#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২১
৪৪.
আজকে আসিফ আহমেদের সপরিবারে দাওয়াত দিয়েছেন ইসফাক চৌধূরী।আজকে ইলমার জন্মদিন।তাই আয়রা আর ইসফাক ঠিক করেছে দুই পরিবার আবার একসাথে হবে।সবার মতো করে জন্মদিন করা হয় না ঘটা করে কিন্তু বাড়ির সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে মজা করে।অর্ষা যেতে চাইছিলো না তবুও মায়ের জোরাজুরিতে যেতে হচ্ছে।অর্ষাকে লাল রঙা একটা শাড়ি পড়িয়ে দেয় ইরানী বেগম।রুশান রেডি হয়ে হাজির।
—“আরে অর্ষা যে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য যে রেডি হয়েছিস একেবারে ঝাকানাকা ভাবে।তা এবার কি থেকে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করেছিস”
অর্ষা রুশানের দিকে বালিশ ছুড়ে মেরে চোখ রাঙিয়ে বলে,,,
—“আজাইরা কথা বাদ দে।বুঝতে পেরেছি তুমি এমন হিরো আলম মার্কা সেজে কেনো যাচ্ছো ইলমাকে পটাতে।চিন্তা করিস না তোরে জীবনেও ইলমারে পটাইতে দেবো নাহ”
—“তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক।বেস্টফ্রেন্ডের প্রেমে সাহায্য করবে তা না আমার প্রেমে না হওয়ার জন্য আজাইরা ফন্দি আঁটছে বদমাশ মাইয়া”
মৌ রহমান রুমে ঢুকে দুজনকে ঝগড়া করতে দেখে ধমক দিয়ে বলেন,,,
—“থামবি তোরা সব সময় ঝগড়া।আর এই রুশান সমস্যা কি তোর আমার মেয়েটার পিছনে না লাগলে হয় না।
মৌ রহমান দুজনের ঝগড়া থামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।নিচে এসে সবাই রওনা হয়।জন্মদিনটা হবে ইসফাকদের বাগান বাড়িতে।ইরহাম সেদিন অর্ষাকে যেই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলো সেই বাড়িতে।বাড়ির সামনে আসতেই অর্ষার অস্বস্তি ফিল হয়।ইরহামের সামনে আবার যেতে হবে।ব্যাপারটা খুব অস্বস্তিকর অর্ষার কাছে।
সবাই ভিতরে প্রবেশ করে।আয়রা ও ইসফাক সবাইকে দেখে কুশল বিনিময় করে বসতে বলেন।অর্ষার দাদু আর দাদিমা ছাড়া সবাই এসেছেন।বুড়ো মানুষদের টানাহেঁচড়া করতে চায়নি তারাও আসতে চায়নি।দাদিমা আসতে নারাজ।অসুস্থ ভেবে কেউ জোর করেননি।
ইলমা দৌড়ে এসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“ভাবিমনি কেমন আছো?”
অর্ষা মৃদু হেসে উত্তর দেয়,,,
—“ভালো আছি মিষ্টিপাখি।হ্যাপি বার্থডে।জীবনে খুব সুখী হও মিষ্টিপাখি।সব সময় এমন হাসিখুশি থাকো এটাই চাই”
—“ধন্যবাদ ভাবিমনি”
ইলমা কিছুকথা বলে চলে যায় আরিশার কাছে।দুজন খুব ভালো বান্ধবী হয়েছে কয়েকদিনে।মেসেজে কথা বলে প্রায়।রুশান হা করে ইলমার দিকে তাকিয়ে আছে।ইলমার পরনে বেবি পিংক রঙের গাউন।চুলগুলো ছাড়া,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ব্যস এতেই মায়াবী লাগছে রুশানের কাছে ইলমাকে।
রুশানের অবস্থা দেখে অর্ষা মুখ টিপে হাসে।রুশানের পেটে গুতা দিয়ে বলে,,,
—“আর তাকাইস না আমার ননদের নজর লেগে যাবে তো”
—“উফ অর্ষা ব্যাথা পেয়েছি তো।আর তোর ননদের উপর তো আমার নজরই পরবে সবসময়।কারণ আমি ও আমার মায়াবিনী”
—“উমম তুই যে মিষ্টিপাখির প্রেমে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছিস খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।কিন্তু দুঃখের কথা হলো ইলমার ভাই তোকে পছন্দ করে না”
—“তাতে আমার কিছুই আসে যায় না”
রুশান অর্ষা মাথায় থাপ্পড় মেরে পকেটে হাত গুঁজে ভাব দিয়ে চলে যায়।অর্ষা বেআক্কেলের মতো তাকিয়ে থাকে রুশানের যাওয়ার পানে।আয়রা সবাইকে রেস্ট নিতে বলেন।সবাইকে একেকটা রুম দেওয়া হয়।সবাই যেতেই আয়রা অর্ষার কাছে আসে।অর্ষাকে সোফায় বসিয়ে নিজে পাশে বসে।
অর্ষার লজ্জা লাগছে।অর্ষা মাথা নিচু করে বসে আছে।চুলগুলো খোপা করা ছিলো এখন খুলে গিয়েছে।আয়রা অর্ষার মুখ উঁচু করে বলে দেখে বলে,,,,
—“মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ আমার ইরহামের বউকে তো অনেক সুন্দর লাগছে।কেমন আছো মা?”
