ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-০২

0
530

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(২)

মেয়েটা আর কেউ নয় ভার্সিটির সেই আরাফা। আরাফা নিজের অবাকের রেশ কাটিয়ে ওঠে মূহূর্তেই। নিজের মুখে গাম্ভীর্য ভাব এনে একটা চেয়ার টেনে বসে। আরিয়ান এখনো আরাফার দিকে তাকিয়ে আছে। আরাফা কালো গ্রাউন পড়েছে। গর্জিয়াস লুক দেখে যে কোন ছেলেই হা করে তাকিয়ে থাকবে। আরাফা গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-

-” আমি তাহিয়্যাত আরাফা। আপনাদের এলবাম রিলিজ এর জন্য বাবা আমাকেই পাঠিয়েছে।

আরিয়ান আর তার বন্ধুরা চমকে যায় আরাফার কথায়। তারা এতক্ষন ঘোরের মধ্যে ছিলো। আরিয়ান কথাটা ঠিকমতো শুনেনি, তাই আরাফাকে জিজ্ঞেস করে-

-” জ্বী জ্বী কিছু বললেন নাকি?

আরাফা বিরক্ত হয়। মুখে বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে বলে-

-” আমার নাম তাহিয়্যাত আরাফা। আর বাবা আজকে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি। তাই আপনাদের এলবামের তদারকির জন্য আমাকে পাঠিয়েছে।

আরিয়ান মাথা নেড়ে বলে-

-” ওহ নাইস নেইম। আমি আরিয়ান তাজওয়ার। আপনি আরিয়ান বলতে পারেন। আমি মাইন্ড করবো না। আর আমার সাথে আমার বন্ধুরা সুহাস, শিহাব আর রাইয়ান।

আরিয়ান ওদের তিনজনকে দেখিয়ে নাম বলে। ওরা তিনজনই হাই দেয় আরাফাকে। আরিয়ানের বেশি কথায় আরাফার বিরক্ত লাগছে। এখন সেটা আর প্রকাশ করা যাবেনা। এলবাম লঞ্চ করে বাসায় যেতে পারলেই শান্তি। আরাফা মুখে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে ওদের হাই এর রিপ্লাই করে-

-” হ্যালো। আপনারা আমার সাথে চলুন। ফলো মি।

আরিয়ান নিজে উঠে তার বন্ধুদের ও আসতে বলে। তারাও আরিয়ান আর আরাফার পিছু নেয়। সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আরিয়ানরা সফলভাবে তাঁদের এলবাম টি রিলিজ করে দেয়। মাইক্রোফেনে আরাফা আরিয়ানদের বেশ সুনাম করে। কিন্তু সেটা মনের বিপক্ষে গিয়ে। তার কাছে সঙ্গিত মানেই হলো বাদ্যযন্ত্রের শব্দের সাথে গলা মিলিয়ে গান গাওয়া। এইসব কম্পিউটারে তৈরি করা ডিজে মিউজিক নয়। অনুষ্ঠান শেষ করে আরিয়ান তাঁর এক সহকর্মীর মাধ্যমে আরাফার বিভিন্ন ইনফরমেশন কালেক্ট করে। সুহাস তখন বলে-

-” মামা আজকে কিন্তু আরাফাকে পুরোই আগুন সুন্দরী লাগছে।

শিহাব বলে-

-“‌হেই অরিয়ান মনে আছে তো বাজির কথা? ওকে পটা পারলে। যেনো বয়ফ্রেন্ডকে ছেড়ে তোর সাথে চলে আসে। তারপর কঠিন একটা ছ্যাকা দিয়ে দে। মেয়েটা খুব অহংকারী। আর সারাক্ষন গম্ভীর হয়ে থাকে, কেমন যানি। তবুও সুন্দর তো সুন্দর ই। গোলাপে কাটা থাকলেও যেমন সেটা সুন্দর, তেমনি আরাফা গম্ভীর অহংকারী হলেও সুন্দর। পটা ওরে তুই আরিয়ান।

