ভালোবাসার চেয়েও বেশি পর্ব-৭৭+৭৮

0
2203

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৭

★ আদিত্য স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব বুঝতে পারছে না ও। ওর সামনে বেডের ওপর নূর বঁধু বেশে বসে আছে। একদম বিয়ের দিন যেমন সেজেছিল, আজও ঠিক ওভাবেই সেজে বসে আছে। আদিত্য পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। নড়াচড়াও যেন ভুলে গেছে। কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছে না।

আদিত্যর অবস্থা দেখে নূর মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে আদিত্যের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কেমন লাগছে আমাকে বলো?

নূরের মুখে তুমি সম্বোধন শুনে আদিত্য আবারও শক খেল। আদিত্য কোনরকমে ঢোক গিলে বললো।
….এ এসব কি? তুমি এভাবে বউ সেজেছ কেন?

নূর আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
….বারে তুমিইতো বলেছিলে। এখন নিজেই ভুলে গেলে? তোমারও কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেল নাকি?

….মা মানে? আমি কখন বললাম?

নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….কেন তুমি না আবির আর তানির বিয়ের দিন বলেছিলে, যে আমি যেন আমাদের প্রতি বিবাহ বার্ষিকীতে একদম বিয়ের দিনের মতো বঁধু সাজি। নিজেই বলে নিজেই ভুলে গেলে? নাকি আজ যে আমাদের ফাস্ট ম্যারেজ এনভারসারি তা ভুলে গেছ হুম?

আদিত্যর হাত পা প্রচুর কাঁপছে। ও যা ভাবছে তাকি সত্যি? সত্যিই কি ওর প্রাণপাখীর স্মৃতি ফিরে এসেছে? ওর সব মনে পড়ে গেছে? আজ যে ওদের বিবাহ বার্ষিকী সেটাতো ওর মনে আছে। কিন্তু নূরের কিছু মনে নেই দেখে ওকে কিছু বলেনি। যাতে ওর ব্রেইনে কোনো চাপ না পরে। কিন্তু আজকের দিনেই যে ওর জীবনে এতবড় খুশি আসবে সেটা ভাবতেই পারেনি ও। আদিত্য কাঁপা কাঁপা হাতে নূরের মুখটা ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো।
…..তা তারমানে তোমার সব মনে পড়ে গেছে? তু তুমি ঠিক হয়ে গেছ?

নূরও ছলছল চোখে মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ রাজকুমার আমার সব মনে পড়ে গেছে। আমার রাজকুমার কে আমার মনে পড়ে গেছে। সবকিছুই মনে পড়ে গেছে।

আদিত্যর যেন এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। নূরের মুখে এতদিন পর রাজকুমার শুনে আদিত্য খুশিতে কেঁদে উঠলো । কাঁদতে কাঁদতে নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলতে লাগলো।
….আ আবার বলোনা রাজকুমার?

নূরও কেঁদে উঠে বললো।
….রাজকুমার।

……আবার বলো,বারবার বলো।

….রাজকুমার আমার রাজকুমার। অনেক ভালোবাসি তোমাকে রাজকুমার।

আদিত্য কাঁদতে কাঁদতে নূরকে ধরে নিচে বসে পড়লো। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….এ এটা কোনো স্বপ্ন নয়তো? আমার প্রাণপাখীটার সত্যিই সব মনে পড়ে গেছে?

নূর আদিত্যের কপালে আর দুই গালে চুমু দিয়ে বললো।
….এটা কোনো স্বপ্ন না রাজকুমার। দেখ আমি সত্যি সত্যিই তোমার সামনে।

আদিত্য আবারও নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো খুশির দিন। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমার প্রাণপাখীটার সব মনে পড়ে গেছে। আমার আর কিচ্ছু চাইনা, কিচ্ছু না। ভালোবাসি প্রাণপাখী, ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য একটু শান্ত হয়ে নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বেলকনির সোফায় এসে বসলো। নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
….এখন বলতো কিভাবে তোমার সব মনে পড়লো?

….আসলে আগে থেকেই মাঝে মধ্যে কিছু কিছু জিনিস আমার মনে পড়ছিল। কিন্তু আজকে যখন সানার সাথে আমাদের বিয়ের ভিডিও দেখছিলাম তখন হঠাৎ আমার আবারও যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। আর এক এক করে সবকিছুই আমার মনে পড়তে লাগলো। একসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এক মিনিট, তোমার জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল আর আমাকে কেউ কিছু জানালো না? তোমার যদি কিছু হয়ে যেত ত,,,

আদিত্যর কথা শেষ হওয়ার আগেই নূর আদিত্যের ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বলে উঠলো।
…..হুঁশশ, সবকিছুতেই এতো হাইপার হয়ে যাও কেন তুমি হুম? ওদের সবাইকে আমিই মানা করেছিলাম। কারণ আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই সবাইকে তোমাকে কিছু বলতে মানা করেছিলাম। আর আবিরকে বলেছিলাম যে তোমাকে যেন অফিসে একটু বেশি সময় আটকে রাখে।যাতে আমি আমার সারপ্রাইজ রেডি করতে পারি।

আদিত্য নূরের আঙুলে চুমু খেয়ে, হাতটা ধরে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….দিস ইস মাই বেস্ট সারপ্রাইজ এভার।

নূর মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। এতদিন পর নূরের এই লাজুক হাসি দেখে আদিত্য আবারও মুগ্ধ হয়ে গেল। আদিত্য নেশা লাগানো চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূরেরও কেমন ঘোর লেগে আসছে। দুজন দুজনের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুজনের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আদিত্য আস্তে করে নূরের নাকের বড়ো নথটা খুলে ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁটের ওপর দিয়ে নামিয়ে দিল। নূর শিহরণে চোখ বন্ধ করে মুখটা হালকা উঁচু করে নিল। নূরের অধর জোড়া কাঁপছে। যা দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। আদিত্য খুব করে চাইছে নূরকে আদর করতে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা কাজ করছে। বারবার শুধু সেদিনের কথা মনে পড়ছে ওর। ওর ভয় লাগছে যদি আবারও নূর সেদিনের মতো অসুস্থ হয়ে যায়?

