঞেস করে নিও। যেই বাড়িতে আজ সে এতবড় অন্যায় হতে দিল। সে রকম অন্যায় এ বাড়িতে কখনো তার সাথে হয়েছে কি না? মা, বউয়ের ভারসাম্য রাখতে শেখ । বলেই আবসার মুর্শিদার দিকে একবার তাকালো। তাকিয়ে চলে গেল।

মুর্শিদা সেখানে কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইল। এতদিন যা হয়নি, আজ এ বাড়িতে তা হয়েই গেল। সেও হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল। তার পিছু পিছু আসাদ বাদে সবাই গেল।

আনতারা এগিয়ে যেটুকু পারে হরবর করে আসাদকে সব বলল। তার চোখে পানি। সে সেই পানি মুছতে মুছতে বলল, — ভাবির কোন দোষ নেই। এতোটুকু নেই।

আসাদ হতম্ভব হয়ে শবনমের দিকে তাকালো। শবনমের মুখ থমথমে তবে স্বাভাবিক। সে আসাদের দিকে ফিরেও তাকালোও না। সে ঝাড়ু আনতে বেরিয়ে গেল। পুরো ঘর মাখামাখি।

আনতারা দাঁড়িয়ে আছে খাবার ঘরের দরজার সামনে। শবনব ভাবি নিচে পড়া খাবার পরিষ্কার করছে। শবনমের কোন বিকার নেই। সে স্বাভাবিক! তবে আনতারর মন মেঘে ঢাকা আকাশের মতোই অন্ধকার। তার জন্যই তো সব হলো। তখনি বাইরে থেকে কেউ ডাকলো, — মা জননীরা বাসায় আসো নি। আমাদের কিছু দেও।

আনতারা একটু এগিয়ে উঁকি দিলো। এখান থেকে বাইর বাড়ির কিছুটা দেখা যায়। যারা ডেকেছে এদের সে চেনে। নৌকায় থাকে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে চাল, ডাল নেয়। সে আশে পাশে বলার মতো কাউকে দেখলো না।

তারা আবার ডাকলো।, — আছনি মা সকল রা। এই ভর দুপুরে খালি হাতে ফেরাইও না। যা পার দাও।

শবনম আনতারার দিকে তাকালো। তাকাতেই আনতারা আস্তে করে বলল, আমি যাব ভাবি?

শবনম হালকা হেসে বলল, — এত মন খারাপের কিছু নেই আনতারা। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। ওখানে চাল আছে। তাদের দিয়ে এসো। গৃহস্থের দোর থেকে এখানে কেউ খালি হাতে ফেরায় না। নাহার ফুপু, সোহাগী সবাই এখন মায়ের ঘরে। এখানে কেয়ামত হয়ে গেলেও এখন তারা আসবে না। যাও। মন খারাপের কিছু নে। বাড়ির বউদের ল্যাটকাবে, চ্যাটকাবে, পায়ে পিষবে আবার দরজা বন্ধ হলেই আদর সোহাগে ভাসাবে। এতে অস্থির হওয়ার কিছু নেই। যাও।

আনতারার বিষন্ন মন আরো বিষন্ন হলো। সেই বিষন্ন মন নিয়েই এক বাটি চাল নিয়ে সে এগিয়ে গেল। তিনচারজন মহিলা তার মধ্যে খুব বৃদ্ধ একজন। সে পা ছড়িয়ে নিচে বসে আছে। তার কাছ থেকে চাল নিতে নিতে একজন বলল, — মাগো একটু পানি হইবো। আমার মায়ের গলাডা শুকাইয়া গেছে।

আনতারা আবার দৌড়ে এলো। পানি নিয়ে দিতেই বৃদ্ধ মহিলা খেলো। খেয়ে আনতারার দিকে তাকালো, হাত উঁচু করে দোয়া করবে তখনি সে থমকে গেল। কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, — কেডা তুমি?

