#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৯
★ পরদিন সবাই আবার ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকায় এসে আবির আর তানির রিসিপশন হয়। এভাবেই দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। সবাই আগের মতো যার যার লাইফে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।
রাত ১০টা
নূর রাতের কাজ শেষ করে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকে দেখলো আদিত্য বেডে হ্যালান দিয়ে বসে টিভি দেখছে আর ফোন নিয়ে কি যেন ঘাটাঘাটি করছে। টিভির দিকে তাকাতেই নূরের ভ্রু কুঁচকে এলো। টিভিতে একটা ইংলিশ গান চলছে, গানের মেয়েটা অনেক ছোট ড্রেস পরে নাচছে। শরীরের বেশির ভাগ অংশই দৃশ্যমান হয়ে আছে। এসব দেখে নূরের ভীষণ রাগ হলো আদিত্যের ওপর। ছি ছি কি সব দেখছে?
নূর টিভির সামনে যেয়ে ঠাস করে টিভি টা বন্ধ করে দিল। টিভি বন্ধ করা দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি হলো, টিভি বন্ধ করলে কেন? আমি দেখছিলাম তো?
আদিত্যের কথায় নূরের আরও রাগ হলো। একেতো এসব ফালতু জিনিস দেখছিল, তারওপর আবার সেটা গর্ব করে বলছেও উনি। নূর দাঁত চিবিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ দেখছিলাম তো কি দেখছিলে, আর দেখতে হবে না এসব ফালতু জিনিস।
….মানে? এখানে ফালতুর কি হলো? গানটা তো অনেক ভালো।
নূর রাগে আবার টিভি চালু করে দিয়ে বললো।
….ঠিক আছে দেখ তোমার নাঙ্গু পাঙ্গু।
কথাটা বলে নূর অভিমান করে বেলকনিতে চলে গেল।
নূরের কথায় আদিত্য বেকুব হয়ে গেল। ওয়াট ইস নাঙ্গু পাঙ্গু? ওর তো ভালো লাগছিল বলে শুধু গানটা শুনছিল। টিভির দিকে তো ভালো করে তাকায়ই নি। তারমানে ম্যাডাম এখন টিভির মেয়েদের ওপরও জেলাস হওয়া শুরু করেছে? কথাটা ভেবে আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল। তারপর ধীরে ধীরে উঠে নূরের কাছে বেলকনিতে গেল।
নূর গাল ফুলিয়ে বেলকনির গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে যেয়ে পেছন থেকে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
…..কি হয়েছে আমার প্রাণপাখীটার? হঠাৎ এতো অভিমানের কারণ জানতে পারি কি?
নূর অভিমানী সুরে বলে উঠলো
….কি আবার হবে? কিছুই হয়নি। আমাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি যেয়ে তোমার ওইসব নাঙ্গু পাঙ্গুদের দেখ গিয়ে।
….বাপরে এতো রাগ? আমারতো এখন ভয় করছে। কিন্তু কি করবো বলো, আমার বউ এত সুন্দর নাচতে পারা সত্বেও আমাকে কখনো নেচে দেখাল না। তাইতো টিভিতে নাচ দেখেই মন ভরতে হয়।
নূর থতমত খেয়ে বললো।
….মানে?
…মানে আমি জানি তুমি অনেক ভালো নাচতে পারো। সেদিন তোমাকে পার্টিতে নাচতে দেখেছিলাম। কিন্তু আপসোস সেটা আমাকে কখনো দেখালেনা।
নূর আমতা আমতা করে বললো।
….ও ওটাতো এমনি। ওওরা অনেক জোর করছিল তা তাই আরকি।
…সে যাইহোক। নাচতো তুমি জানো। শুধু আমাকেই দেখাও না।
নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে মুখ ছোট করে বললো।
…তাই বলে তুমি ওইসব নাঙ্গু পাঙ্গু মেয়েদের নাচ দেখবে?
আদিত্য মুচকি হেসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উপরে তুলে বললো।
….এই পাগলি আমিতো মজা করছিলাম। আর আমি ওই নাঙ্গু পাঙ্গু মেয়েকেও দেখছিলাম না। আমিতো শুধু গানটা শুনছিলাম। তবে আমার প্রাণপাখী না চাইলে আর শুনবো না। নাও হ্যাপি? এখন চল শুয়ে পড়ি।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় যেয়ে নূরকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। নূর মনে মনে ভাবলো, আদিত্য আমার নাচ দেখতে চায়। কাল আমার রাজকুমার কে একটা সারপ্রাইজ দেব।
কথাটা ভেবে নূর মুচকি হেসে আদিত্যের বুকে একটা চুমু খেয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
————–
পরদিন রাত ৯টা
আদিত্য আর নূর মাত্রই ডিনার শেষ করে রুমে এসে বসেছে। নূর মনে মনে ভাবছে, এখুনি আদিত্যকে সারপ্রাইজটা দেবে। ও অনলাইন থেকে কিছু জিনিস অর্ডার করেছে সারপ্রাইজ এর জন্য।
নূরের ভাবনার মাঝে আদিত্য নূরের হাত ধরে নরম সুরে বললো।
….শোন প্রানপাখী, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল।
নূর মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ বলো কি বলবে?
আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
….আসলে হয়েছে কি , লন্ডনে আমাদের যে ব্রাঞ্চ আছে ওটাতে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিছু ইনভেস্টররা বাবকে ফোন করে বলেছে।
…তো?
