#ভালোবাসার কাব্য গাঁথবো
(৭২)
একটু সময়ের কথা বলে অনেকক্ষন হয়ে গেছে। তানভীর অপেক্ষা না করে রেস্টুরেন্টেই চলে আসে। লাবিবা ভেতরে বসেই গ্লাসের বাইরে থেকে দেখতে পেলো তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে তানভীর। লাবিবার খাওয়া অফ হয়ে গেলো। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে তানভীরের গতি অনুযায়ী দিক পাল্টালো। লাবিবার পাশে এসে দাড়াতেই উপস্থিত জনের নজর ঘুরে গেলো। আকাশ দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।
‘ আসসালামুয়ালাইকুম ভাই। ‘
তানভীর লাবিবার চোখে চোখ রেখেই গ্ৰহণ করলো,
‘ ওয়ালাইকুমুস সালাম। ‘
‘ ভাই। বসো। ‘
‘ একটু ব্যস্ততা আছে। উর্মিলা, নাকিব শেষ হলে চলে যেও। ওকে?’
‘ ওকে স্যার। ‘
আকাশ বললো , ‘ ভাই তোমার সাথে ভাবী কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছে। ‘
‘ শুনে নিবো। এসো। ‘
লাবিবার হাত মুঠো করে জোর কদম ফেললো। গাড়ির দরজা খুলে চোখে ইশারা করলো, ‘ বসো। ‘
লাবিবা ঝটপট উঠে বসলো। তানভীরের অভিব্যক্তি তার বুঝে আসছে না। চুপচাপ কনফিউশন নিয়ে তানভীরকে দেখতে লাগলো । তানভীর গাড়িতে উঠে একবার লাবিবার দিকে চোখ বুলিয়েই স্টার্ট করলো। লাবিবার হাতে সাবওয়ে। বেচারা না খেতে পেরে ফস করে হাতে তুলে নিয়েছে। এখন তানভীরের পাশে বসে খাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। কিছুক্ষন দৃষ্টিতে তানভীর কে
অবজার্ভ করলো। ডাকলো, ‘ খান সাহেব। ‘
‘ হাতের খাবার ফিনিশ করো। ‘
না তাকিয়ে ই হুকুম দিয়ে দিলো। লাবিবা একটু মুখে দিয়েই জানালা দিয়ে ফেলতে চাইলো। ওমনি তানভীর
হাত ধরে ফেললো।
‘ ফেলছো কেনো?’
‘ খাবোনা। ‘
‘ ফিনিশ করো। ‘
‘ উহু। ‘
তানভীর হাত ঘুরিয়ে এনে সাব ওয়েতে কামড় বসালো। শেষ করার পর টিস্যু হাতে মুছে নিলো। ফাঁকা জায়গায় গাছের নিচে গাড়ি থামালো। একটু সামনেই একটা টং দোকান। তানভীর দোকান থেকে গিয়ে পানির বোতল নিয়ে এলো। ততোক্ষনে লাবিবা নেমে দাঁড়িয়েছে গাছের নিচে। কৃষ্ণচূড়া গাছ। ডাল পালা মেলে বড় ছাতার মতো হয়ে আছে। গাছের নিচে পুরোটাই বালুমাটি। লাবিবা ভাবলো যখন কৃষ্ণচূড়া ফুটে এই বালুর উপর পড়ে লেপ্টে থাকবে, উপরেও কৃষ্ণচূড়া নিচেও কৃষ্ণচূড়া কি সুন্দর যে লাগবে! তানভীর লাবিবার ধ্যানের মাঝেই বোতল খুলে হাত টেনে নিলো। তৈলাক্ত মেয়োনিজ পানিতে ধুয়ে দিলো। টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো। লাবিবা দুই ঢুক পানি মুখে দেবার পর বললো,
‘ গাড়িতে উঠো। ‘
লাবিবা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ আপনি কি আমার উপর রাগ __
