#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৪
৫৩.
সন্ধ্যায় সবাই বসেছে আড্ডা দিতে।অর্ষাও আছে বেশ হাসিখুশি ভাবেই কথা বলছে সে সবার সাথে।তাদের ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে গিটার বাজাচ্ছে আর একজন মেয়ে গান গাইছে।অর্ষারও গান গাইতে ইচ্ছে করছে কিন্তু এই সবার মাঝে বলতেও কেমন লাগছে।টিচারও সবার সাথে বসেছে।রুশান অর্ষার চেহারা দেখে বুঝতে পারে।
সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,,”গাইস আমাদের অর্ষাও খুব ভালো গান করে”
সবাই অর্ষাকে গান গাইতে বলে।অর্ষা সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“তোমার গিটারটা দাও,আসলে রুশান গিটার না বাজালে গান গাইতে একটু অসুবিধা হয়”
ছেলেটাও হাসি মুখে গিটারটা দিয়ে দেয়।রুশান গিটার বাজাতে শুরু করে।অর্ষা এক পলক তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহাম তার দিকেই তাকিয়ে আছে।আজকে অর্ষা চোখ সরায় না।ইরহামের দিকে তাকিয়েই গাইতে শুরু করে,,,,
আমায় বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
বলে বলুক লোকে মন্দ
বিরহে তার প্রাণ বাঁচে না
দেখেছি…..দেখেছি রুপ সাগরে
মনের মানুষ কাঁচা সোনা
দেখেছি রূপ সাগরে
মনের মানুষ কাঁচা সোনা
অর্ষা থেমে যায়।সবাই অনেক প্রসংশা করে।সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।এরপর রাতের খাবার খেতে যায়।সবাই বিভিন্ন ধরনের মাছের আইটেম টেস্ট করে।মাছের আইটেমগুলো অনেক মজার।
৫৪.
উশা অর্ষা নিজেদের রুমে আসে।অর্ষা রুমে এসে ধপ করে শুয়ে পরে।উশা টেনে অর্ষাকে উঠায়।অর্ষা বিরক্তি নিয়ে তাকায় উশার দিকে।উশা মুচকি হাসে অর্ষাকে বিরক্ত হতে দেখে।উশা একটা শপিং ব্যাগ অর্ষার হাতে দিয়ে বলে,,,,
—“যা এটা পরে আয় তাড়াতাড়ি”
অর্ষা শপিংব্যাগটা খুলে অবাক হয়ে যায়।শপিং ব্যাগে কালো রঙের একটা শাড়ি সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারি ফুল সবাই আছে।অর্ষা বিষ্ময়কর কন্ঠে বলে,,,
—“কে দিয়েছে এগুলো তোকে।এতো সুন্দর এগুলো।আমি পরবো কেনো?”
উশা বিরক্ত হয়ে বলে,,,”পরতে বলেছি পরবি এতো কথা কেনো বলিস যা পরে আয়”
অর্ষাও জেদ দেখিয়ে বলে,,
—“তুই যদি না বলিস তবে আমিও পরবো না”
—“ইরহাম স্যার নিহানা ম্যামকে প্রপোজ করবে তাই আমাদের সবাই ভালো জামাকাপর পরে যেতে বলেছে হয়েছে তোর যা এবার”
অর্ষা আকাশ থেকে পরে।ইরহাম নিহানাকে প্রপোজ করবে শুনেই মাথায় আগুন ধরে যায়।কিন্তু মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হেসে রেডি হতে যায়।উশা হাসে।বোকা মেয়ে বুঝতেও পারলো না সে মিথ্যা বলেছে।অর্ষা শাড়ি পরে বের হতেই উশা মুগ্ধ হয়।অর্ষাকে শাড়িটা পরে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।উশাও একটা শাড়ি পরেছে।অর্ষা সাজতে বসেছে।
উশা ভেবে পাচ্ছে না অর্ষার এতো সাজার কারণ।কিন্তু এতটুকু জানে এই মেয়ে অকারণে কিছু করে না।কারণেই করছে।অর্ষা রেডি হয়ে উশার সাথে বাইরে বের হয়।দূরে ইরহামকে কালো পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে।নিহানাকেও নিজের রুম থেকে বের হতে দেখে।
অর্ষা সব থেকে অবাক হয় রুশান মুহিব আর নাইমকে ইরহামের সাথে দেখে।রুশান তো হেসে হেসে কথা বলে যাচ্ছে।অর্ষা মনে মনে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় রুশান মুহিব নাইমের উপর।আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না অর্ষা।এতো রাতে অবশ্য কারো থাকার ও কথা না।এখন রাত ১২ টার উপরে বাজে।
