#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৪৯
★ সন্ধ্যা ৭-৩০
হলুদ শেষে তানি নূরকে ফ্রেশ হওয়ার জন্য রুমে নিয়ে এলো। নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তুই ওয়াশরুমে যেয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে। তারপর আবার মেহোদীর জন্য রেডি হতে হবে। আমি কি তোকে হেল্প করবো হলুদ উঠানোর জন্য ?
হলুদ উঠানোর কথা শুনে নূরের আদিত্যের কথা মনে পরলো। আদিত্য বলেছিল, আমি যেন আগেই ফ্রেশ না হই। আদিত্য নিজেই আসবে। কিন্তু এই কথা তানিকে কি করে বলবে? এসব ভেবে নূর তানির দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো
….না না হেল্প করা লাগবেনা। আমি একাই করতে পারবো। তুই বরং সানার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। তোর তো রেডি হতে হবে তাইনা?
….ঠিক আছে। তুই যখন বলছিস, তাহলে আমি গিয়ে রেডি হয়ে আসি।তারপর তোকে রেডি করিয়ে দিবনে ।
…ঠিক আছে।
তারপর তানি বেরিয়ে গেল। নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।নূর বেডের ওপর বসে আদিত্যের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। মনে মনে ভাবলো, আদিত্য কখন আসবে কে যানে? নাজানি কখন কে চলে আসে? ফ্রেশ হয়ে নেব যে, যদি আবার আদিত্য রাগ করে? যদি বলে আমার জন্য একটু অপেক্ষাও করতে পারলে না? তখন? না না, আদিত্য আমার জন্য কতো কিছু করে। আর আমি ওর এইটুকু আবদার রাখতে পারবো না, তা কি করে হয়?
নূরের ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেল। নূর এক ঝটকায় পেছনে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য চলে এসেছে। আদিত্যকে দেখে নূর এবার লজ্জায় পরে গেলো। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থেকে হাতের আঙুল দিয়ে শাড়ির আঁচল পেঁচাতে লাগলো।
আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে এগিয়ে এলো। নূরের কাছে এসে দুষ্টুমি করে বললো।
….বাহ্ আমার বউটা দেখছি আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। বেশি দেরি করে ফেলিনি তো বউ?
আদিত্যের কথায় নূর আরো লজ্জায় পরে গেলো। নূর মাথা নিচু করে লাজুক হেসে বললো।
….তুমিই তো বলেছিলে।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হুম তাহলে তো আমি অনেক লাকি। তোমার মতো একটা আগ্যাকারি বউ পেতে চলেছি। তাইনা?
নূর তখনকার কথা মনে করে, আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..থ্যাংক ইউ সো মাচ। ভাই আর চাচাকে এখানে আনার জন্য।
আদিত্য একটু অভিমানী সুরে বলে উঠলো।
….আচ্ছা, তো ম্যাডাম এখন আমাকে ধন্যবাদও দিবে তাইনা? ঠিক আছে দাও বেশি করে ধন্যবাদ দাও, আমি তো আর তোমার কিছু হইনা তাইনা?
কথাটা বলে আদিত্য গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।
নূর বুঝতে পারলো ও ভুল কথা বলে ফেলেছে। তাই জিহ্বায় কামড় দিয়ে দুই হাতে নিজের দুই কান ধরে ঠোঁট উল্টে করুন সুরে বললো।
….সরিইইই, ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো হবে না। সত্যিই বলছি।
আদিত্য আরচোখে নূরের দিকে তাকাচ্ছে। নূরকে এভাবে দেখে ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। অনেক কষ্টে হাসি চেপে ধরে, নূরের সামনে রাগী ভাব ধরে রইল।
নূর আবারও বললো।
….সরি না? প্লিজজজ? দেখ তুমি এভাবে রাগ করে থাকলে কিন্তু আমি সত্যিই কেঁদে ফেলবো।
এবার আদিত্য এক ঝটকায় নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
…..এই না না, কাঁদবে না প্লিজ। আমি তো শুধু মজা করছিলাম।
নূর হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠলো। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আমিও শুধু মজাই করছিলাম মিস্টার।
….তবেড়ে, আমার সাথে দুষ্টুমি? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। তারপর নূরকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
ওয়াশরুমে এসে আদিত্য নূরকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে দিল।আদিত্য যেয়ে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দিল। নূরের এদিকে লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো নূর। আদিত্য নূরের কাছে এসে,নেশা ভরা চোখে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর নূরের ঘাড়ের ওপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে নূরের পেছনে থাকা হ্যান্ড শাওয়ার টা নিয়ে এলো। আদিত্য এক হাত নূরের থুতনিতে রেখে নূরের মুখটা উপরে তুললো। আর অন্য হাতে থাকা হ্যান্ড শাওয়ারটা চালু করে নূরের মূ্ুখের ওপর ধরলো। সাথে সাথে নূর কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য এক হাতে শাওয়ার ধরে আরেক হাত নূরের গালে রেখে, বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে নূরের গালের হলুদ পরিস্কার করে দিতে লাগলো। হ্যান্ড শাওয়ারের পানি নূরের মুখ থেকে গলা বেয়ে নূরের পুরো শরীর ভিজিয়ে দিচ্ছে। পানিতে ভিজে নূরকে অসম্ভব আবেদনময়ী লাগছে।আদিত্যের নেশা যেন আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে। ঘোরের ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে আদিত্য। গালের হলুদ পরিস্কার করা হয়ে গেলে, আদিত্য এবার নূরের গলায় লেগে থাকা হলুদ হাত দিয়ে পরিস্কার করতে লাগলো। নূরের নিঃশ্বাস ভাড়ী হয়ে আসছে। সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না নূর। দুই হাতে আদিত্যের পাঞ্জাবির বুকের অংশ খামচে ধরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো। আদিত্য এবার নূরের পেটের উপর থেকে শাড়ি খানিকটা সড়িয়ে, পেটে আদিত্যের লাগানো হলুদটা পরিস্কার করে দিল। নূরের এবার দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। কাপাকাপি আরো বেড়েই চলেছে। আদিত্য এবার নূরকে উল্টো দিকে ঘুরালো। নূরের পিঠের ওপর থেকে ভেজা চুলগুলো একপাশে সরিয়ে নিল। তারপর নূরের কোমড়ে লেগে হলুদ পরিস্কার করে দিল। নূরের পানিতে ভিজে থাকা ফর্সা মোলায়েম শরীর দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। নিজেকে কন্ট্রোল করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আদিত্য বুঝতে পারছে আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে, নিজেকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারবে না ও। তাই নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে, হ্যান্ড শাওয়ারটা নূরের হাতে দিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বললো।
….আমার এখন চলে যাওয়া দরকার প্রানপাখি। নাহলে আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলবো।
কথাটা বলেই আদিত্য উল্টো ঘুরে তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে চলে যেতে নিল। আদিত্য দরজা পর্যন্ত যেয়ে হটাৎ করে আবার তড়িৎ গতিতে নূরের কাছে এসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নূরের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে সময় নিয়ে একটা চুমু দেয়। তারপর নূরের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে নেশা ভরা কন্ঠে বললো।
……ভালোবাসি প্রাণপাখী। আজকের রাতটা পার করা আমার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে। তবুও আমি পার করে দেবো। কারণ কাল থেকেই তুমি আমার বুকের মাঝে থাকবে।
কথাটা বলেই আদিত্য আর একমুহূর্তও দেরি না করে ওখান থেকে চলে গেলো।
আদিত্য চলে যেতেই নূর হ্যান্ড শাওয়ারটা দুই হাত দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে, দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বিড়বিড় করে বললো।
….আমিও ভালোবাসি তোমাকে রাজকুমার। অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।
————————————-
পুল সাইডে সুন্দর করে গদি পেরে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মেহেদীর অনুষ্ঠানের জন্য। নূরকে নিয়ে এসে ওর আসনে বসানো হয়েছে। মেহেদী আর্টিস্ট এসেছে মেহেদী লাগানোর জন্য। নূরের হাতে মেহেদী লাগাতে নিলেই, আদিত্য এসে নূরের পাশে বসে বললো।
…..এক মিনিট, আমার বউয়ের হাতে সবার প্রথম মেহেদী আমিই লাগাবো।
আদিত্যের কথায় সবাই মিটিমিটি হাসছে। আর নূর সবার সামনে লজ্জায় পরে গেলো। আদিত্য একটা মেয়েদীর কোন উঠিয়ে, নূরের হাতের তালুর মাঝখানে সুন্দর করে একটা লাভ শেইপ আঁকিয়ে তার ভেতর এন প্লাস এ লিখে দিল। নূর শুধু একদৃষ্টিতে আদিত্যের দিকেই তাকিয়ে আছে। অন্য কিছুর হুঁশ নেই ওর। মনে মনে সবসময়ের মতো একটা কথাই ভাবছে, একটা মানুষ কিভাবে এতটা ভালোবাসতে পারে?
