#বিষাদ_বৃক্ষ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ৩১
গাঁও গ্রামে পুলিশ খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। শুধু যে ভয়ংকর তা না, মুখরোচক ও। তাই তো পুলিশের সাথে সাথে এলাকার মানুষও অলি আবসারের বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়ল।
আজাদ স্বাভাবিক ভাবেই উঠে দাঁড়ালো। রুম থেকে বের হবে তখনি আনতারা আজাদের শার্ট টেনে ধরল। তার মুখে ভয়, চোখের পানি গাল গড়িয়ে পড়ছে। আজাদ হাসলো! আঙুলের ডগায় আনতারার চোখের পানি নিয়ে বলল, — জনম আমার বিবশ হলো, এই এক বিন্দুর তৃষ্ণায়।
আনতারার হাত আপনা আপনিই আজাদের শার্ট থেকে ছুটে গেল। আজাদ আবারো হাসলো। বেরুতে বেরুতে বলল, — আজাদের তারা বেগম আপনি। এতো অল্পতে অবাক হলে চলবে? শক্ত হন মহারাণী। পুরো আজদকে সামলাতে হবে আপনার।
আনতারা স্তব্ধ হয়েই দাঁড়িয়ে রইল। আজাদ পুলিশের সাথে গেলে নির্বিকার ভাবে। সে বাড়ির কারো দিকেই তাঁকালো না। শুধু উঠান পেরিয়ে যাবার আগে আরেকবার আনতারা দিকে তাকালো।
আনতারার বিস্ময় এখনো কাঁটেনি। তার চোখের সামনে ভাসতে লাগলো টুকুরো টুকরো কয়েকটা কাগজ। স্কুল থেকে বাসায় ফিরলেই সে ব্যাগের উপরের পকেটে পেতো। কোথা থেকে আসতো কে জানে। সেখানে লেখা থাকতো এই রকম একেকটা লাইন। বেশি ভাগের অর্থই তার মাথার উপর দিয়ে যেত।
সে চোখে মুখে বিস্ময় নিয়েই দাঁড়িয়ে রইল। তার ধ্যান ভাঙলো মুর্শিদার চিৎকারে।
মুর্শিদার যা মুখে আসছে আনতারাকে তাই বলছে। এখন সব দোষ আনতারার। সে অলক্ষী, অপয়া আরো কত কিছু। তার সংসার তো শেষ করছেই এখন তার ছেলেরে ধরেছে।
আসাদ তার মাকে টেনে ভেতরে নিতে চাইলো। শবনম আড়াল করল আনতারাকে। তার চোখে পানি। পানি নিয়েই, আবসারের রুমের দিকে তাঁকালো। এতো কিছু হচ্ছে দাদা ভাই আসে না কেন?
মুর্শিদা ঠেলে আসাদকে সরালো। আজ যেন তার গায়ে দানবের শক্তি। কথার বানেই সে আনতারাকে শেষ করবে। তার সাথে যেন গ্রামের মানুষও সুযোগ পেয়ে গেল। তাদেরও মুখ ছুটলো। এক এক করে সব বলতে লাগলো।
আনতারা স্তব্ধ হয়ে এক এক করে প্রত্যেক মানুষের মুখের কথা শুনলো। শুনলো মুর্শিদাও। এতো কিছু তো সে জানতো না। সে অবাক হয়ে আহমাদের দিকে তাঁকালো। আহমাদ শুধু তাঁকিয়ে বলল, — এসব সত্য না মুর্শিদা।
— তাহলে সবাই মিথ্যা বলছে?
— হ্যাঁ।
মুর্শিদা দাঁত চিবিয়ে বলল — তাহলে সত্য কে বলছে শুধু তোমার সত্যবতী বাবা?