কথা শেষ না করতেই গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধাক্কা দিয়ে সিটের উপর ফেলে দিলো লাবিবাকে। কোমড়ে লাগাতে লাবিবা চিৎকার দিয়ে উঠলো। তানভীর মুখোমুখি হয়ে দাঁত দাঁত চেপে বললো,
‘ একঘন্টা অপেক্ষা করিয়েছিস আমাকে। তোর কি আমার কাছে আসতে মন চায়না? ‘
হিংস্র দৃষ্টিতে লাবিবার কলিজা শুকিয়ে কাঠ। যে মানুষ টা এতোটা ভালোবাসে সে কেনো এতোটা হিংস্র আচরণ করবে? লাবিবা ভাবতে ভাবতেই তানভীরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। গলা জড়িয়ে নিজের উপর নিয়ে নেয়। কাঁপা গলায় শান্ত করতে চেষ্টা করে।
‘ হায় আল্লাহ! আপনি আমার সাথে এমন করেন কেনো? আপনার মাঝেই আমার সুখ আপনি তো জানেন আপনার সংস্পর্শেই আমি পরিপূর্ণ। প্লিজ এতো রেগে যাবেন না। ‘
তানভীর চোখ বুজে শ্বাস নিলো। লাবিবার গালে কয়েকবার গভীর ভাবে ঠোঁট ছোয়ালো। আদুরে গলায় বললো, ‘ সরি জান ‘।
‘ একটা কথা বলি?’
‘ অনেক গুলো।’
‘ আপনি যখন রেগে আমাকে তুই ডাকেন শুনতে বেশ লাগে। ‘
লাবিবার ঠোঁটে মিটি মিটি হাসি। তানভীর দাঁতে দাত কামড়ে বলে, ‘ তাই না? দেখাচ্ছি। ‘
‘ এই না। ‘
কে শোনে কার কথা? হাতাহাতি করতে গিয়ে লাবিবা ফের চিৎকার করে উঠে, ‘ ইসসসস আবার কোমড়ে ব্যাথা।’
‘ ঘুরো। ‘
‘ হুম?’
‘ দেখি। কোথায় ব্যথা? এখানে?’
‘ না একটু লেফ্টে। ‘
তানভীর বুড়ো আঙুলে চেপে চেপে ম্যাসাজ করে দিলো। ব্যথা কমে গেছে। সিটে বসে লাবিবাকে টেনে বুকের উপর তুলে নিলো। কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
‘ আমাকে অপেক্ষা করাবেনা কখনো। অপেক্ষা করাটা খুবই পেইনফুল। অনেক অপেক্ষা করেছি। আর চাইনা।
যখন তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করবে তখনি দেখতে চাই। যখন কাছে পেতে ইচ্ছা করবে তখনই চাই।’
‘ আচ্ছা। ‘
‘ আমার সব সময় চাই। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
‘ শুনবেতো আমার সব কথা?’
‘ আচ্ছা। ‘
‘ ধূর! কাকে বলছি আমি এসব কথা? রীতিমত মজা নিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়াস কথাবার্তা বুঝে না। ‘
তানভীরের রিয়েকশনে লাবিবা খিলখিল করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে পেটে হাত চেপে ধরে একটু ধাতস্থ হয়ে বলে, ‘ আচ্ছা। ‘
তানভীরের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু কিছু বললো না। বুকের উপর দুহাতে লাবিবার মাথা চেপে ধরলো। লাবিবাও দুহাতে আকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ এতো পাগল কেনো আপনি? আমি তো কতো খুঁজলাম। পেলাম না কেনো?’