আদিত্যর সারা না পেয়ে নূর চোখ খুলে দেখলো আদিত্য কেমন দ্বিধা চোখে তাকিয়ে আছে। নূর হয়তো ব্যাপার টা বুঝতে পারলো। তাই ও নিজে থেকেই আদিত্যকে আদর করতে লাগলো। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। সবগুলো বোতাম খোলা শেষে শার্টটা সামনে থেকে দুই দিকে সরিয়ে দিল। নূর মুখ নামিয়ে আদিত্যের পেটে চুমু খেল।পেট থেকে চুমু খেতে খেতে উপর দিকে উঠে বুকে আর গলায় চুমু খেল। আদিত্য সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে, নূরের কোমড় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নূর আদিত্যের কানে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো।
….ভালোবাসো আমাকে, অনেক ভালোবাসো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিল।

নূরের এমন আহবানে আদিত্য আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে, আরেক হাত নূরের কানের নিচে দিয়ে নূরের ঠোঁটে ডুব দিয়ে অধরসুধাপান করতে লাগলো। নূরও আদিত্যর চুল খামচে ধরে আদিত্যের তালে তাল মেলাতে লাগলো। আদিত্যের এতদিনের সব কষ্ট চুষে নিতে লাগলো। চুমু খেতে খেতে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।

রুমে এসে আদিত্য নূরকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নামিয়ে দিল। নূরকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে, প্রথমে নূরের মাথার ঘোমটাটা খুললো,তারপর ধীরে ধীরে নূরের সব গহনা খুলতে লাগলো। একটা করে গহনা খুলছে আর সেখানে চুমু দিচ্ছে। নূর মাথা নিচু করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। গহনা খোলা শেষে আদিত্য নূরকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর আবারও নূরের অধর যুগলে ডুব দিল। চুমু খেতে খেতে নূর আদিত্যের শার্ট কাঁধ থেকে নিচে নামিয়ে খুলে ফেলে দিল। আদিত্য নূরকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগুলো। এতদিনের তৃষ্ণার্ত দুটি হৃদয় দুজন দুজনকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে লাগলো। পুরনো সব দুঃখ কষ্ট ভুলে পারি দিল এক সুখের সাগরে।
_________

সকাল ৭টা
নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে, আঙুলের উল্টো পাশ দিয়ে আলতো করে নূরের গালে স্লাইড করছে।

একটু পরে নূর ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর আদিত্যের গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো।
…..গুড মর্নিং হাসব্যান্ড।

আদিত্য নূরের হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….গুড মর্নিং ওয়াইফি।

…..কখন উঠেছ?

…..ঘুমালে তো উঠবো।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে?

….মানে আমি ঘুমাইনি। সারারাত জেগে ছিলাম।

…..কেন?

….কারণ আমার ভয় করছিল,যদি সবকিছু স্বপ্ন হয়ে যায়। যদি চোখ খুলতেই সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যায়। সেই ভয়েই আমি চোখ বন্ধ করিনি। সারারাত তোমাকে দেখেই কাটিয়েছি।

আদিত্যর কথায় নূরের চোখে পানি চলে এলো। নূর আদিত্যের ঠোঁটে চুমু খেয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…..আই এ্যাম সরি। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা? আমার বোকামির জন্য এতদিন ধরে আমার রাজকুমার এতো কষ্ট পাচ্ছিলো। আই এ্যাম সরি সোনা।

আদিত্য এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো।
….আমি রাতে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু এখন বলো,সেদিন আসলে কি হয়েছিল? তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? কেউ কি তোমার সাথে কিছু করেছিল, বলো আমাকে?

আদিত্যের কথা শুনে নূর মাথা নিচু করে ফেললো। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….কি হলো বলো? দেখ একদম ভয় পেয়ও না। যে এসব করেছে তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। আমার প্রাণপাখীকে এতো কষ্ট দেওয়ার ফল তাকে পেতেই হবে। বলো প্রাণপাখী?

নূর চোখের পানি মুছে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বলবো আমি। আজ তোমাকে সব বলবো।
সেদিন তোমার সাথে কথা বলার পাঁচ মিনিট পর আমার ফোনে একটা ফোন এলো। ফোনটা রিপা আপুর ছিল।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….রিপা মানে, তোমার ওই সৎ বোনটা?

….হ্যাঁ।

….তারপর?

…..রিপা আপু আমাকে বললো রবি নাকি স্কুলে কারো সাথে মারামারি করে হাত ভেঙে ফেলেছে। বাবাও এখন বাসায় নেই তাই আমি যেন একটু ওখানে যাই। ও নাকি একা একা কিছু বুঝতে পারছে না। রবির কথা শুনে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। তাই আমি যেতে রাজি হয়ে গেলাম। রিপা আপু আমাকে আরও বললো, আমি যেন বাবাকে বা আমাদের পরিবারের কাওকে না বলি। শুধু শুধু সবাই টেনশনে পরে যাবে। একবার রবি ঠিক হয়ে গেলে, পরে সবাইকে বলা যাবে। আর বাসার গাড়িও নিয়ে যেতে মানা করলো।বললো, ওখানকার রাস্তা নাকি অনেক চিপা আর এব্রোখেব্রো। আমিও বেশিকিছু না ভেবে রিপার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে রিপার বলা ঠিকানা অনুযায়ী বেড়িয়ে পরলাম আমি।

রিপার বলা ঠিকানায় যেয়ে দেখলাম রিপা একটা নিরিবিলি নির্জন গলির একসাইডে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেয়ে বললাম।
….এটা কেমন জায়গা? এখানে তো কোনো হসপিটাল দেখতে পাচ্ছি না?রবি কোথায়?

