ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৫০

0
388

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫০

জাইফার ঘুম ভাঙলো কারো কারো গভীর নিঃশ্বাস মুখে পরায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো তার প্রিয়তমর দিকে। উবুড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে রাদ। একহাতে জাইফার কোমড় জড়িয়ে ধরা। মুচকি হাসলো জাইফা। কোন দিন ও ভাবতে পারে নি রাদ ওকে এতোটা কাছে টেনে নিবে। এতটা আদর এতোটা ভালোবাসা কিনা ওর কপালে ছিলো ভাবতেই চোখে পানি চলে এলো জাইফার। আস্তে করে উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। রাদের ও ঘুম ভেঙে গেল। জাইফাকে পাশে না পেয়ে কপাল কুচকে ডাক দিলো,

— জাইফা!

জাইফা মাত্রই ভিজা টাওয়ালটা শুকাতে দিতে ব্যালকনিতে গিয়েছিলো। রাদের ডাক শুনে দৌড়ে রুমে ডুকে বললো,

— কি হয়েছে?

— কোথায় ছিলা?

— ব্যালকনিতে।

— কাছে এসো।

জাইফা কাছে বসতেই রাদ ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে মুখ গুজে দিলো পেটে। কেঁপে উঠল জাইফা। রাদ ঐ ভাবেই বললো,

— আমার কাছাকাছি থাকবে সবসময়। ঠিক আছে?

— হুম।

________________

সকাল থেকেই তোর জোর চলছে পুরো বাড়িতে। ছেলেরা যদিও জারাকে আগে দেখেছে তবুও আজ দেখে কথা পাকাপোক্ত করে একেবারে আন্টি পরিয়ে যাবে। যেহেতু ছেলে আবার আমেরিকা ব্যাক করবে তাই সবকিছু তারাতাড়ি সারতে চাইছে। জারাকে জিজ্ঞেস করাতে ও মত দেয় নি আবার অমতও প্রকাশ করে নি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই রোদ নিচে যেতেই জানতে পারলো আজ জারার এনগেজমেন্ট ও হতে পারে। যেহেতু ও জারাকে তেমন একটা পছন্দ করে না তাই আর ঘাটলো না এ বিষয়ে। নিজের মতো কাজ করলো। আদ্রিয়ান সহ বাকি সবাইও খেতে এসে বসলো। কথাবার্তা চললো আজকের বিষয়ে। মিষ্টিকে খায়িয়ে রোদ কিচেনে ডুকলো। এই ফুপি এখান থেকে উঠলে রোদ খেতে বসবে। সবাই যার যার মতো খেয়ে উঠে গেল। আদ্রিয়ান বারকয়েক ডাকলো রোদকে। শুনেনি রোদ। আদ্রিয়ানের সাথে নো কথা। শুধু শুধু এখানে আনলো। আরে ভাই ভালোকথা তোর ফুপাতো বোনের এনগেজমেন্ট তো রোদের কি? রোদ কি ভাংরা নাচবে এখানে? কত ভালো হতো ঐ বাড়ী থাকলে। নিশ্চিত রাদের বাসরে ডিসটার্ব করতো। এসব ভাবতেই হঠাৎ কারো হেচকা টানে হেলে পরলো রোদ। ভয়ে চিৎকার করার আগেই আদ্রিয়ানকে দেখে চুপ করে গেল। আদ্রিয়ান ওকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিচেনে যে কোন সময় যে কেউ আসতে পারে তাই না চাইতেও রোদ বললো,

— কি করছেন?

— রোম্যান্স করছি।

— কেউ এসে পরবে ছাড়ুন।

বলেই মোচরাতে লাগলো। আদ্রিয়ান আরো চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

— কখন থেকে ডাকছি হুম? আসছিলে না কেন?

……….

— কথা বলো।

……..

— শুনবে না আমার কথা?

— আপনি শুনেছিলেন আমার কথা?

— কি করতাম সোনা। আবার যাব তো বললাম।

— সবাই কত মজা করছে ওখানে। আর আমার কি কাজ এখানে বুঝি না আমি। শুধু শুধু ধরে বেঁধে নিয়ে আসলেন।

এমন সময় জুরাইন কিচেনে ডুকে চোখ ধরে বললো,

— সরি সরি সরি। তোমারা কন্টিনিউ করো।

আদ্রিয়ান ছেড়ে দাঁড়ালো রোদকে। গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

— যে কাজে এসেছিস তা কর।

জুরাইন চোখ মেলে তাকিয়ে মাথা চুলকে বললো,

–আসলে মামি ডাকছে ভাবীকে। ভাবী তো খেতে আসে নি।

— আসছি আমরা যা তুই।

জুরাইন চলে যেতেই আদ্রিয়ান তাকালো রোদের দিকে। রোদ চোখ কটমটিয়ে তাকালো। আদ্রিয়ান একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রোদের হাত ধরে হাঁটা ধরলো। টেবিলে বসিয়ে নিজেই খায়িয়ে দিতে লাগলো। যেহেতু জারবা, মিষ্টি আর আলিফ বাদে এখানে কেউ নেই তাই রোদ ও কিছু বলে নি। আদ্রিয়ান নিজে খেয়ে রোদকেও খায়িয়ে দিলো।

আজ যেহেতু রোদের অফ তাই রোদ কফি নিয়ে রুমে এলো। আদ্রিয়ান কফি নিতে খেতে খেতে রেডি হতে লাগলো। রোদ এগিয়ে আদ্রিয়ানের পেছনে দাঁড়িয়ে হেলান দিলো আদ্রিয়ানের পিঠে। আদ্রিয়ান আয়নায় সামনে চুল ঠিক করছিলো। ওমনি থেকেই জিজ্ঞেস করলো,

— এখনও মন খারাপ?