—“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি আপনি?”
আয়রা মুচকি হেসে বলে,,,”আন্টি কি মা তুমি আমাকে মামনি বলে ডেকো”
অর্ষা মাথা নাড়ায়।আয়রা হাসেন।অর্ষার অস্বস্থি বুঝতে পারেন।অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,
—“তুমি হয়তো অস্বস্তি ফিল করছো।তুমি আমাকে নিজের মা ভাবতে পারো অর্ষা”
অর্ষা অবাক হয়ে তাকায় আয়রার মুখপানে।মহিলার ব্যবহারে মুগ্ধ হয় অর্ষা।নিজের অস্বস্তি কাটিয়ে উঠে।হেসে বলে,,,
—“ঠিক আছে মামনি কিন্তু সরি”
আয়রা ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ষা সরি কেনো বলছে তাকে।তার মাঝেই অর্ষা বলে ওঠে,,,
—“আসলে মামনি প্রথম দিনের করা কাজ মনে করে অস্বস্তি হচ্ছিল।ক্ষমা করবেন আমায়”
—“আরে অর্ষা মা আমি কিছু মনে করিনি”
অর্ষা আয়রার হাসে বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর আয়রা তাকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যায়।ইসফাক গিয়েছে রান্নার কাছে।ইয়াদ আগে থেকেই আছে।অর্ষা রুমে এসে ধপ করে শুয়ে পরে বিছানায়।ইরহাম ওয়াশরুম থেকে বের হয়।অর্ষাকে দেখে থমকায়।ইরহাম ভাবে অর্ষা ঘুমিয়ে আছে।ও অর্ষার কাছে এসে ঝুঁকে দেখে নেয় নিজের প্রেয়সীকে।
লাল শাড়িতে রাঙা বউ লাগছে অর্ষা।ইরহাম ঠোঁট কামড়ে হেসে বিড়বিড় করে বলে,,”আমার রাঙা বউ”
ইরহাম নিজের ফোন বের করে কয়েকটা ফটো তুলে নেয়।এরপর অর্ষার কপালে,গালে চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে থেকে চলে যায়।ও চাইছে না অর্ষার মুখোমুখি হতে।ইরহাম যেতেই অর্ষা ধপ করে চোখ খোলে।বুকে হাত দিয়ে শ্বাস নেয়।ইরহাম যখন তার কাছে এসেছিলো তখন হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো।
চুমু দিয়েছিলো যখন তখন অর্ষা কেঁপে উঠে।অর্ষা ভয়ে পেয়েছিলো যদি ধরা পরে যায় ইরহামের কাছে তখন।কিন্তু একটুর জন্য ধরা পরেনি।ইরহামের বলা রাঙা বউ কথাটা এখনো কানে বাজছে অর্ষার।কথাটা মনে আসতেই লজ্জা লাগে।কিন্তু ইরহামের সেদিনের ব্যবহারের কথা মনে পরে যায়।
৪৫.