আহমাদ তার বাবার মতোই শান্ত, নরম, কোমল প্রকৃতির। মুর্শিদা সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেছে বলে মনে পরে না। তবে আজ কন্ঠে রাগ নিয়ে বলল, — আমার বাবার ব্যাপারে কথা চিন্তা ভাবনা করে বলবে মুর্শিদা।
মুর্শিদা চেঁচিয়ে উঠল। চেঁচিয়ে বলল, — বললে কি করবা ? বলো কি করবা ? তালাক দিবা? দাও। এক ভাই তো নাক কাটাইয়া মুখ লুকাইছে। তুমি আবার বাদ যাইব্যা ক্যা? এক্ষুণি দাও।
আহমাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল! ফেলে বলল, — তোমার এখন হিতাহিত জ্ঞান নেই মুর্শিদা। যাও বিশ্রাম করো।
মুর্শিদা আগের মতোই চেঁচিয়ে বলল, — আমার মেয়ে মরার মতো। ছেলেরে পুলিশে নিয়া গেছে। আর কি বাকি আছে আমার জীবনে। আর কতো হিতাহিত জ্ঞান থাকবো? কন? আর কত থাকবো?
— যে যা করেছে তার ফল এগুলো। এখানে আনতারার কোন দোষ নেই। আমি আছি, আব্বা আছে। যাও বিথী কাছে যাও। বিয়ে ভাঙলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না। আর যে বাড়ির মানুষ এমন অবস্থায় একটা মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারে। সেই বাড়িতে বিয়ে না হয়েই ভালো হয়েছে। টাকা পয়সা না, এর পরের বার আমি মানুষ দেখে আমার মেয়ের জন্য বিয়ে ঠিক করব। যেমন করেন আমার আব্বা। আর করেন বলেই তার কোন সিন্ধান্ত ভুল হয় না । তাই যা হচ্ছে এখানে আনতারার না বরং তোমার দোষই বেশি। তাই নিজের দোষ পরের ঘাড়ে ফেলা বন্ধ কর মুর্শিদা।
মুর্শিদা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। তার দোষ বেশি? তাঁর জন্য তার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়েছে। সে আগুন চোখে আনতারার দিকে তাঁকালো। আনতারার অবশ্য দিন দুনিয়ার কোন হুঁশ নেই। তার কানে একটা কথাই বাঁজচ্ছে, — এই মেয়ের শরীরে বিষাক্ত রক্ত। এই রক্তের কোন শেকড় নেই।
শুধু হুঁশ জ্ঞান যে আনতারার নেই তা না। বিথীরও নেই। সে রুমে বসে সবই শুনলো। তার মনে হলো, এই যে এতো এতো ঝামেলা। এর সব কিছু জন্য সে’ই দায়ী। সে যদি না থাকে তাহলে ঝামেলাও থাকবে না। সে চোখ উঁচু করে ফ্যানের দিকে তাঁকালো। ইমনিতেও তার জীবনে আর কিছু হওয়ার নেই। বসে বসে বাবা – মায়ের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে লাভ কি?
ইব্রাহিম মাত্রই শোয়ার আয়োজন করছিল। তখনি হন্তদন্ত হয়ে জামিল এলো। ঢোক গিলে বলল, — গরবর হয়ে গেছে ভাইজান। রাফিয়া গলায় ফাঁস নিছে।
ইব্রাহিমের কপালে কয়েকটা ভাঁজ পড়ল। ভ্রু কুঁচকে বলল,– তাকে না তুমি শহরে পৌঁছাতে গেলে?
— গিয়েই তো ছিলাম ভাই। এই ছুঁড়ি কইলো। তার নাকি হাসপাতালে কি কি দরকারি জিনিস আছে। দু- মিনিটের কাম। তাই গেল। আর খবর নাই। এদিকে আমি দাঁড়ায়া আছি তো আছি। কিছুক্ষণ পরেই হুড়তুল পড়ে গেল। এতো তাড়াতাড়ি পুলিশও আইলো কোথা থেকে কে জানে। কি হইলো কিছুই তো বুঝলাম না।
ইব্রাহিম দাঁতে দাঁত পিষলো। রাফিয়াকে তার আরো প্রয়োজন ছিল। বিয়ে ছেলেখেলা না। একটু সন্দেহ ঢুকিয়ে শেষ করে ফেলবে। তার তো আরো পরিকল্পনা ছিল।
সে দাঁতে দাঁত পিষেই বলল, — এটা আত্মহত্যা না গাধা।
— জানি তো ভাইজান। কোন ছুঁড়ি হাসতে হাসতে নাচতে নাচতে আত্মহত্যা করতে যাইব।
— আজাদ! আজাদ কোথায়?