রিপা বলে উঠলো।
….,আরে আছে আছে , তুই আমার সাথে আয়। আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

আমি মাথা ঝাকিয়ে ওর সাথে সাথে গেলাম। এই ফাঁকে ও কখন আমার ফোনটা নিয়ে নিয়েছে আমি টেরই পাইনি। অনেকক্ষাণি হাঁটার পর ও আমাকে একটা পুরাণ গোডাউনের ভেতর নিয়ে গেল। সেটা দেখে আমি বললাম।
….এটা কোন জায়গায় নিয়ে এলে আমাকে? আর রবি কোথায়?

….রবিতো যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। ওর স্কুলে।

….মানে? তুমি না বললে ও মারামারি করে হাত ভেঙে ফেলেছে? এসবের মানে কি?

রিপা হঠাৎ সয়তানের মতো হাসতে লাগলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না? আমার কেমন যেন ভয় লাগছিল। রিপা সয়তানি হেসে বললো।
….তুই না আসলে সেই বোকাই রয়ে গেলি। আমি বললাম আর তুই চলে এলি? একবারও সত্য মিথ্যা জানার চেষ্টা করলি না?

…..মা মানে? এসব কি বলছ তুমি? আর আমাকে এভাবে মিথ্যে বলে ডেকে আনার মানে কি?

….মানে হচ্ছে প্রতিশোধ, হ্যাঁ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ডেকেছি তোকে।

….প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?

….কি ক্ষতি করেছিস তাইনা? ন্যাকা সাজা হচ্ছে? তুই জানিস না তুই কি করেছিস? তুই আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিস? তোর স্বামীর সাথে মিলে আমার মাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে ফাঁসি দিয়েছিস। আমাকে অনাথ বানিয়েছিস। আবার বলছিস কি করেছিস?

….দেখ আপু তোমার মা যে অন্যায় করেছে, সে তার শাস্তি পেয়েছে। সে আমার মা দাদিকে খুন করেছে। আর একজন খুনির শাস্তি ফাঁসিই হয়। এতে আমার কি দোষ?

রিপা হঠাৎ এসে আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিল। আমি ফ্লোরে পরে গেলাম। রিপা আমার চুলের মুঠি ধরে বললো।
…. তোর কি দোষ তাইনা? তোরই সব দোষ। আমার মা যা করেছে একদম ঠিক করেছে তোদের সাথে এমনই হওয়া উচিৎ। তোকেও সেদিন মেরে ফেললে আজ এই দিন দেখতে হতো না। তোর জন্য আমি আমার মাকে হারিয়েছি। মা যাবার পর থেকে আমার জীবন নরক হয়ে গেছে। তোর বাবা তো বাচ আমাকে ভাত দিয়ে পালছে এটাই তার কাছে বেশি। মা থাকতে রাজরানীর মতো থাকতাম আমি। আর এখন কাজের বুয়ার মতো বাসার সব কাজ আমাকে করতে হয়। এক এক টাকার জন্য ফকিরের মতো বাবার সামনে ধন্না ধরতে হয়। এইসব কিছু তোর আর তোর বরের জন্য। আমার জীবন নরক বানিয়ে, তোরা স্বর্গের সুখ অনুভব করবি,সুখে শান্তিতে সংসার করবি তাতো আমি হতে দেবনা। এবার কষ্ট ভোগের পালা তোদের।ওই আদিত্য তোকে অনেক ভালোবাসে না? তোর জন্য এইসব করেছে। যদি তুইই ওর জীবনে না থাকিস তাহলে ওর কি হবে?

রিপার কথা শুনে ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠল। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম।
….মা মানে কি ক করতে চাও তুমি?

….আমার জীবন থেকে যেমন আমার মাকে কেড়ে নিয়েছিস তোরা,তেমনি ওই আদিত্যের জীবন থেকেও তোকে কেড়ে নেব। আর সারাজীবনের মতো নরক যন্ত্রণা পাবে ও।মরতে হবে তোকে। আমার মাকে যেমন মেরেছিস তেমন তোকেও মরতে হবে।

আমি কাকুতি মিনতি করে বললাম।
….প্লিজ আপু দয়া করে এমন করোনা। ছেড়ে দাও আমাকে। আমাকে ছাড়া আদিত্য বাঁচতে পারবে না মরে যাবে ও।

রিপা সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….এটাই তো আমি চাই। তুই মরে যাবি, আর আদিত্য বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করবে।তবেই আমার কলিজায় শান্তি হবে। আমিতো সেদিন থেকেই তোকে মারার প্ল্যান করছি। যেদিন আমার মায়ের ফাঁসি হয়েছিল। আমি মনে মনে পণ করেছিলাম যে, তোকেও আমি মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করাবো। কিন্তু আমি জানতাম আদিত্য থাকতে এটা কখনোই সম্ভব না। আদিত্য যেভাবেই হোক তোকে বাচিয়ে ফেলবে। তাই আমি শুধু একটা সুযোগের সন্ধানে ছিলাম। আর শেষমেশ সেই সুযোগটা পেয়েও গেলাম। যেদিন রবির মুখে শুনলাম যে ওর আদিত্য জিজু বিদেশে গেছে। সেদিন থেকেই আমি প্ল্যানিং শুরু করলাম। তোকে কখন কিভাবে মারা যায়। আর আজ সেই সুবর্ন সুযোগটা চলে এলো। তুই জানিস এই জায়গাটা একদম নিরিবিলি, কোনো লোকজন নেই। তুই সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ আসবে না। গোডাউনের পেছনেই আছে নদী। তোকে মেরে এই নদীতেই ফেলে দেব। কাক পক্ষিও টের পাবে না।

আমি অনেক কান্না করে কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম, কিন্তু ও আমার কথা শুনল না। একসময় আমি সুযোগ বুঝে রুপাকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিলাম। দরজার কাছাকাছি আসতেই ও পেছন থেকে একটা রড দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে ওখানেই লুটিয়ে পরলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার। হয়তো তারপর ও আমাকে ওই নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