— উহু।

— তাহলে?

— কখন আসবেন?

আদ্রিয়ান দুষ্ট হেসে বললো,

— বউ আমাকে এতো এতো মিস করে জানতাম না।

রোদ আদ্রিয়ানের অসভ্য মার্কা কথা শুনে বিরক্ত বোধ করলো। এমনিতেই কেমন কেমন লাগছিলো এর মধ্যে এই লোক ফাইজলামি শুরু করেছে তাই সরে গেল রোদ। আদ্রিয়ান ওকে ধরে বললো,

— কি হয়েছে বললে না?

— কিছু না। তারাতাড়ি আসবেন আজকে নাহলে নিচে কিন্তু নিচে যাব না আমি।

— আচ্ছা আচ্ছা বউ হুমকি দাও কেন? ভয় পায় তো তোমার অবলা জামাই।

রোদ গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আদ্রিয়ান হেসে ওকে চুমু খেয়ে চলে গেল। রোদও কিছুক্ষন পরে চলে গেল নিচে। বাড়িতে এত্তো এত্তো কাজ ফেলে তো বাড়ির বউ হয়ে বসে থাকা যায় না। এরমধ্যে আবার সাবার শরীর অসুস্থ। কিচেন ডুকে হাতে হাতে সব কাজ করলো রোদ। ঘেমে নেয়ে উঠেছে একদম। কাজ সব শেষ করতে দুপুর ৩ টা বেজে গেল। এরমধ্যে শুধু রোদ মিষ্টিকে গোসল করিয়ে খায়িছে। জারবার সাথে এখন খেলছে মিষ্টি।জারবাও আজ কাজ করতে করতে শেষ। রোদের শাশুড়ী ও এখনও খায় নি। রোদকে বলেছেন কয়েকবার যাতে খেয়ে নেয় কিন্তু রোদ শুনে নি। শাশুড়ীর সাথেই একেবারে খাবে বলেছেন।
এমন সময় মিষ্টি এলো দৌড়িয়ে দৌড়িয়ে। রোদ একটু জোড়েই বললো,

— মিষ্টি কতবার বলেছি মা দৌড়ে নামতে না।

মিষ্টি মায়ের কাছে এসে রোদের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,

— মাম্মা ফোন।

রোদ দেখলো আদ্রিয়ান কল করেছে। রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,

— কখন আসছেন?

আদ্রিয়ান সালামের উত্তর দিয়ে বললো,

— একটু লেট হয়ে যাবে। কি করছো?

— মামনিকে হেল্প করছি কিচেনে। প্রায় শেষ।

— এতকিছু কেন করছো তুমি? মাকে ফোন দাও।

— আজব এভাবে কেন বলেন? মামনি একা একা কাজ করবে আর আমি বসে বসে দেখবো।

— খেয়েছো?

— না। গোসল করে খাব।

— রোদ মেজাজ খারাপ করবা না। কয়টা বাজে?এখনই ফ্রেশ হয়ে খাও। পরে গোসল করো।

— আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি সাবধানে আসবেন।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

কল রাখতেই দেখলো ফুপি দাঁড়িয়ে সামনে। উনি গিয়েছিলেন ছেলের জন্য রিং আনতে। রোদ চলে যেতে নিলেই ফুপি এসে বললো,

— তুমি যাও। আমি কিচেনে যাচ্ছি।

— সমস্যা নেই আমিই পারব।

বলেই রোদ কিচেনে ডুকে পড়লো। কাজ শেষ করে গোসল করে বের হতেই দেখলো আদ্রিয়ান দাঁড়িয়ে। চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে। রোদ একটা ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বললো,

— খাব এখন। চলুন আপনার সাথেই খাই।

— কয়টা বাজে?

রোদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,

— ৪ টা।

আদ্রিয়ান আর কিছু না বলে সোজা ওয়াসরুমে ডুকলো। গোসল করে টাওয়াল পেচিয়ে বেরিয়ে গেল। রোদ কিছু না বলে রুমে খাবার নিয়ে এলো। জামাই তার আজ তার মতো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। রোদ মুখ ফুলালে তো আদ্রিয়ান একটু আদর করলেই রোদ মেনে যায়। তাহলে কি রোদও একটু আদর করে দিবে? রোদের ভাবনার মাঝেই আদ্রিয়ান ড্রেস পড়ে মাথা মুছতে লাগলো। রোদ এগিয়ে এসে নিজেই মুছিয়ে দিলো। আদ্রিয়ান একটু চমকালেও কিছু বললো না। রোদ মাথা মুছিয়ে নিজেই ভাত বেড়ে মাখাতে লাগলো। আদ্রিয়ান বসতেই রোদ ওর মুখের সামনে এক লোকমা ভাত তুলে দিলো। আদ্রিয়ান ভাবে নি এমন হবে। তাই মুখ গম্ভীর করে কিছু না বলে খেয়ে নিলো। রোদ পুরোটা খায়িয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। ক্লান্ত লাগছে ওর যা আদ্রিয়ান দেখেই বুঝতে পারলো। তাই নিজেই সব গুছিয়ে রেখে আসলো। রুমে ডুকে দেখলো রোদ হেলান দিয়ে বসে আছে। আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে পাশে টেনে শুয়িয়ে দিলো। রোদ উঠে আদ্রিয়ানের গালে পরপর দুটি চুমু খেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বললো,

— আপনি আমার মতো গাল ফুলান কেন হ্যাঁ? এটা তো আমার কাজ।

……….

