#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৮)
থার্ড ইয়ার বোর্ড পরিক্ষা। তানভীর একের পর এক খোঁজ খবর নিয়েই চলছে। লাবিবা কখন পড়তে বসে? কতটুকু পড়ে সবটাই তার জানা চাই। সাবিনাও মোটেও বিরক্ত হচ্ছে না। বরং তার ভালো লাগছে ছেলেটা এতো খোঁজ খবর রাখে মেয়েটার। মন থেকে তাদের আগামী জীবনের জন্য দোয়া করে। সন্তান সুখে আছে স্বামীর সাথে এর থেকে বড় একটা মায়ের কাছে কিছু হতে পারে না। মেয়েকে নিয়ে প্রত্যেকটা মায়ের একটা সপ্ন থাকে। সাবিনার ও আছে। রাজপুত্র এসেছে তার মেয়ের জন্যে। মেয়েকে নিয়ে এতো ভাবে। কি আদব জানা ভদ্র তার মেয়ে জামাই। আম্মু আম্মু বলে যখন ডাকে তার না হওয়া ছেলের জন্য আফসোস টুকু সেখানেই সমাপ্তি হয়। যেনো সে সন্তান পেয়েছে আরেকজন। ছেলে মেয়ের ভাব দেখেও তার বুক শান্তিতে ভরে যায়। কিন্তু ইদানিং লাবিবাটা বেশ রাফ আচরণ করে সময় সময়। তোতাপাখির মতো মেয়েটা কথা কম বলে। যার জন্য কেঁদে কেটে একসার হতো সেই জামাইবাবার ফোনটাও রিসিভ করেনা। কথা বললে সময় নষ্ট হয়। পরিক্ষার জন্য সব বাদ দিয়ে বই হাতে নিয়ে বসে থাকে। চোখে মুখে খেলা করে দুশ্চিন্তা। পরিক্ষা তো আজ নতুন নয়। আরো পরিক্ষা দিয়েছে জীবনে। কিন্তু এতোটা দুশ্চিতা আর একগুয়ে হতে কখনোই দেখেনি সাবিনা। কি চলে লাবিবার মনে? বিষয়টা নিয়ে ইসমাইল এর সাথেও আলোচনা করেছে। ইসমাইল পাত্তা দেয়নি।সব দিক ভেবে সাবিনা নিজে নিজেই একটা উত্তর বের করেছে। উত্তরটা অনেকটা গ্ৰহণীয় ও মনে হয়েছে তার কাছে। লাবিবার এমন আচরণের কারণ তানভীরের এবাড়িতে না আসা। সেটা নিয়েই অভিমান। তানভীর মাস কয়েক হলো এ বাড়িতে মাঝে মাঝে এলেও থাকছে না। গত মাস থেকে তো তার দেখাই পাওয়া যায়নি। বিয়ের পর কোন মেয়েটা থাকবে এতো দিন স্বামী ছাড়া? শখ আহ্লাদ চাহিদা সবারই আছে। তানভীর কি পারেনা আগের মতো এসে মেয়েটাকে সময় দিতে? শ্বশুর বাড়িতে আসতে নাকি লজ্জা পায়। পাছে লোকের কথা ধরলে চলবে? তার মেয়ে যে অভিমানে তিক্ততা অনুভব করছে সেটা কিছুনা? বড় একটা বোন থাকলে নয় এসব খেয়াল রাখতো। নেই তো। মা হয়েছে বলে কি আর খেয়াল রাখতে হবে না? তানভীর ফোন করলে কথাটা পেতে ই বসে সাবিনা।
‘লাবি মার পরিক্ষা চলছে দূর থেকে খোঁজ না নিয়ে তুমি কি একটু এসে দেখিয়ে দিতে পারো না? তোমার মা নাহয় একদিন নাইবা বাড়িতে পেলো তোমায়, আমি কি মা না? দাবী তো আমারো আছে মেয়ে জামাইকে আদর যত্ন করার। তোমার মায়ের বেশী বৈ কম পড়বে না। ‘
তানভীর হালকা হাসে। মাথা নাড়ায়।
‘ না না। কি বলেন আম্মু? আসলে কাজের চাপ তো অনেক। তাই যেতে পারিনা।’
‘আমাকে বোকা পেও না। এখানে থেকে কি কলেজে যাতায়াত করা যায় না? ‘
‘তা তো যায়। কিন্তু আম্মু এতো আদর পেলে আমিতো আর সেখান থেকে ফিরতে চাইবো না। ছি ছি! লোকে কি বলবে? ছেচড়া জামাই শ্বশুরবাড়ি ছাড়তেই চায়না। ‘
তানভীরের রসিকতায় সাবিনার মন গললো না। উপর দিয়ে বললো,
‘লোকের কথায় কি আসে যায়? তুমি আর অন্য জামাইরা কি এক হলো? এই বাড়ি তো তোমারই। তুমি কেনো আসবেনা? তুমি আসো বাবা। তুমি এলে আমার মেয়েটা প্রফুল্ল থাকে। ওর পরিক্ষাটাও ভালো হবে। ‘
ড্রয়িংরুমে আসতে গিয়ে দরজার বাইরে থেকে লাবিবা তার মায়ের কথপোকথন শুনতে পায়। ফোন নামিয়ে নিলে দরজার বাইরে থেকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে।
‘ কাকে আসতে বলছো আম্মু?’
‘ কাকে আবার জামাইকে। ‘
‘ কেনো?’
