ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৭৫+৭৬

0
2128

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৫

★দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই এক সপ্তাহে নূরের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। নূর এখন হাসিখুশি থাকে, সবার সাথে ফ্রী ভাবে কথা বলে। আদিত্যের সাথেও অনেক ফ্রী হয়ে গেছে এই কয়দিনে। এখন প্রতিদিনই নূর আদিত্যের বুকেই ঘুমায়। আদিত্যও ওর প্রাণপাখীকে বুকে জড়িয়ে শান্তিতে ঘুমায়। নূরের মাঝে মাঝেই আবছা আবছা কিছু স্মৃতি মনে আসে। তবে পরিস্কার বুঝতে পারে না ও।

আদিত্য এখন মাঝে মাঝে অফিসেও যায়। কারণ ও বুঝতে পারছে যে আবিরের ওপর বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। তাই ওর হেল্প করা দরকার। আর তানিও প্রেগন্যান্ট ওকেও সময় দেওয়া দরকার আবিরের। এসব ভেবেই আদিত্য আবার অফিস যাওয়া শুরু করেছে। তবে অল্প কিছুক্ষণের জন্যই থাকে। শুধু জরুরি কাজ করেই চলে আসে। কারণ এই অবস্থায় নূরকে বাসায় রেখে ও বেশিক্ষণ থাকতেও পারে না। ওর মন অস্থির হয়ে যায়। তাইতো তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে আসে।

রাত ১০টা
নূর শোবার জন্য কাবার্ড খুলে রাতের কাপড় বের করছিল। হঠাৎ ওর চোখ পড়লো কাবার্ডের এক কোনায় পড়ে থাকা একটা গিটারের দিকে। নূর ভ্রু কুঁচকে গিটার টা বের করলো। তারপর আদিত্যের কাছে এসে বললো।
….এটা কার?

আদিত্য নূরের হাতে গিটার দেখে একটু অবাক হলো। নূর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে আদিত্য আর কখনো গান গায়নি, আর না গিটার বাজিয়েছে। কারণ ওর কাছ থেকে যে ওর গানের প্রেরণাই হারিয়ে গিয়েছিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….আমার কাবার্ডে যেহেতু আছে তাহলে আমারি হবে তাইনা?

নূর উৎসাহ নিয়ে বললো।
…..আপনার? আপনি বাজাতে পারেন এটা?

….হ্যাঁ পারি।

নূর আরও একটু উৎসাহ নিয়ে বললো।
…তারমানে আপনি গানও গাইতে পারেন?

…হ্যাঁ সেতো একটু আধটু পারি।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
….আমাকে একটু শোনাবেন গান?

আদিত্য নূরের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকালো।আজ কতদিন পর ওর প্রাণপাখী ওর কাছে গান শুনতে চাইছে। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তুমি শুনতে চাও আমার গান?

নূর বাচ্চাদের মতো দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝাল।

….ঠিক আছে চলো।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেল। বেলকনিতে এসে দুজন পাশাপাশি বেতের সোফায় বসলো। আদিত্য নূরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে গিটার বাজানো শুরু করলো। নূর মুচকি হেসে মনোযোগ দিয়ে আদিত্যের গিটার বাজানো দেখছে। আদিত্য গিটার বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখুউউ
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

♬ ♬ ইন আখো মে ছালাকতা হে
♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার
♬ ♬ কাহি তুঝ মে ধারাকতা হে
♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
(নূর মনোমুগ্ধকর হয়ে আদিত্যের গান শুনছে। ওর মনে হচ্ছে এই কন্ঠটা ও হাজারো বার শুনেছে। কন্ঠটা যেন ওর হৃদয়ের সাথে মিশে আছে)
♬ ♬ থোড়াসা মেরা হে থোড়া তুমহারা
♬ ♬ মিলা ঝুলা সা ইয়েহ খাওয়াব হামারা
♬ ♬ এক মিঠি ধুন সুনাই
♬ ♬ দে রাহি হে আজ কাল
♬ ♬ হাস কে সারে গাম হামারে
♬ ♬ দেগা খুশিও মে বাদাল

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

♬ ♬ কোয়ি নেহি স সাল জিয়া হে
♬ ♬ পেয়ার মাগার কায়েম রেহতা হে
♬ ♬ ধুপ খুশবু অর হাওয়ায়ে
♬ ♬ বানকে ইয়ে রেহ যায়েগা
♬ ♬ বাদ আপনে ভি হামারে
♬ ♬ ইয়ে জাহা মেহকায়েগা

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

গান শুনতে শুনতে নূর আদিত্যের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের গালে হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু খেল। তারপর নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। নিজেও নূরের পাশে শুয়ে নূরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
—-

সকাল ৮টা

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পড়তেই নূরের ঘুমটা হালকা হয়ে এলো। নূর আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। খালি গায়ে শুধু তোয়ালে পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। নূর হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদিত্যের দিকে। ফর্সা সিক্স প্যাক বডিতে বিন্দু বিন্দু পানির কনা জমে, মুক্ত দানার মতো লাগছে। আদিত্যকে এইমুহূর্তে চরম আকর্ষণীয় লাগছে নূরের কাছে। নূর একবার চোখ বন্ধ করছে, আবার এক চোখ খুলে আদিত্যকে দেখছে।

আদিত্য আয়নায় নূরের সব কাজই দেখছে। আদিত্য ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো।
….দেখতে চাইলে ভালো করে দেখ। এভাবে চুরি করে দেখার কি আছে?তোমারই তো হাসব্যান্ড, যত খুশি দেখ।

আদিত্যের কথা শুনে নূর চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইশরে দেখে ফেলেছে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন ফটাফট উঠে পড়। আজকে তোমাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যেতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নেও।

