ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৪৩+৪৪

0
2679

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৩

★দুপুর ২-৩০
সবাই লাঞ্চ শেষ করে ড্রয়িং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আদিত্য আর নূরের বিয়ে নিয়ে নানা রকমের প্লানিং করছে।

তাসির একটু ফ্রেশ হতে ওপরে গিয়েছিল। একটু পরে ড্রয়িং এসে সোফায় বসে। তাসির এদিক ওদিক তাকিয়ে সানাকে কোথাও দেখতে পেল না। তাসির সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…সবাই তো এখানে কিন্তু সানাকে তো দেখছি না। ও কোথায়?

তানি বলে উঠলো।
….সানাতো বাইরে গেল। ওর নাকি কোনো স্পেশাল গেস্ট আসছে। তাকেই রিসিভ করতে গেল।

তাসির ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, সানার আবার কোন স্পেশাল গেস্ট আসছে, তাও আবার এখানে? তাসির বিষয়টা দেখার জন্য তাসিরও ধীরে ধীরে উঠে বাইরের দিকে গেল।

তাসির বাইরে এসে দেখলো সানা ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। তাসির সানার কাছে এগিয়ে গেল। সানার কাছে এসে, পেছন থেকে সানাকে ডাক দিলো। সানা তাসিরের দিকে ঘুরে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?

তাসির বললো।
….সানা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

সানা তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…আমার সাথে আবার আপনার কিসের কথা? আপনি তো আমার চেহারাও দেখতে পছন্দ করেন না। তাহলে আবার আমার সাথে কিসের কথা?

তাসির বিনিত সুরে বললো।
…সানা আমার কথাটা শোন।

সানা পার্ট নিয়ে বললো।
….দেখুন আমার এখন আপনার সাথে কথা বলার সময় নেই।আমার স্পেশাল গেস্ট আসবে, তার জন্যই অপেক্ষা করছি। তাই আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।

সানার কথা শুনে তাসিরের রাগ আরো বাড়তে লাগলো। তাসির দাঁতে দাঁত চেপে বললো ।
….কে এমন আসবে? যার জন্য তুমি এতো ওয়েট করছো?

সানা বললো।
…সেটা আপনাকে কেন বলতে যাবো? আমার লাইফ আমি যা খুশী তাই করি, সেটা আপনি জিজ্ঞেস করার কে?

তাসির চোয়াল শক্ত করে সানার সামনে আঙুল তুলে বললো।
….দেখ সানা,তুমি কিন্তু বেশি বেশি কর…..

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই গেট দিয়ে একটা বাইক এসে দাড়ালো।
বাইকের শব্দে দুজনেই পেছনে তাকালো। বাইক থেকে একটা ছেলে নেমে দাঁড়িয়ে, সানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….হেই বারবিডল, চলে এসেছি আমি।

ছেলেটার কথায় সানা এক গাল হেসে দিয়ে দৌড়ে যেয়ে ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরলো।

এটা দেখেই তাসির রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। হাত দুটো শক্ত করে মুঠ করে অগ্নি চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো। তাসির খেয়াল করলো, এটা সেই ছবির ছেলেটা। তাসির মনে মনে ভাবলো, এই ছেলেটার সাহস তো কম না, এখানেও চলে এসেছে। আবার আমার পিচ্চির সাথে কেমন চিপকে আছে। ওকেতো আমি ছাড়বো না। তার আগে আমার সানার সাথে কথা বলতে হবে। সানা এবার বেশি বারাবাড়ি করছে। ওর সাহস কি করে হলো, অন্য ছেলের সাথে এভাবে ক্লোজ হওয়ার?

সানা ছেলেটাকে বললো।
….তুমি এসে গেছ?আমি এতক্ষণ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। চলো ভেতরে যাই।
কথাটা বলেই সানা ছেলেটার হাত ধরে বাসার ভেতর যেতে লাগলো। সানা একবার আরচোখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তাসির কেমন রাগে ফুসছে। এটা দেখে সানা বাঁকা হেসে তাসিরকে পাশ কাটিয়ে ছেলেটার হাত ধরে বাসার ভেতর গেল।

ওরা চলে যেতেই, তাসির পাশে থাকা একটা খালি টবে পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দিল। তারপর নিজের চুল টেনে ধরে পাশে থাকা ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে বসে পড়লো।

সানা ছেলেটাকে নিয়ে বাসার ভেতর আসতেই সবাই ওদের দিকে তাকালো। আদিত্য ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো।
……আরে সায়েম? তুই এখানে? ওয়াট এ্যা প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ। কেমন আসিছ তুই?

সায়েম মুচকি হেসে বললো।
….ভালো ভাইয়া? তোমরা কেমন আছো?

….উই আর গুড।

সায়েম আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ওয়াটস্ আপ ব্রো?

আবির হেসে দিয়ে বললো।
…..এভরিথিং ইস আপ ব্রো।

সানা আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাইয়া আমি ওকে আসতে বলেছি। ভালো হয়েছে না?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ পিচ্চি অনেক ভালো করেছিস।

সানা সায়েমকে তানি আর নূরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

সায়েম নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…. ওয়াও ভাবি আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর। এইজন্যই তো আমাদের বাংলাদেশের ক্রাশ বয় আপনার প্রেমে পড়ে গেছে। ইশশ ভাইয়ার আগে যদি আমি আপনাকে দেখতাম, তাহলে আমিই আপনাকে পটিয়ে ফেলতাম।

সায়েমের কথায় সবাই হেসে দিল। আদিত্য এক হাত নূরের পেছেন দিয়ে নূরের কাঁধ জড়িয়ে ধরে, সায়েমের দিকে তাকিয়ে অন্য হাতের তর্জনী আঙুল নাড়িয়ে না বোধক ইশারা করে বললো।
…. আঁহা আঁহা , নো বয়। নো ফ্লাটিং উইথ মাই ওমেন। সী ইস অনলী মাইন ওকে?

