ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব-১২+১৩

0
404

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অয়ন দেখতে পায় গাড়ি থেকে অর্পা নেমে আসছে। অয়ন অর্পাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। এতো সকাল সকাল অর্পা হঠাৎ করে তার বাড়িতে! বিষয়টা একটু ঘটকা লাগছে তার। অয়ন নিজের মতো করে নাস্তা শেষ করতে লাগলো

— মিস্টার অয়ন চৌধুরী, অনেক তো খাবার খেলেন। এইবার চলুন আপনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।

পুলিশ ইন্সপেক্টর এর ব্যঙ্গ করা কথা গুলো অয়নের কানে পৌচ্ছোতেই অয়ন একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ইন্সপেক্টরকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এতো সকাল সকাল থানায় যাবো কেনো অফিসার? রাতে বুঝি ঘুম হয়নি? এতো সকাল সকাল কাউকে বিরক্ত না করলেই নয়।

অয়নের কথা শুনে ইন্সপেক্টরের ভিশন রাগ হলো। ইন্সপেক্টর রেগে আগুন হয়ে অয়নের শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো

— রাতে তোরা কুকীর্তি করতে পারিস আর আমরা সকাল সকাল আসলেই দোষ!

— এই ইন্সপেক্টর শার্টের কলার থেকে হাত সরিয়ে কথা বল। তোর যা কথা আছে সব শুনবো কিন্তু শার্টের কলার একদম টাচ করবি না।

অয়নের রাগি কন্ঠস্বর শুনেই অফিসার করার ছেড়ে দিলো। অয়ন শার্টটা ঠিক করে অফিসারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। অধরা ও অয়নের বাবা মা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারো মাথায় ঢুকছে না পুলিশ কেনো বাড়িতে এলো। অয়ন অর্পার দিকে তাকিয়ে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই বার বলুন সমস্যা কি? কোন অভিযোগ পেয়ে আপনারা একদম দল বেঁধে আমার বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন? আমার অফিসিয়াল কাগজ পত্র গুলো তো একদম ঠিক আছে। তবে কেনো এলেন?

— আপনার নামে ধর্ষণের অভিযোগে আছে। গতকাল রাতে আপনি প্রচন্ড মদ্য পান করে মিস অর্পার উপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছেন। মিস অর্পা গতকাল রাতেই আপনার নামে এফ আই আর করে এসেছে। তার স্টেটমেন্টের উপর ভিত্তি করে আপনাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

অফিসারের কথা শুনে অয়ন বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতে অয়নের প্রায় যায় এমন অবস্থা। অয়নের‌ হাসি দেখে সবাই বেশ কৌতুহল পূর্ণ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন হেসে হেসে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো

— আহা এমন ভাবে যদি যার তার মিথ্যে অভিযোগের উপর ভিত্তি করে গ্রেফতার করতে চলে আসেন। তবে তো কাস্টরিতে লোক রাখার জায়গার কম পরে যাবে।

— হেঁয়ালি না করে আমাদের সাথে চলুন মিস্টার অয়ন চৌধুরী।

— উহু! আমি তো যাবো তবে থানায় না অফিসে। আগে আমায় বলুন মিস অর্পা যে অভিযোগ আমার উপর ধার্য করেছেন। তার কোনো সত্যতা যাচাই করেছেন কি?

— জ্বি মিস্টার অয়ন চৌধুরী। আপনার কুকীর্তির ভিডিও ফুটেজ আছে আমাদের কাছে। আর তার থেকেও বড় প্রমান হলো আপনার স্ত্রীর জবান বন্দী। আপনার স্ত্রী আমাদের ক্লিয়ার করেছে যে আপনার শুধু মাত্র অর্পার সাথে নয় আরো বহু নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক আছে। আপনি ভালোবাসার প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে থাকেন। এমনটা আপনার স্ত্রী নিজে আমাদের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন।

অফিসারের কথা গুলো অয়নের কানে পৌঁছাবার সাথে সাথে বুকটা দুমরে মুচড়ে উঠলো। অধরার দিকে অয়ন দৃষ্টিপাত করতেই অধরা অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল

