ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব-১৬+১৭

0
481

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৬+১৭

অর্ষাসহ বাকি সবাই ক্লাসে ঢোকে।প্রথম ক্লাসই ইরহামের।অর্ষা ক্লাসে ঢুকতেই কিছু মেয়ে এসে অর্ষাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,,,

—“এই অহনা এই মেয়েকে কি দেখে বিয়ে করলো বল তো ইরহাম স্যার।ইরহাম স্যার কতো হ্যান্ডসাম তার সাথে এই মেয়ে।মোটেও মানায় না।”

অহনা মেয়েটা নাক সিটকে বলে,,
—“ঠিক বলেছিস রিয়া।আমার মনে হয় এ ইরহাম স্যারকে পটিয়ে বিয়ে করেছে”

অর্ষার দিকে তাকিয়ে রিয়া বলে,,,
—“কিভাবে পটালে স্যারের মতো সুদর্শন পুরুষকে”

রুশান রেগে যায়।কিছু বলবে তার আগেই অর্ষা ওকে থামিয়ে বলে,,,,

—“ইরহাম স্যার আমাকে কি দেখে পছন্দ করেছে এটা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বুঝেছো আর আমি কাউকে পটায়নি আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়েছে।স্যারের সাথে আমাকে মানিয়েছে কিনা তা তোমাদের দেখতে কেউ বলেনি।নিচু মন মানসিকতার মেয়ে মানুষ”

অর্ষা কথা বলেই নিজের সিটে গিয়ে বসলো।মেয়েগুলো রাগে ফোসফাস করতে করতে নিজের সিটে গিয়ে বসে।বন্ধু মহলের সবাই গিয়ে বসে পরে।সবাই মেয়েগুলোর উপর ক্ষুদ্ধ হলেও অথৈ বেশ খুশি ছিলো।অথৈ রুশানের পাশে বসতে চাইলেও রুশান মুহিব আর নাইমের পাশে বসে।অথৈ কটমট চোখে তাকায়।
ইরহাম অর্ষার বলা প্রতিটা কথা শুনেছে।ইরহামের প্রথমে মেয়েগুলোর কথা শুনে রাগ উঠেছিলো তবে অর্ষার বলা কথাগুলোতে রাগ কিছুটা কমেছে।

ইরহাম দু মিনিট পরই ক্লাস এ ঢোকে।সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।ইরহাম সালাম দিয়ে সবাইকে বসতে বলে।তারপর সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

—“তোমরা সবাই হয়তো জেনেছো গত শুক্রবার আমার আর অর্ষা আহমেদ ইনাজের বিয়ে হয়েছে।বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হয়েছে আমাদের।সো নেক্সট টাইম আমি যদি দেখি আমার ওয়াইফকে কেউ অপমান করছে তাহলে তার শাস্তি কিন্তু প্রচন্ড ভয়ানক হবে”

অর্ষাসহ মুহিব,রুশান,উশা নাইম এমনকি অথৈও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ক্লাসের সবাই কম বেশি জানে যে ইরহাম অর্ষাকে পছন্দ করে না।ইরহামের এরূপ কথা শুনে মেয়েগুলোর মন আরেকবার ভাঙলো।ইরহাম এবার রুশানকে দাঁড় করিয়ে বলল,,,

—“মি রুশান স্টান্ড আপ।আপনি ক্লাস করেন না কেনো?

রুশান দাড়িয়ে আমতা আমতা করে বলে,,,
—“স্যা…..র আসসসলে আআআসলে”

—“আসলে নকলে বাদ দিয়ে কারণটা বলুন”

—“ইয়ে মানে স্যার আসলে ঘুম থেকে উঠতে লেট হয় বলে করা হয় না”

ইরহাম রেগে যায়।সে রুশানকে ধমক দিয়ে বলে,,,

—“আপনার ফালতু লেইম এক্সকিউজ রাখুন নেক্সট টাইম এমন হলে আপনার শাস্তি অনেক ভয়াবহ হবে।আর আপনাকে ডেইলি আমি ক্লাসে চাই।সিট ডাউন”