সায়েম নিজের দুই হাত উপরে তুলে ঘাড় কাত করে আত্মসমর্পণের মতো করে বললো।
….কুল ব্রো। আই ওয়াজ জাস্ট কিডিং। আমার এতো তাড়াতাড়ি মরার কোনো শখ নেই। এখনো তো আমার বিয়েই হয়নি।

সায়েমের কথায় সবাই হেসে দেয়

তাসির এতক্ষণ ধরে বাইরেই বসে আছে, আর রাগে ফুঁসছে। মনে মনে ভাবলো, নাহ এভাবে বসে থাকলে চলবে না। সানার সাথে আমাকে কথা বলতেই হবে। কথাটা ভেবে তাসির উঠে দাঁড়িয়ে ভেতরের দিকে গেল।

ভেতরে ঢুকে তাসির দেখলো, সানা আর সায়েম একসাথে অনেক ক্লোজ হয়ে বসে কিছু একটা নিয়ে হাসাহাসি করছে। এসব দেখে তাসিরের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তাসির রাগে কটমট করতে করতে আর একমূহুর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে হনহন করে উপরে চলে গেলো।

সানা আরচোখে তাসিরের চলে যাওয়া দেখে মনে মনে ভাবলো, বেচারা মনে হচ্ছে একটু বেশিই রেগে আছে। এখন বুঝুক কেমন লাগে যখন ভালোবাসার মানুষ ইগনোর করে। হুহ।

কিছুক্ষণ পর সানা ফ্রেশ হওয়ার জন্য নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের রুমে যেতে নিলেই। হঠাৎ পাশের রুমের দরজা দিয়ে কেউ ওর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে ভেতরে নিয়ে গেল। দরজা বন্ধ করে সানা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আচমকা এমন হওয়ায় সানা একটু ঘাবড়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো তাসির ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

সানা মনে মনে খুশী হলেও উপরে উপরে রাগ দেখিয়ে বললো।
…..এসব কোন ধরনের ব্যবহার? আমাকে এভাবে এখানে আনার মানে কি? ছাড়ুন আমাকে।

তাসির চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…..কে ওই ছেলেটা? আর ওর সাথে তোমার এতো কিসের ঘেঁষাঘেঁষি হাহ্? তোমার সাহস কি করে হলো ওর সাথে এতো ক্লোজ হওয়ার?

সানা রাগী স্বরে বললো।
….সেটা জিজ্ঞেস করার আপনি কে? আমার পার্সোনাল ব্যাপারে আপনাকে কেন বলতে যাবো? কে হন আপনি আমার? কোন অধিকারে এসব জিজ্ঞেস করছেন?

সানার কথা শুনে তাসিরের রাগ আরো বেড়ে যাচ্ছে। তাসির দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
….সানা ডোন্ট ট্রাই মাই পেশেন্স। আমি কিন্তু সহজে রাগী না।তবে একবার রেগে গেলে তখন কিন্তু আমার ভয়ংকর রুপটা দেখতে পাবে। যেটা তোমার জন্য মোটেও ভালো হবে না। তাই আমার রাগ না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি করে বলো, ওই ছেলেটার সাথে এতো ক্লোজ হওয়ার মানে কি? কে হয় ও তোমার?

সানা বলে উঠলো।
…..আমার লাইফ আমার ইচ্ছে। যার সাথে খুশি তার সাথে ক্লোজ হবো। এসব জেনে আপনি কি করবেন? শুনুন আমি এই যুগের মেয়ে। আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। তাই বলে কি আমি আপনার জন্য সারাজীবন বসে বসে কাঁদব নাকি? আপনি ভালো না বাসলেও অনেক ছেলে লাইন ধরে আছে আমাকে পাওয়ার জন্য। আমিও তাদের ভেতর থেকে একজনকে বেছে নিব। তাঁর সাথে ঘুরবো ফিরবো মজা করবো যা খুশী তাই করবো। দরকার হলে তাকে বিয়ে করে তার সাথে ফুলসজ্জাও কর….

আর বলতে পারলো না সানা। তার আগেই তাসির রাগে সানার ঠোঁট কামড়ে ধরলো।
হঠাৎ তাসিরের এমন এ্যাকশনে সানা ফ্রীজড হয়ে গেলো।
তাসির সানার ঠোঁট কামড়াতে লাগলো। নিজের যত রাগ সানার ঠোঁটের ওপর ঝাড়তে লাগলো। সানা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। কিন্তু তাসিরের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। ঠোঁটে ব্যাথা পেয়ে সানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। সানার চোখের পানি তাসিরের ঠোঁটে লাগতেই তাসিরের হুঁশ আসে। তবে ও সানার ঠোঁট ছাড়ে না।কারণ তাসিরের এখন সানার ঠোঁটের নেশা ধরে গেছে। তাসির কামড়ানো বন্ধ করে সফটলি ভাবে সানার ঠোঁট চুষে নিতে লাগে। তাসিরের ভালোবাসার ছোঁয়ায় সানা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসে। সানার শান্ত হয়ে আসা দেখে তাসির সানার হাত ছেড়ে দিয়ে, এক হাত সানার কোমড়ে রেখে, আরেক হাত সানার কানের নিচে চুলের ভেতর দিয়ে, সানাকে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিয়ে, আরো গভীর ভাবে সানার ঠোঁটের স্বাদ নিতে থাকে।
ভালোবাসার মানুষের এমন পাগল করা স্পর্শে সানাও আর চুপ থাকতে পারে না। তাসিরের গলা জড়িয়ে ধরে হাত দিয়ে তাসিরের চুল শক্ত করে ধরে, সানা নিজেও তাসিরের ঠোঁটে চুমু খেতে শুরু করলো। সানার রেসপন্স পেয়ে তাসির আরো পাগলের মতো সানার ঠোঁটে চুমু লাগলো। প্রায় দশ মিনিট ধরে এভাবে চুমু খাওয়ার পর, তাসির সানার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে সানার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে দুজনেই হাঁপাতে লাগলো।