আদিত্য এতটুকু একেই মেহেদীর কোনটা আর্টিস্ট মেয়েটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো।
….নেন বাকিটা আপনারা করেন। আমার বউটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিবেন।
আর্টিস্ট মেয়েটা মুচকি হেসে বললো।
…অবশ্যই স্যার।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর ওর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে। আদিত্য ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে বুঝালে, কিছু না। তারপর মায়া ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..বাকিটাও তুমিই লাগিয়ে দাওনা?
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..আরে না আমি কি অতো সুন্দর করে দিতে পারবো নাকি? পরে দেখবে তোমার হাতে বাংলাদেশের নকশা তৈরি যাবে।
…..যেমনই হোক, আমার কাছে ওইটাই বেস্ট হবে। তুমি দিয়ে দাওনা।
আদিত্য এক হাত নূরের গালে রেখে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
…..কিন্তু আমার কাছে হবে না। আমি চাই বিয়তে আমার বউয়ের সবকিছু খুব সুন্দর হোক। তাই ওদের কাছেই লাগিয়ে নেও প্লিজ? ওরা অনেক সুন্দর করে লাগিয়ে দিবে। আর তাছাড়া আমিতো প্রথমে মেহেদী লাগিয়ে শুভক্ষণ করেই দিলাম তাইনা।
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে বুঝালো সে রাজি।
সানা, তানি আর নিশি পাশ থেকে গালে হাত দিয়ে একসাথে বলে উঠলো।
…Awwwww🤗
আদিত্য ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। আর সবসময়ের মতো লজ্জায় লাল হয়ে গেল।
হঠাৎ আবির মাইক হাতে নিয়ে ওদের সামনের ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়িয়ে মাইকে বলে উঠলো।
…..হ্যালো এভরি ওয়ান মে আই হ্যাভ ইউর এ্যাটেনশন প্লিজ?
আবিরের কথায় সবাই মনযোগ সহকারে আবিরের দিকে তাকালো।
আবির আবার বলে উঠলো।
…..আপনারা সবাই জানেন যে আজ আমাদের আদিত্য আর নূরের গায়ে হলুদ প্লাস মেহেদীর অনুষ্ঠান। হলুদের পর্ব শেষ হয়ে গেছে। এখন মেয়েদীর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তবে খালি বসে বসে মেহেদী দেওয়াটা খুবই বোরিং ব্যাপার হয়ে যায় তাইনা গাইস? তাই ফাংশনটা আরেকটু এক্সাইটিং করার জন্য আমরা মেহেদীর পাশাপাশি সংগীতেরও ব্যবস্থা করেছি।
সংগীতের কথা শুনে সবাই উৎসাহিত হয়ে করতালি দিয়ে উঠলো।
আবির আবার বলে উঠলো।
…..তবে তবে, দেয়ার ইস এ্যা টুইস্ট। আমরা সংগীতটা একটু ভীন্নভাবে করবো। আমরা আজকে সংগীতের নাচ গানের মাধ্যমে আমাদের নতুন বধূকে তার নতুন পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
সবাই আবারও জোরে জোরে হাতে তালি দিল। নূর খুশী হয়ে হাসি মুখে তাকিয়ে রইলো।
আবির আরো বললো।
….সো সাহেবান,মেহেরবান, কদরদান,পানদান,থুকদান,মরা গরু টেনে আন। লেডিস এন্ড লেডিসদের জামাই লোক, লেটস স্টার্ট দা রকিং ইভিনিং। আর আমি হলাম আজকে আপনাদের হোস্ট এন্ড দোস্ত, দ্যা ওয়ান এন্ড অনলি আবির। নাম তো সুনাই হোগা?
সবাই একসাথে হেসে উঠলো।
…..যাইহোক আসল কাজে আসা যাক। সবার প্রথমে পরিবারের বড়দের দিয়ে শুরু করা যাক। তো বড় বাবা মানে নতুন বউয়ের শশুর আব্বা শারীরিক ভাবে একটু দূর্বল আছে। তাই তাকে আমরা আজ আর পেরেশান করলাম না। তাহলে প্রথমে পালা আসে হলো ভাবির চাচা আর চাচী শাশুড়ির। তাদের একজনের ইংলিশ বলার খুব শখ,
তবে তার ইংলিশ শুনে বাকিদের লেগে যায় শক।
সে হলো আমার আম্মাজান। আর যার এই শক খেয়ে খেয়ে অবস্থা হয়ে গেছে বেহাল নাজেহাল।সে হলো আমার বেচারা আব্বাজান। সো পুট ইউর হ্যান্ডস টুগেদার ফর মিঃ এন্ড মিসেস আহনাফ।
সবাই আবারও জোরে হাতে তালি দিয়ে উঠলো। আবির ওখান থেকে সরে যেয়ে দাঁড়ালো। আর আবিরের বাবা মা ওখানে এসে দাঁড়ালো। তারপর মিউজিক শুরু হওয়ার সাথেই ওরা নাচা শুরু করে দিল। আবিরের বাবা আবিরের মায়ের পেছনে ঘুরে ঘুরে নেচে গাইলো।
♬ ♬ সুন্দরী চলেছে একা পথে
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?