‘ দিনে কয়েকবার ফোন করে তোর কথা জানতে চায়। তাই বললাম নিজে আসুক। তোকে গাইড করুক। ‘
‘ আমাকে গাইড করার জন্য আমার টিচার আছে আম্মু। মাস গেলে হাজার দশেক করে টাকা দেওয়া হয়। তার উপর কোনো টিচারের প্রয়োজন নেই। ‘
‘ এভাবে কথা বলছিস কেনো? টাকা তো জামাই ই দেয়। ‘
‘ টাকা দিতে না করবে। আর যেনো না খরচ করে আমার জন্য। টাকা দিয়েই যদি সব দায়িত্ব পালন হয়ে যায় মনে করে তাহলে তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার আব্বুর যথেষ্ট আছে। আমি অনেক আগে থেকেই পড়ে আসছি। ‘
‘ মাথা গরম করে না মা। তোর কথা ভেবেই আমি বলেছি জামাইকে আসতে। সেও তো বিজি। তোকে বুঝতে হবে। ‘
‘ হ্যা। তাইতো। বিজি। অন্য মেয়েকে নিয়ে। ‘
লাস্টের কথাটা আস্তেই বলে লাবিবা। তার চোখ থেকে দু ফোটা অনায়াসেই পড়ে। এতেই সাবিনার মনে অস্থিরতা বয়ে যায়। জানতে চায়,
‘ কি বললে লাবি মা? ‘
লাবিবা চোখ মুছে। উত্তর দেয়না। বিছানায় পড়ে থাকা ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে যায়। তানভীরের কাছে জানতে চায়,
‘ আপনি কেনো আমার পড়াশোনার এতো খুঁজ খবর রাখছেন? আপনি যে শীট গুলো পাঠিয়েছেন বিশ্বাস করুন আমি ছুঁয়েও দেখিনি। দেখবোও না। ‘
‘ কি প্রব্লেম তোমার? ‘
‘ আমার কোনো প্রব্লেম নেই। আপনি কেনো আমার প্রতি এতো জোড় দিচ্ছেন? ‘
‘ তোমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে লাবিবা। তোমার রেজাল্ট আরো ভালো করতে হবে নয়তো আমার মান সম্মান কিছু থাকবেনা। তোমার আব্বুকেই বা কি জবাব দেবো? যদি উনি বলেন আমি তোমার পড়াশোনার দিকে দৃষ্টি রাখিনি? মুখ থাকবে আমার? ‘
‘ ওহ। সেজন্যই? ‘
‘ আমি সর্বদা তোমার ভালো চাই লাবিবা। তোমার সপ্নগুলো পূরণ হোক। ‘
‘ ধন্যবাদ। ‘
‘ আসছি।’
‘ আমার একটা রিকুয়েস্ট রাখবেন? যেহেতু আপনি আমার সর্বদা ভালো চান। ‘
‘ কি রিকোয়েস্ট? ‘
‘ আপনি দয়া করে আমার বাড়িতে আসবেন না। আপনি না এলে আমি কমফোর্ট ফিল করি। ‘
‘ কেনো? ফর গড সেক এটা বলোনা আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করি। অর তোমার দিকে তাকালে তোমার অস্বস্তি হয়। এরকম কেনো করছো লাবিবা? আমি মোটেই তোমার উপর কোনো অধিকার খাটাতে যাইনা। ‘
‘ ধন্যবাদ। ‘
‘ হুয়াটস রং উইথ ইউ? ‘
‘ য়্যু ডোন্ট লাভ মি। ‘
ফোন রেখে লাবিবা গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকে। তানভীর খান ওকে লাভ করেনা। ফ্লোরাকে লাভ করে। সেদিন উত্তেজনা বশত দ্বিতীয় বার দেখাতেই লাবিবা ফ্লোরার দিকে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। যা হজম করা ফ্লোরার জন্য মোটেই অস্বাভাবিক নয়। একটু হয়তো চমকে গেছে। তবে স্মার্টলি তার এনস্যার দিয়েছে। ‘আপনাদের মধ্যে খুব ভালো একটা রিলেশন ছিলো। আমি যতটুকু শুনেছি সেজন্যই আপনার ডিভোর্স হয়েছে। কথাটা কি সত্যি?’
ফ্লোরা স্বাচ্ছন্দে জবাব দিয়েছে, ‘ সত্যি ‘।
‘ আপনি স্যার কে ভালোবাসেন?’
‘ উমম। হ্যা। ভালোবাসি। ‘
‘ উনিও কি আপনাকে ভালোবাসে?’
