#বুঝে_নাও_ভালোবাসি।
#ফাহমিদা_তানিশা
পর্ব ০৯
নির্ঝর শান্ত গলায় বললো:আমি আম্মু করেছে বলিনি।করিয়েছে বলেছি। আপনি বুঝতে পারছেন না।
নির্ঝরের কথায় আশরাফ চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে রুমানার দিকে তাকালো। ছেলেকে বললো: তুমি সব কথা খুলে বলো। এভাবে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কথা বললে বুঝবো কি করে?
নির্ঝর বাবার কথায় মায়ের দিকে তাকালো। গম্ভীর গলায় বললো: টাইলসে কেরোসিন তেল ঢেলেছে মিতা। তাহলে বলো, মিতার এতো সাহস কি করে হলো?সে আমাদের বাসায় এসে আমাদের বাড়ির বউকে মারতে চাই।কতো গভীর প্ল্যান থাকলে,কতো সাহস থাকলে এমন একটা কাজ করতে পারে সে।
ছেলের কথায় মিসেস রুমানা বেশ অবাক হলেন। তিনি বুঝতেই পারছেন না নির্ঝর এসব কি বলছে।মিতা এমন কাজ কেনো করলো?সে তো কিছুই জানতো না এসবের।
আশরাফ চৌধুরী মিসেস রুমানার দিকে তাকালেন।
শান্ত গলায় বললেন: নির্ঝরের কথা আমি বিশ্বাস করছি না। তুমি বলো কি হচ্ছে এসব?
মিসেস রুমানা আশরাফ চৌধুরীর দিকে বোকা ভঙ্গিতে তাকালেন।তিনি কি বলবেন বুঝতে পারছেন না।চুপ করে রইলেন। আশরাফ চৌধুরী আবারো প্রশ্ন করলেন: তুমি কেন চুপ করে আছো?কথা বলছো না কেনো? এখন চুপ করে থাকার সময় নয়।কথা বলো রুমানা।
রুমানা এবার মুখ খুললেন।আরওয়ার দিকে ইশারা করে বললেন:ও আমার মেয়ের মতো ছিল ছোট থেকেই। এখন আমার ছেলের বউ হয়েছে। মানে সম্পর্কটা আরো গভীর হয়েছে। আমি কেনো এমন একটা কাজ করতে যাবো?
আরওয়ার মা এবার মুখ খুললেন।নির্ঝরকে বললেল: নির্ঝর, তুমি বুঝে-শুনে কথা বলো। তোমার আম্মু কেনো এমন একটা কাজ করতে যাবে?
নির্ঝর হাসলো। শান্ত গলায় বললো: আপনি জানেন আমার আম্মু কি কি করতে পারেন?
আশরাফ চৌধুরী ছেলেকে থামিয়ে দিলেন। রাগী গলায় বললেন:নির্ঝর তুমি মিতার কাছে গিয়ে প্রশ্নগুলো করো। এখানে অযথা সময় নষ্ট করবে না।আর তোমার মাকেও ছোট করবে না।জাস্ট লিভ।
নির্ঝর বাবার দিকে এক পলক তাকিয়ে থাকলো। অসহায় মুখ করে বললো: জানতাম,আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। আমার আর কিছুই করার নেই। আমি এসব নিয়ে কথাও বলতে চাই না।যা করতে হবে তা আপনারা করেন।আরওয়া সুস্থ হলেই হলো আমার জন্য।
কথাটা বলে নির্ঝর আরওয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।আরওয়া নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে এখনো। নির্ঝরের শেষের কথাটা “আরওয়া সুস্থ হলেই হলো আমার জন্য” আরওয়ার কানে বারবার বাজছে। নির্ঝর তার জন্য এতো ভাবে? নির্ঝর কি এখনো তাকে ভালোবাসে?নাকি সে ভুল ভাবছে।আরওয়া কোনো উত্তর পায় না। নির্ঝরের যাওয়ার পানে শুধু তাকিয়ে থাকে।