তাসির হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
……এখনো বলতে হবে কোন অধিকারে জিজ্ঞেস করছি আমি? তাহলে শোন ভালোবাসার অধিকারে। হ্যাঁ তুমি সেদিন ঠিকই বলেছিলে। ভালোবাসি আমি তোমাকে। আর শুধু আজ থেকে না, সেই ছোট্ট বেলা থেকে। ছোট বেলা থেকেই তোমার প্রতি একটা অনূভুতি কাজ করতো। যেটা ছোটবেলায় না বুঝলেও, বড়ো হওয়ার পর ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম। যে আমি আমার এই পিচ্চিটাকে অনেক ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।

সানা অভিমানী সুরে বললো।
….মিথ্যুক। ভালোবাসলে তাহলে এতোদিন বলেননি কেন? আর এতো কষ্ট দিলেন কেন আমাকে? ভালোবাসলে কেউ কাওকে এভাবে কষ্ট দেয়? আপনি একটা পচা লোক। এত্তো এত্তো এত্তো গুলা পঁচা আপনি। একদম ভালো না।হুহ্।
কথাগুলো বলে সানা অভিমানে মুখটা আরেক দিকে ঘুরিয়ে নিল।

তাসির সানার গালে হাত দিয়ে সামনের দিকে ঘুরিয়ে অপরাধীর সুরে আদুরে গলায় বললো।
…….আই এ্যাম সরি বাবু। আসলে তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। তাই তোমার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়াতে সবসময় আমার বিবেকে বাঁধা দিতো । আর তাছাড়া তুমি আদিত্যর বোন। তোমার সাথে সম্পর্কে জড়ালে আদিত্য যদি আমাকে ভুলবুঝে? সে ভয়ও হতো। তাই মনে মনে ঠিক করেছিলাম, তোমাকে কখনো আমার মনের কথা বলবো না। সারাজীবন দূর থেকেই তোমাকে ভালোবেসে যাবো। তবে কাল তোমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার ধারণা ভুল। আমি তোমাকে না পেলে, সেটা তবুও সহ্য করতে পারবো। তবে তোমাকে অন্য কারোর সাথে আমি সহ্য করতে পারবো না। কখনো না। বুঝতে পেরেছ?

তাসিরের কথা শুনে সানা খুশী হয়ে ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো।
তাসির আবার বলে উঠলো ।
….ও ছেলেটাকে তো কিছুতেই ছাড়বো না। ওর সাহস কি করে হলো তোমাকে ছোঁয়ার? ওকেতো আমি….

তাসিরের কথা শেষ হওয়ার আগেই সানা তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
…..ও সায়েম ভাইয়া। আমার খালার ছেলে। আমরা আপন ভাইবোনের মতই। আসলে আমরা সমবয়সী তো,তাই আমদের ভেতর বন্ধুদের মতো সম্পর্ক। তাছাড়া আর কিছুই না। সত্যিই বলছি।

তাসির কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো।
…..এক মিনিট তারমানে তুমি ইচ্ছে করে এসব করেছ তাইনা? যাতে আমি এসব দেখে রেগে গিয়ে তোমাকে আমার মনের কথা বলে দেই তাইনা?

তাসিরের কথায় সানা থতমত খেয়ে গেল। এইরে ধরা খেয়ে গেলাম বুঝি। সানা একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….না না ছিঃ ছিঃ কি কি ব বলছেন এসব? আমার মতো মাছুম ইনোসেন্ট বাচ্চার মাথায় এসব কুবুদ্ধি আসতে পারে নাকি? ক কখনই না। তওবা তওবা।

তাসির এক ভ্রু উঁচিয়ে সন্দেহর নজরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সানার দিকে।

অবস্থা বেগতিক দেখে সানা ওখান থেকে বাঁচার জন্য দরজার দিকে তাকিয়ে হঠাৎ বলে উঠলো।
….আরে ভাইয়া তুমি?

সানার কথা শুনে তাসির ঘাবড়ে যেয়ে তড়িঘড়ি করে সানাকে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। সেই সুযোগে সানা ওখান থেকে দৌড়ে দরজার কাছে যেয়ে তাসিরের দিকে তাকিয়ে জিব দেখিয়ে হেসে হেসে বললো।
…..উল্লু বানায়া, বারা মাজা আয়া।

তাসির সানার দিকে ধেয়ে যেতে যেতে বলে উঠলো।
….তবেড়ে,দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। আমাকে বোকা বানানো? আজ তোমার খবর আছে।

সানাকে আর পায় কে?একছুটে ফুড়ুৎ ওখান থেকে।
তাসির দরজা পর্যন্ত এসে থেমে যায়। এক হাত কমোড়ে রেখে, আরেক হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে ঠোঁট কামড়ে হেসে মাথা নেড়ে নেড়ে বললো।
….পাগলি একটা। আসলেই পিচ্চি।
——————————————

বিকাল ৫-৩০
আবির তানির হাত ধরে ছাঁদে নিয়ে এলো। ছাঁদে এসে তানি আবিরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি ব্যাপার আমাকে এখানে নিয়ে এলে কেন? সবাই কতসুন্দর পুলের পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমিও ওদের কাছে যাবো। ছাড়ো আমাকে।
কথাটা বলেই তানি চলে যেতে নিলেই আবির তানির হাত টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বললো।
…..আরে ওদের আড্ডায় কি মজা আছে? আসল মজা পেতে চাইলে, আমার সাথে আড্ডা দেও। দেখবে মজাই মজা।
কথাটা বলে দুষ্টু হেসে একটা চোখ মারলো আবির।

তানি মুখ কুচকে বললো।
….ছিহ্ তোমার মাথায় শুধু এগুলোই ঘোরে তাইনা? যতসব ঢং।ছাড়তো আমাকে।যেতে দেও।

আবির তানির মুখের দিকে ঝুঁকে দুষ্টু হেসে বললো।
…. আগে আমাকে চুমু খেতে দেও,তাহলে যেতে দেবো। অনেক দিন হলো তুমি আমাকে চুমু দেওনা।

