#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১০)
আরাফা সেই কখন থেকে শক্ত হয়ে বসে আছে। কান্না করলো না একটুও। আরিয়ান দেখে আর অবাক হয়। অন্য কোন মেয়ে হলে কেঁদে কেটে ভাসাতো। কিন্তু এ কাঁদছেনা মোটেও, তার উপরে শক্ত হয়ে বসে আছে। আরিয়ান পাশে এসে বসলো। তখন থেকে দৌড় ঝাঁপ করেই যাচ্ছে। গলাটা পরিষ্কার করে আরাফার উদ্দেশ্যে বলে-
-” কেউ কি চা খাবে?
আরিয়ান এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আরাফা বুঝলো তাকে বলেছে। নড়েচড়ে বসে শান্ত কন্ঠে বলল—
-” এতো রাতে চা কোথায় পাবেন? আর আপনি বাড়ি যাচ্ছেন না কেন? আমি তো বলেছি আমি একা থাকতে পারবো। আমি একা চলতে জানি।
আরিয়ান পূর্ণ দৃষ্টি আরাফাতে নিবদ্ধ করলো। আরাফার দম আটকে আসছে এভাবে কেউ তাকায়। আরিয়ান কন্ঠে গাম্ভীর্য ঢেলে বলল-
-” আচ্ছা আমি বাড়ি গেলে এই রাতে মেডিসিনের জন্যে কি তুমি দৌড়াদৌড়ি করতে? রাস্তায় কত শি’য়াল, কু’কু”র আছে জানো? এই রাতে একটা মেয়েকে ফেলে আমি বাড়ি গিয়ে নাক টেনে ঘুম দিবো? তুমি চাইলে বাড়ি যেতে পারো। তোমার মা আর বোন তো বাড়িতে একা। তাদের জানাওনি কেন আংকেলের কথা? আর তুমি কেমন মেয়ে একটু কাঁদলেও না?
আরাফা কতক্ষন আরিয়ানের দিকে তাকালো তারপর জোড়ে জোড়ে হেসে দিলো। আরাফার হাসিতে আরিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। শুনেছে- “অল্প শোকে কাতর, অতি শোকে পাথর” কিন্তু এ তো পাগলের মতো হাসছে। গড পাগল হয়ে গেলো নাকি। আরিয়ান ধমকের সুরে বলল-
-” আরাফা এটা হাসপাতাল আস্তে হাসো। আর পাগল হয়ে গেলে নাকি হাসছো কেন? আমি কি কোন জোকস্ বলেছি?
আরাফা জোড়ে হাসা থামিয়ে দিলো। মৃদু হেসে বলে-
-” জোকস্ এর চেয়ে কম কিছু নয়।
আরাফা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। আরিয়ান অবাক হচ্ছে এই মেয়ের কথায়। আরাফা নিজেই বলতে শুরু করলো-
-” ছোটবেলা থেকেই বাবাইয়ের সাথে একা থেকেছি। বাবাই আমাকে অতোটা আদর করতো না। সারাক্ষন নিজের কাজ, বিজনেস এইসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতো। বাবাইকে জিজ্ঞেস করতাম আমার আম্মু কই। সবার মা স্কুলে দিয়ে আসে আমার মা কেনো আমায় দিয়ে আসেনা? বাবাই কিছু বলতেন না। প্যারেন্টস্ মিটিংয়ে সবার অভিভাবক যেতো কিন্তু আমার সাথে যেতো একজন সার্ভেন্ট। তখন থেকেই মায়ের জন্য অনেক কান্নাকাটি করতাম। যখন আমার সাত বছর বাবাই এক মহিলাকে বিয়ে করে আনলেন। ঐদিন বাবাইয়ের মুখে যে হাঁসি দেখেছি তা আর কখনোই দেখিনি। বাবাই ঐদিন অনেক খুশি ছিল। বাবাই মহিলাটিকে দেখিয়ে বললেন এটা আমার মা। আমিও বেজায় খুশি। তখন থেকেই ওনাকে মাম্মাম ডাকি আমি। মাম্মাম আমাকে অনেক আদর করতেন। আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতেন, নিয়ে আসতেন, খাইয়ে দিতেন আবার ঘুম পাড়িয়ে দিতেন। বাবাই মাম্মাম আসার পর থেকেই চেঞ্জ হয়ে গেলো। আমাদের সাথে সময় কাটাতেন। আমাকে দুইজনেই অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু সুখ কপালে সয়না সবার। ছোট বোন সোহানার জন্মের সময় মা আমাদের একা করে চলে গেলো। বাবাই আবারো কেমন হয়ে গেলো। সোহানা কে বাবাই দেখতেই পারেনা। সে বলে সোহানা তার থেকে মাম্মামকে কেড়ে নিয়েছে। এত এত কিছুর মধ্যে আমি একা হয়ে পড়েছিলাম। সোহানা কে নিজেই আগলে রাখতাম। বাবাই আমার সাথেও আর আগের মতো ব্যবহার করতো না। একটু ভুল হলেই অনেক বকতো। তখন থেকেই বুঝলাম, পৃথিবীতে ভালোবাসা বলতে কিছুই নেই। বাবা-মায়ের ভালোবাসাই পেলাম না। তবুও আমরা দু বোন বাবাইকে অনেক ভালোবাসি। বাবাইকে মাঝে মাঝে মাম্মামের ছবি নিয়ে কাঁদতে দেখি। হয়তো খুব ভালোবাসতো। কিন্তু আমরা কি করলাম? আমাদের কপালের ভালোবাসা নেই। সোহানা কে যদি জানাই বাবাই এই অবস্থায় ও কষ্ট পাবে। আর আমি তো সেই মাম্মাম কে হারিয়ে কান্নাও হারিয়ে ফেলেছি।
আরাফা থামলো এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। আরিয়ান হা করে এখনো আরাফার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার এত কষ্ট অথচ নিজের পারসোনালিটি কত স্ট্রং রেখেছে। কান্না নাকি মেয়েদের মানায়। কিন্তু আরাফা একটুও কাঁদলো না। আচ্ছা কতটা কষ্ট পেলে একজন মানুষ এমন শক্ত হয়ে যায়? আসলেই প্রিয় মানুষ হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট হয়তো এমনই। আরাফাকে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা আরিয়ানের নেই। আরাফা নিজেই প্রশ্ন করে –
-” আপনি যে বাড়িতে যাননি আপনার মা-বাবা চিন্তা করবেনা?
আরিয়ান চমকে ওঠে। মা-বাবা বলে যাদের যানলো তারা তো নেই। তবে হ্যা আছে তার জন্মদাতা জন্মদাত্রী। কিন্তু জন্ম দিলেই কি মা-বাবা হওয়া যায়? আরিয়ান মৃদু হেসে বলে-
-” তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেন? আমরা তো সেইম ইয়ারে পড়ি। অনিক কে তো তুমি, তুমি করেই বলো। তাহলে আমাকে আপনি বলছো কেন?
আরিয়ান কথা ঘোরানোর চেষ্টা করছে। আরাফা বুঝলো তাই কথা না বাড়িয়ে বলল-
-” আচ্ছা ট্রায় করবো তুমি করে বলার। তাহলে বলুন তুমি কয়টা প্রেম করেছো আর এখন কয়টা করছেন?
আরাফার কথায় আরিয়ান হো হো করে হেসে দেয়। আরাফা বোকার মতো তাকিয়ে আছে। তাকে কি দেখতে জোকারের মতো লাগছে? আর এভাবে হাসছে কেন? অনেক কষ্টে আরিয়ান হাসি থামিয়ে বলে-
-” ভাই এই তোমার তুমি বলা? আপনি তুমি মিলিয়ে জগা খিচুড়ি পাকিয়েছো। কি যেনো বললে, তাহলে বলুন তুমি কয়টা প্রেম করেছো আর এখন কয়টা করছেন? হাহা লাইক সিরিয়াসলি।
আরাফা জিভ কাটে। বোকার মতো কি উল্টাপাল্টা বলে ফেলেছিলো। আর তাই এভাবে হাসবে। ঠোঁট ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় আরাফা। আরিয়ান হাসি থামিয়ে বলে-
– আমি এই পর্যন্ত ৭৪ টা প্রেম করেছি। আর এখন কেউ নেই। ইচ্ছে ছিল সেঞ্চুরি করার।
আরাফার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। আরাফা তুতলিয়ে বলল-
-” চুচুচু চুয়াওওওওররর! আবববার সসেঞ্চুরিইই?