এতক্ষণ নূরের সবকথা শুনে আদিত্যর চোখে যেন রক্ত উঠে গেল। কপালের রগ ফুলে যেন ফেটে যেতে চাইছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। নূর দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….জানো, জ্ঞান হারানোর শেষ মুহূর্তে শুধু তোমার চেহারাটাই চোখে ভাসছিল। মনে হচ্ছিল তোমাকে বুঝি আর কখনো দেখতে পাবোনা।

আদিত্য নূরকে নিজের বুকের ভেতর শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই সরি প্রাণপাখী। আমার জন্যই সব হয়েছে। আমি যদি তোমার কাছ থেকে দূরে না যেতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না। আই এ্যাম সরি। আমি থাকতেও আমার কলিজাটাকে এতো কিছু ভোগ করতে হলো।

নূর আদিত্যের মুখটা ধরে বললো।
….তোমার কোনো দোষ নেই এতে। প্লিজ নিজেকে দোষ দিওনা। আমারই ভুল হয়েছিল রিপার কথা বিশ্বাস করে ওখানে যাওয়া।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….আমি ওকে ছাড়বোনা প্রাণপাখী। কিছুতেই না। ও আমার প্রানপাখীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ওকে আমি এমন ভয়ানক শাস্তি দেব যে ও,যতবার জনম নেবে ততবারই এই ভয়ে ওর রুহ কেঁপে উঠবে। দুনিয়াতে আসার জন্য আপসোস করবে ও। দেখ তুমি কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আমি কিন্তু তোমার কথা শুন,,

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই নূর বলে উঠলো।
….কিছুই বলবো না আমি। তোমার যা খুশি তাই করো ওর সাথে। ও শুধু আমাকে কষ্ট দিলে হয়তো আমি ওকে ছেড়েও দিতাম। কিন্তু ও আমার রাজকুমার কে কষ্ট দিয়েছে। এতটা দিন তোমাকে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করিয়েছে। তাই আমিও চাই ও শাস্তি পাক ভয়ংকর শাস্তি।
________

দুপুর ১২টা
রবি বসে টিভি দেখছে। রিপা পাশে বসে আছে। নূর ফিরে আসার পর থেকে ও অনেক ভয়ে ভয়ে থাকে নাজানি কখন নূরের স্মৃতি ফিরে আসে আর ওর কথা সবাইকে বলে দেয়। ওর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। রবি যেয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখলো আদিত্য, নূর, আবির আর তাসির দাঁড়িয়ে আছে। রবি খুশি হয়ে বলে উঠলো।
….আরে আপু তোমরা কেমন আছো সবাই?

রুপা হঠাৎ ওদের দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। এরা এখানে কি করছে?

নূর রবিকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আমি ভালো আছি ভাই। তুই কেমন আছিস।

রবি অবাক হয়ে বললো।
….আপু তোমার সব মনে পড়ে গেছে?

…হ্যাঁ ভাই আমার সব মনে পড়ে গেছে।

নূরের কথা শুনে রিপার এবার ভয়ে অন্তর শুকিয়ে আসছে। নূরের সব মনে পড়ে গেছে? তাহলে কি নূর সবাইকে সবকিছু বলে দিয়েছে? এখন কি করবো আমি?

আদিত্যেরা সবাই ভেতরে এসে দাঁড়াল। আদিত্য রিপার দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
…কি ব্যাপার মিস রিপা? এতো ভয় পাচ্ছেন কেন? আপনার কোনো অপরাধ ধরা পড়ে গেছে নাকি?

রিপা জোরপূর্বক হেসে বললো।
….কি বলছেন এসব? আমি আবার কি অপরাধ করেছি?

নূর এসে ঠাসস করে রিপার গালে চড় মেরে বললো।
….কি করেছিস জানিস না তাইনা? আমাকে মেরে ফেলতে চেয়ে এখন বলছিস কি করেছিস তাইনা? তুইও তোর মায়ের মতোই নিকৃষ্ট হয়েছিস।

আদিত্য তাসিরকে চোখের ইশারায় রবিকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বললো। তাসির মাথা ঝাকিয়ে রবিকে নিয়ে গেল।

আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে বললো।
….এটা মনে হয় তোকে সবকিছু ক্লিয়ার ভাবে মনে করিয়ে দেবে তাইনা?

তখনই নূরের বাবা ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো। আদিত্যকে এভাবে দেখে চমকে গিয়ে বললো।
…কি হয়েছে আদিত্য তুমি এভাবে ওর মাথায় গান ঠেকিয়েছ কেন?

….এখুনি বুঝতে পারবেন বাবা। মিস রিপা এখুনি সব বলবে। তাইনা?

রিপা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দিল। সব শুনে নূরের বাবা রিপাকে একটা থাপ্পড় মেরে বললো।
….আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল যে সাপের পেট থেকে সাপই হয়। আমার আগেই তোকে এখান থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ ছিল। আদিত্য তোমার ওর সাথে যা করার করো। আমি কিছুই বলবো না।

আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে বললো।
….তো মিস রিপা চলুন যাওয়া যাক? আপনার সাথে অনেক হিসাব নিকাশ বাদ আছে।

রিপা হঠাৎ নূরের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো এমন করবো না প্লিজ।

নূর রিপার কাছ থেকে পা ছাড়িয়ে সরে এসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..নিয়ে যাও একে। আমি আর একমুহূর্তও ওকে সহ্য করতে পারছি না।

আদিত্য রিপার চুলের মুঠি ধরে বললো।
…শুনলিতো আমার প্রাণপাখী কি বললো? তোকে ওর একদম সহ্য হচ্ছে না। আর আমার প্রাণপাখী যাকে সহ্য করেনা তাকে আমি কিভাবে সহ্য করি বল? এখন চুপচাপ আমার সাথে চল। নাহলে আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন হবে।

কথাটা বলে আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে রিপাকে ওর সাথে নিয়ে গেল।