নূর মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। নূরের কান্ড দেখে আদিত্য হাসতে লাগলো।

একটু পরে ওরা নাস্তা করে রেডি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেল।

হসপিটালে ডক্টরের সামনে বসে আছে আদিত্য আর নূর। ডক্টর নূরকে চেক-আপ করে বললো।
….হুম ইটস গুড সাইন। উনার আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে জলদিই উনি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবেন।

আদিত্য খুশী হয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ ডক্টর, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওরা ডক্টরের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলো।

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর এগুতেই হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ আদিত্যর নাম ধরে ডাক দিল। আদিত্য থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। আদিত্যের দেখাদেখি নূরও পেছনে ফিরে দেখলো, একটি মেয়ে হাসিমুখে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। গায়ে ডাক্তারের সাদা এপ্রন পড়া। মনে হয় এখানকার ডাক্তার হবে।

নূরের ভাবনার মাঝেই মেয়েটা ওদের সামনে এসে হাসিমুখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আরে আদিত্য,তুমি এখানে? কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম, কেমন আছো তুমি?

আদিত্য মেয়েটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আসলে ও মেয়েটিকে চিনতে পারছে না। মেয়েটি বুঝতে পেরে বলে উঠলো।
…..কি ব্যাপার, চিনতে পারছো না আমাকে? আরে আমি জেরিন, জেরিন খান। তোমার সাথে লন্ডনে এখই ভার্সিটিতে ছিলাম। আমি মেডিকেল ডিপার্টমেন্টে ছিলাম।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ওওও জেরিন, সরি চিনতে পারিনি তোমাকে। তা কেমন আছ?

….হ্যাঁ চিনবে কেমন করে কখনো কি কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকিয়েছ? যাইহোক আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছ? এখানে কি মনে করে?

….ভালো আছি। আসলে আমার ওয়াইফ একটু অসুস্থ, ওকেই দেখাতে এসেছিলাম। ও তোমাকে তো পরিচয় করিয়ে দেইনি। মিট মাই ওয়াইফ নূর। আর নূর, ও হচ্ছে জেরিন। আমরা লন্ডনে
একসাথে পড়াশোনা করেছি।

নূর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিল। জেরিন বলে উঠলো।
…..ওয়াও দেশের মোস্ট হ্যান্ডসাম ব্যাচেলর কিনা শেষমেশ বিয়ে করে এতো গুলো মেয়ের মন ভেঙে দিল।

জেরিনের কথায় আদিত্য হেসে দিল। নূরের কেন যেন জেরিন কে একদমই ভালো লাগছে না। কেমন হেসে হেসে কথা বলছে। যেন কখনো ছেলেমানুষ দেখেনি।

জেরিন আবার বলে উঠলো।
….বাইদা ওয়ে, কি হয়েছে ভাবির? আমিও একজন ডক্টর। তুমি চাইলে আমার সাথে ডিসকাস করতে পারো। পাশেই আমার কেবিন চলো কেবিনে বসে কথা বলি।

আদিত্য মনে মনে ভাবলো নূরের ব্যাপারে জেরিনের সাথে ডিসকাস করলে ভালো হবে। একটা সেকেন্ড অপিনিওন পাওয়া যাবে। কথাটা বলে আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..ঠিক আছে চলো।

নূরের জেরিনের কেবিনে যাওয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই। মেয়েটাকে ওর একদম ভালো লাগছে না। তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিত্যের সাথে যেতে হলো ওকে।

কেবিনে বসে জেরিন বলে উঠলো।
…..কি খাবে বলো চা না কফি?

….না না কিছুই খাব না এখন।

….আরে আমার এখানে প্রথম আসলে কিছু একটা নিতেই হবে। আমি জানি তোমার কফি পছন্দ। তাই কফি অর্ডার করছি।

আদিত্য আর কিছু বললো না।
জেরিন আবার বলে উঠলো।
….বাইদা ওয়ে, তুমি কিন্তু আগের থেকে আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছ। আই ওয়ান্ডার তুমি সবসময় এতো হ্যান্ডসাম কিভাবে থাক?

জেরিনের কথায় আদিত্য মৃদু হাসলো।
এসব দেখে নূরের রাগ আরও বেড়ে যেতে লাগলো। কেন এমন হচ্ছে ও নিজেও জানে না। তবে আদিত্যকে এই মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আদিত্যের ওপরও খুব রাগ হচ্ছে ওর। এখানে আর মোটেও থাকতে ইচ্ছে করছে না ওর। তাই নূর আদিত্যের হাতা ধরে আস্তে করে টান দিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে?

নূর মিনমিন করে বললো।
…..বাসায় চলুন না,আমার এখানে ভালো লাগছে না।

….কেন কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?

….না তেমন না। এমনিই চলুন না।

….আচ্ছা একটু বসো, আমি একটু জেরিনের সাথে কথা বলে নি।তারপর যাবো।
কথাটা বলে আদিত্য আবার জেরিনের সাথে কথা বলতে লাগলো।

আদিত্যের এমন কাজে নূরের মনে মনে অনেক অভিমান হলো। এখনতো আর একমুহূর্তও থাকবে না এখানে। তাই নূর বলে উঠলো।
….ঠিক আছে আমি বাইরে গেলাম। আপনারা কথা বলুন।

আদিত্য ভাবলো নূর থাকলে ওর সামনে ভালো করে সবকিছু ডিসকাস করা যাবে না। কথাটা ভেবে আদিত্য বলে উঠলো।
….ঠিক আছে তুমি একটু বাইরে যেয়ে বসো।আমি জেরিনের কথা বলে আসছি।