আনতারা কিছু বলবে তার আগেই মহিলা বলল, — তোমারে কবিরের বউর মতো ঠেকা ক্যা? বলেই মহিলা দাঁড়ালো। ভালো করে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলল, — আল্লাহ! কি বিস্ময়কর ঘটনা। তুমি তো দেখতে একবারে রুপার মত।

আনতারা কি বলবে ভেবে পেল না । সে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে চাইল। বৃদ্ধ মহিলা আনতারা হাত টেনে ধরল! অবাক হয়ে বললো, — ওই চোখ, ওই নাক, ওই মুখ। আমার ভুল হয়নাইগো মা। তুমি দেখতে একেবারে রুপার মতন? কুত্তাডিতে ধইরা নিলো। আহারে! বাঁচনের মতো তো কিছু আর বাকি রাখে নাই। তা মতো কত মাইয়া গলায় ফাঁস নিল। রুপা বাইচ্চা আছিল নি?

আনতারা ভয়ে শেষ। কি বলছে এ মহিলা। সে টেনে হাত ছাড়াতে চাইল। পেছনে ফিরে শবনমকে ডাকবে। তখনি একটা শান্ত কন্ঠ ভেসে এলো।
— হাত ছাড়ো।

বৃদ্ধা আনতারা দুজনেই তাকালো। ইব্রাহিম দাঁড়িয়ে আছে। পাশে জামিল ছাতা ধরে মাথায়।

বৃদ্ধার মেয়ে সাথে সাথেই টেনে হাত ছাড়ালো। ছাড়িয়ে প্রায় টেনে নিয়ে গেল। আনতারা কাঁপতেই কাঁপতেই ইব্রাহিমের দিকে তাকালো।

ইব্রাহিম এগিয়ে এলো। আগের মতোই শান্ত ভাবে বলল, — ভয় নেই। পাগল মহিলা। ভেতরে চলো। আমি ভাইজানের সাথে দেখা করতে এসেছি।

— উনি কি বললেন?

— পাগলরা অনেক কিছুই বলে আনতারা। তাদের কথা গনায় ধরতে নেই।

— আমার দাদির নাম যেন কি ছিল?

— তোমার দাদির নাম আনজুম।

— সে মারা গেছে কিভাবে?

— সে একটা দূর্ঘটনায় মারা গেছে।

— আমার দাদার নাম কি?

ইব্রাহিম কিছুক্ষল নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, — এত হাবিজাবি চিন্তার কিছু নেই। তবুও কিছু জানার থাকলে ভাইজানকে জিজ্ঞেস করতে পার। তোমার নাক ঠিক হয়েছে?

আনতারা ঘোরের মধ্যেই আস্তে করে মাথা নাড়ল।

— ভয় নেই। যাও ভেতরে যাও। তোমার নানাভাইকে বলো আমি এসেছি।

আনতারা আবারো মাথা নাড়ল। নেড়ে ধীরে ধীরে ভেতরে চলে গেল।

ইব্রাহিম এসেছে জহিরের জন্য কথা বলতে। সে বিথীকে বিয়ে করতে চায়। বাড়ির সবাই কেউই রাজি না। এক মেয়ে কালো, দ্বিতীয় মেয়ে বেয়াদব। বড় ছোটর মান জানে না। যেহেতু ইব্রাহিম রাজি তাই তার উপরে আর কেউ কিছু বলেনি। অলি আবসার আসতেই সে জহিরের ব্যাপারে বলল।

আলি আবসার প্রথমে অবাক হলেন। তারপর শান্ত ভাবে বললেন, — তুমি আমাকে ভাইজান ডাকো ইব্রাহিম, সেই হিসেবে ইকবালও আমাকে ভাই’ই বলে। তাহলে তার ছেলে সাথে কি আমার নাতনীর বিয়ে যায়?

— আপনার আর আমার সম্পর্ক আত্মার। সেখানে অন্য কোন সম্পর্ক টানবেন না ভাইজান। আর বাকি সম্পর্কে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই। যেখানে রক্তের সম্পর্কে নেই। সেখানে সন্তানদের ভালোর কথা চিন্তা করা ভালো । অন্য কিছু না।

আবসার কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে রইলেন। তারপর আগের মতোই বললেন — ঠিক আছে। তুমি যখন বলছো, সবাই বাসায় ফিরুক আমি কথা বলবো। তবে কথা দিতে পারছি না। মেয়ের বাবা, মা আছে। তারাই পুরো সিন্ধান্ত নেবে।

— তাহলে আজাদের টা নিয়েছেন কিভাবে? তার বাবা, মা ছিল না?