হিজাবের উপর দিয়েই তানভীর মাথায় পর পর কয়েকটা চুমু দিলো।জানালার গ্লাস তুলে দিয়ে বললো
‘ সানগ্লাস পড়ে ছিলে তাই পাওনি। এখন কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকো। ‘
রোজীর দিকে তামিমের সন্ধানী দৃষ্টি। রোজীকে অস্বাভাবিক লাগে। আগেও এমনি ছিলো কিন্তু তামিম কোনো গুরুত্ব দেয়নি। গুরুত্বহীন মানুষটা যত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ততোই বেশি নজর পড়ছে। একটু আগেও রোজী বসে বসে ঝিমুচ্ছিলো। লাবিবা যদি মাঝে মাঝে কোনো জোকস বলে তখন একটু হাসে। বাকিটা সময় মুখ বেজার করে রাখে। অতি স্বাভাবিক দেখায়। কিন্তু তামিমের নিকট বিষয়টা ঠিক লাগে না। তামিম রোজীকে বললো, ‘ রোজ আমার মনে হয় তুমি সিক। আমি তোমার কিছু টেস্ট করাতে চাই। ‘ রোজী চমকে উঠলো। জানতে চাইলো ‘ কিসের টেস্ট? ‘
‘ এইতো নরমাল বডি চেকাপ। ‘
‘ কেনো?’
‘ তোমার অস্বাভাবিক আচরনের জন্য। আরো কিছু জানতে চাও? ‘
রোজীর ভেতরে ভয় ঢুকে গেলো। তামিমের শক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নানা রকম সমীকরণ মেলানোর চেষ্টা করলো। কিছু সময় পরে নিজে নিজেই আঁতকে উঠলো। দুহাত নাড়িয়ে নিষেধ করলো।
‘ না না না। ডাক্তার সাহেব আপনি যেটা ভাবছেন তেমন কিছুই না। আমার ভেতরে কোন রোগ নেই। আমি তো চেষ্টা করি আপনার জন্য অপেক্ষা করার। হয়ে উঠে না।”
‘ শান্ত হও। ‘
রোজী প্রায় কেঁদে ফেললো। ‘ ডাক্তার সাহেব আমার ম্যারিড লাইফ এতোটাও সুখের ছিলোনা। আমার পাওনার কোটা খুবই অল্প। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই চলবো। তবুও এরকম কিছু সন্দেহ করবেন না। ‘
‘ কি সন্দেহ করেছি আমি? এইচ আইভি পজিটিভ? একজন হেলথ কনসিয়াস মানুষ ও তো অল বডি চেকাপ করায়। আর তোমার মাথায় এটাই এলো। কি নেগেটিভ চিন্তা!’
রোজী চুপসে গেলো। তামিমের কথা শুনে যতোটা না লজ্জিত হলো তাঁর ও বেশি লজ্জা পেলো তামিমকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। তামিম মাথা নাড়ালো। শুধু বললো, ‘ বুদ্ধির ঘট খালি। ‘
রোজীর মোটেই তেমন মনে হয়না। এমনিতেই ফাটা বাঁশ হয়ে আছে। কখন শক্ত আঠা লাগবে সেই অপেক্ষায়। রোজী গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে তামিমের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে বুকে মাথা রাখলো। তামিম বিরবির করলো, ‘ হুম। শুধু এসব ই পারো। ‘ রোজী তৎক্ষনাত পিঠ ছেড়ে গলা জড়িয়ে ধরলো। তামিম মৃদু হেসে একবার পিঠে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো। সাবধানে থাকতে বলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
বিছানার উপর বার বার ফোন বাজছে। লাবিবা শুনেও ফোনটা তুলতে যেতে পারছেনা। লাবিবার কনুইয়ের উপর তানভীরের প্যান্ট। দুই হাতে এখন যে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে। তার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তানভীর। তানভীরকে সে আর ঘর নোংরা করতে দিবে না। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েই দেখে দুটো শার্ট সোফাতে পরে আছে। দেখতে দেখতেই চোখের সামনে আরো তিনটা শার্ট তানভীর ছুড়ে দিলো। এতোক্ষনে লাবিবার হুস এলো। জবেদা নিজ দায়িত্বে লাবিবাকে জানিয়ে গেছে তানভীরের এই ড্রেস সিলেক্টের ব্যাপারটা। আরো জানিয়ে গেছে এবার থেকে লাবিবা গুছাবে। সে আর গোছাতে আসবে না এ ঘরে। লাবিবা তাড়াহুড়ো কে তানভীর কে আটকালো। নিজের আন্দাজে সিলেক্ট করে বললো,
‘ এটা পরে নিন। ভালো লাগবে। ‘
‘ পরিয়ে দাও। ‘ বলে তানভীর সামনে এসে দাড়ালো। লাবিবা ঝটপট পরিয়ে দিতে লাগলো। খুব মনোযোগ দিয়ে বোতাম লাগাচ্ছে তানভীর মনে মনে হাসতে লাগলো। প্যান্টটাও নিজে পড়লো না। মোজা পর্যন্ত লাবিবাই পড়িয়ে দিলো। ঠিক ঠাক ইন করার পর তানভীর সোজা হয়ে দাঁড়ালো।
‘ দেখোতো ঠিক ঠাক?’
