ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি পর্ব-১২

0
661

#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ১২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
অধরা দেখতে পেলো তার হাত শক্ত করে ধরে পিছনে দিকে দাড়িয়ে আছে অয়ন। অয়নকে দেখতে পেয়ে অধরা বেশ অবাক হয়ে যায়। অধরা প্রত্যাশা করেনি যে অয়নের সাথে তার আবার কখনও দেখা হবে। অধরা অয়নের চোখ জোড়ার দিকে তাকাতেই ভেবাচেকা খেয়ে যায়। রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে অয়নের চোখ জোড়া। অধরা মিনিট কয়েক অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু কন্ঠ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল

— হাতটা ছাড়ুন আমার প্লিজ।

অয়ন হাতটা আরো শক্ত করে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে অয়ন অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলে

— এতোটা দিন কোথায় ছিলে? সবার থেকে আড়ালে চলে যেতে বড্ড বেশি ভালো লাগে তোমার? জানো কত জায়গায় তোমাকে খুঁজেছি আমি? নিজের যা ইচ্ছে করবে তাই করবে? একটি বারের জন্য ও নিজের পরিবারের কথা ভাববে না? জানো বাবা মা পাগলের মতো তোমাকে খুঁজেছে।

— হ্যালো! আপনি কে? আমি কি আদু আপনাকে চিনি? কি সব পাগলের মতো বলছেন? আমি হারিয়ে যাবো কোথায়? আর আমাকে খুঁজতে কেনো হবে? হাত ছাড়ুন।

অধরা এক ঝটকায় নিজের হাত অয়নের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। অধরার কথা‌ শুনে অয়ন মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরলো। অয়ন অধরার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। “এটাকি আমার অধরা? অধরা আমাকে ভূলে গেছে? অধরা তার নিজের ভালোবাসাকে চিনতে পারছে না? অধরা কি আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য এসব বলছে? নাকি সত্যি আমি ভূল মানুষকে নিজের অধরা ভেবে বসে আছি”? অয়ন অধরার দিকে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

— আর কত কষ্ট দিবে? এভাবে এড়িয়ে যেও না প্লিজ। আমি তোমাকে ভালোবাসি।

— ঠাসসসসসস, ঠাসসসসসস। একদম চুপ হয়ে‌ যান মিস্টার অয়ন চৌধুরী। একদম চুপ। ভালোবাসা নামক পবিত্র শব্দটা আপনার মুখে মানায় না। আপনি সেই পবিত্রতম শব্দটাকে বারংবার কলুষিত করেছেন। আপনার মতো মানুষের মুখে ভালোবাসা শব্দটা শোভা পায় না।

অধরা অয়নের মুখে ভালোবাসা শব্দটা শুনে বেশ রেগে যায়। অধরা প্রচন্ড রেগে অয়নের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। থাপ্পড়ের শব্দে অয়নের বুকটা কেঁপে উঠে। অয়ন গালে হাত দিয়ে নিশ্চুপ হয়ে মাথাটা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অধরা থাপ্পড় দিতেই নিজের চোখের কোন বেয়ে কিছু জল গড়িয়ে পড়ে। যতই হোক অয়ন তার ভালোবাসার মানুষ। এটা হাজার চাইলেও এড়িয়ে যাবার নয়। অধরা চোখ মুছে ভিশন কর্কশ গলায় আবারও বলতে শুরু করে।

— আমি আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। ভালোবাসতাম বলবো‌ না। কারন ভালোবাসার অতিত হয়‌ না। যদি বলতাম ভালোবাসতাম তবে সেটা আমাদের‌ দুজনের মাঝে সম্পর্ক ছিলো। সম্পর্কের সমাপ্ত আছে তবে ভালোবাসার শেষ নাই। আপনার ভালো‌ থাকার কারন হতে চেয়েছি।‌ আফসোস ব্যর্থ আমি। হতে পারি নি আপনার ভালো থাকার‌ কারন। তাই আপনার খারাপ থাকার কারন হতে চাইনি আমি। মুক্তি দিয়ে এসেছি আপনাকে।