রাগ করোনা সুন্দরী গো
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো
সুন্দরী চলেছে একা পথে ♬
গানটাতে দুজন এলোমেলো ভাবে কতক্ষণ নাচলো। নাচা শেষে সবাই আবারও করতালি দিয়ে উঠলো। আবির জোরে শিস দিয়ে উঠলো। আবিরের মা যেন খুশিতে গদগদ হয়ে যাচ্ছে।
একটু পরে আবির আবার এসে মিছেমিছি দুঃখী ভাব ধরে বলে উঠলো।
…..সো দর্শকবৃন্দ, এখন যার কথা বলবো তার জন্য আমরা আগে এক মিনিটের নীরবতা পালন করে, তার প্রতি শোক প্রকাশ করবো। কারণ সে আমাদের পরিবারের কেউ না। তাকে বড়ো বাবা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিল। কিন্তু দেখুন আমরা কতো মহান, কখনো সেটা ওকে বুঝতে দেয় নি। সবসময় নিজের পরিবারের সদস্যই মনে করেছি। সে আর কেউ না, ভাবির একমাত্র ননদ সানা।
সানা জোরে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…ভাইয়াআআ, ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম 😡
আবির হেসে দিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি। তোর কাছে ভালো কিছু আশাও করা যায় না।
তারপর আবার সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….সো গাইস পুট ইউর হ্যান্স ডাউন ফর ভাবির ননদ সানা।
কথাটা বলেই আবির হাসতে হাসতে ওখান থেকে সরে গেল।
আর সানা এসে রাধা গানটাতে, সুন্দর একটা ডান্স পারফরম্যান্স দিল। তাসির হা হয়ে সানানার ডান্স দেখছে। সানার নাচ শেষে সবাই আবারও করতালি দেয়।
ডান্স শেষে সানা এবার মাইক হাতে নিয়ে বলে উঠলো।
….সো দর্শকবৃন্দ এখন আপনাদের সামনে যে আসছে, সে আমাদের ফ্যামিলির আন,বান,শান এর মধ্যে কোনটাই সে না। সে শুধু আমাদের মাথার হেডেক ছাড়া আর কিছুই না। আমার তো পাক্কা ডাউট আছে, যে হসপিটালে চাচির বাচ্চা বদল হয়ে গেছে। নাহলে এমন জোকার কিভাবে আমাদের ফ্যামিলিতে চলে এলো।
সানার কথায় সবাই হেসে দিল।
সানা আবার বলে উঠলো।
….এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন আমি কার কথা বলছি? ইয়েস, সে আর কেউ না। সে হলো গুড ফর নাথিং, এন্ড আনফরচুনেটলি ভাবির একমাত্র দেবর মিস্টার আবির। তো গাইস, জোরদার গালিয়া, থুক্কু জোরদার তালিয়া ফর দ্যা আনওয়ান্ট পারসন আবির।
কথাগুলো বলে সানা ওখান থেকে সরে গেল।
একটু পরে আবির বাইক চালিয়ে হিরোর মতো ওখানে এন্ট্রি নিল। তারপর বাইক থেকে নেমে স্টাইল নিয়ে দাঁড়াল। মিউজিক শুরু হতেই নাচতে নাচতে গাইলো।
♬ ♬ বাচনা এ হাসিনো
♬ ♬ ♬ লো মে আগেয়া
♬ ♬ ♬ হুসন কা আশিক
♬ ♬ ♬ হুসন কা দুশমান
♬ ♬ ♬ আপনি আদা হে ইয়ারো সে জুদা
♬ ♬ ♬ হেহ হোহ
♬ বাচনা এ হাসিনো লো মে আগেয়া।
(সংক্ষিপ্ত)
আবিরের ডান্স দেখে তানি সবার নজর এড়িয়ে ঠোঁট চোঁখা করে চুমু দেখালো। আবির সেটা দেখে চোখ টিপ মারলো। আবিরের ডান্স শেষে সবাই আবারও হাতে তালি দিয়ে উঠলো। সায়েম শিস বাজিয়ে বলে উঠলো।
….ওয়াও ব্রো, জাস্ট ফাটিয়ে দিয়েছ।
আবির সেলিব্রিটিদের মতো হাত উঠিয়ে বললো।
….ধন্যবাদ ধন্যবাদ। আই এ্যাম সো মাচ প্লেজারড।
এরমধ্যে নূরের দুই হাত জুড়ে কনুইয়ের উপর পর্যন্ত মেহেদী লাগানো হয়ে গেছে। এখন পায়ে লাগানো হচ্ছে। নূর দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে বসে আছে। একটুও নড়াচড়া করতে পারছে না। এদিকে হঠাৎ ওর পিঠে কেমন যেন ভীষন চুলকাচ্ছে। কিন্তু দুই হাত বন্ধ থাকায় চুলকাতেও পারছে না। পাশেই আদিত্য বসে আছে। কিন্তু আদিত্যাকে কথাটা বলতে ভীষণ লজ্জা লাগছে নূরের। নূর চুলকাতে না পেরে শুধু হালকা মোচড়ামুচড়ি করছে। নূরের নড়াচড়া করা দেখে আর্টিস্ট মেয়েটা বলে উঠলো।
…প্লিজ ম্যাম নড়াচড়া করেননা। নাহলে মেহেদী নষ্ট হয়ে যাবে।
মেয়েটার কথা শুনে আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
নূর আমতা আমতা করে বললো।
….আ আসলে পি পিঠে একটু চুলকাচ্ছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….তো আমাকে কেন বলছ না? দেখি কোথায়?
কথাটা বলে আদিত্য নূরের পিঠে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কোন জায়গায় চুলকাচ্ছে?
নূর ইতস্তত ভাবে বললো
…না না ওখানে না। আ আরেকটু উপরে।
আদিত্যের মাথায় হঠাৎ দুষ্টু বুদ্ধি এলো। আদিত্য নূরের একদম কাছে ঘেঁষে বসে, যাতে কেউ দেখতে না পারে। তারপর আদিত্য পেছন থেকে নিজের হাতটা ধীরে ধীরে নূরের লেহেঙ্গার উপরের টপসের ভেতর দিয়ে নূরের পিঠে রাখলো।
নূরের ইচিনেস সারাতে গিয়ে এবার কাপাকাপি শুরু হয়ে গেলো। আদিত্য নূরের পিঠে স্লাইড করে আস্তে করে বললো।
….এখানে?
…..ন নাহ।
আদিত্য এবার আরেক জায়গায় হাত বুলিয়ে বললো।
….এখানে?
নূর আর সহ্য না পেরে চোখ বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..হ হয়ে গেছে। আ আর চুলকাচ্ছে না।
আদিত্য নূরের পিঠ থেকে হাত বের করে, ঠোঁট কামড়ে হেসে নূরের কানের কাছে ঝুকে বললো।
….দেখেছ আমার হাতের কামাল? মুহূর্তেই সব সমস্যা গায়েব।
নূর লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো।
একটু পরে আবির মাইক হাতে নিয়ে বলে উঠলো।
…..এখন আপনাদের সামনে আসবে সে, যার সাথে আমাদের রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও সেও আমাদের পরিবারের সদস্যদের মতোই। যার সাথে ভাবির দুইটা সম্পর্ক। দেবর আবার ভাই। সে আদিত্য ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড, কম ভাই, কম সহপাঠী, কম পার্টনার, কম এসিস্ট্যান্ট, কম এডভাইজার। হায়, আমিতো হাঁপিয়েই গেছি বলতে বলতে। যাইহোক বেচারার সবই কম, শুধু একটা জিনিস ছাড়া। আর সেটা হলো তার মন।তার মনটা অনেক বড়ো এবং উদার। সো গাইস পুট ইউর হ্যান্স টুগেদার ফর হ্যান্ডসাম বয় তাসির।
একটু পরে তাসির এন্ট্রি নিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো।
♬ ♬ ঢোলাক মে তাল হে
♬ ♬ পায়েল মে ছান ছান
♬ ♬ ঘুঙ্গাট মে গরি হে
♬ ♬ সেহরে মে সাজান
♬ ♬ যাহা ভি এ যায়ে
♬ ♬ এ খুশিয়া হি পায়ে
♬ ♬ মেরে দিল নে দুয়া দি হে
♬ ♬ মেরে ইয়ার কি শাদি হে
♬ ♬ মেরে ইয়ার কি শাদি হে
(সংক্ষিপ্ত)
তাসিরের ডান্স দেখে সানা মুচকি মুচকি হাসছে। ডান্স শেষে আদিত্য তাসিরের দিকে একটা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে বললো।
….লাভ ইউ ইয়ার।
আবির আবার মাইক হাতে নিয়ে বললো।
….দর্শকবৃন্দ এখন আপনাদের সামনে আসছে। আমাদের দুই কাজিনস। যার ভেতর একজন ভাবির দেবর, তো একজন ভাবির সুইট ননদ। একজনের নাম মিস্টার সায়েম। যার নায়ক নায়ক ভাব কিন্তু নায়িকার অভাব। আরেকজন মিস নিশি। যার শুধু একটাই স্বপ্ন, হতে চায় সোশ্যাল মিডিয়ার কুইন। পুট ইউর হ্যান্স টুগেদার ফর সায়েম এন্ড নিশি।
একটু পরে সায়েম আর নিশি এলো। নিশি এটিটিউড নিয়ে সায়েমের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো। সায়েম ওর পিছু পিছু ঘুরে নাচতে নাচতে গাইলো।
♬ ♬ ♬ আঁখ মিলাকে পুছে
♬ ♬ ♬ হায় হাউ আর ইউ
♬ ♬ ♬ হায় হাউ আর ইউ
♬ ♬ ♬ হাত মিলাকে পুছে
♬ ♬ ♬ হাউ ডু ইউ ডু
♬ ♬ ♬ হাউ ডু ইউ ডু
♬ ♬ ♬ স্টাইল পে উসকি
♬ ♬ ♬ স্মাইল পে উসকি
♬ ♬ ♬ হায় তাবিয়াত ভাড়কি
♬ ♬ ♬ শেহের কি লেরকি
♬ ♬ ♬ শেহের কি,শেহের কি, শেহের কি
(নিশি এবার স্টাইলের সাথে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ ♬ মাস্তি মে ঘুমে
♬ ♬ ♬ ঘুমে ঘুমে ঘুমে আহ্ হা হা
♬ ♬ ♬ বাহো মে ঝুমে
♬ ♬ ♬ ঝুমে ঝুমে ঝুমে পাপ্পা রা
♬ ♬ ♬ হায় হায় এ জালিম ফিগার
♬ ♬ ♬ তেরি মাচাল তি নাজার
♬ ♬ ♬ মেরা বাদান চুমে চুমে চুমে
(সংক্ষিপ্ত)
ওদের পারফরম্যান্স শেষে আবির আবার এসে বললো।
….সো গাইস এখন সময় চলে এসেছে সেই ব্যাক্তির পারফরম্যান্সের। যার জন্য আমরা সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছি।
আবির নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….ভাবিজী, দিল থামকে ব্যাঠিয়ে। কেননা এখন পালা আসছে আপনার ছাইয়াজীর। যে আজ বাদে কাল হবে আপনার প্রাণনাথ, পরানের সোয়ামি।
আবিরের কথায় নূর লাজুক হাসলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য নেই। নূর মনে মনে ভাবলো আদিত্য সত্যিই আজকে ডান্স করবে?