— আল্লাহ আমার জামাইয়ের কি হলো? সে দোখি আমার দেখা দেখি গাল ফুলায়। কথা বলে না।

বলেই হাসতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ান নিজেও হেসে ওকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— খাবার নিয়ে আর অবহেলা করো না রোদ।

— করবো না।

__________

সন্ধ্যার একটু পরই গেস্টরা চলে এলো। তারা প্রায় ৮/৯ জন এসেছেন। ছেলেটা শান্ত শিষ্ট আর ভদ্রও মনে হচ্ছে রোদের কাছে। একটা ছোট ভাইও আছে। তার সমানই হয়তো ১ বছরের ছোট হবে। রোদ তাদের সামনে যায় নি। জারাকে পছন্দ হওয়াতে সব ঠিক করে রাখাই ছিলো। রিং পরানোর সময় আদ্রিয়ান যেয়ে রোদকে নিয়ে এলো। পাত্রর মা কয়েকবার রোদকে দেখলো। পাশে বসিয়ে বাবা মার কথা জিজ্ঞেস করলো। পরিবারের কে কে আছে জিজ্ঞেস করলো। রোদও জড়তা ছাড়াই বললো সব। একটু পরই জারাকে নিয়ে আসা হলো। রিং পরিয়ে দিলো ছেলে মেয়ে দুইজন দুইজনকে। হালকা কথাবার্তা বলে খেতে নিয়ে গেল সবাইকে। এশার আজান দিয়েছে প্রায় ১ ঘন্টার বেশি তাই রোদ কিচেন থেকে একপ্লেটে খাবার বেড়ে উপরে চলে গেল। মিষ্টি আর আলিফকে একসাথেই খাওয়াতে লাগলো।

টেবিলে সব গেস্টরা খেতে বসেছে। বাকিরা এটা ওটা এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। সবাই খাওয়া শেষে অনেক প্রশংসা করলো। আবার ড্রয়িং রুমে বসতেই রোদ, সাবা আর জারবা মিলে সব মিষ্টি, দই, রসমালাই, পান সহ আরো কিছু এনে টেবিলে দিলো। রোদের হাতের ট্রেটা আদ্রিয়ান এগিয়ে গিয়ে নিয়ে রাখতেই রোদ কিচেন গেল। এমন সময় পাত্রের মা মুখ খুললেন। আদ্রিয়ানের মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— আপা আমরা তো এখন আত্মীয় হয়ে গেলাম। তাই আমি আর ওর বাবা চাচ্ছি এই আত্মীয়র সম্পর্কটা আরো জোড়ালো করতে।

আদ্রিয়ানের মা সহ বাকি কেউ বুঝতে পারলো না পাত্রের মায়ের কথা। তাই জারার মা জিজ্ঞেস করলো,

— বুঝলাম না ভাবী। কি বলতে চাইছেন?

— আপনার ভাইয়ের বড় মেয়ের জন্য আমার ছোট ছেলের হাত চাইছি ভাবী।

— বড় মেয়ে মানে?

কপাল কুচকে প্রশ্ন করলো আরিয়ান। উত্তরে পাত্রের মা বললো,

— যে মাত্র এলো। সাদা ফ্রক পড়া মেয়েটা।

সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। আদ্রিয়ানের রাগে ঘারের রগ টান টান হয়ে গেল। তবুও চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ানের বাবা তারাতাড়ি বললেন,

— না না ভাবী আপনি ভুল ভাবছেন।

— প্লিজ ভাই না করবেন না। মেয়েটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। যেহেতু এখনও ছোট তাই আপাতত নাহয় আংটি পরিয়ে যাই। পরে না হয় উঠিয়ে নিয়ে যাব আমাদের বাড়ি। আমার ছেলে তো আপনার সামনেই। দেখে নিন।

ভদ্রমহিলা একদমে সব কথা বললেন। সবাই তার কথায় হতবিহ্বল হয়ে গেল। আদ্রিয়ান ভিষণ রেগে গেল। আরিয়ান ছটফট করে বললো,

— আন্টি ভুল হচ্ছে আপনার। রোদ আমাদের বোন না। ও আদ্রিয়ানের বউ।

“আদ্রিয়ানের বউ” কথাটা যেন হজম হয় নি ভদ্রলোক ও ভদ্রমহিলার তাই আবারও জিজ্ঞেস করলো,

— কি বললা?

আদ্রিয়ানের মা বললেন,

–ভাবী জারবা আমার মেয়ে আর রোদ আদ্রিয়ানের বউ।

ভদ্রমহিলা একটু শক্ড হয়ে গেলেন। তিনি ঘূর্ণাক্ষরেও টের পাননি যে এই এতটুকু মেয়ে আদ্রিয়ানের বউ। তারমধ্য দেখেও বুঝার উপায় নেই। রোদ তো একটা লং গোল ফ্রক পড়ে মাথায় হিজাব পড়ে ছিলো। বুঝবে কি করে? ভদ্রমহিলা কোন মতে আমতা আমতা করতে লাগলেন।

আদ্রিয়ান কিছু না বলে চলে গেল সেখান থেকে। রোদ কিচেন থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে আসছিলো। হঠাৎ আদ্রিয়ানকে এমন ভাবে দেখে চমকে জিজ্ঞেস করলো,

— এখানে কি করেছেন?