চলবে……

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৮

★ দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেছে। সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে গেছে। নূর আর আদিত্য তাদের সুখের সংসারে অনেক খুশী আছে। নূর এক বছর গ্যাপ দিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। তানির এখন নয় মাস চলছে। ভরা পেট নিয়ে তানির চলাফেরা অনেক মুশকিল হয়ে যায়। তাই আদিত্য আপাতত আবিরকে অফিসে যেতে মানা করেছো। বাসায় তানির কাছে থাকতে বলেছপ।তানির দেখাশোনার জন্য নূরও এখন সাভারের বাড়িতেই থাকে। আর নূর যেখানে আদিত্যও সেখানেই থাকবে।

বিকাল ৪টা
আদিত্য ওদের একটি পুরাণ পরিত্যক্ত গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়াল। ওর লোকদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তারা গোডাউনের শাটার খুলে দিল। শাটার খুললে আদিত্য ভেতরে গেল। ভেতরে ঢুকতেই এক বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগল। আদিত্য সাথে সাথে নাকের ওপর রুমাল চেপে ধরলো। আদিত্য আবারও ওর লোকদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই এক লোক যেয়ে গোডাউনের লাইট জ্বালিয়ে দিল। লাইট জ্বালাতেই আদিত্য দেখতে পেল, ফ্লোরে অজ্ঞানের মতো পড়ে আছে রিপা। গায়ের জামাকাপড় পঁচে গলে গেছে। গায়ের ওপর দিয়ে মাছি ভিনভিন করছে। তেলাপোকা, ইদুর, মাকড়সারা হেঁটে বেড়াচ্ছে ওর গায়ের ওপর দিয়ে।

হ্যাঁ এই চার মাস হলো আদিত্য রিপাকে এখানেই আটকে রেখেছে। এই অন্ধকার গোডাউনে। যেখানে চব্বিশ ঘন্টায় কখনো আলোর দেখা পায়না রিপা। এখানেই দিনরাত থাকতে হয় ওকে। সঙ্গি হিসেবে ওরা সাথে থাকে এইসব পোকামাকড়। প্রথম প্রথম এইসব দেখে ভয়ে অনেক চিল্লাপাল্লা করলেও, এখন আর সেই এনার্জিও নেই ওর মাঝে। তাই ওমনিই পড়ে থাকে। যে জামাটায় ওকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল এখনো সেই জামাটাতেই আছে। খাবার জন্য প্রতিবেলায় একটা পোড়া রুটি আর নুন দেওয়া হয়। প্রথম প্রথম না খেলেও পড়ে ক্ষুদার চোটে ওগুলই খায়। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আদিত্য ডাক্তার এনে ওকে ঠিক করে। তবুও ছেড়ে দেয়না।

আদিত্য ওর লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই লোকটা এক বালতি গরম পানি নিয়ে এলো। আদিত্য মগে করে গরম পানি নিয়ে রিপার মুখে ছিটে মারলো। সাথে সাথে রিপা চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠে বসলো। সামনে তাকিয়ে আদিত্যকে দেখে ভয়ে ওর কলিজা ধড়ফড়িয়ে উঠলো। আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
….কেমন আছেন মিস রিপা? আমার লোকজন আপনার ঠিকমতো খেয়াল রাখছে তো? যতই হোক শালিকা বলে কথা। আপনার খেদমতে কোনো কমতো চাইনা আমি।

রিপা এবার কেদে উঠে হাত জোড় করে বললো।
…প্লিজ এবার ছেড়ে দিন আমাকে? আর কতো শাস্তি দিবেন আমাকে? প্লিজ দয়া করুন আমার ওপর।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….দয়া করবো তোর ওপর? তুই কি দয়া করেছিলি আমার প্রাণপাখীর ওপর? যখন ও তোর কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চাইছিল, তখন তুই দয়া করেছিলি ওর ওপর? তাহলে আমি কিভাবে তোর ওপর দয়া করবো? তখন তোর মনে ভয় ছিলনা যে তুই কার কলিজায় হাত দিচ্ছিস? এর পরিনাম কতকাল ভয়াবহ হতে পারে? তুই যদি আমাকে কিছু করতি , তাহলে হয়তো তোকে শুধু পুলিশে দিয়ে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।আমার প্রাণপাখীকে মারার চেষ্টা করেছিস।তোর জন্য এতটা দিন নূর আমার কাছ থেকে ওকে দূরে থেকেছে। যাকে এক মিনিট না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই,তাকে এতটা দিন না দেখে আমার মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। তাহলে তুই ভাবলি কি করে এতকিছুর পর তোকে আমি ছেড়ে দেব?

….তা তাহলে আমাকে মেরে ফেলুন। এই নরকের চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আপনি আমাকে মেরে ফেলুন।

…এতো সহজে না। মৃত্যু তোর জন্য অনেক ছোট শাস্তি। তোকে এভাবে তিলে তিলেই ভুগতে হবে। তুই না বাঁচতে পারবি,না মরতে পারবি। তুই আমাদের পাঁচ পাঁচটা মাস ধরে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করিয়েছিস। সেখানে তোর তো মাত্র চারমাস হয়েছে। আগে পাচ মাস পুরা হোক, তারপর ভেবে দেখবো তোর সাথে কি করবো। তোকে মেরে ফেলবো, নাকি তোকে পুলিশের হাতে দিয়ে দেব। ততদিনের জন্য বাই বাই মিস রিপা। এনজয় ইউর লাইফ।
কথাটা বলে আদিত্য চলে যেতে নিয়ে আবার রিপার সামনে ফিরে এসে বললো।
….একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, যারা যারাই আমার প্রাণপাখীকে কষ্ট দিবে আমি তাদের কাওকে ছাড়বো না। কাওকে না।
কথাটা বলে আদিত্য চোখে সানগ্লাস পরে চলে গেল।
_________