‘ আমার তো তাই মনে হয়। হি স্টিল লাভ মি। আমাকে আগের মতোই ইমপর্টেন্স দেয়। এড়িয়ে যেতে চেয়েও পারেনা। কেনো তোমার মনে হয় না? ‘
‘ আপনি কি জানেন না আমি স্যারের ওয়াইফ? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আপনি কেনো আমাদের মাঝে আসতে চাইছেন? ‘
‘ আমি আসতে চাইছি নাকি তুমি এসেছো? আমরা তো ভালোই ছিলাম লাবিবা। তুমি কেনো এলে আমাদের মাঝে? প্লিজ এটা বলোনা যে তানভীর তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। সামনাসামনি একটা মেয়ে ঘুরঘুর করলে হাজার চরিত্রবান ছেলে হলেও চোখ পড়বে। তোমার উপরে ও চোখ পড়তে পারে। কিন্তু আমার তো তা মনেই হয়না। তোমাকে দেখেই আমি হলফ করে বলতে পারি তুমি এখনো আনটাচড। বিবাহিত মেয়ের কোনো চিহ্ন ই তোমার মাঝে নেই। তোমাদের দেখলেও বোঝা যায়না তোমরা একটা রিলেশনে স্টে করছো। নামে মাত্র বিবাহিত তোমরা । তোমাদের মধ্যে কোনো কানেকশন ই নেই। ‘
‘ হতে কতক্ষন? আপনি আমাদের মাঝখান থেকে সরে দাঁড়ান। তানভীর খান শুধু আমার। ‘
‘ হী ডোন্ট লাভ য়্যু লাবিবা। ‘
‘ বাট আই লাভ হিম। হী মাই হার্ট মাই এভরিথিং। ‘
‘ আফসোস হচ্ছে তোমার জন্য। তানভীর তোমাকে নিয়ে ভাবেই না। টাকা উড়ানোর জায়গা নেই তাই উড়ায়। তোমার বাবা মাকে তো কিছু একটা বোঝাতে হবে।বোকার রাজ্যে বাস করোনা। তার থেকে একটা বুদ্ধি দিই। যে ছেলেটা তোমার জন্য পাগলামী করে_ কি যেনো নাম! তার সাথে তোমার আলাপ ও ছিলো। তার সাথে জীবন শুরু করো। তানভীর কে ছেড়ে দাও। ‘
একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরে আসে লাবিবা। তানভীরের অগ্ৰাহ্য তাকে পয়েন্টে পয়েন্টে ধরিয়ে দেয় ভবিষ্যত তাকে তানভীর ছাড়া কাটাতে হবে। তানভীর শুধু মাত্র একটা সাপোর্ট। নেহাত ভালো মানুষ বলেই তার এতো বন্ধুসুলভ আচরণ। তানভীরের চোখে লাবিবা সেই দৃষ্টি কখনোই পায়নি যা একজন স্ত্রী তার স্বামীর চোখে দেখে। কখনোই এতোটা আকুলতা পায়নি যতটা একজন স্ত্রী তার স্বামী থেকে পায়। দু একবার যা ঘটেছে তা এক্সিডেন্ট বলেই বিবেচনা করে লাবিবা। কাছাকাছি থাকলে এরকম হতেই পারে। তবুও পরম ধৈর্য্য শীল পুরুষের পরিচয় দিয়েছে তানভীর। একবারো আসেনি লাবিবার বুকে। ভালোবেসে নেয়নি বুকে টেনে। দূরে দূরে থেকেছে। বার বার বুঝিয়েছে তাকে স্নেহ করে। তার জন্য ভালোবাসা নেই। শুধু কাছে আসা কখনোই ভালোবাসা হতে পারে না। হাতে হাত রেখে পাশে থাকাই সত্যিকারের ভালোবাসা। কই তানভীর তো তার পাশে থাকে না। কলেজে পা না রাখলে তো তার মুখ ও দর্শন করা হতো না। ফোন করে দেখায় সে দায়িত্ব বান। লোক দেখানো দায়িত্ব পালন করে। লাগবেনা তার এসব শো অফ করা। চলে যাক তার জীবন থেকে। যে তাকে ভালোবাসে না তাকে জীবনে আর লাগবেনা।
চলবে___
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(২৯)
পরিক্ষা হল থেকে বেরিয়ে লাবিবা আজ দুজন মানুষ কে একসাথে পেলো।ইসমাইলের ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলছে তানভীর। লাবিবাকে ইসমাইল ই নিয়ে আসে নিয়ে যায়। টানা চার ঘন্টা একটানা এখানেই অপেক্ষা করে। বাবারা কখনো বিরক্ত হয়না । তারা অপেক্ষা করতে জানে তাদের সন্তানের সর্বোচ্চ জন্য। অনেকের দৃষ্টি এদিকে। লাবিবা এগিয়ে যেতে যেতে খইরুল ইসলাম ও এসে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যেকের মুখটা থমথমে। কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে লাবিবা জানতে পারলো না। লাবিবা যেতেই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। খইরুল ইসলাম হাসি মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘ আমার মামনির এক্সাম কেমন হলো?’ লাবিবা ঝটপট উত্তর দিতে পারলো না। সময় নিয়ে শুকনো হাসলো। ধীরে ধীরে আওডালো,’ ভালোই’
অতি চঞ্চল লাবিবার ভালোই কথাটা খইরুল ইসলাম না বুঝলেও ইসমাইল এবং তানভীর ঠিকই বুঝে গেলো। পরিক্ষা ভালো হয়নি। ভালো হলে এতোক্ষনে হাসতে হাসতে কথা বলতো। পারলে লাফাতোও। খইরুল ইসলাম বললেন, ‘ ফাস্ট ক্লাস পেতে হবে। ওকে? হা হা।’
লাবিবা মাথা ঝুমালো। উনি চলে যেতেই তানভীর গম্ভীর মুখে লাবিবার থেকে প্রশ্ন চাইলো। গাড়ির কাছে সরে দাঁড়ালো। প্রশ্নের টিক মার্ক গুলো দেখলো। হতাশ হলো। তবুও জিজ্ঞেস করলো,
‘ গ’ বিভাগের কয়টা দিয়েছো? একটাতে টিক দেওয়া কেনো? আর কোনটা দিয়েছো দেখাও। ‘
‘ দেয়নি তো। ‘
‘ লাবিবা এখানেই পঞ্চাশ নাম্বার। আর কোনটা দিয়েছো? ‘
‘ একটাই। ‘
‘ আচ্ছা ‘ খ ‘ বিভাগের কয়টা দিয়েছো? তিনটা টিক মার্ক আছে। ‘
‘ তিনটাই।’
‘ আমার সাথে মজা করোনা প্লিজ। প্রত্যেকটা পরিক্ষা এরকমি দিয়েছো? তার পরেও বলো ভালোই! ‘
‘ আরো ভালো চান? যথেষ্ট নয়? আমার তো সব ভেসে গেলো। পরিক্ষা ভালো হলেই কি না হলেই কি?’