তানি বললো।
….কি মিথ্যুক? অনেক দিন কোথায় হলো? পরশু দিনই চুমু দিলাম।

…..তোহ? সেইইইই পরশু দিন চুমু দিয়েছো। এরমাঝে কত ঘন্টা, কত মিনিট, কত সেকেন্ড পার হয়ে গেছে তুমি জানো? আজতো আমার চুমু চাইই চাই। চুমু না দেওয়া পর্যন্ত কিছুতেই ছারছি না।

….দেখ আমাকে একদম বিরক্ত করবে না। আজ কোনো চুমু টুমু হবে না। সরো যেতে দেও আমাকে।
কথাটা বলেই তানি আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই আবির পেছন থেকে হাত টেনে ধরে গেয়ে উঠলো।
……চুমু দিয়েছিলে পরশু
আর কেন দেওনি?
দেখ চুমু না দিলে কিন্তু, এখানেই এক দফা দাবিতে অবরোধ ঘোষণা করবো বলে দিলাম।

তানি বললো।
….তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। আমি যখন বলেছি চুমু দেবনা মানে দেবনা।

…..আমিও বলেছি আজ আমি চুমু নিয়েই ছাড়বো। চুমু না দিলে এখনি এই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করবো আমি। তখন কিন্তু বসে বসে আপসোস করবে। আহারে আমার এত সুন্দর বয়ফ্রেন্ডটা, সামান্য একটা চুমুর জন্য মরে গেল। তখন বুঝবে আমার কদর। এখনো সময় আছে কিন্তু?

তানি ভাবলেশহীন ভাবে বললো
…….তোমার এসব ড্রামা আমার সামনে চলবে না বুজেছ।তাই এসব নাটক করে কোন লাভ হবে না।

তাসির মিছেমিছি ব্যার্থ প্রেমিকের ভাব ধরে বললো।
….কিহ?এতো বড়ো কথা? আমার মতো মহান প্রেমিকের উপর প্রশ্ন উঠানো? ঠিক আছে আজ তোমাকে দেখিয়ে দেবো যে আমি কতো বড়ো মহান প্রেমিক। আজকের পর থেকে আমার নামও ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। এক মহান প্রেমিক চুমু না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে।

এসব বলে আবির ছাদের কিনারায় রেলিংয়ের কাছে এসে বললো।
…..এখনো সময় আছে কিন্তু, আমাকে আটকাও।

তানি মুখের ওপর হাত দিয়ে হাই তোলার মতো করে বললো।
….তোমার ড্রামা দেখে আমার ঘুম ধরে যাচ্ছে।

….কিহ্?এতো বড়ো ইনসালাত? এখন তো তুমি বাঁধা দিলেও আমি আর মানবো না হুহ্।হে দুনিয়া বিদায়। দুয়াওমে ইয়াদ রাখনা।

কথাটা বলে আবির রেলিং ধরে নিচের দিকে তাকালো। ভেতরে ভেতরে ভয়ে হাঁটু কাপছে। কিন্তু তানির সামনে কিছুতেই নত হবে না।

নিচে পুলের পাশে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছিল। কথা বলতে বলতে হঠাৎ সায়েমের নজর গেল ওপরে ছাঁদে থাকা আবিরের দিকে।
সায়েম আবিরের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললো।
….আবির ব্রো ওখানে কি করছো?

সায়েমের কথায় সবাই ওপরের দিকে তাকায়। আদিত্যও বললো।
….আবির ছাঁদে কি করছিস একা একা?

আবির ওদের দিকে তাকিয়ে দুঃখী গলায় বললো।
…..সুইসাইড গাও ওয়ালো সুইসাইড।
তানির দিকে আঙুল তুলে বললো।
……এই বাসান্তি আমাকে চুমু দেয়না। তাই আমি সুইসাইড করছি। বিদায় গাও ওয়ালো বিদায়।

আবিরের কথায় সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। সায়েম নিজের ফোন বের করে বললো।
….দাঁড়াও ব্রো আগে ভিডিও অন করি। তারপর সুইসাইড করো। এই প্রথম চুমুর জন্য কেউ সুইসাইড করছে। এই ভিডিওতো একদম ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ভাইরাল হয়ে যাবে। মরার পরে তুমি একদম সেলিব্রিটি হয়ে যাবে। হা হা হা…

তানি এদিকে আবিরের কান্ড দেখে রাগে কটমট করছে। সবার সামনে কিভাবে চুমুর কথা বলছে?বেশরম কোথাকার। তানি দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..তুমি যদি এখুনি এই ড্রামা বন্ধ না করো,তাহলে কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।

আবির ভয় পেয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…..না না তার কি দরকার আছে? তুমি যখন এতো ইনসিস্ট করছো, তাহলে কি আর আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি বলো?

আবির তানির কাছে এসে বললো।
….চলো আমার কিউটিপাই নিচে যাই।

তানি আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ভেংচি কেটে চলে গেলো।
আবিরও ওর পেছন পেছন গেল। মনে মনে ভাবলো, বাল বাল বাচ গেয়া।

একটু পরে সবাই বাসায় চলে গেলো।

চলবে……..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৪

★ সকাল ৭-৩০
আদিত্য আড়মোড়া ভেঙে ঘুম থেকে চোখ খুলে তাকালো। বেড থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
আদিত্য নিচে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে নূরকে কোথাও দেখতে পেল না।
রান্নাঘরে কাকি কাজ করছিল। আদিত্য কাকিকে ডাক দিয়ে বললো।
….কাকি নূর কোথায়? ওকে দেখছি না যে?

