ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো পর্ব-৪৮+৪৯+৫০

0
1294

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪৮)
তানভীর লাবিবাকে নিয়ে বসেছে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। জলজ্যান্ত একটা মানুষকে কেচ ধরে আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, ফ্রাঙ্ক জেন, ডরিয়ান ইয়েটস হলে হয়তো সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেতো। তামিম এসে মেকি রাগ দেখায়, ‘ তোদের পাগলামি শেষ হয়েছে? উঠ। ‘
তামিমের দু হাত দুজনে ধরে উঠে দাঁড়ায়। টেবিলে গিয়ে বসে। লাবিবার অর্ডার সহ তামিমের অর্ডারকৃত খাবার চলে এসেছে। রোজী অবাক হয়ে তানভীর লাবিবাকে দেখছে। তামিম অবাক হয়ে দেখছে রোজীকে। এই মেয়েটার কি একটু অন্যরকম কিছু দেখলেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হবে? তামিম রোজীকে ডাকে।
‘ রোজ! লুক এ্যাট মি। রোজ?’
‘ হুহ? এইতো। ‘
‘ ইটস নরমাল। এই দুটোর সাথে থাকলে তোমাকে সারাজীবন অবাক হয়েই থাকতে হবে। নরমাল আর হতে পারবেনা। ‘
রোজী মুচকি হাসলো। মাথা নিচু করে বললো,
‘ আপনি আমাকে বলেন আমাকে ট্রিটমেন্ট করবেন। আমাকে ছাড়ুন। ওদের ট্রিটমেন্ট করুন। ‘
‘ টেল মি ওয়ান থিংক রোজ। তোমাকে আমি যেনো খুঁজে পাইনা। তুমি প্রায় প্রায় দোলো। তোমার চেহারা অন্যরকম লাগে। তুমি কি অতিরিক্ত টায়ার্ড ফিল করো?’
‘ না তেমন কিছু না। ‘
রোজী লাবিবাদের টেবিলের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। তানভীর মিটি মিটি হাসছে। আর লাবিবা কথা বলেই যাচ্ছে। কি সুন্দর মানিয়েছে দু’জনকে।

লাবিবা হাত মোজা পরেই স্যান্ডুইচ ধরলো। তানভীর বাঁধা দিলো। ‘ উহু। মোজা খুলে তারপর খাবার তুলো। ‘
লাবিবা সময় নিয়ে মোজা খুললো। তানভীর তাকিয়ে আছে হাতের দিকে। যেই স্যান্ডুইচ তুলতে হাত বাড়িয়েছে তখনি তানভীর হাত ধরে ফেললো। নিজের দিকে টেনে নিলো। এপিঠ ওপিঠ করে পরখ করলো। হাতটা কেমন ফুলে আছে। লাল হয়ে আছে। মোজা পরে থাকলে এমন হবার কথা নয়।
‘ হাত ফুলা কেনো?’
‘ এমনি। ‘
‘ এমনি?’
লাবিবা বলতে চাইছে না। চোখ লুকাচ্ছে। তানভীর আরেকটা হাত ও টেনে নিলো। সেই হাতটাও এমন। থমথমে গলায় প্রশ্ন করলো, ‘ মারামারি করেছো?’
‘ ঐঐ আর কি। ‘
‘ তুমি তো এখন আর মারামারি করো না। কি হয়েছে? কে কি বলেছিলো তোমাকে? বলো কি প্রবলেম হয়েছে?’
‘ আমি আগে মারামারি করতাম আপনি জানলেন কি করে?’
‘ এনস্যার দাও আগে। ‘
‘ আগে আপনি বলুন। আপনি কি আগে থেকেই চিনতেন আমাকে?’
তানভীর লাবিবার মুখের দিক কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হাত ছেড়ে দিয়ে নিজে থেকেই লাবিবার মুখে স্যান্ডুইচ তুলে ধরে। লাবিবা ভ্রু কুচকায়।
‘ কবিরের থেকে শুনেছি। হা করো। ‘
লাবিবাকে খাইয়ে দেয় নিজেও খায়।‌ কিছু সময় পর বলে, ‘ মারামারি করবেনা লাব্বু। এখন আর তুমি ছোট নেই। ‘
‘ আপনি ভাইয়ার থেকে আমার সম্পর্কে সবকিছুই শুনেছেন?’
‘ বাকি আছে। শুনে নিবো। খাও। ‘

তামিম খেয়াল করলো রোজী অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে। তানভীর লাবিবাকে খাওয়াচ্ছে নিজেও খাচ্ছে। এটা কি রোজীর কাছে অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় মনে হচ্ছে? আশ্চর্য ব্যাপার। এরকম সময় তামিম ও স্পেন্ড করেছে। খুব স্পেশাল ছিলো সময় গুলো। সেসব স্মৃতি আজ দীর্ঘশ্বাস হয়ে পড়ে। তামিম এক চামচ সুপ তুলে নিলো রোজীর দিকে। ডাকলো,
‘ রোজ?’ রোজী চোখ ফিরিয়ে তামিমের দিকে তাকালো। তার মুখের সামনে চামচ ধরে আছে তামিম। বললো, ‘ হা করো। ‘। রোজী আরো একটু অবাক হলো। লজ্জাও পেলো। আহাম্মকের মতো ঐদিকে তাকিয়ে ছিলো বলে তামিম কি ভাবলো তার ও তামিমের হাতে খেতে ইচ্ছে করছে? রোজী মাথা নাড়ালো, ‘ আমি নিয়ে খাচ্ছি। ‘ তামিম চামচ সরালো না। অগত্যা রোজী তামিমের হাতে খেলো। রোজীর দু চোখ ভরে জল টলমল করলো। তামিম মনে মনে হাসলো। নিজের ভাগ্যের উপর। জীবন যে দিকে মোড় নেয় সেদিকেই যেতে হবে। আরো ভাবলো এই মেয়েটার অনেক যত্ন পাওয়ার আছে। রোজীর অস্বস্থি বুঝে বললো,
‘ আমার সাথে রিলেশনে যাও রোজী। বিয়ের আগেই ফ্রি হয়ে নাও। তোমার সংকোচ বোধ নয়তো পরে আমার অনেক প্রবলেম ক্রিয়েট করবে। ‘