আরিয়ান আবারো হো হো করে হেসে দেয়। আরফা রাগে নাক ফুলিয়ে বলে-
-” তুমি কি হ্যা এত মেয়ের জীবন নষ্ট করেছো?
আরিয়ান হাসা থামিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে-
-” আচ্ছা আমার ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দিন।
আরাফা ফিক করে হেসে বলে-
-” বাবা মায়ের কথা জিজ্ঞেস করায় এরিয়ে গেলে কেন?
আরিয়ান দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে-
-” একদিন সময় নিয়ে শোনাবো সব ঘটনা। এখন মুড নষ্ট করার ইচ্ছা নেই। আর শোনো আমার বাবা আর মা বেঁচে থাকতেও আমি এতিম।
আরিয়ানের চেহারায় দুঃখের ছাপ স্পষ্ট।
।
-” আরিয়ান আজ আরাফাকে কোলে নিল কেন?
সুহাসের কথায় শিহাব কিছুক্ষন ভাবে পরে বলে-
-” জেলাসি! আমি খেয়াল করছি অনিক আরাফার কাছে গেলেই আরিয়ান রাগে বম হয়।
রাইয়ান বিজ্ঞের মতো বলে-
-” হতে পারে আরিয়ান অনিক কে সহ্য করতে পারেনা তাই তখন রেগে যায়।
সুহাস হেসে বলে-
-” নো আমার মনে হয় আরিয়ান প্রেমে পড়বে খুব শিঘ্রই!
রাইয়ান জোড়ে হেসে বলে-
-” সিরিয়াসলি! এটা হওয়া সম্ভব নয়। তবে হলে মন্দ হয়না।
শিহাব তাল মিলিয়ে বলে-
-” ওয় প্রেমে পড়লে আমি লুঙ্গি পড়মু যা।
রাইয়ান আর সুহাস একে অপরের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসে। কারন একবার মিহির বিয়েতে শিহাব লুঙ্গি পড়েছিলো, নাচানাচি করতে গিয়ে লুঙ্গি খুলে হুলস্থুল অবস্থা হয়েছিল। রাইয়ান হাসি থামিয়ে বলে –
-” তুই লুঙ্গি পড়িস না ভাই। তাইলে মানসম্মান সব শেষ।
শিহাব রাগে তেড়ে এসে বলে-
-” আচ্ছা বল আরিয়ান ওর প্রেমে পড়লে কি করবি তুই?
রাইয়ান কিছুক্ষন ভাবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” আমার প্রেয়শীকে আমার ভালোবাসার কথা জানাবো।
সুহাস আর শিহাব একযোগে চিৎকার দেয়। রাইয়ান বিরক্ত হয়ে কান চেপে ধরে। ধমক দিয়ে বলে-
-” পাগলের মতো চিল্লাস কেন?
সুহাস উত্তেজিত হয়ে বলে-
-” দুই বন্ধুর বিয়ে একসাথে খাবো তাই। আর বন্ধুর গুপ্ত প্রেয়শীর সন্ধান ও পাব।
রাইয়ান বিরক্ত হয়ে বলে-
-” মামা তোমরা যে জোড়ে চিল্লানি দিছিলা, কানের পর্দা আরেকটু হলেই ফেটে যেত। আর আমি ইন্নালিল্লাহ্। ভাবতে পারছিস তোদের ছেলেরা এইরকম একটা কিউট চাচা হারাই তো। তোদের বউরা এত সুন্দর একটা দেবর হারানোর শোকে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদত। তোদের শালিকারা দেয়ালে মাথা ঠুকত এত সুন্দর হ্যান্ডসাম বেয়াই হারিয়ে। সেই দুঃখে তোরা পাবনা ভর্তি হতি। কত বড় ক্ষতি হতো ভাবতে পারোস? ছিহ ছিহ। তোরা এত্ত খারাপ।
সবাই চুপ। রাইয়ান আগাম বিপদ সংকেত পেয়ে দেয় দৌড়। কারন এরা এখন তাকে কিমা বানাবে। পিছন পিছন সুহাস দৌড়াচ্ছে আর বলছে-
-” প্লিজ রাইয়ান থাম। আমার শালিকারা দেয়ালে মাথা ঠুকুক এটা আমি চাইনা।
তার পেছনে শিহাব বলে-
-” রাইয়ান মামা দাঁড়া। আমার বউ এত কিউট দেবর হারিয়ে গড়াগড়ি করুক তা আমি দেখতে পারবোনা।