‘ ঠিকই তো লাগছে। আমি অত বুঝি না। আপনি মিররে দেখে নিন। ‘
‘ প্রয়োজন নেই। তুমি বলো। ‘
লাবিবা মুচকি হেসে বলল,’ পারফেক্ট। ‘
‘ আজ থেকে দায়িত্ব তোমার। আমার কাজ কমে গেলো। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
লাবিবা ভেবেছিলো ড্রেস সিলেক্টের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু না। তানভীরের প্রত্যেকটা কাজ এখন লাবিবাকেই করতে হয়। প্রত্যেকটা সকালে তানভীর কে রেডি করানো, ব্রেকফাস্টে পাশে থাকা থেকে শুরু সবকিছুতেই তাকে থাকতে হয়। বলেছিলো সব সময় চাই। যতক্ষন সাথে আছে একটু এদিক ওদিক যাওয়ার সুযোগ নেই। লাবিবা অবশ্য খুব আগ্ৰহ নিয়েই সবকিছু করে। রাতে তানভীর বাড়ি ফেরার পর গোছল করার সময় ডেকে নিয়ে বলে ‘মাথায় শ্যাম্পু করে দাও।’ লাবিবা কোমড়ে শাড়ি গুঁজে নিয়ে ভেজা চুলে আঙুল গুঁজে দেয়। ছোটবেলায় সাবিনা লাবিবাকে গোছল করানোর সময় ছোট ছোট চুলে শ্যাম্পু করে দিতো । চোখে ফেনা লাগতে না লাগতেই লাবিবার চিৎকার শুরু হতো। সেসব কথা মনে করেই লাবিবা মুচকি মুচকি হাসে। বন্ধ চোখ ছোট ছোট করে খুলে তানভীর দেখে লাবিবা হাসছে। বাহুতে কোমড় পেঁচিয়ে ভেজা শরীরের সাথে চেপে ধরতেই লাবিবা চেঁচিয়ে উঠে।
‘ এই এই আমার শাড়ি ভিজে গেলো। ‘
‘ যাক। ‘
‘ খান সাহেব।ছাড়ুন। ‘
লাবিবাকে তো ছাড়লোই না। উল্টে সোজা হয়ে বসে অর্ধ ভেজা শাড়িটা পুরোটাই ভিজিয়ে দিলো। বুকের উপর মাথা রেখে আদেশ করলো,
‘ নিজের কাজ করো। ‘
লাবিবা কিছু মুহূর্তের জন্য থমকে গিয়েছিলো। তারপর ঝটপট শ্যাম্পু শেষ করে দিলো। তানভীর থেকে সরে দাঁড়িয়ে দেখলো শাড়িতেও ফেনা লেগে আছে। এমনিতেই শাড়ি ভিজে আছে তাই পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিলো। তানভীরকে বললো,
‘ আপনি তাড়াতাড়ি আসুন আমি চেঞ্জ করি গিয়ে। ‘
তানভীর যেতে দিলো না। আঁচল টেনে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,সাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে পরলো।
‘ কোথায় যাচ্ছো? আমরা এখন একসাথে সাওয়ার নিবো। ‘
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা
#ভালোবাসার_কাব্য_গাঁথবো
(৭৩)
‘ দোস্ত আমি ঐ আকাশ বাতাস কে বিয়ে করবোনা। ‘
‘ কি প্রব্লেম?’