আবির আবার বলে উঠলো।
….আমি কথা বলছি তার। যাকে দেখলেই সব মেয়েদের শুরু হয়ে যায় ।
♬ হায় হুকু, হায় হুকু হায় হায়।
যার স্টাইল দেখে মেয়েরা গেয়ে ওঠে।
♬ পোলাতো নয়, একখান আগুনেরই গোলা।
যার এটিটিউড দেখলে মেয়েরা বলে।
♬ মুন্ডা সেক্সি বয়,এভরিবডি ওয়ান্টস ইউ।
♬ মুন্ডা সেক্সি বয়, এভরিবডি নিড ইউ
তবে তার মন, প্রাণ,কলিজা, ফোপড়া,ফুসফুস,কিডনি, লিভার আরো বাদবাকি সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জুড়ে শুধু একটাই নাম। আর তা হলো,
আবির নূরের দিকে তাকিয়ে গানের সুরে বললো।
…নূ…..র ও মাই ডার্লিং।
আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল। আর নূর লজ্জায় লাল নীল হয়ে গেলো।
আবির এবার উচ্চস্বরে আবার বলে উঠলো।
…..সো এভরি ওয়ান পুট ইউর হ্যান্স টুগেদার ফর দ্যা ক্রাশ আইকন অফ আওয়ার কান্ট্রি। দ্যা ওয়ান এন্ড দ্যা অনলি মিস্টার সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য।
সবাই অনেক জোরে জোরে করতালি আর সিটি বাজাতে লাগলো।
একটু পরে আবির, তাসির আর সায়েম একপাশে এসে দাড়ালো। আর তানি,সানা আর নিশি একপাশে এসে লাইন করে দাঁড়ালো। ছেলেরা একসাথে মেয়েদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গাইলো।
♬ ♬ ইয়ে কুড়িয়া, নাশেদিয়া পুড়িয়া
(এবার মেয়েরা ছেলেদের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে গাইলো)
♬ ♬ ইয়ে মুন্ডে,গালিদে গুন্ডে
♬ ♬ ইয়ে কুড়িয়া, নাশেদিয়া পুড়িয়া
♬ ♬ এ মুন্ডে গালি দে গুন্ডে
♬ ♬ নাশেদিয়া পুড়িয়া
♬ ♬ গালি দে গুন্ডে
(মেয়েরা আর ছেলেরা লাইন হয়ে দুই দিকে সরে দাঁড়ালো। আর মাঝখান দিয়ে আদিত্য সামনে আসতে আসতে নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইলো)
♬ ♬ ওওও ও ও,ওও ওও
(আদিত্য একটা কাবলি পাঞ্জাবি পাজামা পরেছে। নূর অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে। আদিত্য নাচতে নাচতে গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
♬ ♬ ডোলি সাজাকে রাখনা
♬ ♬ লেনে তুঝে ও গরি
♬ ♬ আয়েঙ্গে তেড়ে সাজনা
♬ ♬ মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
♬ ♬ ডোলি সাজাকে রাখনা।
(নূর আদিত্যকে দেখতে দেখতে আনমনেই গেয়ে উঠলো)
♬ ♬ হোওও ও ও
♬ ♬ সেহরা সাজাকে রাখনা,
♬ ♬ চেহরা ছুপাকে রাখনা
♬ ♬ এ দিল কি বাত আপনে,
♬ ♬ দিল মে দাবা কে রাখনা
( নূরের গান গাওয়া দেখে আদিত্য খুশী হয়ে গেল। হাসি মুখে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
♬ ♬ ডোলি সাজাকে রাখনা
(বাকি ছেলেরা সহ আবির তানিদের পেছনে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ উড় উড়কে তেড়ি জুলফে
♬ ♬ কারতিহে কেয়া ইশারে
♬ ♬ দিল থামকে খাড়ে হে
♬ ♬ আশিক সাবই কাওয়ারে
(বাকি মেয়েরা সহ তানি আবিরদের সামনে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ ছুপযায়ে সারি কুড়িয়া
♬ ♬ ঘাড়মো শারাম কে মারে
♬ ♬ গাওমে আগেয়ে হে
♬ ♬ পাগাল শেহের সারে
(আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ নাজরে ঝুকাকে রাখনা
♬ ♬ দামান বাচাকে রাখনা
♬ ♬ লেনে তুঝে ও গরি
♬ ♬ আয়েঙ্গে তেরে সাজনা
♬ ♬ মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
♬ ♬ ডোলি সাজাকে রাখনা
(বাকি ছেলেরা সহ সায়েম নিশিকে হাত দিয়ে ইশারা করে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬মে ইক জাওয়ান ল্যারকা
♬ ♬ তু ইক হাসিন লেরকি
♬ ♬ এ দিল মাচাল গ্যায়া তো
♬ ♬ মেরা কুসুর কেয়া হে
(বাকি মেয়েরা সহ নিশি সায়েমদের সামনে এটিটিউড নিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ রাখনা থা দিলপে কাবু
♬ ♬ এ হুসনো তো হে যাদু
♬ ♬ যাদু এ চাল গেয়া তো
♬ ♬ মেরা কুসুর কেয়া হে
(আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ রাস্তা হামারা তাকনা
♬ ♬ দারওয়াজা খুল্লা রাখনা
♬ ♬ লেনে তুঝে ও গরি
♬ ♬ আয়েঙ্গে তেরে সাজনা
♬ ♬ মেহেন্দি লাগাকে রাখনা
♬ ♬ ডোলি সাজাকে রাখনা
♬ ♬ সাভা ওওয় ওয়
♬ ♬ সাভা ওয় ওয়
এবার সবাই একসাথে এসে উরাধুড়া যে যেমন পারে তেমন নাচতে লাগলো। রাত অনেক হওয়ায় বাড়ির বড়োরা সবাই নিজেদের রুমে চলে গেছে। শুধু ইয়াংস্টার রাই আছে।
আদিত্য হঠাৎ নূরের কাছে এসে সাবধানে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। যাতে ওর মেহেদী নষ্ট না হয়।
আচমকা আদিত্যের এমন কাজে নূর একটু হকচকিয়ে উঠলো। দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে আদিত্যকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই নাচা শুরু করে দিল। নূর মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো আদিত্যের দিকে। আদিত্যও নাচতে নাচতে নূরের কপালে একটা চুমু খেল। নূর আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।
চলবে…..