আদিত্যের কথায় নূরের অভিমান আরও বেড়ে গেল। ওতো ভেবেছিল বাইরে যাওয়ার কথা বললে আদিত্যও ওর সাথে যেতে চাইবে। কিন্তু এখনতো আমার থেকে এই মেয়েটাই ওর কাছে বেশি জরুরি হয়ে গেছে। এখন আর আমার কি দরকার। এসব ভেবে নূরের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। নূর আর একমুহূর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে অভিমান করে চেয়ারে বসে রইল। চোখ দিয়ে পানি আসতে লাগলো। বারবার হাত দিয়ে মুছছে , আবার চলে আসছে।

এভাবে পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল তবুও আদিত্য বাইরে আসছে না। নূর আর বসে থাকতে পারলো না। নূর মনে মনে ভাবলো ওনার যখন আমার দরকারই নেই তাহলে আমি এখানে বসে বসে ওনার জন্য কেন অপেক্ষা করবো? উনি থাকুক ওই মেয়েটার সাথে। এসব ভেবে নূর রাগ করে হাটতে হাটতে একা একাই হসপিটালের বাইরে বেরিয়ে এলো। রাস্তায় এসে হাটতে হাটতে একদিকে চলে গেল।

দশ মিনিট পর আদিত্য কেবিনের বাইরে আসলো। বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো নূর কোথাও নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো নূর আবর কোথায় গেল? আদিত্য এদিক ওদিক ভালো করে দেখতে লাগলো। কোথাও নেই নূর। আদিত্য এবার চিন্তা হতে লাগলো। কোথায় গেল মেয়েটা? আদিত্য পুরো হসপিটালে সব জায়গায় পাগলের মতো নূরকে খুজতে লাগলো। সবাইকে মোবাইলে নূরের ছোট দেখিয়ে নূরের কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। তবুও কোথাও পেল না। ভয়ে এবার আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। নূরের কাছে তো ফোনও নেই যে, ওকে ফোন করবে। আমি কেন ওকে একা ছাড়তে গেলাম? এখন কি করবো আমি? কোথায় খুঁজব ওকে?

আদিত্য গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে নূরের ছবি দেখিয়ে ওর কথা জিজ্ঞেস করলো। দারোয়ান বলে উঠলো।
….এই ম্যাডাম তো দশ মিনিট আগে গেট দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তার দিকে গেছে।

আদিত্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। বে বেড়িয়ে গেছে মানে? কোথায় বেড়িয়ে গেছে? ওতো এখন রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না। তাহলে কোথায় যাবে ও? আদিত্য মাথার চুল টেনে ধরে দু কদম পিছিয়ে গেল। ওর প্রাণপাখী কি আবার হারিয়ে গেল ওর কাছ থেকে? না না এবার নূরের কিছু হয়ে গেলে ও সত্যিই মরে যাবে। আদিত্য পাগলের মতো রাস্তার পাশ দিয়ে দৌড়াতে লাগলো নূরকে খোঁজার জন্য।

বিশ মিনিট ধরে হাটার পর নূর অনেক দূর চলে এলো। তখন রাগে রাগে চলে এলেও, এখন খুব ভয় লাগছে নূরের। ওতো রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না।বাড়ির রাস্তাও চেনে না। আবার যে হসপিটালে ফিরে যাবে সে রাস্তাও ভুলে গেছে ও। এখন কি করবে ও? ওর কাছেতো ফোনও নেই। অন্য কারোও ফোন দিয়ে যে ফোন দিবে, ওরতো কারোও নাম্বারও মনে নেই। খুব কান্না পাচ্ছে ওর। নিজের বোকামির ওপর নিজেরই রাগ লাগছে। কি দরকার ছিল ওভাবে চলে আসার? এখন কি করবি তুই?এসব ভাবতে ভাবতে নূর কখন রাস্তার মাঝে চলে এসেছে ও নিজেও জানে না। হঠাৎ গাড়ির হর্ণের শব্দে নূর পাশে ফিরে তাকালো। দেখলো একটা গাড়ি ওর দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। নূর ভয়ে ওখানেই জমে গেল। আর নড়াচড়া করার শক্তি পেল না। গাড়িটা কাছে আসতেই নূর কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। ও ভাবলো এটাই বোধ হয় ওর শেষ সময়।

আদিত্য এদিকে নূরকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায় অবস্থা। নিজের ওপর চরম লাগছে ওর।আবারও নিজের ভুলের জন্য ওর প্রাণপাখীকে হারিয়ে ফেললো ও। কতো সাধনার পরে ওর ওর প্রাণপাখীকে খুঁজে পেয়েছিল। আর ও কিনা আগলে রাখতে পারলো না? আবারও হারিয়ে ফেললো নূরকে। এখন কি করবে ও? আদিত্য মাথার চুল টেনে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর।

হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠল। আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। কিছু একটা শুনে আদিত্য একমুহূর্তও দেরি না করে এক ছুটে ওখান থেকে চলে গেল।

বাসায় এসে দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আদিত্য ওদের সামনে যেয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
….কোথায় ও?

আদিত্যকে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। আদিত্যের চোখ প্রচুর পরিমাণ লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আদিত্য চরম পরিমাণে রেগে আছে। তাসির আদিত্যের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো।
…আদি কাম ডাউন। নূর এমনিতেই অনেক ভয় পেয়ে গেছে। জানিনা কিভাবে আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিল। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে ঠিক সময়ে আমি ওকে দেখতে পেয়ে গাড়ি ব্রেক করে ফেলেছি। নাহলে কি হয়ে যেতো সেটা ভাবাও কষ্টকর।

আদিত্য দাতে দাত চেপে বললো।
….ও কোথায় আগে সেটা বল?