তামিমের সাথে একজন দেখা করতে এসেছে। লোকটি পরিচয় দিয়েছে এস আই বলে। তামিম আন্দাজ করলো লোকটি কে। কি বলতে পারে। আন্দাজটাই ঠিক হলো। লোকটি আর কেউ নয়। রোজীর এক্স হাজবেন্ড। লম্বা চওড়া ভালোই দেখতে। চেহারায় কেমন শয়তান শয়তান ভাব চলে আসছে। তামিমের মনে হলো রোজীর মতো ইনোসেন্ট মেয়ে এর সাথে কখনোই ম্যাচ হতে পারে না। একটা কিশোরী মেয়েকে বিয়ে করে এতো গুলো বছরে পুরো প্রতিবন্ধী বানিয়ে ছেড়েছে। মেয়েটার বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে জ্ঞান নেই বললেই চলে। একা একা চলাচল করতেও ভয় পায়। ভালো খাবার পর্যন্ত ও পায়নি। ফ্যাকাশে সিংষ্ট শরীর দেখেই বোঝা যায়। ভালোবাসা তো দূর ভালোব্যবহার পর্যন্ত ও মনে হয়না পেয়েছে। রোজীর হাত দেখেই বোঝা যায় অনেকদিন থেকেই রিপেয়ার হয়ে আসছে। লোকটি সালাম দিলো।‌জানালো সে রোজীর এক্স হাজবেন্ড। তামিম মুচকি হাসলো বললো, ‘ আমি রোজীর বাগদত্তা। ‘
‘ কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি। ‘
‘ সিউর। আপনি তো আর এমনি এমনি আসেন নি। আসার সময় নিশ্চয় জেনে এসেছেন আমি কে? আমার পরিচয়।’
‘ জি তা তো অবশ্যই। আমি জানতে চাইছিলাম রোজীর সাথে আপনার আগে থেকেই পরিচয় মানে আগে থেকেই রিলেশন ছিলো নাকি আপনাকে বিয়ে করার জন্যই আমাকে ডিভোর্সটা দিলো? ‘
‘ হুয়াট?কি বলতে চাইছেন? ‘
তামিম আর বসে থাকতে পারলোনা। উঠে দাঁড়ালো। রাগে শরীর ফেটে যাচ্ছে তার। লোকটি রিকুয়েষ্ট করলো,
‘ প্লিজ কুল ডাউন স্যার। রাগ করবেন না। আমরা বসে কথা বলি। ‘
‘ রুচি চলে গেছে আমার। ছিহ এতো নোংরা মন আপনার? আপনার সংসারে থাকা কালীন আপনার ওয়াইফের সাথে আমি রিলেশনে ছিলাম এরকম কুপ্রবৃত্তি মন মাইন্ড নিয়ে আমার সাথে কোন সাহসে কথা বলতে এসেছেন?’
‘ তাহলে মি. আমাকে জোর করে ডিভোর্স দিয়ে আপনাকে বিয়ে করছে কেনো ডিভোর্সের কিছু দিন না যেতেই?’
‘ আপনাকে ডিভোর্স করেছে আপনার ক্যারেক্টারের জন্য। আপনার সেকেন্ড ওয়াইফের কথা জানার পরেও এতো গুলো দিন যে আপনার সংসারে রোজ ছিলো এটাই তো আপনার চরম ভাগ্য। ‘
‘ বিয়ে করেছি তাতে কি হয়েছে? মানুষের কি দুই বউ থাকে না? আমার এবিলিটি আছে আমি দুই বউ ম্যানেজ করবো তাই বলে ট্রাপে ফেলে ডিভোর্স দিয়ে অন্য নাগর নিয়ে ঘুরবে? ‘
‘ কোন থানায় পোষ্টিং আছেন?’
‘ তা জেনে আপনি কি করবেন? ‘
‘ কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার্ড হয়ে যাবেন। ‘
‘ পাওয়ার দেখান? সরকারী চাকরী খাওয়া মুখের কথা?’
‘ সরকারী চাকরী সরকারের লোকই খাবে। এইযে এতোক্ষন ধরে আমার উপর চেচালেন আমি কে তা জানার পরেও। বাড়িতে বউ রেখে আরেকটা বিয়ে করেছেন। বড় বউকে দিনের পর দিন নির্যাতন করে গেছেন। রাস্তা ঘাটে মেয়েদের হ্যারেস করে যাচ্ছেন। আইনের লোক হয়েও কন্টিনিউআসলি বেআইনি কাজ করছেন। এর একটা প্রমান ই যথেষ্ট আপনাকে আউট কারার জন্য। ‘
এবার বেশ ভয় ই করছে। ফাঁকা আওয়াজ দেওয়া খানদের কর্ম নয়। শান্ত হয়ে থাকতে এসেও শান্ত হতে পারেনি। অনুরোধ করলো,
‘ স্যার প্লিজ আপনি এটা করতে পারেন না। আমাকে ক্লিয়ারলি কনফেস করতে দিন। ‘
‘ আপনি এমপির বাড়ির বউকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে এসেছেন। মরার পাখনা গজিয়েছে। বাড়িতে যান। যে বউকে ভাড়া বাসায় রেখেছেন তাকে বাসায় নিয়ে এসে বাবার সাথে কাজ করুন। খেটে খান। ঘোষ খেয়ে পেট ফুটবল বানিয়ে ফেলেছেন। উচ্চ রক্তচাপে মারা যখন তখন। খেটে খান ওজন কমান। ‘
‘ আপনি রোজীকে বিয়ে করবেন না। রোজী আমার। ওর উপর শুধু আমার নজর থাকবে। ‘
‘ আমার ছোট ভাইয়ের উপর যে এট্যাক করতে এসেছিলেন এখনো এটা ভাইয়ের কানে যায়নি। দুটো ই মারামারি তে পটু। আমি আবার ওদের মতো না। তাই ছেড়ে দিচ্ছি। একবার আমার ভাইয়ের কানে কথাটা গেলে রক্ত মাংস আলাদা করে ছাড়বে। আপনার কাজিন ফাহাদ নাকি এখনো ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না? দোয়া করি আপনি সুস্থ স্বাভাবিক থাকুন। ‘
‘ রোজী শুধু আমার। আপনি ওকে বিয়ে করবেন না।খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম। ‘
‘ শালা হারমজাদা গলার স্বর এখনো মাড়াস। শরীরের এতো লোভ তোর! নিজের বউরে দিয়ে হয়না? আমার হবু বউ নিয়ে টানাটানি করস। রোজের আশেপাশে যেনো তোকে না দেখি। বের হ শালা এখান থেকে। আর শোন রোজ একটা ইনোসেন্ট মেয়ে। ওর সম্পর্কে খারাপ কথা মুখেও আনবিনা। ‘
ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। তামিম রাগে ফুসফুস করতে থাকে। তানভীরকে বিষয়টা জানায় না।কলেজে প্রোগ্ৰাম নিয়ে ব্যস্ত আছে সে। নিজের টেনশন আর ভাইয়ের উপর দিতে চায়না।