‘ আমার ভালোই লাগে না। এরকম একটা ছেচড়া ছেলেকে কে বিয়ে করবে?’
‘ তুই করবি। আগে বল কি ছেচড়ামি করেছে ?’
‘ বাসা থেকে বের করে সোজা মলে নিয়ে এসেছে। আজ থেকে নাকি তার বিয়ের শপিং শুরু হবে । এখন আমি দশ মিনিট থেকে ট্রায়াল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ‘
‘ কেনো? ‘
‘ উনি একটা করে চেঞ্জ করছেন আর আমাকে বলতে হচ্ছে কোনটাতে ভালো লাগছে কোনটাতে লাগছে না।’
‘ এই পর্যন্ত কয়টা ড্রেস চেঞ্জ করেছে? ‘
‘ চারটা। ‘
‘ এতো ভদ্র একটা ছেলে কে আমি আনমেরিড হলে এখনি বিয়ে করে নিতাম। আর তুই বলছিস ছেচড়া? ‘
‘ এখানে তুই ভদ্রতার পেলি? ‘
‘ তাহলে? অভদ্র হলে তো তোকে নিয়েই ট্রায়াল রুমে ঢুকতো। তোর চোখের সামনেই একটা একটা ড্রেস চেঞ্জ করতো আর বলতো, দেখোতো উর্মি পারফেক্ট লাগছে কিনা? ‘
‘ লাব্বু এতো তেল লাগাস না। ‘
‘ বাসা থেকে কি আকাশের পায়ে হেঁটে বের হয়েছিস? নাকি আকাশ তোর ব্রেইন কন্ট্রোল করে? এতো প্যাচাশ না। শোন আমি বলি। তুই আমার দূর সম্পর্কের দেবর কে বিয়ে করে দূর সম্পর্কের জা হয়ে যা। তোর বাপে তো শুধু খুঁজে বিদেশি পোলা। তোকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো বল? আদৌ কি সম্ভব এটা?’
লাবিবা ভীষণ ইমোশনাল হয়ে গেছে ভাব করলো। উর্মিলা তখনই ফোন কেটে দিলো। সে আর কথাই বলবেনা। আকাশ দরজা খুলে দাঁড়ালো। গায়ে সাদা কাতানের শেরওয়ানি। উর্মিকে বললো,
‘ দেখোতো উর্মি পারফেক্ট লাগছে কিনা? ‘
উর্মিলা দেখলো সত্যিই পারফেক্ট দেখাচ্ছে। সাদা শেরওয়ানি আকাশের গায়ের সাথে সুন্দর মানিয়েছে। আকাশকে উর্মিলার যে খারাপ লাগে তেমন কিন্তু না। খারাপ লাগলে এইযে এতো বার মিট করে, আকাশ ডাকলেই বাসা থেকে বেরিয়ে আসে এসব কখনোই সম্ভব হতো না। তার উপর আকাশ তাকে নিয়ে বেশ সিরিয়াসনেস দেখাচ্ছে। তানভীরের পরিচিত। ঠকে যাওয়ার চান্সও কম। তানভীর তো আছেই।ছেলেটা উল্টোপাল্টা করার সাহস পাবে না। উর্মিলা গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়ালো। শেরওয়ানির কলার টেনে দিয়ে কাঁধে হাত রাখলো। চোখে চোখ রেখে আকাশকে প্রশ্ন করলো,
‘ আপনি যে এরকম পাগলামী করছেন আপনার প্যারেন্টস জানে?’