….রুমে আছে।

আদিত্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। সবাই টেনশনে আছে আদিত্য যে রেগে আছে, নাজানি কি করে বসে?

আদিত্য রুমে এসে দেখলো নূর বেডের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিত্য ঝড়ের গতিতে যেয়ে নূরের হাত ধরে টেনে তুলে দাড় করিয়ে ঠাসস করে গালে একটা চড় মেরে দিল। রাগে ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আজকে ও নিজের রাগকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না।
চড় খেয়ে নূরের মাথাটা একদিকে কাত হয়ে গেল। আদিত্য নূরের দুই কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
…..কোথায় গিয়েছিলে তুমি? বলো কোথায় গিয়েছিলে? জানো আমার কি অবস্থা হয়েছিল? কি চাও কি তুমি বলো? আমাকে কি তোমার মানুষ বলে মনে হয়না? আমিও তো একটা রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমারো কষ্ট হয়।আর কতো কষ্ট দিতে চাও আমাকে তুমি? আর কতবার মারতে চাও আমাকে? এভাবে বারবার মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়ার চেয়ে একবারেই মেরে ফেল আমাকে। তাহলে তুমিও শান্তি পাবে আর আমিও। বারবার মরার চেয়ে একবারেই মরে যাওয়া ভালো।

আদিত্য এবার নূরকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ঠাসস করে আছাড় মেরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….তোমাকে আমি বাইরে থাকতে বলেছিলাম না, তাহলে কেন তুমি একা একা চলে গেলে? ওয়াই ড্যাম ইট ওয়াই? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত, তাহলে কি করতাম আমি? বলো কি করতাম? আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার অনেক ভালো লাগে তাইনা? ঠিক আছে তাহলে তুমি ভালোই থাকো।
কথাটা বলে আদিত্য টি টেবিলে একটা লাথি মেরে হনহন করে বেড়িয়ে গেল।

আদিত্যের এতো রাগ দেখে নূরের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। নূর এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে কাঁপতে লাগলো আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

আদিত্য নিচে এসে সোজা বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল। সবাই পেছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করলো।কিন্তু কারোর কথা শুনলো না ও। তানি আর সানা তাড়াতাড়ি নূরের কাছে গেল। নূরের কাছে যেয়ে ওকে সামলাতে লাগলো।

আদিত্য রাগে ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আজ ও। প্রায় বিশ মিনিট গাড়ী চালানোর পর হঠাৎ ওর হুঁশ এলো, ও কি করে এসেছে নূরের সাথে। আদিত্য সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষলো। আদিত্য নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো।
…..নো নো নো, নো আদি। হাউ কুড ইউ ডু দিস? আমি কি করলাম এটা? আমি আমার প্রাণপাখীর গায়ে হাত তুললাম? আমি কি করে করতে পারলাম এটা? কি করে? নূর এখন অসুস্থ জানা সত্বেও আমি কি করে এমন ব্যবহার করতে পারলাম? এই তোর ভালোবাসা? এই তোর কেয়ার? এতটুকুই সহ্য করতে পারলাম না আমি? শেইম অন ইউ আদি, শেইম অন ইউ।

আদিত্য ওর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই হাত দিয়ে আমি আমার প্রাণপাখীকে আঘাত করেছি। এই হাত রাখার কোনো অধিকার নেই আমার।
কথাটা বলে আদিত্য ওর হাত দিয়ে জানালার কাচে একটা ঘুষি মারলো। সাথে সাথে জানালার কাচ ভেঙে গেল। আদিত্য সেই ভাঙা কাচের ওপর নিজের হাত চেপে ধরলো। হাত কেটে হাত দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। তাতে আদিত্যের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওর এখন নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ও কিভাবে ওর প্রাণপাখীর গায়ে আঘাত করতে পারলো?

হঠাৎ আদিত্যর মনে পড়লো ও তখন রুমে কাচের ফুলদানি ভেঙে এসেছে। আদিত্যের ভয় হতে লাগলো। যদি ভাঙা কাচ নূরের হাত পায়ে লেগে যায় তখন? কথাটা ভেবে আদিত্য সাথে সাথে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আজ ওর জন্য নূরের কিছু হয়ে গেলে ও নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবে না। কখনো না।

চলবে…..

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৬

★ আদিত্য গাড়ি থামিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর ঢুকলো। বাসায় ঢুকে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। নিজের রুমে যেয়ে দেখলো নূর ভয় জড়োসড়ো হয়ে এককোনায় দেয়ালের এটে বসে ফোঁপাচ্ছে। তানি আর সানা মিলে নূরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আদিত্যকে এগিয়ে আসতে দেখে নূর আরও ভয়ে তানির পেছনে লুকালো। নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। ওর প্রাণপাখী ওকে দেখে ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের অপরাধ বোধটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক মনে হচ্ছে।

আদিত্য চোখের ইশারায় তানি আর সানাকে চলে যেতে বললো। ওরা মাথা ঝাকিয়ে চলে যেতে নিলেই নূর ওদের হাত টেনে ধরলো। ওরা অনেক বুঝিয়ে একরকম জোর করেই নূরকে রেখে গেল। ওরা চলে গেলে নূর ভয় আর অভিমানে অন্য কোনো মুখ ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে এঁটে বসে রইলো।

আদিত্য নূরের সামনে হাটু গেড়ে বসে নূরের দিকে হাত বাড়াতে নিলেই নূর ভয়ে আরও সেঁটে গেল। নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর ছুড়ি চালাচ্ছে। আদিত্য নিজের দুই কান ধরে ছলছল চোখে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…..এমন করোনা প্লিজ? আমার সহ্য হচ্ছে না। একবার আমার দিকে তাকাও। আই এ্যাম সরি প্রাণপাখী। আমি জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু কি করবো বলো? হসপিটালে তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে একবার হারিয়ে পেয়েছি, আরেকবার তোমাকে হারানোর ক্ষমতা নেই আমার মাঝে। তোমার কিছু হয়ে গেলে যে আমি বাঁচব না প্রাণপাখী। তাইতো তাসির যখন ফোন করে সবকিছু বললো। তখন আমার অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল। আর রাগের মাথায় তোমার সাথে এমন আচরণ করে ফেলেছি। আই সরি প্রাণপাখী। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও দাও। তবুও আমাকে ভয় পেয়ে এভাবে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেওনা প্লিজ? আমি সহ্য করতে পারবোনা। প্লিজ প্রাণপাখী?