রাইয়ান বেশ বিরক্ত হয়ে বলে-

-” ধুর ও আমাদের কাজের প্রডিউস্যারের মেয়ে। মাথায় রাখিস কথাটা। আর এসব বাদ দে তোরা। আর আরিয়ান সব মেয়ে এক না এটা মনে রাখিস। একজন তোর সাথে বেইমানি করেছে তাই বলে পুরো নারী জাতিকে দোষ দিতে পারিস না তুই।

আরিয়ান হালকা রেগে বলে-

-” আমি যা ইচ্ছে করবো। তোর কি? তোর এত মায়া লাগলে সবগুলো কে বিয়ে করে নে না‌। নেক্সট টাইম আমার কাজে বাঁধা দিবি না।

রাইয়ান ও কপোট রাগ দেখিয়ে বলে-

-” এই বাজি ধরে ধরে আর কতো মেয়ের জীবন নষ্ট করবি?

আরিয়ান তখন বলে-

-” আমি যখন বাজি ধরেছি, তখন পূরন করবোই। আর লুক আরিয়ান কখনোই বাজিতে হারেনি।

রাইয়ান বাইক নিয়ে চলে যায়। এদের বুঝিয়ে সে পারবেনা। সুহাস কিছুক্ষণ ভেবে বলে-

-” দোস্ত আর বাই এনি চান্স তুই আরাফার প্রেমে পড়ে গেলেও, আমাদের দুই লাখ দিবি। তুই ওকে না পটাতে পারলেও বাজি হারবি আর ওর প্রেমে পড়লেও বাজি হারবি। যাষ্ট ওকে স্যাকা দিতে পারলেই তুই উইন‌।

আরিয়ান রাগ সংবরণ করে বলে-

-” প্রেম ভালোবাসা এসব আমার দ্বারা হবেনা। আমি মেয়েদের ঘৃনা করি‌ দেখেছিস যে কটা রিলেশন করেছি, আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকে টাচ করিনি। ওদের ঐ মায়াবী মুখের আড়ালে লুকিয়ে থাকে হিংস্র, লোভী এক রূপ। যারা টাকার জন্য সব করতে পারে। নিজের স্বামীকে খু*ন হোক কিংবা সন্তানকে রেখে অন্যের সাথে পালানো।

শেষ কাথাটা আরিয়ান কক্ষাট করে বলে। সুহাস আর শিহাব চুপ হয়ে যায়। আরিয়ানের কষ্টটা তারা একটু হলেও বুঝতে পারছে। এখন আরিয়ানকে একা ছেড়ে দেয়াই ভালো। আরিয়ান তাঁর নিজের গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাকি তিনজন চলে গেছে। আরাফা যখন আরিয়ানের গাড়ির পাশ থেকে যাচ্ছিল, আরিয়ান আরাফাকে ডেকে ওঠে –

-” হেই ব্ল্যাক ডায়মন্ড।

আরাফা আরিয়ানের ডাক শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। আরিয়ানের দিকে ঘুরে বলে-

-” আমাকে বলছেন?

আরিয়ান মুচকি হেসে বলে –

-” ইয়াহ্। ক্যান আই কল ইউ আরাফা?

আরাফা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষন ভাবে। তারপর গম্ভীর গলায় বলে-

-” আমাকে সবাই এই নামেই ডাকে। আমি হয়তো পাঁচ দশটা নাম নিয়ে চলিনা। আমার একটাই নাম।

আরিয়ান আবারো মুচকি হাসে। মেয়ের তে*জ আছে ভালোই। আরিয়ান বলে-

-” আচ্ছা আরাফা আমি কি আপনাকে তুমি করে বলতে পারি?

-” As your wish.

আরাফার খাপছাড়া কথায় আরিয়ানের এবার রাগ লাগে। এমনি মেয়ে হলে দু মিনিটে পটে যায়। আর এ মেয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান আরাফার সাথে ফ্লার্ট করার জন্য বলে-

-” আরাফা তুমি খুবই সুন্দর। আর তোমার নামটাও। নামের মতো মানুষ টাও ভীষণ মিষ্টি। এই কালো ড্রেসে তোমাকে অপ্সরীর থেকে কম লাগছেনা। আমার ডিজে মিউজিক এর ক্লাবে তোমার ইনভিটিশন রইলো। আমি যাষ্ট তোমার লুকে..