‘ তাদের অলরেডি তোমাকে পছন্দ হয়ে গেছে। ‘
উর্মিলা অবাক হয়ে গেলো।
‘ কিভাবে পসিবল? আমাকে তারা দেখলো কিভাবে?’
‘ কলেজে। ‘
‘ কখন?’
‘ গত পরশু তানভীর ভাই বাবা আর কাকাকে ডেকে দেখা করার জন্য বললো। দেন তোমাকে দেখিয়ে আমার কথা বললো। এমনিতেও বাবা নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার আমার বিয়েটা দিয়ে দিবে কিন্তু আমিই জানতাম না। বাবা কাকা তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। ‘
‘ কিন্তু আমার বাবা আপনাকে পছন্দ করবেন না। বাবা গ্ৰীন কার্ড ওয়ালা ছেলে খুঁজছে। কয়েকটা সমন্ধ ও এসেছে। বাবা ওদের মধ্যে কাউকে চুজ করে নিবে। ‘
‘ এরকম হলে আমিও তোমাকে নিয়ে ভেগে যাবো। ব্যাপারটা জোস হবে না? ‘
‘ কিহ? এরজন্য আপনি আজ আমাকে টেনেটুনে এনে এসব কেনা কাটা করছেন? ‘
‘ কুল বেয়ানসাহেবা। এতো হাইপার হওয়া ভালো না। ‘
‘ আমি এক্ষুনি চলে যাবো। আপনার সাথে আর থাকবোনা।’
উর্মিলা কাঁধের ব্যাগ চেপে ধরে এক্সিটের দিকে যেতে লাগলো। আকাশ দাঁড়িয়ে থেকেই উঁচু গলায় ডাকলো,
‘ এইযে বেয়ান সাহেবা শুনছো? তোমার বাবা অলরেডি আমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছেন। এইবার তোমাকে নিয়ে আমার ভীনদেশে পাড়ি দেবার পালা। তৈরী থেকো। ‘
উর্মিলা জানতো তার বাবা রিজেক্ট ই করবেন। পাত্তা না দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো।
রোজীর ফুড চার্ট চেঞ্জ হয়েছে। বাড়ির সবাই যেখানে লাইট ফুড খাবে সেখানে রোজী খাবে হেভি ফুড। এই কাজটা তামিম করেছে। রোজীকে ওয়েট গেইন করতে হবে। সাথে আছে কিছু ড্রিংকস। হাড্ডিস্বার মানুষ তামিমের একদম পছন্দ না। হেলদি ফিটনেস থাকতে হবে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ না থাকলে আভিজাত্যের পাশে মানাবে কিভাবে? রোজী আগ্ৰহ করে দুইদিনেই পুরো থেমে গেলো। তামিম থাকতে সেটা সম্ভব হলো না। রোজীর জন্য ড্রেস জুয়েলারি মেকআপ সব অর্ডার করে আনিয়েছে। রোজী নিজেই চুজ করেছে তামিমের পাশে বসে। রোজী হাটা চলা কথা বলা বেশ সুন্দর। সেসবের দিকে নজর দিচ্ছে না। তামিম বাসায় আসতে আসতে রোজী ঘুমিয়ে গেলেও ভোরে তামিম রোজীর পড়া নেয়। সাইন্সের স্টুডেন্ট রোজী। তামিম নিজ দায়িত্বে সাইন্সের সাবজেক্ট গুলো দেখিয়ে দেয়। শুধু ইংলিশ আর বাংলাটা বলে লাবিবার কাছে বুঝিয়ে নিতে। পর্যাপ্ত সময় হয়ে উঠে না তামিমের। সেজন্য লাবিবা আর সে ডিসকাশন করে সাবজেক্ট ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এসব দেখে রোজী বলেছিলো, ‘ হোম টিউটর না হলে ক্লাসমেট দের সাথে কোচিং করি তাহলেই তো আপনাদের কষ্ট __ ‘
তামিম এমন ভাবে তাকায় যা দেখে রোজীর মুখ তখনি বন্ধ হয়ে যায়। তামিম যে হোম টিউটরের পক্ষে না এটা বুঝে গেছে। কোচিং তো প্রশ্ন ই আসে না। লাবিবা চলে গেলে রোজী ভেবেছিলো তামিম তাকে বকবে। তাই গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু তামিম মোটেই বকা ঝকা করলো না। রোজীর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে দিলো। রোজী মাথা উপরে তুলে তামিমের দিকে তাকালো। তামিম মুচকি হেসে বললো,