কাকি বললো।
…নূর তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।

কথাটা শুনে আদিত্য একটু অবাক হলো। মনে মনে ভাবলো, স্ট্রেঞ্জ! প্রতিদিনতো আমার আগেই উঠে যায়। আজ এখনো উঠেনি?
কথাটা ভেবে আদিত্য নূরের রুমের দিকে গেল। নূরের রুমের দরজায় এসে দরজাটা একটু খুলে দেখলো, নূর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তারমানে নূর সত্যি সত্যিই ঘুমোচ্ছে। আজ হয়তো একটু বেশি ঘুম ওর। থাক ডাকার দরকার নেই, ঘুমাক নূরপাখিটা। মনে মনে এসব ভেবে আদিত্য মুচকি হেসে ওখান চলে যায়।

আদিত্য বাইরে বেড়িয়ে জগিং করতে যায়। একঘন্টা জগিং করার পর আদিত্য বাসায় ফিরে আসে। বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে নিল। তারপর অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। ব্রেকফাস্ট টেবিলে যেয়ে দেখলো নূর নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে কাকিকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…..নূর নাস্তা করতে আসেনি কেন?

কাকি বললো।
….নূর মাতো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি।

আদিত্য এবার একটু চিন্তায় পড়ে গেল। এতো বেলা হয়ে গেছে তবুও, ঘুম থেকে উঠছে না। ব্যাপার কি? শরীর খারাপ করলো নাতো? কথাগুলো ভেবে আদিত্য আবারও নূরের রুমের দিকে গেল। নূরের রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো, নূর এখনো কাঁথা মুড়ি দিয়ে মাথা ঢেকে কাত হয়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে।

আদিত্য নূরের মাথার কাছে নিচে হাঁটু গেড়ে বসে, কাঁথার ওপর দিয়ে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে আস্তে করে বললো।
……নূর, নূরপাখি। উঠে পরো এবার। দেখ কতো বেলা হয়ে গেছে। উঠে নাস্তা করে নেও প্রাণপাখী।

নূর তাও উঠছে না। কোনো কথাও বলছে না।
আদিত্য আবারও বললো।
…..কি হলো? উঠনা? আচ্ছা ঠিক আছে, নাস্তা করে আবার ঘুমিয়ে পরো কেমন? এখন তো উঠো?

নূর তবুও উঠছে না।

আদিত্যের এবার সন্দেহ হতে লাগলো। আদিত্য খেয়াল করলো নূরের শরীর কেমন কেঁপে কেঁপে উঠছে। আদিত্যের এবার প্রচুর চিন্তা হতে লাগলো। কিছু একটা সমস্যা তো হয়েছেই। কথাটা ভেবে আদিত্য আর দেরি না করে এক টানে নূরের মাথার ওপর থেকে কাথাটা সরিয়ে ফেললো।

নূরের মুখের দিকে তাকাতেই আদিত্য আৎকে উঠলো।
আদিত্য দেখলো নূর ঠোঁট কামড়ে নিরবে কাঁদছে। কান্নার কারণে নূরের চোখ মুখ প্রচন্ড পরিমাণ লাল হয়ে আছে। চেহারায় কোনো কিছুর যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ঘামে ভিজে চেহারার বেহাল অবস্থা

নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্যর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। বুকের ভেতর অসহ্য ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো। গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো। আদিত্য দ্রুত নূরের গালে হাত দিয়ে অস্থির ভাবে বললো।
…..হেইই প্রাণপাখী, কি হয়েছে তোমার? এমন অবস্থা কি করে হলো? শরীর খারাপ করছে? কোথাও কষ্ট হচ্ছে? বলনা কলিজাটা, কি হয়েছে তোমার?

নূর ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকে কোনরকমে মাথা নাড়িয়ে বললো।
……ন ননা কি কিকিছু হয়নি। আ আআমি ঠিক আছি।

…..মিথ্যে কেন বলছো? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুমি কান্না করছ। নিশ্চয় তোমার কিছু হয়েছে। বলনা প্রাণপাখী টা? দেখ আমার অনেক ভয় করছে। কি হয়েছে তোমার বলনা সোনাটা?

…..স সসত্যি বলছি কিছু হয়নি আমার।

আদিত্য বুঝতে পারলো নূর এভাবে কিছু বলবেনা। তাই আদিত্য নূরের গায়ের ওপর থেকে পুরো কাথাটা সরিয়ে ফেললো। কাঁথা সরাতেই নূর চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেললো।

আদিত্য দেখলো নূর হাত দিয়ে পেট চিপে ধরে শুয়ে আছে। বিছানার দিকে তাকাতেই আদিত্য বুঝতে পারলো আসল ব্যাপারটা। আদিত্য আবারও নূরের মুখের সামনে বসে গালে হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো।
…… তো এই ব্যাপারে আমার কাছ থেকে কেন লুকাচ্ছিলে? আমার কাছে কিসের লজ্জা তোমার হুম? দুদিন পরে আমি তোমার হাসবেন্ড হবো। তোমার ব্যাপারে সবকিছু জানার অধিকার আমার আছে তাইনা?তাহলে আমাকে না বলে নিজে নিজে কষ্ট পাচ্ছিলে কেন ?

নূর কিছুই বলছে না। চোখ দিয়ে শুধু অঝরে পানি পরছে। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
…..খুব কষ্ট হচ্ছে প্রাণপাখী? তুমি একটুখানি অপেক্ষা করো আমি এখুনি আসছি।
কথাটা বলেই আদিত্য দ্রুত উঠে চলে যেতে নিয়ে, কিছু একটা মনে করে আবার নূরের কাছে ফিরে এসে বললো।
…..প্যাড আছে তোমার?

নূর মাথা নিচু করে আস্তে করে বামে ডানে ঘুরালো। মানে নেই।

আদিত্য আর এক মূহুর্তও দেরি না করে দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। নিচে নেমে কাকিকে ডাক দিয়ে বললো।
…..শুনুন, আপনি একটু ডিম সিদ্ধ করুন, আর দুধ গরম করুন। আর হ্যাঁ আমি বাইরে যাচ্ছি, আপনি ততক্ষণ একটু নূরের কাছে থাকুন।

কাকি বললো।
…..ঠিক আছে।

আদিত্য দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।

দশ মিনিট পরেই আদিত্য ফিরে এলো। হাতে কিছু জিনিস নিয়ে তড়িঘড়ি করে রুমের দিকে গেল। রুমে ঢুকে জিনিস গুলো টেবিলের ওপর রেখে, নূরের কাছে এসে দুই হাতে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। ওয়াশরুমের ভেতর এসে নূরকে নামিয়ে দিল। নূরের হাতে সেফটি প্যাড দিয়ে বললো।
…..তুমি ফ্রেশ হয়ে নেও, আমি বাইরেই ওয়েট করছি। তোমার হয়ে গেলে আমাকে ডাক দিও কেমন?