সন্ধ্যা ৭টা।
আদিত্য একটু আগেই অফিস থেকে এসেছে।বেডে বসে শার্ট খুলছে। নূর রুমের মিনি ফ্রিজ থেকে ওর জন্য ঠান্ডা পানি আর আইস বেড় করে আদিত্যের পাশে এসে বসলো। হঠাৎ আদিত্যর ফোনটা বেজে উঠল। আদিত্য ফোন বের করে দেখলো তাসির ফোন করেছে। আদিত্য ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো।

এটা দেখে নূরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। নূর একটা আইস কিউব নিয়ে আদিত্যের শার্টের ভেতর দিয়ে দিল। আচমকা এমন হওয়ায় আদিত্য লাফিয়ে উঠে মুখ দিয়ে শব্দ করতে লাগলো।
…..উহু হু হু হু,,

আদিত্যের এমন আওয়াজ শুনে তাসির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
….ছি ছি আদি এসব কি আওয়াজ বের করছিস? আর এমন সময় কেউ ফোন ধরে?

আদিত্য বলে উঠলো।
….শাট আপ ইডিয়ট। এমন কিছুই না। তুই কবে থেকে আবিরের মতো ফালতু জোক মারা শুরু করলি?

তাসির হেসে উঠে বললো।
…আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। বায়, আমি রাখছি এখন।

আদিত্য ফোন রেখে নূরের দিকে তাকালো। নূর বুঝতে পারছে এখন ওর খবর আছে। তাই ও সুর সুর করে উঠে দৌড় দিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা, আদিত্যও পেছন থেকে দৌড়ে যেয়ে নূরকে ধরে ফেললো। নুরকে কোলে নিয়ে এসে বেডের ওপর ফেলে দিয়ে নূরকে বেডের সাথে সাথে চেপে ধরে বললো।
….কোথায় পালাচ্ছ হুম? তুমি না আজকাল অনেক দুষ্টু হয়ে গেছ। জানো তাসির কিসব উল্টো পাল্টা ভাবছিল?

নূর বাচ্চাদের মতো মুখটা কিউট করে বললো।
…. সরিইই আর হবে না।

…উহু, সরি বললেতো হবে না। তুমি তখন আমার গায়ে বরফ দিয়েছ। এবার আমার পালা।
কথাটা বলে আদিত্য ট্রে থেকে এক টুকরো আইস কিউব নিয়ে, প্রথমে নূরের কপালে লাগালো। সাথে সাথে নূর ঠান্ডায় কেঁপে উঠল। আদিত্য আইস কিউব টা নূরের কপাল থেকে স্লাইড করে নাকের ওপর দিয়ে ঠোঁটের ওপর আনল। তারপর ধীরে ধীরে গলা বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলো। আদিত্য নূরের ওপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেলে, পেট আর নাভির ওপর দিয়েও আইস কিউব ঘুরাতে লাগলো। নূর আরও কেঁপে উঠল। নূরের নাভিতে বরফের পানি যেয়ে জমলো। আদিত্য মুখ নামিয়ে নাভিতে জমে থাকা সব পানি চুষে খেয়ে ফেললো। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের চুল খামচে ধরলো। আদিত্য চুমু খেতে খেতে উপরের দিকে আসতে লাগলো। আদিত্য নূরের ঠোটের কাছে এসে ঠোঁটে চুমু খেতে যাবে তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে হইচই এর শব্দ এলো।

ওরা দুজনই চমকে উঠে বসলো। আদিত্য কি হয়েছে দেখার জন্য উঠে দরজা খুলতে গেল। নূরও তাড়াতাড়ি নিজের শাড়ি ঠিক করে, আদিত্যর পিছু পিছু গেল।
বাইরে এসে দেখলো সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। সানাকে দেখে আদিত্য ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…হয়েছেটা কি? সবাই এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে কেন?

সানা বলে উঠলো।
…..আরে ভাইয়া তানি ভাবির লেবার পেইন শুরু হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি উনাকে হসপিটালে নিতে হবে।

আদিত্য বলে উঠলো।
…ওকে ওকে, তুই আবিরকে বল জলদি তানিকে নিয়ে নিচে আসতে। আমি এখুনি বের করছি।

সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া।

একটু পরে আবির তানিকে নিয়ে এসে গাড়ির পেছনের সিটে বসলো। তানিকে শুইয়ে দিয়ে মাথাটা নিজের কোলে রাখল আবির। তানি ব্যাথায় চিৎকার করছে, আর আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আদিত্য গাড়ি চালাচ্ছে, আর নূর ওর পাশের সিটে বসে আছে। তানির জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে ওর। পরিবারের বাকি সদস্যরাও পেছনে অন্য গাড়িতে আসছে।

আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….এইতো আরেকটু সময় লাগবে। ততক্ষণ একটু ধৈর্য ধরো তুমি। সব ঠিক হয়ে যাবে।

তানির এইসময় আবিরের শান্তনা বানিও অসহ্য লাগছে। তানি ব্যাথায় আর্তনাদ করতে করতে রাগী কন্ঠে বললো।
….আহহ, ধৈর্য ধরবো? ধৈর্য ধরবো আমি? ব্যাথা আমার হচ্ছে না তোমার হচ্ছে? নিজে একবার এই ব্যাথা সহ্য করে দেখ কেমন লাগে? আইছে লেকচার দিতে। আহহ এই এইসব তোমার জন্য হয়েছে। তুমি করেছ আমার এই অবস্থা। এখন আরামে বসে আমাকে লেকচার দিচ্ছ?