…তো আমাকে কিছুদিনের জন্য লন্ডন যেতে হবে।
কথাটা শোনার সাথে সাথে নূরের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। বুকটা কেমন কেঁপে উঠল। এতক্ষণ মনে মনে আদিত্যকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য যে খুশিটা ছিল, তা সব গায়ব হয়ে গেল। নূর ঝট করে আদিত্যের হাতের ভেতর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে একটু পিছিয়ে গেল। আদিত্য নূরের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নূরের দিকে এগিয়ে এসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বললো।
….দেখ প্রানপাখী, শুধু বিজনেসের ব্যাপার হলে আমি কখনোই যেতাম না। কিন্তু ওই ইনভেস্টররা অনেক পুরাণ। বাবার সাথে কাজ করতো। বাবার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল ওনাদের। বাবা চায়না ওনাদের সাথে সম্পর্কটা নষ্ট হোক। তাই বাবা আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছে লন্ডনে যাওয়ার জন্য। এখন তুমিই বলো আমি বাবার কথা কিভাবে ফেলে দেব? তোমাকে সাথে নিয়ে যেতাম, কিন্তু তোমার পাসপোর্ট এখনো হয়নি। তাই চেয়েও তোমাকে নিয়ে যেতে পারছি না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।
নূরের ভেতর সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। নূর কোনরকমে মাথা নিচু রেখে কাপা কাপা কন্ঠে বললো।
…ঠি ঠিক আছে আমি বুঝতে পেরেছি। কি কিচেনে কিছু কাজ আছে আমি এখুনি আসছি।
কথাটা বলেই নূর ওখান থেকে উঠে চলে গেল।
আদিত্য বুঝতে পারছে যে নূরের মনের অবস্থা ঠিক নেই। ওর নিজেরই এতো খারাপ লাগছে, সেখানে নূরের তো খারাপ লাগারই কথা।
নূর কিচেনে এসে কতক্ষণ অস্থির হয়ে এদিক ওদিক হাটতে লাগলো। ধোঁয়া থালাবাসন বের করে আবার ধুতে লাগলো। মনটা কেমন অশান্ত হয়ে গেছে, কি করছে ও নিজেও জানে না। চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। নূর বারবার তা মুছসে, আবারও চলে আসছে। নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে ওর। এত কাঁদার কি আছে? আদিত্যর ওপর এতো বড় বিজনেসের দায়িত্ব আছে। আর তার জন্য ওঁকে দেশ বিদেশে তো যেতেই হবে। এতে এতো অভার রিয়্যাক্ট করার কি আছে? তুই দুনিয়াতে একা না, যার স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে যাচ্ছে। বাবাও তো সারাজীবন ব্যবসার জন্য বাইরে বাইরেই থেকেছে। তাহলে তোর কেন এতো সমস্যা হচ্ছে? আদিত্য লন্ডনই তো যাচ্ছে, তোকে ছেড়ে তো আর চলে যাচ্ছে না? মনে মনে এসব হাজার কথা বলে নূর নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
হটাৎ আদিত্য এসে নূরের হাত থেকে থালাবাসন কেড়ে নিয়ে রেখে দিল। তারপর নূরকে কোলে তুলে নিল। নূর তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখ মুছে নিল। ও চায়না ওর দূর্বলতা আদিত্যের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াক। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে সোফায় বসলো। নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ওভাবেই বসে রইলো। ও চাই নূরের মনটা একটু শান্ত হোক। তাই কিছু না বলে শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নূরও আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো। কিছুক্ষণ পরে নূর একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্যের বুকের মাঝে থেকেই বলে উঠলো।
…..ক কবে যাবে? আর কতদিন থাকতে হবে?
….কাল রাতের ফ্লাইটেই যেতে হবে। আর ওখানে কতদিন লাগবে সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে অন্তত দশ পনের দিনতো লাগবেই। এই কয়দিন তুমি সাভারের বাসায় থাকবে। আমি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে চলে আসবো। আমার প্রাণপাখীটাকে রেখে আমারওযে অনেক কষ্ট হবে থাকতে। আমি যে আমার আত্মাটাকেই এখানে রেখে যাবো। তোমাকে ছাড়া একটা সেকেন্ড আমার কাছে এক একটা বছরের সমান।সত্যিই বলছি বাবার ব্যাপার না হলে আমি কখনোই তোমাকে রেখে যেতাম না।
আদিত্যের কথা শুনে নূরের নিজের ওপর লজ্জা হলো। আদিত্যরও তো কষ্ট হচ্ছে, তবুও ও বাবার কথা রাখার জন্য যাচ্ছে। আর আমি কিনা ওঁকে সাপোর্ট না করে বসে বসে বসে কাঁদছি? না না আমাকে স্ট্রং হতে হবে। বাবার প্রতি আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে। আর আমি সেটা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমি আদিত্যের দূর্বলতা না, ওর সাপোর্ট হতে চাই। আদিত্যকে আমার হাসিমুখে যেতে দিতে হবে।
নূরের হঠাৎ মনে পড়লো, ওতো আদিত্যের জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। এসবের জন্য সেই কথা ভুলেই গেছে। কথাটা ভেবে নূর মাথা তুলে বললো।
….আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে নূরকে ছেড়ে দিল।নূর রুমে এসে কাবার্ড থেকে অনলাইন থেকে অর্ডার করা প্যাকেটটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পর আদিত্যও উঠে রুমে এসে বেডের ওপর পা ছুলিয়ে বসে কাওকে ফোন করার জন্য ফোন বের করে কানে লাগলো। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে আদিত্য আনমনেই সেদিকে তাকালো। আর তাকাতেই আদিত্য হাজার বোল্টের একটা জোরদার ঝটকা খেল। হার্টবিট যেন একমুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। ও স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব বুঝতে পারছে না।