আদিত্যের কথায় নূর একটু শান্ত হয়ে এলো। এখন আদিত্যের জন্য প্রচুর মায়া লাগছে ওর। দোষতো ওর নিজেরই। ওভাবে হসপিটাল থেকে চলে যাওয়া টা ওর ঠিক হয় নি। আদিত্যের রাগ করাটা স্বাভাবিক। নূর শান্ত মায়া ভরা চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্যের দিকে তাকাতেই হঠাৎ নূর দেখলো আদিত্যের হাত কেটে হাতে রক্ত জমে আছে। নূর আৎকে উঠে আদিত্যের কাছে এসে ওর হাত ধরে চিন্তিত স্বরে বললো।
….এই আ আপনার হাতে রক্ত কেন? কি হয়েছে আপনার হাতে?

নূরকে নিজের জন্য চিন্তিত হতে দেখে আদিত্য মুচকি হেসে ছলছল চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নূর আবারও বলে উঠলো।
….কি হলো বলছেন না কেন? হাতের এই অবস্থা কি করে হলো?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ও কিছুনা, এই হাতটা অনেক বড়ো অপরাধ করে ফেলেছিল। তাই ওকে শাস্তি দিয়েছি। যদিও এটা ওর জন্য খুবই সামান্য শাস্তি। ও যে অপরাধ করেছে তার জন্য ওরতো আরও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিৎ।

আদিত্যের কথায় নূর ছলছল চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। এই লোকটা আমাকে কত ভালোবাসে। আর আমি কিনা বোকার মতো উনাকে ভুল বুঝে ওমন একটা কান্ড করে বসলাম? উনি ঠিকই করেছে আমাকে চড় মেরে। আমাকেতো আরো মারা উচিৎ, ডাফার একটা। এসব ভেবে নূরের অনেক অপরাধ বোধ হলো। নূর তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে আদিত্যের হাত পরিস্কার করে দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….আপনি আসলেই একটা পাগল। এমন কেউ করে? দেখুন কতো রক্ত বের হয়েছে? রক্তের কতো মূল্য জানেন? আর যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তখন?

আদিত্য শুধু নূরের তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নূরের এই মিষ্টি শাসন ওর কাছে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে ওর সেই আগের নূর ফিরে এসেছে। হঠাৎ আদিত্যের নজর পড়লো নূরের গালে। নূরের গালে লাল হয়ে আঙুলের দাগ ফুটে উঠেছে। এটা দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ইশশ কতো জোরে মেরেছি প্রানপাখী টাকে, কেমন ফুলে উঠেছে। কতো ব্যাথা করছে নিশ্চয়। এসব ভেবে আদিত্যের অপরাধ বোধ ওকে আরও কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

নূর আদিত্যের হাত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর মাথা নিচু করে কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
….আই এ্যম অলসো সরি। আমার ওভাবে চলে যাওয়াটা একদম উচিৎ হয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমি আর কখনো এমন করবো না।

নূরের কথা শুনে আদিত্য আর থাকতে পারলো না। আবেগে আপ্লূত হয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো।চোখ বন্ধ করে কিছু সময় ওভাবেই ঠোঁট চেপে ধরে থাকলো। নূর এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। হঠাৎ আদিত্যের এমন কাজে নূর একদম ফ্রিজড হয়ে গেল।
আদিত্য নূরের ঠোঁট ছেড়ে এবার সারামুখে চুমু খেতে লাগলো। আবেগের বসে ও কি করছে তা ও নিজেও জানেনা। আদিত্য নূরের গালে চড় দেওয়া জায়গায় বারবার চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বলতে লাগলো।
….আমার কলিজাটাকে আমি মেরেছি। ইশশ অনেক লেগেছি বুঝি আমার সোনাটার? ব্যাথা করছে তাইনা? আই প্রমিজ প্রাণপাখী। আর কখনো এমন হবে না। কখনো না। এবারের মতো মাফ করে দাও আমাকে প্লিজ?

নূর আর কি বলবে? বেচারিতো শক থেকেই বেরুতে পারছে না। পুরো স্টাচু হয়ে গেছে। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিল। তারপর অয়েন্টমেন্ট এনে নূরের গালে লাগিয়ে দিল। নূর এখনো শুধু আদিত্যের সেই চুমুর কথায় ভাবছে। আদিত্য চুমু দিতেই আমার এমন লাগলো কেন? যেন সারা শরীরে একটা বিদ্যুৎ বয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই ছোয়াটা আমার অনেক চেনা। আগেও অনেক বার এই ছোঁয়া পেয়েছি। কেমন যাদু আছে উনার ছোঁয়ায়।

নূরকে চুপ থাকতে দেখে আদিত্য নূরের কাঁধ আলতো ঝাকিয়ে বলে উঠলো।
…..কি হলো কি ভাবছো?