রুশান ধপ করে বসে পরে।অথৈ ইরহামের দিকে কটমট করে তাকায়।আর বিড়বিড় করে বলে,,

—“আপনাকে আমি ছাড়বো না স্যার আমার রুশানকে অপমান করা আমিও দেখো নেবো আপনার বউ আর আপনাকে”

ইরহাম নিজের মতো ক্লাস নিয়ে চলে যায়।অর্ষা আর রুশান তো মনে মনে ডিটারজেন্ট ছাড়া ইরহামকে ধুয়ে দিয়েছে।সবাই ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য ক্লাস রুম থেকে বের হয়।রুশান অর্ষাকে বলে,,,

—“দেখেছিস অর্ষা তোর বর আমাকে কিভাবে ক্লাসের সবার সামনে অপমান করলো আর তুই কিছু বললি না”

—“হ তোরে বাঁচাইতে যাইয়ে আমিও ফেঁসে যায় তাই না।নিজে মরছিস আবার আমারেও মারতে চাইস”

অর্ষার চোখ পরে দূরে দাঁড়িয়ে গল্প করা ইরহামের উপর।ইরহাম হেসে হেসে কথা বলছে তাদের ভার্সিটির ম্যাম নিহানা ইশতেহারের সাথে।অর্ষার বিষয়টা মোটেও ভালো লাগে না।ইরহাম কেনো অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলবে,সে তো শুধু অর্ষার সাথেই কথা বলবে।

আবার মনে পরে ইরহাম বলেছিলো কাউকে ভালোবাসে হয়তো নিহানাই ইরহামের ভালোবাসার মানুষ।অর্ষার নিজের ভাবনার প্রতি বিরক্ত হলো।সে ইরহামকে নিয়ে ভাবছে কেনো।করুক যা ইচ্ছা তার কি।তবুও বেহায়া মন বারবার ইরহাম আর নিহানার উপর পরছে।

ওরা সবাই ক্যাম্পাসের মাঠের এক সাইডে বসে পরে।অর্ষা এখনো মাথায় নিহানা আর ইরহাম ঘুরছে।সবাই দুষ্টমি মজা করছে।অর্ষা আনমনে ভাবছে।রুশান অর্ষা ওভাবে দেখে বলে,,,

—“কিরে সয়তানের নানি তুই কি ভাবতাছিস এতো মন দিয়ে”

অর্ষা চমকে ওঠে।রুশান যে ওকে নিয়ে মজা নিবে এখন বুঝতে পারছে খুব ভালো করে।রুশানের দিকে তাকিয়ে সয়তানি হাসি দিয়ে বলে,,,

—“গাইস তোদের সবাইকে একটা জিনিস দেখাবো দেখবি”

মুহিব এক্সাইটেড হয়ে বলে,,,”কি দেখাবি দোস্ত তাড়াতাড়ি দেখা”

অর্ষা ফোন ঘেটে রুশানের সেই হা করে ঘুমানোর ছবিগুলো সবাইকে দেখিয়ে দিলো।সবাই তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে এক প্রকার।রুশান তো রেগেমেগে ফায়ার।অর্ষার হাত থেকে ফোন নেওয়ার চেষ্টা করছে।অর্ষাও কম কিসে সে কি এতো সহজে ফোন দেওয়ার মতো মানুষ।

—“কি হচ্ছে এখানে”

কারো রাশভারি কন্ঠ শুনে অর্ষা রুশান থেমে যায়।অর্ষা সামনে তাকিয়ে দেখে ইরহাম পকেটে হাত গুঁজে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।রুশান ইরহামকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।সবাই অলরেডি দাঁড়িয়ে পরেছে।অর্ষাও দাঁড়ায়।রুশান বলে,,,

—“আসসালামু আলাইকুম স্যার বিশ্বাস করুন আমরা কিছুই করিনি শুধু গল্প করছিলাম”

ইরহাম গম্ভীর দৃষ্টিতে রুশানের দিকে তাকাতেই রুশান চুপ হয়ে যায়।রুশান মনে মনে ইচ্ছে মতো গালি দিচ্ছে ইরহামকে।অর্ষার ইরহামকে বিরক্তিকর লাগছে।ইরহাম অর্ষাকে বলে,,,

—“তোমার আর গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লাস আছে?”