‘ স্যার টাকা লাগবো। ‘
‘ কার্ডে দিয়ে দিয়েছি। ‘
‘ সে তো আছেই কিন্তু তুলতে ইচ্ছে করছে না। ‘
‘ লাবি পাখি সামনে থেকে সরো এখন আমার তাড়া আছে। পরে টাকা দিচ্ছি। ‘
‘ ঐ কাপড়টা মানুষ নিয়ে যাবো তো। ‘
‘ তুমি একা একা মার্কেটে গিয়েছিলে?’
‘ না উর্মি ছিলো। দিন না এতো পছন্দ হয়েছে অন্য কেউ নিয়ে গেলে আমার হলুদ টাই মাটি হয়ে যাবে। ‘
তানভীরের পা থেমে যায়। জরুরী কাজে বের হচ্ছিলো।
‘ হলুদ মাটি হবে মানে? ভাইয়ার বিয়ে জাস্ট পড়িয়ে নিয়ে আসা হবে। কোনো ফাংশন হবেনা। ‘
‘ আরে ভাইয়ার বিয়ে না। আমার বিয়ে। একবার তো লুকিয়ে চুরিয়ে বিয়ে করেছি। এবার তো ধুমধাম ছাড়া হবেনা। ‘
এর মাথায় কখন কি চলে সে নিজেও হয়তো জানেনা। তানভীর প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজলো। কাঁধ সোজা করে একটা ভাব নিয়ে জানতে চাইলো,
‘ ও আচ্ছা। ম্যাম কবে যেনো আপনার ধুমধাম করে বিয়েটা হবে?’
লাবিবা লাজুক হাসলো। তানভীরের হাত দুটো পকেট থেকে বের করে ছেড়ে দিলো।
‘ ওভাবে দাঁড়াবেন না এখন। ক্রাশ খেয়ে ফেলি। চোখ ভরে দেখার সময় নাই। ‘
‘ যা বলছি তার উত্তর দাও। ‘
‘ অনার্স শেষ করার পর। একবছরও তো সময় নেই। ‘
‘ সিরিয়াসলি? একবছর আগে থেকেই তোমার এই বিয়ের শপিং করতে হবে? মানুষ দুই ঘণ্টাতে শপিং কমপ্লিট করে আর তোমার এক বছর লাগবে?’
‘ অন্য মানুষের সাথে কি আমাকে মেলালে চলবে? ওরা তো লাব্বু না। লাব্বুর বরাবরই একটু বেশিই সময় লাগে। ‘
‘ একবছর। তাইনা?’
‘ তাড়াতাড়ি টাকা দিন আমি যাবো তো। ‘
‘ তোমার শুধু শুধু শপিং সেন্টারে ঘুর ঘুর করা আর কমবে না। ‘

লাবিবা দশহাজার টাকা নেয়। ওয়ালেট ফিরিয়ে দিয়ে বলে, ‘ আরো লাগলে পরে নিবো। এখন এটুকুই নিচ্ছি। ‘
‘ গাড়ি নিয়ে যাও। ‘
‘ এতো ভয় পান কেনো?’
‘ তুমি বুঝবেনা। ‘
লাবিবা ভেংচি কেটে চলে গেলো। তানভীরের কথা শুনলো না। টেনশন তানভীরের ঘাড়ের উপর অনবরত নাচে। একদিকে শ্বশুড়ের বাসার কাজ ধরেছে আরেকদিকে কলেজে প্রোগ্ৰাম, ভাইয়ের বিয়ে তারউপর এই অবাধ্য বউ! একটা না একটা ঘটনা ঘটিয়েই চলে।

লাবিবা মার্কেটে গিয়ে গজ কাপড় নিলো কয়েকগজ। সাথে তানভীরের পাঞ্জাবীর কাপড় ও নিলো। টেইলার্সে গিয়ে বানাতে দিয়ে বাড়ি ফিরলো। তানভীর আর ওর একটাও কাপল ড্রেস নেই। এই একটা হলো। সকালে গিয়ে দেখেই পছন্দ করে ফেলেছে। এতো সুন্দর রেইনবো কালার! দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে। মনস্থির করে ফেলেছে এটাই তাঁদের হলুদে পড়বে। সাথে তানভীর কেও পড়াবে।

তামিমের দিনগুলো ভালো মন্দে যাচ্ছে। ফ্লোরার সাথে সময়গুলো এতো বছরের গ্যাপে ফিকে হয়ে গেছে। এজন্যই মানুষ বোধহয় বলে চোখের আড়াল হলে তো মনের আড়াল। তামিম রোজীর সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলে সময় করে। রোজীর আর সংকোচ বোধ হয়না। খুব নরমাল ই কথা বলা শুরু করেছে। আস্তে আস্তেই ঠিক হয়ে যাবে। আজ রাতেও রোজীর সাথে কথা বলা শেষ করে শুতে যাচ্ছিলো। সেসময়ে হুয়াটসাপ এ একটা মেসেজ আসলো। মেসেজ অপেন করে দেখতেই ঠাস করে হাত থেকে পরে গেলো ফোনটা। তামিম দু পা পিছিয়ে গেলো। চুল গুলো মুঠো করে ধরে গগনবিদারী চিৎকার করে উঠলো।

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৪৯)

সকাল সকাল রেডি হয়ে রোজীকে বের হতে কেনো বললো ঠিক বুঝলো না। ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছে মাত্র।‌তামিম রোজীর বাসার সামনে এসে রোজীকে কল করলো। রোজী কল ধরতেই বললো,
‘ বেরিয়ে এসো। ‘
‘ আপনি ভেতরে আসুন না। ‘
‘ যাচ্ছি না। ‘
‘ ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়েছেন? মা আপনার জন্য ব্রেকফাস্ট বানিয়েছেন। ভেতরে আসুন। ‘
‘ ব্রেকফাস্ট তুমি করে তারপর বেরিয়ে আসো। ‘
‘ মা কতো করে বলেছে। প্লিজ ভেতরে আসুন। ব্রেকফাস্ট করে যান। ‘
‘ তুমি হটাৎ আমার ব্রেকফাস্টের পেছনে পড়লে কেনো?’
রোজী কোনো উত্তর দিতে পারলো না। বুকটা দুরুদুরু করছে। বক্সে করে কি খাবার সঙ্গে নিয়ে যাবে? যদি বকে? ফেলে দেয়? এখনো ভালোকরে তো চিনেই উঠতে পারেনি মানুষটাকে।
‘ আন্টিকে আমার সালাম দিও। ‘ বলে তামিম ফোন রেখে দেয়।

রোজী এসে বসে গাড়িতে। হাতে ছোট্ট একটা পার্স আর ফোন। বাঙি কালার জর্জেটের সালোয়ার কামিজে সকালের স্নিগ্ধ চেহারায় রোজীকে অন্যরকম লাগছে। মাথায় কাপড় দেয়া থাকলেও জুলফির ছোট চুল গুলো বেরিয়ে আছে। তামিম নিজের সিটে বসেই রোজীর গালে হাত দিলো। রোজী চমকে উঠলো। লজ্জায় গুটিয়ে গেলো। ছোট চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে তামিম বললো, ‘ হিযআপ করবে তাহলে চুল বের হবেনা। স্মার্ট লাগবে। ‘
রোজী ডান দিকে মাথা নুয়ায়। ছোট্ট করে উত্তর দেয়
‘ আচ্ছা। ‘

