ভালোবাসা তারপর পর্ব-০৬

0
166

#ভালোবাসা_তারপর
#পর্ব:০৬
#তামান্না_শাহরিন_শশী

কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত।

অনুমতি ব্যাতিত কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

রোদসী তখনও আয়নার দিকে তাকিয়েই ছিলো। উচ্ছ্বাসও আয়নার মধ্যে দিয়ে রোদসীর চোখে চোখ রাখে তাই রোদসী চোখ সরিয়ে জানলার দিকে তাকায় আর বলে,

“ছাড়ুন কেউ এসে পড়বে। ওই সময় রুহি এসে পড়েছি কি যা তা একটা অবস্থা আপনি বুঝতে পারছেন? লজ্জায় তো আমাকেই পড়তে হলো। ইউ আর এ সেমলেস।”

“ঠিক। ঠিক ধরেছো। নিজের বউকে ধরেছি। কে দেখলো না দেখলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”

রোদসী একটু চুপ থেকে উচ্ছ্বাস কে ডাকলো,

“মাহাদী”

এই প্রথম রোদসী তাকে নাম ধরে ডাকলো। আচ্ছা রোদসী কি তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে? মন গলেছে? বোধহয় গলেছে।

উচ্ছ্বাস জবাবে “হু” বলে রোদসীর ঘাড়ে থুতনি রেখে আর ঘনিষ্ঠ হয়। এতে রোদসী কেপে ওঠে।

“মাহাদী আমি স্টাডিটা কন্টিনিউস করতে চাচ্ছি মানে কমপ্লিট করতে চাচ্ছি।”

“হুম। করবে না করলো কে?”

“মানে আমি ভার্সিটিতে যেতে চাচ্ছি।”

“কেন পড়তে হলে যেতে হবে কেনো? আমি নোটস এনে দেবো তুমি বাসায় পড়বে। জাস্ট এক্সামের সময় এক্সাম দেবে।”

“আরে”

“হুশ! কোনো কথায় নয় যা বলেছি তাই-ই হবে। এবং করবে।”

রোদসী কোনো কথা বলে না। চুপ থাকে।

উচ্ছ্বাস রোদসীকে জিজ্ঞেস করে, যাবে?

কোথায়?

আমার রাজ্য।

রোদসী হয়তো কথার মানে বুঝলো। তার গালগুলো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। তা দেখে উচ্ছ্বাস ওকে ছেড়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে পর্দা টেনে দিয়ে ওর কাছে এসে কোলে তুলে নিলো। রোদসী লজ্জা পেলে বুকে মুখ লিকিয়ে চুপটি করে রইলো। উচ্ছ্বাস কখনো ভাবেই নি যে রোদসী সম্মতি দেবে। তার কাছে এটা একটা সারপ্রাইজ এর মতোই ছিলো। আবদর করলো আর অবিশ্বাস্যর মতো রোদসীও তা মেনে নিলো।

রোদসী উচ্ছ্বাস বুকের ওপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আসে আর উচ্ছ্বাস রোদসীর চুল হাত বুলাচ্ছিলো আর রোদসীকে দেখছিলো। সে কখনো ভাবে নি রোদসীকে সে পেয়ে যাবে। রেদোয়ানকে কত বুঝ দিয়ে। রোদসীর বাবা চাচাদের ব্যাবসায় হেল্প করে কনভেন্স করে রোদসীকে পেয়েছে। রোদসী তাকে প্রথম রেদোয়ানের বিয়েতে দেখেছে তবে কাকতালীয় ভাবে তাতের প্রথম দেখাটা অনেক বাজে ছিলো। রোদসী যখন নিজের রুমে শাড়ি বদলাচ্ছিলো ভুলক্রমে উচ্ছ্বাস রোদসীর রুমে ঢুকে পড়ে এবং তাদের ভেতর একটা মিসআন্ডারেস্টিং হয় তবে উচ্ছ্বাস পরে ক্লিয়ার করতে চাইলে রোদসী উচ্ছ্বাসকে থাপ্পড় মারে। এতে উচ্ছ্বাসের রাগ চেপে বসে এবং রেদোয়ানের বিয়ের সাথেই ও রোদসীকে সে বিয়ে করে বসে। এসব ভেবে উচ্ছ্বাস হেসে রোদসীকে আরো ঘনিষ্ঠ করে টেনে নেয়। রোদসী একটু নড়েচড়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়ে।

যখন ওরা বিদায় নেবে হঠাৎ করে রোদসী বায়না করলো রুহি যেনো তাদের সাথে তাদের বাসায় যায়। বাসার কেউ অমত করলো না তবে রোদসীর বাবা মাহফুজ সাহেব দিতে চাইলেন না। তিনি বল্লেন,

“তোর শশুড়বাড়িতে রুহি যেয়ে কি করবে। এমনিতেই দেখিসই ও কত দুষ্টু তারওপরে ওই বাসায় কিছু উল্টোপাল্টা করে বসলে।”