— স্যার, অয়ন যাই করে থাকুক তা ভুল করেছে। প্লিজ অয়নকে কঠিন সাজা দিবেন না। অয়নকে ভালো হয়ে যাবার একটা সুযোগ দিন প্লিজ! কাল রাতে আমি অয়নের শার্টের উপর কিছু লিপস্টিকের দাগ দেখতে পাই। অয়ন অনেক নারীর প্রতি আসক্ত ছিলো। সেটা আমার অনেক আগে থেকেই জানা ছিলো। কাল রাতে অর্পা আমায় কল করে সবটা বলে। একজন নারীর হয়ে অন্য নারীর এতো বড় সর্বনাশ কি করে নজর আন্দাজ করি আমি? সে আমার স্বামীই হোক না কেনো। অপরাধের সাজা পাওয়া আবশ্যক। অয়ন আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি তোমার বিপক্ষে সব সত্যি অফিসারকে বলে দিয়েছি। অফিসার তোমাকে সুধরে নেয়ার একটা সুযোগ দিবে। প্লিজ! আমায় ক্ষমা করে দিও।

*অধরার কথা গুলো অয়নের কানের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলো না। কথা গুলো সজোরে এসে অয়নের বুকে আঘাত করলো। অয়নের চোখের কোনে আচমকা নোনা জল চলে এলো। অধরার দিকে তাকিয়ে অয়ন মৃদু হাসি দিয়ে মনে মনে বলতে লাগলো “নিজেকে এতোটা বাজে ভাবে তোমার সামনে প্রেজেন্ট করেছি যে আজ সত্যি মিথ্যে কোনটাই তোমার চোখে পরছে না। আজ মিথ্যে টাই তোমার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে। কিন্তু অধরা একটাবার তো ভেবে দেখতে আসলে আমি কাউকে ধর্ষন করতে পারি কিনা? ভাবো নি হয় তো। আর ভেবেও কিছু করার নেই। নোংরা জীব দ্বারা সব কিছু সম্ভব। অয়ন চোখের উপর হাত রেখে মুখটা মুছে নিলো। আসলে চোখের জল আড়াল করার প্রচেষ্টা করলো সে। অধরাও চোখের জল ফেলছে। অর্পা অধরাকে শান্তনা দিচ্ছে। পুলিশ অফিসার অয়নকে আর সময় দিলো না। হ্যান্ডকাফটা হাতে পরিয়ে দিতেই অয়ন তার মা বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— বাবা আসছি আমি। তোমারা সত্যি ব্যর্থ হয়েছো নিজেদের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে। আমি চলে যাচ্ছি তবে একটা অনুরোধ করছি তোমাদের কাছে অধরাকে তোমরা কিছু বলবে না। ওর জায়গায় অন্য যে কেউ থাকলে এমনটাই করতো‌। অধরা আমাকে ভালোবাসে। ও চায় আমি ভালো হয়ে ফিরে আসি। ওর সাথে বাজে ব্যবহার করো না তোমরা। অনুরোধ করছি তোমাদের কাছে। আর অধরা মা বাবা খেয়াল রেখো। যদি নিজের বাড়ি চলে যেতে চাও মেতে পারো। আর একটা কথা নিজের খেয়াল রেখো। ভালো থাকবে। আসছি।

অয়নের কথা শেষ হতেই পুলিশ অয়নকে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যায়। অয়নের বাবা মা ভিশন কান্না করছে। সন্তান যদি অপরাধী ও হয় তবুও বাবা মা এর কাছে সন্তানের কোনো অপরাধ থাকে না। অয়ন কে থানায় নিয়ে আসার পরে কাস্টরিতে রাখার হলো। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আরো পরে করা হবে।

— উফফ! কি খেলা টাই না খেললে সোনা। উম্মা! তোমাকে তো অভিনয়ের জন্য অস্কার দেয়া উচিৎ। উফফফ! একটা শর্টে অয়নের খেলক্ষতম। আর অধরার মতো একটা নির্বোধ গাঁধী কিন্তু অয়নের পাশে এমনিতেই শুট করে না। অয়ন যতটাই চালাকা ওর বউ ততটাই গাঁধী। খুব সহজেই তোমার ফাঁদে পা দিয়ে দিলো।