অধরা অয়নের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো। চোখ জোড়া বড্ড বেইমান। কারন এই চোখ জোড়া আমাদের নিজেদের হয়েও অন্যের জন্য কাঁদে। অধরা‌ চায় না অয়ন তার চোখের জল দেখুক। অয়ন অধরাকে নিশ্চুপ দেখে। ঠোঁটের কোণে বাকা হেঁসে মাথাটা নিচু করে অধরাকে উদ্দেশ্য করে আদু কন্ঠে বলল

— ভালো থাকা! সেটা তো তোমার সাথে সাথে আমার‌ থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন আর নতুন করে ভালো থাকা টা আসে‌ না আমার লাইফে। অভিযোগ দিচ্ছো অন্যের সাথে আমার…

— অন্যের সাথে না। আমার নিজের বোনের সাথে। ইরার সাথে। বলতে পারো কি এমন সম্পর্ক আছে তোমাদের মধ্যে? যার জন্য তোমাদের এতোটা ঘনিষ্ঠ হতে হয়? বলতে পারো অধরা তোমাকে চোখে‌ হারায় কেনো? বার বার গায়ে পরে কেনো তোমার কাছে ছুটে আসে? তুমি দিনে আমাকে যতটা না সময় দাও তার থেকে কয়েক গুণ বেশি সময় অধরাকে দিতে পারো। কেনো অয়ন? বলো কি সম্পর্ক তোমাদের?

— অধরা ইরাকে নিয়ে আমাকে প্লিজ আর নিচে নিয়ে‌ এসো না। ইরাকে নিয়ে আমার মনের মধ্যে কোনো পাপ নেই। আজ পর্যন্ত ইরার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক হয়নি যার‌ জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে। একজন মানুষের পাশে থাকা যদি পাপ হয়। কারো সহায্য করা যদি পাপ হয়। তবে আমাকে তুমি যাই বলবে তাই মেনে নিবো।

— হাহাহাহাহা, হাসাতে পারো তুমি! ইরাকে নিয়ে রিসোর্টে যাওয়া, দিন রাত কল করে কথা বলা সাহায্য? কেনো? আমি তো ওর বোন। আমাকে কেনো ও কিছু বলছে না? তোমাকে কেনো লাগছে ওর? আমি কিছু বুঝি না ভেবেছো? আমি‌ সব বুঝি অয়ন সবটা।

— সেটাই তো আফসোস তুমি বুঝো ঠিক তবে উল্টোটা। ভালোবাসো আমায়! একটু তো বিশ্বাস রাখতে পারতে আমার উপর। সমস্যা শেষ হলে আমি নিজেই বলতাম সব টা। কিন্তু তুমি তো আমায় সেই সুযোগ দিলে না। এতটুকুতেই বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলো তোমার।

— একজন নারী জানো সব কিছুর ভাগ অন্যকে দিতে পারে। হ্যাঁ সব কিছুর ভাগ। শুধু পারে না তার প্রিয়জনের ভাগ দিতে। স্বামীর ভাগ কখনও অন্য কাউকে কেউ দিতে পারে না। এখন তো আমার মনে হচ্ছে ইরা তোমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। তাই এখন আমাকে খুঁজে চলেছো। সরি অয়ন আমি আর পারবো না তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করতে। আমি পতিতা নই যে যখন চাইবে তোমার পুতুল হয়ে যাবো। আর যখন ফেলে দিতে ইচ্ছে হবে তখন ফেলে দিবে। সো তুমি অন্য কাউকে ইরার মতো করে খুঁজে নাও। আমি আর কখনও আসবো না ফিরে।

অধরা কথাটা শেষ করতেই হনহন করে চলে যেতে লাগলো অয়নের সামনে থেকে। অয়ন পিছন থেকে অধরার হাত জোড়া শক্ত করে ধরে হেঁচকা টানে অধরাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। অধরা অয়নের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে। অয়নের বেশ রাগ উঠে যায় অধরার কথা শুনে। “অধরা নিজেকে এতোটা নিচে নামিয়ে দিলো এক পলকে”! অয়ন রাগে দাঁতে দাঁত চেপে অধরাকে উদ্দেশ্য করে কর্কশ গলায় বলছে