রোজী কখনো স্মার্ট হতে চায়নি। সরল প্রকৃতির একটা মেয়ে। নিজে যেমন তেমনি থেকেছে। এই মুহূর্তে মনে হলো তাকে ইমপ্রুভ হতে হবে। এতো হ্যান্ডসাম একজন ডাক্তার তার পাশে সে নিঃসন্দেহে বেমানান। এইসব কারণে যদি বিয়েটা না করে দেয়? রোজী মনে ক্ষনিকে ক্ষনিকে ছোট ছোট বিষয়ে ভয় ঢুকে থাকে। ঐ যে বলেনা? গোয়াল পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখেও ভয় পায়। তামিম রাস্তায় রোজীকে প্রশ্ন করে,
‘ পড়াশোনা শেষ তোমার?’
রোজী উত্তর দিতে পারে না। লজ্জায় বুকের সাথে থুতনি লাগিয়ে রয়। তামিমের যা বোঝার বোঝা হয়ে যায়। বিরক্তি ভেতর থেকে ঠেলে আসে।
‘ কোথায় এডমিশন নিতে হবে? স্কুলে নাকি কলেজে?’
রোজী এমন প্রশ্ন আশা করেনি। ভেবেছিল সে ঠোট হচ্ছে সেজন্য এই বিষয়ে আর কথাই বলবেনা। মানুষটা খুব ম্যানেজেবল। কিন্তু আজ এইমানুষটা ঠিক নেই। একদমি ঠিক নেই। নিজে থেকে গালে হাত দিচ্ছে। কিভাবে থাকতে হবে সেটা বলে দিচ্ছে লাইক এ টিচার!
‘ কলেজে। ‘
‘ তাও আমার ভাগ্য। যে বয়সে ছেলেমেয়ে স্কুলে নিয়ে যাবো সেই বয়সে তোমাকে স্কুলে পড়তে নিয়ে যেতে হবেনা। ‘
‘ আপনার বয়স কতো?’
‘ চল্লিশের কাছাকাছি। ‘
‘ এতো?’
রোজী অবাক হয়ে বললো, ‘ অনেক বড়ো। ‘
‘ তারপরেও তো মুখে মুখে কথা বলছো। ম্যানারস জানলে পুরো রাস্তা চুপ করে থাকতে। চোখ থাকতো কোলের উপর। সঠিক বয়সে বিয়ে করলে তোমার বয়সী আমার একটা মেয়ে থাকতো। ‘
রোজী নড়েচড়ে বসলো। মিনমিনিয়ে বললো,
‘ এতো না।আপনাকে দেখে ত্রিশের বেশী লাগে না। ‘
তামিম জোরপূর্বক হাসলো, ‘ ভালো বলেছো। গভীর রাতে বাসায় ফিরলে প্রবলেম হবে? বা না ফিরলে? ‘
‘ কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
‘ ঢাকায়। ‘
‘ অসম্ভব। এতো দূর!’
‘ অসম্ভব? নেমে যাবে? সাইড করছি নেমে যাও। ‘
রোজী গাড়ির বাইরে তাকিয়ে ছটফট করে উঠলো। তামিমের দিকে এগিয়ে এসে বললো, ‘ আমি কিছু চিনিনা। ‘
‘ ইচ্ছে করলেই চেনা যায়। ‘
রোজী করুন চোখে তাকালো। ডানে বামে অনর্গল মাথা নাড়ালো। চুপটি করে রইলো। তামিম সিট বেল্ট লাগিয়ে নিতে বললো। এরপর একশো বিশের উপর গাড়ি চলবে। তাড়াতাড়ি পৌঁছানো চাই। সল্পপরিচিত তামিমকে রোজী বেশ ভয় পেলো। হুট করে একা তামিমের সাথে এতো দূর। তাকে বেঁচে দিলেও তো কেউ জানতে পারবেনা। অন্য মতলব নেই তো?

বসুন্ধরা সিটি মলে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরছে তামিম। শক্ত করে মুঠোয় করে আছে রোজীর কব্জি। দক্ষিন এশিয়ার হাইস্ট মল এতো বড় এরিয়া! এতো এতো শপ দেখে রোজীর মাথা ঘুরছে। নিচের দিকে না তাকিয়ে তার চোখ উপরে ঘুর ঘুর করছে। তামিম স্টিলেটো দেখছে রোজীর জন্যে। বাছাই শেষে তিনজোড়া পছন্দ হয়েছে। রোজীকে পায়ে দিয়ে হাঁটতে বলতেই রোজী ঢুক গিলে। তামিম ভ্রু কুচকায়।
‘ কি প্রবলেম? ‘
‘ উঁচু জোতা পড়ে হাঁটতে পারিনা। পড়ে যাই শুধু। ‘
‘ হালকার উপর একটা ধাক্কা লাগলেই আপনি পড়ে যাবেন। পায়ে লাগিয়ে দেখুন। বিয়ের পর আপনার ব্যবস্থা করছি। ‘
‘ কি করবেন?’
‘ বাঁশের কঞ্চি থেকে মানুষ বানাবো। ‘
‘ কিভাবে?’
রোজীর বোকা প্রশ্নে তামিম শয়তানি হাসে। মাথা নাড়ায়।
‘ কাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি এখনো বুঝতে পারছি না। ‘
রোজী গুটিয়ে যায়। এটাই যেনো শোনার বাকি ছিলো তার।
কয়েক বান্ডিল লেহেংগা বাছাই করে চারটা লেহেংগা পছন্দ হয়। এর মধ্যেই একটা নিতে হবে। তামিম চারটায় প্যাক করে দিতে বলতেই রোজী বাঁধা দেয়।
‘ চারটা পছন্দ করেছি এর মধ্যে একটা নিবো। চারটাই দিতে বলছেন কেনো? ‘
‘ পছন্দ হয়েছে নিয়ে নাও। ‘
‘ এতো দিয়ে আমি কি করবো? অনেক দাম। ‘
‘ সো হুয়াট? বিলাসীতা জীবন উপভোগ করো। দামী দামী যা আছে সব নাও। রেখে যাবে কেনো?’