….দিস ইস নট ফেয়ার তানি। তুমিই বাচ্চার জন্য আমার মাথা খাচ্ছিলে। তাড়াতাড়ি করে বিয়ে করালে এই বাচ্চার জন্য। যাতে ভাবির আগেই তুমি বাচ্চা নিতে পারো। আর এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল।

….চুপপ চুপ একদম কথা বলবে না। তোমার দোষ মানে দোষ। আর কোনো কথা বলবে না তুমি। আহহ,,

আদিত্য আবিরকে ধমক দিয়ে বললো।
….শাট আপ আবির তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি? এমন সময় ওর সাথে তর্ক করছিস? আরে তানির এখন হুঁশ নেই ও কি বলছে। তাই ওর কথা গায়ে নিস না। ও এখন ব্যাথার যন্ত্রণায় এসব আবোল তাবোল বলছে।

আবির মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। বিশ মিনিট পর ওরা হাসপাতালে এসে পৌঁছাল। তানিকে স্ট্রেচারে করে ভেতরে নিয়ে গেল। ডক্টরকে আগেই ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই সবকিছু রেডিই আছে। তানি আবিরের হাত ধরে বললো।
….দেখ তুমি কিন্তু আমার সাথেই থাকবে। একদম আমাকে একা ছাড়বে না।

আবির বলে উঠলো।
…কিন্তু আমাকেতো ভেতরে আসতে দিবে না।

আদিত্য বলে উঠলো।
…সমস্যা নেই এই হসপিটালের মালিক আমার পরিচিত। আমি কথা বলে নিব। তুই তানির সাথেই যা।

আবির মাথা ঝাকিয়ে, একটু পরে তানিকে নিয়ে ওটিতে ঢুকলো। বাকি সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।

একটু পরে ডক্টর আসলো। ডক্টর দরজা খুলতেই পায়ের নিচে থাকা তারের সাথে বেজে ঠাসস করে ফ্লোরে উবুত হয়ে পড়ে গেল। আবির দৌড়ে এসে ডক্টরকে টেনে তুলে বললো।
….আপনি ঠিক আছেন ডক্টর?

ডক্টর আবিরকে বললো।
…..আরে আপনি এখানে কি করছেন? আপনার তো ডেলিভারি হবে। আপনি শুয়ে পড়ুন বেডে।

ডক্টরের কথায় আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কি বলে এই লোক? আমার ডেলিভারি?
তখনই একজন নার্স দ্রুত এসে নিচে পরে থাকা চশমাটা উঠিয়ে ডক্টরের চোখে দিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….ডক্টর আপনিও না চশমা ছাড়া কিছু চোখেই দেখেন না। পেশেন্ট উনি না, উনার ওয়াইফ মিসেস তানি।

ডক্টর বলে উঠলো।
….পানি? এই সময় তোমার এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে?

নার্স বিরক্তির সুরে বললো।
….পানি না তানি তানি। ওফ্ফ আপনার বোধহয় কানের মেশিনটাও পড়ে গেছে।
কথাটা বলে নার্সটা নিচে এদিক ওদিক তাকিয়ে কানের মেশিন খুঁজে এনে ডক্টরের কানে লাগিয়ে দিল।

এসব দেখে আবির বেচারার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। এ কেমন ডক্টর?
ওদিকে তানি ব্যাথায় চিল্লিয়েই যাচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি তানির কাছে এগিয়ে গেল।

ডক্টর তানির কাছে এসে, তানিকে চিল্লাতে দেখে,একদম শান্ত সুরে যোগ গুরুদের মতো করে বললো।
….নো মাই চাইল্ড, নো ভায়োলেন্স। চিল্লা চিল্লিতে কোনো কাজের সমাধান হয়না।জীবনে সবসময় আমাদের মনকে শান্ত রাখতে হবে। যাই হয়ে যাকনা কেন আমাদের কখনো উত্তেজিত হওয়া যাবে না। ধৈর্যের সাথে কাজ করতে হবে।

ডক্টরের কথাবার্তা শুনে তানিতো রাগে কটমট করছে। ইচ্ছে করছে এইডারে এখুনি লাথি মেরে উগাণ্ডায় পাঠিয়ে দিতে। তানি দাত কিড়মিড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো।
….এই কার্টুন পিচ কোথাথেকে ধরে নিয়ে এসেছ? কি বলছে ছাগলের মতো? তাড়াতাড়ি কিছু করো, নাহলে আমি কিন্তু এই ডক্টরের বাচ্চাকে খুন করে ফেলবো?

আবির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….তুমি টেনশন নিও না আমি দেখছি।
আবির ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..ডক্টর এসব ছাড়ুন না। আপনি প্লিজ কাজ শুরু করুন না জলদি?

ডক্টর বললো।
….,এটাও আমার কাজেরই একটা অংশ। রোগীকে শান্ত না করে কাজ কিভাবে করবো? তাই আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
ডক্টর আবার তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….দেখুন আপনি শান্ত হন। আমকে দেখুন, আমি যেভাবে করছি সেভাবে করুন। জোরে একটা নিঃশ্বাস টেনে নিন, আবার ধীরে ধীরে ছাড়ুন। ব্রিথ ইন,ব্রিথ আউট। ব্রিথ ইন,ব্রিথ আউট।

তানি আর সহ্য করতে পারলোনা। একেতো ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তারওপর এই ডক্টরের ফালতু প্রবচন শুনে রাগে তানির মাথার রগ ফেটে যাচ্ছে। তানি দুই হাতে ডক্টরের কলার টেনে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে রাগী কন্ঠে বললো।
….এই ডক্টরের বাচ্চা কি বলছিস এসব হ্যাঁ?ক্ষ্যাতা পুরি তোর শান্ত হওয়ার। শান্ত হবো? মজা চলছে এখানে? আমি এখানে যন্ত্রণায় মরছি আর তুই যোগগিরি শুরু করে দিয়েছিস? তাড়াতাড়ি আমার বাচ্চা বের কর, নাহলে এখুনি তোকে জীবনের মনে শান্ত করে দেব।

অবস্থা বেগতিক দেখে আবির আর নার্সরা মিলে ডক্টরকে তানির কাছ থেকে টেনে ছারাল। ডক্টর ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে লাগলো। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ইনহেলার বের করে মুখে লাগিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
…..এ এমন কেউ করে? জানেন আমি হার্টের পেশেন্ট? তিনবার করে সার্জারী করেছি। এখন যদি আমার কিছু হয়ে যেত তখন?