আদিত্যের কথায় নূরের ঘোর কাটলো। নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
….ক কই কিছু না। এমনি।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ওকে তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

নূর জোরপূর্বক হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
——-

রাত ১১ টা
আদিত্য নূর একটু আগেই শুয়েছে। আদিত্য প্রতিদিনকার মতো ঘুমানোর ভান করে আছে, যাতে নূর ওর কাছে আসে আর ও নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারে। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের কাছে এলো। আজ ওর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। বারবার শুধু আদিত্যের সেই চুমুর কথা মনে পড়ছে। নূর আদিত্যের একদম কাছে এসে আদিত্যের ঠোঁটের দিকে তাকালো। নূরের কেমন যেন নেশা ধরে আসছে। আবারও আদিত্যের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করছে। নূর এক ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। ঘোরের মাঝেই নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় একদম কাছে চলে এলো। নূর চোখ বন্ধ করে আলতো করে আদিত্যের ঠোঁটে একটা চুমু খেল। সাথে সাথে আদিত্যের মাঝে যেন ঝড় শুরু হয়ে গেল। আদিত্য এক ঝটকায় চোখ খুলে নূরের দিকে তাকালো। নূর এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। এতদিন পর নূরকে এতো কাছে পেয়ে আদিত্যেও আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। নূরের গালে হাত রেখে নূরের ঠোঁটে চুমু খেল। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের টিশার্ট খামচে ধরলো।এতদিনের তৃষ্ণার্ত আদিত্য সবকিছু ভুলে নূরের ঠোঁটের স্বাদ নিতে লাগলো। হারিয়ে যেতে লাগলো নূরের মাঝে।

ঠোঁটে চুমু খাওয়া শেষে ধীরে ধীরে গলায় নেমে এলো আদিত্য। নূরের গলায় ঘাড়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। নূর আদিত্যের চুল খামচে ধরলো। হঠাৎ নূরের মাথায় কেমন যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। ওর চোখের সামনে আবারও আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। যেন এমন মুহূর্ত ওর জীবনে আগেও অনেক বার এসেছে। ধীরে ধীরে নূরের মাথার যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেল। নূর সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো।
…আহহহহ,,

সাথে সাথে আদিত্যের ঘোর কেটে গেল। আদিত্য মাথা তুলে নূরকে এভাবে দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….হেইই প্রানপাখী কি হয়েছে তোমার ? শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে? বলনা?

নূর আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আদিত্য এবার আরও পাগল হয়ে গেল। পাগলের মতো নূরকে ডাকতে লাগলো।
….এ এই প্রানপাখী ওঠনা প্লিজ? কথা বলো। শিট আমি আবারও ভুল করে ফেললাম। আমার ভুলের জন্য নূরের এই অবস্থা হয়ে গেল। আমি কেন নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। কেন?

আদিত্য জোরে জোরে আবিরকে ডাকতে লাগলো। আদিত্যের চিল্লানিতে আবির সহ বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেল। নূরকে এভাবে দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। আদিত্য বলে উঠলো।
….আবির জলদি গাড়ি বের কর। নূরকে এখুনি হসপিটালে নিতে হবে।

আবির মাথা ঝাকিয়ে দ্রুত গিয়ে গাড়ি বের করলো। আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে এসে গাড়িতে বসে হসপিটালে গেল।

হসপিটালে ডক্টর নূরকে চেক করে আদিত্যকে বললো।
…. দেখুন আপনাকে আগেও বলেছি। অতিরিক্ত মেন্টাল ট্রমা ওনার জন্য ঠিক হবে না। হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে ওনার মাথায় অতিরিক্ত চাপ পরার কারনে উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।

আদিত্য চিন্তিত স্বরে বললো।
….ডক্টর নূর ঠিক আছে তো?ওর কিছু হবে নাতো?

….ডোন্ট ওয়ারি সি ইস ফাইন। একটু পরেই ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। তখন আপনারা উনাকে নিয়ে যেতে পারবেন।

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। একটু পরে নূরের জ্ঞান ফিরে আসলে আদিত্য নূরকে নিয়ে বাসায় চলে গেল।
_____________

দুই দিন পর রাত ২টা
তানির একটুও ঘুম আসছে না। তানি ঘুসমুস করে উঠে বসলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো,আবির হাতির মতো উপর হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। যেন দুনিয়া দারি বেচে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর এখানে যে ওর প্রেগন্যান্ট বউ অস্থির হয়ে আছে সে চিন্তা একবারও নেই জনাবের। এসব ভেবে তানি আবিরকে জোরে জোরে ঠেলতে ঠেলতে বলতে লাগলো।
….আবির, এই আবিররর,

আবির ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগলো।
….হ্যাঁ, হ্যাঁ? কি হয়েছে? বাচ্চা এসে গেছে?

তানি দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বাচ্চা হয়েছে তো,এই নেও তোমার বাচ্চা।
কথাটা বলে তানি একটা বালিশ আবিরের হাতে ধরিয়ে দিল।

আবির বেচারা বেকুবের মতো তাকিয়ে বললো।
….তানি বেবি, কি বলছ এসব?

….হ্যাঁ তো কি বলবো? আমার এখানে ঘুম আসছে না অস্থির লাগছে আর তুমি কিনা আরামে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছ?

….কেন বেবি কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?

….না ডাক্তার লাগবে না। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে, সেটা এনে দেও তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে।

….রাত ২টায় তোমার খাবার খেতে ইচ্ছে করছে?

…হ্যাঁ তো প্রেগন্যান্ট লেডিদের এমনই। যখন খুশী তখনই এটা ওটা খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। আর সেটা না খেতে পারা পর্যন্ত শান্তি লাগে না।

আবির ফোঁত করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
….আচ্ছা বলো কি খাবে? আমি কিচেন থেকে নিয়ে আসছি।

তানি হাসিমুখে বললো।
….আমি ফুসকা খাবো।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিহহ এতরাতে ফুসকা কই পাবো?