#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৫০
★ ফাংশন শেষে নূর মাত্রই রুমে এসেছে। তানি ওকে নিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ আগে আদিত্য নিজের হাতে নূরকে খাবার খাইয়ে দিয়েছে। তানি নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….তুই ফ্রেশ হয়ে নে। তোর মেহেদীও শুকিয়ে গেছে, এখন তুলে ফেল।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে।
তানি নূরের কাপড়চোপড় সহ নূরকে ওয়াশরুমে দিয়ে এলো,ফ্রেশ হওয়ার জন্য। তানি ততক্ষণে সানার রুমে গেল ফ্রেশ হতে।
বিশ মিনিট পর নূর ফ্রেশ হয়ে বের হলো। বেডের ওপর বসে নিজের হাতের মেহেদী দেখতে লাগলো। কতো সুন্দর গাঢ় লাল রং হয়েছে। নূর হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
হঠাৎ ওর ফোনে টুন করে একটা মেসেজের শব্দ এলো। নূর সামনে তাকিয়ে দেখলো বেডের পাশে ছোট টেবিলের উপর ওর ফোন রাখা। মনে হয় তানি ওর ফোন এখানে রেখে গেছে। কথাটা ভেবে নূর মুচকি হেসে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো কে ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। ম্যাসেজ টা পরে নূর নিচের ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো।
ত্রিশ মিনিট পরে তানি আবার নূরের রুমে এলো। রুমে এসে দেখলো নূর রুমে নেই। তানি ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো, ওয়াশরুমের দরজা খোলা। আর ভেতরে কেউ নেই। তানি ভ্রু কুঁচকে ভাবলো। এতো রাতে নূর আবার কোথায় গেল। তানি বেলকনিতে যেয়ে দেখলো ওখানেও নেই।
তানি রুমের বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে লাগলো। তারপর সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এসে ড্রয়িং রুমেও দেখলো। নূর ওখানেও নেই। রাত অনেক হওয়ায় বেশির ভাগ মানুষই যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে। তাই এখানে তেমন কেউ নেই। তানি মনে মনে বললো। নূর আবার আদিত্য ভাইয়ার সাথে দেখা করতে যায়নি তো? এদের নিয়ে আর পারা যায় না। রাত পোহালেই বিয়ে হবে, তাও যেন এদের তরই সইছে নাহ। এতরাতেও আবার প্রেমালাপ করতে গেছে। এসব ভেবে তানি আদিত্যের রুমের দিকে এগিয়ে গেল নূরকে ডেকে আনার জন্য।
সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে আদিত্যের রুমের দিকে যেতে নিলেই, হঠাৎ কেউ তানির হাত টেনে ধরে একটা রুমের ভেতর নিয়ে যায়। তানি সামনে তাকিয়ে দেখলো,আবির ওর দিকে দুষ্টু হেসে তাকিয়ে আছে। তানি ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এসব কি?এভাবে কেউ টান দেয়? জানো আমি কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?
আবির দুষ্টু হেসে আহ্লাদি কন্ঠে বলে উঠলো।
….আলে আলে, আমার কিউটি টা ভয় পেয়েছে? আসো আমি তোমার সব ভয় দূর করে দিচ্ছি।
কথাটা বলেই আবির নিজের ঠোট দুটো চোখা করে তানির ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো।
তানি আবিরের ঠোটের ওপর নিজের তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বললো।
….হইছে,আর ভয় দূর করতে হবে না। আমি এতটাও ভয়ে মরছি না। সুযোগের সৎ ব্যবহার করা কেউ তোমার কাছ থেকে শিখুক। এখন সরোতো যেতে দাও আমাকে।
কথাটা বলেই তানি আবিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলেই, আবির পেছন থেকে তানির হাত ধরে টেনে ধরে গানের সুরে বলে উঠলো।
♬ যেওনা সাথী ও ও ও ও
♬ চলেছ একেলা কোথায়
♬ একটা চুমু দিয়েতো যাও
♬ শুধু একটা ও ও ও
তানি আবিরের দিকে ঘুরে বললো।
….নেও হয়ে গেলো ড্রামা চালু
এখন ছেলো বসে আলু।
আবির তানিকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে দুষ্টু হেসে বললো।
….বাহ্ তুমিতো দেখছি আমার মতোই জোক মারা শিখে গেছো।নট ব্যাড।
….হুম, কি করবো সঙ্গদোষের প্রভাব। এখন ছাড়তো, আমাকে নূরকে খুঁজতে যেতে হবে।
আবির ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন ভাবি আবার কোথায় গেছে?
…কিজানি রুমে আর ড্রয়িং রুমে তো দেখলাম না। নিশ্চয় আদিত্য ভাইয়ার সাথে দেখা করতে গেছে। আর কোথায় যাবে।
….দেখেছ ভাবি কতো রোমান্টিক? আজ বাদে কাল বিয়ে, তবুও ভাইয়া ডাকার সাথে সাথে চলে গেছে। আর এক তুমি। একটা আনরোমান্টিকের বস্তা। একটুও ভালুপাসনা আমাকে।
….হইছে, অফ যান এখন। আর ছাড় আমাকে। নূরকে ডেকে নিয়ে আসি।
আবিরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। আবির দুষ্টু হেসে বললো।
….চলো,আজ দুটেকে একদম হাতে নাতে ধরবো। সেই মজা হবে।
…মানে?
….আরে চলতো, দেখাচ্ছি।
কথাটা বলেই আবির তানির হাত ধরে আদিত্যের রুমের দিকে যেতে লাগলো।
আদিত্যের রুমের দরজার সামনে এসে আবির তানির দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙুল রেখে চুপ থাকার ইশারা করলো। তারপর আস্তে করে দরজাটা খুলে রুমে ঢুকেই জোরে বলে উঠলো।
….পাকাড় লিয়া,,,,,
কথাটা বলেই দুজন সামনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল। কারণ সামনে শুধু আদিত্য একা বেডে শুয়ে আছে। সারা রুমে কোথাও নূর নেই।
আবিরের চিল্লানিতে আদিত্য চমকে উঠলো। এইসময় রুমে আচমকা ওদের দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে তোরা এখানে কি করছিস? আর এতো রাতে ষাঁড়ের মতো চিল্লাছিস কেন?
আবির বলে উঠলো।
…..বাহ্ ভাই, কি এ্যাকটিং না করছিস। একদম অসকার উইনিং পারফরম্যান্স। তবে এখন আর ড্রামা করে লাভ নেই। আমরা সব জেনে গেছি।
….মানে? কি বলছিস তুই? নেশা টেশা করে এসেছিস নাকি?
তানি এবার বলে উঠলো।
….ভাইয়া নূরকে ডেকে দিন। এতো রাতে কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে? নূরকে আমি কিভাবে ডেকে দিব? ওতো ওর রুমে হবে।
আবির বলে উঠলো।
…এবার কিন্তু ওভারেক্টিং হয়ে যাচ্ছে। দেখ আমরা ভালো করেই জানি ভাবি এখানেই আছে। তাই নাটক না করে ভাবিকে ডেকে দে। ভাই এতোটা ডেস্পারেট হওয়াও ঠিক না। রাত পোহালেই তো বিয়েটা হয়ে যাবে। তবুও তোরা এতরাতেও দেখা করছিস?
আদিত্য এবার রেগে উঠে বললো।
….জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। তুই ভাবলি কি করে নূর এতোরাতে আমার রুমে থাকবে? আরে আমরা যখন এখানে একা ছিলাম তখনও আমি কখনও নূরকে রাতে আমার রুমে ডাকিনি। আর আজ এতো মানুষের ভেতর আমি ওকে আমার রুমে ডাকবো? আমাকে কি তোদের এতো ইম্যাচিওর মনে হয়?