অভ্রর কথা শুনে অর্পা মুচকি হেসে বলল

— অতটাও বোকা না। ওকে যেমন ভাবে বুঝিয়েছি ও ঠিক তেমনি বুঝেছে ঠিক‌। কিন্তু কতটা সুন্দর করে আমার হয়ে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। উফফফ! সত্যি বলছি মাইরি মেয়েটা এতোটা এক্টিভলি কাজটা করেছে যে পুলিশকে না অয়নকেও চমকে দিয়েছে। অধরাকে মন থেকে একটা থ্যাংক্স দেয়া উচিৎ। আজ ও পাশে না থাকলে আমি কখনও সফল হতে পারতাম না। একদম।

— হুম তা ঠিক বলেছো। এখন অয়নের সাধের বিজনেস আমার হাতের মুঠোর মধ্যে।

— একদম না। আমাদের হাতের মুঠোয়। অয়নের প্রপার্টি আমাদের দুজনের।

— জ্বি। তবে অয়নের কি হবে? ওকে না তুমি ভালোবাসো!

— আগে সব কিছু নিজের হাতে আনি। তারপর অয়নকে জেল থেকে নিয়ে আসবো। অয়ন যখন ফিরে এসে দেখবে তার সব কিছু শেষ। তখন মরিয়া হয়ে আমার পিছন পিছন ঘুরবে। আমি তখন অয়নকেও পাবো আর ওর প্রপার্টিকেও।

— হুম।

অভ্র আর অর্পা নিজেদের প্লান সাকসেসফুল হওয়াতে মনের খুশিতে ড্রিংক করে ইনজয় করতে লাগলো।

— মা আমাকে ভুল বুঝবেন না। অয়ন একটা নির্দোষ মেয়ের সাথে যা করেছে তার সাজা অয়নকে পেতেই হতো। অয়ন আমার স্বামী। আপনার সন্তানের জন্য আপনার কষ্ট হচ্ছে। আমারো তো কষ্ট হচ্ছে নিজের স্বামীর জন্য। প্লিজ! মা আপনি মুখে কিছু তুলুন।

— নারে মা। তোমাকে ভুল বুঝি নাই আমি। আমার মন বলছে আমি আমার সন্তানকে এই শিক্ষা দেই নাই। ও নির্দোষ। দেখো একদিন সবটা সবার সামনে আসবে। সত্যি লুকানো থাকে না।

— জ্বি।

অধরা অয়নের মাকে খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজের রুমে আসলো। আজকে এই রুমটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। অয়নের কথা ভিশন মনে পরছে আমার। মানুষটাকে একটু বদলানোর চেষ্টা করতে আমি আজ একা হয়ে গেলাম। অয়ন কেমন আছে? কি করছে? বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে ওকে দেখে আশার। কিন্তু কি করবো? একটা নারীর প্রতি অন্যায় আমি কি করে করতে পারি? অয়ন কেনো অর্পার সাথে ওমনটা করেছে? শুধু কি অর্পা! আরো কতজন নারী ওর জীবনে ছিলো তার হিসেব নেই। অয়নের এই সাজাটাই পাওয়া উচিত। কিন্তু এই বোবা মন যে তা মানছে না। বড্ড কষ্ট হচ্ছে অয়নের জন্য।

* রাতের দিকে অয়নের কাস্টরিতে পুলিশের প্রবেশ ঘটে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। পুলিশ কাস্টরিতে প্রবেশ করতেই অয়ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অয়ন পুলিশকে দেখে কোনো প্রকার ঝামেলা করলো না। একদম শান্ত গলায় অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অফিসার যা প্রশ্ন করার তারাতাড়ি করো।

— একদম। আগে সত্যি বের করার ঔষধ টা তো দিয়ে দেই।

কথাটা শেষ করতেই অফিসার অয়নের হাত পা বেঁধে ফেলতে লাগলো। অয়ন বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো অফিসারকে

— এসব কি? আমি তো নিজের অপরাধ মেনে নিয়েছি। তবে এসব কেনো? আর প্রাথমিক…..!

অফিসার অয়নকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয়া হলো না। একটা রুল দিয়ে ইচ্ছে মতো আঘাত করতে লাগলো অয়নের শরীরে। অয়ন আঘাত গুলো নিশ্চুপ হয়ে গ্রহন করছে। হাত পা বাঁধা। কোনো ভাবেই অয়ন নিজেকে সেভ করতে পারছে না। আঘাত এর এক পর্যায়ে অয়ন সবাইকে অবাক করে দিলো। অয়ন………………………

#চলবে…………………….