নূর একটা শর্ট জিন্স পড়েছে, যাকে বলে একদমই শর্ট। তারওপর একটা পাতলা সাদা লেডিস শার্ট পড়েছে।শার্টের উপরের আর নিচে দুটো বোতাম খোলা।যারজন্য নূরের ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। নূরকে আজ কোনো হলিউডের হিরোইনের চেয়ে কম লাগছে না।নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। আদিত্য পুরো শক হয়ে গেছে। হুঁশ জ্ঞান সব উড়ে গেছে। আদিত্য নূরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। আদিত্য এতটাই হারিয়ে গেছে যে ওর হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে নিচে পরে গেল।
নূর একটা আবেদনময়ী হাসি দিয়ে এটিটিটউড নিয়ে পাশের টেবিলে থাকা আলেক্সার দিকে তাকিয়ে বললো।
…আলেক্সা, প্লে সং কামলি।
সাথে সাথে আলেক্সা গান শুরু করে দিল। নূর আবেদনময়ী ভঙ্গিতে আদিত্যের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ মে রুঠিয়া ইয়ার মানাবাঙ্গে
♬ ♬ হার চিলমান ফুক জালাবাঙ্গে
♬ ♬ জাদ পাত্থার রানঝা পিঘলেগা
♬ তাদ মে কামলি কেহলাবাঙ্গে
(নূর আদিত্যের সামনে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মেরে মাহিয়া সানাম জানাম
♬ ♬ নি মে কারেয়ানা মিদানাম
♬ ♬ সাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়ানা বিদানাম
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি,নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
♬ ♬ ঝিল দিল কো কার গায়া তু
♬ ♬ দাড়িয়া দাড়িয়া মেরে ইয়ারা
♬ ♬ আঁখিয়া দে মাহাল্লে মে
♬ ♬ হার শাম তেরা আলাম
♬ ♬ শাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়া নামিদানাম
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
(নূর আদিত্যের কাছে এসে আদিত্যকে নানা ভঙ্গিতে ছুয়ে ছুয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মে তো পেহেনকে সাফা কেসারিয়া
♬ ♬ জুগনি জোগান বান জাউ
♬ ♬ সুরমে দে কালি যাদু সে
♬ ♬ কেহ দে তো জোগ ভুলাউ
(নূর আদিত্যের পেছনে এসে আদিত্যের পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মে তো শেহের দি ঠান্ডি শাবনাম
♬ ♬ হা গুলশান কা ইতার চুরাউ
♬ ♬ রুখ বাদলু তো সেইলাব হু মে
♬ ♬ পার্বাত ভি চির দিখাউ
♬ ♬ বেখুদি মে তু খুদি কা
♬ ♬ জারিয়া জারিয়া মেরে ইয়ারা
( ধীরে ধীরে আদিত্যের শকটা কমে আসছে,এখন ও নূরের ডান্স এনজয় করছে। নূর আদিত্যের সামনে এসে এক হাত আদিত্যের কাঁধে রেখে এক পা আদিত্যের কোমড়ে রাখল।আদিত্য নূরকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।নূর মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে দুই হাত ছড়িয়ে গাইলো)
♬ ♬ ঝালার মে সিতারো কা
♬ ♬ চাল বারগা তু ইয়ারাম
♬ ♬ শাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়া নামিদানাম
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি,নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
নূরের এমন সেনশুয়াল ডান্স দেখে আদিত্যের পাগল প্রায় অবস্থা। আদিত্য নেশালো চোখে তাকিয়ে নূরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই নূর হালকা ধাক্কা দিয়ে আদিত্যকে বেডে ফেলে দিল। আদিত্য বেডে পড়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নূর আদিত্যের পেটের ওপর উঠে বসলো। তারপর আদিত্যের টিশার্টের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো।
…..তুমি সব রুপে শুধু আমাকেই দেখবে, অন্য কাওকে না বুঝেছ?
আদিত্য এতক্ষণে বুঝতে পারলো যে, কালকে টিভিতে ওই মেয়েটাকে দেখার জন্য নূর এই আবতার ধারণ করেছে। আদিত্য নূরের পিঠে হাত দিয়ে নূরকে নিজের মুখের ওপর ঝুকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল।
……আমার এতো হট এন্ড স্পাইসি বউ থাকতে আমি অন্য কাউকে কেন দেখতে যাবো? তবে যাই বলো, কাল টিভিতে ওটা না দেখলে তোমার এই হট আবতার দেখতেও পেতাম নিয়ে না। তুমিতো রীতিমতো কেয়ামত নামিয়ে দিয়েছ।
নূর এতক্ষণ এটিটিউড নিয়ে থাকলেও এবার ওর প্রচুর লজ্জা করছে। নূর লজ্জায় আদিত্যের বুকে লুকিয়ে পড়লো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের মুখটা উপরে তুলে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..এখন আর মুখ লুকালে তো হবে না প্রানপাখি। পাগল যখন করেছ, তখন এই পাগলকে শান্তও তুমি করবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ঠোঁটে ডুব দিল। নূরের ঠোঁটের মধুসুধাপান করতে লাগলো। চুমু খেতে খেতে আদিত্য নূরের শার্টের বোতাম খুলে শার্টটা খুলে ফেললো। তারপর নূরকে ঘুরিয়ে নিচে শুইয়ে দিল। দুজন আবারও হারিয়ে গেল ভালোবাসার সাগরে।
একঘন্টা পর ভালোবাসার পর্ব শেষে নূর আদিত্যের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর আদিত্য নূরের চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে। আদিত্য মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…..দ্যাট ওয়াজ গ্রেট প্রানপাখী। আজকের সারপ্রাইজ টা সবচেয়ে বেস্ট সারপ্রাইজ ছিল। আমিতো এখনো ওটার হ্যাংওভার থেকে বেরোতেই পারছি না।
আদিত্য খেয়াল করলো কখন থেকে শুধু ওই বলে যাচ্ছে, নূর কোনো জবাবই দিচ্ছে না। নূর কি ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিত্য আস্তে করে নূরের নাম ধরে ডাক দিল।
….প্রাণপাখী?