— এই দিকে তো আরেক কাহিনী। হেতেরে পুলিশ ধইরা নিছে। ওই মাইয়া নাকি চিঠি লেইখা গেছে।
ইব্রাহিম কপালে হাত রেখে বসলো। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে শান্ত ভাবে বলল, — আজাদের ব্যাপারে আমি খোঁজ লাগাতে বলেছিলাম।
— লাগাইছি তো ভাই। কোন ডান বাম নাই। একেবারে ফকফকা সাদা কাগজ। আমার তো মনে হয় সব ঐ বুইড়ার কাম।
ইব্রাহিম কঠিন চোখে তাঁকালো। জামিল সাথে সাথে জ্বিভ কাটলো। উপরে জ্বিভ কাটলেও মনে মনে বিরক্ত হলো। ঢং দেখে আর বাঁচি না। তলে তলে তল কেটে ফালাফালা করে ফেলতেছে। তাকে আবার অসম্মান করে কিছু বলা যাবে না । কতো রঙ্গ যে দেখা লাগবো।
— আমি আবসার ভাইজানকে চিনি। তিনি কখনো অন্যায়ের দিকে যাবে না। যাকে চিনি না, সেটা হলো আজাদ। আমি এই গ্রাম থেকে বের হয়েছি অনেক আগে জামিল। এর পর কে কতটুকু বদলেছে আমারটা যেমন এই গ্রামের কেউ জানে না। আমিও এই গ্রামেরটা জানি না। ইকবালকে ডাকো।
ইকবাল এলো বিরক্ত মুখে। তার ভাইয়ের কোন কাজই আজকাল তার পছন্দ হচ্ছে না। সে বিরক্ত মুখেই বলল, — আবসার ভাইজান যেমন, তার পুরো হুদগুষ্টিও তেমন।
ইব্রাহিম বিরক্ত মুখে বলল, — তাহলে আজমল কি আকাশ থেকে টপকেছে?
— ঐটা কুলাঙ্গার।
— তো এই রকম কুলাঙ্গার যে আরো নেই সেই গ্যারান্টি কি?
— আমি জানি না। সেই ভাবে সেরকম কিছু দেখিনি।
ইব্রাহিমের ইচ্ছে করল ইকবালকে ঠাঁটিয়ে একটা দিতে। কে বলবে এই গাধায় চেয়ারম্যান। সে তার রাগ দমাতে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বসল। বড় একটা শ্বাস ফেলে বলল, — মানুষ মানুষই হয় ইকবাল। তাদের দোষ থাকবে, ভুল থাকবে, থাকবে ত্রুটিও। আর যার কিছুই থাকবে না। মানুষের পক্ষে কখনো ফেরেশতা হওয়া সম্ভব না। তবে শয়তান। সেটা সে অনায়াসেই হতে পারে। আর একমাত্র শয়তানদেরই ডান বাম থাকে না । সবাই তাদের দেখে একেবারে ফকফকা। আসলে এটা কেউ দেখেই না। সবাইকে এমনটা দেখানো হয়।
— জামিল…
— জ্বি ভাইজান।
— এতো ঘাঘু মাল হয়ে তুমিও সবার মতো দেখেছো ফকফকা। তাহলে বুঝতে পারছো সে কতটা ঘাঘু। সে অনায়াসেই তোমার সামনে পর্দা ফেলেছে। সেই পর্দায় উপরে ভর দিয়ে আমি গাধার মতো চাল চেলেছি। এখন ধপাস করে পড়ার জন্য প্রস্তুত হও।
অলি আবসারের কানে সবই এসেছে। তবে সে নড়লো না। রমিজ পাশে বসে বলল, — এসব কি হইতেছে দাদাভাই?