আশরাফ চৌধুরী কি করবেন বুঝতে পারছেন না। অসহায় মুখ করে বোনকে বললেন: আচ্ছা এখন টেনশন করিস না। মেয়েটা আগে সুস্থ হয়ে বাসায় যাক। তারপর দেখা যাবে বাকিগুলো।
আরওয়ার মা আর কথা বাড়ালেন না। আকরামুল হক তখন থেকে চুপচাপ সব পরিস্থিতি দেখছেন। কোনো কথা বলছেন না তিনি।তিনি বুঝতেই পারছেন না কি বলতে হবে। আপাতত মেয়ে সুস্থ হোক এটাই তার চাওয়া।
আরওয়া হাসপাতালে আছে প্রায় একদিন হতে চললো । সাথে নির্ঝরের মা আর তিস্তা আছে এখন।আরওয়ার মা যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন।আর নির্ঝর বাইরে বসে আছে। একটু পর পর ভেতরে গিয়ে আরওয়াকে দেখে আসছে সে। নির্ঝর এখনো আরওয়ার সাথে সরাসরি কোনো কথা বলেনি। শুধু আড়চোখে বারবার দেখছে সে।আরওয়াও নির্ঝর দেখতে পায় না মতো করে নির্ঝরকে দেখছে।
সময় চলছে আপন গতিতে।মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা। এভাবে মাঝে কেটে গেলো আরো দুটো দিন।আরওয়া এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ। নির্ঝর সারাদিন আছে আরওয়ার সাথে।আর আরওয়া আর নির্ঝরের লুকোচুরি খেলা চলছে অনায়াসে।কেউ কাউকে দূর্বলতাটা বুঝতে দিচ্ছে না।
হাসপাতালে শুয়ে-বসে সময় কাটছে আরওয়ার। বারবার অসহায় লাগছে তার। এভাবে কি দিন কাটানো যায়? শুধু শুয়ে থাকা আর বসে থাকা।বোর হতে হতে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। শেষমেষ বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো হাসপাতালে আর থাকবে না।মাকে বললো: আম্মু,আর এখানে থাকতে ইচ্ছে করছে না। এখন তো আমি অনেকটা সুস্থ। প্লিজ এবার আমাকে বাসায় নিয়ে চলো। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
মেয়ের কথা শুনে আরওয়ার মা রাগী দৃষ্টিতে তাকালেন। গম্ভীর গলায় বললেন: খুব তো সুস্থ আপনি।দেখি একবার হাঁটুন তো আমার সামনে। যত্তোসব বাহানা।তোর বাড়িতে এমন কি কাজ আছে যে নেচে নেচে বাড়ি যেতে চাচ্ছিস। চুপচাপ শুয়ে থাক।সময় হলে আমি দেখবো।
_আর থাকতে ইচ্ছে করছে না তো। এভাবে কি সারাদিন কাটানো যায়?আমি সত্যি বোর হচ্ছি।
আরওয়ার মা এবার আরো রেগে গেলেন।জোর গলায় বললেন:তোর বোরিং লাগছে সেটা বুঝতে পারছি। তবে এটা তোর শাস্তি। দেখেশুনে হাঁটতে পারিস না বলেই এই শাস্তি দিচ্ছি তোকে। এভাবে অন্ধের মতো করে হাঁটলে একটু বিপদে পড়তে হয়। একটু শাস্তি পেতে হয়।তাই এটাই তোর শাস্তি।
আরওয়ার মা কথাগুলো বলছিল তখন নির্ঝর আসছে। কথাগুলো কিছুটা শুনতে পেয়েছে সে। কিন্তু বুঝতে পারছে না ঠিক কোন শাস্তির কথা বলছে আরওয়াকে। আড়চোখে একবার আরওয়ার দিকে তাকালো। তারপর আরওয়ার মাকে বললো:কি হয়েছে ফুফি? কোনো সমস্যা হয়েছে?