তানি আমতা আমতা করে বললো।
……সরি ভাইয়া, আসলে নূর ওর রুমে নেই। আর ড্রয়িং রুমেও ওকে দেখলাম না। তাই ভাবলাম হয়তো আপনার কাছে এসেছে কিনা?
তানির কথা শুনে আদিত্যর কপালে ভাজ পরে গেলো। আদিত্য এবার এক ঝটকায় বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….এক মিনিট, রুমে নেই মানে? এইসময় কোথায় গেছে নূর?
…..জানি না ভাইয়া। রুমে আর ড্রয়িং রুমে তো কোথাও দেখলাম না। ফোনাটাও রুমে রেখে গেছে। তাই ফোন দিয়েও শুনতে পারছি না।
আদিত্যের এবার একটু চিন্তা হতে লাগলো।
আবির সেটা বুঝতে পেরে বলে উঠলো।
….ভাই আমার মনে হয় ভাবি তার ভাই আর চাচার সাথে হয়তো দেখা করতে গেছে। এতোদিন পরে দেখা হয়েছে, তাই হয়তো ওদের সাথে একটু কথাবার্তা বলতে গেছে ।
আবিরের কথাটা আদিত্যের কাছে ঠিক মনে হলো। আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ সেটা হতে পারে। আমি যেয়ে দেখছি।
কথাটা বলেই আদিত্য তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো । আবির আর তানিও আদিত্যের পেছন পেছন গেল।
নূরের চাচা আর ভাই যে রুমে আছে, সেই রুমের সামনে এসে দরজায় নক করলো আদিত্য।
একটু পরেই নূরের চাচা এসে দরজা খুলে দিয়ে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললো।
…..আরে আদিত্য, তুমি এখানে? কিছু বলবে?
আদিত্য বলে উঠলো।
….সরি আপনাকে এতো রাতে ডিস্টার্ব করলাম। আসলে নূর কি আপনাদের রুমে এসেছে?
নূরের চাচা বলে উঠলো।
….নাতো নূর তো এখানে আসেনি। আমরা তো ঘুমিয়ে ছিলাম।
আদিত্যের এবার ভয় হতে লাগলো। কোথায় গেল নূর? আদিত্য একটা শুকনো ঢোক গিললো। তারপর ওখান থেকে সরে এসে সারা বাড়ি নূরকে খুঁজতে লাগল,আর জোরে জোরে নূরের নাম ধরে ডাকতে লাগলো। আবির আর তানিও নূরকে খুঁজতে লাগলো। ওদের এখন সত্যি সত্যিই চিন্তা হচ্ছে নূরের জন্য। ওদের ডাকাডাকিতে বাসার সবাই জেগে গেল। সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আবিরকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? আবির সবাইকে সবটা খুলে বললো। আবিরের কথায় সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। তাসির, সায়েম, সানা,নিশি ওরা সবাইও নূরকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু নূর কোথাও নেই।
বাসার ভেতর না পেয়ে আদিত্য এবার ছাদে উঠে এলো নূরকে খুঁজতে। ছাঁদে এসে চারিদিকে খুঁজে দেখলো, কোথাও নূরকে পেল না। নূরকে না পেয়ে আদিত্য দুই হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে, পাগলের মতো এদিক ওদিক হাটতে লাগলো। ভয়ে ওর অন্তর শুকিয়ে আসছে। কোথায় গেল ওর প্রাণপাখি টা? একটু আগেও তো ওর সাথেই ছিল। এখুনি আবার কোথায় হারিয়ে গেলো? আবারও কোনো বিপদে পরলো নাতো নূর? এসব ভেবে আদিত্যের বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলো।
আদিত্য আবার দৌড়ে নিচে নেমে, দরজা খুলে বাইরে বেড়িয়ে এলো। পেছন থেকে সবাই আদিত্যকে ডাকছে, কিন্তু সেদিকে আদিত্যের কোনো খেয়াল নেই। ও বাইরে এসে পুল সাইডে, বাগানে সব জায়গায় পাগলের মতো নূরকে খুঁজতে লাগলো। কোথাও নূরকে না পেয়ে আদিত্যের এবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। মাথা ভনভন করে ঘুরছে ওর। আদিত্য দুই হাতে নিজের চুল শক্ত করে টেনে ধরে হাঁটু গেড়ে ধপ করে নিচে বসে পড়লো। আহত কন্ঠে বিড়বিড় করে বললো।
….আমাকে রেখে কোথায় গেলে তুমি প্রাণপাখী? একটু আগেও তো সবকিছু কতো সুন্দর ছিল। তুমি আমার পাশে কতো হাসিখুশি ছিলে। তাহলে একমুহূর্তেই কি হয়ে গেলো? কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি? কোথায় খুঁজব এখন তোমায় আমি?
আদিত্যর এমন অবস্থা দেখে আদিত্যের বাবার অনেক কষ্ট হচ্ছে। আদিত্যের বাবা আদিত্যের কাছে এসে ওর কাঁধে হাত দিয়ে শান্তনা দিয়ে বললো।
….আদি বাবা, এভাবে ভেঙে পড়লে কিভাবে চলবে বলো? তোমাকে শক্ত হতে হবে। আমাদের নূরকে খুঁজে বের করতে হবে তাইনা? তুমি চিন্তা করোনা নূর মাকে আমরা অবশ্যই খুঁজে বের করবো।
আদিত্য নিজেকে একটু ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ বাবা তুমি ঠিক বলেছ। নূরকে আমি খুঁজে বের করবোই। যদ পুরো দূনিয়াও উল্টে ফেলতে হয়। তবুও আমি আমার নূরকে খুঁজে বের করবই। যেভাবেই হোক।
আদিত্যের বাবা বললো।
…..আমি পুলিশ কমিশনারকে ফোন করছি। উনি এখুনি পুরো ঢাকা শহরে পুলিশ লাগিয়ে নূরকে খোজার জন্য।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে বাবা আমিও গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি নূরকে খুঁজতে।
তাসির এগিয়ে এসে বললো।
…..আমরাও সবাই আলাদা আলাদা ডিরেকশনে গিয়ে নূরকে খুঁজব।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…..ঠিক আছে।
আবির বলে উঠলো।
….ভাই তোর কি কারোর উপর সন্দেহ হয়? আই মিন আগেও তো একবার ওই এ্যানি ভাবিকে কিডন্যাপ করিয়েছিল। তাছাড়া ওই জনি ছেলেটা আবার ভাবির সাথে কিছু করে নিতো?
আদিত্য বলে উঠলো।
….হ্যাঁ হতে পারে। আমাদের কোনোটাই বাদ দেওয়া যাবে না। তবে আমি যতদূর জানি এ্যানিকে ওর বাবা আমেরিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। তাহলে ও এসব করতে পারবে না। বাকি থাকলো ওই স্ক্রাউন্ডেল টা। ওর ওপরে তো আমারও সন্দেহ আছে। আমি পুলিশ কে ওর নাম্বার টা দিয়ে দিচ্ছি ট্রেস করার জন্য।
কথাটা বলেই আদিত্য ফোনের জন্য নিজের পকেটে হাত দিয়ে দেখলো, ওর ফোনটা নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….আমার ফোনটা কই গেল?