আবির বলে উঠলো।
….সরি সরি ডক্টর। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আসলে ও ব্যাথায় এমন করছে। প্লিজ আপনি আপনার কাজ শুরু করুন।

ডক্টর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি দেখছি।
কথাটা বলে ডক্টর তানিকে চেক-আপ করতে নিলেই, হঠাৎ ডক্টরের ফোন বেজে উঠল। ফোন দেখেই ডক্টর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। কাঁপতে কাঁপতে তড়িঘড়ি করে ফোন ধরে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ বলোনা বেবি কি হয়েছে? আমি বাসার সব কাজ করে দিয়ে এসেছি। ঘর মুছেছি,থালাবাসন ধুয়েছি, কাপড় কেচেছি, তারপর তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেখে এসেছি। তুমি খেয়ে নিও কেমন? তুমি চিন্তা করোনা আমি এসে তোমার পা টিপে দেব কেমন? আমি এখন রাখি? আসলে আমি এখন ওটিতে আছিতো। ওকে বাই বাই বেবি।
ফোনটা কেটে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

এসব দেখে তানি আর আবির দুজনেই বিরক্তির চরম পর্যায়ে। আবির বলে উঠলো।
….এসব কি ডক্টর? ওটিতে কেউ ফোন ইউস করে? আপনি ফোন বাইরে রেখে আসেননি কেন?

ডক্টর করুন সুরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
….কি করবো ভাই? আমি যদি ফোন রিসিভ না করি,তাহলে আমার যে দজ্জাল বউ।সোজা এই ওটিতেই চলে এসে আমারই অপারেশন করে ফেলবে। কি বলবো দুঃখে কথা, আমার বউ কোনো বউ না। সে একটা লেডি ভ্যাম্পায়ার। সবসময় তার ধারাল দাঁত বের করেই থাকে, আমার রক্ত চুষে খাওয়ার জন্য।
কথাগুলো বলে ডক্টর বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিল।😭

এদিকে আবির বিরক্তির চরম পর্যায়ে। তানিতো পারছেনা ডক্টরের মাথা ফাটাতে। কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো ও। এখন ওর আর ওর বাচ্চার কি হবে?
আবির বলে উঠলো।
….ডক্টর আপনার দুঃখের কাহিনি পড়ে শুনবো। আপনি প্লিজ আমার স্ত্রীকে দেখুন না?

ডক্টর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…হুম দেখছি আমি।
কথাটা বলে ডক্টর তানিকে চেক করতে লাগলো। হঠাৎ ডক্টর ফ্লোরে পড়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এটা দেখে আবির ঘাবড়ে গেল। এর আবার কি হলো?

একটা নার্স এসে তাড়াতাড়ি ডক্টর কে একটা বড়ি খাইয়ে দিল। একটু পরে ধীরে ধীরে ডক্টর ঠিক হয়ে গেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….সরি ফর ডিস্টাবেন্স। আসলে আমার ম্রিগি রোগ আছে তো।তাই মাঝে মধ্যে জেগে যায়। ইটস ওঁকে। এখন আমি ঠিক আছি। লেটস কন্টিনিউ।

আবির বলে উঠলো।
….ডক্টর এমন কোনো রোগ কি আছে। যা আপনার নেই। আমারতো মনে হয় পুরো দেশেও এতো রোগ নেই। যত রোগ আপনার মাঝে আছে।

ডক্টর মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক রোগ। তাইতো আমার মা বাবা আমাকে ডক্টর বানিয়েছেন। যাতে আমার এতো রোগের জন্য অন্য ডাক্তার কে টাকা দিতে না হয়।

তানি এবার চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….তোমরা এসবই করবে, নাকি আমাকেও দেখবে?

ডক্টর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…জ্বি জ্বি অবশ্যই, এখুনি দেখছি। ডক্টর তানিকে দেখে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ বাচ্চা পজিশন মতো চলে এসেছে। আপনি একটু জোরে জোরে পুশ করুন।

আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…পুশ করো তানি, পুশ করো।

তানি জোরে জোরে পুশ করতে লাগলো। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তানির। এদিকে আবির শুধু বারবার বলেই যাচ্ছে।
…পুশ করো তানি, পুশ করো।

তানি অসহ্য হয়ে রাগে আবিরের গালে একটা চড় মেরে দিয়ে বললো।
…কি বারবার একই কথা বলছ? করছিতো? এখন কি হাতুড়ি দিয়ে ঠেলা দিব নাকি?

আবির বেচারা গালে হাত দিয়ে চুপ করে উঠলো। তানি এবার জোরে পুশ করলো। একটু পরেই বাচ্চার কান্নার শব্দ এলো। ডক্টর বাচ্চা কোলে নিয়ে বললো।
….কংগ্রাচুলেশন আপনাদের ছেলে হয়েছে।

আবির আর তানি খুশিতে কেঁদে ফেলে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পরে বাচ্চাকে পরিস্কার করে এনে আবির আর তানির কোলে এনে দিল। আবির বাচ্চার কপালে চুমু খেয়ে, তারপর তানির কপালে চুমু খেয়ে বললো।
…ধন্যবাদ তানি আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড়ো খুশি দেওয়ার জন্য।

ডক্টর বাইরে এসে সবাইকে খুশির সংবাদ দিয়ে দিল। সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো। নূর খুশিতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আবিরের বাবা পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতরণ করলো।

একটু পরে তানিকে কেবিনে শিফট করা হলো। সবাই কেবিনে এলো বাবু দেখার জন্য। সবাই এক এক করে বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করলো। নূরও এসে বাবুকে কোলে নিল। তানি মুচকি হেসে বললো।
…দেখ নূর তোর জামাই কিন্তু চলে এসেছে। এখন আমার বউমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।

তানির কথায় নূর লাজুক হেসে আদিত্যের দিকে তাকালো। কিন্তু আদিত্য কোনো রিয়্যাকশন দিলনা।

দুই দিন পড় তানি আর বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।

চলবে……