‘ কি ভেসে গেলো? লেখাপড়ার প্রতি এতো উদাস কেনো তুমি? তুমি তো এমন ছিলে না। লাবিবা কি হয়েছে তোমার পড়া শোনা করছো না কেনো? প্লিজ আমাকে বলো আমি তোমাকে হেল্প করবো। ‘
‘ আমি প্রেমে পড়েছি। মারাত্মক ভাবে প্রেমে পড়েছি। ব্যথাও পেয়েছি। ঘা হয়ে গেছে। ‘
‘ বাজে বকা বন্ধ করো। প্লিজ সিরিয়াস হও। তোমার পড়াশোনার জন্য আমি ঠিক কতটা সেক্রিফাইস করেছি ইভেন করে যাচ্ছি তুমি কিছুটা হলেও জানো। আর একটা বছর আছে। প্লিজ এই এক কে দুই বানিয়ে দিও না। আমি এতো ভোগতে চাইনা। মুক্তি চাই। আর পাঁচ জনের মতো নরমাল একটা লাইফ চাই। ‘
‘ চাকরী করে আমি কি আপানাকে মাসে মাসে টাকা দিবো? কে করতে বলেছে সেক্রিফাইস ? আমি বলেছিলাম? ডেকে এনেছিলাম আপনাকে যে আমাকে বিয়ে করুন । আমাকে আমার মতো থাকতে দিন? নাকি আপনি আমাকে মেয়েই মনে করেন না? তৃতীয় শ্রেণীর কেউ মনে করেন যে আমি আপনাদের মতো স্বাভাবিক জীবন চাইলেও পাবোনা। ‘
‘ কি চাও তুমি? ‘
‘ চাইনা। লাব্বুর আর কিছুই লাগবেনা। ‘
জেদ দেখিয়ে বাবার হাত ধরে চলে যায় লাবিবা। তানভীর বুঝে পায়না কেনো জেদ করছে এতোটা। কি হয়েছে ওর?
পরবর্তী পরিক্ষার একদিন আগে তানভীর এসে দাঁড়ানো আঙিনায়। সাবিনার মুখ থেকে হাসি সরছে না। তানভীর অভিযোগ দেয়, ‘ আম্মু আপনি আমাকে মিথ্যা বলেছেন। আপনার মেয়ে একটুও পড়াশোনা করছে না।’
‘ আমাকে তো দেখায় পড়াশোনা করছে। আদৌ করছে কিনা সেজন্য ই তো তোমাকে বললাম। ‘
‘ আমি দেখছি। ধন্যবাদ। ‘
কে কার কথা শুনবে? তানভীর থাকাকালীন লাবিবা ঘরেই গেলো না। তানভীর না পেরে নিজেই খুঁজে বের করলো লাবিবাকে। বাড়ি থেকে গজ পঞ্চাশেক দূর পুকুর পাড়ে। কিন্তু লাবিবাকে দেখে বড্ড অসন্তুষ্ট হলো। চোখের নিচে আজ অব্দি যার ডার্ক সার্কেল দেখা মেলেনি সেই মেয়েটার মুখে ব্রণের দাগ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। র ফেসে মাস দুয়েক থেকে দেখা হয়নি জন্য বুঝতেও পারেনি। প্রব্লেম টা ঠিক কোন জায়গায় তানভীর ঠাহর করতে পেরেও পারছে না। এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়ায়।
— উঠে আসো।
— আপনি?
— হাত দাও। এতো এগিয়ে বসেছো পুকুরে পড়ে যাবে তো।
লাবিবা হাত না ধরেই উঠে আসে। তানভীর নিজে থেকেই হাত মুঠো ধরে। এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। বউ তার বিগড়ে যাচ্ছে। তার আগেই বউয়ের মস্তিষ্ক পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। ঘরের দরজাটা ভেজিয়ে দেয়। বিছানার কোণায় লাবিবাকে বসিয়ে নিজে টুল টেনে বসে। গাল দুটো আলতো ভাবে দু হাতের আজলায় পুরে নেয়। লাবিবার শান্ত দৃষ্টিতে নিজের অশান্ত দৃষ্টি ফেলে। জিজ্ঞেস করে,
‘ আমার বউটার কি হয়েছে? ‘
এতো আদুরে ডাক! লাবিবা চোখ দুটো বুঝে নেয়। কানের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে দু ফোটা জল। তানভীরের অশান্ত মনটা আরো অশান্ত হয়ে উঠে। লাবিবার কন্ঠে অপরাধ বোধ জেগে ওঠে।
‘ সরি স্যার। আপনার সাথে অনেক বেয়াদবি করেছি। আপনাকে অনেক জ্বালিয়েছি। আপনার প্লেসটা আমি প্রায় ভূলতেই বসেছিলাম। সব কিছুর জন্য সরি। ‘
‘ কি হয়েছে বলো । ‘
‘ তেমন কিছু না। ‘
‘ বলো। প্লিজ। ‘
‘ কি বলবো? বলার কিছু নেই। ‘
‘ রাতে ঘুমাওনা কেনো?’
‘ আমি রাতে ঘুমাই। ‘
‘ তাহলে আমার কথা ভেবে চোখের নিচে কালো দাগ কেনো ফেলো?’
‘ য়্যু ডোন্ট লাভ মি স্যার। যে আমাকে লাভ করেনা আমি তাকে নিয়ে ভেবে আমার টাইম ওয়েস্ট করিনা। ‘
‘ তো এটাই কারণ? আমি তোমাকে কেনো ভালোবাসি না? পাগল তুমি? এটার জন্য তুমি এরকম এবনর্মাল বিহেভ করছো? নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো। পড়াশোনা করছোনা। সেজন্য তুমি ফেল করার পণ নিয়ে বসেছো? আমার সম্মান ঢুবাতে যাচ্ছো। তোমার আব্বুর কাছে আমাকে অপরাধী করতে চাইছো? ‘
‘ আব্বুর কাছে কেনো অপরাধী হবেন? ‘
‘ তো হবোনা? তোমার রেজাল্ট খারাপ হলে তো উনি আমাকেই দায়ী করবেন। ভাববেন তার মেয়েকে আমি প্রেমের রাজ্যে ঘুরে ঘুরে বেড়াই পড়তেই দিই না। দায় তো সব আমার উপরেই পড়বে। আমি কি তোমাকে কখনো বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি না? তোমাকে নিয়ে আমি কি যে করি ওহ গড!’
