#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইমলাম
#পর্ব- ২০
আসাদ রুমে বসে বসে শবনমের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করল। এই অপেক্ষার পাহাড় কতটা ভারী একমাত্র যেন আসাদ’ই টের পেল। কিন্তু ঘড়ির কাটা তখন বারোটার ঘরে। অথচ যার জন্য এই ভারী প্রহর তার ছায়াটাও দেখা গেল না।
আসাদ অস্থির ভাবে রুমের এ মাথা থেকে ও মাথা কিছুক্ষণ পায়চারি করল। তারপর যা কখনো করেনি তা আজ করল। শবনমের খোঁজে রুম থেকে বের হলো। নিজের কাজে আজ সে নিজেই বড় অনুতপ্ত। বাহির থেকে এসেছে তার মধ্যে মা এমন ভাবে বলল মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তার মধ্যে এই মেয়ের ঘাড় ত্যাড়ামি। হ্যাঁ বলার কোন দরকার ছিল। তারপর কি থেকে কি হয়ে গেল আসাদ ঠিক দিশে পায় না।
সে সোজা এলো খাবার ঘরে। এখানেই এই মেয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। সে লাইট জ্বালাতেই দেখল পুরো রুম খালি। তার সাথে সাথেই ভ্রু কুঁচকে গেল। সে বাথরুমের সাইডে এলো। এখানেও খালি। তার শরীর দিয়ে চিকন ঘাম দিলো। এতদিন ধমকা ধমকি করলেও কখনোও গায়ে হাত তুলতে যাইনি। আজ সত্যিই বেশি হয়ে গেছে। রাগ করে আবার কোন অঘটন করবে নাতো?
সে বাড়ির এ মাথা থেকে ও মাথা যতটুকু খোঁজা যায় খুঁজল। বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে একবার বাইরে দিকে উঁকিঝুঁকি দিল। কোথায় গেল? হাবিজাবি চিন্তায় তার গলা শুকিয়ে এলো।
বিয়ের এতদিন হলেও বউ নিয়ে কোন আদিখ্যেতা সে করেনি। রুমের বাইরে শবনমের দিকে কখনোও চোখ তুলে তাকিয়েছেও বলে মনে পরে না। আজ কি করবে, কাকে জিজ্ঞেস কবরে। সে ভেবে পেল না।
শেষ মেষ আর কোন উপায় না পেয়ে সে দৌড়ে গেল তাদের সব সমস্যার সমাধান দাদার কাছে। দরজায় টোকা দিতেই চোখে মুখে ঘুম নিয়ে দরজা খুললো আজাদ। আজাদকে দেখে আসাদ আরো অবাক হলো। অবাক হয়ে বলল, — তুই এখানে কি করিস?
আজাদ বিরক্ত মুখে বলল, — তোমার ঘরে বউ নেই তাই দাদার কাছে এসেছো। আর আমার ঘরে বউ আছে তাই দাদার কাছে এসেছি। বুঝেছো বলেই আজাদ ঘুরে খাটে ধরাম করে আবার শুয়ে পড়ল।
আসাদ কিছু না বুঝে অলি আবসারের দিকে তাকালো। সে জায়নামাজে। গভীর রাত পর্যন্ত তার নামাজের অভ্যাস আছে। আসাদ এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলো। বসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। শবনম সম্ভবতো আনতারার কাছে।
আবসার সালাম ফিরিয়ে আসাদের দিকে তাকালো। তাকিয়ে কোমল সুরে বলল, — কি হয়েছে?