নির্ঝরের প্রশ্নে আরওয়া আর আরওয়ার মা চোখ তুলে তাকালো।আরওয়ার মা হেসে বললো:আর বলিস না।ওর হাসপাতালে থাকতে থাকতে বোরিং লাগছে।তাই বলছে বাসায় চলে যাবে।তাই বলছি ওর শাস্তি পাওয়া উচিত।
আরওয়ার মায়ের কথায় নির্ঝর আরওয়ার দিকে তাকালো।আরওয়া অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর একটু হেসে বললো:ফুফি, আমার মনে হয় কী,ও যেহেতু থাকতে চাচ্ছে না তাহলে বাসায় নিয়ে গেলে ভালো হবে। আপনি ওর সাথে থাকলে তো কোনো অসুবিধা নেই। তবু আপনি তো ভালো বুঝবেন। আমি জাস্ট বলছি আরকি।
আরওয়ার মাও ভেবে বললেন:দেখি কি করা যায়।
নির্ঝরের মা সকালের দিকে বাড়িতে গেছেন কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আসার জন্য। হাসপাতালে এখন তিস্তা,মারওয়া আর নির্ঝর আছে।আরওয়ার মা কিছুক্ষণ পর এসে আরওয়ার ফাইলটা নিয়ে গেছেন। তিনি সব রিপোর্ট চেক করে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিবেন এই ভেবে নিজের কেবিনে গেলেন। একটু পর সব রিপোর্ট আর ফাইলটা নিয়ে আরওয়ার কেবিনে আসলেন তিনি।নির্ঝরকে ডেকে বললেন:আর কিছুক্ষণ থাকতে হবে। আজকে রাতের দিকে আরেকবার চেকআপ করবো। তারপর ইন শা আল্লাহ শারীরিক অবস্থা ভালো হলে ডিসচার্জ করে দিবো।
নির্ঝর শান্ত গলায় “ওকে” বলে চেয়ারে বসে পড়লো।
তিস্তা তখন থেকে নির্ঝরকে আর আরওয়াকে দেখছে। বারবার খেয়াল করছে তারা দুজনে কথা বলছে না। তিস্তা মনে মনে ভাবলো তার কিছু একটা করতে হবে। দুজনকে কথা বলিয়ে দেওয়ার কাজটা সে নিজ দায়িত্বে করে নিবে। ধীর পায়ে গিয়ে নির্ঝরের পাশে বসলো তিস্তা। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো: ভাইয়া, এখন তো টেনশন মুক্ত আছো।তাই না।
নির্ঝর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। তিস্তা আবারো হেসে বললো: দেখো ভাইয়া,আরওয়ার নাকি এখানে বোরিং লাগছে। তোমার তো উচিত তার পাশে থাকা, তাকে সঙ্গ দেওয়া।
নির্ঝর এক পলক তিস্তার দিকে তাকালো। ভ্রু-কুঁচকে বললো:তোরা তো আছিস পাশে থাকার জন্য,সঙ্গ দেওয়ার জন্য। আমার কেন পাশে থাকতে হবে?
_আমরা আর তুমি কি সেইম? তুমি পাশে থাকলে আরওয়ার কত্তো ভালো লাগবে।আমরা থাকলে কি তার ভালো লাগবে? বলো?
নির্ঝর মুচকি হাসলো। শান্ত গলায় বললো:আমি এতো কিছু বুঝি না বইন।তুই থাক তাতেই হলো।
তিস্তা এবার নির্ঝরের হাত ধরে জোরাজুরি শুরু করে দিলো। বারবার বলছে:ভাইয়া,চলো আমার সাথে।
নির্ঝর তিস্তার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। রাগী দৃষ্টিতে একবার তিস্তার দিকে তাকালো। নির্ঝরের দৃষ্টিতে রাগ দেখে তিস্তা একটু ঢোক গিললো। মুখে একটা অস্পষ্ট হাসি ফুটিয়ে সে নির্ঝরকে বললো: এভাবে রাগ দেখাচ্ছো কেনো?আমি তো তোমাদের মধ্যে সেটিং করিয়ে দিতে চাচ্ছি।আসলে ভুলটা আমার।নিজ থেকে কাউকে সাহায্য করতে গেলে এমনভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়।
তিস্তার কথায় নির্ঝর হেসে দিলো। তারপর বললো: হেনস্থা কাকে বলে জানিস? আমি তোকে হেনস্থা করছি? এরকম একটা কথা কেউ বলে?
তিস্তা ঠোঁট উল্টিয়ে বললো: আমি এতো বুঝেশুনে কথা বলি না।মুখ দিয়ে যা আসে তাই বলি।
_তাইতো হাবলার মতো কথা বলছিস।
তিস্তা এবার চিল্লিয়ে আরওয়াকে বিচার দিতে গেলো।আরওয়ার কেবিনে গিয়ে বললো:দেখো, তোমার জামাই আমাকে হাবলা বলেছে। আমি তাকে নিজ থেকে সাহায্য করতে গিয়েছিলাম।তাই প্রতিদান স্বরূপ হাবলা বলেছে।
আরওয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। চুপচাপ বসে আছে সে।তিস্তাও আরওয়ার দিকে তাকিয়ে বসে পড়লো। বুঝতে পারলো তার প্ল্যান বৃথা।তাই হাল ছেড়ে দিলো সে।
নির্ঝর একটু পর তিস্তাকে ডাক দিলো। ইশারায় একবার তার কাছে যেতে বললো। তিস্তাও নির্ঝরের কথামতো নির্ঝরের দিকে গেলো।
চলবে…..