রাইয়ান দৌড়ায় আর বলে-
-” কালকে দেখবো নে তোদের ব্যাপারটা ভাই। এখন আপন প্রান বাচাই।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
#ভালোবাসা_একটা_বাজি(বোনাস ১১)
কেটে গেছে কয়েকটা দিন। আরাফার বাবা একটু সুস্থ হয়ে উঠেছে। এই কদিন আরাফা ভার্সিটি না গিয়ে তার বাবাইয়ের প্রোপারলি যত্ন নিয়েছে। আরিয়ান ও প্রতিদিন একবার এসে দেখে গেছে সৈকত সাহেব কে। তিনি আরিয়ান কে এমনিতেই অনেক পছন্দ করতেন। এখন তো গলে পড়ছেন আরিয়ানের উপরে। আরাফার সাথে এ কদিনে ভালোই বন্ডিং হয়ে গেছে আরিয়ানের। আরিয়ানের কাজকর্ম সবই ভালোলাগে আরাফার। আচ্ছা সে কি প্রেমে পড়ছে? ইশশ সর্বনাশ এটা কিভাবে সম্ভব। সৈকত সাহেব আর আরাফা কথার যুক্তিতর্ক করছে। সৈকত সাহেব মেয়েকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলছেন-
-” দেখ মা তুই ভার্সিটি যা। আমি তো এখন মোটামুটি সুস্থ আছি। আর সার্ভেন্ট আছে। এতদিন ভার্সিটি মিস দিলি। আজ যা প্লিজ। একা না যেতে মন চাইলে আমি আরিয়ানকে কল দেই সে নিয়ে যাবে।
আরাফা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে-
-” তুমি এমন করো কেন বাবাই! আমি তোমার একটু যত্ন করছি তাও তোমার ভালো লাগছে না। আর আমি একাই যেতে পারি আরিয়াইন্নার আসার দরকার নাই। ওয় ডিজে ক্লাবে গিয়ে পার্টি করুক।
-” আহা মা ওর কাজ ওটাই। তুমি খামোখা রাগ করোনা। প্লিজ বাবাই বলছি রেডি হয়ে এসো মামনি।
আরাফা ঠোঁট উল্টে বড় বড় পা ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।
দুইজনের ঝগড়া শুনছে সোহানা। তার এগিয়ে আসার সাধ্য নেই। বাবাই তাকে দেখতেই পারেনা। এই কটা দিন দরজা বন্ধ করে কত কেঁদেছে বাবাইয়ের জন্য। বাবাই ঘুমালে একটু দেখে আসতো গিয়ে। আরিয়ান ভাইয়াও অনেক ভালো। সেও বাবাইয়ের কতো খেয়াল রাখছে। আমি নিজেই অপয়া। সোহানার চোখ দুটো লাল হয়ে যায় ক্রমশ। কাঁদবে না সে মোটেও না। ভালো মেয়েরা কাঁদে না। স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যায় সে। এসে ড্রাইভার কে তাড়া দেয়। তাকে দিয়ে এসে আবার আরাফাকে ড্রপ করা লাগবে।
.
-” কি রে আরিয়ান কাহিনী কি মামা?
সুহাসের হেয়ালীপনা কথায় আরিয়ান বিরক্ত হয়। চরম বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে-
-” কিসের কাহিনী?
শিহাব বত্রিশ পাটি বের করে হেসে বলে-
-” আরে মামা তোমার প্রেমের খবর কি? তুমি তো আরাফাকে ভালোবাসো। এটা আমরা জানি। আর অনিক কে ওর আশেপাশে দেখলেই তুমি পুড়ে যাও। জেলাসি হয় তাই না!
আরিয়ান তাচ্ছিল্য করে বলে-
-” জেলাসি! তাও ওর জন্য। ঐ আরাফাকে আমি ভালোবাসবো? মাথা গেছে তোদের? আমি কখনো জীবনের কোন বাজি হারিনি। আর না হারবো। ওকে আমি ভালোবাসি না। যাষ্ট বাজি ধরেছি ওকে পটানোর তাই এমন করছি। Love is a bet বূঝলি। আমি আর কাউকে বিশ্বাস করে ঠকতে চাইনা। আমি চরমভাবে ঠকেছি দুই নারী দ্বারা। আর ঠকতে চাইনা। এইসব বাদ দে রাইয়ান কই?