অলি আবসারের দৃষ্টি ছিল বাহিরে। সে চোখ ফিরিয়ে বলল, — পাপ করতে করতে মানুষ ভুলে যায়, সে খুবই সাধারণ মানুষ। তার ক্ষমতা খুবই নগন্য। তখন উপরওয়ালাই তাকে আবার বোঝাতে সব ব্যবস্থা করেন। সেই ব্যবস্থা হয় ঝড়ের তান্ডবের মতো। সবকিছু লন্ডভন্ড করে একেবারে শান্ত হয়। এখন সেই লন্ডভন্ড চলছে রমিজ।
— ইব্রাহিম ভাইয়ের লোক আমাকে আটকে রেখেছিল।
আবসার হালকা হাসলো। হেসে বলল, — আলমারিতে আমার কাঠের বাক্সটা আনো।
রমিজ উঠে গিয়ে আনলো। এই রুমের প্রতিটি কোণা তার পরিচিত। ছোট থেকে বড় হলোই এই রুমে ঘুরতে ঘুরতে। সে এনে আবসারের সামনে রাখলো।
আবসার কাঠের বাক্স থেকে দু- টো কাগজ বের করল। করে রমিজের দিকে বাড়িয়ে দিল।
রমিজ নিলো স্বাভাবিক ভাবে। অলি আবসার তার সব কাজ তাকে দিয়েই করায়। তাই ভাবলো হয়ত কিছু করতে হবে। সে নিয়েই ভাজ খুললো। খুলতেই কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইল। তারপর আস্তে করে ঢোক গিলল।
দুটো চিঠি। একই ব্যক্তির। একই হাতের লেখা। তবে বক্তব্য ভিন্ন। চিঠিটা ছোট ভাবির বাবার। এই দু- টো চিঠির একটা সে নিজেই খাইরুল চাচীর ভাইয়ের কাছ থেকে এনেছে। বাকিটা?
— পাইক, পেয়াদা ছাড়া রাজা হওয়া যায় না। আমার আজাদের পেয়াদা কে?
রমিজ উত্তর দিল না। আবসার আবারো হাসলো। হেসে বলল, — আজকাল ঠিকঠাক চোখে দেখি নারে রমিজ। দ্বিতীয় চিঠিটা একটু পড়তো।
রমিজ আবারো ঢোক গিললো। গিলে জড়তা নিয়ে অস্ফুট ভাবে পড়তে শুরু করল।
শ্রদ্ধেও অলি আবসার,
আপনাকে আমি কি বলে সম্বোধন করব জানি না। সেভাবে তো সম্বোধন করার কখনো সুযোগ পাইনি। অবশ্য সেই সুযোগ আমি নিজেকে নিজেই দেইনি। তবে আমি এইটুকু জানি, আপনি আমার মাথার উপরে বটগাছের মতো। যেই বটগাছ আমি চাই আর না চাই, আমার যে কোন প্রয়োজনে আপনি অবশ্যই আপনার স্নেহের হাত আমা মাথায় রাখবেন। যে হাত আমি একদিন নিজের ইচ্ছায় ছেড়ে চলে এসেছিলাম। এখন আমার সেই হাতটুকু আবার প্রয়োজন। উঁহু নিজের জন্য না। আমার মেয়ের জন্য। আমার মেয়ের বড়ই বিপদ। আমি জানি না তাদের উদ্দেশ্য কি? তবে আমার মেয়ের পেছনে তারা পড়েছে। আমাকে মরন ব্যাধি পেয়েছে। অবস্থা খুবই সংকটপূর্ণ। আমি ছাড়া আর আমার মেয়ের এই দুনিয়ায় কেউ নেই। তাই আপনার শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু ঐ যে বলেনা শেয়ালের মুখ থেকে বাঁচানোর জন্য বাঘের গোহায় লুকানো। আপনার শরণাপন্ন হওয়া আমার কাছে সেই রকম। তবে আমি উপায়হীন। তাই আপনার অবগতির জন্য ছোট্ট একটা গল্প বলছি। যেই গল্পের অংশ তো আপনি তবে সত্যটা আপনি জানেন না।