— কি সব বলছো তুমি? নিজেকে নিয়ে এতোটা বাজে কথা বলতে বাঁধছে না মুখে? আমার রাগ সম্পর্কে তো জানো না তুমি। জেদ আমারও আছে। আর কতবার বলবো ইরার সাথে আমার কোনো বিশেষ সম্পর্ক নেই। আমি শুধু মাত্র ওকে সাহায্য করছি। ওর পাশে থাকছি। এতোটুকুই। কেনো বার বার ভূল প্রমান করছো আমায়?

— আমি তোর কথা বিশ্বাস করি না। আমার হাত‌ ছেড়ে দে অয়ন। আমার লাগছে হাতে।

— লাগুক। আরো শক্ত করে ধরবো। আমার বুকে যে ক্ষত করে দিয়েছিস। সেটার কি হবে? আমার বুকের ভিতর যে কষ্ট পেয়ে পেয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে তার কি হবে?

— নাটক করিস না প্লিজ। ইরাকে নিয়ে ভালো থাক তুই।

— আর একটা বার ইরাকে নিয়ে কিছু বললে খারাপ হবে।

* অধরা অয়নের থেকে‌ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করছে। কিছুক্ষন চেষ্টা করতেই অয়ন নিজের ইচ্ছেতে অধরার হাত ছেড়ে দিলো। অধরাকে ছেড়ে দিতেই অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার দিয়ে বলল

— ক্ষমা করে দিস আমায়। তোর মতো একজনকে এখনও ভালোবাসি ঠিক তবে আর ফিরে পেতে‌ আমি চাই না।

* অধরা হনহন করে চলে যায়। অয়ন ছলছল চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে থাকে। “হায়রে মানুষ একটা বার‌ বিশ্বাস করতে পারলে না আমায়। আমি সত্যি তোমার বিশ্বাসের যোগ্য না। চলে যাও তুমি। আর কখনও আমাকে বুঝতে এসো না”। অয়ন চোখটা মুছে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। অয়ন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। বার বার চোখের পাতা ভারী হয়ে আসছে তার।‌ অধরা কি তাকে নিজের মতো‌ করে বুঝতে পারতো না? অয়ন হেঁটে যাচ্ছে আর অধরার কথা ভাবছে। অধরা চলে যাবার সময় একটিবার অয়নের দিকে ফিরে পর্যন্ত তাকায়নি। অয়ন এতোটাই যঘন্য তার কাছে যে এতোটুকু সহানুভূতি ও পেলো না তার কাছ থেকে। অয়ন বাড়ি ফিরে নিজের রুমে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে।

* অধরা নিশ্চুপ হয়ে পথ চলছে একা একা। অয়নের মায়া কাটিয়ে নিজেকে সামলাতে হবে তাকে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে। তবেই আমি সামনের সকল বাধা দূর করতে পারবো। এই সমাজে আপন বলতে কেউ নেই। কেউ কারো জন্য নয়। সবাই নিজের স্বার্থের জন্য প্রিয়জন করে। স্বার্থ শেষে সবাই নিজের‌ মুখোশ খুলে। অয়ন একটু দেরি করে হলেও নিজের মুখোশটা খুলতে পেরেছে আর আমার মানুষ চেনা হয়ে গেছে।

অধরা আরো কিছুটা পথ এগোতেই আচমকা তার চোখ যায় কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটিকে দূর‌ থেকে‌ দেখে অধরার বেশ চেনা লাগছে। মনে হচ্ছে এই মেয়েটি তার বেশ চেনা একজন। অধরা রাস্তা পার হয়ে মেয়েটির দিকে চলে আসে। মেয়েটির কাছে আসতেই মেয়েটি অধরার দিকে তাকায়। চোখে ব্লাক কালারের সানগ্লাসটা থাকায় চিনতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। হঠাৎ মেয়েটি অধরাকে অবাক করে দিয়ে চিৎকার করে অধরাকে……………………………

#চলবে…………………………….