অর্ষা কিছুদূর আসতেই ইরহামকে দেখতে পায় না।হঠাৎ কেউ পেছন থেকে চোখ বেঁধে দেয়।আর কোলে তুলে নেয়।অর্ষা ভয় পেয়ে লোকটার কলার খামচে ধরে।লোকটার পারফিউমের ঘ্রানটা চেনে অর্ষা।ইরহাম এই ব্রান্ডের পারফিউম ইউস করে।অর্ষা রেগে ইরহামকে বলে,,
—“নামান আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়।অসভ্য পুরুষ মানুষ আমায় নামান।”
ইরহামের বুকে কিল থাপ্পড় ঘুসি মেরে যাচ্ছে অর্ষা।এতে ইরহামের হেলদোল নেই।অর্ষা হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে নামার জন্য।কিন্তু ইরহাম তো ইরহাম সে কি ছাড়ার মানুষ।আরো শক্ত করে ধরে।অনেক সময় হাঁটার উপর এক জায়গায় অর্ষাকে দাঁড় করিয়ে দেয়।ইরহাম একটু একটু করে সরে যায় অর্ষার কাছ থেকে।
অর্ষা ভয় পেয়ে যায়।দ্রুত চোখ থেকে কাপড়টা সরিয়ে ফেলে।সামনে তাকাতেই এমন দৃশ্য দেখে যা কল্পনাও করতে পারিনি অর্ষা।তার সামনে ইরহাম হাঁটু মুরে একঝুড়ি চুড়ি নিয়ে যার ভেতরে বিভিন্ন রঙের চুড়ি আছে।সে দাঁড়িয়ে গোলাপের পাপড়ির উপর।ইরহাম অর্ষার ভাবনার মাঝেই বলে ওঠে,,
—“জানি না কবে কখন কিভাবে ভালোবেসেছি তোমায়।শুধু এতোটুকুই জানি ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি তোমায়।আই লাভ ইউ মাই লাভ।তোমার চোখের প্রেমে পরলেও ভালোবেসেছি নিজের অজান্তে।তোমার দুষ্টমি তোমার রাগ সব কিছুকেই ভালোবাসি আমি।প্রেয়সী তোমার হাতের চুড়ির ঝনঝন শব্দ আমার বুকে ঝড় তোলে।তোমার ওই তীক্ষ্ণ চাহুনি আমায় মাতাল করে।হবে কি আমার সুখপাখি,আমার মনের রাজ্যের রানী”
অর্ষা ঘোরের ভেতরে আছে।ইরহামের কথাগুলো কানে বাজছে।মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইরহামের মুখপানে।ইরহাম অর্ষার অবস্থান বুঝতে পারে।মৃদু হেসে উঠে দাঁড়ায়।অর্ষার কাছে এসে ওর হাতে ঝুড়ি থেকে এক সেট কালো রেশমি চুড়ি নিয়ে পড়িয়ে দেয়।অর্ষার ঘোর কাটে।ও রেগে ইরহামকে ধাক্কা দিয়ে বলে,,,
—“অসভ্য পুরুষ দরকার নেই আপনার ভালোবাসা আমার।নিহানা আর সেদিন হাত ধরে হাটা মেয়েকে ভালোবাসি বলুন।”
ইরহাম ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে।অর্ষা যে অভিমান করে কথাগুলো বলছে খুব ভালো করেই জানে সে।সে অর্ষার দিকে ঝুঁকে মাতাল করা কন্ঠে বলে,,,
—“আর ইউ জেলাস জান?হুমমম আই নো ইউ লাভ মি সো মাস বউ”
অর্ষা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে,,,
—“মোটেও না আমি কেনো জেলাস হবো।আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না।আপনাকে ভালোবাসার অনেক মানুষ আছে জানি আমি।তাদের কাছে জান”
ইরহাম নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসে।অর্ষা আরো একবার প্রেমে পরে ইরহামের।ইরহাম অর্ষার কোমড়ে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে আনে।দুজনের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলে।অর্ষার হার্টবিট বাড়ছে,শরীর কাঁপছে।ইরহাম প্রেয়সীর কপালে কপাল ঠেকিয়েছে।ইরহামের তপ্ত নিঃশ্বাস অর্ষার মুখে আছড়ে পরছে।
—“তোমার কাজল কালো চোখ আমায় মাতাল করছে প্রেয়সী।”
অর্ষা টেনে টেনে বললো,,”দূরে সসসসরুন পপপপ্লিজ”
ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নিয়ে চেয়ারে বসালো।রুশান নাইম মুহিব অনেক কষ্টে ডেকোরেশন করেছে।এখানে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে।অর্ষার চোখ জুড়িয়ে যায় ডেকোরেশন দেখে।ইরহাম হাঁটু মুড়ে অর্ষার সামনে বসে বলে,,,
—“জান প্লিজ উত্তরটা দাও”