সুহাস হতাশ হয়ে বলে-
-” ওর নাকি আজ মুড অফ! আজকে ও দুঃখ বিলাশ করবে।
টুকটাক আড্ডা জমে ওঠে আস্তে আস্তে। কিন্তু আসল কথাগুলো কেউ যে শুনে ফেলেছে সেটা কেউই দেখলো না। কথাটা আরাফার কানে গেলে কতটা ঝড় উঠবে সেটাও হয়তো স্পষ্ট নয়। কিন্তু ভালো কিছু হবেনা সামনে। যা হবে খুব খারাপ হবে।
.
আরাফা গেইট দিয়ে ঢোকা মাত্রই অর্পিতা এসে আরাফার সামনে দাঁড়ায়। আরাফার এমনিতেই মেজাজ চটে ছিল। অর্পিতার দাঁত কেলানি দেখে আরো হাসি পাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-” এভাবে দাঁত কেলাচ্ছো কেন?
অর্পিতা দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলে-
-” আমাদের সবাইকে ছ্যাকা দিয়ে তুই এইটা জিজ্ঞেস করতে পারলি?
আরাফা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। একটা মেয়ে আরেকটা মেয়েকে ছ্যাকা দেয় কেমন করে? বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে-
-” কেন বইন তুই কি গে নাকি? আর আমি কি তোদের জামাইকে নিয়া পালাইছি যে তুই ন্যাকামি করতাছোস আইসা?
-” তুই তার চেয়েও বড় অপরাধ করছোস। আয় আমার সাথে ক্যান্টিনে তোর জন্য সবাই ওয়েট করছে।
অর্পিতা আরাফার হাত টেনে নিয়ে যায়। আরাফা ছাড়তে বলছে তার ছাড়ার কোন হুঁশ নেই। অর্পিতার একমাত্র কাজ এখন আরাফাকে ক্যান্টিনে নিয়ে যাওয়া। আরাফা এদের দেখছে আর বল”দ বনে যাচ্ছে। আরাফা যেতেই ইমা ন্যাকা কান্না করে বলল—
-” আরু তুই তুই তুই এটা কেমনে করলি বইন? তুই এটা কেমনে পারলি? তোর কি একটুও মায়া হলোনা? তুই আমাদের মন এভাবে ভেঙে দিলি? আচ্ছা আমাদের একটাবার জানাতেও পারতি। আমরা তো কেউ না কেন জানাবি?
অর্পিতা দুঃখী দুঃখী কন্ঠে বলে-
-” ইমারে এই আরু গভীর জলের মাছ। ও তলে তলে এতো কিছু করেছে আমরা জানিনা। থাক আমার ক্রাশের দিকে তো তাকায়নি আর।
আরাফা এদের ন্যাকামি দেখে রেগে বলল-
-” তোদের ন্যাকামি শেষ হলে বলবি আমি কি করছি? মরা কান্না না করে বল হয়েছে টা কি?
ইমা তখন ইনোসেন্ট ফেস করে বলল—
-” কি হয়নি সেটা বল? কি হয়নি? তুই কিনা আমাদের ক্রাশ আরিয়ানের কোলে চড়ে বসলি। ভাই তুই এটা কেমনে পারলি? তোর কি কলিজা কাপলো না? বান্ধবীদের ক্রাশের কোলে উঠতে।
আরাফার এবার বুঝলো এরা কিসের জন্য এত নাটক করলো। চরম বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে বলল-
-” দেখ ভাই ওয় কেন কোলে নিয়ে আমি জানিনা। আমি ক্যান্টিনে অনিক রে খুঁজতে আসছিলাম। হঠাৎই ওর সাথে ধাক্কা খাই। ও আমাকে ধরে আমি ছাড়তে বললেন সাথে সাথে ছেড়ে দেয়। বিশ্বাস কর কোমড়টা বোধহয় ভেঙেই গেছিলো। আমি না হয় রাগ করে ছাড়তে বলেছি তাই আমাকে দাঁড়া না করিয়ে ছেড়ে দিলো। তারপর কি হলো কে জানে আমাকে ঠুস করে কোলে নিয়ে হাঁটা দিলো। পড়ে গাড়িতে উঠে শুনি বাবাই এক্সিডেন্ট করেছে। ওয় আমাকে পরে ওখানে নিয়ে গেছে।
সবাই এতক্ষন আরাফার কথা মনযোগ দিয়ে শোনে। ইমা ন্যাকামি করে বলে-