রোজী গোল্ডের গহনা টাচ করলে তামিম নিজেই ডায়মন্ডের নেকলেস বের করতে বলে। রোজী নিষেধ করে, ‘ দেখুন আমার বাসা থেকে এমনিতেই গহনা দিবে। আপনি নিয়ে এসছেন জন্য আমি কিছুটা নিচ্ছি। তাই বলে আপনি ফুললি নিতে বলবেন না। ‘
‘ মানুষের মধ্যে উপরের স্তর ছোঁয়ার একটা প্রবণতা থাকে। তোমার কেনো নেই। ‘
‘ আমার কিছু লাগবেনা। ‘
‘ প্রথমে সবাই বলে পরে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেরিয়ে আসে। ‘
রোজী আর কথা বলেনা। তামিম তাকে কি ভাবে ট্রিট করছে বুঝতে পারছেনা। থমথমে মুখটার দিকে তাকালেই কেমন যেনো লাগছে। হুট করে উনার বিয়ের শপিং করার মুড কেনো হলো কে জানে? ঘরোয়া বিয়েতে এতো কিসের সাঝ?’
রোজী দুঃখ পেয়ে জায়গামতো কথাটা বলে দেয়,
‘ আমাকে যতো সাজুগুজু কারুকাজ খচিত ড্রেসেই আনুন না কেনো আমি সাধারণ মানুষ সাধারণ ই থাকবো। আমি অন্যদের মতো গ্লামারেস হবো না। ‘
তামিম বুঝতে পারলো রোজীর আড়ালে পিন্চ মারা কথাটা। মৃদু গলায় জানালো, ‘ চাই না। ‘
রোজী একটু সুযোগ পেলো,
‘ পাঁচ ঘন্টা ড্রাইভ করতে হবে। না খেয়ে গাড়িতে উঠবেন না। ‘
‘ আদেশ করছো?’
‘ অনুরোধ। ‘
তামিমের অস্বাভাবিকতা বেশ খেয়াল করছে রোজী। খাবার মুখে দেবার বদলে পানি মুখে নিচ্ছে একটু পর পর। গত সময় যে কাজটা তামিম করেছে আজ সেটা রোজী করলো। চামচ রেখে দিলো। নিজ হাতে তামিমের মুখে রাইস তুলে দিলো। তামিম নিলো না। রোজী ছেড়ে দিলো না। হাত চেপে ধরে বললো,
‘ এতো গুমরে গুমরে মরার কিছু হয়নি। স্বাভাবিক হবার চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে আমি আপনার থেকে সরে যাচ্ছি। সময় নিন নিজেকে শান্ত করুন। ‘
‘ এই মেয়ে এই! তোমার কি কোনো ভালো মেমোরিস নেই? এতো নিল কিভাবে নিজেকে প্রেজেন্ট করতে পারো?’
‘ আমার ভালো সময় ছিলো আমি ছিলাম আতঙ্কে। উপভোগ করতে পারিনি। যেদিন জেনেছি আমার সাথে চিট করা হয়েছে সেদিন ই মনের ভেতর তাকে কবর দিয়ে দিয়েছি। নিমুকহারাম মানুষকে আপনার মতো পোষে রাখিনি যে তার একটা নিউজেই নিজেকে ছিন্নভিন্ন করে দিবো। ‘
‘ ভিডিও দেখা হয়ে গেছে?’
‘ ওপেন করিনি। আমার এতে ইন্টারেস্ট নেই। আপনি করেছেন? সেই সাহস মনে হয় হয়নি। লিংক মানুষের ফোনে ফোনে পৌঁছে গেছে। আপনি চাইলে এটা বন্ধ ও করতে পারবেন না। তাছাড়া আমার মনে হয়না সেই হিরোইন এর অদেখা কিছু আছে। মডেলিং করতে গিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের ফ্যাশন আয়ত্ব করেছে অনেক আগেই। এর জন্য আপনি ভেঙে পড়বেন?’
‘ এতো নিউজ কে দেয় তোমাকে?’
‘ নেটওয়ার্ক এভেইলেভেল। আপনার কি একটা হাগ প্রয়োজন?’
তামিম যেনো এটাই চেয়েছিলো। হাতের নিচে দুহাত গলিয়ে নিজেকে পুরোপুরি সেঠিয়ে দিলো রোজীর বুকে। শরীরটা কেঁপে উঠলো রোজীর। দুহাতে তামিমের পিঠ আঁকড়ে ধরলো। তামিম কাঁদছে রোজী বুঝতে পারলো। ছেলেদের কান্না একটু আড়ালেই থাকা উচিৎ। তাই যথাসম্ভব আড়ালেই রাখলো। তামিম ফুঁপিয়ে উঠলো, ‘ যে নারী নিজের সব থেকে বড় সম্পদ টাকার জন্য ইজ্জতকেই বিলিয়ে দেয় সে কিভাবে আমাকে আগলে রাখার প্রয়াস জানায়? এতো গুলো বছর আমার টাকায় তার কোনো প্রবলেম ছিলোনা। যেই দেখলো শেষ চেষ্টা বিফলে সেই চলে গেল নিজের আসল রুপ দেখাতে। সংসার চাইলেই পাওয়া যায়না। তার জন্য যোগ্যতা লাগে। ক্ষমতা লাগে। ইচ্ছা লাগে। যে নিজে নিজেকে রক্ষা করতে চায়না আমি চেষ্টা করে কি করলাম?কেউ চেয়েও পায়না কেউ পেয়েও চায়না।’
রোজী অস্থির হয়ে উঠলো।তামিমকে শক্ত করে জড়িয়ে বললো, ‘ ডাক্তারসাহেব আপনি যদি সত্যিই সংসার করতে চান তাহলে আমি ব্যতীত প্লিজ কাউকে বিয়ে করবেন না। বৈঠা ছাড়া নৌকা দুজন। আমার মতো আপনার ব্যথা কেউ এলাও করবে না। ‘

রাত তিনটা নাগাদ বাড়িতে পা রাখলো রোজী। হাতে বড় সড় ট্রলি ব্যাগ। রোজীর বাবা মা জেগেই ছিলো। বিয়ের আগে মেয়ে এখন পর্যন্ত বাড়ি ফেরেনি যতই হবু স্বামীর সাথে যাক! বিপদ তো বলে কয়ে আসেনা। রোজীকে বাবা মার হাতে বুঝিয়ে দিতে তামিম ও এসে দাঁড়িয়েছে পিছু পিছু। রোজীর মা জিজ্ঞেস করলো
‘ ব্যাগে কি? ‘
‘ বিয়ের জিনিসপত্র মা। ‘
‘ ভেতরে আয়। ‘
তামিম বললো, ‘ আমি তাহলে আসি আন্টি। ‘
‘ নাস্তা করে যাও বাবা। এতো রাতে তোমাকে তো থেকে যেতেও বলতে পারছিনা। ‘
‘ ইটস ওকে। এখন কিছু খাবোনা। ‘
‘ বাসায় পৌঁছে রোজীকে জানিও কেমন বাবা?’
তামিম হাসলো। ‘ আচ্ছা। ‘

ফিরোজ খানের সামনে আর্জি পেশ করেছে তামিম। বিয়েটা সে ধুমধাম করে করতে চায়। সবাইকে জানিয়ে বউ ঘরে তুলতে চায়। ফিরোজ খান খুশি হোন।
‘ আমি তোমার কথা ভেবেই বিয়েটা পরিয়ে আনতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি পছন্দ করবেনা ধুমধাম করে বিয়ে করাটা। আমি বেশ খুশি হয়েছি। আসলে বড় ছেলের বিয়ে এভাবে কম আয়োজনে দিলে আমার মান টাও খুব একটা থাকতো না। ‘
‘ অনেক বড় আয়োজন হবে আব্বু। সবার তাক লেগে যাবে। এমপি মন্ত্রী সবাইকে ইনভাইটেশন পাঠিয়ে দাও।লুকিয়ে বিয়ে আর না। আমি কনভেনশন হল বুকিং দিয়ে দিচ্ছি । সবাইকে জানিয়ে দাও। ঐ ডেটেই বিয়ে হবে। ‘
ফিরোজ খান সোহানা ইসলাম একসাথে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলের খারাপ মুহুর্ত গুলো স্বচক্ষে দিনের পর দিন দেখে গেছে। কোন বাবা মা সহ্য করতে পারে? আজ ছেলে নিজে থেকেই নিজেকে ভালো রাখতে চাইছে এটা যেনো তাঁদের কাছে সব থেকে বড় পাওনা। সোহানা জিজ্ঞেস করে, ‘ তুমি মন থেকে রোজীকে বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছো বাবা?’
‘ হুম। ‘
এর পর আর কোনো কথাই থাকে না। সোহানা ইসলাম নিজে দায়িত্ব নিয়ে একের পর এক আত্বীয় স্বজনদের ইনভাইট করছেন। ইসমাইল কথা বলে বাসায় এসে জানাতেই লাবিবা পুরো এক্সাইডেট হয়ে যায়। বই খাতা সব গুছিয়ে রেখে ঝটপট তানভীরকে ফোন লাগায়।
‘ খান সাহেব? ইমার্জেন্সি। ‘
‘ হুয়াট হ্যাপেন?’
‘ ভাইয়ার বিয়ে ধুমধাম করে হবে। মামুনী এইমাত্র জানালো পাপাকে। বুঝতে পারছেন কত মজা হবে? তাড়াতাড়ি আসুন আমাকে মার্কেটে নিয়ে যাবেন। বিয়ের আর মাত্র ছয়দিন বাকি আছে। ‘
‘ অনেক দিন লাব্বু। কাল প্রোগ্ৰাম আছে পরশু নিয়ে যাই তোমাকে। ‘
‘ আরে টেইলার্সে বলতে হবে তো। হলুদে আমরা কাপল ড্রেস পড়বো। লেট হয়ে যাবে। ‘
‘ আমি বিজি আছি এখন।’
‘ খান সাহেব আমি কিন্তু রেডি হয়ে বসে আছি। ‘
‘ রাতে ঘুরতে নিয়ে যাবো। ‘
‘ আমি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিবো। ‘
‘ আম্মু খাওয়াবে। ‘
‘ আমার আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। ‘
‘ ভিডিও কল দাও। ‘
‘ আমার আপনাকে কিসি দিতে মন চাইছে। ‘
‘ আমার ছবির উপরে দাও। ‘
‘ শুনুন না। ‘
‘ ফোন রাখো বলছি। ‘
তানভীর ফোন কেটে দিলে লাবিবার মন ভার হয়। চুপচাপ বসে থাকে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়। মন কে বোঝায় একটুও কষ্ট পাওয়ার যাবে না। খান সাহেব এখন সত্যিই কাজের মধ্যে আছে। লাবিবাও ছিলো দুটো নাগাদ। তারপর চলে এসেছে। এখন যারা আর সব ছেলে। ওরাই বাকি কাজ গুলো সারবে। লাবিবা পারফর্ম করতে চেয়েছিলো কিন্তু তানভীর দেয়নি।