‘ প্লিজ এখন আপনি আমাকে ভালোবাসেন এই মিথ্যাটা অন্তত বলবেন না। আমি কিন্তু শুনবো না। কান পচে যাক আমার তবুও শুনবো না। ‘
‘ লাবিবা __’
‘ না আমি এই বানোয়াট কথা শুনবো না। খান সাহেব আপনি স্বাধীন মানুষ। আপনাকে নিশ্চয় কেউ ধরে বেঁধে রাখার স্পর্ধা দেখাবেনা। পুরোপুরি আপনার উপর একমাত্র অধিকারী হয়েও আমি সে স্পর্ধা দেখাচ্ছি না। আপনি এই পর্যন্ত অনেক গুলো ভূল করে ফেলেছেন। আমাকে বিয়ে করেই ভূল করেছেন। আমি আপনার যোগ্য না। আমাদের মধ্যে অনেক তফাৎ যা আপনি দেখেও দেখছেন না। আপনি যে লোক দেখানো কাজ গুলো করেন তা প্লিজ আর করবেন না। আপনার টাকা পয়সা সত্যিই আমার চাইনা। আপনি যে নাম মাত্র দায়িত্ব পালন করেন তা কখনোই একজন হাজব্যান্ড এর দায়িত্ব না। আপনাকে তো সেদিও বললাম আমি চাকরী করে আপনাকে টাকা দিবো না। তাহলে আমার যা হোক তাতে আপনার কি? আপনার করা সব থেকে বড় ভুল কোনটা জানেন? প্রেমিকাকে ঠকিয়ে আমাকে বিয়ে করা। ‘
‘ লিমিট ক্রস করবেনা লাবিবা। কে আমার প্রেমিকা? বলতে বলতে বেশীই বলে ফেলছো তুমি। আমার কোনো প্রমিকা নেই ছিলোও না। ‘
‘ ও সরি। ছিলো আপনার ভাইয়ের বউ । কি যেনো বলে __ দেবর ভাবী উমমম’
কথাটা শেষ করতে দেয়না তানভীর। মুখ চেপে ধরে প্রাণপনে। রাগে মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। দাঁতে দাত চেপে ধরে,
‘ আল্লাহর দোহাই লাগে বউ। এতো বড় কথা এই পবিত্র মুখে বলিস না। প্লিজ তুই অন্তত ঐ মহিলার মতো আমাকে বীনা দোষে কাঠগড়ায় তুলিস না। যা জানিস না তা নিয়ে কথা বলিস না। কে বলেছে তোকে এসব? বল কে কান ভাঙিয়েছে তোর? ‘
‘ কান ভাঙাতে হবে কেনো? আমি কি কচি খুকি যে কেউ কান ভাঙাবে তা নিয়ে আমি নেচে বেড়াবো? আমি নিজে নিজেই বুঝে নিতে জানি। আমাকে বুঝিয়েছেন আপনি নিজে আর আমার প্রতি আপনার অবহেলা। ‘
দরজার বাইরে থেকে সাবিনা সবটাই শুনতে পায়। শুনে হজম ও করে নেয়। চুপচাপ সেখান থেকে সরেও যায় যখন বুঝতে পারে তানভীর চলে যাচ্ছে। জামাইয়ের জন্য রান্না করা খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে লাঞ্চ করার জন্য ডাকতে এসেছিলেন সে। দরজার সামনে এসে দাড়াতেই সব কথা কানে আসে। মেয়ে আর জামাই সমন্ধে তার যা ধারণা ছিলো পুরোটাই উল্টে যায়। কোনো মা ই এমন খবর সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু সাবিনা। অতি শোকে পাথর হওয়া যাকে বলে। কিন্তু তার জন্য যে আরেকটা চমক অপেক্ষা করছিলো তা সে জানতো না। তানভীর যখন তার সামনেই ইসমাইলের কাছে আবদার করে বসে লাবিবার পরিক্ষা শেষ হতেই তাকে ঘরে তুলতে চায় তখন ইসমাইলের আগে সাবিনাই এর প্রতিবাদ করে।
‘ লাবি মা কি তাই চায়? ‘
তানভীর উত্তর দিতে পারেনা। রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য সে। বাবার সাথে তার ও সায় আছে। অভিজ্ঞতাপূর্ণ দূরদর্শীতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সে। বেশ বুঝতে পারছে জল ঘোলা হতে চলছে। তার সংসার জীবনের খুঁটি বেশ লড়বড়ে। বউ বেঁকে বসেছে। শ্বাশুড়ী বেঁকে বসেছে। শ্বশুরের ভাব ভঙি বোঝা দায়। সাবিনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে ইসমাইল তানভীরকেই প্রশ্ন করে,
‘ তুমি হটাৎ এতো জলদি এমন আবদার কেনো করছো? তোমাদের মাঝে কোনো সমস্যা? ‘
জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। নড়েচড়ে বসে। কন্ঠে জোড় নিয়ে বলে, ‘ না আব্বু। কোনো সমস্যা না। ‘
‘ আমার মেয়েটা সহজ সরল বুদ্ধি কম জেদ বেশী। আমার বিশ্বাস তোমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হতে পারে না।হলেও তুমি ঠিক সামলে নিবে। অসময়ে এমন আবদার করোনা। বেয়াই এর সাথে আমার কথা বার্তা সেটেল। সময় মতো আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। ‘
এর উপর কোনো কথা থাকতে পারে না। তানভীর এবার নিজের উপর রিস্ক নিলো। বউকে হাত ছাড়া করলো না। নরম পুষ্পের ন্যায় বউ তার। ভীষণ নাজুক! দেখলেই ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। আবেগপ্রবণ কোনো কিশোর বা যুবক নয় সে। প্রাপ্তবয়স্ক সুঠামদেহী তাগড়া পুরুষ। চোখের সামনে টসটসে যুবতী বউটা ঘুরঘুর করবে আর সে টেলিভিশন দেখার ন্যায় সোফায় গা এলিয়ে তাকিয়ে থাকবে দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক চলে গেলেও তা কার্যকর হবে না। সেজন্যই অবাধ্য মনটাকে বাধ্য করতে দূরে থাকা। তানভীরের কয়েকটা দিনের সঙ্গ যদি এতোটা ডেম্পারেট করে তুলে লাবিবাকে তাহলে নিজেকে সরিয়ে না নিলে কি হতো সেটাই ভেবে ভেবে তানভীর কূল কিনারা হারায়। নরম মনের আনটাচড বউ তার! জামাই পাগল হবে এটা অবাক হবার কিছু না। তাই বলে এতো অল্পতেই? এ্যাফেকশন টা আগে থেকেই ছিলো তানভীরের দৃষ্টির বাইরে সেটা না নাকি হাজব্যান্ড বলেই লাবিবার যত উম্মাদনা? কঠিন সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করেও তানভীর এবার পাড় পেলো না। নাকের ডগায় তার বউযে পাকা লংকার তরকারি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে ধারণাতেও ছিলো না।
চলবে__
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৩০)
তানভীরের জানা ছিলো লাবিবার সেলফোন একটা। ইভেন এটা সবাই জানে। জানেনা লাবিবার আরেকটা ফোনের খবর। তানভীর ও হয়তো জানতো না যদিনা লাবিবাকে বই দিয়ে ব্যস্ত রাখতো আর না লাবিবার পরিক্ষা থাকতো। ওয়াড্রোবের থার্ড পার্ট পুরোটাই খালি শুধু পরে আছে ব্লু কভারে ঢাকা ফোনটা। ফোনে লক ছাড়াতে তানভীরের সময় লাগেনি। মেয়েটা বোধহয় নিজেকে অসম্ভব ভালোবাসে। নামটাকেও। সেজন্য নাম দিয়েই সমস্ত লক দেওয়া। মানুষ আজকাল চালাক হয়ে গেছে। নিজের নামে লক দেওয়া বড্ড কমন। এটা এখন কেউ দেয়না। সেজন্যই উল্টোটাই করেছে সে। এয়ারটেল সিম। শুধু দুটো নাম্বারে কনভারসেশন। দুটো নাম্বার ই তানভীরের চেনা। কনভারসেশন স্কল করে দেখতে দেখতে তানভীরের কপালের রগ ফুলে উঠে। তার সহজ সরল বউটার তাহলে এভাবে ব্রেইন ওয়াশ করা হচ্ছে? প্রথম নাম্বারটার কনভারসেশন দেখেই তানভীর রাগ সংবরণ করতে পারলো না। তাই দ্বিতীয়তা দেখার সুযোগ পেলো না। নিজের ফোন বের করে কল লাগালো ফ্লোরার কাছে। ফ্লোরা ফোন কানে তুলেই তানভীর কে ঝেড়ে দিলো।
‘ যখনি তামিমের কাছাকাছি যেতে চাই তখনি তুমি এই তুমিই আমার পথ আটকে ধরো। কারণ কি তানভীর? আর কী চাও তুমি? ‘
‘ তুমি নিশ্চয় এখন বলবেনা যে তুমি ভাইয়ার হসপিটালে। ‘
‘ তাছাড়া কোথায় যাবো? আমার আশ্রয় একমাত্র তোমার ভাইয়ার কাছেই। ‘
তানভীর হাত মুঠো করে নিজের রাগ সংবরণ করে নিলো।
‘ তুমি আবার আমার ক্ষতি করতে চাইছো। আমার সংসারে নজর দিতে কলিজা কাপলো না তোমার? চোখ তুলে ফেলবো না আমি?’