অর্ষা জবাব দেয় না।অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।বন্ধুরা সব কপাল চাপড়ানোর মতো অবস্থা।অর্ষা উত্তর না দিলে যে অর্ষার সাথে তাদেরও শাস্তি দিবে ইরহাম তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।ইরহাম ভ্রু কুচকে তাকায়।উত্তর না দেওয়ায় রাগ লাগে।ধমক দিয়ে বলে,,,

—“কি হলো উত্তর দিচ্ছো না কেনো।কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি তোমাকে?”

নাইম তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,”স্যার আমাদের আর গুরুত্বপূর্ণ কোনো ক্লাস নেই।”

—“আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?”

নাইমসহ বাকি সবাই চমকে ওঠে।ইরহাম কখনোই এতো শান্তসুরে কথা বলে না।ঝড় আসার আগের অবস্হা।অর্ষা তবুও নির্বাক।তার কেনো জানি ইরহামের সাথে তখন নিহানাকে সয্য হয়নি।তার জন্যই হয়তো এখন এমন করছে।ইরহাম অর্ষার সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বলে,

—“কি সমস্যা তোমার কিছু বলেছি তোমাকে আমি”

—“কি বলবো আমি আপনাকে।আমার ক্লাস আছে কি নেই তা দিয়ে আপনার কি”

ইরহাম এতো সময় শান্ত মেজাজে কথা বললেও এখন তার নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছে।তবুও নিজেকে শান্ত করে রুশানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“তোমাকে পাঁচ মিনিট টাইম দিচ্ছি ওকে আমার গাড়ির কাছে নিয়ে আসো আমি অপেক্ষা করছি”

ইরহাম হনহন করে চলে গেলো।সবাই তো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহামকে এতো কিছুর পরও এতো শান্ত দেখে।রুশান অর্ষার সামনে গিয়ে বলে,,,

—“বইন চল প্লিজ তুই না গেলে তোর বর আমাদের উদ্ধার করে দিবে প্লিজ চল”

অর্ষার ইচ্ছা না থাকলেও যেতে হবে।রুশান অর্ষাকে নিয়ে ইরহামের গাড়ির সামনে আসে।ইরহাম গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন দিখছিলো।রুশান অর্ষাকে দেখে ফোনটা পকেটে পুরে ফেলে।রুশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,

—“ক্লাস থাকলে করে বাড়ি চলে যাবা আমি অর্ষাকে দিয়ে আসবো”

রুশান মাথা নাড়িয়ে কেটে পরলো।অর্ষা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।ইরহামের ভালো লাগছে না এভাবে অর্ষাকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে।অর্ষার হাত ধরতেই অর্ষা চমকে উঠে।ইরহামের দিকে তাকায়।ইরহামও তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।চোখাচোখি হয়ে যায় দু’জনের।অর্ষা চোখ নামিয়ে হাত ছাড়াতে চায়।

ইরহাম আরো শক্ত করে ধরে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে।অর্ষা নিজের উপর বিরক্ত হয় সে কেনো এমন করছে।ইরহাম যার সাথে ইচ্ছে হয় কথা বলুক তাতে তার কি।ইরহাম কথা না বলে গাড়ি চালাতে থাকে।অর্ষা বাইরে তাকিয়ে ব্যস্ত শহর দেখছে।

৩৪.

চোখ খুলে অর্ষা নিজেকে গাড়িতেই আবিষ্কার করলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একটা নির্জন রাস্তা ইরহাম ও পাশে নেই।অর্ষা ভয় পায়।অর্ষা বাইরে বের হয় গাড়ি থেকে।আকাশের অবস্থাও ভালো না।অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ।অর্ষা আশেপাশে তাকিয়ে ইরহামকে খোঁজার চেষ্টা করে।

ইরহামকে আসতে দেখে কোনো কিছু না ভেবে জড়িয়ে ধরে।কাঁপছে থরথর করে।ইরহাম অবাক হয়।যে মেয়ের হাত ধরতেও তার একশোবার ভাবতে হয়।সেই মেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরেছে।ইরহামের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।আলতো হাতে অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে বলে,,,,

“কি হয়েছে অর্ষা এমন করছো কেনো?”