দেড় ঘণ্টা পর তানভীর এসে হাজির। ঝটপট রেডি হয়ে লাবিবা বেরিয়ে আসে।গাল দুটো ফুলিয়ে গোল আলু বানিয়ে রেখেছে। তানভীর মুচকি হেসে আঙুল দিয়ে প্রেস করলো গালে। তাতেই লাবিবার ফুলো গাল টুস হয়ে গেলো। তানভীর যেনো মজা পেলো। হা হা করে হেসে উঠলো। লাবিবা কপট রাগ দেখালো,
‘ আপনি নাকি বিজি?’
‘ আই লাভ য়্যু। ‘
‘ এটা আমার উত্তর নয়। ‘
‘ আই লাভ য়্যু মানে কি জানো ? যে পরিস্থিতিতে ই থাকি না কেনো তোমার জন্য আমি সব সময় এ্যাভেইলেভল ।’
লাবিবা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো। তানভীর আরো হেসে হেসে বললো, ‘ নাও কি কি যেনো করতে চেয়েছিলে করো। ‘ গাড়ি মাঝরাস্তায় উঠে গেছে। লাবিবা চুপচাপ তানভীরের গা ঘেঁষে বসলো। দু হাতে গলা জড়িয়ে ধরে সময় নিয়ে গালে চুমু দিলো। গলা ছেড়ে সরে বসতে চাইলো পারলো না। তানভীর একহাতে জড়িয়ে ধরে আরেকহাত দিয়ে ধীরে ড্রাইভ করতে লাগলো।

টেইলার্সের ভেতর তানভীর ঢুকতে পারলো না। লাবিবাই দিলো না। তার মতে ড্রেস তৈরীর আগে দেখা যাবেনা। আরো দশ হাজার টাকা তানভীরের পকেট থেকে গেলো। লাবিবা আর্জেন্ট ড্রেস মেক করে দিতে বলে পাওনা টাকা দিয়ে দিলো। সাথে লেজ, ঝুমকা এসবের জন্য যে টাকা বকেয়া রেখে গিয়েছিলো সেটাও পরিশোধ করলো। তানভীর জিজ্ঞেস করলো,
‘ এটা কি হলো? আমার ড্রেস মেক করছো মাপ টাতো নিতে দিবে ঠিকমতো। সেটাও তো দিচ্ছো না। ‘
‘ হয়ে যাবে কোনো ব্যপার না। ‘
‘ আমাকে কেনো দেখতে দিচ্ছো না? ‘
‘ সারপ্রাইজ তো। নষ্ট হয়ে যাবে না?’
‘ এটা কেমন যুক্তি?’
‘ খান সাহেব আমাকে বউ সাজে দেখেছেন কখনো?’
‘ না। দেখতেও চাইনা। ‘
‘ কিহ? কেনো?’
‘ অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। আগেই সাবধান। সামান্য লিপস্টিক আমার সহ্য হয়না আরো নাকি বউ সাজ! পাগল করে দেবার প্রসেস সব। ‘
‘ কিসব বলছেন?’
‘ এইযে দাঁড়িয়ে আছো সেটাও আমার সহ্য হচ্ছে না।’
‘ হায় আল্লাহ! কি সাংঘাতিক!’
‘ বাংলায় একটা প্রবাদ আছে বলবো?’
‘ কইয়ের তেলে কৈ ভাজা। ‘

চলবে ___

#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো

(৫০)
লাবিবা আজ একটা ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তানভীর স্যারের মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত। আগে জামাই ছিলো না সাজুগুজু করেনি সাধাসিধে থেকেছে সেই এক কথা। এখন বিয়ে হয়েছে ইচ্ছা মতো সাজবে। জামাইয়ের সামনে সামনে ঘুরবে । আহ্লাদ করবে। টুপ টাপ চুমু খাবে । গলা ধরে ঝুলবে। মুড অনুযায়ী রোমান্স জুড়ে দিবে তা না একটু সাজলেই বেচারার নাকি মাথা খারাপ হয়ে যায়। লাবিবা মাথায় হাত দিলো।
‘ নারে লাব্বু না। এতো আবেগ জমিয়ে কি লাভ হলো? ম্যারিড লাইফে তুই একদমি সুখী না। আগেই ভালো ছিলাম। সুখে থাকতে ভুতে কিলায়! ‘
কলাপাতা রঙের একটা শাড়ী নিলো লাবিবা। তানভীর গিফট করেছিলো। পড়া হয়নি। আজ পড়বে। ব্যাগ প্যাক করে বড় কাকীর বাসায় চলে এলো। ভাবীর কাছে শাড়ি পড়িয়ে নিলো। ছোট্ট করে হিযাপ করে পার্টি সাঝ দিলো। গলায় লকেট সহ সাদা পাথরের বড় চেইন পড়লো। ভাবী বললো,
‘ তুই আমার কাছে শাড়ী পড়ার ট্রেনিং নিবি । আমাদের মা কাকীরা শাড়িই পড়তো। আমরাই এখন নিয়ম পরিবর্তন করেছি। তুই শাড়িই পড়বি। সুন্দর লাগে তোকে। ‘
লাবিবার দুঃখ অনুভুত হলো। একরাশ মন খারাপ নিয়ে বললো, ‘ উনি পছন্দ করেন না ভাবী। ‘
‘ কি বলিস?’
‘ পছন্দ করে বাট পড়তে দেয় না। আমি জানিনা ভাবী কোথাও যেনো মনে হয় আমাদের মধ্যে একটা ফাড়াক রয়ে গেছে। সেটা কি আমি জানি না। উনি আমার সব কথাই মেনে নেন। কিন্তু নিজের কাজেই বেশী ব্যস্ত থাকেন। ‘
‘ কেনো এমন মনে হয়?’
‘ আমার মনেই এমন লাগে। উনি আমাকে যথেষ্ট কেয়ার করে বাট আমার…. আমার ই মনে হয় প্রবলেম তাইনা ভাবী?’
‘ হবে হয়তো। তোর ভাই কলকাতা থেকে আসুক। উনার তো ফ্রেন্ড। যদি তানভীরের দিক থেকে কোনো অসুবিধা থাকে তাহলে ও ম্যানেজ করে নিতে পারবে। ‘
‘ আমার ই যেনো কেমন লাগে। ‘
‘ আচ্ছা বাদ দে। খুব সুন্দর লাগছে। জামাই এসে নিয়ে যাবে?’
‘ উনি বিজি। আব্বুর সাথে যাবো। ‘
‘ বেরিয়ে পর। সময় হয়ে আসছে। ‘