….সে আমি জানি না। তোমার ছেলের এখন ফুসকা খাওয়ার শখ জেগেছে আমি কি করবো? ফুসকা না খাওয়া পর্যন্ত ও ঘুমাতে দিবে না আমাকে।

…আচ্ছা ঠিক আছে আমি মাকে বলছি তোমার জন্য ফুসকা বানিয়ে দিবে।

তানি দ্রুত বলে উঠলো।
……এই না না। আমি বাসার ফুসকা খাবোনা।

….তো?

….আমাদের বাসার সামনে যে মামা ফুসকা বিক্রি করে না,উনার ফুসকা অনেক মজা আমি ওই ফুসকা খাবো।

আবিরের মনে হচ্ছে ও বোধহয় ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখছে। এটা বাস্তবে হতেই পারে না। আবির ঢোক গিলে বলে উঠলো।
….তা তানি বেবি কি বলছ এসব? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? এতরাতে আমি ওই মামার ফুসকা কোত্থেকে আনবো? সে কি এখনো রাস্তায় তোমার জন্য ফুসকা নিয়ে বসে আছে?

….এতকিছু আমি জানি না।তোমার ছেলের এখন ওই ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে এতে আমি কি করবো?

….বাহ্ আমার ছেলে আমাকে চেনার আগে ফুসকা ওয়ালা মামাকে চিনে ফেললো? দেখ তানি বেবি আমার কিউটিপাই , তুমি এখন আমার ছেলেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুম পারিয়ে দাও। আই প্রমিজ সকাল বেলা ফুসকা ওয়ালা মামা আসতেই তোমাকে যত খুশি ইচ্ছে তত ফুসকা খাওয়াবো ঠিক আছে?

….না না আমার এখুনি ফুসকা চাই? তুমি তোমার ছেলের এইটুকু আবদারই পুরন করতে পারবে না? কেমন বাবা তুমি? দেখ তুমি যদি এখুনি আমাকে ফুসকা এনে না দিয়েছ। তাহলে আমি তোমার ছেলেকে বলবো যে তার এইটুকু আবদারই তুমি রাখোনি। সে যেন তোমাকে বাবা বলে না ডাকে,তোমাকে যেন আঙ্কেল বলে ডাকে।তখন দেখবে কেমন লাগে, যখন নিজের ছেলে নিজেকে আঙ্কেল বলে ডাকবে।

আবির করুন সুরে বললো।
….দিস ইস নট ফেয়ার তানি।তুমি এমন করতে পারোনা। এটাতো রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো তুমি?

…তুমি যা ভাবো তাই। আমার কথা না মানলে আমি এমনই করবো।

আবির আর উপায় না পেয়ে চাপা রাগ দেখিয়ে বললো।
….ওকে ফাইন। আনছি তোমার মামার ফুসকা।
কথাটা বলে আবির যেতে যেতে করুন চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,শেষমেশ এই ছিল কপালে?

আদিত্য নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ ওর দরজায় ঠকঠক এর শব্দ এলো। নক করার শব্দে আদিত্যের ঘুম ভেঙে গেল। আদিত্য চোখ মুখ কুঁচকে ভাবলো এতো রাতে আবার কে এলো। আদিত্য আস্তে করে নূরকে ছেড়ে উঠে এলো। দরজা খুলে সামনে আবিরকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস? তানির কিছু হয়েছে?

…..আরে কি হয়নি তাই বল? অনেক বড়ো মুসিবত হয়ে গেছে।

….মানে?

আবির আদিত্যকে সব খুলে বললো। সব শুনে আদিত্য হাসতে লাগলো। আবির বলে উঠলো।
….আমি এখানে মরছি আর তুই হাসছিস? এতরাতে ওই ফুচকাওয়ালা ব্যাটাকে কই খুঁজব? ভাই হেল্প মি প্লিজ। আমি আমার ছেলের কাছে আঙ্কেল ডাক শুনতে চাইনা। প্লিজ ভাই?

….ওকে ওকে ঠিক আছে চল কোনো ব্যাবস্থা করছি।
আদিত্য একবার নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর ঘুমিয়েই আছে, তাই আদিত্য আস্তে করে দরজাটা চাপিয়ে আবিরের সাথে বেড়িয়ে গেল।

নিচে এসে আবির বলে উঠলো।
…ভাই এখন কি করবো? ওই ফুচকাওয়ালা ব্যাটাকে কোথায় খুঁজব?

…..দেখ ওই লোকটাকেই যে খুজতে হবে এমনতো কোনো কথা নেই? আমরা এক কাজ করি, অনলাইনে ফুচকা অর্ডার করি।তুই সেটা তানিকে দিয়ে বলবি যে এটা ওই লোকটারই। তানি কি আর এতো বুঝতে পারবে নাকি?

….আরে ভাই তুইতো দেখি কিছুই জানোস না। মেয়েরা একবার নিজেদের স্বামীকে চিনতে ভুল করতে পারে, কিন্তু কোন ফুচকাওয়ালার কোন টেস্ট এটা ভোলার নো চান্স। শেষমেশ তানি আমাকে ঘর থেকেই না বের করে দেয়? না না ভাই এমন কাজ একদমই করা যাবে না।

….তাহলে এখন কি করবো? ওই ফুচকাওয়ালা কোথায় থাকে আমরা কিভাবে জানবো?