অর্ষার ঘোর কাটে দ্রুত সরে ইরহামের থেকে।অর্ষা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে,,,

—“কিছু হয়নি একা দেখে নিজেকে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম”

অর্ষা আবার গাড়িতে গিয়ে বসে।ইরহাম মুচকি হেসে গাড়িতে গিয়ে বসে।অর্ষার দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,,,
—“পানিটা খেয়ে নাও”

অর্ষা ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো।আসলেই ভয় পেয়েছিলো সে।একা কখনো কোথাও যাওয়া হয়নি।রুশান, বন্ধুরা সব নাহয় পরিবারের সাথে।এজন্য অচেনা জায়গায় নিজেকে একা দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো।পানির বোতলটা ইরহামের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,,

—“আমাকে এখানে কেনো এনেছেন”

ইরহাম অর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে হেসে বলল,,,
—“তোমাকে মেরে ফেলতে এনেছি”

অর্ষা ইরহামের মজা বুঝতে পারে।ইরহামকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,,,

—“জানি আমি নিজের ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য তো আমাকে মারতেই হবে তাই মারতে এসেছেন”

ইরহাম হাসে।নিজেও সিটে গা এলিয়ে দেয়।এখানে গাড়ি থামানোর কারণ হলো অর্ষাকে মন ভরে দেখা।সে পুরো একদিন দেখেনি অর্ষাকে।প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণা মেটাতেই গাড়ি থামিয়ে ছিলো।ইরহাম দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল,,,,

—“উমম তুমি ঠিক ধরেছো আমার প্রেয়সী আবার তোমাকে আমার পাশে সয্য করতে পারছিলো না তাই আরকি তোমাকে সরিয়ে দিয়ে দুজন সুখে শান্তিতে সংসার করবো”

অর্ষা রেগে যায়।কটমট কন্ঠে বলে,,,,

—“তাই না আমিও ভুত হয়ে এসে আপনাকে আর আপনার নিহানা প্রেয়সীকে শান্তিতে সংসার করতে দিবো নাহ।”

ইরহাম অবাক হয়।এখানে নিহানা আসলো কোথা থেকে।অর্ষা নিহানার কথা বলছে কেনো!ইরহাম অর্ষাকে বলল,,,,

—“এখানে নিহানা আসছে কোথা থেকে”

—“নিহানা আসবে না তো কে আসবে তা আপনার প্রেয়সী তো সেই।সকালে ঢলাঢলি করে কথা বলছিলেন।কতো সুন্দর দেখাচ্ছিলো না”

ইরহাম বুঝতে পারে আসল কাহিনী।সকালে তাকে নিহানার সাথে দেখে ম্যাডাম রাগে ফুঁসছে।তাহলে অর্ষাও কি তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।বিয়ের মতো পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে বলেই হয়তো অর্ষার এমন হচ্ছে।ইরহাম বাঁকা হেসে বলে,,,

—“আর ইউ জেলাস মিসেস চৌধুরী”

—“আমি!এই অর্ষা মোটেও জেলাস না মিস্টার অসভ্য পুরুষ।অন্যের ভালোবাসার দিকে এই অর্ষা কখনো নজর দেয় না হুহ”

ইরহাম হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।দুপুর হয়েছে অনেক সময় কিন্তু খাওয়া হয়নি।অর্ষার খিদে লেগেছে অনেক।ইরহাম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায়।নেমে দুজনে ভেতরে প্রবেশ করে।রেস্টুরেন্টে অবশ্য লোক নেই।বাইরের আবহাওয়ার কারনে।বৃষ্টি শুরু হয়েছে।ইরহাম খাবার অর্ডার দিলো।

—“মিসেস চৌধুরী আপনি যেনো তখন কি বলছিলেন আপনি জেলাস না তাই তো”

অর্ষা মাথা নাড়ায়।ইরহাম চশমা খুলে রুমাল দিয়ে মুছে আবার পরে বলে,,,
—“তাহলে আপনি রেগে কেনো আছেন আমার উপর।আর নিহানার কথাই বা বললেন কেনো?”