লাবিবা কলেজে নেমে স্টেজের দিকে না গিয়ে যায় তানভীরের রুমের দিকে। ওকে দেখা দিয়েই তারপর যাবে। লাবিবা দ্যা গ্ৰেট ! শাড়ির সাথে ক্যাটস পরে দুর্দান্ত হাঁটছে। তার পাশে চলা মেয়েগুলো ধীরে ধীরে হাই হিল পড়ে হাঁটছে। গ্ৰীলের বাইরে থেকে উর্মিলা দেখে হাত নাড়ে। লাবিবা ইশারায় বোঝায় পরে আসছি। তানভীর এখনো পৌঁছে নি। লাবিবা জানে না কখন আসবে। লাবিবা মনে মনে প্লান করে। সে তানভীরের সামনে বেশিক্ষন থাকবে না। দেখা দিয়েই চলে যাবে। নয়তো পরে দেখা যাবে তাঁকে বলবে বাড়ি চলে যাও। প্রোগ্ৰামে যাওয়ার দরকার নেই। তানভীরের বসার জায়গাতেই বসে পায়ের উপর তুলে। সেলফি ক্যামেরায় হুয়াইট ব্ল্যাক ফিল্টার দিয়ে দারুন দারুন ছবি তুলে। একেবারে নব্বই দশকের মতো । লাবিবার বেশ পছন্দ। বড় বড় চোখ দুটো কলমের কালিতে যেনো ফোঁটে উঠে। বসে বসে সেসব সেলফি ইডিট করে সময় পার করে। গ্লাসের বাইরে দেখে পিয়ন এসে মাত্র ই দাঁড়িয়েছে। তারমানে তানভীর এখনি এসে পড়বে।

বেশ বেগে রুমে ঢুকে তানভীর। টেবিলের উপর ফোন ওয়ালেট রেখেই ওয়াশরুমে ঢুকে। লাবিবাকে খেয়াল করে না। মিনিট পাঁচেক পর বেরিয়ে আসে। এমন তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে ঢুকতে দেখেই লাবিবা মুখ টিপে হাসে। তানভীর কে বের হতে দেখে আবার চুপচাপ হাসে। এতো চাপ নিয়ে থাকলে আশে পাশের আর খেয়াল থাকে না। লাবিবা তানভীরকে ডাকবে তখনি তানভীর লাবিবার দিকে এসে তাঁকে টেনে চেয়ার থেকে নামিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়। নিজেও চেয়ার টেনে বসে মুখোমুখি হয়। লাবিবার পা দুটো নিজের পায়ের ফাঁকে নিয়ে। ইসস! লাবিবা এখন কি করবে? যদি বলে এখানেই বসে থাকো তাহলে তো সর্বনাশ। তানভীর হাত বাড়িয়ে লাবিবার কোমড় জড়িয়ে ধরে। গলায় মুগ্ধতা জড়িয়ে বলে,
‘ ডারলিং আই ক্যান গিভ য়্যু টেন মিনিটস অফ টাইম।
এন্ড দ্যান আই হ্যাভ টু গো। ‘
‘ আপনি জানতেন আমি এখানে?’
‘ জানতাম। ‘
‘ কে খবর দিয়েছে? ‘
‘ পিয়ন। ‘
‘ তাহলে আমরা মাত্র দশ মিনিট প্রেম করবো? আচ্ছা নো প্রবলেম। ‘
‘ আচ্ছা! প্রেম করতে আসছি আমি? তো প্রেম কিভাবে করে তুমি জানো?’
‘ আপনি জানেন না প্রেম কিভাবে করে? কোনদিন প্রেম করেন নি?’
‘ নাহ। ‘
‘ ছি ছি! শেষ মেষ আনএক্সপেরিয়েন্স পার্সনকে বিয়ে করলাম!’
‘ আপনার দুর্ভাগ্য। কি আর করার? সুযোগ করে দেওয়া হোক। ‘
তানভীর দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলে।
‘ ঐযে হাত ধরে একসাথে পার্কে হাঁটে। আঙুলের ফাঁকে আঙুল। বসে বসে গল্প করে করে। মিষ্টি মিষ্টি গল্প। বাদাম ছুলে খায়। ‘
‘ তোমাকে নিয়ে আমার নিব্বা নিব্বি ক্যাটাগরিতে নাম লেখানোই বাকি আছে। ‘
‘ ছিহ! আমি এডাল্ট। কি বলুন তো আসলে আপনি আমাকে ভ্যালুই দেন না। এই যে আপনার এতো সুন্দর একটা বউ নামের প্রেমিকা অন্যরা হলে কি করতো জানেন? এত্তো এত্তো ভালোবাসতো। চোখে হারাতো। খাওয়া দাওয়া চান্দে তুলে দিতো। আপনি কি করেন? কিছুই করেন না। ‘
‘ কিছুই করিনা?’
‘ নাহ। ‘
‘ মিথ্যা কথা আমি নিতে পারিনা লাবিবা। ‘
‘ একটু নিলেই কি আসে যায়?’
‘ এতো এতো ভালোবাসি কে বলে?’
‘ আপনি। একটু একটু ‌। বেশী না। ‘
‘ যা চাও তাই কে দেয়?’
‘ আপনি দেন। ‘
‘ তোমার কেয়ার কে করে?’
‘ আপনি। ‘
‘ হাত ধরে কে হাঁটে?’
‘ একটু হাঁটেন বলেই বলতে হবে? ‘
‘ খাইয়ে দিই না?’
‘ হটাৎ হটাৎ। ‘
‘ এতো এতো শপিং কার সাথে করো?’
‘ আপনার সাথে। ‘
‘ কাছে টেনে নিই না?’
‘ নেন। ‘
‘ তারপর কি করি?’
‘ রোমান্স করেন। ‘
‘ তারপর?’
‘ বলবো না। ‘
‘ বলো কি করি?’
‘ উহু বলবো না। ‘
‘ তাহলে বলো মাঝরাতে কি করি?’
লাবিবা লাফ দিয়ে নেমে দাঁড়ায়। ঝটপট তানভীরের পা সরিয়ে দৌড় দেয়। সে বলবেনা। দরজা খুলার আগেই তানভীর কোমড় চেপে ধরে। টেনে উপরে তুলে ধরে। কানে মুখ নিয়ে বলে,
‘ না বললে ছাড়ছিনা। ‘
‘ খান সাহেব। আমার ভীষন লজ্জা করছে। ছাড়ুন না!’
‘ লজ্জা ভেঙে দিই?’
‘ আমি লাব্বু তো। লজ্জা আমার সাথে যায়ই না। ‘
‘ তাহলে বলো আর কি করি?’
লাবিবা তানভীরের উপর লজ্জায় গলে গেলো। গলায় মুখ গুঁজে দিলো। ধীরে ধীরে বললো, ‘ আদর করেন ‘।
তানভীর উচ্চস্বরে হাসলো। ছটফটানি বউটা যে তার হুটহাট এমন লজ্জা পেয়ে বসে ভেবেই হাসি পায়। আরেকটু লজ্জা দেবার জন্য বললো,
‘ এখন একটু করি?’
লাবিবা মাথা নাড়ালো।
‘ উঁহু ‘।
‘ সুন্দর লাগছে তো। ‘
‘ উঁহু। ‘
‘ টাইম ইজ ওভার জান। ‘
লাবিবাকে ছেড়ে দাঁড়ালো। ‘ চোখে চোখে থাকবে। একদম চোখের আড়াল হবেনা। আমি বের হবার পর বেরিয়ে যাবে। ‘
দরজার সামনে গিয়ে ফিরে তাকালো। আঙুল উঠিয়ে বললো, ‘ আর শোনো। সময় পেলে বিকালে দেখি পার্কে নিয়ে যাবো। বাদাম ছুলে খাওয়াবো ‌। হ্যাপি থেকো। ‘