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৩
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
আঘাত এর এক পর্যায়ে অয়ন সবাইকে অবাক করে দিলো। অয়ন বসে থাকা অবস্থায় নিজের সেন্স হারিয়ে ফেললো। অয়নকে সেন্স লেস অবস্থায় দেখে অফিসার একটু বিচলিত হয়ে পরলো। অফিসার কনস্টেবলকে উদ্দেশ্য করে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো

— এই দেখতো বেঁচে আছে কি না!

— স্যার, এতো বিচলিত হচ্ছেন কেনো? এর মতো জানোয়ার মরে গেলেই বা কি?

কনস্টেবলের কথা শুনতেই অফিসার চিৎকার করে বলে উঠলো

— এ মরে গেলে আমাদের ফাঁসিয়ে যাবে। সাধারন জিজ্ঞাসা বাদের সময় অপরাধীর মৃত্যু! না,না। এখনি ডক্টরকে ডাকতে হবে। তোমরা ডক্টরকে ডেকে আনো। আমি অর্পা ম্যামকে বিষয়টা জানিয়ে আসি।

অফিসারের কথাটা শেষ হতেই কনস্টেবল বেশ অবাক হয়ে যায়। আপন মনে চিন্তা করতে লাগলো কনস্টেবল “এই অয়ন চৌধুরীর বিষয় মিস অর্পাকে কেনো জানাতে হবে? তবে কি এই অয়ন চৌধুরী নির্দোষ! স্যার কি মিথ্যে মামলা দিয়ে অয়ন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে”? কনস্টেবলের ভাবনার অবকাশ ঘটে অন্য এক কনস্টেবলের ডাকে।

— এই দেখ এই রেপিস্টটা মরে নাই। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে শুধু। স্যারকে ইনফ্রম করে আয়।

— আচ্ছা যাচ্ছি।

কনস্টেবল দৌড়ে চলে যায় অফিসারকে ইনফ্রম করতে।

— এই যে শুনছেন! আমি অয়ন চৌধুরীর সাথে দেখা করতে এসেছি।

অধরার মৃদু কন্ঠে কনস্টেবলের কানে ভেসে আসতেই কনস্টেবল অধরাকে উদ্দেশ্য করে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলল

— রাত কি রাস্তায় পার করে এসেছেন? কি চাকরি মাইরি একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেয় না! এখন দেখা করা যাবে না। আসতে পারেন।

— স্যার, প্লিজ! আমি আমার স্বামীকে একটু দেখতে চাই। প্লিজ!

অধরার কথা শেষ হতেই কনস্টেবল নিজের মাথার টুপিটা ঠিক করে অবাক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে বলল

— আপনি তার স্ত্রী! আপনার অভিযোগেই তো আপনার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে?

— জ্বি। প্লিজ আমাকে অয়নের সাথে দেখা করতে দিন।

— জ্বি আসুন।

*কনস্টেবল অধরাকে নিয়ে অয়নের কাস্টরির সামনে চলে আসে। অয়নের কপালে, নাকচ, ঠোঁটের উপর রক্ত শুকিয়ে লেগে আছে। অয়ন ফ্লোরে পরে আছে নিশ্চুপ হয়ে‌। অধরা অয়নকে এমন অবস্থায় দেখবে তা আশা করতে পারেনি। অধরা এক দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের জলে ভারি হয়ে আসছে অধরার চোখের পাতা। “অয়নের আঘাত গুলো দেখে আমার মনের মধ্যে ভিশন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে? ঐ পরে থাকা লোকটা তার পাপের সাজা পেয়েছে। ঐ পরে থাকা লোকটা আমায় ঠকানোর সাজা পেয়ে মুখ থুবড়ে পরে আছে ফ্লোরে। আমার বলা সত্যি কথার জন্য আজ ঐ লোকটার এই অবস্থা। আমি কেনো কষ্ট পাচ্ছি? কি জন্য আমার বুকটা দুমরে মুচড়ে যাচ্ছে? আমি তাকে ভালোবাসি তা ঠিক তবে আমি তো চাই সে তার কর্মের সাজা পাক। তবে কেনো আমার কষ্ট হচ্ছে? ইচ্ছে করছে কেনো ঐ নর্দমার কীটটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলি সহ্য হচ্ছে না তোর কষ্টটা। আমায় ক্ষমা করে দিস। কেনো এমন হচ্ছে আমার কেনো”? আপন মনে কথা গুলো বলছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অধরা। অধরার চোখের সামনে যেনো কালঝ মেঘ জমে আসছে। অয়নকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। কনস্টেবল অয়নের পা দিয়ে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো

— এই ওঠ দেখ তোর সাথে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।

অয়ন শরীরের সব শক্তি দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই অয়ন মুখ থুবড়ে পড়ে‌‌ যায় মাটিতে। অয়ন পরে যেতেই অধরা‌ ছলছল দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে অয়নের নাম ধরে ডেকে উঠলো। অয়ন মুখ ঘুরিয়ে তার প্রিয়জনের চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিলো। অতঃপর আবারও চেষ্টা করতেই অয়ন সম্পূর্ণ ঠিক ভাবে না উঠে দাঁড়াতে পারলেও কোনো মতে অধরার সামনে দাঁড়ালো অয়ন। এক পা এর হাড় ভেঙ্গে গেছে অয়নের। অয়ন অধরার চোখ বরাবর এক দৃষ্টিতে দৃষ্টিপাত করে আছে। অধরার ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ বদলে বেশ শব্দ করে কান্নায় রূপ নিলো। অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে মৃদু হেসে বলল

— আরে কাঁদছো কেনো? দেখো দেখো কাউকে ঠকালে বা কারো উপর অন্যায় করলে কেমন সাজা পেতে হয়।

— অয়ন আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য তোমাকে আজ…!

— চুপ করো অধরা। আমি একটি বার ও তোমায় দোষারোপ করেছি? আমি নিজের এর জন্য দায়ী। বাদ দাও আমার কথা। এতো সকালে এখানে এসেছো! বাবা মা ঠিক আছে তো?

— হুম। বাবা মা ঠিক আছে। খুব অসহায় লাগছিলো আমার। তাই তোমাকে দেখতে এসেছি।

— আরে ধূর পাগলি আমাকে দেখার কি হলো? আর এসো না। আরে বেশি দিন লাগবে না। আমি খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবো। দেখে নিও।

* অয়ন অধরার সাথে কিছু সময় কথা বলার পর অধরাকে চলে যেতে বলল। অধরা চলে যেতেই অয়ন নিজের জায়গায় গিয়ে আবার বসে পরলো। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে শরীরে। প্রত্যেকটা আঘাত শরীরের মধ্যে এক অদ্ভুত জ্বালা তৈরি করেছে। এখানকার লোকেরা বড্ড নির্দয়। একটু ঔষধ ও লাগাতে দিলো না আমায়। এদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিয়তি আজ এখানে এনেছে। এগুলো আমার জন্য স্বাভাবিক।

অয়ন বসে আছে ফ্লোরে। হঠাৎ করে অয়ন লক্ষ্য করলো অফিসার আবার কাস্টরিতে প্রবেশ করছে। অয়ন অফিসারের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অফিসার কর্কশ গলায় বলে উঠলো

— উঠে পর মিস অর্পা তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।

— কেনো? আমার সাথে কি দরকার? আমি দায় স্বীকার করে নিয়েছি তো। আর কী?

— এতো কথা কেনো বলেছিস? দেখা করে নে। চল ওঠ।

— সরি অফিসার। আমি কারো সাথে দেখা করতে বাধ্য না। তাছাড়া যাকে রাত ভোর ধর্ষণ করলাম। সে এখন এখানে এসে আমার সাথে কি জন্য দেখা করতে চায়? সরি ওর চরিত্র ধুয়ে পরিষ্কার করার মতো ক্ষমতা আমার নেই।

অয়ন কথাটা শেষ করতেই অফিসার অয়নের চুল গুলো শক্ত করে চেপে ধরলো। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অফিসার অয়নের কানে ফিসফিস করে বলতে লাগলো

— যদি না দেখা করিস তবে ১৬০° দেয়া হবে আবার। ভালোয় ভালোয় দেখা করে নে। আমার মাথা গরম করিস না।