‘ আমি সর্বশান্ত তানভীর। আমার সংসার আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমি তোমার সংসার সুন্দর করে দিবো।’
‘ নিজের লিমিট ক্রস করোনা প্লিজ। ‘
‘ আমার কোনো ভয় নেই তানভীর। বছরের পর বছর আমি ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি। নিজের সংসার ফিরে চাইছি তুমি তো আমাকে হেল্প করছোই না বরং মজা নিচ্ছো। আর কি চাও তুমি? তুমি কি মনে করো তুমি বড় গেমার? তোমার থেকে বড় গেমার একজন আছে। সে তোমার বউ। যার সাধ্য আছে তোমাকে গোল দেবার। তোমার প্রধান দূর্বলতা হবার। আমাকে এর মধ্যে টেনো না। আমি তোমার উপকার করার জন্য বসে আছি না। ‘
‘ উপকার চাইনি তোমার থেকে।অপকার ও না । প্লিজ দূরে থাকো। তুমি যদি সত্যিই তোমার আমার সম্পর্ক আছে এই মিথ্যেটা আমার বউকে বলে থাকো তোমার তোমার মুখের খুলি ও আমি রাখবো না। ‘
‘ ওহ কাম অন তানভীর।যেচে পরে কেউ নিজের ক্ষতি করতে যায়না। আমি করেছি তার শাস্তি ভোগ করছি। তার মানে এই না যে আমি আবার ভূল করবো। আমি যে সংসারে ফিরতে চাইছি সে সংসারের ই নতুন মেম্বার লাবিবা। আমার ঝা আর তুমি আমার দেবর। আমাকে কেউ মেরে পিটে এক করলেও তো আমি বলবোনা তোমার সাথে আমার পরকিয়া চলছে। তোমাকে আগেও আমি ছোট ভাইয়ের জায়গা দিয়েছি সারাজীবন ই দিবো। বরং লাবিবাই আমাকে একথা জিজ্ঞেস করেছে তোমার আমার সম্পর্ক আছে কিনা। আবশ্য ই আমাদের সম্পর্ক আছে। আমরা এক ফ্যামিলির মেম্বার। আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা? আমি স্বীকার করেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে তোমার ভাইয়াকে, মমকে , পাপাকে, বাড়ির প্রত্যেকটা মেইডকে আমি ভূলতে পারিনি। ভীষণ ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাসো এটাও বলেছি। অবশ্য ই তুমি আমাকে ভালোবাসো তানভীর। তোমার ভাইয়ার সাথে সম্পর্কের শুরু থেকে তুমি আমাকে হেল্প করেছো। আপু আপু বলে মাথায় তুলে রেখেছো।এখনো আমাকে এড়িয়ে যেতে পারো না। আমার সেফটির ক্ষেত্রেও যে তোমার হাত আছে এটা আমার ধারণা। এখনো যদি আমাকে ভালো না বসো তাহলে কোনো মতেই আমাকে এতোটা ইমপর্টেন্স দিতে না। তোমাদের আমি চিনি তানভীর। প্লিজ আমাকে আর নতুন করে চেনাতে এসো না। বরং এটা ভাবো লাবিবা এই কথা কি করে জানে? অন্য এলাকার দুদিনের মেয়ে তোমার লাইফের সিক্রেট কথা জেনে বসে আছে। তুমি বাইরে টেক্কা দিলেও ঘরে লাবিবাই তোমাকে টেক্কা দিবে তানভীর। ‘
‘সেটা একান্তই আমার ব্যপার। তুমি কান খুলে শুনে রাখো লাবিবার সাথে টোটালি যোগাযোগ করবে না।’
‘অফ কোর্স আমার মনে থাকবে। তবে লাবিবা যদি আসে আমি কিন্তু তাকে ফেরাবো না। ভীষণ মিস্টি মেয়ে। খুব মায়া পড়ে গেছে। আপন মানুষ বলে কথা!’
তানভীর আর ঘাটায় না। ফ্লোরা মিথ্যে বলবেনা। তাহলে কে দিলো লাবিবাকে খবরটা?
‘ আমি নিজেই জোগাড় করেছি। এতো চাপ নিবেন না। ‘
লাবিবা তানভীরের সামনে এসে দাঁড়ায়। হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। তানভীর কে মিস্টি হেসে বলে,
‘ থামবেন না। প্রেমিকার সাথে কথা বলুন। আর আমার ফোন হাতে নিবেন না। এটা আমার টাকায় কেনা। আপনার টাকায় না। ‘
তানভীর লাবিবার কথায় মোটেই মাইন্ড করলো না। মুচকি হেসে লাবিবার কনুই চেপে কাছে আনলো। কানের পাশের চুল গুলো আলতো হাতে গুছিয়ে দিলো। লাবিবা সঙ্গে সঙ্গে হাতটা প্রবল বেগে সরিয়ে দিলো। সরে দাঁড়াতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। তানভীর দু হাতের বাঁধনে বেঁধে ফেললো।
‘ উফফফ ছাড়ুন। স্যার। ‘
‘ চুপ! কথা বলো না। ‘
‘ মুখ আছে কি করতে? ‘
‘ কথা বলতে। আপাতত চুপচাপ আমার কাছে থাকতো।
‘ স্যার আপনাকে মোটেও সুবিধার লাগছে না। আপনার প্রেমিকার সাথে কি ঝগড়া টগড়া হলো যে আপনি আমাকে চেপে ধরে রিভেঞ্জ নিচ্ছেন? ছবি তুলে দিবো স্যার? কাউকে ডাকি? রতন, এই রতন_’
‘ রতনকে কেনো ডাকছো কেনো?’
‘ ছবি তুলে দিবে । তারপর আপনি আপনার প্রেমিকার কাছে পাঠাবেন। আমাদের দুজনকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে আপনার প্রেমিকার বুকে চিনচিন চিনচিন ব্যথা শুরু হবে। বুক চেপে ধরে দৌড়ে আপনার কাছে চলে আসবে। তানভীর! মাই সুইট হার্ট! আহহ__’
ব্যথায় কুঁকড়ে যায় একদম। তানভীর ছাড়েনি এখনো থুতনিটা। একদম বসিয়ে দিয়েছে সামনের দাঁতগুলো। ছেড়ে দিতেই দু হাতে চেপে ধরে। দু পা পেছোতে চায় সেটাও পারেনা তানভীর আগলে নেয়। জল ছলছল চোখ দুটোর সাথে চোখ মেলায়।
‘ কেমন অনুভব হয়? বুক চিনচিন ব্যথা! মাত্রাতিরিক্ত না? ফ্লোরার সাথে দেখে একদম ই সহ্য করতে পারোনি। চুলগুলো ধরে কি টানা টাই না টানলে। দেখো মাথা মাঝখানে কয়েকটা জায়গা ফাঁকা। সব গুলো চুল তুলে ফেলেছো। ছয়টা দিন ব্যথা করেছে। মুখ ঢেকে আছো কেনো? হাত সরাও। দেখি কতটা দাগ হলো?’
‘ রা-রাক্ষস!’
‘ আমার ভালো মানুষীও তো তোমার পছন্দ না। ‘
‘ ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে থাকবো না। ‘
‘ এতো অভিমান কিসের? আমি কি তোমাকে ছেড়ে গেছি? যায়নি তো। নাকি তোমার খেয়াল রাখি না?’