নূর কোনো জবাব দিল না। একটু পরে হঠাৎ আদিত্য ওর বুকের ওপর তরল কিছু অনুভব করলো। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বুকের ওপর হাত লাগিয়ে আবার সামনে এনে দেখলো আঙুলে পানি। তারমানে নূর কাঁদছে? আদিত্য চমকে উঠে সাথে সাথে নূরকে ঘুরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিয়ে দেখলো নূর সত্যি সত্যিই কাঁদছে। আদিত্য নূরের কানের নিচে চার আঙুল রেখে, বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে নূরের কপালের কপাল, নাকের সেই সাথে নাক ঠেকিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
….প্রানপাখী তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে আমি কিভাবে যাবো বলো? তুমি জানোনা তোমার কান্না আমার কিছুতেই সহ্য হয়না? তোমাকে রেখে যেতে আমারও কি কম কষ্ট হচ্ছে বলো? শুধু আমিই জানি আমি কিভাবে যাচ্ছি। আমি তোমাকে এতো কষ্টে রেখে যেতে পারবো না। দরকার হলে আমি যাওয়ায় ক্যান্সেল করে দেব। তবুও তোমাকে এভাবে দেখতে পারবো না আমি।
নূর এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….কি করবো আমি বলো? আমি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আটকাতে পারছি না। আমি কখনোই চাই না তোমার জন্য বাঁধা হতে। তোমার দূর্বলতা হতে। কিন্তু কি করবো? কেন জানি আমার খুব ভয় হচ্ছে। ভয় হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলার, মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ। আর ফিরে পাবনা তোমাকে। তুমি যদি আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাও, তাহলে কি করবো আমি? তোমাকে ছাড়া যে আমি বাঁচব না।
….হুঁশশ, বাচ বাচ শান্ত হও। পাগল হয়ে গেছ তুমি? কি বলছ এসব আবোল তাবোল? আমি কোথায় হারিয়ে যাব? কেউ কি তার প্রাণ ছাড়া শুধু দেহ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে বলো? তাহলে আমি আমার প্রাণপাখীকে ছেড়ে কোথায় যাবো বলো? মনে রাখবে যতক্ষণ পৃথিবীতে তোমার নিঃশ্বাস চলছে, ততক্ষণ এই আদিত্যরও নিঃশ্বাস চলছে। তুমি নেই তো এই আদিত্যও নেই। বুজেছ পাগলি?
…সত্যি বলছ তো? তুমি ফিরে আসবে তো আমার কাছে?
আদিত্য দুষ্টু হেসে বলল।
….না তোমার কাছে না, আমি তো কালকের টিভির ওই মেয়েটার কাছে যাবো।
নূর দুই হাতে আলতো করে আদিত্যের গলা ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
….যেয়েতো দেখাও, একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো।
আদিত্য হেসে উঠে বললো।
….মৃতকে আর কি মারবে? আমিতো কবেই তোমাতে মরে গেছি।
কথাটা বলে আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।
নূরও আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একদম আদিত্যের বুকের মাঝে ঢুকে গেল। যেন বুকটা চিরে বুকের ভেতর ঢুকে যেতে পারলো শান্তি। তাহলে আর ওকে আদিত্যের থেকে দূরে থাকতে হতো না। আদিত্য যতই বলুক তবুও নূরের মন থেকে আদিত্যকে হারনোর ভয়টা দূর হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ও আদিত্যের থেকে দূর হয়ে যাবে। নূর আর ঠিকমতো ঘুমুতেই পারলো না।
পরদিন আদিত্য নূরকে সাভারের বাসায় রেখে লন্ডন চলে গেল। যাওয়ার সময় নূরের মনে হচ্ছিল কেউ ওর কাছ থেকে ওর কলিজাটাই নিয়ে যাচ্ছে। আদিত্যরও একই অবস্থা ছিল। নূর অনেক কষ্টে নিজেকে আদিত্যের সামনে ঠিক রেখেছিল। আদিত্য চলে যেতেই নূর দরজা আটকে কাঁদতে শুরু করে দিল। নূর মনে মনে আল্লাহর কাছে শুধু একটাই দোয়া করলো, ওর ভয় যেন সত্যি না হয়। ওর আদিত্য যেন সহিসালামত ওর কাছে ফিরে আসে। আর কিছু চাইনা ওর।
চলবে……
#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭০
★ আদিত্যর লন্ডনে যাওয়ার সাতদিন হয়ে গেছে। এই কয়দিন নূরের কিভাবে কেটেছে তা শুধু নূরই জানে। মনে হচ্ছে ও শুধু নিঃশ্বাস নিচ্ছে বাচ্। আদিত্য যাওয়ার পর থেকে ওকে কেউ হাসতে দেখেনি। খাওয়া দাওয়াও ঠিকমতো করে না। সবার চাপাচাপিতে কখনো খায় আবার খায় না। সারাদিন সবার সাথে কথাবার্তা বলে সময় কাটলেও, রাতটা পার করা যেন ওর কাছে সবচেয়ে কষ্টের হয়ে যায়। বিছানায় একা একা শুয়ে নূরের মনটা হু হু করে ওঠে। আদিত্যের বুকে ঘুমানোর জন্য মনটা ছটফট করে। নূর এখন শোবার সময় আদিত্যর টিশার্ট পড়ে শোয়।যাতে আদিত্যর শরীরের ঘ্রাণ পায়। যদিও রোজই আদিত্যর সাথে ভিডিও কলে কথা হয় তবুও নূরের এতে মন ভরে না। কবে আদিত্য আসবে, ওকে বুকে জড়িয়ে নিবে সেই আশায় দিন গুনছে শুধু।
ওদিকে আদিত্যরও একিই অবস্থা। সারাদিন কাজের মাঝে কাটালেও, রাতে আর ঘুম হয় না ওর। শুধু এপাশ ওপাশ করে রাত কাটিয়ে দেয়। নূরকে বুকে না নিয়ে যে ওর ঘুম হয় না। আদিত্য চেষ্টা করছে দ্রুত কাজ শেষ করে ওর প্রাণপাখীর কাছে চলে যেতে। নূরকে ছাড়া যে ওর আর চলছেই না।
দুপুর ২টা
সবাই লাঞ্চ শেষ করে সোফায় বসে গল্প করছে। সবাই কথা বলছে আর নূর বসে শুনছে। তখনই টেবিলে থাকা নূরের ফোনটা বেজে উঠল। নূর জানে এইটাইমে আদিত্যই ফোন দেয়। কারণ এইসময় ও ফ্রী থাকে। নূর খুশী হয়ে ফোনটা ধরতে যাবে তার আগেই আবির খপ করে ফোনটা হাতে নিয়ে নিল। তারপর দুষ্টু হেসে ফোনটা রিসিভ করে সামনে ধরলো।
আদিত্য আবিরকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিরে তুই ফোন ধরেছিস কেন? নূর কোথায়?