আবসার শান্ত চোখে ইব্রাহিমের দিকে তাকালো। তাকিয়ে শান্ত ভাবেই বলল, — আমি শুধু আনতারার সিন্ধান্ত নিয়েছি আর বাকি সবার মতামত। আর এমন সিন্ধান্ত আমি আরো নেব যদি প্রয়োজন পরে।

ইব্রাহিম হালকা হাসল! হেসে বলল, — আমি আপনার সিন্ধান্তর অপেক্ষায় থাকবো ।

আবসার ভ্রু কুঁচকে তাকালো! ইব্রাহিম তা দেখে বলল, — আমি জহির, বিথীর ব্যাপারে বলেছি ভাইজান।

আনতারা ভেবেছিল দুপুরের ঝামেলা তখনি শেষ। তবে সেরকম দেখা গেল না। মুর্শিদা ঘর থেকে আর বেরুলো না। না কারো সাথে কথা বলল, না খাবার খেল। পরপর দু- দুটো ঘটনায় আনতারা তখন নিস্তেজ। এক এই ঝগড়া। এমন পরিস্থিতে সে কখনো পরেনি। দ্বিতীয় ওই বৃদ্ধার কথা। কোথায় যেন তার একটু খুট খুট লাগছে।

আজাদ বাসায় ফিরে দেখলো আনতারা খাটে উপুর হয়ে শুয়ে আছে। মুখ বালিশে গোজা। ঝগরার কথা সে শুনেছে। শুনে তেমন হাবভাব হয়নি। কখনো হয়ও না।

সে আনতারার সাইড দিয়েই চিত হয়ে শুয়ে পড়ল। গরমে অস্থির লাগছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির পড়ে আবার গুমোট ধরে আছে। সেই গুমটে দম বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়।

সে ভেবেছিল সে শুতেই আনকারা লাফিয়ে উঠবে। তবে সেরকম কিছুই দেখা গেল না। সে যেভাবে শুয়ে ছিলে সে ভাবেই শুয়ে রইল।

আজাদ ডাকলো, — আনতারা।
আনতারা আস্তে করে বলল, — হুম।
— কি হয়েছে?
— আমার ভালো লাগছে না।
— কেন?
— আমি জানি না।
— জানো কি?
— সব ঠিক করে দিন?
— আমি খারাপ মানুষ সব ঠিক করব কেন?
— আমার জন্য করবেন।
— তুমি কে?
— আজাদের তারা বেগম।

আজাদ হাসলো! হেসে বলল, — যদি দেই আজাদের তারা বেগম আজদকে কি দেবে?

— কিছু না।

— তুমি মেয়েটা বড়ই কিপটে আনতারা। বলেই আজাদ ঝট করে উঠল। সোজা গেল মায়ের রুমে। গিয়েই মাকে জাপটে ধরল। ধরে চেঁচিয়ে বলল, — নাহার ফুপু গামলা ভরে ভাত আনতো। আজকে মা ছেলে একপাতে বসে ভাত খাবে।

মুর্শিদা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। সে কালো বলে তাকে দয়া দেখিয়ে এই বাড়ির বউ করা হয়েছে। সেই খোঁটাই আঙুল তুলে আজকে সবার সামনে দেখিয়ে দেওয়া হলো। এতো দিন যে জান প্রাণ দিয়ে খাটলো, তার কোন মূল্য নেই।

আজাদ দু- হাতে মায়ের চোখের পানি মুছলো। মুছে আবার জড়িয়ে ধরে বলল, — বিথী যেমন তোমার মেয়ে ভাবিও তেমন আরেক জনের মেয়ে মা। তারা খুব ভরসা করে তোমাদের হাতে তাকে তুলে দিয়েছে। ভুল দেখলে শাসনতো করবেই, তবে অন্যায় কর না।

চলবে…..