‘ কোনটাই করেন না।’
‘ ছেলেমানুষী করে না বউ। ট্রাই টু আন্ডারস্টেন্ড মি। আম হেয়ার না? ট্রাস্ট মি। তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যাচ্ছি না। ‘
‘ সরবেন আপনি? সহ্য হচ্ছে না এসব আমার। আপনাকেও না। কি চান আপনি? হুট করে জেঁকে বসবেন। মানিয়ে নিতে চাইলে ভালোবাসতে চাইলে দূরে দূরে থাকবেন আবার যখন আপনাকে মুক্তি দিতে চাইছি তখন কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন। ফাজলামি পেয়েছেন? বের হন আমার বাড়ি থেকে। এক্ষুনি বের হন। ‘
‘ লাবিবা মাথা খারাপ করোনা। শান্ত হও। কথা শুনো আমার। ‘
‘ কিচ্ছু শুনবোনা। আপনি যাবেন এখান থেকে। আমি তো আপনার বাসায় যেতে চাইছি না।’
প্রচন্ড অপমান নিয়ে বের হয়ে যায় তানভীর। সাবিনা বুঝতে পেরে আটকানোর চেষ্টা করে তানভীরকে। কিন্তু পারে না। বাকি পরিক্ষা গুলোতে তানভীর একদমি খোঁজ নিতে আসেনা। অতি শোকে কাতর লাবিবাও রেজাল্ট ভালো করতে পারেনা। এই প্রথম তিনটি সাবজেক্টে ই ফেল আসে। একটুর জন্য ইয়ার লস হয়না। অনান্য সাবজেক্টে সি ডি ও রেজাল্ট আসে । এতোটা খারাপ রেজাল্ট পেয়ে লাবিবার কোনো হুস নেই। লাবিবার রেজাল্টে চটেছে অনেক জন ই। ইসমাইল বকে যাচ্ছে এক নাগাড়ে। শুধু লাবিবাকে নিয়ে পড়লেও একটা ব্যাপার ছিলো কিন্তু লাবিবাকে কম তানভীরকে দোষারোপ টা বেশী করা হচ্ছে। ইসমাইলের ভাষ্যমতে বিয়ে দিয়েই মেয়ের বারোটা বাজিয়েছেন। তানভীরের কারণেই আজ লাবিবার পড়াশোনার এই অবস্থা। মেয়ের পড়াশোনাকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সব সময়। পড়াশোনার যেনো ক্ষতি না হয় সে অনুযায়ী লাইফ স্যাট করার চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু এ পর্যায়ে যেনো হেরে গেলেন। এতোটা অধঃপতন হবে ভাবতে পারেন নি। তানভীর কে যতটা ধৈর্য্যশীল স্ট্রেট পার্সোনালিটি হিসেবে জানুক না কেনো আদতে সে তার মেয়ের জন্য উপযুক্ত মনে হচ্ছে না। লাবিবার যথেষ্ট পরিবর্তন তিনি খেয়াল করেছেন। এতোদিন তিনি গুরুত্ব না দিলেও এবার বাধ্য হয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর একটা সমাধান উনি করবেন বলে ঠিক করেছেন।
লাবিবার মন খারাপের দিনে তানভীর আর সাথী হলো না। হবেও না। কারণ লাবিবার এই অবস্থার জন্য সে নিজে দায়ী। একটু মনে হয় বেশীই নিজেকে অবহেলা করেছিলো তানভীরকে না পাওয়ার যন্ত্রনা সহ্য করতে গিয়ে। ফ্লোরা কিন্তু লাবিবার সাথে এখনো লেগে আছে। লাবিবা একটা বিষয় খেয়াল করেছে।অতি অহংকারী বলতে জানা এই মেয়েটার মনে অহংকারের ছিটেফোঁটাও নেই। আবার দূর্দান্ত তেজের সাথে কথা বলে। লাবিবার মন খারাপের দিনগুলো বিষিয়ে তুলতে সর্বদা উপস্থিত থাকবে। প্রথমেই দু চারটে এমন বাক্য আওড়াবে যাতে লাবিবার হৃদয় বিষিয়ে যাবে। অবশ্যই তা তানভীর আর তাকে মিলিয়ে লাবিবাকে কটাক্ষ করে। তার পরেই তার গল্পের ঢালা নিয়ে বসবে। প্রথম প্রথম খেয়ল না করলেও ইদানিং লাবিবা খেয়াল করে। ফ্লোরার প্রথম বাক্য গুলোর পর আর কোনো বাক্যে তানভীরের অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়া ভার! বরং ফ্লোরার পুরো গল্প তামিম কে নিয়ে। ফ্লোরা যে লাবিবাকে উস্কিয়ে দেবার জন্যই বলে এটা লাবিবা ধরতে পেরেছে। লাবিবার মনে সন্দেহের বীজ বপন হয়। ফ্লোরা আসলে চায় টা কি? তানভীরের সাথে তার কিসের শত্রুতা? লাবিবার সাথেই বা তার কি? এমন বিহেব করে যেনো লাবিবা তার আপনজন। লাবিবার মন ভালো করার জন্য তার আর তামিমের প্রচুর ফানি মমেন্ট শেয়ার করে। এমন এমন জোকস্ বলে যে হাসতে হাসতে লাবিবার চোখের কোনে জল চলে আসে। কোনভাবেই তাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। এখন মনে হচ্ছে আর পারবেও না। বরং ফ্লোরা যেভাবে চলতে বলে লাবিবার মনে হয় সেই পথ ই ঠিক। আর লাবিবা সেই পথেই চলে। তানভীরকে আর দূরে সরিয়ে দেয়না। বরং তানভীরকে পাশে রাখে সবসময়। বাধন ছাড়া মানুষের মতো তানভীরের সামনেই যা ইচ্ছা তাই করে।
চলবে ___