আসাদের মুখে শবনবের নাম এলো না। কোথাও একটু লজ্জা, একটু সংকোচ। সে মাথা নিচু করে বসলো।
আবসার হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকল। যেমন ডাকতেন ছোট বেলায়। বাড়ির প্রথম নাতি তার। সবচেয়ে আদরের। নামাজ শেষ হলেই কত নাতি নাতনীদের ডেকে কোলে বসিয়ে ফু দিতেন।
আসাদ এগিয়ে এলো। দাদার সামনে বসলো। বসতেই আবসার মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে বলল, — মা তো মা’ই। তাকে অবশ্যই মাথায় করে রাখতে হবে। তবে আরেক জনকে পায়ে পিষে না। মা যদি তোমার জন্মদাত্রী হয় তবে আরেক জন হবে তোমার সন্তানের জন্মদাত্রী। তাই মাকে যেমন সম্মান করবে তেমন তাকেও। তুমি এ বাড়ির বড় ছেলে। সংসারে ঝুট ঝামেলা হবেই। সব ঠান্ডা মাথায় সামাল দেবে। যাও ঘরে যাও। আমার দুটো নাত বউ। দুটো’ই আমার কাছে সমান। আমি বেঁচে থাকতে কারো কোন ক্ষতি হবে না।
আসাদ হালকা হাসলো। হেসে উঠে দাঁড়ালো। দাঁড়াতেই আবসার বলল, — সাথে এই গরুকেও নিয়ে যা। ধপাস ধপাস করে আমার খাটের বারোটা বাজাচ্ছে। তোর দাদির স্মৃতির খাট। মরার আগ পর্যন্ত এইটাতেই থাকতে চাই।
আসাদ এবার পুরো হেসেই ফেলল! হেসে আজাদকে টানলো। এই ছেলে শুনলে তো। সে হাত পা ছড়িয়ে আরো আয়েশ করে শুলো।
সেই শোয়ায় চোখ খুলল সকালে। চোখ খুলেই আজাদ দেখল আনতারা দাঁড়িয়ে। গায়ে কালো কাপড়। সোনালি কারুকাজের পাড়। আজ মাথায় ঘোমটা নেই। এলোমেলো চুল গাল ঘাড় ছুঁয়ে আছে। আর সবচেয়ে বড় কথা এই মেয়ে ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি।
আজাদ নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে এটা স্বপ্ন। তা না হলে তার সামনে তারা বেগম দাঁড়াবে তাও আবার হেসে। এটা ইহোজীবনেও সম্ভব?
সাথে সাথেই আনতারার হাসি গায়েব হলো। সব সময়ের মতো মুখ করে তাকিয়ে বলল, — এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
আজাদ হাই তুলে উঠে বসল। বসতে বসতে বলল, — চোখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছেন তো কি করব?
— চোখ বরাবর দাঁড়ালেই এভাবে তাকাতে হবে?
— বেগম দাঁড়ালে অবশ্যই তাকাতে হবে। বরং না তাকালেই পাপ।
— কখনো না।
— না হলে নেই। আমিতো তাকাবো। উঁকিঝুঁকি মেরে তো আর দেখতে যাইনি। চোখের সামনে এসেছে দেখবো না? বলেই আজাদ আরো ভালো করে তাকালো।
আনতারা মুখ গোঁজ করল। একে ভালো মানুষ মনে করাই ভুল হয়েছে। সে চলে যেতে নিল। আজাদ ডাকল,- আনতারা..
আনতারা ফিরে দাঁড়ালো।
— হাতে কি?
— বলব না।
— কেন?
— আপনি ভাল মানুষ না।
— জানি তো। নতুন কিছু বলো।
আনতারা মুখ গোঁজ করেই দাঁড়িয়ে রইল। তার এক হাত পেছনে মোড়ানো। আজাদ অবশ্য জানে কি? হিজল ফুলের মালা। তখন যাওয়ার জন্য ঘুরতেই এক ঝলক দেখল। সে ঠোঁট টিপে হাসল।
আনতারা মুখ গোঁজ করেই বলল, — আপনি আমার সামনে হাসবেন না। এভাবে ঠোঁট টিপে তো আরো না।
আজাদ এবার পুরোই হেসে ফেলল! হেসে বলল, — জো হুকুম মহারাণী। প্রথম বার কোন আদেশ করলেন। পালন না করা যায়? আর কিছু?
— আমাকে নিয়ে একদম মজা করবেন না।
— এটাও শিরোধার্য করলাম। আর কিছু?
— না আপাতত আর নেই।
— তাহলে বলুন হাতে কি?
— আর এই যে, এই যে এটাও। একবার আপনি, একবার তুমি বলবেন না।
আজাদ অনেক কষ্টে হাসি দমালো। অবশ্য তবুও তার মুখ হাসি হাসি। সে সেই ভাবেই বলল, — তোমার যত আর্জি আছে সব কবুল। এখন তো বলো।
আনতারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ইতিউতি করল। মানুষটা তার এক কথাই দৌড়ে গেল। কিছুতো একটু দেওয়াই যায়। তারপর আস্তে করে বলল, — আপনার পাশে ওইটা কি?