— রুমে চলো।

বলে রোদের হাত ধরলো। রোদ হাত ছাড়াতে লাগলো আর বললো,

— আরে হাত ছাড়ুন। ঐখানে যাই।

আদ্রিয়ান চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,

— আর একটা কথাও না। চুপচাপ রুমে।

— আজব যেতে যেহেতু দিবেনই না তাহলে আমার বাসায়ই থাকতাম। শুধুশুধু আনলেন এখানে।

আদ্রিয়ান এবার শক্ত করে হাত ধরলো। রোদ ‘আহ” করতেই তা ছেড়ে দিয়ে আলত করে ধরে বললো,

— রোদ রুমে চলো প্লিজ সোনা। আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

আদ্রিয়ানের এমন রুপ দেখে আর কিছু বললো না রোদ। চুপচাপ ওর পেছনে রুমে ডুকলো। রুমে ডুকেই দরজা লাগিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। রোদ হিজাব খুলে ফেললো। বেডে গিয়ে বসতেই আদ্রিয়ান ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলো। রোদ কিছু না বলে আদ্রিয়ানের চুল টেনে দিলো। শান্ত হলো আদ্রিয়ান। সমস্ত রাগ পানি হয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে রোদের ঘাড়ের পিছনে ধরে নিজের দিকে ঝুকালো। রোদ ঝুঁকতেই আদ্রিয়ান ওর ঠোঁটে চুমু খেল। রোদ কিছু না বলে নিজেও একটা চুমু খেয়ে বললো,

— কি হয়েছে আপনার?

— ভালোবাসি রোদ।

রোদ মুচকি হাসলো। এর উত্তর ও অতিশীঘ্রই দিবে আদ্রিয়ানের জন্মদিনে।

____________

গেস্টরা চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ। রোদও খেয়ে রুমে আসলো। এমন সময় আদ্রিয়ানের কল আসায় আদ্রিয়ান একটু পরে আসবে বলে বেরিয়ে গেল। মিষ্টি আজ জারবার রুমে গেলাতে গিয়েছিলো। রোদ ওকে ওখানেই ঘুম পারিয়ে দিয়েছিলো। আদ্রিয়ান আসলে নিয়ে আসবে। ড্রেস চেঞ্জ করে রুমে এসে বই নিয়ে যেই না বই নিয়ে বসলো ওমনি জারা নক করে বললো,

— রোদ আসবো?

— জ্বি আপু আসুন।

— তোমার সাথে জরুরি কথা ছিলো।

— বলুন।

— রোদ আমি আদ্রিয়ানকে ভালোবাসি।

— হ্যাঁ তো?

জারা ভাবে নি রোদ এমন উত্তর দিবে। তাই বললো,

— ও তোমাকে ভালোবাসে না রোদ।

— উনি আমায় ভালোবাসে আপু। আপনি এখন আসতে পারেন।

— ও তোমাকে বিয়ে করেছে শুধু মাত্র অনিমার দেয়া ওয়াদা পূরণ করার জন্য। আর কিছু না।

— উনি আমায় ভালোবাসে আপু। আমি আপনার কথা বিশ্বাস করি না।

–তুমি জিজ্ঞেস করো সবাইকে। আমি মিথ্যা বলছি না। অন্তত কোন মৃত ব্যক্তির নামে মিথ্যা বলবো না আমি।

— আপনি জান আপু। কিছু শুনতে চাই না আমি।

— তুমি ওকে ছেড়ে দাও রোদ। তুমি কোন দিন ও ওকে পূর্নাঙ্গ ভালোবাসা দিতে পারবে না। তুমি তো জানই ও বাচ্চাদের কত আদর করে।

জারার কথার মানে বুঝলো না রোদ। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে জিজ্ঞেস করলো,

— কি বলতে চাইছেন?

— তুমি তো দিন মা হতে পারবে না রোদ। জানই তো।

রোদ হা হয়ে গেল জারার কথায়। এমন সময় জারবা ডুকে বললো,

— জারাপু কি সব বলছো? চুপ থাক।

জারা অবাক কন্ঠে বললো,

— কেন জারবা। আমি তো মিথ্যা বলছি না। রোদ কখনো মা হতে পারবে না।

বলেই নিজের ফোন বের করে ঐ দিনের রোদের ফাইল বের করে দেখালো। যেটাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে রোদের কন্ডিশন। রোদ পুরাই থ হয়ে গেল। নিজের এত বড় একটা সত্যি এভাবে জানতে পেরে কি বলবে ভেবে পেল না। আদ্রিয়ান কখনো মিথ্যা বলবে না জানে রোদ। যে পর্যন্ত আদ্রিয়ান না বলবে বিশ্বাস করবে না রোদ। এরমধ্যেই জারা আবার রোদের হাত ধরে বললো,

— রোদ প্লিজ আদ্রিয়ানকে ছেড়ে দাও। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। ও তোমার সাথে সুখী হবে না।