আদিত্য সানাকে বললো ওর রুম থেকে ফোনটা আনতে। আদিত্যের কথামতো সানা ভেতরে চলে গেলো। একটু পরে আবার বেড়িয়ে এসে বললো।
….রুমেতো তোমার ফোন পেলাম না। আপাতত তুমি আমার ফোনটা রাখ। তোমার টা পরে খুঁজে নিও।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে সানার হাত থেকে ফোনটা নিল।
তারপর সবাই যার যার মতো বেড়িয়ে পরলো নূরকে খোঁজার জন্য। আদিত্য যেতে নিলেই পাশে তাকিয়ে দেখলো রবি দাঁড়িয়ে কান্না করছে। আদিত্য ওর কাছে যেয়ে কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….আম সরি বাডি। আমি তোমার আপুর খেয়াল রাখতে পারিনি। তবে চিন্তা করোনা আমি যেভাবেই হোক তোমার আপুকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসবো।
রবি কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
….আপনার ওপর আমার ভরসা আছে। জলদি আপুকে নিয়ে এসেন জিজু।
আদিত্য চলে যেতে নিয়ে কিছু একটা মনে করে আবার রবির দিকে তাকিয়ে বললো।
….আচ্ছা শোন, তুমি তোমার মায়ের নাম্বার টা দিতে পারবে?
রবি ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন?
….এমনই, একটু দরকার ছিল আরকি।
রবি মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে দিচ্ছি।
তারপর রবি আদিত্যকে ওর মায়ের নাম্বার টা দিল।
আদিত্য নাম্বার নিয়ে দ্রুত বেড়িয়ে পরলো নূরকে খোঁজার জন্য। গাড়িতে উঠে পুলিশের কাছে জনি আর রবির মায়ের নাম্বার দিল ট্রেস করার জন্য। রবির মায়ের ওপর আদিত্যের সন্দেহ আছে। তাই তার নাম্বারও ট্রেস করতে দিল। তারপর গাড়ি চালিয়ে পাগলের সবজায়গায় নূরকে খুঁজতে লাগলো।
—————————
রাত ২টা
একটা অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অজ্ঞান অবস্থায় ফ্লোরে পরে
আছে নূর। একটু পরে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসলে, পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো নূর। চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ও কোথায়। নিজেকে এই অবস্থায় দেখে নূরের ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো। নূর মনে মনে ভাবলো, আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমিতো আদিত্যের সাথে দেখা যাচ্ছিলাম। নূরের মনে পরলো, আদিত্য তখন ওকে ম্যাসেজ দিয়ে বলেছিল মেইন গেটের কাছে এসে দেখা করতে। কেও যেন দেখতে না পায়। ওর জন্য নাকি কি সারপ্রাইজ আছে? তাই নূর ওর সাথে দেখা করার জন্য বাইরে গেটের কাছে গিয়েছিল। তখনই হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন ওর মুখের ওপর রুমাল চেপে ধরে। তারপর আর কিছু মনে নেই ওর।
তারমানে কেউ আমাকে আবারও কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে। কথাটা মনে আসতেই নূরের ভয়ে হাত পা অবশ হয়ে আসছে। আত্মা শুকিয়ে আসছে। দু চোখ বেয়ে পানি পরতে লাগলো। আমি এখানে কতক্ষণ ধরে আছি? আর কারাই বা আমাকে নিয়ে এসেছে? আদিত্য? আদিত্যর নাজানি কি অবস্থা হচ্ছে, আমাকে না পেয়ে?
নূরের ভাবনার মাঝেই রুমের বাইরে কারোর কথা বলার আওয়াজ শুনতে পেল। নূর চুপ করে থেকে ভালোকরে শোনার চেষ্টা করলো ওরা কি বলছে।
…..ওই অপয়াকে আজ একদম শেষ করে দিব। যেভাবে আমি ওর মাকে শেষ করে ছিলাম।
কথাটা শুনতেই নূর স্তব্ধ হয়ে গেল। এটাতো ওর ছোট মার কন্ঠ। তারমানে মায়ের মৃত্যু হয় নি, বরং ছোট মা সেদিন আমার মাকে মেরে ফেলেছে? আর আমাকেও আজ মেরে ফেলতে চাচ্ছে? নূর যেন রক্তশূন্য হয়ে যাচ্ছে এসব ভেবে। নূরের ভাবনার মাঝেই নূর আবারও শুনতে পেল।
…..ফুপি তুমি ওকে মারো কাটো আর যায় করো। কিন্তু তার আগে আমাকে আমার কাজটা করে নিতে দেও। ওর ওপরে অনেক আগে থেকেই নজর ছিল। কিন্তু কখনো ওকে বাগে আনতে পারিনি। আজ ফাইনালি সেই সুযোগ এসেছে। আজ আমি আমার মনের স্বাদ মেটাবো। এইজন্যই তো আজ আমি তোমার এতো হেল্প করলাম ওকে কিডন্যাপ করে আনতে। কতো কৌশলে ছদ্মবেশে অনুষ্ঠানের ভেতর যেয়ে ওই আদিত্যের ফোনটা চুরি করে আনলাম। তারপর সময় বুঝে নূরকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে দিলাম। তারপরে ওকে বেহুঁশ করে এখানে নিয়ে এলাম। এতো কিছু করেছি শুধু আমার কার্য হাসিলের জন্য।
নূরের বুঝতে বাকি রইল না যে, এটা আর কেউ না, ওই বদমাইশ জনি। ওদের কথা শুনে নূরের ঘৃণায় সারা শরীর রি রি করছে। মানুষ এতো খারাপ কি করে হতে পারে?
নূরের ছোট মা বলে উঠলো।
….ঠিক আছে। তোর যা করার করে নে। তারপর ওকে মেরে ফেলবো।
….ঠিক আছে চলো দেখি ওর জ্ঞান ফিরেছে কিনা?
তারপর দুজন রুমে ঢুকে লাইট জ্বালিয়ে দিল। সামনে তাকিয়ে দেখলো নূর ওদের দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জনি সয়তানি হেসে বলে উঠলো।
…..বাহ্ ম্যাডামের তাহলে জ্ঞান ফিরেছে। যাক ভালোই হলো। এখন তাহলে খেলা জমবে।
নূর জনির দিকে একবার অগ্নি চোখে তাকালো, তারপর ওর সৎ মায়ের দিকে তাকিয়ে ব্যাথিত কন্ঠে বললো।
….তুমি আমার মাকে কেন মেরেছ? কি দোষ করেছিল আমার মা? সে তো তোমার বান্ধবি ছিল তাইনা? তাহলে নিজের বান্ধবীকে খুন করতে একবারও তোমার বুক কাঁপল না? তুমি কি মানুষ? আজ নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে যে, তোমার মতো জঘন্য মহিলাকে আমি আমার মায়ের স্থান দিয়েছিলাম।ছিঃ
রুবিনা বেগম সয়তানি হেসে বললো।
….তাহলে তুই জেনে গেছিস।যাক ভালোই হয়েছে। মরার আগে অন্তত সত্যিটা জেনেই মর। হ্যাঁ আমিই তোর মাকে খুন করেছি। আরে কিসের বান্ধবী হ্যাঁ? ও বান্ধবী না বরং চরম শত্রু ছিল। ছোট বেলা থেকেই তোর মা সবকিছুতে আমার থেকে এগিয়ে থাকতো। পড়ালেখা, কাজে কর্মে সবকিছুতে আমার আগে থাকতো। সবসময় ওর জন্য আমাকে কথা শুনতে হতো। মা বলতো, তোর বান্ধবী এতো কিছু পারে তুই পারিস না কেন? তখন থেকেই ওর প্রতি আমার হিংসা হতে শুরু করলো। উপরে উপরে বান্ধবী হয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে ওর প্রতি আমার রাগ থাকতো। তোর বাবাকে আমিও পছন্দ করতাম। কিন্তু সেখানেও তোর মা আবারও আমাকে হারিয়ে দিল। তোর বাবাকে পটিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেললো। সেদিন থেকে ওর প্রতি আমার রাগ ঘৃণায় পরিনত হলো। এদিকে আমার মা বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিল এক নেশাখোরের সাথে। তোর মা বিয়ে করে সুখে জীবন গড়ছিল। আর আমি ওখানে