আজাদ সাথে সাথেই তার সাইডে তাকালো। তার পাশে আবার কি ? কিন্তু সে জানে না। সে সাইডে মুখ ফেরাতেই আনতারা ঝট করে খাটে মালা রেখেছে। রেখে চোখের পলকেই গায়েব।
আজাদ ফিরে তাকিয়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইল। তারপর হেসে ফেলল। এই মেয়ের মাথায় তো ভালো বুদ্ধি। সে হেসেই হাত বাড়িয়ে মালা তুলে নিল।
সকালে আবসার সবার সামনে ইব্রাহিমের প্রস্তাব রাখল। আহমাদ রাজি হলো না। সে ইব্রাহিমকে এমনিতেও খুব একটা দেখতে পারে না। আর ইকবাল চেয়ারম্যান হলেও ভাইয়ের ইশারায় নাচে। মুর্শিদাও তেমন গা করল না। সেইদিন দাওয়াতে চেয়ারম্যান গিন্নির কথাবার্তা তার পছন্দ হয়নি। বউদের যেমন প্রশংসা করেছেন তেমনি সাথে এও বুঝিয়েছেন তিনিও তার ছেলের বউ দেখে শুনেই আনবেন। তো এখন আবার এদিকে কেন? না বাবা দরকার নেই। সে মাথায় আঁচল টেনেই বলল, — আমার হাতে ভালো বিয়ের প্রস্তাব আছে। সময় করে বলে উঠতে পারছিলাম না। আমার ভাইয়ের সুমুন্দির ছেলে। বিলেত থাকে। বাপ দাদার নাম আছে। জমি জমাও ভালো। তাদের তেমন চাওয়া, পাওয়াও নেই। শুধু ভালো বংশের একটা মেয়ে চায়। এখন আপনারা মত দিলে আমি আমার ভাইকে জানাবো।
আবসার আর কিছু বললেন না। তার কাজ ছিল প্রস্তাব রাখা, রেখেছে। এখন বাকিদের ইচ্ছা।
আসাদ, আজাদও কিছু বলল না। তাদের বাপ, চাচা আছে, যা সিন্ধান্ত নেওয়ার তারাই নিক। আহমাদ ছোট ভাইয়ে দিকে তাকালো। এ আজকাল বাসায়ই থাকে না। তাছাড়া বলতে গেলে সে দিনভরেই এখানে ওখানে ঘুরে। নানান মানুষের সাথে পরিচয়। সেই পরিচয়ের মাধ্যমেই তার কানে একটা কথা এসেছে। অবশ্য সত্য মিথ্যা সে জানে না। জানে না বলেই কাওকে কিছু বলতে পারছে না।
সে তাকাতেই আমজাদ বলল, — আমি খোজখবর নিচ্ছি। নিয়ে যদি সব ঠিক থাকে। তবে কথা এখানেই আগানো যাবে।
আহমাদ নিশ্চিন্ত হলো। এসব ব্যাপারে বলতে গেলে সে কিছুই না। মুর্শিদাও দেবরের কথায় খুশি হলো। আমজাদ আবার এসব ব্যাপারে খুবই ভালো। তার বড় মেয়েকে সে নিজে বিয়ে দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে সে সোনায় সোহাগা । সে খুশি হয়েই বলল, — মুনিয়াকে আনবার জন্য তোমার বড় ভাইরে পাঠাবো। অনেকদিন হলো নাইওর আসেনা। আর বিয়ের কথাও বলে আসবে। হাজার হলেও ইষ্টি বাড়ি। আগে না জানাইলে তে আসবার চাইবে না।
আমজাদের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া হলো না। শান্ত ভাবে শুধু বলল,— তোমার যেমন ভালো ঠেকে কর।
সবার খাওয়া শেষ হলেও আসাদ খেলো ধীরে ধীরে। শবনম সব এগিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছে। সকালেও রুমে যাইনি। সে জানে সে যতক্ষণ আছে সে যাবেও না।
যত ধীরে ধীরে হোক খাবার এক সময় শেষ হয়। মুর্শিদাও এখানে। বাড়ির পরিস্থিতি এখন সবই স্বাভাবিক। তবে জমাট বেঁধে আছে তাদের মধ্যে। সে অনিচ্ছা নিয়েই উঠল। তার হলেই মেয়েরা বসবে। অযথা সময় বাড়িয়ে লাভ কি?