—“আমার ইচ্ছা হয়েছে বলেছি আমি সমস্যা আপনার”

—উহু আমারই তো সমস্যা মিসেস চৌধুরী”

—“মিসেস চৌধুরী কি হ্যা নাম আছে আমার একটা অর্ষা আহমেদ ইনাজ।যেকোনো একটা বলে ডাকতে পারেন”

—“নাহ এগুলোর থেকেও আমার মিসেস চৌধুরী নামে ডাকতে ভালো লাগছে।এতে ফিল আসে তুমি আমার”

অর্ষা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ইরহামের দিকে।অর্ষা বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,,,
—“হয়েছে কি আপনার ঘুরতে যাওয়ার বিকাল থেকে কেমন অদ্ভুত আচরণ করছেন আপনি।এটা মোটেও যায় না আপনার সাথে।আগে যেমন ছিলেন তেমন হয়ে যায়”

—“আগের মতো চাইলেও হতে পারবো না মিসেস চৌধুরী।আগে তুমি আমার স্টুডেন্ট ছিলেন শুধু এখন বউ।আমার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ”

—“আপনি বেশি বলছেন স্যার।আপনি কিন্তু একজনকে ভালোবাসেন ভুলে যাচ্ছেন”

—“হ্যা বাসি তো।কি হয়েছে তাতে”

—“কি হয়েছে মানে আপনি আমাকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ কেনো বলছেন যেখানে আপনি অন্য একজনকে ভালোবাসেন”

ইরহাম মৃদু হেসে প্রেয়সীর চোখে চোখ রেখে বলে,,,

—“আমি তো মিথ্যা বলেনি মিসেস চৌধুরী আমি তো সত্যি বলেছি তুমি আমার একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ।কবুল বলে নিজের করেছি তো এতে তুমি আমার শুধুই আমার”

অর্ষা বিরক্ত হয়ে বলে,,,”আপনার মাথা গিয়েছে।একেবারে পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি।”

—“হুম আমার প্রেয়সীর জন্য”

—“ধ্যাত আপনার সাথে কথা বলাই বেকার অসভ্য পুরুষ মানুষ।”

ইরহাম লক্ষ্য করে অর্ষার হাতে চুরি নেই।যে মেয়ে সারাক্ষণ চুরি পরে ঘুরে তার হাতে চুরি নেই দেখে বেশ অবাক হলো।ইরহাম বলল,,,

—“তুমি আজকে চুড়ি কেনো পরোনি”

—“চুড়ি পরলে চুড়ির ঝনঝন শব্দে সবাই বিরক্ত হয় তাই পরিনি।আপনি নিজেও তো বিরক্ত হন। মনে আছে আমার একদিন ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।”

৩৫.

রুশান অর্ষার থেকে জেনে ইলমার স্কুলের সামনে এসেছে।সব স্টুডেন্টরা বের হচ্ছে কিন্তু ইলমাকে দেখছে না রুশান।সে বৃষ্টি ভিজে শুধু ইলমাকে একবার দেখতে এসেছে।ইলমা বের হয় স্কুল থেকে সাদা কমলা স্কুল ড্রেস ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে।রুশান খেয়াল করে।ইলমা কাছাকাছি আসতেই রুশান বলে,,,,

—“আরে বেয়াইন যে কেমন আছেন?”

ইলমা রুশানকে দেখে চমকায়।মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়,,,
—“আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রুশান ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?”

—“আমিও ভালো আছি তা তুমি এখনো দাঁড়িয়ে যে বাড়ি থেকে কেউ আসেনি নিতে”

—“এখনি আসবে হয়তো ভাইয়া।আপনি এখানে যে”

—“এমনি এখানেই একটা বন্ধুর বাসা তো তাকে দেখতে এসেছিলাম আর চা খেতে ইচ্ছা করলো তাই খাচ্ছিলাম আর তখনই তোমাকে দেখলাম”

—“ওহ।তা ভাবিমনি,আরিশা বাড়ির সবাই কেমন আছে?”