যদিও রুহির যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো তবে বাবার কথা শুনে তার মন খারাপ হয়ে যায়। রোদসী তা লক্ষ করে বলে,

” আমি রুহিকে দেখে রাখবো। আর ও গেলে আমারও ভালো লাগবে। প্লিজ বাবা যেতে দেও।” একটু ইনোসেন্ট ভাব নিয়েই রোদসী রাজী করায় মাহফুজ সাহেবকে। তাতে রুহি খুশি হয়ে দৌড়ে চলে যায়। সব কিছু ব্যাগপ্যাক করতে। সব প্যাক করে এসে রুহি বলে,

“আপু চলো আমি রেডি।”

—-

“এই মেয়ে কে তুমি?”

“আমি রুহি।”

রুহি? কে? আমি তো চিনি না।

উদয় ভাবনার ভঙ্গি করলো। তারপর বললো,

“না চিনতে পারছি না। কে বলুন তো আপনি?”

রুহিকে এমন জেরা করায় রুহির রাগ হলো। এ কেমন অসভ্যতা তার বোনের বাসায় আসছে এখন একে আবার জবাব দিতে হবে সে কে? কার কাছে এসেছে। যত্তসব। এসব ভেবে রুহি ভেঙচি কটলো তা দেখে উদয় ভ্যাবাচ্যাকা খেলো।

উদয়ের রাগ হলো তাই সে শক্ত কন্ঠে রুহিকে ধমকে উঠলো,

এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার? কি জিজ্ঞেস করেছি জবাব না দিয়ে তুমি আমাকে ভেঙছি কাটছো। লিলিপুটের মতো একটা মেয়ে আসছে। কথার জাবাব দিচ্ছে না। বলো কি সমস্যা?

রুহি বুঝলো ছেলেটা রেগে গেছে। এতে রুহির মজা লাগলো তাই সে আরো ত্যাড়ামি করে বল্লো,

কে লিলিপুট আমি? লিলিপুট আপনি।

কি এত বড় কথা। এই মেয়ে কে তুমি? আর এই বাসায় কি করছো? জানো না এটা ভদ্রলোকের বাসা?

এই আপনি ভদ্রলোকের বাসা বলতে কি বুঝিয়েছেন? আমি অভদ্র? এই আপনি কে? জানেন এটা কার বাসা? না জেনে কথা বলছেন কেনো? এটা আমার আপু শশুরবাড়ি।

এটা আমার বাড়ি।

ইহহ বললেই হলো। আর আমি বিশ্বাস করে নিবো? কে না কে?

এই মেয়ে?

রুহি। ওকে মাই নেইম ইজ রুহি। বার বার এই মেয়ে এই মেয়ে কি শুরু করেছেন?

এরি মধ্যে ওদের ঝগড়া শুনে রুম থেকে ঊষা, বৃষ্টি এসে পড়লো। ওদের ঝগড়টা এতোই সিরিয়াস ভঙ্গিতে ছিলো যেদের সাহস হলো না থামানোর।

রোদসী এসে ওদের থামিয়ে বলে,

এই থাম থাম কি শুরু করেছিস? রুহি এটা কেমন বেয়াদবি? উদয়কে স্যারি বল। আর উদয় তুই ও কি বাচ্চা হয়েছিস?

এই মেয়ে। না কি জানি নাম। রুহি নাকি কি? হ্যাঁ রুহিতো। কি পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিলো আমার সাথে।

এই যে মিস্টার উদয় না অস্ত। হোয়াটএভার, আমি ঝগড়া করছিলাম? নাকি আপনি যেচে পড়ে ঝগরা করছিলেন।

এই মেয়ে নাম ঠিক করে বলো। দিস ইজ উদয় নট অস্ত।

আরেএএ কতবার বলবো এই মেয়ে না। আমার একটা নাম আছে। দিস ইজ রুহি। মেয়ে মেয়ে কি?

এই থাম থাম। রোদসী কানে হাত দিয়ে চিৎকার দিয়ে এটা বলে। তাতেই সবাই চুপ।

তোদের আমি থামাতে পাড়বো না। এক কাজ করি এই ঊষা একটা লাঠি আর বৃষ্টি একটা ছুড়ি এনে দেও ওদের। তাহলেই হবে। শুধু ঝগড়া করলেই হবে না। মা রা মা রি/ র ক্তা র ক্তি করতে হবে। পরে আমরা ৩ জন মিলে তোমাদের সেবা করবো? ওকে? ঊষা আর বৃষ্টি রোদসীর এমন কথা শুনে খিলখিল করে হেসে দেয়। উদয় আর রুহি এমন কথায় লজ্জা পায়। তাই তারা এবার একে ওপরের দিকে চোখ রাঙিয়ে চুপ হয়ে যায়। তা দেখে রোদসী সস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। যাক দুই পা গ ল কে অবশেষে থামানো গেলো। কিছুক্ষন ওদের লক্ষ্য করে রোদসী বলে,