রেগে গেল রোদ। আকস্মিক কান্ড ঘটিয়ে ফেললো। ঝামটা মে’র জারার হাত সরিয়ে দিয়ে সজোরে থাপ্পড় মেরে বসলো। জারা সহ জারবা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রোদ নিজেও অবাক হলো। কি করে ফেললো ও। জারা কিছু বলার আগেই রোদের ফোন বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ঘাম ছুটে গেল রোদের। কাউকে কিছু না বলে বোরকা পড়ে উরনা পেচিয়ে নিলো। বের হতে হতে আদ্রিয়ানকে কল করলো যা রিসিভ হয় নি। কাউকে কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে নামতে লাগলো রোদ। নিচে কেউ ছিলো না তাই রোদ দৌড়ে বেরিয়ে গেল। জারবা অনেক ডাকলেও শুনেনি রোদ। সিএনজিতে উঠে পরলো।

জারবা আদ্রিয়ানকে কল করলো। রিসিভ হয় নি। তারাতাড়ি আরিয়ানের কাছে গেল। আরিয়ান সব শুনে ভয়ে ঘামতে লাগলো। এই রোদ না আবার কিছু উল্টো পাল্টা করে ফেলে। এমন সময় আদ্রিয়ান বাড়ি ফিরলো। রুমে ডুকে দেখলো আরিয়ান, সাবা, জারবা বসে আছে। রোদ নেই দেখে কপাল কুচকে বললো,

— কি করছিস এখানে। রোদ কোথায়?

আরিয়ান এগিয়ে এসে বললো,

— রোদ সব জেনে গিয়েছে আদ্রিয়ান। বাসায় নেই ও।

— মানে?

জারবা সব খুলে বললো। ধপ করে বসে পরলো আদ্রিয়ান। কি হয়ে গেল এই এতটুকু সময়ে? মাত্র না সব ঠিক ছিলো? রোদ কোথায় গেল? ও কি আর আসবে না? ভাবতেই বা চোখ গড়িয়ে পানি পরলো এক ফোটা। জীবনটা কেমন অগোছালো হয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

— আদ্রিয়ান চল। এতো রাতে কোথায় গেল ও।

আদ্রিয়ান উঠতে চেয়েও পারলো না। হাত পা আজ যেন সায় দিচ্ছে না চলার। ঠাই বসে রইলো আদ্রিয়ান।

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫০(বর্ধিতাংশ)

আদ্রিয়ানের সকল অঙ্গ নিমেষেই চলতে সায় দিলো যখন সাবা বললো,

— আদ্রিয়ান রাত ১০ টার উপরে বাজে। কোথায় গেল রোদ?ওর বাসায় ফোন দাও।

এত রাতে রোদ একা বাইরে ভাবতেই গা শিউরে উঠলো আদ্রিয়ানের। জারবা তো বললো, রোদ কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বেরিয়েছিলো। না আর ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। নিজের ফোনটা হাতে নিলো। অন করতেই রোদের ৬/৭টা কল এসেছিলো। রোদ তাহলে ওকে কল করেছিলো?
কোথায় গেল রোদ? উঠে দাঁড়িয়ে গেল আদ্রিয়ান। রোদকে কল করলেও ওপাশ থেকে উত্তর এলো,”আপনার কল দেয়া নাম্বারে এ মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়”।
এবার ভয়ে হাত কাঁপতে লাগলো আদ্রিয়ানের। রাদকে কল করারও সাহস পেল না।
__________________

একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছে রোদ। এমন কিছু হয়ে গিয়েছিলো ও মোটেও ভাবে নি। রাদ, জাইফা সহ রোদের মা, বাবা মিলেও শান্ত করতে পারলো না রোদকে। রোদের একপ্রকার হিচকি উঠে গেল কাঁদতে কাঁদতে। সামনেই বেডে শুয়ে আছে রুদ্র। এক পায়ে ব্যান্ডেজ করা। হাতে ও ছিলে গিয়েছে। মাথায় ছোট্ট একটা ব্যান্ডজ। সাইকেল থেকে পরে গিয়েছে ও। বন্ধুদের সাথে রেস করতে গিয়ে এ কাজ হয়েছে।
তখন দিশা রোদকে কল দিয়ে বলেছিলো রুদ্র সাইকেল এ এক্সিডেন্ট করেছে তাই তো রোদ কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসেছিলো। ওকে দেখে ভুত দেখার মতো চমকে গিয়েছিলো বাসার সবাই। তাও আবার এলোমেলো রোদ একা এতো দূর রাতে কিভাবে এলো? আদ্রিয়ানই বা ওকে একা কিভাবে আসতে দিলো? রোদ যতটুকু না ভেবেছিলো তার থেকে বেশিই আহত হয়েছে রুদ্র। দুই ভাই ওর কলিজার টুকরা। ছোট্ট রুদ্রটা একটু বেশি। কোন ভাই-বোনের একজন বড় বোন মানেই হলো আরেকজন মা। রুদ্রকে রোদ ঠিক ততটাই ভালোবাসে। রুদ্র আর রাদও কম না। রুদ্র নিজের ছিলে যাওয়া গাল প্রসারিত করে হাসতে হাসতে বললো,