আবির ন্যাকামি করে দুঃখী ভাব ধরে বলে উঠলো।
….বাহ ভাই বাহ, এখন তোর জন্য শুধু ভাবিই সব হয়ে গেল? আমরা কেউ না? আমাদের কোনো ভেলুই নেই তোর কাছে? একবারও জিজ্ঞেস করলি না আমরা কেমন আছি, মরে আছি না বেঁচে আছি? আজ তোকে চেনা হয়ে গেল। তোর সাথে কাট্টি, আর খেলমু না তোর সাথে।
নূর এদিকে আদিত্যকে দেখার জন্য পেছন থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেটা দেখে সানা আর তানিও ফোনের সামনে চলে এলো। ফোনের সামনে এসে আদিত্যর সাথে কথা বলতে লাগলো। আর নূর একদম পেছনে পড়ে গেল। বেচারি আর দেখতেই পারছে না আদিত্যকে।
এভাবে অনেকক্ষণ ওরা৷ হাবিজাবি কথা বলতে লাগলো।
আদিত্য এবার বলে উঠলো।
….আচ্ছা হয়েছে তোদের? এখন নূরের কাছে দে।
আবির বলে উঠলো।
….আরে কি হয়েছে, তোকেতো ইম্পরট্যান্ট জরুরি কথা বলাই হয়নি। জানিস কি হয়েছে?
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি হয়েছে?
….আরে আমাদের মালি কাকা আছে না? ওনার গরুর একসাথে দুটো বাচ্চা হয়েছে জানিস? তাও আবার নরমাল ডেলিভারি, নো সিজারিয়ান।
আদিত্য বিরক্তির সুরে বললো।
…..এই তোর ইম্পরট্যান্ট কথা? দেখ অনেক হয়েছে। আমি জানি তোরা মজা করছিস। কিন্তু তোরা হয়তো নূরকে জানিস না। পেছনে তাকিয়ে দেখ পাগলিটা হয়তো আমাকে না দেখতে পেয়ে এতক্ষণে কান্নাও শুরু করে দিয়েছে।
আদিত্যের কথামতো সবাই পেছনে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেল। নূর সত্যি সত্যিই বসে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। ওদের তাকানো দেখে নূর তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিল। এসব দেখে আবির বলে উঠলো।
….ভাই তোরা দুজন কি মানুষ না এলিয়েন? কারণ নরমাল মানুষ কখনো এমন পিরিতি করতে পারে না। ভাই তোরা ধন্য।
আবির নূরের হাতে ফোনটা দিয়ে বললো।
….এইনেন ভাবি আপনার পেয়ারেলাল কে। ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আর কখনো এমন করবো না। এই কান, নাক সবই ধরছি এবারের মতো মাফ করে দেন। আপনার সোয়ামালাই রে নিয়ে রুমে যেয়ে প্রেমালাপ করেন।
কথাটি বলে সবাই হেসে উঠলো। আর নূর লজ্জায় ফোন নিয়ে রুমে চলে গেল।
রুমে এসে নূর ফোন সামনে রেখে বেডের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে আদুরে গলায় বললো।
….কি হলো প্রাণপাখী,তাকাবেনা আমার দিকে?
নূর মাথা ঝাকিয়ে না বুঝাল।
….কেন? আমি কি দোষ করলাম? ওদের শাস্তি আমাকে কেন দিচ্ছ? তাকাওনা এদিকে সোনাটা। তোমার মুখটা না দেখলে যে আমার শান্তি হবে না।
আদিত্যের এমন আদুরে ডাকে নূর আর থাকতে পারলো না। নূর লাজুক হেসে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য বুকে হাত দিয়ে বললো।
….হায় মে মারজাবা। তোমার এই হাসিটা একদম বুকে গিয়ে লাগে প্রাণপাখী।
আদিত্যের কথায় নূর হেসে দিল। তারপর ফোনটা বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে রেখে নূর বালিশের ওপর উপর হয়ে শুয়ে আদিত্যের সাথে কথা বলতে লাগলো। নূর উপর হয়ে শোয়ায় নূরের জামার গলাটা নিচের দিকে নেমে গেছে। যার জন্য নূরের বুকের ভাজ অনেকখানি বেড়িয়ে আছে। ভাজের মাঝখানের কালো তিলটাও দেখা যাচ্ছে।
এসব দেখে আদিত্যের অবস্থা শোচনীয়। গলা শুকিয়ে আসছে ওর। দুষ্টু চোখ জোড়া ওখানেই আটকে আছে। আদিত্য একটা ঢোক গিলে বললো।
….দি দিস নট ফেয়ার প্রাণপাখী। এভাবে আমাকে পোড়ানো টা কি ঠিক। এমনিতেই তোমাকে না ছুতে পেরে আমি জ্বলে মরছি। তারওপর এসব দেখিয়ে তুমি কি বদ্ধ উন্মাদ করতে চাও?
নূর আদিত্যের কথা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…মানে? আমি আবার কি করলাম?