—“সবাই ভালো আছে তুমি খাবে চা”

—“না না ভাইয়া এখন চা খাবো না এই দুপুরে চা খাইতে ইচ্ছা করছে না।আপনি খান”

রুশান দেখে ছেলেরা ইলমার দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে।রুশান টিশার্টের উপরে পরে থাকা শার্টটা খুলে ইলমাকে দিয়ে বলল,,,

—“তুমি এটা পরে নাও ইলমা।আশেপাশে চোখ জন..বোঝোই তো”

ইলমা নিজেও খেয়াল করেছে।সে শার্টটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নেয়।রুশান তো মনে মনে অনেক খুশি হয়।চা খেয়ে বিল দিয়ে ইলমাকে নিয়ে চায়ের দোকান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।ইলমার সাথে গল্প করে রুশান যতক্ষণ না ইলমার গাড়ি আসে।গাড়ি আসতেই রুশান ইলমাকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।

ইলমার রুশানের ব্যবহার তার প্রতি করা কেয়ার খুব ভালো লেগেছে।আবেগের বয়স ভালো তো লাগবেই।এই বয়সে সব কিছুর সাথেই নতুন পরিচয় হয়।বাবা ভাইয়ারা ব্যাতিত রুশানই একমাত্র পুরুষ যে ইলমার এতো খেয়াল রাখলো।ইলমার কিশোরী মনে দাগ কেটে দিলো রুশান নামক সুদর্শন পুরুষ।

৩৬.

অর্ষাকে ইরহাম বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে অর্ষার দিকে ফিরে বলল,,,
—“তোমার ফোনটা দাও তো”

অর্ষা ভ্রু কুচকে তাকায় ইরহামের দিকে।ফোন দিয়ে কি করবে সে।অর্ষাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,,,

—“কি হলো তাকিয়ে আছো কেনো এইভাবে ফোনটা দাও”

—“আমার ফোন দিয়ে আপনি কি করবেন নিজের ফোন নিয়ে ঘাটুন আমি আমার ফোন দিবো না”

ইরহাম অর্ষার কথা কানে না নিয়ে অর্ষার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নেয়।ফোন ওপেন করতেই পাসওয়ার্ড চায়।ইরহাম অর্ষার ওয়ালপেপার দেখতে দেখতে বলে,,,

— “পাসওয়ার্ড কি তাড়াতাড়ি বলো”

অর্ষা কথা না বাড়িয়ে বলে,,,”চিকনি চামেলি রুশাইন্না”

ইরহাম পাসওয়ার্ড শুনে আশ্চর্য হয়।এমন পাসওয়ার্ড কারো হয়।পরোক্ষনেই ভাবে অর্ষার দ্বারা সব সম্ভব।পাসওয়ার্ড খুলে ইরহাম অর্ষার নাম্বার টা নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে অর্ষার সাথে এড হয়।ম্যাসেনজারে ঢুকতে নিলে অর্ষা খপ করে ফোনটা কেড়ে নিয়ে রাগি দৃষ্টিতে ইরহামের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

—“কারো পারসোনাল কিছু দেখতে হলে অনুমতি নিতে হয় জানেন না আপনি”

—“জানি তো কিন্তু তুমি নিজেই তো আমার ব্যক্তিগত জিনিস তাহলে তোমার ফোনও আমার।আমার সম্পূর্ণ রাইট আছে তোমার সব কিছুতেই আমার অধিকার আছে”

—“মোটেও নাহ।”

অর্ষা ব্যাগ নিয়ে ফোন ব্যাগে ঢুকিয়ে নেমে পরে গাড়ি থেকে।বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে গিয়েছে নামতে নামতে।ইরহাম বাঁকা হেসে পেছন থেকে অর্ষাকে ডেকে বলে,,,,

—“মিসেস চৌধুরী”

অর্ষা থেমে যায়।পেছন ফিরে চোখ ছোট ছোট করে তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহামের ঠোঁটে দুষ্ট হাসি।অর্ষা বুঝে যায় এমনি তাকে দেখেছে।সামনে ফিরে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।ইরহাম অর্ষার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে,,,

—❝তোমার ওই কাজল কালো চোখ আমার হৃদয় করেছে হরণ প্রেয়সী❞

#চলবে~

রিচেক দেওয়া হয়নি,ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।