নূর ইতস্তত ভাবে বললো।
….আ আমার ডে ড্রেস?

আদিত্য বললো।
…..ও হ্যাঁ, আমিতো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি দাড়াও, আমি তোমার ড্রেস এনে দিচ্ছি।

নূর মাথা ঝাকালো। মানে ঠিক আছে।

আদিত্য বাইরে এসে কাবার্ড থেকে নূরের একটা ড্রোস বের করে নূরের হাতে দিল। আদিত্য বাইরে এসে ওয়াশরুমের দরজাটা চাপিয়ে দিল। তারপর বেডের ওপর থেকে বেডশিট টা তুলে নিয়ে বাস্কেটের ভেতর রেখে দিল।কাবার্ড থেকে আরেক টা বেডশিট বের করে বিছানার উপর পেরে দিল। তারপর নিচে যেয়ে একটা ট্রেতে করে দুটো সিদ্ধ ডিম, কিছু ফল আর একগ্লাস গরম দুধ নিয়ে এলো। রুমে এসে ট্রে টা বেডের পাশে ছোট টেবিলের উপর রেখে, ওয়াশরুমের দরজায় নক করে বললো।
…..নূরপাখি হয়েছে তোমার?

ভেতর থেকে নূর বলে উঠলো।
…… হ হ্যাঁ হয়ে গেছে।

আদিত্য ওয়াশরুমের দরজা খুলে আবারও নূরকে কোলে তুলে নিল। বেডের কাছে এসে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই বেডের ওপর বসলো। নূরের গালে হাত বুলিয়ে, মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
…..এখনো ব্যাথা করছে?

নূর মাথা নিচের দিকে রেখে ঝাকালো। মানে হ্যাঁ।

আদিত্য বললো।
…..চিন্তা করোনা আমি পেইন কিলার নিয়ে এসেছি। তুমি নাস্তা করে ওষুধটা খেয়ে নেও। দেখবে ব্যাথা কমে যাবে।

নূর করুন সুরে বললো।
….আমি এখন কিছু খেতে পারবো না প্লিজ। এখন কিছু খেলেই আমার বমি আসবে।

আদিত্য নূরের গালে হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললো।
….. তা বললে হয় বলো? নাস্তা না করলে মেডিসিন কিভাবে নিবে? খালি পেটে তো আর ওষুধ খাওয়া যাবে না। আর ওষুধ না খেলে, তোমার কষ্টও কমবে না তাইনা? তাই প্লিজ খেয়ে নেও প্রাণপাখী প্লিজ।

আদিত্য ডিমের প্লেট টা হাতে নিয়ে একটা ডিম নূরের মুখের সামনে ধরে বললো।
…….এই নাও লক্ষী মেয়ের মতো, ডিমটা খেয়ে নেও।

নূর ডিমের দিকে তাকিয়ে মুখ বিকৃত করে করুন সুরে বললো।
……ডিম? প্লিজ ডিম না। সকাল সকাল ডিম খেলে আমি সত্যিই বমি করে ফেললো। দেখ ডিম দেখেই আমার কেমন উঁকি আসছে।

আদিত্য বললো।
…..এমন করছো কেন? প্লিজ খেয়ে নেওনা লক্ষীটি। দেখ এই সময় রক্ত ক্ষরণের কারণে মেয়েদের শরীরে অনেক ঘাটতি হয়ে যায়। তাই এই সময় বেশি বেশি করে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। তাই বমি আসলে আসবে, তবুও এখন এগুলো খেয়ে নেও প্লিজ।

নূর আর উপায় না পেয়ে অসহায় মুখ করে কোনরকমে ডিমটা খেয়ে নিলো। ডিম খাওয়া শেষে আদিত্য নূরকে জোর করে কয়েক পিচ ফল খাইয়ে দিল। তারপর দুধের গ্লাসটা নূরের সামনে ধরে বললো।
…..এখন এই দুধটা ফিনিস করে ফেলো, তাহলেই নাস্তা শেষ।

নূর এবার আরো বেশি করুন মুখ করে বললো।
……দেখ তোমার সব কথাই মেনে নিয়েছি, কিন্তু এই দুধ না প্লিজ। এটা আমি কিছুতেই খেতে পারবো না প্লিজ। প্লিজ দয়া করো আমার উপর।

আদিত্য এবার একটু ধমকের সুরে বললো।
…..নূর দেখ আমার রাগ উঠিয়ো না। জলদি জলদি দুধটা ফিনিস করো।তারপর ওষুধ খেতে হবে।

নূরও এবার একটু শক্ত গলায় বললো।
….দেখ তুমি কিন্তু এবার রীতিমতো টর্চার শুরু করে দিয়েছ? তবে যত যাই বলনা কেন, দুধ আমি কিছুতেই খাবোনা।

আদিত্য এবার রাগী স্বরে বললো।
….খাবেনা বললেই হলো? তুমি খাবে তোমার ঘাড়ে খাবে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও বলছি।নাহলে কিন্তু ভালো হবে না?