….ভাই এক কাজ করি দারোয়ান চাচাকে জিজ্ঞেস করি। উনি হয়তো বলতে পারবেন।

…ঠিক আছে চল।

তারপর ওরা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল। দারোয়ান বললো সে জানে ওই ফুচকাওয়ালা কোথায় থাকে। দারোয়ান ওদের কে ঠিকানা দিয়ে দিল। ওরা ঠিকানা জেনে নিয়ে ওই ফুচকাওয়ালার বাসার উদ্দেশ্যে গেল।

অনেক খোজার পরে শেষমেশ ওই ফুচকাওয়ালার ওয়ালার বাসা পেয়ে গেল। আবির ফুচকাওয়ালার বাসার দরজায় নক করলো।

ফুচকাওয়ালা লোকটা মাত্রই তার বউয়ের সাথে একটু রোমান্টিক হচ্ছিল, তখনই হঠাৎ দরজায় শব্দ এলো। লোকটা বিরক্ত হয়ে ভাবলো, এতরাতে আবার কে এলো জালাতে? লোকটা উঠে যেয়ে দরজা খুলে আবির আর আদিত্যকে দেখে বললো।
….কেডা আফনেরা? এইহানে কি চাই?

আবির বলে উঠলো।
….ফুচকা চাই মামা।

লোকটা বিরক্তির সুরে বললো।
….আফনেরা কি পাগল নাকি? এতরাতে কেউ ফুচকা খাইতে আহে? তাও আবার বাসার ভিতরে আইসা। যান যান কালকে দিনেরবেলা পাইবেন ফুচকা।

…দেখুন আপনি বুঝতে পারছেন না ব্যাপার টা। আমাদের এখুনি ফুচকা নেওয়াটা অনেক জরুরি। নাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।

…দেহেন আপনেগো কথা জানিনা।তয় আমি অহন জরুরি একটা কাজে ব্যাস্ত। তাই আমি এহন ফুচকা বানাইতে পারুম না।

….দেখুন এমন করে বলবেন না প্লিজ? আমদের সমস্যা টা বোঝার চেষ্টা করুন প্লিজ? আচ্ছা এককাজ করুন, আপনি ফুচকা বানান। আর আপনার যে কাজ সেটা আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।

আবিরের কথা শুনে লোকটার এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। কি কয় এই লোক আমার কাজ নাকি হেয় কইরা দিবো। অহন কি এই লোক আমার বউয়ের সাথে,,,

এবার আদিত্য বলে উঠলো।
…দেখুন ভাই আমরা অনেক বিপদে পড়ে এসেছি। আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।
তারপর আদিত্য লোকটাকে সব খুলে বললো। সব শুনে লোকটা হাসি মুখে বললো।
…আরে এই কথা, আগে কইবেন না? আপনেরা একটু দাঁড়ান আমি অহনি ফুচকা আইন দিতাছি।
কথাটা বলে লোকটা ভেতরে যেয়ে একটু পরে একটা প্যাকেটে করে ফুচকা নিয়ে এসে ওদের হাতে দিল।
শেষমেশ ওদের ফুচকা মিশন শেষ হলো। ওরা ফুচকা নিয়ে বাসায় ফিরল।

আদিত্য রুমে ঢুকতেই হঠাৎ নূর দৌড়ে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী?

নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরেই ভীতু স্বরে বললো।
….,আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? জানেন আমি কতো ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ভয়ের কি আছে? এই দেখ আমি চলে এসেছি।

….আর কখনো আমাকে না বলে এভাবে একা রেখে যাবেন না। আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

…আই এ্যাম সরি। আসলে আবিরের একটা দরকারে ওর সাথে একটু যেতে হয়েছিল। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকিনি। সরি আর কখনো এমন হবে না প্রমিজ।

কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।তারপর বেডে গিয়ে নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

এভাবে দেখতে দেখতে আরও এক মাস কেটে গেল। নূর এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু জিনিস ওর মনে পড়ে। তবে সেটা ও ভালো করে বুঝতে পারে না। তাই কাওকে বলে না। তানিরও পাঁচ মাস চলছে। একটু পেট উঁচু দেখা যায়।

সকাল ১১টা
আদিত্য অফিসে চলে গেছে। নূরের একা একা ভালো লাগছিল না তাই ও সানার রুমে এলো। সানার রুমে এসে দেখলো সানা বেডে উপর হয়ে শুয়ে থেকে ল্যাপটপে কি যেন দেখছে। নূর মুচকি হেসে সানার পাশে বসে বললো।
….কি দেখছ তুমি ?

সানা নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….আরে ভাবি তুমি? ভালো হয়েছে তুমি এসেছ। বসোনা, আমি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের ভিডিও দেখছিলাম। তুমিও দেখ আমার সাথে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে সানার সাথে ওর বিয়ের ভিডিও দেখতে লাগলো। দশ মিনিট দেখার পর নূরের মাথায় আবারও যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। আবারও চোখের সামনে আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। এভাবে মাথার যন্ত্রণায় নূর একসময় আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
নূরকে জ্ঞান হারাতে দেখে সানা অনেক ভয় পেয়ে গেল। ও কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে ডাকতে লাগলো।
____

রাত ৮টা

আদিত্য মাত্রই অফিস থেকে ফিরল। আজ অফিসে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। জানিনা আবিরের আজ কি হয়ে গিয়েছিল। বারবার নানান কাজের অজুহাতে আদিত্যকে আটকে রাখছিল। এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্য নিজের রুমে আসলো। রুমে এসে দেখলো রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে লাইট জালিয়ে বলতে লাগলো।
….নূর, নূর কোথায় তুমি? আর এভাবে রুমের লাইট কেন ব,,,,

আর বলতে পারলোনা আদিত্য। সামনে তাকাতেই ও পুরো থ হয়ে গেল।

চলবে…….