রুশান ইলমার সাথে কথা বলার জন্য ঘুরঘুর করছে।আরিশা সরছে না ইলমার কাছ থেকে।আরিশা হঠাৎ উঠে যায়।রুশান সেই সুযোগে ইলমার কাছে আসে।ইলমার রুশানকে দেখে হেসে বলে,,
—“আরে রুশান ভাইয়া যে কেমন আছেন”
—“এতো ভালো ইলমা।হ্যাপি বার্থডে।”
রুশান ইলমার দিকে একটা শপিং ব্যাগ দিয়ে বলে।ইলমা অবাক হয়ে শপিং ব্যাগটা নেয়।ও ভাবতেই পারেনি রুশান ওর জন্য আলাদা করে গিফট আনবে।গিফটটা হাতে নিয়ে বেশ খুশি হয়।রুশান ইলমাকে হাসতে দেখে মাথা চুলকে হাসে।দুদিন আগেই জানতে পেরেছে ইলমার জন্মদিন।সেদিনই গিফট কিনেছে ইলমার জন্য।
—“এতে কি আছে ভাইয়া।”
—“এই ছোট্ট গিফটা আমার তরফ থেকে তোমার জন্য।বাসায় গিয়ে খুলে দেখো”
ইলমা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে,,,,”ধন্যবাদ ভাইয়া গিফটের জন্য”
রুশান হাসে।প্রেমে পরলে মানুষ কতো কিহ না করে।সেও করছে ইলমা নামক রমনীর জন্য সে হাজার পাগলামি করতেও রাজি।ইলমা ছোট জানে সে কিন্তু ইলমার প্রেমে যে সে দিনদিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।ভালোবেসেও ফেলেছে হয়তো।ইলমা নামক রমনীর মায়ায় পরে গিয়েছে।যে মায়া থেকে বের হওয়া সম্ভব না।তার যে ইলমাকেই লাগবে।
৪৬.
আরিশা তখন ইয়াদকে দেখেই ইলমার কাছ থেকে চলে এসেছে।ইয়াদকে ছাদে আসতে দেখে নিজেও ছাদে চলে আসে।ইয়াদ ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলো।আরিশা সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারে।কেশে ওঠে।ইয়াদ পিছনে ফিরে তাকায়।আরিশাকে দেখে সিগারেট ফেলে দেয়।আরিশা নিজেকে স্বাভাবিক করে ইয়াদের কাছে আসে।
—“আপনি সিগারেট খান ইয়াদ ভাইয়া”
ইয়াদ মলিন হাসে।যে হাসিতে লুকিয়ে আছে হাজারো কষ্ট।ইয়াদের এমন হাসির কারণ বুঝতে পারে না আরিশা।বোঝার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।ইয়াদ আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,,,
—“ওই যে দেখো সূর্যকে যেমন কালো মেঘগুলো ঢেকে দিয়েছে আমার জীবনেও কালো মেঘ জমেছে।”
আরিশা ইয়াদের ভারি কথাগুলোর মানে বুঝার চেষ্টা করে।কিন্তু সে এবারও ব্যর্থ।কিন্তু এতো টুকু বুঝতে পারে ইয়াদের মন ভালো নেই।সে বলে,,,
—“আপনি কি কিছু নিয়ে আপসেট ভাইয়া”
—“তেমন কিছু না আরিশা।ও তুমি বুঝবে না”
—“আমি বুঝবো না কেনো আমি মোটেও ছোট না আপনি বললেই বুঝতে পারবো আমি বলুন আমি সমাধান করার চেষ্টা করতে পারি”
—“পারবে না পিচ্চি”
আরিশা চোখ ছোট ছোট করে বলে,,,”আমি মোটেও ছোট নাহ আপনি বলুন না কি হয়েছে”
—“আমার সুখপাখি আর আমার নেই আরিশা উড়ে গিয়েছে ওই দূর আকাশে”
—“আমি খুঁজে এনে দেবো আপনার সুখপাখিকে তবুও আপনি মন খারাপ করবেন না প্লিজ”
ইয়াদ হাসে।মেয়েটা যে তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে।আবেগের বয়স।এমন সময় এমন হবেই।মেয়েটার চোখে তার জন্য অফুরন্ত প্রেম দেখতে পারছে।মেয়েটা ভালো।ইয়াদ আরিশার গাল টেনে দিয়ে বলে,,,
—“এই সব বাদ দাও আরিশা এখন পড়ালেখার সময়।পড়াশোনার মনোযোগ দাও।”
আরিশার মন খারাপ হয়।লোকটা এভাবে বলতে পারলো।তবুও মন খারাপ করে না সে।উপন্যাসে পরেছে প্রেমে পরলে একটু বেহায়া হতেই হয়।সে না হয় হলো ইয়াদের জন্য।পাগলামি না করলে তা কি আর প্রেম হয়।প্রেমের মাঝে পাগলামি থাকবেই।ইয়াদ চলে যায়।ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আরিশা বলে,,,
—“আপনি আমায় পাত্তা না দিলেও আমি ও আপনার পিছু ছাড়বো না।পছন্দ যখন হয়েছে আমার আপনাকেই লাগবে।আমি ওত টাও ছোট নাহ মিস্টার প্রেমিক পুরুষ”
—❝প্রেমে পরে না হয় আমিও একটু বেহায়া হলাম❞
#চলবে