নূর অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো।
….উহুম।খাবোনা।

আদিত্য বললো।
….ঠিক আছে ভালো কথা শুনলে নাতো? এখন দেখো আমি কি করি? দুধতো তোমাকে আমি খাইয়েই ছাড়বো।
কথাটা বলেই আদিত্য দুধের গ্লাসে চুমুক দিয়ে কিছু দুধ নিজের মুখে নিল। তারপর নূরের মুখে হাত দিয়ে নূরের মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। তারপর নিজের মুখে থাকা দুধ গুলো নূরের মুখে ঢেলে দিল। নূর দুধটা না গিলা পর্যন্ত আদিত্য নূরের ঠোঁট চেপে ধরে থাকলো।

নূরের দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। তাই আর উপায় না পেয়ে দুধটা গিলে ফেললো।
এভাবেই আদিত্য পুরোটা দুধ নূরকে খাইয়ে দিল। দুধ খাওয়ানো শেষে আদিত্য নূরের ঠোঁটে একটা চুমু দিয়ে বললো।
…..আমাকে কখনো চ্যালেঞ্জ করতে আসবে না বুজেছ? পরিনতি সবসময় এমনই হবে।

নূর অভিমানে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিল।

আদিত্য তা দেখে মুচকি হেসে বললো।
….হয়েছে আর অভিমান করতে হবে না। এখন নেও ওষুধটা খেয়ে নেও তোমার ব্যাথা কমে যাবে।

ওষুধ খাওয়ানো শেষে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে, পা দুটো টান করে বসে, নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আর নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা দিয়ে শান্তিতে আদিত্যের কোলে বসে আছে।
মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদিত্য নরম স্বরে বলে উঠলো।
…..আচ্ছা তোমার কি শুরু থেকেই প্রতিবার পিরিয়ডের সময় এমন পেট ব্যাথা হয়?

নূর আদিত্যর বুকে মাথা রেখেই বললো।
….হুম।

….এটার জন্য কোনো ডাক্তার দেখাওনি?

….নাহ।

….,কেন?

…..কারণ ছোট মা বলতো, এটা নাকি সবার সাথেই কম বেশি হয়। তাই চুপচাপ সহ্য করতে হয়।এটা নাকি মেয়েদের অনেক গোপন কথা। এব্যাপারে কাওকে কিছু বলতে হয় না। মানুষ জানলে নাকি খারাপ ভাববে। তাই আমিও চুপচাপ সহ্য করতাম। কাওকে কিছু বলতাম না। কতবার তো ব্যাথায় জ্বর এসে যেতো, যন্ত্রণায় ছটফট করতাম। তবুও কাওকে কিছু বলতাম না। দাতঁ চেপে সবকিছু সহ্য করে নিতাম।

নূরের কথায় আদিত্যের বুকের হু হু করে উঠলো। আদিত্য শক্ত করে নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে ভাবছে, আমি আমার প্রাণপাখীর জীবনে আরো আগে কেন এলাম না? তাহলে আমার প্রাণপাখীটা এতদিন এতো কষ্টে থাকতো না।

নূরের সৎ মার কথা মনে আসতেই আদিত্য চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….ওই ডিসকাস্টিং মহিলার নাম আর কখনও আমার সামনে নিবে না। আর হ্যাঁ ওই মহিলা তোমাকে যা বলেছে ওগুলো সব ফালতু কথা। এভাবে আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না। আমি আজ বিকেলেই তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো বুজেছ?

নূর আমতা আমতা করে বললো
…..ডা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কি দরকার? এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। আর তাছাড়া অন্য কোনো পুরুষের সামনে আমি এসব কিছুতেই বলতে পারবো না।

….অসুখ কখনো এমনিতেই সারে না। বরং দিনে দিনে ওটা আরও বেড়ে গিয়ে বড়ো আকার ধারণ করে। তাই ডাক্তারের কাছেতো যেতেই হবে। আর চিন্তা করোনা। তোমাকে কোনো পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। তোমাকে আমি কোনো মহিলা গাইনী ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই তাইনা?

নূর আদিত্যের বুকের ভেতরেই মাথা নাড়ালো। মানে না, কোনো সমস্যা নেই। নূর বলে উঠলো।
….তোমার তো মনে হয় দেরি হয়ে যাচ্ছে। তুমি অফিসে যাবে না?

আদিত্য বললো।
….. তুমি ভাবলে কি করে, তোমাকে এই অসুস্থ অবস্থায় রেখে আমি অফিসে চলে যাবো? কখনোই না। তোমার থেকে ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে আর কিছুই না বুজেছ? এসব বাদ দিয়ে এখন বলতো ব্যাথা কি কমেছে একটু?

নূর বললো।
….হুম। পেটের ব্যাথাটা একটু কমেছে।

আদিত্য কিছু একটা ভেবে নূরকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বললো।
….তুমি শুয়ে থাকো আমি এখুনি আসছি।
কথাটা বলেই আদিত্য রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

পাঁচ মিনিট পরেই আদিত্য হাতে করে একটা হট ব্যাগ নিয়ে এলো। আদিত্য নূরের কাছে এসে বললো।
……তুমি একটু কাত হয়ে শোও। আমি তোমার পিঠে এই হটব্যাগ টা লাগিয়ে দিচ্ছি। দেখবে আরও আরাম পাবে।

আদিত্যের কথামতো নূর কাত হয়ে শুয়ে পরলো।
আদিত্য নূরের পেছনে বসে, হটব্যাগটা নূরের পিঠে মাজার ওপর ধরে রাখলো।

আদিত্যের এতো কেয়ার দেখে আবেগে নূরের চোখে পানি চলে এলো। মনে মনে ভাবলো, আগে ভাবতাম আমি হয়তো দুনিয়ায় সবচেয়ে অভাগী মেয়ে। তবে আদিত্যকে পেয়ে মনে হচ্ছে, আমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে। আদিত্য আমার জীবনের সত্যিকারের রাজকুমার।

পেটের ব্যাথার কারণে নূর সারারাত ঘুমাতে পারেনি। তাই আদিত্যর কেয়ারে নূর আরামে ঘুমিয়ে পরলো।
আদিত্য অনেকক্ষণ ধরে নূরের পিঠে সেক দেওয়ার পর যখন বুঝতে পারলো নূর ঘুমিয়ে পরেছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে একটা চুমু দিয়ে, হটব্যাগটা নূরের পিঠে রেখেই নূরের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

নিজের রুমে এসে আদিত্য তাসিরের নাম্বারে ফোন দিল। তাসির ফোন রিসিভ করে বললো।
…হ্যাঁ আদি বল।