কষ্টে মরছিলাম। যখন মাকে তোর বাবার সাথে হাসিখুশি দেখতাম, তখন আমার সারা শরীরে আগুন ধরে যেতো। তাই আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক তোর মায়ের জায়গা আমি নিয়েই ছাড়বো। তাই প্রথমে কৌশলে আমার আগের স্বামীর কাছ থেকে ডিভোর্স নেই। তারপর তোর মায়ের কাছে এসে সাহায্য চাই। তোর মাও আমার ওপর দয়া করে আমাকে আর আমার মেয়েকে তোদের বাড়িতে থাকতে দেয়। এভাবে থাকতে থাকতে যেদিন তোর মায়ের ডেলিভারি হয়,সেদিন সুযোগ বুঝে তোর মাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলি। তোকেও সেদিন মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি। তারপরে তোর দাদিকে ছলেবলে পটিয়ে তোর বাবার সাথে বিয়ে করে নিলাম। বিয়ের পরেও তোকে অনেকবার মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম কিন্তু যখন দেখলাম সবাই তোকে তোর মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে। তোকে অপয়া বলছে। তখন আমি তোকে মেরে না ফেলে অন্য প্ল্যান করলাম। তোকে সবার কাছে আরো বেশি করে অপয়া বানানোর জন্য আমি তোর দাদীকেও মেরে ফেললাম।
দাদিকেও মারার কথা শুনে নূর আরো বেশি থমকে গেল। কেমন যেন অনূভুতি শূন্য হয়ে গেলো। তিব্র ঘৃণার চোখে তাকালো রুবিনা বেগমের দিকে।
রুবিনা বেগম আবার বলে উঠলো।
….হ্যাঁ ঠিকই শুনেছিস । তোর দাদিকেও আমি মেরে ফেলেছি। কারণ ওই বুড়ি বেঁচে থাকতে আমি কিছুই করতে পারতাম না। তাই ওকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। আর তোকে সবার নজরে বানিয়ে দিয়েছি। এমনকি তোর বাবার কাছেও। তোকে বানিয়ে নিলাম বাসার কাজের লোক। আমি চাইলে তোকে মেরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তোকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে আমার অনেক ভালো লাগতো। আমার মনে হতো আমি তোর মাকেই শাস্তি দিচ্ছি। কিন্তু তুই তো তোর মায়েরই মেয়ে। ঠিকই নিজের রুপের জালে আশিক যুগিয়ে ফেললি। তুই কি ভেবেছিস? তুই বিয়ে করে রাজরানীর মতোন সুখে থাকবি, আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো?কখনোই না। যে কাজ আগে করিনি সেটা এখন করবো। তোকেও তোর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিব।
এতক্ষণ রুবিনা বেগমের কথাগুলো শুনে নূর যেন অনূভুতি শূন্য হয়ে গেলো। ওর এতো বছরের জীবন একটা মিথ্যের মধ্যে ছিল? আর ও কিনা নিজেকেই এতদিন সবকিছুর জন্য দোষী মেনে এসেছে? এসব ভেবে নূরের শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। গলায় সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। কোনো কথায় বলতে পারছে না।
রুবিনা বেগম এবার জনির দিকে তাকিয়ে বললো।
…তোর যা করার করে নে। তারপর ওকে শেষ করে ফেলবো। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। কাজ হয়ে গেলে আমাকে ডাক দিস।
জনি মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
রুবিনা বেগম বেড়িয়ে যেতেই, জনি নূরের সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….তো নূর সোনা এখন কোথায় পালিয়ে যাবে? ওই আদিত্যকে দিয়ে আমাকে মার খাইয়েছিলি না? এখন কে বাঁচাবে তোকে আমার হাত থেকে? ভেবেছিলাম তোকে বিয়ে করেই আমার চাহিদা পূরণ করবো। কিন্তু তুই তা হতে দিলি না। তাই এখন বিয়ে ছাড়াই আমার মনের বাসনা পূরণ করবো।
রুবিনা বেগমের কথা শুনে নূর এতক্ষণ স্তব্ধ হয়ে থাকলেও, জনির এই নোংরা কথাগুলো শুনে অগ্নি চোখে তাকালো জনির দিকে। তারপর হঠাৎ উচ্চস্বরে হাসা শুরু করলো নূর।
নূরকে এভাবে হাসতে দেখে জনি একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এতো শক খেয়ে পাগল হয়ে গেলে নাকি?
নূর হসি থামিয়ে জনির দিকে তাকিয়ে ক্রুদ্ধ স্বরে বললো।
…পাগল আমি না তোরা হয়ে গেছিস। তোরা কি ভেবেছিস, তোরা আমার সাথে যা খুশি তাই করতে পারবি? আর তুই, গতবারের মারের কথা এত তাড়াতাড়িই ভুলে গেছিস? তবে চিন্তা করিস না। আমার আদিত্য এসে আবার তোকে মনে করিয়ে দিবে। এবারের মার তুই জীবনেও ভুলতে পারবি না। যদি তোর জীবনটা বেঁচে থাকে আরকি। কারণ আমারতো মনে হয় না এবার আদিত্যের হাত থেকে তোকে কেও বাঁচাতে পারবে।
নূরের কথায় জনির প্রচুর রাগ উঠে যায়। জনি চোয়াল শক্ত নূরের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। চড় দেওয়াতে নূরের মাথা আরেক দিকে বাকা হয়ে ঝুকে পড়ে। ঠোঁট ফেটে রক্তও বের হয়ে যায়।
তবুও নূর ভয় না পেয়ে চোখ মুখ কঠিন করে জনির দিকে তাকিয়ে ওর মুখের ওপর থুতু ফেলে বললো।
…..থুহ্, তোর মতো কাপুরুষেরা শুধু এটাই পারিস। একটা মেয়েকে ধরে বেঁধে এনে নিজের পুরুষত্ব দেখাতে। আরে আসল পুরুষ দেখতে হলে, আমার আদিত্যকে দেখ। কতো পারিস তার সাথে মোকাবিলা করে দেখ। হুহ্, এক সেকেন্ডেও টিকতে পারবি না। তুই জোর করে আমার শরীর ভোগ করতে চাস। আর আদিত্য চাইলে আমি নিজেই নিজেকে ওর কাছে বিলিয়ে দেব। তবুও ও আমার নারীত্ব হরণ করবে না। সেই হলো আসল পুরুষ। আরে তোর মতো নর্দমার কিটের সাথে আমার আদিত্যর তুলনা দেওয়াও চলে না। তুই ভুলেও ভাবিস না যে আমি তোকে দেখে ভয় করবো। একদম না। তুই জানিস আদিত্য আমাকে বলেছে, ভীতু চেহারায় আমাকে নাকি অনেক সুন্দর লাগে। আমি যেন অন্য কোনো পুরুষের সামনে ভয় পেয়ে আমার ভীতু চেহারাটা না দেখাই। আমি আবার আমার আদিত্যের সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। কারণ আমি ওকে অনেএএএএএএক ভালোবাসি। তুই আমার কোনো ক্ষতি পারবি না। কারণ আমি জানি আমার আদিত্য, আমার রাজকুমার অবশ্যই আসবে। আর তোদের উচিৎ শিক্ষা দিবে।
নূরের কথাগুলো শুনে জনি প্রচুর অবাক হলো। সাথে রাগও হলো। জনি চোয়াল শক্ত করে বললো।
…..অনেক ভরসা না তোর ওই আদিত্যের ওপর? ঠিক আছে তাহলে দেখা যাক তোর আদিত্য কিভাবে তোকে আজ আমার হাত থেকে বাঁচায়।
কথাটা বলেই জনি উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে সয়তানি হেসে ওর দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো।
নূর উপরে উপরে সাহস দেখালেও ভেতরে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে আসছে। মনে মনে শুধু আল্লাহর নাম নিচ্ছে, আর বলছে আদিত্য কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি চলে এসো। নাহলে যে আজ সব শেষ হয়ে যাবে।
চলবে……