হাতে গোলাপ আর রজনীগন্ধার বুকে নিয়ে অপেক্ষা করছে লাবিবা এবং তার সহপাঠিরা। সিনিয়র স্টুডেন্টরা একে একে অতিথি এবং টিচারদের অভিনন্দন জানাবে। ফিরোজ খানের নাম এনাউন্স করতেই লাবিবা চঞ্চল হয়ে উঠে। শ্বশুর সাহেব ও যে আসবেন সে তো জানতোই না। সে যাই হোক, লাবিবাদের সামনে দিয়ে একে একে প্রিন্সিপালের সহিত অতিথি গন যার যার আসন গ্ৰহণ করেন। লাবিবা নিজের সিরিয়াল গুণে গুণে দেখলো। সর্বনাশ! তানভীরের তিন জনের পেছনে সিরিয়াল হয়ে যাবে তার। এখন কি হবে? সে উপস্থিত থাকতে তার হাজবেন্ড কে অন্য কেউ এসে ফুল দিয়ে যাবে! এটা কখনোই হতে পারে না। লাবিবা দাঁড়িয়ে থেকেই টেনশনে মোচড়া মোচড়ি শুরু করে দিলো। এখন? কি হবে? একপা দুপা পিছিয়ে গেলো। বিরবির করতে করতে গিয়ে তিনজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হুট করেই ধাক্কা দিয়ে জায়গা করে নিলো। পাশের দুজন বাঁকা চোখে তাকালো। লাবিবা ঘাবড়ে না গিয়ে দাদা দাদা ভাব নিয়ে বললো,
‘ এই সরো তো। গায়ে পড়ছে কেমন যেনো!’
ক্লাসমেট দুটো ভ্যাবাচ্যেকা খেয়ে গেলো। লাবিবা মুখ টিপে হাসলো। ঐ যে বলে না? জোর যার মল্লুক তার! যেই জো হয়েছে। লাবিবা চুপচাপ থাকলো। দৃষ্টি তানভীর বরাবর। গ্ৰে কালার স্যুটে একদম মাখনের মতো লাগছে। উহু। পেষ্টীর মতো লাগছে। ইসস! লাবিবা বড্ড লোভী হয়ে গেছে।

একে একে সবাই এগুতে লাগলো। লাবিবা গিয়ে দাঁড়ালো তানভীরের সামনে। তানভীর মুখ টিপে হাসলো। লাবিবাকে এখানে বসেই খেয়াল করেছে। কিভাবে জায়গা করে নিতে হয় মেয়েটা ঠিক ই জানে। নির্দেশনা পেতেই সবাই একসাথে ফুল নিবেদন করলো। লাবিবাও ফুল এগিয়ে দিলো। সাবধানে সামান্য একটু ঝুকেও গেলো। তানভীর ও সামঞ্জস্য রাখতে একটু ঝুঁকে গেলো। এভাবেই ম্যানেজ করতে হয় তাকে সবসময়। লাবিবা ফিসফিসিয়ে বললো,
‘ স্যার আই লাভ য়্যু। ‘ তানভীর রিপ্লাই করলো,
‘ লাভ য়্যু ট্রু মাই স্টুডেন্ট। সোজা হয়ে দাড়াও। ‘
লাবিবা সবার সাথে নেমে এলো। আসার সময় ফিরোজ খানের সাথে ক্রস হলো। দুজনেই চোখে হাসলো। তানভীর লক্ষ্য করলো। বক্তৃতা শেষ করে কেক কাটা হলো। নতুনদের উদ্দেশ্য অনেক কিছুই বলা হলো। তারপর শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশগ্ৰহনকারীরা নিজেদের প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পেলো।
এতোক্ষন লাবিবা তানভীরের চোখে চোখেই ছিলো। তার নির্দেশ। সামনে থেকে সরে যাওয়া যাবেনা। অনুষ্ঠানের মাঝে হটাৎ তানভীরের দেখলো লাবিবা নেই। তার চোখ জোড়া লাবিবাকে খুঁজে পাচ্ছে না। ওয়াশরুমে যেতে পারে বলে ওয়েট করলো। একটু পর পর তাকালো। লাবিবাকে আর দেখতে পারলো না। আধঘন্টার বেশী সময় চলে গেলো। তানভীর আর স্থির থাকতে পারলো না। উপস্থিতদের বলে আসন ছেড়ে বেরিয়ে এলো। ফিরোজ খান ছেলের কুচকানো কপাল দেখে দুঃখ প্রকাশ করলো। সুন্দর বউ যেমন শান্তি দেয় তার চেয়ে বেশি দেয় টেনশন। এই সময় সেও পার করে এসেছে। তবুও ছেলে তো! আফসোস টা ঠিকই বেরিয়ে এলো।

তানভীর নিজে খুঁজলো না। একটা ফ্লোর নিজে খোঁজে যখন পেলো না তখন উপরের ফ্লোর গুলোতে তিনজনকে খোঁজতে পাঠিয়ে দিলো। লাবিবা নেই।‌কোথাও নেই। ফোন টাও তুলছে না। তানভীরের মাথা ঘুরতে লাগলো। গেইটে, গাড়িতে, ক্যাম্পাসে সব জায়গায় পাগলের মতো খুঁজলো। উর্মি তো পুরো যেনো কেঁদে দিলো। ছুটতে ছুটতে ভেতরের দিকে বড় বিল্ডিং টার পাশ থেকে লাবিবাকে প্রাণপনে ছুটে আসতে দেখলো। তানভীর সেদিকেই ছুটলো। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা। তানভীর লাবিবার কাছে পৌছোনোর আগেই লাবিবা মাটিতে নুইয়ে পড়লো। রক্তে রঙিন হলো সবুজ ঘাস।

চলবে ____