— আপু ভালোই হলো এক্সিডেন্ট করে তুমি এসে পরলা।

রোদ রুদ্রর ভালোহাতে একটা চপড় মে’র বললো,

–আলুর দমের বাচ্চা তোকে আমি লুচি ছাড়া খাব।

রুদ্র বোনকে ক্ষ্যাপানোর জন্য বললো,

— আপু তাহলে ও আব্বু আর আম্মু ও আলুর দম।

নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেল রোদ। তবুও কেঁদে যাচ্ছে। রুদ্র নিজের মাথাটা আলগোছে পাশে বসে থাকা বোনের কোলে রাখলো। রোদ কেঁদে কেঁদেই ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। অনেকক্ষণ কেঁদে শান্ত হলো রোদ। রুদ্র ঘুমানোর আগে শুধু বললো,

— আপু আজ যেও না। আমার সাথে থাক প্লিজ।

ভাইয়ের এই আবদার কি আর ফেলতে পারে রোদ? রাদ আর জাইফা ও বসে আছে রুমে। রাদ রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— তুই একা কেন এসেছিস রোদ? আদ্রিয়ান বা অন্য কেউ ছিলো না?

— উনি তো বাসায় ছিলো না আর ফোন ও রিসিভ করছিলো না। বাসায় সবাই যার যার রুমে ছিলো তাই তো আমি একাই চলে আসলাম।

— এটা মোটেও ভালো করিস নি রোদ। রাত কয়টা বাজে হিসাব আছে তোর?

— আর হবে না। তোমারা যাও আমি আছি এখানে।
আর শুনো রুদ্রর সাইকেলটা ভেঙে ভাঙারি ওয়ালাকে দিয়ে দিও।

চমকে তাকালো রাদ। আশ্চর্য হয়ে বললো,

— সত্যি!

— হুম।

রোদ নিজে টিউশনি করে আর নিজের জমানা টাকা দিয়ে রুদ্রকে এই সাইকেলটা দিয়েছিলো ২ বছর আগে। রুদ্র প্রায় কান্না করতো সাইকেলের জন্য কিন্তু বাবা আর রাদ শর্ত দিয়েছিলো পরিক্ষায় সব সাবজেক্টে এ প্লাস থাকলেই দিবে। রুদ্রর সেবার সমাজ আর বাংলায় প্লাস আসে নি। তাই সাইকেল ও পায় নি। রোদ ভাইয়ের মন খারাপ দেখে প্রমিজ করেছিলো সে নিজে কিনে দিবে। আজ নাকি বলছে ঐ সাইকেল ভাঙারিকে দিতে?
রাদ আর জাইফা অনেকক্ষণ গল্প করে চলে গেল। রোদ এই রুমেই থাকবে। ওরা যেতেই রোদের মনে পড়ে জারার বলা কথাগুলো। এই চিন্তায় যেন সব ভুলে গিয়েছিলো। আদ্রিয়ান না বলা অবদি রোদ কিছু বিশ্বাস করবে না তবুও চোখে দেখা প্রমান দেখে ব্রেন কি আর না মেনে থাকতে চায়?

_________________

রুদ্রকে বালিশে শুয়িয়ে রুমে এলো রোদ। এমন সময় ওর মা রুমে ডুকলো। রুদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। রোদ মায়ের সামনে এসে বসলো। ওর মার দিকে একঝাক প্রশ্ন নিয়ে তাকালো। যদি এময় কিছু হয়েই থাকে যা জারা বললো তা নিশ্চিত ওর মাও জানে। ভাবতেই ডাকলো,

— আম্মু।

ডাকটা যেন কেমন লাগলো মিসেস রহমানের। মেয়ের গলার স্বরটা যেন কেমন লাগলো। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,

— বল মা।

— একটা প্রশ্ন ছিলো?

— কর।

— প্রমিজ করো সত্যি বলবা। তুমি না বললেও আমি সত্যি বের করতে পারব আম্মু।

রোদের মা আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করলো,

— ক..কি হয়েছে?

— আমি কোনদিন মা হতে পারবো না। এটা সত্যি তাই না মা?

রোদের মায়ের বুকটা ধক করে উঠলো সাথে দরজায় দাঁড়ানো রাদের। রোদ মায়ের বিষন্ন মুখ দেখে হয়তো নিজের উত্তর পেয়ে গিয়েছে তবুও মন মানতে নারাজ। উত্তর ও শুনতে চায়। তাই আবার জিজ্ঞেস করলো,

— বলো মা?

মিসেস রহমানের চোখ গলিয়ে পানি পরলো। রাদ নিজেকে শাক্ত করে ভিতরে ডুকে বললো,

— কি সব বলেছিস তুই? পাগল হয়েছিস?

— পাগলই তো ছিলাম যে এতোকিছু হওয়ার পরও টের পেলাম না ভাইয়া। এবার আল্লাহর ওয়াস্তে সত্যি বলো।

রাদের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। রোদ কিভাবে কথা বলছে?নিজেকে শান্ত করে রোদের হাত ধরে বললো,

— এমন কিছু না রোদ। ট্রিটমেন্ট হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

— আমি ট্রিটমেন্টের কথা জানতে চাই নি। জানতে চাচ্ছি হুট করে আমাকে একদিনে বিয়ে দেয়ার কারণটা কি? আমি মা হবো না এই জন্যই বুঝি উনি আমায় বিয়ে করলেন?

রাদের মা জিজ্ঞেস করলো,

— তোর কেন মনে হচ্ছে আমরা একদিনের দেখায় তোকে বিয়ে দিয়েছি?