অফিসার অয়নকে ছেড়ে দিয়ে কনস্টেবল কে বলল অয়নকে জোর করে পাশের রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কনস্টেবলরা জোর করে অয়নকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। পাশের রুমে যেতেই অয়ন দেখতে পায় অর্পা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন আসতেই অর্পা অয়নের দিকে তাকিয়ে থ মেরে দাঁড়িয়ে যায়। এতোটা টর্চার অয়নকে দেয়া হবে তা হয়তো অর্পার ধারণার মধ্যে ছিলো না। অর্পা অফিসারকে চিৎকার দিয়ে ডাকলো। অফিসার দৌড়ে অর্পার সামনে আসতেই অর্পা অফিসারের গলে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

— ঠাসসসসস! তোর সাহস তো কম না। আময় অয়নকে এতোটা কষ্ট দিতে কে বলেছে তোকে? তোকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি। সবাইকে যেতে বল। অয়নের সাথে আমার পার্সোনাল কথা আছে।

অর্পার কথা মতো অফিসার সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। অর্পা অয়নের দিকে এগিয়ে এসে অয়নের ঠোঁটের উপর আলতো করে স্পর্শ করে। অয়ন নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে অর্পার অভিনয়টা দেখছে। অর্পা মৃদু কন্ঠে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— অনেক কষ্ট হচ্ছে তোমার! এই জন্যই বলেছি আমাকে আপন করে নাও। বিশ্বাস করো কোনো কষ্ট হবে না তোমার। এক সাথে বাকিটা পথ চলো আমরা।

অয়ন একটু বাঁকা হাসি দিয়ে অর্পাকে উদ্দেশ্য করে ব্যাঙ্গ কন্ঠে বলল

— আহহহ তাই সোনা। একটু আপন করে নিলেই হবে। তাই তো! আর কত আপন হতে চাও? এতো সুন্দর করে ধর্ষণ করলাম তাও বলো আপন করে নেই নি। সেড। ভেরি সেড।

— শার্ট আপ অয়ন। সত্যিটা তুমিও জানো আর আমিও জানি। এতোটা অহংকার কিসের তোমার? আরে ঐ মেয়েকে নিয়ে পরে আছো! যে তোমার সাথে সংসার করেও তোমায় চিনতে পারলো না। তোমার এগেইনস্টে গিয়ে মিথ্যেকে সত্যি বলে চালিয়ে দিলো। তার পক্ষে কথা বলা বিবেকবান মানুষের পরিচয় নয়।

— হুম। আমাকে গাধা মনে হয় তোমার? এতো সুন্দর অভিনয় করো তা আমায় মানতেই হবে। তবে একটা কথা আমি তোমার কথা মতো অধরাকে ভূলে তোমায় আপন করে নিবো এটা ভূল করেও ভেবো না। এতো দিন ভাবতাম তুমি হয়তো ভালোবাসো আমায়। তাই এসব পাগলামি করছো। কিন্তু আজ বিশ্বাস করি তোমার মতো একটা নোংরা মেয়ের ভালোবাসা কেমন? বাই দ্যা ওয়ে এখন আসতে পারো। তোমার অভিনয় দেখার মতো সময় আমার নেই।

— ঠিক আছে। চেয়েছিলাম তোকে আর কষ্ট দিবো না। কিন্তু না তুই নিজেই যখন কষ্টকে আপন করে নিয়েছিস তবে তাই হোক। আসছি।

অর্পা হনহন করে থানা থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন বেশ শব্দ করে হেসে উঠলো। হাস্যজ্বল কন্ঠে অয়ন বলে উঠলো “গতকাল সকালেই তোর মুখোশটা আমি খুলে দিতাম। কিন্তু আফসোস চাইনি অধরাকে ভূল প্রমানিত করতে। অধরাকে কষ্ট দিয়েছি তার সাজা আমায় পেতেই হবে। তাই মাথা পেতে দায় স্বীকার করে নিয়েছি। আমি আগেও তোর সাথে ছিলাম না। আর আজ ও নেই”।

*অর্পা চলে যেতেই অয়নের কাস্টরিতে অফিসার প্রবেশ করলো। অফিসার রুল তুলে অয়নের ভাঙ্গা পা এ আঘাত করতেই অফিসারের পিছন থেকে………………………..

#চলবে…………………….