সেই লাভ লোকসানের হিসেবের কষতে কষতে আসাদের রুমে যাওয়ার পথে আনতারার সাথে দেখা হলো। সে খাবার ঘরের দিকেই যাচ্ছে।
আনতারা আর কি করবে? সে যা ভালো পারে তাই করল। সাথে সাথেই মুখ ফোলালো। শবনম ভাবি সারা রাত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। সে মুখ ফোলাবে না?
আসাদ হালকা হাসলো। হেসে সব সংকোচ,দ্বিধা, অস্বস্তি ঝেড়ে আনতারার সামনে নিচু স্বরে বলল, — তোমার ভাবিকে একটু রুমে পাঠাও আনতারা।
আনতারা গাল ফুলিয়েই মাথা নাড়ল। মানে সে পারবে না।
আসাদ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফেলে ধীরে ধীরে চলে গেল। আনতারা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। সে এখন কোন দিকে যাবে। সে মুখ ফুলিয়েই খাবার ঘরে গিয়ে বলল, — ভাই শার্ট পাচ্ছে না ভাবি। স্কুলে নাকি যাবে। দেরি হচ্ছে।
মুর্শিদা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তবে আজকে ঝাঁজিয়ে বলল না। তবে বিরক্তমাখা কন্ঠে বলল, — ছেলে ডা সকাল হলেই স্কুলে যাবে। সেটা তো জানা কথাই। সব আগে ভাগে রেডি করে রাখতে পার না? সব সময় এতো বলা লাগে ক্যা?
শবনম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফেলে এগিয়ে গেল। রুমে যেতেই আসাদ জাপটে ধরল। ধরে অনুতপ্ত কন্ঠে বলল, — আর কখনো হবে না। সত্যিই কথা দিচ্ছি, কখনো না।
শবনম সব সময়ের মতো না কিছু বলল, না নড়ল চড়ল। শক্ত ভাবে শুধু দাঁড়িয়ে রইল। আসাদ বুঝল এই জমাট একদিনের না। তিন তিনটা বছরের। আর এই জমাট এতো সহজে গলবে না।
জহির বিথীদের বাইর বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তার বিথীর সাথে কথা বলা দরকার। এই মেয়ের খবর নেই। এমনিতে দিন ভরে টিং টিং করে ঘুরে বেড়ায়, আজ খবর নেই। সে পাইচারি করতে করতেই মিথি বেরুলো। তার হাতে শলার মোটা ঝাড়ু। ঝাড়ু নিয়েই সে আশে পাশে তাকাচ্ছে। এই ঝাড়ু দিয়ে এই মেয়ে কি করবে কে জানে? এমনিতে তো কাজ টাজের ধারের কাছেও নেই।
জহির তড়িঘড়ি করে এগিয়ে গেল। গিয়েই বলল, — বিথী কোথায় মিথি?
মিথি আঁতকে উঠল। বুকে থু থু ছিটিয়ে বলল, — আল্লাহগো জহির ভাই এভাবে কেউ আসে। আমার পরানডাই তো এহন উড়াল দিছিলো।
জহির অন্য কোন কথায় গেলনা। সে আবার বলল, — বিথী কোথায়?
— কোথায় থাকবো ঘরে?
— তারে একটু বাইরে আসতে বলো। আমার কথা আছে।
মিথি বিরক্ত মুখে তাকালো। সে এখন দুনিয়ার ব্যস্ত। শয়তান বিলাই ভাজা মাছ নিয়া দিছে দৌড়। সেটারেই খুঁজতাছে। এখন আবার বিথীরে ডাক। ধুর! দুনিয়ার কাজ কাম তার ঘাড়েই কেন আসে। বলেই সে আবার ভেতরের দিকে গেল।
সে যেতেই কিছুক্ষণেরর মধ্যে বিথী এলো। হেলে দুলে। এসে বলল, — বলেন।
— তোমাগো বাড়ির সবাই মানছে না কেন?