আদিত্য বললো।
…..আচ্ছা শোন আন্টিতো ডাক্তার। তো আন্টির পরিচিত কোনো ভালো ফিমেল গাইনী ডাক্তার আছে নাকি? থাকলে একটু আমাকে ডিটেইলস দে।

তাসির দুষ্টুমি করে বললো।
……ভাই তুই তো দেখছি ফাইভ জি স্পিডের চেয়েও বেশি দ্রুত। মাত্র এইকয়দিনেই আমার বোনটাকে প্রেগন্যান্ট করে ফেললি?
কথাটা বলেই তাসির হাসতে লাগলো।

আদিত্য একটা ধমক দিয়ে বললো।
….সাট আপ ইডিয়ট। তুই কবে থেকে আবিরের মতো থার্ড ক্লাস জোক্স মারা শুরু করলি? এখানে নূর অসুস্থ আর তুই আছিস তোর মজা নিয়ে।

তাসির বললো।
…..ওকে ওকে সরি। আচ্ছা বলছি শোন, মায়ের এক ফ্রেন্ড আছে। অনেক ভালো ডাক্তার উনি। আমি তোকে উনার ডিটেইলস ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।

…ওকে

———————————–

আদিত্য আর নূর ডাক্তারের চেম্বারে ডাক্তারের সামনে বসে আছে। আদিত্য নূরের হাত শক্ত করে ধরে বসে আছে। মনে মনে একটু ভয় পাচ্ছে নূরের জন্য।

ডাক্তার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….তো মিস নূর, বলুন আপনার কি সমস্যা।

নূর একবার আদিত্যর দিকে তাকালো। আদিত্য চোখ দিয়ে ইশারা করে আস্বস্ত করে সব বলতে বললো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় দিয়ে, ডাক্তারকে সবকিছু খুলে বললো।

ডাক্তার সবকিছু শুনে বললো।
….হুম, আসলে আমাদের সমাজে এই একটা কু প্রথা চলে আসছে। যে পিরিয়ডের ব্যাপারে কাওকে কিছু বলা যাবে না। এটা শরমের কথা, লোকে জানলে খারাপ বলবে এক্সেট্রা এক্সেট্রা। এইসব কারণে মেয়েরা নিজেদের পিরিয়ডের সমস্যা গুলো কাওকে খুলে বলে না। আর পরে এসব থেকেই নানা রকমের কম্পিলিকেশন শুরু হয়। এমনকি এসব থেকেই অনেক সময় জরায়ুর ক্যানসারেও আক্রান্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মেয়ে বা মহিলারা এসব অসচেতনতার কারনেই পরবর্তীতে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।

ডাক্তারের কথা শুনে আদিত্য নূরের হাত আরো শক্ত করে ধরলো।ভয়ে ওর কলিজা শুকিয়ে আসছে। এসির ভেতরেও ঘেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে আদিত্য। আদিত্য ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে কম্পিত কণ্ঠে বললো।
……নূ নূ নূরের নিশ্চয়ই তেমন কোনো সমস্যা নেই, তাইনা ম্যাম?

ডাক্তার বললো।
….. উনাকে দেখেতো তেমন মনে হচ্ছে না। তবে এখুনি কিছু বলতে পারছি না। আমি কিছু টেস্ট লিখে দিচ্ছি। এগুলো করিয়ে আনুন। তারপর রিপোর্ট দেখে সবকিছু ভালো ভাবে বুঝতে পারবো।

তারপর ডাক্তার কিছু টেস্ট লিখে দিল।আদিত্য নূরকে নিয়ে গেল টেস্ট গুলো করানোর জন্য।

দুই ঘন্টা পর সবগুলো টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসলো ওরা।
ডাক্তার রিপোর্টগুলো চেক করছে। আদিত্য আর নূর সামনে বসে আছে। ভয়ে আদিত্যের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। বুকের ভেতর দুরুদুরু করছে। নাজানি কি আসে রিপোর্টে। আদিত্য মনে মনে শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, যেন রিপোর্টে সব ঠিক ঠাকই আসে।

একটু পরে ডাক্তার বললো।
….আল্লাহর রহমতে উনার তেমন বড়ো কোনো সমস্যা নেই।

কথাটা শুনে আদিত্য এতক্ষণে আটকে রাখা দমটা ছাড়লো। এতক্ষণে ওর জানে পানি এলো।

ডাক্তার আবার বলে উঠলো।
….তবে মিস নূরের শরীরে হিমোগ্লোবিন অনেক কম। উনি হয়তো ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করেন না। তাই উনার শরীরে অনেক ঘাটতি আছে। এইভাবে চলতে থাকলে উনি খুব দ্রুতই অসুস্থ হয়ে পরতে পারেন। তাই খাওয়া দাওয়ার বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে। আর আমি কিছু ভিটামিন দিয়ে দিচ্ছি, এগুলো ওনাকে নিয়মিত নিতে হবে।

আদিত্য বললো।
….ঠিক আছে ম্যাম। আমি এখন থেকে ওর সবকিছুর খেয়াল রাখবো। কোনো কিছুতেই অনিয়ম হতে দেবনা। আই প্রমিজ।

ডাক্তার দেখানো শেষে আদিত্য নূরকে নিয়ে গাড়িতে বসলো। গাড়িতে বসে আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বললো।
….দেখলে তো ডাক্তার কি বললো? সো এখন থেকে খাবারে নো অনিয়ম। বেশি বেশি করে খাবার খেতে হবে। আমি নিজে তোমার খাবারের চার্ট বানিয়ে দেব। সেই অনুযায়ী তোমাকে খেতে হবে। আমার কথা অমান্য করলে তখন বুঝবে, তোমার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে।

আদিত্যর কথায় নূর একটা শুকনো ঢোক গিললো। মনে মনে ভাবছে, আজ থেকে আমার ওপর নাজানি কতরকমের খাবারের অত্যাচার হবে। হে আল্লাহ, রক্ষা করো আমাকে।নিচে কিছু জরুরি কথা লিখা আছে। অনুগ্রহ করে সবাই পরে নিবেন।

চলবে…..