রুহি এন্ড উদয় তোরা একে ওপরের বেয়ান- বেয়ান। মানে রুহি হলো আমার বোন। আর রুহি এই উদয় হলো তোর দুলাভাইয়ের চাচাতো ভাই। একে ওপরকে হাই বল।

ওরা একে ওপরকে দেখে মুখ লটকে হাই বলে। ওদের কান্ড দেখে ঊষা আর বৃষ্টি মুখ টিপেটিপে হাসছে। আর রোদসী তো পড়েছে আরের ঝামেলায়। আচ্ছা ফ্যাসাদে পড়ে গেলো তো।

উদয় এবার মুখ খুললো,

ও তোর বোন? তাই তো বলি এতো ঝগড়ু মেয়ে এই বায়াস আসলো কই থেকে। এবার বুঝেছি

এই যে মিস্টার অস্ত। কি বললেন? আমি ঝগরুটে? নাকি আপনি?

এই কতবার বলবো আমার নাম উদয়। অস্ত নয়। হোয়াটএভার। আই হেভ টু গো।

এই বলে উদয় নিজের রুমের দিকে চলে যায়। ও যেতেই সবাই স্বশব্দে হেসে দেয়। ঊষা বলে,

কি বলো তো ভাবীর বোন। ভাইকে এই প্রথম দেখলাম কারো সাথে কথায় পাড়লো না। বিশ্বাস করো আমার এতো হাসি পাচ্ছে। বৃষ্টি বলে,

একদম ঠিক করেছো রুহিপু। উদয় ভাই সারাদিন আমাকে আর ঊষাকে পে ত্নী / শা ক চু ন্নি বলে খেপায়। এইবার বুঝুক ঠ্যালা। আজকে কথায় না পেরে মুখটা য়ে কিরকমহলো ভাবতেই হাসি পাচ্ছে।

এই বলেই বৃষ্টি, ঊষা আর রোদসী হেসে দিলো।

রুহি ওদের হাহাডি দেখে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয় তারপর রোদসী কে বলে,

আপু আমি সরি। আসলে আমি এভাবে ঝগড়া করতে চাই নি। ওই উদয় না অস্ত লোক টা এতো খারাপ আমাকে শুধু বলছিলো এই মেয়ে এই মেয়ে। তুমিই বলো তোমার নাম রোদসী তোমাকে যদি আমি এই মেয়ে বলি কেমন লাগবে? তারপর আবার কি বলেছে জানো?

রোদসী হাসি থামিয়ে রুহির দিকে তাকিয়ে বোকার মতো উত্তর করে,

না তো। কি বলেছে?

বলেছে এটা ভদ্রলোকের বাড়ি! তাহলে সে ইনডায়েক্টলি আমাকেই অভদ্র বলেছে। বলো তাহলে আমি ঝগড়া করবো না?

রোদসীর অনেক হাসি পায় রুহির এমন বাচ্চামি কথাবার্থায়। তবুও সে চুপ করে থাকে। রুহি উঠে তার দেখানো রুমে চলে যেতেই আবারো রোদসী, ঊষা, বৃষ্টি হাসিতে ফেটে পড়লো।

——

রাতে রোদসী আয়নার সামনে বসে চুলে বিনুনি করছিলো আর সন্ধ্যায় উদয় রুহির কথা মনে করে হাসছিলো। তা উচ্ছ্বাস ল্যাপটপে কাজ করার সময় বার বার তাকিয়ে দেখছিলো। এভাবে অনেকক্ষণ কেটে যায় রোদসীর কোনো হেলদোল নেই সে ওখানে বসেই ওভাবেই মুচকি মুচকি হেসে চলেছে। তা দেখে উচ্ছ্বাস ল্যাপটপ ওফ করে এসে রোদসীকে কোলে তুলে নেয়। হঠাৎ এমন করার রোদসী ভরকে গিয়ে উচ্ছ্বাসের টি শার্ট খামচে ধরে তবে খামচিটা উচ্ছ্বাসের গভীর ভাবে বাহুতে দাগ কাটে। তাই উচ্ছ্বাস ফিরে তার হাতের দিকে তাকায়। না ভালো ভাবেই আঁচড় লেগেছে। ঠিক যেনো একটা বিড়াল আঁচড় কেটেছে। উচ্ছ্বাস এবার রোদসীর দিকে তাকায় রোদসী একটু লজ্জা পায় তার কাজে তাই সে একটু জড়োসড়ো হয়ে উচ্ছ্বাসের ঘনিষ্ঠ হয়। তা দেখে উচ্ছ্বাস হেসে বলে,

“চলো আজকেই আমার জগতে নিয়ে যাই।”

চলবে……..