আদিত্য চোখের ইশারায় নিচের দিকে দেখালো। নূর নিচের দিকে তাকাতেই ওর চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। নূর এক ঝটকায় উঠে বসে ওড়না দিয়ে গলা ঢেকে নিল। লজ্জায় বেচারি আর আদিত্যের দিকে তাকাতেই পারছে না।
আদিত্য হেসে উঠে বললো।
….ইটস ওকে প্রানপাখী। তোমার হাসব্যান্ডই দেখেছে অন্য কেউ না।এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। এখন দূরে আছি তাই দেখলে সমস্যা হচ্ছে। একবার ফিরে আসি তারপর যত খুশী, যা খুশী দেখিও। আই ডোন্ট মাইন্ড। আই উড লাভ টু সি দিস।
নূর লজ্জায় লাল হয়ে বললো।
……ছিহ্ অসভ্য একটা।
….বারে এখানে অসভ্যের কি হলো? নিজের বউকেই তো বলছি, অন্য কাওকে তো না? অবশ্য তুমি বললে অন্য মেয়েদেরও বলতে পারি। জানো এখানে কতো হট হট মেয়েরা আছে? যারা আমার জন্য পাগল।
নূর রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
…..কিহ? কি বললে তুমি? অন্য মেয়ের কাছে যাবে?ঠিক আছে যাও। যা খুশী তাই করো। আমার সাথে কথা বলতে আসবেনা। তুমি যাও তোমার ওই হট হট মেয়েদের কাছে।
কথাটা বলেই নূর ঠাস করে ফোনটা কেটে দিল।
আদিত্য বিড়বিড় করে বললো।
…..এইরে বেশি রাগিয়ে দিলাম বোধ হয়। এখন তো আমারই বারোটা বেজে যাবে।
আদিত্য নূরকে আবারও ফোন দিতে লাগলো, কিন্তু নূর ফোন ধরছে না।
হঠাৎ সানা নূরের রুমে এলো। সানা নূরকে কিছু বলতে যাবে তখনই দেখলো নূরের ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু নূর ফোন ধরছে না। সানা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো আদিত্যের ফোন। সানা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হলো ভাবি ফোন ধরছ না কেন?
….এমনি, আমার ইচ্ছে নেই।
সানা নূরের পাশে বসে বললো।
….কাহিনি কি বলোতো ভাবি? একটু আগেওতো ফোন ধরতে পেরে কেঁদে কেটে পদ্মা মেঘনা বানিয়ে ফেলছিলে। আর এখন নিজেই ফোন ধরছ না? রাগারাগি হয়েছে ভাইয়ার সাথে?
….রাগরাগীর কি আছে? ও থাক ওর হট হট মেয়েদের নিয়ে। আমার কি দরকার আছে?
সানা দু্ষ্টু হেসে বলল।
….আচ্ছা তো এই কথা? জেলাসি চলছে হ্যাঁ? তবে ভাবি তুমি চাইলে আমরাও ভাইয়াকে মজা দেখাতে পারি।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে? কিভাবে?
…শোন আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
সানা নূরকে সবকিছু বুঝিয়ে বললো। নূরও হেসে উঠে সানার প্ল্যানে সায় জানালো
এদিকে আদিত্য ফোন দিয়েই যাচ্ছে। নূরের কোনো খবর নেই। একটু পরে নূর ফোনটা রিসিভ করলো। সেটা দেখে আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। আদিত্য হাসি মুখে বলতে যাবে তখনই ফোনের দিকে তাকিয়ে আদিত্যের ভ্রু কুঁচকে এলো। আদিত্য দেখলো নূরের সামনে একটা ক্যাপ পড়া ছেলে বসে আছে। ছেলেটা উল্টো দিকে থাকায় শুধু পিঠটাই দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ নূর ছেলেটার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলল।
…..অওওও ইউ আর সোওও কিউট, সোওও হ্যান্ডসাম। তোমার সামনেতো আদিত্যের কোনো বেলি নেই। একদম চা কম পানি। আমারা হ্যান্ডসাম হাংক।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে হুংকার দিয়ে উঠে বললো।
….নূররর কি হচ্ছে এসব?
আদিত্যের হুংকারে দুইজনই কেঁপে উঠল। সানা তাড়াতাড়ি আদিত্যের দিকে ঘুরে বসে বললো।
…কি হয়েছে ভাইয়া এমন চিল্লাছিস কেন? ভয় পাইছি না আমি?
সানাকে দেখে আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…তুই?
সানা মাথার ক্যাপ খুলে বললো।
….হ্যাঁ তো, এখানে আর কাকে দেখতে পাচ্ছিস তুই?
আদিত্য থতমত খেয়ে বললো
….তো তুই এভাবে ছেলে সেজে বসে আসিছ কেন? আর কি করছিলি তোরা এসব?
….আরে এটা? এটাতো আমার কলেজের একটা নাটকের রিহার্সাল করছিলাম। কেন তুই কি ভেবেছিস?
আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
…..কি আবার ভাববো? কিছুই না। তোর কাজ হয়ে গেলে তুই এখন যা।
সানা নূরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মেরে চলে গেল।
নূর অভিমান করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্যের দিকে তাকাচ্ছে না। আদিত্য বলে উঠলো।
…..এসব তোমরা ইচ্ছে করে করেছ তাইনা আমাকে জালানোর জন্য? তুমি জানো আরেকটু হলে আমার হার্ট অ্যাটাক এসে যেত।
নূর তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
….. কেন? আমার জন্য কেন তোমার হার্ট অ্যাটাক হতে যাবে? তোমার কাছে তো তোমার হট হট মেয়েরা আছে।
….এই পাগলি এখনো ওটা নিয়েই পড়ে আছ? আরে আমি তো মজা করছিলাম। আমার ওপর কি তোমার বিশ্বাস নেই?
নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আছে। কিন্তু কি করবো? মজা করে হলেও তোমার মুখে অন্য মেয়ের কথা শুনলে আমার সহ্য হয়না।
আদিত্য এক কান ধরে বললো।
…..আই এ্যাম সরি প্রাণপাখী। আর কখনোই এমন করবো না। এই দেখ কান ধরছি। এবার একটু মিষ্টি করে হাসোনা লক্ষীটি।
আদিত্যের কান ধরা দেখে নূর ফিক করে হেসে দিল।যা দেখে আদিত্যের প্রাণটা জুড়িয়ে গেল।
—————-
দেখতে দেখতে ১৩ দিন কেটে গেছে। আজ নূর অনেক খুশী , কারণ আদিত্য বলেছে ও কাল ফিরে আসবে। কথাটা শোনার পর থেকে নূরের খুশীর যেন ঠিকানাই নেই। ওর আদিত্য ফিরে আসবে, ওর কাছে ফিরে আসবে। আদিত্য এসে ওকে বুকে জড়িয়ে নিবে। নূর খুশিতে সারা বাড়ি দৌড়ে দৌড়ে সবাইকে খুশীর খবরটা শোনাচ্ছে। এতদিন পরে নূরকে এভাবে হাসি খুশী দেখে বাকি সবারও অনেক ভালো লাগছে।
দুপুর ২টা
নূর বেডের ওপর বসে আদিত্যের ফোনের জন্য ওয়েট করছে। এইটাইমেই আদিত্য সবসময় ফোন দেয়। কিছুক্ষণ পরেই কাঙ্খিত কলটা চলে এলো। নূর একরাশ খুশী নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….কি করছে আমার প্রাণপাখীটা?
….তোমার অপেক্ষা করছে।
…..কালই সব অপেক্ষার অবসান হয়ে যাবে প্রানপাখী। এখন বলো লাঞ্চ করেছ?
…হুম করেছি।আচ্ছা শোন না কাল কখন আসবে তুমি? আই মিন কয়টা বাজবে আসতে?
…উমম রাত দশটা এগোরাটা তো বেজেই যাবে আসতে আসতে। আচ্ছা তোমার জন্য কি নিয়ে আসবো বলো?
…আমার শুধু তোমাকে চাই। বাচ তুমি চলে এস আরকিছু চাইনা আমার।
নূরের কথায় আদিত্য একটা প্রাপ্তির হাসি দিল। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দিল আদিত্য। ফোন রেখে আদিত্য মুচকি হেসে মনে মনে বললো।
…আমি কাল না আজই আসছি প্রাণপাখী। তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দুদিনের কাজ একদিনেই সেরেছি। আমি আসছি আমার প্রাণপাখী টার কাছে।
আদিত্য রেডি হয়ে একটু পরেই ফ্লাইটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।
এদিকে আদিত্যের সাথে কথা বলার পাঁচ মিনিট পরে নূরের ফোনে একটা কল এলো। নূর ফোনটা রিসিভ করে কতক্ষণ কথা বলার পর নূর তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য বের হলো। সিড়ি বেয়ে নিচে আসতেই আবিরের মা নূরকে দেখে বললো।
….ডাটার ইন লাউ, তুমি গোয়িং হয়ার?
নূর অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলো।
….আ আসলে চাচীমা আমার একটু কাজ আছে, আমি একটু পরেই চলে আসবো।
আবিরের মা মুচকি হেসে বললো।
…ওকে ওকে তাড়াতাড়ি কামিং করো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বেড়িয়ে গেল।
—————-
রাত ১১টা
আদিত্যের গাড়ি মাত্রই বাসার গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবাইকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কাওকে নিজের আসার কথা জানায়নি। এয়ারপোর্ট থেকে একাই গাড়ি ভাড়া করে চলে এসেছে।
গাড়ি এসে থামলে আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। হঠাৎ ওর বুকের ভেতর দুরুদুরু করে উঠলো। মনটা কেমন যেন অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। আদিত্য ভাবছে হয়তো এতদিন পরে নূরের সাথে দেখা হবে সেই এক্সাইটমেন্টে এমন হচ্ছে। তাই বিষয়টা বেশি পাত্তা না দিয়ে হাসি মুখে বাসার দরজায় এসে কলিং বেল বাজাল।
একটু পরে সানা এসে দরজা খুলে দিল। আদিত্যকে দেখে সানা অবাক হয়ে বললো।
…ভাইয়া? তুমি এখন? তোমার না কাল আসার কথা ছিল?
আদিত্য হাসি মুখে বলে উঠলো।
…সারপ্রাইজ,,,পিচ্চি। কেমন আছিস তোরা?
সানা জোরপূর্বক একটা হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে বললো।
….ভা ভালো।
আদিত্য ভেতরে এসে দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমেই জড়ো হয়ে আছে। এমনকি তাসিরও এখানে।সবার চোখেমুখে কেমন যেন চিন্তার ছাপ। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি ব্যাপার, সবাইকি আগেই জেনে গিয়েছিল নাকি যে আমি আসবো?
আদিত্যকে এইসময় এখানে দেখে সবাই কেমন ঘাবড়ে গেল। সবার চেহারার রং উড়ে গেল। তাসির এগিয়ে এসে বললো।
….আদিত্য তুই? তোর না কাল আসার কথা ছিল?
আদিত্য বলে উঠলো।
….কেনরে ভাই, আমাকে দেখে কি তোরা খুশী হোসনি? আরে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম তাই আজই এসেছি।
তাসিরও জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….ওহ।
এদের সবার রিয়্যাকশন দেখে আদিত্যের মনে কেমন যেন খটকা লাগছে। আদিত্য চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো নূর এখানে নেই। আদিত্য বলে উঠলো।
….সবাই এখানে কিন্তু নূর কোথায়? ওকেতো দেখছিনা?