— মানে?

— তুই যেদিন রাতে বাসা থেকে পালিয়ে রাতে মিষ্টিকে দেখতে গিয়েছিলি ঐ দিনই আমি জেনেছি সব। ইয়াজ সাথে ছিলো বলে কিছু বলি নি এছাড়াও নিজের সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাস আমার আছে। পরে জানতে পারি সব। তুই ঐ রাতে বাসার ফেরার পরই তোর বাবাকে সব জানাই। এরপর খোঁজ খবর নেই আদ্রিয়ানের। নিজের মেয়ে প্রতিদিন কার কাছে যাচ্ছে তা বাবা-মা হয়ে না জেনে তো আর বসে থাকবো না।

রোদ সব শুনলো মনোযোগ দিয়ে। নিজেকে শক্ত করে বললো,

— আমি মা হতে পারবো না বলেই দয়া করে বিয়ে করেছে আমায়?

রোদের মা চমকে তাকিয়ে বললো,

— তোর মাথা ঠিক আছে রোদ? আদ্রিয়ানের মতো ছেলে তোর বাবার পায়ে ধরে ভিক্ষা চেয়েছিলো তোকে। আমার হাত ধরে বারবার বলছে, ‘মা ওকে আমাকে দিন আমি ওর খেয়াল রাখব।’ নিজের মানসম্মান ভুলে তোকে পাওয়ার জন্য ঐদিন আকুতি মিনুতি করেছিলো আদ্রিয়ান।

রাদ এবার বললো,

— ও নিজে তোর ট্রিটমেন্ট করাচ্ছে রোদ। তুই জেনে যদি ভেঙে পরিস তাই তোকে বলতে নিষেধ করেছে আর লুকিয়ে রেখেছিলো। ও তোকে অনেক ভালোবাসে রোদ। নাহলে আমরা এতটা নিশ্চিত হয়ে তোকে ওখানে বিয়ে দিতাম না। আমি যদিও পরে জেনেছি তাই নিজের মতো খোঁজ নিয়েছিলাম। ও নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে রোদ।

রোদের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরলো। রাদ বোনকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করলো। এমন সময় কল আসায় রোদের চোখের পানি মুছিয়ে কপালে চুমু খেয়ে রিসিভ করলো,

— হ্যালো।

— হ্যালো রাদ। রো..রোদ কি তোমাকে ক..কল দিয়েছিলো?

আদ্রিয়ানের এমন ভয় জড়ানো ভাঙা কন্ঠে ভরকে গেল রাদ। ব্যাস্ত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে?

আদ্রিয়ান এবার ভেঙে পরলো। শ্বাস থমকে বললো,

— ও চলে গিয়েছে রাদ। সব জেনে গিয়েছে। ও আর আসবে না। আর আসবে না। আমি কি করব রাদ?

বলতে বলতেই যেন আদ্রিয়ানের বুকে ব্যাথা অনুভব হলো। রাদ ওকে আশ্বাস দিয়ে বললো,

— ও বাসায়।

“ও বাসায়” শব্দটা যেন আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যে ঝরটাকে একেবারে শান্ত করে দিলো। ফোন কেটে আরিয়ানকে বলে রওনা হলো রোদের বাসায়।
রোদ নিজেকে সামলে নিয়েছে। যতটা কষ্ট লাগার কথা ততটা হয়তো ওর লাগেনি। মা হওয়ার আগেই মিষ্টি ওকে মাতৃত্বের স্বাদ পায়িয়েছে। আদ্রিয়ানের ভালোবাসা ওকে প্রতি পদে পদে মনে করায় কতটা ভাগ্যবতী ও। লোকটা পাগলের মতো ভালোবাসে ওকে। একটু এদিক ওদিক হলেই ধমকাবে। একথা ভাবতেই মনে পরলো আদ্রিয়ানের কথা। আদো কি আদ্রিয়ান জানে রোদ এখানে? নিজের ফোন হাতে নিতেই দেখলো ফোন অফ হয়ে আছে।
নিজের রুমে গেল রোদ। বোরকাটা খুলে অন্য একটা টিশার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে চেঞ্জ করে নিলো।

আদ্রিয়ান কিভাবে ড্রাইভ করেছে ও নিজেও জানে না। ২০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল রোদের বাড়ি। রাদ দরজা খুলে দিলো। আদ্রিয়ান কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বললো,

— রোদ ওর রুমে।

দৌড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলো। বুকটা ধক ধক করছে। কি করবে রোদ? আদ্রিয়ানকে ফিরিয়ে দিবে? রুমে ডুকে দেখলো রুমে কেউ নেই। এমন সময় রোদ ওয়াসরুম থেকে বের হলো। এলোমেলো আদ্রিয়ানকে দেখে বুক মোচড়ে উঠলো। তারাতাড়ি ওর কাছে এসে হাত ধরে বললো,

— কি হয়েছে আপনার? এমন লাগছে কেন?

কিছু বললো না আদ্রিয়ান। ঝাপটে ধরলো রোদকে। রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো আদ্রিয়ান। এতটা শক্ত করে ধরে আছে যে রোদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও কিছু বললো না রোদ। সময় দিলো শান্ত হতে। নিশ্চিত এই লোক রোদকে না পাওয়ায় এমন অস্থির হয়ে আছে। নিজের হাত আদ্রিয়ানের পিঠে রাখলো রোদ। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,

— শান্ত হন। ঠিক আছি আমি।

— উহু। যেও না প্লিজ রোদ।

— কোথায় যাব আমি?