আমার মা আনজুম আরা ওরফে রুপা তালুকদার। তার স্বামী কবির তলুকদার। যার সাথে আপনার পরিচয় হয়েছিল যুদ্ধের ময়দানে। সেই যুদ্ধের সময়ই কবির তালুকদার আশ্রয় হিসেবে আপনাদের তাদের বাড়িতে এনেছিলেন। সেই আনাই তার জীবনে কাল ছিল। কেননা আপনার হাত ধরেই কবির তালুকদারের বাড়িতে পা রেখেছিল ইব্রাহিম। আর তখনি তার নজর পরে আমার মা রুপার দিকে।
ভয়াল এক রাতে কবির তালুকদার মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগে আপনার হাত ধরে আকুতি করে বলেছিলেন, — আমার পরিবারকে দেখে রাখবেন ভাইজান। আমি ছাড়া তাদের কেউ নেই।
ভয়াল এক অন্ধকার রাত। দু- পক্ষের গুলি বর্ষণ। এই গুলিতে কবির তালুকদার মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন? কবির তালুকদার কার গুলিতে মারা গিয়েছিল? ইব্রাহিম! সে শুধু সুযোগ নিয়েছিল। আর সেই সুযোগে সে সফল। রুপাকে পাওয়ার একমাত্র বাঁধা কবির তালুকদার খতম।
তবে ভাগ্য মানুষের চেয়েও নির্মম। আপনাদের ফিরে আসতে আসতেই রুপাদের পুরিবারতো ভালোই পুরো গ্রাম তছনছ। আপনারা রুপাকে তো ভালোই তাদের পরিবারের কাউকেই খুঁজে পেলেন না।
ইব্রাহিম পাগল হয়ে গেল। এই পাগলামিতে সে কি তান্ডব করেছিল আপনি নিজের চোখেই দেখেছেন। আপনি ভেবেছেন সে দেশের জন্য করছে, আসলে গল্প ভিন্ন ছিল।
দেশ স্বাধীন হলো। কতো কতো যে মেয়েকে মুক্তিবাহিনীরা উদ্ধার করল। সে মেয়েদের ভিরে আপনারা একজনকে পেলেন। এমন অবস্থায় পেলেন, তাকে হয়ত না পেলেই বরং খুশি হতেন।
তার বেঁচে থাকার কিছুই আর অবশিষ্ট ছিল না। সে আপনার কাছে মৃত্যু ভিক্ষা চাইল। তবে আপনি তো আপনিই। আপনি তাকে দিলেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন, নতুন একটা পরিচয়, নতুন একটা জীবন।
সে সেই জীবনের স্বল্প সময়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু তার ভাগ্য তারতো অন্য ভাবনা। সেই মানিয়ে নেওয়া জীবনে আমার অস্তিত্ব জানান দিলো। তার সব মানিয়ে নেওয়ার শক্তি সেখাই সমাপ্তি হলো। আপনি পরম মমতায় আবার তার মাথায় হাত রাখলেন। শুধু কি তার মাথায় রাখলেন। রাখলেন জাহিদ নামের বিষাক্ত একটা অঙ্কুরের মাথায়। অবশ্য আপনার কাছে সে বিষাক্ত না। সে শুধু নিষ্পাপ একটা শিশু। আপনার চোখে তার কোন দোষ নেই। কিন্তু দুনিয়া! তাদের চোখে?
এক এক করে আঙুল উঠতে লাগলো। সে আঙুলের সামনে ঢাল হয়ে যেমন দাঁড়ালেন আপনি তেমনি আরেকজন। ইব্রাহিম।
রুপা, আমার মা যেমন আপনার কাছে মৃত্যু ভিক্ষা চেয়েছিল। তেমনি সে চাইলো রুপাকে। আমার মতো বিষাক্ত এক অঙ্কুর সহ। তার শুধু রুপা চাই। যে কোন বিনিময়ে, যে কোন মাধ্যমে।
চলব…….