আদিত্যের কথা শুনে সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচায়ি করছে। আদিত্যকে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না ওরা। আদিত্যের বাবা কিছু বলতে যাবে তখনই আদিত্য বলে উঠলো।
….বুঝতে পেরেছি ও রুমে আছে তাইনা? তোমরা এখানেই থাক আমি ওকে গিয়ে সারপ্রাইজ দিয়ে আসি।
কথাটা বলে আদিত্য তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। পেছন থেকে সবাই ডাকছে কিন্তু সেকথা শুনছে না ও।
আদিত্য ওর রুমের দরজার সামনে এসে একটা লম্বা শ্বাস নিল। তারপর হাসি মুখে দরজা খুলেই বলে উঠলো।
….সারপ্রাইজ প্রাণপাখী।
আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো রুমে কেওই নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। ওয়াশরুম আর বেলকনিতেও দেখলো, কোথাও নেই। নূরকে না দেখে আদিত্যের বুকের কাঁপুনি যেন আরও বেড়ে গেল। অজানা আশংকায় ভেতরটা কেমন ঘাবড়ে যাচ্ছে। আদিত্য দ্রুত নিচে নেমে এলো।
নিচে এসে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….নূ নূর কোথায়? ওকে দেখছিনা কেন? নূর কি কোথাও গেছে? ও কি ওর বাবার বাসায় গিয়েছে?
তাসির আদিত্যর হাত ধরে বললো।
….আদি প্লিজ শান্ত হ। তুই বস এখানে আমরা বলছি তোকে।
কথাটা বলে তাসির আদিত্যকে সোফায় এনে বসিয়ে দিল।
আদিত্য অস্থির হয়ে বললো।
…..আরে কি শান্ত হ?নূর কোথায় আগে তাই বল।
তাসির আমতা আমতা করে বলে উঠলো।
….আ আসলে আদি নূরকে পাওয়া যাচ্ছে না। দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছিল, তারপর আর কোনো খোঁজ নেই। ফোনও বন্ধ আসছে। বাসার গাড়িও নিয়ে যায়নি।আমরা অনেক জায়গায় খোঁজ নিয়েছি কিন্তু নূরকে কোথাও পাইনি। জানি না ও কোথায় আছে?
আদিত্যের মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। ওর সামনে পুরো পৃথিবীটা গোল গোল ঘুরতে লাগলো। নিঃশ্বাস যেন আটকে আসছে ওর। আদিত্য জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো।
….ম মজা করছিস তোরা তাইনা? এ এসব তোদের প্ল্যান তাইনা, আমার সাথে মজা করার? নূর নিশ্চয় কোথাও লুকিয়ে আছে? আমি ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম তাই ও আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করছে তাইনা?
আদিত্য উঠে দৌড়াদৌড়ি করে পাগলের এদিক ওদিক নূরকে খুঁজতে খুঁজতে বলতে লাগলো।
….নূর নূর, প্রাণপাখী কোথায় তুমি বেড়িয়ে এসোনা? দেখ এইরকম মজা আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ অনেক হয়েছে এবার বেড়িয়ে এসোনা? আমি প্রমিজ করছি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবোনা। প্লিজ একবার সামনে আসো।
আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে সবার চোখে পানি চলে এলো। আদিত্যের বাবা ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। ছেলেকে এখন কিভাবে সামলাবে সে?
আবির যেয়ে আদিত্যকে ধরে বলে উঠলো।
…..ভাই বাচ করো। আমরা কোনো মজা করছি না। ভাবি সত্যিই নিখোঁজ।
আদিত্য আবিরের কলার চেপে ধরে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো।
….নিখোঁজ মানে? কিভাবে নিখোঁজ হলো?তোরা এতগুলো মানুষ থাকতে আমার প্রাণপাখী কিভাবে হারিয়ে গেল? বল কিভাবে?
কথা বলতে বলতে আদিত্য ধপ করে হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো। বুকের ভেতর যেন কিছু একটা কামড় দিয়ে ধরেছে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। আদিত্য হাত দিয়ে বুকের বাম পাশে খামচে ধরলো।
তাসির দৌড়ে এসে আদিত্যের কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….একটু শান্ত হ আদি। আমরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছি। কমিশনার আঙ্কেল কেউ বলেছি। উনিও পুলিশ ফোর্স লাগিয়ে দিয়েছে। নূরের ফোন বন্ধ থাকায় নাম্বার ট্রেস করা যাচ্ছে না। তবে আমরা অবশ্যই নূরকে পেয়ে যাবো। নূরের তো এখন আর কোনো শত্রুও নেই। ওর সৎ মায়ের ফাঁসি হয়ে গেছে। আর ওই জনিও জেলে সাজা কাটছে।
আদিত্য আহত কন্ঠে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ।
….সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি আমার প্রাণপাখীকে রেখে না যেতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।সব আমার জন্য হয়েছে, সব।
কথাটা বলে আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বাইরে চলে গেল। তাসির আর আবিরও ওকে ডাকতে ডাকতে ওর পেছনে পেছনে দৌড়ালো।
আদিত্য ওর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো নূরকে খুজতে। আবির আর তাসিরও অন্য গাড়িতে ওর পিছু পিছু গেল।
আদিত্য পাগলের মতো সারা ঢাকা শহর জুড়ে নূরকে খুঁজতে লাগলো। নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আদিত্যের। আজ যদি ও নূরকে ছেড়ে না যেত, তাহলে ওর প্রাণপাখী ওর কাছেই থাকতো। আদিত্যের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরতে লাগলো। কোথায় গেলে প্রাণপাখী? দেখ আমি আমার কথা রেখেছি। আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে। তাহলে তুমি কোথায় গেলে? ফিরে আসো আমার কাছে প্রাণপাখী। আমি আর কখনো তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। একবার ফিরে এসো প্লিজ।
সারারাত খুঁজেও কোথাও নূরকে পেলনা আদিত্য। আদিত্যের এবার দমটা বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের যন্ত্রণা আরও অসহনীয় হয়ে উঠছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না আদিত্য। চোখের সামনে অন্ধকার দেখছে ও। আদিত্য কোনরকমে গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাশে ধপ করে বসে পড়লো। তারপর গগনবিদারী এক আর্তনাদ করে উঠলো।
….নূররররররররর
আর থাকতে পারলো না আদিত্য ওখানেই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।
চলবে…….