-” আল্লাহ আংকেল কে তাড়াতাড়ি সুস্থ করে দিক। ফি আমানিল্লাহ। কিন্তু তুই আরিয়ান কে “ও, ওয়, ওর” বলে সম্বোধন করছিস কেন? এই এই তোরা প্রেম করিস না তো।
আরাফা সবাইকে ধমকে বলে-
-” চুপ আজেবাজে আরেকটা কথাও বলবি না। তখন থেকে পটর পটর করছিস। একদম সব কয়টাকে উগান্ডা পাঠিয়ে দেবো। নাইলে এমন কিক মা”রবো গিয়ে মঙ্গল গ্রহে পড়বি। তোদের মতো কয়েকটা এলিয়েন পৃথিবীতে না থাকলে বিশেষ কোন ক্ষতি হবেনা। আর মঙ্গল গ্রহে গিয়ে সুন্দর দেখে এলিয়েন দের বিয়ে করে নিস। আমায় জ্বালাইস না বইন মাফ চাই।
তখনি আরিয়ান মহাশয় ওখানে হাজির হয়। আরাফাকে দেখে এগিয়ে এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। আরাফা আবারো হকচকিয়ে যায়। আজ তার সাথে হচ্ছে টা কি? কতক্ষন অর্পিতা এসে টানে তো কতক্ষন আরিয়ান এসে টানে। পেছন থেকে চোখ গোল গোল করে আরাফার বন্ধুমহল তাকিয়ে আছে আরিয়ান আর আরাফার দিকে। ভার্সিটির সবাই তাকিয়ে আছে আরিয়ান আর আরাফার দিকে। আরাফার নিজেকে এলিয়েন লাগছে। এভাবে কেউ তাকায়। ভার্সিটির বাহিরে এসে আরাফা বলে-
-” আরিয়ান হাত ছাড়ো। তুমি এভাবে হাত ধরবে, ঠুস করে কোলে তুলবে আর আমি ভার্সিটির মেয়েদের সাথে জবাবদিহি করতে পারবো না।
আরিয়ান থেমে যায়। আরাফার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে –
-“ কি বলো এসব? কার সাথে তুমি জবাবদিহি করো আবার?
আরাফা রাগে নাক ফুলিয়ে বলে-
-” ঐ যে বেহায়া মেয়ে গুলো। তারা চৌদ্দ গুষ্টি শুদ্ধ আপনার ওপরে ক্রাশ। ঐদিন আপনি কেন আমায় কোলে নিয়েছেন সেই জন্য ন্যাকামি করছে আর একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমি কি জোকার নাকি।
আরিয়ান বড্ড ইনোসেন্ট ফেস করে বলে-
-” আহারে এতো মেয়ে আমার ক্রাশ আমি তো জানতামই না। ধন্যবাদ জানিয়ে আমাকে ধন্য করার জন্য। চলুন আজকে আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।
আরাফা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে –
-” কোথায় নিয়ে যাবা? আমায় আবার কিডনাপ করবে না তো?
আরিয়ান দুষ্টু হেসে বলে-
-” করতেও পারি। তোমাকে বেঁচে দিবো। পরে পার্টি করবো। এখন কথা কম বলে গাড়িতে উঠুন ম্যাম।
আরিয়ান গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। আরাফা তার পাশে বসে। আরিয়ান এসে আরাফার সিটবেল্ট বেঁধে দেয়। একটুর জন্য আরাফার হার্ট টা বেরিয়ে আসেনি। আরিয়ান কাছে আসলেই বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। আরিয়ান ড্রাইভ শুরু করে। আরাফা হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনতে থাকে। আরিয়ান হেঁচকা টানে হেডফোন খুলে ফেলে। আরাফা রাগে কিড়মিড় করে আরিয়ানের দিকে তাকায়-
-” তুমি হেডফোন খূললে কেন। মোবাইল আর হেডফোন দাও বলছি।
আরিয়ান পাত্তা না দিয়ে মৃদু আওয়াজে মিউজিক প্লে করে গাড়িতে। আরাফা শান্ত হয়ে যায়। মুখ ঘুরিয়ে জানালার দিকে তাকায়। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে “পাগল”।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)