‘ ভাগ্যের ফেরে তুমি আমার স্ত্রী। যেখানে আমার প্রথম সংসার স্বাভাবিক থাকলে তোমার হাইটের আমার একটা মেয়ে থাকার সম্ভাবনা ছিলো সেখানে তোমাকে আমার ফাস্ট ইয়ারে পড়াতে হচ্ছে। ডিসটেন্স কতটা তুমি হয়তো একবার ভেবেও দেখো নি। কিন্তু আমি ভেবেছি। তোমাকে অনেক তাড়াতাড়ি গ্ৰো করতে হবে রোজ। বুদ্ধিমত্তা, দূরদর্শীতা, সফলতা, সক্ষমতা সবদিক থেকে ২ আসনের এমপি ফিরোজ খানের ছেলে ডক্টর তামিম খানের যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। নিজেকে ইমপ্রুভ করো। জীবনের চল্লিশটা বছর পার করে এসেছি। আগামী চল্লিশ বছর তোমার সাথে কাটানোর সপ্ন দেখতে গিয়েও পিছিয়ে আসি। আমি তোমার সাথে নাইবা থাকতে পারি। কিন্তু তুমি এর বেশি সময় ধরেও খান বাড়িতে থাকতে পারো। তোমার জন্য আমি বরাবর এই দোয়া টাই করে যাবো। এখানে সবাই হেল্পফুল। যত তাড়াতাড়ি অতীত ভুলে বর্তমানকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইবে ততোই তোমার ঝুলিতে সুখ ধরা দিবে। আমি নিজে তোমার সুখের দায়িত্ব নিয়েছি। সবাই তোমাকে ভালোবাসে । ‘
‘ আপনি বাসেন না? ‘
তামিম ঝট করে উত্তর দিতে পারলো না। সময় নিয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, ‘ ধরে নাও। ভালোবাসি। ‘
রোজীর চোখ জুড়া জলে ভরে উঠলো। এই একটু সময় বাদেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়বে। তামিম সেই চোখের জল দেখতে চাইলো না। রোজীর দিকে এগিয়ে কপালে চুমু দিয়ে তখনই প্রস্থান করলো।
তামিম রোজীর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখছে ইদানিং। রোজীর মেডিসিন গুলোও নিজে হাতে খাওয়াচ্ছে। দুই তিন চারদিন হয়ে গেলো রোজীর যেনো তবুও পরিবর্তন নেই। তামিম এবার ঠিকই করলো রোজীকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চেকাপ করাবে। রোজীকে বলতেই রোজী না করে বসলো। তামিম রোজীকে বোঝানোর চেষ্টা করলো।
‘ দেখো রোজ টেস্ট করাতে কি সমস্যা তোমার? তোমার শরীরের ভেতরে যদি কোন বাসা বেঁধে থাকে তাহলে হাজার চেষ্টা করলেও তো হবে না। অনেক উইক পার্সন তোমার মেডিসিন গুলো খেয়ে দুইদিন থেকেই রিকভারি করে তাদের চেঞ্জ চোখে পড়ে অথচ তোমার কোনো চেঞ্জ ই দেখছি না। দুদিনের জায়গায় চারদিন ওয়েট করলাম। তোমাকে যখনি দেখি তখনই মনে হয় তুমাকে আরো মুমূর্ষু দেখাচ্ছে। আমি তোমার কথা শুনতে চাইছি না। ‘
‘ আমি আপনাকে বলেছিই তো আমার সেসব কোনো রোগ নেই। যদি হতো আমি আগেই বুঝতে পারতাম আগেই মারা যেতাম। ‘
‘ সব সময় এই উল্টাপাল্টা চিন্তাটাই কেনো মাথায় আসে তোমার? আমি একবারো বলেছি তোমাকে এইচ আইভি টেস্ট করাতে নিয়ে যাবো? মানুষের শরীরে খাদ্যনালিতে,ফুসফুসে, হার্টে, কিডনিতে কত রকমের সমস্যা হয় তোমার জানা আছে? বাই এনি চান্স রোজ!’