আরাফার এবার খুবই বিরক্ত লাগে। আরিয়ানের কথার মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে সে-

-” দেখুন আপনি নিজেকে একজন বড় সঙ্গীত বিশেষজ্ঞ ভাববেন না। সঙ্গীত বানানো তার তার কাজ নয়। আর ঐসব ডিজে আমি শুনিনা‌। যতসব ফালতু টাইম ওয়েষ্ট। সঙ্গীত কি জানেন? সঙ্গীত হলো নিজস্ব দক্ষতা আর সৃজনশীলতার এক পারফেক্ট কম্বিনেশন যেটা কিনা হৃদয় থেকে আসে। আপনারা এসবের কি বুঝবেন‌। আপনার সঙ্গীতের মতো নয়। যেগুলো কি না ল্যাপটপে বন্দি হয়ে থাকে। আর আপনি যে আমায় ইনভাইট করবেন, আর আমি ঢ্যাং ঢ্যাং করে আপনার ক্লাবে হাজির হবো এটা ভুলেও ভাববেন না। আপনি মে ভাবেন সব মেয়েরাই আপনার জন্য পাগল, এটা একদমই নিছক মিথ্যা ধারনা, আপনার ট্যালেন্ট দেকে কেউই আপনার ওপর ক্রাশ খায়না। আর আপনি ফ্লার্ট করতৈ পছন্দ করেন, তাই মেয়েরা আপনাকে টাইম দেয়। তাছাড়া আপনার ট্যালেন্ট দেখে পছন্দ করেনা বলে আপনার লাখ লাখ ফলোয়ার থাকতেও, কেন একটা এলবাম ও হিট হয়নি? আদৌও কি জীবনেও হিট করতে পারবেন? আপনার এলবাম গুলো তো দশভাগ মানুষ ও কেনে না। আর আপনি যে প্লে বয় এটা আমি বুঝে গেছি। সো আমার পিছনে ঘুরে কোন লাভ হবেনা। সো দুরত্ব বজায় রেখে চলবেন। মনে থাকে যেনো।

আরাফা আরিয়ান কে এতগুলো কথা শুনিয়ে সানগ্লাস টা চোখে ঠেলে দেয়। ইতোমধ্যে তার সেই হ্যান্ডসাম ড্রাইভার এসে পড়ে। আরাফা এবার ড্রাইভারের কাছে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করতে করতে গিয়ে গাড়িতে বসে। গাড়ি ধুলো উড়িয়ে চলে যায়, আরিয়ানের সামনে থেকে। আরিয়ানের লাগে মুখ লাল হয়ে গেছে। একটা মেয়ে, শেষ পর্যন্ত একটা মেয়ে কি-না তাকে অপমান করে গেলো? এত সাহস। আরিয়ান রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করছে বারবার। কপালে আঙুল ঘসে রাগ নিবারণের চেষ্টা করছে। শেষমেষ রেগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাড়ির সাইডের গ্লাসে ঘু*সি দেয়। শক্ত হাতের ঘুসিতে মুহূর্তেই কাচগুলো চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। আরিয়ান হাত কেটে যায় অনেক টা। হাজারো রাগ আর অপমান মাথায় নিয়ে আরিয়ান গাড়িতে উঠে বসে। সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে। আজ বড় উন্মাদ লাগছে তাকে। কখনোই কোন মেয়ে তাকে এভাবে কথা শোনায় নি। আর আজ এই মেয়েটা যা করলো এর জন্য ওকে মাসুল দিতেই হবে। আরিয়ানের রাগ কিছুতেই কমছেনা। এই মেয়ের মাঝে এতো কিসের অহংকার, এত কিসের দেমাক। আই প্রমিজ- আরাফা আমি যদি আমাকে তোর আসক্তিতে পরিণত না করেছি আমার নাম ও আরিয়ান নয়। বড্ড ভূল করেছিস তুই। ভূল নয় অন্যায় করেছিস। আরিয়ান অন্যায়ের শাস্তি তোকে দিবেই। তুই একদিন আমার কাছে পাত্তা পাওয়ার জন্য ছটফট করবি।

#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)