জান শব্দটা অর্ষার মনে ঝড় তোলে।নেশাক্ত কন্ঠ ইরহামের।অর্ষা নিজেকে সামলাতে কষ্ট হয়।সে এই মানুষটাকে ফেরাতে পারবে না।অর্ষা চোখ বন্ধ করে বলে উঠে,,,,
—“আমিও ভালোবাসি আপনাম আমার অসভ্য পুরুষ।আমি আপনার মনের রাজ্যের রানী হয়ে থাকতে চাই আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত।”
ইরহাম উঠে নিজের ওষ্ঠদ্বয় অর্ষার কপালে ছোঁয়ায়।অর্ষা শিউরে ওঠে।এরপর ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে বিচে নিয়ে আসে।বাতাসে অর্ষার চুলগুলো উড়ছে।ইরহাম মুগ্ধ হয়ে নিজের প্রেয়সীকে দেখছে।অর্ষার কোমড় চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে ইরহাম।অর্ষা ইরহামের বুকে মাথা রাখে।অর্ষার শান্তি লাগছে ইরহামের বুকে মাথা রেখে।
—“আমায় ছেড়ে যাবেন না প্লিজ কখনো,থাকতে পারবো না”
—“তোমাকে ছাড়ার কথা ভাবার আগে মৃত্যু হোক আমার।তুমি চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে না চাইলেও।ভালোবাসি তোমায়।নিজের ভালোবাসাকে কিভাবে নিজের কাছে রাখতে হয় জানি আমি।”
দু’জন রাতের সমুদ্রবিলাস করে রুমে আসে।আজকে অর্ষা ইরহামের সাথেই থাকবে।উশার সাথে যে নাইম আছে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।তাই ইরহামের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।রুমে এসে অর্ষা বিপদে পরে।সে তো ভারি শাড়ি পরে ঘুমাতে পারবে না কি করবে এখন।
—“মিস্টার অসভ্য পুরুষ আমি ঘুমাবো কি করে এই ভারি শাড়ি পরে”
—“আমি অসভ্য পুরুষ?”
—“হ্যাঁ তা নয়তো কি।আপনি কি সাধু পুরুষ নাকি।হুটহাট কোমড় জড়িয়ে ধরেন এই করেন ওই করেন”
ইরহাম অর্ষার দিকে এগোতে এগোতে বলে,,,
—“কি কি করি বলো”
অর্ষা পেছাতে পেছাতে দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে যায়।অর্ষা তুতলিয়ে বলে,,,
—“দে.. খুন এগোবেন না মোটেও দূরে সরুন”
ইরহাম দেওয়ালের দুপাশে হাত রেখে অর্ষার দিকে ঝুঁকে বাঁকা হেসে বলে,,,
—“আমি অসভ্য পুরুষ যখন তখন তো একটু অসভ্যতামি করেই দেখাতে হয় তাই না”
অর্ষাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইরহাম কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে এনে অর্ষার ওষ্ঠদ্বয়ের সাথে নিজের ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে দেয়।দ্বিতীয় কিস অর্ষার।ইরহাম পাগলের মতো চুমু খেয়ে যাচ্ছে।অর্ষা ছাড়াতে চাইলেও পারে না।অর্ষা ইরহামের গলা জড়িয়ে ধরে।বেশ কিছুক্ষণ পর ইরহাম অর্ষার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে অর্ষার নাকে নাক ঘষে বলে,,,
—“এখন থেকে তোমার এই টক,ঝাল,মিষ্টি টর্চারগুলো সহ্য করতে হবে জান”
অর্ষা লজ্জায় ইরহামের বুকে মুখ লুকায়।ইরহাম জড়িয়ে ধরে শক্ত করে অর্ষাকে।অর্ষাও জড়িয়ে ধরে ইরহামকে।ইরহামের বুকে মাথা রেখে অর্ষা মনে মনে বলে,
—“আমি ভালোবাসা বলতে আপনাকেই বুঝি আমার অসভ্য পুরুষ।”
ইরহাম অর্ষাকে তার একটা টিশার্ট দেয় পরতে।অর্ষা টিশার্ট পরে বের হতেই ইরহাম তাকে দেখে হাসতে শুরু করে।টিশার্টটা এতো ঢোলা হয়েছে অর্ষার যে অর্ষার মতো আরো একজনও ঢুকতে পারবে ভেতরে।ইরহাম হো হো করে হাসতে হাসতে বলে,,
—“জান ইউ লুকিং সো ফানি এন্ড হটটটটট”
অর্ষা রেগে ইরহামের দিকে বালিশ ছুড়ে মারতে থাকে।ইরহাম তবুও হাসতে থাকে।অর্ষা ইরহামকে মারতে মারতে ইরহামকে নিয়ে বিছানায় পরে যায়।ইরহাম নিচে অর্ষা ইরহামের বুকের উপর।ইরহাম অর্ষার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অর্ষা সেই নেশাক্ত দৃষ্টিতে বেশি সময় তাকিয়ে থাকতে পারে না।চোখ ঘুরিয়ে নেয়।
#চলবে