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকায় তামিম। রোজী এবার কি বলবে ভেবে উঠতে পারে না। জোর করলে জোর থামানো যায়। কিন্তু তামিমের চোখে এই অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে সে বড্ড অসহায় ফিল করছে। সাহস করে সিউর হতে চায়, ‘ আমি মোটেও সেরকম কিছু চিন্তা করে বলিনি। আপনি কি আমাকে অবিশ্বাস করেন?’
‘ তুমি আমার পরিচিত? অতীতে স্বাভাবিক লাইফ লিড করেছো? তোমার এক্স হাজব্যান্ড এক নারীতে আসক্ত ছিলো? তুমি আমার প্রতি সিরিয়াস? তোমার শরীর সুস্থ? তোমার ব্রেইনে এটা ছাড়া অন্য কিছুতে ফোকাস করেছে? এবার উত্তর তুমি নিজে মিলিয়ে নাও। ‘
‘ ডাক্তার সাহেব। ‘
‘ হাজব্যান্ড হিসেবে আমাকে সব জানতে হবে। ঘন্টা দুই পর গাড়ি পাঠিয়ে দিবো। যদি আমার সাথে থাকতে চাও তাহলে যাবে । আর যদি না থাকতে চাও তাহলে আশা করি নিজের রাস্তা মাপবে। ‘
উপায়ান্তর খুঁজে পেলো না রোজী। শরীরটা যেনো বেশি খারাপ লাগছে। শীত লাগছে। মনে হচ্ছে গা কাঁপিয়ে জ্বর আসবে। নিজের দ্বিতীয় সংসার বাঁচাতে গিয়ে রোজী হাসপাতালে গেলো। তখন তার শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। টাল মাটাল পা ফেলে ড্রাইভার কে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে আসলো। তামিম সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত। কনুইয়ে ভর করে দু আঙুলে চোখে ঢেকে রেখেছে। রোজীকে টেস্ট করানো হলো। টেস্টগুলোর রিপোর্ট আসলো দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর। তামিম এই সাত ঘণ্টাই হসপিটালে বসে রইলো। একবারের জন্যও রোজীর দিকে তাকায় নি। রোজীও তামিমের পেছনেই বসে ছিলো। এরমধ্যে তামিমের বন্ধু ডাক্তারটির কথায় কফির সাথে একবার নাস্তা আনা হয়েছিলো। তামিম খায়নি। রোজী একটু মুখে দিয়েই আর পারলো না খেতে। গলা দিয়ে কিছু নামবে না আর তার। তামিমের হাতে যখন রিপোর্ট পৌঁছালো রোজীর বুক ধড়ফড় করছে। চোখ দিয়ে অনরগল পানি পড়ছে। তামিম সূক্ষ চোখে রিপোর্ট পর্যবেক্ষন করলো। রোজীর দিকে পেছন ঘুরলো । অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো,
‘ রোজ! সত্যিই তুমি? ‘
চলবে___
@লাবিবা তানহা এলিজা