— আপনাগো বাসার সবাই মানছে?
— না মানলে প্রস্তাব যাইতো?
— প্রস্তাবতো আপনের বাপে আনে নাই। আনছে চাচায়।
— তার কথাই আমাগো বাড়িতে শেষ কথা।
— এটাই তো সমস্যা জহির ভাই। তার কথাই আপনাগো বাইতে শেষ কথা কেন হইবো? বিয়া করবেন আপনি, সংসার করমু আপনের মা- বাপ, বইনের লগে। আর সব সিন্ধান্ত নেবো আপনের চাচায়। এটা কোন কথা?
— তুমি কি বলতে চাও বিথী?
— আমি কিছুই বলতে চাইনা জহির ভাই। তবে এটা আপনি শুনে রাইখেন। আপনের চাচার জন্যই আমাগো বাড়িত থিকা না হইছে। যদি চাচার ছায়ার তলে না থাইকা নিজেরা কিছু করতেন। তাহলে আমারে ঠিকিই পাইতেন। আসি বলেই বিথী চলে যেতে নিল।
জহির খপ করে তার হাত ধরল! ধরে করুণমুখে বলল, — আমি তোকে ভালোবাসি বিথী। তোকে না পেলে মরে যাব। সত্যিই মরে যাব।
বিথী বিরক্ত মুখে হাত ছাড়ালো! ছাড়িয়ে বলল, — এইসব তো আমারে বইলা লাভ নাই জহির ভাই। আমি আগেই কইছি। বাড়ি সবাই যেই দিকে আমিও সেই দিকে।
— একবার অন্তত আমার কথা ভাব।
— আপনের কথা ভাইবা আমার লাভ কি? আপনের কোমরের জোর আছে? আজ বড় চাচা রাজি সবাই বিয়ের জন্য রাজি। কাল যে তার মন ঘুরবো না সেই গ্যারান্টি কি? তখন তো সুরসুর কইরা চাচা যে দিকে ভাতিজাও সেই দিকে। তাই বাবা মাফ করেন। বলেই বিথী চলে গেল।
জহির সেখানেই কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। তারপর বাসায় গিয়ে ঘরের জিনিসপত্র সব আছড়ে ভাঙলো। ইকবাল আবাক হয়ে ছেলের কান্ডকারখানা দেখলো। জহিরের মা আঁচল চেপে কাঁদলো। তার ছেলেরে ওই কালি জাদু টুনা করছে। তা না হইলে এমন পাগল হইবো ক্যা?
ইব্রাহিম পুকুর ঘাটে গাছের ছায়ায় ইজিচেয়ারে শোয়া। ভেতরের বাড়ির সব কিছুই তার কানে আসছে। তবুও সে নিশ্চুপ। তার পাশে জামিল। হাঁটু ভেঙে বসে দাঁত খোঁচাচ্ছে। খোঁচাতে খোঁচাতে বলল, — হজম হইলো না ভাইজান। আমাগো বাড়ির রাজপুত্রের লাহান পোলা। তার হাত ফেরানো। একদম হজম হইলো না।
ইব্রাহিম চোখ বন্ধ করেই বলল, — মানি লোকদের মানি কাজ কারবার।
— তয় আমাগো মান নাই?
— মান দিয়ে হয় টাকি জামিল?
জামিল তার পান খাওয়া ঠোঁটে হাসলো! হেসে বলল, — তাও কথা। মানের কাম কি? ক্ষমতা যার মান তার। এই কথাটাই সেইদিন ঐ কামাল উদ্দিনরে বুঝাইলাম। বেটা বুঝল না। নে এবার ফাঁসিতে ঝুইলা মান নিয়া বইসা থাক।
ইব্রাহিম হালকা হাসলো! হেসে বলল, — এবার এই মানি লোকদের দিকে একটু তাকাও। মান সম্মান নিয়ে তো আকাশে অনেক উড়ল। এবার একটু জমিনে নামার ব্যবস্থা কর তো জামিল। মানের কাঁচের দেয়ালে ফুলের টোকা না, একেবারে গুড়ো গুড়ো হওয়া চাই।
চলবে……