………

— দেখি সরুন। আপনি এমন কাঁপছেন কেন? কি হয়েছে আপনার?

আদ্রিয়ানকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসালো রোদ। ঘেমে একাকার আদ্রিয়ান। রোদ তা মুছিয়ে পানি খাওয়ালো আদ্রিয়ানকে। একটু শান্ত হয়েছে আদ্রিয়ান। রোদের চোখে পানি ভরে আছে। কি হয়েছে আদ্রিয়ানের ভাবতে পারলো না। আস্তে করে আদ্রিয়ানের টিশার্ট খুলে দিলো রোদ। পুরো ঘেমে গিয়েছে। এসির রিমোট নেয়ার জন্য উঠতেই হাত ধরে অসহায় চোখে তাকালো আদ্রিয়ান। রোদ ঝুকে আদ্রিয়ানের কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— এসির রিমোট নিচ্ছি। ঘেমে গিয়েছেন আপনি।

আদ্রিয়ান হাত ছাড়লো। রোদ এসি অন করে আদ্রিয়ানের পাশে এসে ওকে শুয়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান এখনো কথা বলতে পারছে না। রোদ আদ্রিয়ানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রাখলো। নিমিষেই সকল ভাবনা এলোমেলো হয়ে গেল আদ্রিয়ানের। রোদ একটু উচু হয়ে আদ্রিয়ানের একগালে হাত রাখলো আরেক হাত রাখলো আদ্রিয়ানের চোখে। নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের ঠোঁটে। এতটা কাছে আজ প্রথমবার এলো রোদ আদ্রিয়ান কি আর থেকে থাকার পাবলিক? নিজের একহাত দিয়ে রোদের চুলের পেছনে খামচে ধরলো। সমস্ত ভয়, আতঙ্ক, ভালোবাসা, আবেগ যেন ঝড়ে পরলো এই ছোঁয়ায়। রোদ ছাড়াতে চাইলেও ছাড়লো না আদ্রিয়ান। অনেকক্ষণ পরে ছাড়তেই রোদ ধপ করে আদ্রিয়ানের বুকে শুয়ে পরলো। জোরে জোরে শ্বাস নিলো। আদ্রিয়ান ওকে ধরে উঠিয়ে পাশে রাখা পানির গ্লাস রোদের ঠোঁটের সামনে ধরতেই ঢক ঢক করে তা পান করলো রোদ।
আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আদ্রিয়ান বললো,

— আমাকে ভুল ভেবো না রোদ।

— আমি কেন ভুল ভাববো?

— জারা….

আর কিছু বলার আগেই রোদ বুঝলো আদ্রিয়ানের এমন বিহেভিয়ারের কারণ। আদ্রিয়ানের কথা থামিয়ে দিয়ে বললো,

— আপনি আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি। আর বাকি রইলো অন্য সব কথা। তা ভুলে জান। আপনি কি ভাবে ভাবলেন কেউ এসে বললেই আমি আমার জামাই তাকে দিয়ে দিব। মগের মুল্লুক নাকি?

আদ্রিয়ান ভাবে নি রোদ এতটা সহজ থাকবে। নিজেই জড়িয়ে ধরলো রোদকে। সারা মুখে চুমু খেয়ে বললো,

— আমাকে কখনো ভুল ভেবো না রোদ।

— কিন্তু আপনি তো ঠকে গেলেন।

আদ্রিয়ান না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,

— মানে?

— এই যে আপুর ওয়াদা পূরণ করার জন্য আমাকে বিয়ে করলেন। অন্য কেউ হলে নিশ্চিত এক জাতীর জনক হতে পারতেন।

বলে হেসে উঠলো রোদ কিন্তু আদ্রিয়ানের তা মোটেও হাস্য মনে হলো না। ক্ষেপে গিয়ে বললো,

— উল্টো পাল্টা কথা বলবে না রোদ।

— সত্যি বললাম।

আদ্রিয়ান চেপে ধরে বললো,

— ওয়াদা পূরণ করার হলে তা অনেক আগেই পূরণ করা হতো রোদ। তোমার প্রতি আমার অনুভূতি জন্মেছিলো তাই তোমাকে নিজের করে নিয়েছি। ভালোবাসি বউ।

রোদ কিছু না বলে আদ্রিয়ানের বুকে মিশে রইলো। অনেকক্ষন পরে বললো,

— একটু ছাড়ুন। রুদ্রকে দেখে আসি।

— এতরাতে ওকে কি দেখবে?

— কি দেখবো মানি? এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর।

আতকে উঠে আদ্রিয়ান বললো,

— কি বলো? কখন?

— সন্ধ্যায়। কিন্তু আমি জেনেছি রাতে। তাই তো একাই চলে আসলাম। আপনার কল রিসিভ হচ্ছিল না।

আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো রোদ কেন এসেছে এখানে। দুই জনই রুদ্রর রুমে গেল। রোদ বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে আর আদ্রিয়ান পাশের কাউচে। দুজন দু’জনের দিকে তাকিয়ে রইলো বাকিটা সময়৷ বেশ কিছু সময় পর ঘুমিয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ানও শেষ রাতে ঘুমিয়ে গেল।

#চলবে…….